-
কবিতা- দৈনিক
দৈনিক
-অযান্ত্রিকতুমি হয়তো বুঝতেই পারবেনা,
যেহেতু হলুদ শহুরে আলোর বন্যায় সেভাবে ভাসোনি কোনোদিন।
যদিও ,তোমার শহর বড় প্রাচীন আর মানবিক,
আকাশের সাথে কথা বলা ইমারত,কালো দীর্ঘতম রাস্তায় সন্ধ্যা ক্ষণস্থায়ী।
দিনের কারখানার ছুটির বাঁশি বাঁজলে,ঝুপ করে ডুব দেয় সূর্য,
যেখানে পাশের আগ্রহী বাতিস্তম্ভ থেকে হলুদ আলোর মতো আলগোছে চুয়ে পরে রাত।
ঘামে ভেজা রুমালেরা কি আর করে ,হয় বাস ধরতে ছোটে অথবা ট্রেন।
আলো আধারী রাস্তা,ব্যাস্ত রেস্তরাঁর পাশে জেগে ওঠে চামড়ার বাজার,
বিক্রেতার চটুল অথচ সন্ত্রস্ত চাউনি খুঁজে যেতে থাকে ক্রেতা ,রাতের আস্তিনে।
খাঁকি টহলদারী গাড়ি জানিয়ে দিয়ে যায় বিধানের দাম,
ঠিক তক্ষুণি, শান্ত মুঠোফোন জেগে ওঠে জানতে চায়,
”কি গো আসছো কতক্ষণে,ফেরার সময় মেয়ে স্কুলের টিফিনের কিছু নিয়ে এসো”
আরশহুরে ব্যাস্ত বাস ট্রাম,সেই কথা গুলোকে ,পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলে যায়,
“এ শহরে তোমার কোনো বাড়ী নেই”হলদেটে আশ্বাসে রাস্তার বাতিস্তম্ভ গুলো সায় দিয়ে বলে,
“ভয় পেও না,যতক্ষণ না তুমি এই শহর থেকে দূরে চলে যাচ্ছো,ততক্ষন এই সন্ধ্যে বেঁচে থাকবে”
আর আমরা,যারা রোজ প্রয়োজন ঘাড়ে করে জীবন পিষে তৃপ্তির তেল বার করি,
তারা সেই আশ্বাস ,বুকে করে দূরের কোনো ছোট্ট স্টেশনে গিয়ে নামি।
আর একটা মধ্যবিত্ত সাইকেল ,হাত ধরে নিয়ে যায় একটা দরজার সামনে,।
হয়তো তার ওপরেই অপেক্ষায় আছে ,জল ভর্তি একটা গ্লাস,
রাতের খাবার বুকে নিয়ে একটা থালা,ডালের বাটি,
উদগ্রীব দরজার কড়া যেনো বলে ,এসো আমায় ছুঁয়ে জানিয়ে দাও তুমি এসেছ ফিরে।
আর সেটা করতেই ,একটা শব্দ জানান দেয়,
“কে, খোকা এলি, এত দেরী হলো” -
কবিতার তুমি
কবিতার তুমি
-অযান্ত্রিকযেভাবে লিখে ফেললাম হাজার কবিতা,আঠাশ খানা কবিতার বই,
যেভাবে জ্বালিয়ে শব্দের ঝারবাতি,বসিয়ে ফেললাম কথার মজলিশ
না-কথারা এক এক করে এসে শুনিয়ে গেলো আদিম হৃদয় প্রিয়তা
নদী অরণ্যে পাহাড়ের স্তব পাঠ করে ,খুলে ফেললাম চশমা
এগুলো কি তোমার জন্যে নয় নিলোফার?
লক্ষ,অযুত কোটি কবিতায়, প্রত্যেকটা “তুমি”কি তুমি নও ?
আমি শব্দের প্রতিবিম্ব দেখছিলাম শান্ত মনের স্ফটিকের দলদলে,
কথাছিলো মুখোমুখি হলে শরীর নয় ছায়া,নীরবতার বিনিময় হবে,
কবিতার মধ্য রাতে, আচমকা ঘুমের মধ্যে জেগে উঠবে তুমি,
মাথার কাছে টিপয় থেকে খাবে জল, ভিজিয়ে নেবে গলা আলজিভ।
বুঝতে কি পারবেনা দূরে যেখান থেকে মনকেমনের গন্ধ আসে,সেখানে
আমরা যারা শব্দের প্রতিবিম্ব দেখছি,মনে করছি তোমার ঘুমন্ত মুখ।
কবিতার প্রতিটা অক্ষর,দাড়ি,কমা, রেফ, ছুঁড়ে দিচ্ছি তোমার দিকে,
আলোর অভাবে আমাদেরই আঙুলে জ্বেলেছি মোমবাতি ,কবিতার রাতে,
আধ্ঘুমন্ত তোমার মুখের চারপাশে,চিরুনি বিহীন তোমার এলোমেলো চুল,
তোমার অবিন্যস্ত বিছানায়, বালিশে চাদরে ছুঁয়ে ফেলতে চাইছে তোমায়,
আমাদের কবিতার অক্ষর গুলো নিঃশব্দে নিঃশ্বাসের মতো বিঁধে যাচ্ছে,
তোমার কপাল, ঠোঁট,চিবুক ,চিবুকের তিল ,ভারী হয়ে আসা চোখের পাতায়।
তুমি কি চিনতে পারবে না আমাদের সেই “তুমি”কে ?তুমি কি ভয় পাবেতুমি ভয় পেয়ো না। তুমি ঘুমাও
তোমাকে ছোঁবে না কলমের লালায়িত জিভ,
দূরের থেকে ছুঁতে পারবেনা কবিতার ভয়ঙ্কর হাত,
কবিতার রাত জাগা অভ্যাস,শারীরিক উষ্ণপ্রিয়তা
তোমাকে ছোঁয়ার তীব্র আকাঙ্খায়,শব্দের প্রতিবিম্ব ভেঙে ফেললেও,
তোমার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না সেই চাপা আর্তরব,
তোমাকে ভয় দেখাবে না,কবিতার অধলিন আবেগ হিমাঙ্কের কাছাকাছি ,শীতল,
তোমার কপালে চুমু খেলে তুমি বুঝতেও পারবেনা।
তোমার হাতের উপরে হাত রাখল টের পাবে না।
তোমার সাথে সারারাত শুয়ে থাকলে তুমি নষ্ট হয় যাবে না।
শুধু , জেগে উঠলে সকালে তোমার পায়ের কাছে দেখবে রজনীগন্ধার
তারপরেও কি তুমি বুঝতে চাইবে না?এত এত কবিতার “তুমি” আসলে তুমি।তারপর যখন স্বাতী নক্ষত্রে ছায়া জেগে উঠবে বেহুলার জলে,
রূপশালী ধানের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা জমবে শেষ মাঘের শিশির,
তোমার সাথে সামনা সামনি দেখা হবে কোনো নতুন কবির কবিতায়।
তুমিও ছড়িয়ে ঝর্ণার মতো হাসি বলবে “কি খবর,দেখা হলো অনেক দিন পর”
কিন্তু ,তুমিও জানবেনা আমি প্রতিদিন তোমার সাথেই থাকি,
এক ঘরে,এক ভাতের থালায়,এক বিছানায়,এক পোশাকে।
কিন্তু ,তুমি বুঝতেও পারবেনা আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ,
তোমার মুখের দিকে,তোমার কপালের ডুবন্ত সূর্যের মত টিপের দিকে।
অক্ষর ভর্তি কবিতার মাঝেও আমি শুধু তোমাকেই আঁকছি নিঃশব্দে,
আমার কবিতার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ,রোমকূপ যত “তুমি”ফুল ফুটে আছে,
সেগুলো সব সব শুধু তোমাকেই বোঝায় নিলোফার,
শুধু তোমাকেই বোঝায়,
কিন্তু,
তুমি বুঝতেও পারো না।। -
বনধ
বনধ
-অযান্ত্রিক
দাবীটা যখন টিকে থাকার,
থামলে পরে হিসেব শেষ।
চলতে চলতে গলা তোলার,
ছাড়ছে মানুষ সে অভ্যেস।নিশান শুধু রং বদলায়,
মানুষ বদল হোক না দেখি।
যে যখনই দেশটা চালায়,
ভেঙে যায় ধান একই ঢেঁকি।তোমার হাতের পতাকা লাল,
তাহলে তুমি ওদের দলে।
আমার শুধু হাড় কঙ্কাল,
খিদের জ্বালায় এখনো জ্বলে।ওদের নাকি মাটির মতো,
মায়ের সোহাগ গাজীর পীর।
আমি রয়েছি আগেরমতো,
জল রেশনে লম্বা ভিড়।কেউ হাতে কেউ পদ্ম যোগায়,
আসলে কিন্তু পাতছে হাত।
সব মাথা এক ছাতার তলায়,
বাইজি নাচে কাটায় রাত।আমার পকেটে রুমালদ্বিধা,
খরচ কমালে কমছে আয়।
দাবী মুঠো হাত, বড্ডো সাদা,
মানুষের কথা ভুলেই যায়।বললে কথা ,কথার পরে,
হুঁশিয়ারি দেন পাশের লোক।
টিকে থাকা বনধ বন্ধ করে,
এবার কিছু অন্য হোক।দাবীর করো না ,দাবিয়ে দেবে,
বুকের উপর ঝুলবে হার।
যেনো ইতিহাস খবর নেবে ,
ঠিকছিলো কি ভুলটা কার।হয়তো আমার নরম কলম,
জানলা টোকায় নিদ্রাহীন।
সময় ব্যাথার ক্ষতর মলম,
আসবে জানি পাল্টালেদিন।আমি তুমি ওরা আমরা হবো,
পেট চামড়ার ভয়টা শেষ।
ধর্ম বিভেদ পাবে যে কবর,
সবাই বলবে আমার দেশ। -
প্রেম ও পাইন গাছ
প্রেম ও পাইন গাছ
-অযান্ত্রিকবসন্ত আর মাফলারের বড় মিল,যেমন প্রেম আর বিরহের,
উত্তুরে হাওয়া, শীতের পাইন গাছের সারা শরীর ছুঁয়ে,
যদিও বলে যায়,”তুমিতো প্রত্যাখ্যাত নও, তবু নির্লিপ্ত কেন?
তুমিও তো ভালোবাসো, মাটি, বাতাস আর বসন্ত”
এক ঝলক কুয়াশার হাসি, আর উত্তর আসে,
“কে বললো, তোমায় আমি নির্লিপ্ত, কে বললো আমি প্রেমিক নই,
ওই যে দূরে বসন্তের রোদ্দুরে গ্রাম, যেখানে দু’ চার ঘর সুখের বসতি,
যেখানে প্রতিদিন ক্লান্ত সূর্যেরা ফেরে, দিনের দুঃখগুলোকে ঘুম পাড়াতে,
ওই যে পাহাড়ের গায়ে,শীতের দিকে মুখ করা গীর্জা, ফুলের বাগান,
যেখানে রোজ এক প্রেমিক সময় আসে, তার প্রেমিকার সমাধিতে ফুল নিয়ে,
মাফলারে মুখ ঢেকে, শীতের নিঃস্বতা, রিক্ততা ছুঁতে পারে না তাকে।
সবাই তো নদী হতে পারেনা, বুকে পাথরের মত অতীত তাও অবিরাম ছুট,
সবাই তো ঝর্ণা হতে পারেনা, বার বার পরে যাওয়া, তবুও যৌবনা চলন।
সবাই তো মানুষ হতে পারেনা, ঠোকে গেলেই আঁধার প্রিয়তা।অনেক মানুষ দেখছি ভিড়ের মতো, সবাই কিন্তু সেই ভাবে মানুষ নয়,
অনেকেরই শরীর হাড় রক্ত মাংসের ভিতরে একটা পাইন গাছ আছে,
ঋজু, সুঠাম, আকাশের দিকে তাকিয়ে, সয়ে যায় শীত গ্রীষ্ম বসন্ত।
তারা সাপ দেখলে দৌড়ে পালায় না, তারা সুন্দরী দেখলে হাসে না।
তাদের বুকের মধ্যে পাঁজরের খোপ, তাতে বোধ, প্রেম এর সাজানো আবাসন।
তারা বসন্ত এলে, প্রেমের নেশায় ভেসে যায়, কিন্তু ডুবে যায় না,
যেমন প্রতিবার শীতে সংসারী মন, নাক কানের দরজা আঁটে মাফলারে।
তারাও ভালোবাসে, তারাও বেঁচে থাকে প্রেমে, তারাও সাড়া দেয়,
শুধু আমার মতো ধীর, স্থিতধী, মাফলারি নিজস্বতায়, আটকে রাখে বিরহ।
আসলে প্রেম আর বিরহে বড় মিল, তাই দূর থেকে তাদেরও পাথর মনে হয়। -
অপবিত্র
অপবিত্র
-অযান্ত্রিকতুমি আসতে সংসার সামলে,
কেউ দেখে ফেললে অস্বস্তি।
প্রেমের উপমা তৈরি হলে,
বজ্র হবে আমাদেরই অস্থি।চামড়ার নীচেই লাল মাংস,
গায়ের গন্ধটা নাকি আঁশটে।
সামনেই জ্যান্ত কচি ধ্বংস,
আমাদের দেরি হবে আসতে।কে জানে কিভাবে হয় খরগোশ,
চিৎ হলে শুনতে পাই আওয়াজ।
স্পর্ধার ওপারে নাকি যেটা স্বর্গ,
সেটাই নরক বলছে যে সমাজ।না পেলে বেড়াল পেলে বাঘ নেকড়ে,
পাঁজরের থেকে খুলে নেবেই কবজা।
বেরোবে চোখ গলির থেকে ঠিকরে,
কে আছিস, আমাদের নিবি নিয়ে যা।ধরলে বিয়ে না ধরলে পরকীয়,
কপালের উপর সিঁদুর নাকি রক্ত।
হাতে, আঙ্গুল নাকি সত্যি অঙ্গুরীয়
শেকল জানে ধরে রাখা কি শক্ত।অনেকেই শুনছি সময়ের মতো বিদগ্ধ,
কিলবিল পোকা কত সম্পর্কের সংজ্ঞায়।
তবে আর কি ভূমিকা রইলো বিভক্ত,
দু’জনেই চলো ডুব দিয়ে আসি গঙ্গায়। -
আবাসিক
আবাসিক
-অযান্ত্রিকওহে আগুনে আবাসিক যদি ফিরে যাই, ভুলে যেও না, কথা রেখো,
কথা রেখো, যেমন হৃদয়ের জমিতে গড়ে ওঠা পাশাপাশি আবাসনে।
বারান্দা থেকে বারান্দায় উড়ে যায় ওড়নার অতিথিরা , দেখো,
যেমন টবে রাখা নয়নতারা নিঃশব্দে ,অরণ্যে ফেরার দিন গোনে।যদি ফিরে যাই,তুলে নিও শীতলপাটি,গোড়ালি ছুঁয়ে থাকা ঠান্ডা রোদ্দুরে,
সে নেহাত সোহাগী লাউ গাছ, জানে না বানানের ভুল,শুধু ফল চেনে প্রসবে।
উঠোনে ছায়া ফেলে দেখে ,হরিণের শিঙ রূপকি খেঁজুর পাতা,যেমন ভবঘুরে,
বিশ্বাস রেখো ,যদি ফিরে যাই কালিয়াদহ জলে,তাহলেও আবার দেখা হবে।নেহাৎ শীতের দস্তানা হাতে,উষ্ণতা বুঝে ছুঁয়ে থাকে মানসিক কাঙালপনা,
বিছানার আবেশে নেশা, চশমার বেড়াজালে শুকায় রাতের চিলতে বিপ্লব।
ওহে আগুনে আবাসিক,চলে যাওয়া মনে রাখতে হবে তোমায়,সময় রাখবেনা,
যেমন সাজানো বাগানের নকল ঘ্রাণ সম্বল আবাসন,ছাতে বনসাই রাখা টব।খোঁজে ইতিহাস, ভিজে মাটি লাঙ্গলের দাগ,বুক যদিও এখনো কান্না প্রধান,
ওহে আগুনে আবাসিক, কুয়াশার সাথে শত্রুতায় চিরকাল বেঁচে থেকো।
নিভে যাওয়া আগুনের কুণ্ডের পাশে ,জড়াজড়ি করে যারা প্রতিদিন ঘুমান,
তারাও সময়ের আবাসিক,যদি ফিরে না আসি,ভুলে যেওনা ,কথা রেখো। -
বাতিল ওয়ালা
বাতিল ওয়ালা
-অযান্ত্রিক
বহুবার সেজেছি বাতিল ওয়ালা, পুরোনো কাগজ,গ্লাস,ভাঙা শিশি,
বুকে ফাটা অপমান কলসী, না বলা লজ্জা,ভুলঠিক বোঝা দুরন্ত সালিশি।
ঘুরেছি মনের পাড়ায়, হেঁকে হেঁকে যা কিছু বাতিল,সব কিছু নেবো বলে,
জানলার পর্দা স্মৃতিমুখ, সুধায়,”ওহে পুরোনো অভিমান কি বাতিলের দলে।হয়তো আরশিনগর ,হয়তো বাড়িখানা ,বিরোহী প্রেমের ফিরে যাওয়া রোদের,
আমি ফেরিওয়ালা, লেনদেনিয়া কাজ,এরথেকে কিছু বেশী বলিনি ওদের।
বলিনি কাঁচের জানলা, নরমে গরমে সাজানো কাঁচাপাকা মনের দেয়াল,
অভিমান পুরোনো হলে ভালোবাসা হয় ,শুয়োপোকাও প্রেমিকপ্রজাতি ।বাতিলের দলে রাশভারী,মেহতাব রোশন, ছোটো ছোটো ভালোলাগার শ্রেণী,
গ্রাহ্য করেনি মন খারাপি, আর চোখে দেখা, ক্ষনিকের প্রেম জেগেছে যখনই।
ঝুড়ি ভরা কাল ঘাম,ভাঙা শিশি, গ্লাসের গায়েও ঠোঁটের ছাপ স্মৃতি জাতক,
দেখে নিয়ে পরের ক্লাস শুরু করেন,আবার লেনদেনিয়া মনের অধ্যাপক।সন্ধ্যে জানে কার কখন হয়ে যায় বাতিলের সময়,ভেঙে ফেলে বাড়িখানা,
আবাসিক রঙের রাত ,পোতে খুঁটি বোঝাতে কতদূর নিজের সীমানা।
নজর এড়িয়ে ছলকে পরে পুরোনো বোতল প্রথম বিরহ ভালোবেসে,
অনেকেরই মনের পাড়ায় দুপুর গড়ালে বাতিল ওয়ালা আসে। -
নবিশি কলম
নবিশি কলম
-অযান্ত্রিকতোমরা বলেছিলে সুদিন আসবে,
বনস্পতির ডালে ডালে জেগে উঠবে কচি কচি কলম সেনানী,
কাগজ কলম হাতে অপেক্ষায় আছি তাই,
নবিশি কলম আমার, আমি আর কতটুকুই জানি।তোমরা বলেছিলে প্রেম আসবে, চিরবসন্ত আসবে,
গোলাপের পাপড়ি, আর চকলেটের কবিতায় ভরে উঠবে খাতা।
বলেছিলে বিশ্বাস রাখো, কবিতায়ও হবে প্রতিবাদ,
শব্দেরা পাল্টাবে গদি, সত্যি বলছি বিশ্বাস হয়নি কথাটা।কবিতায় কন্যাভ্রূণ হত্যা নয়, দেবকন্যা আসবে আমাদের ঘরে,
অনুপম দেবশিশু খেলবে উঠোনে, আর তার ফুল তোলা ফ্রক।
একটা ধানের গন্ধ মাখা হাওয়া জড়িয়ে থাকবে আপন করে,
নবিশি কলম জানে না কিছুই,শুধু পথ চেয়ে অপেক্ষার শখ।বদলে সময়ের পরতে পরতে নেমে এলো রাত,
একে একে ভেঙে গেলে রাজ্য, সম্রাটেরা সব একা। হঠাৎ করে নিশ্চুপ।
বুকের পরে ফুল, কলম বিহীন বরফের মতো হাত,
নবিশি কলম আমার তলিয়ে যায় চারপাশে শুধু মৃত্যুর অন্ধকূপ।শব্দশকট ছাদহীন, স্থির স্থবির নবজাতক নিয়ে,
নিরস শাব্দিক খেলনার সাথে আর কতদিন খেলে যাব, হে কলম সেনা,
যারা চলে যায় মাঝ পথে হঠাৎ কথা থামিয়ে,
নবিশি কলম শুধু এটুকুই জানে, তারা আর কোনোদিন ফিরবেনা। -
সেই ভাবে
সেই ভাবে
-অযান্ত্রিককিছু কিছু মানুষ সীমানা পেরোতে পারে,যদিও ডানা থাকেনা তাদের,
একটার পর একটা মনের আকাশ মেঘ তারা তাদের জীবনের পুঁজি।
আর কিছু মানুষ সারা জীবন একবারও আকাশ দেখেনা মাথা তুলে,
সব মানুষতো সিংহ শিকারে যায় না, তাই পায়ের দাগ চেনা হয়ে ওঠে না।যেমন অনেক মেয়ের চোখে সাগর দেখি, কিনারা দেখিনা কখনো,
সেই চোখ শুধু চোখ নয়,যেনো আঁধারের আকাশে এঁকেছে রামধনু।
অলুক্ষনে নীল হলদে কল্কা করা শাড়ির জমিতে চোখের জল শুকনো,
তাদের নিঃশব্দ সংগীত শুনে যায় বাউলের একতারা আনমনে,শুনো।অনেক পুরুষ বাঘের গন্ধ চেনে,গাছের গায়ে চিনে নেয় লেগে থাকা লোম,
কিন্তু পাশে থাকা মানুষের গন্ধ পায়না, বোঝে না ডুবে যাচ্ছে মনটা কখোন।
ঘোড়সওয়ার হয়না সব পুরুষ,তবুও চিপটির দাগ চেনে ছোটার অজুহাতে,
সব পুরুষ তো পুরুষ হয় না সেই ভাবে,কিছুতো ফারাক থাকে দাসে, সম্রাটে।কিছু মেয়ে কবিতা লেখে বেশ,কারো কারো কবিতা গানের মতো শোনায়,
পাইন গাছের চুমু খেয়ে আসা হওয়া রোজ মরার আগে বাঁচার যুদ্ধ শেখায়।
এমনও পুরুষের কথা জানি মসি অসি শুধু নয় ভালোবাসার কথাই বলে চলে,
সব পুরুষ তো পুরুষ হয় না সেই ভাবে,কেউ কেউ মানুষও হয় ফেরার সময় হলে। -
একলা ফেরা
একলা ফেরা
-অযান্ত্রিকআগের বছরে আমি খুব সংবেদনশীল ছিলাম,
তাই হয়তো জলে ভরে উঠতো চোখ।
আগের বছরে আমি খুব সবুজ,খুব প্রত্যয়শীল ছিলাম,
তাই জামার গায়ে উড়ে আসতো পাখি।
বিষুব রেখার মত দীর্ঘতম ক্লান্তির একদম শেষে,
আশ্বাস বাতি জ্বালানো জানতো সব লোক।
আগুনের পাশে বসে অনেকেই আঁধারে আঁকত চাঁদ,
কেউ কেউ জ্বালিয়ে রাখতো জোনাকী।আগের বছরে আমি খুব সংবেদনশীল ছিলাম,
তাই হয়তো চোখে চলে আসতো জল।
অসময় চুমু খেতো পাশ ফিরে মরে যাওয়া জলযান,
ভাবনার পালে লাগলে বাসন্তী বাতাস হঠাৎ।
তোমার ফেরার গন্ধে জটায়ুর ডানার মতো নামতো সন্ধ্যে,
বুকের উপর জেগে উঠতো আস্ত মফঃস্বল।
যারা দূরে দূরে জ্বালিয়ে রাখত জোনাকী দিনের সীমান্তে,
তাদের গালের থেকে আমি চুরি করে আনতাম রাত।বিগত কয়েক মাস ধরেই আমি মেখে চলেছি সেই রাত,
রেশমী সুতোর মতো হওয়ার গায়ে ধুলো।
অথচ আজ একের পর এক আঘাতে আর ওঠে না আর্তনাদ,
চোখের মধ্যে শুকনো বরফ,বেদনার মরুভূমি।
দুহাতে মৃতদেহ ঢাকা ফুল,সাদা কাপড় ঘি চন্দনের ঘ্রাণ,
ছবিতে ফুলের মালা স্থীর স্থবির মুখগুলো।
চেয়ে আছি পথের দিকে যেখান থেকে প্রিয় মানুষের চলে যান।
মনে পরে,
কিভাবে ফিরতে হয় শ্মশান থেকে একা, শিখিয়ে ছিলে তুমি।