-
আবার দেখা হবে এ পথে
আবার দেখা হবে এ পথে
-অমরেশ কুমারজানি আবার দেখা হবে এ পথে
হয়তো বা সন্ধেতে, হয়তো বা রাতে..
হয়তো বা তুমি যাবে অন্য কারো সাথে
চোখে দেখা…
আর, না পাওয়ার অনুভূতি
হয়তো বা তুমি আসবে ফিরে , স্বপ্নে মাঝরাতি।
তোমাকে আঁকড়ে ধরার প্রতিফলিত রূপ…
আমার..এই পাশবালিশ…
সে যেন মাঝ রাতে…করে নালিশ..
কেনবা তাকে ছেড়ে, তোমাকে ঘিরে
স্বপ্নে বিভোর আজ আমি।জানি আবার দেখা হবে…
হয়তো বা আঁচল দিয়ে মুখ লুকাবে
হয়তো বা না দেখার অভিনয়ে জয়ী হবে,
আর আমি,স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে
ফিরে ঘরে, শুনবো নালিশ ।। -
ক্ষমতার স্বার্থে
ক্ষমতার স্বার্থে
-অমরেশ কুমারবন্য প্রাণী হিংস্র এরা দেখতে সবাই মাথায় ন্যাড়া
বলোনা ভাই এরা ন্যাড়া
মাথা যে এদের টুপি মোড়া ।সদাই এরা হাসে কেউবা আবার কাশে
অজানা এই হাসি কাশি
শুধুই বোঝে এদের মাসি পিসি ,হাসিয়ে আমায় হাসিয়ে তোমায়
জব্বর বুদ্ধি আঁটি
ধরবে তোমার টুঁটি ।মিথ্যার আসর ঢেলে টানবে তোমায় কোলে
আসবে যখন জয়
মারবে তোমায় ছয় ।থাকতে হবে ভয়ে কি যে কখন যায় হয়ে
মারতে পারে পিসে এরা
থাকিস ভাই সাবধানে তোরা ,অর্থে এরা শুয়ে থাকে মনে রমণীর ছবি আঁকে
ফুটপাথের মানুষ দেখে
গন্ধ লাগে এদের নাকে ।শ্মশানের ধারে ধারে রাতের অন্ধকারে
চিল শকুনের দলে
মানুষ পুড়িয়ে মারে ।ওরাই দেশের রাজা দেয় আমাদের সাজা
হয়না ওদের ভুল
ওরা যে গাছের মূল ।শান্তি নেই মনে মাঠে-ঘাটে ঘরের কোণে
তবুও বিদ্রোহে কেউ না নামে
পরিণাম তো সবাই জানে ।। -
প্রকৃতির দুঃখ
প্রকৃতির দুঃখ
-অমরেশ কুমারনীল আকাশের নীলের আভা
বাড়াইয়াছে এ প্রকৃতির শোভা
আনিয়াছে প্রাণ বুকে
রাখিয়াছে তাহাদের সুখে
হইয়াছে জননী-জন্মদাতা
তাইতো সবাই কহে , —
প্রকৃতি আমার মাতা ।।আনিলে যাহার বুকে
রাখিল তাহারা তোমারি দুখে
সুবাস ছড়াতে জ্বালিলে তুমি ধূপ
বুঝিলনা এরা , নষ্ট করিল তোমার রূপ ,
তোমারই খাইয়া , তোমারই পড়িয়া
বানাইল ধ্বংসের কারখানা
নিজ স্বার্থে , নিজ দায়ে
শুনিতেছেনা কেউ তোমারই মানা ।।ধ্বংসে সামিল হইয়া
জ্বালাইতেছে এরা আগুন
তুমি পুড়িছ , দগ্ধ শরীরে
আর , এরা ভাবিছে বা ! কী দারুন ,
রুগ্ন – মুমূর্ষ শরীর লইয়া
ছুটিছ তুমি মৃত্যুর সহিত ,
মৃত্যুর শেষ ঝড় বহিয়া
আসিছে সৌরপথে নামিয়া ।।মাগো , যাইবার কালে , সন্তানের ভালে
ক্ষমা করিয়া যেও
সবই তো তোমারই শিশু
আজ হইয়াছে তারা প্রাণ পিপাসু ;
ভুলিয়াছে তারা নিজ উৎস
বাড়াইছে শুধু স্ববংশ ।।জন্ম লইয়া ধন্য আমি
ধন্য মাগো , হইয়া তোমারই অঙ্গ
থাকিতে যেন পারি মাগো
তোমারি সেবায় মগ্ন
মাগো ! তুমি দিয়াছ আমায় বাসস্থান
বিশ্বের মুখে , আনন্দ সুখে
যেন ; তুলিয়া ধরিতে পারি তোমারই গৌরবমান ।। -
মৃত্যুর পরে
মৃত্যুর পরে
-অমরেশ কুমারমৃত্যুই সত্য, মৃত্যুই জীবনের শেষ ঠিকানা
মৃত্যুই দিব্য, মৃত্যুর শেষ পরিণয় সবার অজানা ।
হারায়ে গিয়াছে সুখ, হারায়ে গিয়াছে সব কিছু
তাও যেন মৃত্যুর ভয়, আসিছে পিছু পিছু।।জীবনের শেষ বেলাতে আসিয়া
দু’চোখ স্মৃতিতে ভাসিয়া
সদা মনে হয় , এই বুঝি যাই
সাঁঝের ঘন্টা বাজিতে আর দেরি নাই ।।যাইতে হইবে ফেলিয়া ,সবকিছু ভুলিয়া
ছিলাম পরম সুখে, এ বিশ্ব মাতার বুকে
করিতে হইবে মায়া ত্যাগ, অবশেষে দেহত্যাগ।
মৃত্যু শয্যায় শায়িত হইয়া স্বর্গরথে যমপুরিতে যাই
যমের দেশে এর চেয়ে ভালো আর ঠিকানা নাই ।।প্রশ্ন জাগে মম মনে-
যমালয়ের প্রাসাদ ঘুরিয়া
ফিরিয়া, কি আসিয়াছে কেউ?
রহিয়াছে কি কেউ এমন চেনাজানা?
সুধাই তারে আমি,
হে বন্ধু, তুমি শোনাও যমের বাণী
মৃত্যুর পরে কি ঘটে সেথা
শুনিব আমরা, শুনিবে বিশ্বমাতা ।।আত্মার তো মৃত্যু নাই , আত্মা অবিনশ্বর
আত্মা দেহে দেহে বিরাজমান
দেহের মৃত্যু রহে , রক্তে-মাংসে গড়া দেহ
বিলীন হয় শ্মশান কিংবা কবরে
প্রিয়জনের দেহ বিলিনের সাথে আত্মা পুনরায় ধারণ করে কোন দেহে ?
দেহের লিঙ্গ রহে , আত্মার তো লিঙ্গ নাহি
তবে , মৃত্যুর পরে প্রাণের পুনরাবির্ভাবের এত কেন ভেদভেদী ? -
লড়াই
লড়াই
-অমরেশ কুমারলড়াই, লড়াই, লড়াই; এ কেবল ক্ষমতার লড়াই
মানুষ কাটিয়া, মানুষ মারিয়া করিছে এরা বড়াই।।
আবার উঠিয়াছে ডাক, করিতে হইবে লড়াই;
দেখো এইবার, কত মানুষ প্রাণ হারায়।
সন্তান কাড়িয়া, ফেলিয়া দিবে ছুড়িয়া
পারিবেনা মা, আনিতে কুড়িয়া ।
কত ঘর বাড়ি দাউদাউ করিয়া পুড়িবে
দেখিতে হইবে দূরে নির্বাক হয়ে দাঁড়াইয়ে
আত্মীয় স্বজনেরা যাইবে ঝলসে জ্বলিয়া
মৃতদেহ পড়িয়া রহিবে পচিয়া গলিয়া।।কতদিন? আর কতদিন?
এ মৃত্যুর লড়াই চলিবে সংসারে
মৃত্যুভয় তাড়াইয়া বেড়াইবে মানুষকে বারেবারে।
যাদের জন্য লড়াইয়ে পড়িছ তুমি মারা
অসহায়ে পাইবে না তুমি ডাকিয়া তাদের সাড়া;
তবু! কেন এ বৃথা মিছা লড়াই চালায়ে
নিজ ঘরে মৃত্যুকে ডাকিতেছ পূজার ডালা সাজায়ে,
ভুলিওনা, কত পূর্বপুরুষেরা দিয়াছে রক্ত —
বুক চিড়িয়া
কিন্তু, এরা দিতেছে কি সে মূল্য? রাখিছে কি মনে ?
দস্যু এরা, দানব এরা, অসৎ-এর এরা ভক্ত —
নিয়াছে রক্ত ঢোক গিলিয়া।নিজ স্বার্থে, ক্ষমতার অপব্যবহারে
এরা নিজের সন্তানকে মারে;
তুমি ক্ষুদ্র, তুমি তুচ্ছ, নাহি কোনো দাম তোমা
লড়াইয়ের বশে ছাড়িবেনা, করিবেনা তোমায় ক্ষমা।
কেন? তবে কেন? তুমি করিছ এমন লড়াই?
এরা তো শুধু করিতেছে রাজ-ক্ষমতার বড়াই ।।চাহিয়া দেখো তুমি, মারিছ যাহার বুকে গুলি
অন্ধকারে, কাটিছ যাহার গলার নলী;
যে বা পাঠাইল তোমায়, হাতে দিয়া ছুরি
কাজ শেষে, ফেলিয়া দিয়া, ছুঁড়িবে তোমায় নুড়ি ।
রাতের অন্ধকারে, নিলে যাহার নাড়ী ছিঁড়ে
জন্মকালে একই সাথে আসিয়াছিলে ভূমিষ্টতলে
মা, হাসিয়া বলিয়াছিল,
“মোর ঘরে আসিয়াছে, দু’ টুকরো হীরে”।
ভাবিলেনা তুমি, ভাবিলে যুদ্ধে জয় করিয়াছি আমি।
হইলো শেষ, তোমারি স্বার্থ-ক্ষমতার লড়াই,
হইলো শুরু, মায়ের অন্তরের লড়াই।ওরে মূর্খ ! ওরা স্বার্থান্বেষী লোভী মানুষ
জানে শুধু লড়াই, জানেনা বাঁচাইতে মানুষ ।
মনে রেখো করিবার আগে লড়াই
এ বিশ্বের শান্তি রহিয়াছে তোমারই হাতে বজায়।
কত শিশু রহিয়াছে অনাহারে,
যুদ্ধ নিয়াছে তাদের পিতা কেড়ে
ফেলিওনা মেরে, নিও না মায়ের সুখ কেড়ে।
আপন আমি, আপন তুমি,
আপন মোর এ বিশ্ব ভূমি;
তবে কেন করিতেছ যুদ্ধ? কী হইবে মিছে এ লড়াই
যে যুদ্ধে অসহায় মানুষ প্রাণ হারায়। -
শিশির বিন্দু
শিশির বিন্দু
-অমরেশ কুমারমোরা ছোটো ছোটো শিশির বিন্দু
একত্রিত হইয়া বানাইয়াছি সিন্ধু ;
ভাবিওনা ক্ষুদ্র বলিয়া পারিবোনা ভাসাইতে
মনে কি পরে ?
সেইদিনের কথা—-
যেদিন বাঁধ ভাঙ্গিয়া, আসিয়াছিলাম আমি
তুলিয়াছিলাম সমুদ্র বক্ষে সুনামি।
কত ঘরবাড়ি গিয়াছিল ভাসিয়া,
কত মানুষ , কত প্রাণী হারাইয়াছিল প্রাণ;
এখনো কী ভাবিতেছো!
আমি ক্ষুদ্র, আমি তুচ্ছ শিশিরবিন্দু?মোরা লাগিয়া থাকি ঘাসের গায়ে;
পদপৃষ্ট করিতেছ মোদের, তোমাদের ওই
কাদা মাখা ধূলা পায়ে।
তবুও সযত্নে দিতেছি পা ধুয়ে;
করিতেছিনা ঘৃণা, বলিতেছিনা কিছু-
শুধু চাই মাথা গোঁজার ঠাঁই
তোমার ওই পায়ের নীচে।তাও যদি না পাই—
ভাবিওনা, এমনিভাবে থাকিব সারাজীবনে
কখনো ভাসাইবো তোমাকে তোমারই অশ্রু নয়নে
মনে রেখো-
তোমার ওই নয়নের অশ্রু
সেও ক্ষুদ্র শিশির বিন্দু;
যে মুহূর্তে ভাসিবে, তোমার ওই অশ্রু নয়নে
দেখিবে কেমন লাগে,ভাসিতে হে বন্ধু!
যেদিন, মোরা সবে মিলে একই সাথে
ধরিব একে-অপরের হাত
ভাবিও , ওইদিন হইবে তোমার শেষ রাত ।। -
গ্রাম
গ্রাম
-অমরেশ কুমারগ্রামের পথে কূজন সুরে
ডাকছে পাখি আপন মনে
হালকা হাওয়া বইছে দুলে
মৌমাছিরা উড়ছে ফুলে
গন্ধে ভরা আমের মুকুল
ফুল ফুটেছে গাছে বকুল ।।দোয়েল পাখি উড়ছে তালে
কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে
সন্ধ্যা হলে রাখাল ছেলে
ফিরে আসে মায়ের কোলে
ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে
ঘুম পাড়ায় মা গান বানিয়ে ।।শিশুরা সব খেলছে ছুটে
খেলছে তারা ধূলার মাঠে
মাখছে তারা ধুলাবালি
মুখেতে সবার হাসির কালি ;
নামছে সবাই পুকুর ঘাটে
করছে মজা সাঁতার কেটে ।।সবুজ সবুজ ধানের খেতে
চাষীরা সব উঠেছে মেতে
কাস্তে হাতে কাটছে ধান
মুখেতে সবার আনন্দের গান ;
নারী পুরুষ সবে মিলে
বাঁধছে ধান কোমর তুলে ।।সোনালী আভার ধানের কণা
ঈশ্বর সৃষ্ট প্রকৃত সোনা
খাচ্ছে দোলা হাওয়ার সাথে
উঠছে দুলে তরঙ্গ তুলে
দুচোখ যত যাচ্ছে দূরে
দেখছি তত ঘুরে ঘুরে
সবুজ শ্যামল বসুন্ধরায়
এমনি রূপ গ্রামেই রয় ।। -
ভ্রুণ
ভ্রুণ
-অমরেশ কুমারচারিদিক বালুরাশি শুষ্কমরু প্রান্তর
পড়িয়া রহে ক্ষুদ্র এক বীজ বালির উপর ।
দিন যায় , রাত যায়
বীজ মধ্যস্থ ভ্রুনের জন্ম সময় হয়
বাহির হইতে আসে ডাক ,
” হইয়াছে ভোর ভাঙাও , ভাঙাও হে তোমার ঘুমের ঘোর ” ।কানে যায় তাহার ,
কে, কে দিলো এ হাঁক তাহারে —
মনে মনে ভাবে ,
রহিয়াছি আবদ্ধ , বাহির হইলে উন্মুক্ত।
না, না, আর ঘুম নয়; হইতে হইবে উদয়।তাই, ভয় হয় মনে, কী হয় কখনে
বাহির হইলে পাইবো কী আলো,
পাইবো কি জলের ছোঁয়া
নাকি পাইবো আরো অন্ধকারের মায়া ।
অবশেষে সূর্যরশ্মি ,বীজে আসিয়া পড়ে
প্রতিসৃত আলোকরশ্মি ভ্রুণকে আলোকিত করে ।ভ্রুন কহে ,
কোথা থেকে এলো এ আলো
অন্ধকার দূর যে হলো ।
পুনঃরায় শোনে ,
এসো ভ্রুন এসো, বাহিরে এসো
হয়েছে সময় , ঘুম ভঙ্গিবার
নাহি সময় আর চুপ থাকিবার ;
আমরা, তোমার বন্ধু মোরা
বাহিরে এলে দেখিতে পাইবে, এ বিশ্বজোড়া ।
আনন্দ , উৎসাহে ভ্রুণ কহে ,
বাহির হইবো ,অন্ধকার হইতে
ঘুচাইবো আজই এ অন্ধ জীবৎদশা ।মাথা তুলিয়া, ফাটাইল যবনিকা
ঘুচিল অন্ধকার, দেখিল আলোর নিশানা;
নাহি ক্ষুদ্র ঘর তাহার আর এ জীবনে
ছড়াইয়া সে পড়িয়াছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে ।নামিল জীবনে, সূর্যের প্রখর আঘাত
কী ভাবে লড়িবে সে বিরুদ্ধ তব এ সংঘাত;
পুড়ে ছারকার হয়ে যায় ,
প্রতিকুল এ পরিবেশে
শতশত আঘাতে লুটায়ে পড়ে
প্রকৃতির পাদদেশে ।আঘাত, যন্ত্রনা সহিতে না পেরে —
বীজমধ্যে পুনরায় লুকাইবার চেষ্টা করে
কিন্তু, হায় ! বৃথা প্রচেষ্টা
লুকাইতে না পারে ;
যে যবনিকা ফাটিয়ে যায়
সে কি পুনরায় জোড়া যায় ?নিরুপায় হয়ে ,
মৃদুস্বরে করুণ ভাবে কয় ,
হে ঈশ্বর ,
তোমারই ভরসায় আশা লয়ে
আনন্দে আত্মহারা হয়ে
নতুন পথের ঠিকানা খুঁজিলাম ;
অথচ, তুমি চুপচাপ শুধু
দেখিতেছো বোবা হয়ে ।আমি এক ছোট ভ্রুণ
ছোট্ট চারাগাছ
আসিতে আহবান করিয়া
কী সুখ দিলে আজ ?
জন্মকালে জন্মস্থানে
দিলে ক্ষণ-শান্তি
পরক্ষণেই কেড়ে নিয়ে
জীবনে নামলে অশান্তি ।
কে বা বলেছিল তোমায়
আমায় ডাকিতে
ছিলাম যে বেশ
শান্তির ঘুম ঘুমাইয়ে ।কিছুপরে , সে যেন শোনে
কে যেন তারে ডাকে
কতক্ষণ থাকিবে ঘুমাইয়ে
ও ছোট্ট কুঁড়েঘরে?
বাহির চাহিয়া দেখো ,
কত বিশাল এ প্রকৃতি
জন্মাইবার সাথে সাথে
হওয়া কী যায় বনস্পতি?
কত পরিশ্রম, কত প্রচেষ্টার পর
হওয়া যায় প্রতিষ্টিত।
আর, তুমি; জন্মাইয়া,
বাড়িবার আগেই মরিবে ভাবিলে ?
কেন তবে যন্ত্রনা পোহাতে
যবনিকা ভেদ করিলে ।ওহে বন্ধু , জাগো ,ওঠো
আমি যে রহিয়াছি তোমারই সাথে
ছাড়িবোনা কখনো তোমার পিছু
থাকিব সর্বদা দিনে রাতে ।
রহিয়াছি দূরে ,
নাহি আছি পাছে
তবুও আমার বিদার আলো
ছড়াইয়া দেব তোমারই কাছে ,
দাও ছড়াইয়া দাও , তোমারই ছায়া
এ প্রকৃতির বুকে
কতশত নিরুপায় মানুষ আশ্রয় লইবে
মনেরই সুখে ।। -
পাখির কান্না
পাখির কান্না
-অমরেশ কুমারগ্রামের শেষে , মেঘের বেশে
ভাসছে পাখির ছানা ।
দস্যু কারা , হাসছে যারা
করছে তারে হানা ,
পক্ষীমাতা বিপদ ভেবে
করেছিল মানা ,
কিন্তু , খেলার ছলে , মনের ভুলে
মেলেছিল ডানা ।
গ্রাম নিবাসী মুখেতে হাসি
মেরেছে তীরের কাঁটা ;
পড়লো পাখি বুঝায়ে আঁখি
যাইলো ডানা ছাঁটা ।
ছটফটিয়ে ধুক ধুকিয়ে
ডাকিলো জননীর।
ভুলের পথে প্রাণটা গেল
মাগো , তোমার
ঝরবে নয়ন নীড় ।। -
কামার
কামার
– অমরেশ কুমারকামার কামার ওহে কামার
তুমি নাইকো কারো কথা শোনার
তবে কেন বসিয়া রহ একা ঘরে
তিল তিল করে মরে মরে।
সারাদিন ঘরে বসিয়া ,
জ্বালিয়েছ আগুন , পিটিয়েছ লোহা
না দেখিয়াছ ঘুরে এ প্রকৃতির শোভা।
সারাটি জীবন ধরিয়া
ফেলিলে চোখ দিয়ে জল
কিছু কি পাইলে তারই ফল।
আগুনে পুড়িয়া, ঘামিয়া,
ঝলসাইয়া বানাইলে অস্ত্র
মোরণবান বানাইয়া তোমারই বুকে
বিঁধিছে তোমারই অস্ত্র।।চাহিয়া দেখো হে কামার
সময় নাইকো আর তোমার;
বাঁধিতে হইবে কোমর, নামিতে হইবে জলে,
সমাজ ডুবিতেছে, বাঁধ ভাঙ্গিয়াছে
কেহ নাই সারিবার,
এখনও কি শুধু চাহিয়া দেখিবে,
হে কামার?
সব কারিগর ভাসিয়া গিয়াছে স্রোতে
শুধু তুমি আছো বাঁচিয়া !
এখনোও সারাইলে বাঁধ
বাঁচিবে সমাজ, বাঁচিবে মানুষ।
তুমিই এখন সবার ঊর্ধে
তুমিই পারো হে কামার,
রুখে দাঁড়াতে
যত সভ্য অমানুষের বিরুদ্ধে।।তোমারই অস্ত্র দিয়া
যারা ভাঙিয়াছে বাঁধ
কেউ তারা কাছে নেই আছে
শত শত মাইল দূরে,
বহু উঁচু অট্টালিকার চূড়ায় চড়িয়া
গাহিতেছে গান নরম সুরে;
মাথা উঁচু করে, তাদেরি দিকে
চিৎকার করে বল হে কামার,
“বাঁধ ভাঙিয়াছে, বাঁধ জোড়া লাগিবে
লোহায় মরিচা পড়িলে, ইস্পাত আসিবে” ।।