• কবিতা

    কবিতা- হে দয়াবান

    হে দয়াবান
    -অমরেশ কুমার

     

     

    স্বর্গ তোমার মর্ত্য তোমার তোমারই তো সৃষ্টি
    তোমার নামে পুজো হলে ধরায় নামে বৃষ্টি,
    পদ্ম ফোটে জবা ফোটে সবই তোমার নামে
    তোমার মায়ায় সৃষ্টি মোরা কেবা তাহা জানে।

    তুমি সবার ভগবান হে প্রভু, সবার ভগবান
    তুমি কৃপা করো চলার পথে, হে দয়াবান। 

    ফলও ধরে ফুলও ঝরে সৃষ্টি হতে প্রাণ
    বীজের মাঝে লেখা থাকে তোমারই তো নাম।
    রাতের আঁধার দিনের আলো সবই তোমার জন্য
    পূর্ণিমার চাঁদও হয় তোমার মায়াই ধন্য।

    তুমি সবার ভগবান হে প্রভু, সবার ভগবান
    তুমি কৃপা করো চলার পথে, হে দয়াবান। 

     তোমার নামে বাতাস বহে প্রাণে আসে গতি
    তোমার রঙে রঙিন হয়ে ওড়ে প্রজাপতি,
    ময়ূরও পেখম মেলে তোমার দেখার জন্য
    তোমার মাথায় পেখম এলে রূপ যে হয় পূর্ণ।

    তুমি সবার ভগবান হে প্রভু, সবার ভগবান
    তুমি কৃপা করো চলার পথে, হে দয়াবান। 

    তুমি নারী তুমি পুরুষ তুমি মাতৃরূপ
    তোমার মধ্যে লুকিয়ে আছে রাধারাণীর রূপ,
    তুমি ধর্ম, তুমি জ্ঞান তুমি সর্বরূপ
     তুমি সৃষ্টি তুমি বিনাশ তুমি আদি রূপ
    তোমার জ্ঞানে জ্ঞানী হলে তুমি দেখাও বিশ্বরূপ।

    তুমি সবার ভগবান হে প্রভু, সবার ভগবান
    তুমি কৃপা করো চলার পথে, হে দয়াবান।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রকল্পের খিচুড়ি

    প্রকল্পের খিচুড়ি
    – অমরেশ কুমার

     

     

    হাজার প্রকল্প নামে সামাজিক সুরক্ষা
    চলছে শুধু ভোটের ললিপপ
    আমরা রাজনীতির শিকার
    সরকারের সদিচ্ছার অভাব।

    “সামাজিক সুরক্ষা” প্রকল্প হোক বাস্তবায়িত
    চাই সামাজিক সুরক্ষা
    প্রার্থীদের সুনিশ্চিত চাকরি চাই,
    গতিধারায় জীবনের গতি চাই
    কর্মসংস্থানের গতি চাই
    সুনিশ্চিত কর্মজীবন চাই।

    বেকারত্ব ও দারিদ্রতা
    “মুক্তির আলো”তে মুক্তি দিন
    “খাদ্যসাথী” সুবিধাভুক্ত
    যারা বঞ্চনার তারা সব কিছুতেই বঞ্চিত
    বেকারত্বও দারিদ্রতা নিয়ে ছিনিমিনি
    অসহায় যুবসমাজ শুধু দিন গুনি।

    সবুজ এর সাথী হয়ে শিক্ষাঙ্গনে
    শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার হয়ে
    অস্থায়ী ঝান্ডা ধরা বখাটে আছে অফিসে
    শিক্ষিত বেকার পড়েছে অসহায় হয়ে
    স্বাস্থ ভবন শয্যাশায়ী
    নার্সরা হয়েছে পরিযায়ী
    সিভিক এর ছড়াছড়ি
    ওয়েটিং লিস্ট দীর্ঘ খালি।

    মানবিক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখো
    শিক্ষিত বেকার আজ কাঁদে দিন গুনে
    রাজনীতির খেলা হোক রাজধানীতে
    খেলা বন্ধ হোক বেকারের চোখের বন্যাতে
    অমানবিকতা বন্ধ হোক,
    বন্ধ হোক প্রতিশ্রুতির বুলি
    কনাশ্রী আলো পেলো, যুবশ্রী অসহায়
    সবুজাশ্রী দমবন্ধ পরিবেশে বিভীষিকাময়।

    ভাতা নয় চাকরি চাই
    জীবন থমকে না যায়,
    চাই স্কুল, চাই পঠন-পাঠন
    চাই না মিথ্যার সরকারি বচন
    চাই না মিথ্যার প্রতিশ্রুতি
    চাই কুর্শি ক্ষমতার ইতি।

  • কবিতা

    কবিতা- নতুন ভারত বেশ

    .নতুন ভারত বেশ
    – অমরেশ

     

     

    LIC আর Rail বেচে দে,
    খুলবো চায়ের দোকান
    নোট বন্দি, ব্যাংক বন্ধ,
    আমরা অন্ধ, আমরা জনগণ।

    আমরা যা কামাই
    সবই যায় Emi
    ভোগের থালায় ভাগ না পেলে
    লাইন দিয়ে সবাই চেঁচায়,

    হাজার হাজার চাকরি হবে
    হাজার হাজার কর্মস্থান,
    মুখের বুলি, মুখে মারি
    চারিদিকে শুধুই দেখি শূণ্যস্থান।
    ওরে, ওরে সব বেচে দে
    ভিক্ষা ঝুলি হাতে দিয়ে
    রেশন দোকান- দে খুলে দে
    দুয়ারে দুয়ারে ডাক পড়েছে
    মেরুদন্ড দে বেচে দে।

    ডোমের ঘরে PHD ধারী
    নেতার ছেলে চড়ছে গাড়ী,
    যোগ্যপার্থী বড়োই অভাব পরীক্ষার হলে
    নেতার ছেলে নেতা হবে বিলাস বহুল তলে।

    চপশিল্প বড়োশিল্প অট্টালিকা হবে
    যুবসমাজ বসে আছে আমার হবে কবে?
    তেলেভাজা পাপড়ি চাট খেতে ভারী খাসা
    অর্থাদায়ে গলায় দড়ি মাস্টার ডিগ্রি চাষা।

    উন্নয়নের জোয়ার ধেয়ে
    রাস্তা মাঝে নৌকা বেয়ে
    নাচন কোঁদন আর হুল্লোড়ে
    ক্লাবগুলো উঠছে ফুলে।

    ফ্লাট বাড়ী সিন্ডিকেট
    সুট বাবু মারছে কেট।
    বিদেশ বিভূঁই ঘুরে এসে
    রাজপ্রাসাদে বসে,
    M.P. কোটা কিনে নিতে
    হিসাব নিকাশ কষে।

    রাজা ছিল, রাজ্য ছিল সবই এখন ইতিহাস
    আমরা জনগণ, আমরা করছি কারাবাস ।
    বাক স্বাধীনতা নামেই আছে মৌলিক অধিকার
    মাফিয়া রাজ চলছে দেশে সেটাই এখন সর্বাধিকার ।।

    এ এক বৈচিত্রের দেশ, নতুন ভারত বেশ।
    রক্ত দিয়ে হলো স্বাধীন, আমরা পরাধীন।

    সব বেচে দে, সব বেচে দে, সব বেচে দে
    দেশ বেচে দে, সব বেচে দে সব বেচে দে।

  • কবিতা

    কবিতা- ভাগাভাগি

    ভাগাভাগি
    -অমরেশ

     

     

    বেকারত্ব বাড়ছে, চাকরি নেই
    চাকরি ! যোগ্যপ্রার্থী আছে নাকি ?
    আর যা আছে বাকি, ফাঁকা আছে সেকি
    বাবু, মাস্টার ডিগ্রি, পিএইচডি সব তো লাইনে পড়ে
    কাজ নেই, টাকা নেই খিদেয় যে যাচ্ছে মরে
    সবই তো বুঝলাম, বাবু হেসে বলে
    আমার ছেলের আসনটা যাবে যে চলে ।।

    দাদা! রমেন দুই দেবে —
    দুই ! দুই-এ এখন কিছু হয় নাকি?
    ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ এসব আমার কাজ নয়
    অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট আছে তো হোক না ডেলিভারি বয় ;
    রমেন ব্ল্যাকলিস্ট, নেক্সট —
    সুদীপ সাত-এ পাকা করতে বলেছে —
    সাত , আচ্ছা , ঠিক আছে, সামনে প্রাইমারিতে নাম রাখ
    আরে ,আরে তাড়াতাড়ি কর, কার কার নাম আছে ডাক ।।

    দাদা! এ কুড়ি দেবে, অফিসার হবে, করতেই হবে
    দাদু অফিসার ছিল নাতিও তাই হবে —
    হবে ,হবে, সব হবে । কুড়িতে নয় তিরিশ হবে
    সাদা খাতা জমা দিলে এমনি হবে —
    অফিসার কি এমনি হবে ?
    পকেটটা তো একটু খালি হবে ।।

    দাদা আমারও এবার মোটা কিছু চাই
    আমি এত খুঁটে খুঁটে খাই
    তুমি কি জানো না —
    উপরে কত আছে দামোদর শেঠ
    অল্পে কি তাদের ভরে পেট
    শোনো তবে বলি,
    যদি হও সজন তেঁতুল পাতায় নজন
    অল্পে হও খুশি, চেও না এর থেকে বেশি
    যা আছে পড়ে, ভাগাভাগি করে যাও চলে ।।

    শিল্পী আছে –শিল্প নেই, চাষী আছে – চাষ নেই
    শ্রমিক শ্রেণী, দীন মজুরের ঘরে অন্ন নেই
    পেটের দায়ে চাষীর ঘরে ক্রন্দন
    ধর্মঘটে রাস্তা মাঝে আন্দোলন
    খিদের জ্বালায় কাস্তে হাতে
    অন্নহীনে মরছে আমার দেশবাসী
    ভোটের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে বলছে নেতা
    আমিও ছিলাম মাঠের চাষী ;
    সব মরছে মরুক অন্ন জমুক , মজুত ঘরেতে
    ছুঁচোর দলে, ইঁদুরগুলো করছে ভাগ পেট ভরাতে —
    বাইরে শুধু, আরশোলা আর ফড়িং গুলো
    উড়ছে দলে দলে
    মধুর খোঁজে মৌলি হয়ে বসছে তারা
    ফুলে ভরা ডালে —
    পূর্ণ মৌচাক শুন্য হয়ে পড়ে
    মৌমাছিরা যাচ্ছে সব অন্য কোথাও উড়ে
    আপন মনে বলছে শুধু মুচকি হেসে হেসে,
    “যেখানে মধু নেই সেখানে মাছি নেই —”
    এ ভাগাভাগি কি একদিন বন্ধ হবে ?
    কিন্তু কবে ? কিন্তু কবে ?
    দেশভাগ , সমাজ ভাগ, জাতি ভাগ, ধর্ম ভাগ
    সব যে ভাগের খাতায় ।।

  • কবিতা

    কবিতা- যুবসমাজ ঘুরে দাঁড়াও

    যুবসমাজ ঘুরে দাঁড়াও
    -অমরেশ

     

     

    শিল্প চাই, চাকরি চাই, স্বচ্ছভাবে নিয়োগ চাই
    রেশন চাই না, ভিক্ষা চাই না, সুনিশ্চিত জীবন চাই।
    বেকারত্ব দারিদ্রতা বাড়ছে দিনে দিনে
    মনুষ্যত্বও নিচ্ছ কিনে টাকার বিনিময়ে,
    মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছ, কেড়ে নিচ্ছ শিক্ষা
    যাতে যুগের পর যুগ আমরা করি ভিক্ষা।

    নষ্ট হয়েছে যুবসমাজ, নষ্ট হয়েছে ভবিষ্যৎ
    প্রতিশ্রুতির বুলি শুনে ছাড়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস
    যুবসমাজ হয়েছে রাজনীতির শিকার
    হারিয়েছে বাকস্বাধীনতার অধিকার।

    মেথরের ছেলে যদি শিক্ষার আলো পায়
    কুমারের ছেলে যদি সারথি হয়
    সে ও বলবে কথা, ধরবে হাল
    সরকার ভয় পায় …সরকার ভয় পায়।

    যুবসমাজের হয়েছে নতুন পরিচয়
    সে যে শিক্ষিত বেকার, সে যে শিক্ষিত বেকার
    অভাবের সংসারে, বৃদ্ধ বাবা মা আজও ছোটে
    দূরে দাঁড়িয়ে গোপনে কাঁদে শিক্ষিত বেকার।

    আজ করছি মোরা শপথ
    আমরা উন্নয়নেরই রথ,
    আমরা সারথি হয়ে চালাই সমাজ
    আমরা যুবসমাজ।
    আজকে মোরা গুঁড়িয়ে দেবো প্রতিশ্রুতির বুলি
    আমাদের শরীরে বইছে রক্ত অতীতের বিপ্লবীর।

    আমরা শিক্ষিত যুবসমাজ, আমরা কর্মহীন যুবসমাজ
    জেনে রেখো মনে, যখন হয়েছে সময়, পড়েছে ডাক
    শুধু প্রাণ দিয়ে লড়ে গেছে এই যুবসমাজ, যুবসমাজ।

    যুবসমাজ ঘুরে দাঁড়াও, যুবসমাজ ঘুরে দাঁড়াও,
    যুবসমাজ ঘুরে দাঁড়াও, যুবসমাজ ঘুরে দাঁড়াও।

  • কবিতা

    কবিতা- হে বীরেশ্বর

    হে বীরেশ্বর
    – অমরেশ কুমার

     

     

    বীর বীরেশ্বর ! হে ঈশ্বর
    করিয়াছ বিশ্বকে
    তোমায় বাণীয় ভাস্বর
    যত ক্লান্তি, যত অন্যায় যত দুরাচার
    সবই করিয়াছ তুমি নশ্বর।

    হে তেজ ! তেজস্বী মহানপুরুষ
    তব জন্ম লইয়াছ এ ভারতবর্ষে
    তুলিয়া ধরিয়াছ বিশ্বের শীর্ষে
    এ ভারতবর্ষের সংস্কৃতি,
    সমস্ত বিশ্ব দেখিয়াছে তাহার প্রকৃতি।

    পাইয়া তোমার স্পর্শ
    ধন্য হইয়াছে মোদের ভারতবর্ষ
    তাহারই ঘরে ফুটিয়াছে
    বিশ্বের সেরা ফুল ।
    গর্বিত হইয়াছে তোমার কর্মে
    ভারত – মানব – কুল।

    তোমারি প্রাণের প্রাণশক্তি
    শুনাইয়াছে শত শত মানুষের বন্দিরমুক্তি
    তোমারি মনের,
    দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভালোবাসা
    আজও পথ চলা,
    অগণিত মানুষের বুকের আশা।
    পথ প্রান্তে পরে থাকা,
    কাঙাল,মুচি,মেথর,ভিখারি , ফকির
    সদা জপে মালা
    হে বীর! বীরেশ্বর–
    “রক্ষা করো মোরে
    নহিলে যে মরিব অনাহারে।”

    লক্ষ লক্ষ মানবজাতি লইয়াছে আশ্রয়
    তোমার চরণ তলে।
    ভিখারি,কাঙাল পাইয়াছে বসন
    নিয়েছ তাদের কোলে।

    আজও, আছে পরে
    সহস্রাধিক রাস্তায় মরে,
    নাহি শোনাইবার কেহ প্রাণের বাণী,
    নাহি কেহ জাগাইবার আশা,
    হারাইয়া ফেলিয়াছে তারা সকল ভরসা ।

    স্বার্থের টানে,সুখের সন্ধানে
    ঘুরিছে সকল মানব জাতি
    অন্ধ হইয়া, জ্ঞান হারাইয়া
    ধ্বংস করিছে সরল প্রকৃতি ।
    হে বীর!বীরেশ্বর
    বোঝাও এদের তুমি
    অর্থ ক্ষমতা এসব থাকিলে
    রাজা হওয়া যায়
    প্রজা না থাকিলে
    সে রাজ্যের রাজার কোনো মূল্য নাই।

    আজ আমি ক্ষুদ্র-তুচ্ছ
    তোমারই উত্তরসূরি
    খুঁজিয়াছি, তোমারই বিশাল
    জ্ঞান সমুদ্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নুড়ি;
    বহুদূরে আজি আমি
    তবুও মোর মনে দৃঢ় বিশ্বাস
    তোমার প্রতি মোর অসীম ভক্তি
    মোর প্রাণে জাগাইবে প্রাণশক্তি।
    প্রতি ক্ষণে মনে জাগে বিপ্লবী চেতনা
    আর ভেসে আসে স্বাধীনতার বন্দনা;
    হে বীর! বীরেশ্বর দাও হে
    মোরে প্রাণশক্তি।
    অতি দুর্গম আবরণ ভেদ করিয়া
    ঘটাইবো বিশ্বের মুক্তি।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- চলমান সমাজ

    চলমান সমাজ
    -অমরেশ কুমার

     

     

    রাতের শহর, চারিদিকে আলোর ঝলকানি, প্রতিদিন রাজ শহর রাজকন্যার বিবাহের আলোক সজ্জায় সেজে ওঠে নতুন নতুন রূপে। নীরু রাস্তা দিয়ে চুপিসারে হাঁটতে থাকে। ফুটপাথে চাদর গায়ে অগণিত মানুষ নিদ্রায় আছন্ন। কেউ বা একা, কেউ বা সন্তান বুকে নিয়ে। ঠিকানা আজ তাদের ফুটপাথ। কাল কোথায় থাকবে কেউ জানে না , তবে কোনো এক নতুন ফুটপাথ যে হবে তা নিশ্চয়। নীরু আরো এগিয়ে চলে… কোথাও যে এর শেষ নেই। শান্ত আলোক ধাঁধানো রাজ শহরের এ কি রূপ ! দিনের কোলাহলে বিশাল বিশাল অট্টালিকার বাবুদের দেখা নেই । সমাজ তো বিভাজিত দিনে- রাতে, নীরুর এ এক নিদারুণ বাস্তব উপলদ্ধি।

    নীরু বাড়ি ফেরে ভোরের রাতে। সারাদিন কখনো কখনো দূরপাল্লার journey করে সারারাতও তার কাজের চাপেই কেটে যায় বিশ্রামের অবকাশ নেই। salesman এর কাজ; তাই চলমান সমাজের সাথে তার ক্রমাগত মানিয়ে নিতে হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম, সবাই সবার জন্য ব্যস্ত ।

    বাড়ি ফিরেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নীরু জিজ্ঞাসা করে কি নিয়ে ফিরলি নীরু ….?
    প্রতিবিম্ব: বাস্তব উপলব্ধি।
    নীরু আবেগ পূর্ণ হয়ে ভাবতে থাকে সারাদিনের কথা ….
    প্রতিবিম্ব সেগুলি বলতে থাকে ,
    “চলমান সমাজে চলতে গিয়ে
    কখনো ভীড়ের চাপে হাঁটতে হয়,
    কখনো বা, স্থির চোখে স্থির ভাবে তাকিয়ে
    সমাজের গতি মাপতে হয়;
    যেন, স্থির অবস্থায় অনুভব করতে হয়
    হাঁটছি দেখো হাঁটছি আমি,
    হাঁটছে দেহখানি–
    বাস্তবতার পাথর ভেঙে
    সমাজ চিনলে কতখানি ।
    ঢেউ এর সমান তরঙ্গের ন্যায় মানুষগুলো ঘোরে
    স্বপ্নগুলো মনের মাঝে,স্তরে স্তরে জমে;
    কেউ বা ধাক্কা মারে বাহির হতে
    কেউ বা, স্বপ্ন মাঝে স্তরের ফাঁকে
    চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ে।”

  • প্রবন্ধ

    প্রবন্ধ- সম্পর্ক

    .

    সম্পর্ক
    – অমরেশ কুমার

    অস্থির মন কখনো সুস্থির জীবনের অধিকারী হয় না, সুস্থির জীবন কখনো সম্পর্কের বাঁধন ভাঙ্গে না । সম্পর্কের বন্ধন একটি কাল্পনিক মায়ার জাল । এই জাল কেউবা বুনতে পারে, কেউবা ছিঁড়তে পারে । আবার, কেউ ছেঁড়া জাল দিয়ে নতুন সম্পর্ক গড়তে পারে । অন্যভাবে বলা যায় সম্পর্ক অনেকটা মাঝির মতো, উত্তাল সমুদ্রের পাশ কাটিয়ে হাল ঠিক রাখলে নৌকার মতো সম্পর্ক সোজা পথে এগোয় । আর, সামান্য ভুলে মাঝ সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার মতো কত শত সম্পর্ক চোখের জলে ভেসে যায় ।

    সুতরাং সম্পর্কের মধ্যে চলে ভাঙ্গা গড়ার খেলা । তাই খেলায় হার-জিত দুটোই বর্তমান । জয় লাভের মাধ্যমে সম্পর্কে আনন্দ অনুভব হয় , আর পরাজয়ে মনের মধ্যে উত্তাল ঢেউয়ের তরঙ্গ বয় ।

    সম্পর্কের এই অনিশ্চয়তা শুধুমাত্র যে দাম্পত্য জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করে তা নয় । পরিবার এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সবকিছু প্রতিকূলে থাকে । সূক্ষ সুতোতে অদৃশ্যভাবে সম্পর্ক জুড়ে থাকে । সুতোর টানের অনুভূতির উপর নির্ভর করে সম্পর্কের গাঢ়ত্ব ।।

    তাই , এই “সম্পর্ক” সম্পর্কে বোধগম্য হওয়া খুব মুশকিল , সম্পর্ক শুধুমাত্র পিতামাতার কিংবা পারিপার্শ্বিক আকর্ষণ নয় কিংবা জিনেটিক এর প্রতিফলিত রূপ নয় । কেননা, সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি মানুষকে একটি সম্পর্ক নতুন বাঁধনে বেঁধে ফেলতে পারে। এই সম্পর্কেই আমরা কখনো হয়ে উঠি বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা বিভিন্ন আত্মীয়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্কগুলোও হয়ে ওঠে ভিন্ন। কখনো কাছের মানুষ দূরে চলে যায় আবার কখনও সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ হয়ে ওঠে কাছের।

    সম্পর্ক এই ফুলের ন্যায় আচরণ, যা শুকিয়ে গেলে নষ্ট হয়, যা ছিঁড়ে গেলেও নষ্ট হয় । আবার ধুলো লাগলে কিংবা মলিন হলেও আমরা তা উপলব্ধি করি, যাকে ছোঁয়া বা স্পর্শ করা যায় না কিন্তু নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

  • কবিতা

    কবিতা- স্ত্রী

    স্ত্রী

    অমরেশ কুমার

     

     

    কেন আসিলে ? এলো চুল খুলিয়া
    কেন আসিলে ? এমন দুলিয়া দুলিয়া ;
    মোর মন উঠিয়াছে কাঁপিয়া
    কেমনে রাখিবো নিজেরে বাঁধিয়া ।
    বাহিরে আসিলে, এমন বসনে, এমন সাজ
    নাহি কি তোমার কোনো লাজ ?
    কিভাবে পারিলে তুমি আসিতে
    পারিতে তো অন্দরে থাকিতে ।
    তোমা পানে আমি
    চাহিয়া দেখিবো কেমনে
    সৌন্দর্যে পূর্ণ রানী যে তুমি
    ভাসিছ সদা মোর নয়নে ।
    এমন, এলোচুলে তুমি আসিও না
    এমনি ভাবে, তুমি আমায় দেখিও না ।

    তোমার ওই যমুনা পারে
    আসিয়াছি বহু বারে
    তাও যেন আজ, এমন সাজ
    ভুলিয়াছে মোর সকল কাজ ।
    মরে উদাস করিয়া তুমি যাইও না
    ওগো স্বপ্নপুরীর, সুখ রসনা ।

    আজি, দেখিছু আপনি আপনা
    জাগিছে দেহে-মনে অজানা বাসনা
    কেমনে বুঝাইবো হে রজনী
    মনেতে ছড়াইলে সুবাস , হে সুভাষিনী ।

    এ চুলের খেলা , মনের দোলা
    করিছে আমায় মনভোলা
    তোমার ঐ মুখের হাসি
    পায়ে নুপুরের রিনিঝিনি
    সবই তো আমার চেনা ;
    এমনই করিয়া বসিয়া
    গাহিতে তুমি গান , শুনিতাম আমি
    ভরি তো মোর প্রাণ ।
    সে সুমধুর গানের স্বর ,আবার আসিছে ফিরিয়া
    মোর হৃদয় নীড়ে ।।

  • কবিতা

    কবিতা- দেহের গন্ধ

    দেহের গন্ধ
    -অমরেশ কুমার

     

     

    শুধু স্পর্শের গন্ধের টানে,
    ভালোবাসার স্বাদ গ্রহণ করার আকাঙ্খা–
    ঘ্রান গ্রহণে, অচিরেই শেষ হয়।
    যখন, টানের অনুভূতি অতিত স্মৃতিতে
    স্মৃতি মন্থনের সুখ খুঁজে চলে—
    সে সম্পর্ক গন্ধের উর্দ্ধে ।
    গন্ধ দেহের হতে পারে,
    আবার, মনেরও হতে পারে ।
    তবে, কেউ যদি মনের সাথে মনের গন্ধ খোঁজে
    মনের গন্ধ, সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দেয় ,
    যার কাছে গৌণ হয়ে যায় দেহের গন্ধ ।
    সকালের প্রুস্ফুটিত ফুলের সুবাস,
    বিকালে মলিন হয় । দিনের শেষে ঝরে পরে ।
    দেহের সুবাস, যৌবনের প্রেমে মেলে ।
    সকালের মধুলিহর রাত্রেও ঘ্রান খোঁজে ।
    দেহও ফুলের ন্যায় , স্পর্শেও ছিঁড়ে যায় ।

You cannot copy content of this page