-
সম্মতির প্রার্থনা
সম্মতির প্রার্থনা
-আব্দুল লতিফ মন্ডলপ্রতীক্ষার অন্তে মিলেও মেলেনা,
তবুও কেন যে মানে না,
দু’ পলকের দেখায় গোধূলির সূর্য,
মনের আকাশকেও লালে রাঙায়।
আস্তে আস্তে বেঁচে থাকাটাও,
যেন এক জাদুকরের জাদু।
চোখ বন্ধ করেই যেন দেখি তোমায়,
চোখের আর কি দোষ বল,
চোখের সাথে তোমার চোখ মিলেই তো,
কেশের থেকেও কালো মেঘ ঘনায়।
আর তাই বর্ষার ময়ূরের থেকেও,
চঞ্চল যেন আমারই মন,
প্রার্থনা আমার এই যে, হাওয়া যেন,
ভাসিয়ে নিয়ে চলে তোমারই কাছে।
কল্পনার শহরেই যেন নিয়ে যায়,
আর সে খবর যেন অজানা তোমার,
সাথে সাথে না জানি আমিও।
প্রথম প্রথম এই যে অনুভূতি,
এতেই মিটিয়ে দিতে চাই নিজেকে,
কল্পনা-মল্লিকার, যদি থাকে সম্মতি। -
আবেগের খেয়া
আবেগের খেয়া
-আব্দুল লতিফ মন্ডলদেখলাম যেই তোমাকে,কি যে হলো,
হৃদয়ে আমার যে কি এক, নেশা ছেয়ে গেল।
নিজেকে সামলাবো কিভাবে,বড্ডো ভয় এখন,
আমাকে একটি বারের জন্য বলো।
লুকিয়ে ভেজা চোখে কেন আমার স্বপ্ন চুরি করো?
ধীরে ধীরে, কেন আমাকে আপন করে নাও?
আলো ছায়ার এক মায়াজালে,
কেন আমায় পাগল করে তোলো?
ভালোবেসে না ফেলি,নিজেকে না, হারিয়ে ফেলি,
কি করি এখন, আমায় বলো?
এ কেমন এক অস্থিরতা, বুঝিনা,
নিঃশাস- প্রশ্বাসেও তোমার সুবাস,
আমার মুশকিল , মন নেই আমারই বশে।
এইটুকু বলে দাও কি করে বোঝাই যে,
এতে আমার কোনো দোষ নেই ?
চাইলেও তো পাহারা দিয়ে কখনো,
দিন-রাতকে পারিনা থামাতে।
আসলে আগুন যেমন নিজেই জ্বলে,
এতে কোনো জোর খাটেনা,
এভাবেই আমাদের আবেগের খেয়া চলে।
অবশেষে তোমাকেই না চেয়ে বসি,
কিংবা বলে ফেলি “আমি তোমায় ভালোবাসি”
কিভাবে নিজেকে সামলাই,
শুধুমাত্র, এটাই বলে দাও তুমি আমায়। -
জীবনে-মরণে
জীবনে-মরণে
-আব্দুল লতিফ মণ্ডলহাটছি শাশ্বত পথে,
দীর্ঘ জীবনপথ আমার।
অসংখ্য পালক গোঁজা,
শিরস্ত্রাণের অভিজ্ঞতা।
রক্ত পিপাসার বর্শা হাতে,
আবর্তের ধন্দে সকলের জীবন।
চলেছি আমার শেষ যাত্রায়,
দিনের আলোয় জানাই বিদায়।
মৃত্যু, হ্যাঁ যথার্থ মৃত্যু,
ধ্বংসে নবজন্মের সূচনা জানায়।
থমকে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলেছি-
“ওরে অবোধ, কেনই বা যাস?”
সমাধি রচনা করব,
দৃঢ় ধারণা আমার।
বরং অবশেষে ভালোবেসে-
পাব নিজেকে জীবনে-মরণে। -
শ্বাসমূলে বেঁচে আছি
শ্বাসমূলে বেঁচে আছি
– আব্দুল লতিফ মন্ডলচারিদিকে ছাই এর স্তূপ থেকে ধোঁয়া,
উবে যাচ্ছে তাতে সত্য,মনুষত্ব, ন্যায়-নীতি,
সহজ-সরলতা আর স্বচ্ছ বোধ।
বুলবুল ,ময়না তে ভুলেছে গান,
বড্ড ছন্দহারা মানুষ হাঁটছে পৃথিবীতে,
তাই ভার বেড়েছে যে তার,
সংকীর্ণ মানুষের মোড় ফেরাতে,
সে ডাকে সুনামি,আয়লা, কখনো বা হুদহুদ।
কখনো বা গাঢ় গলিত লোহার লাল ,
বুক চিরে দেখিয়ে দেয় মা,
মায়েরা সন্তানের দুঃখের প্রাপক,
তার আসন বলতে তো ওই বৃদ্ধাশ্রম।
তবুও মায়েরা নির্বাক, নিঃস্পৃহ,
হাসি মুখে দিব্বি কাটিয়ে দেয়
সংসার নামক ভাঙা জাহাজ।
মূল্যবোধ আজ গড়াগড়ি যায় বালুচরে,
অবক্ষয়েই গড়ে তুলেছে সে দ্বীপ।
দরিয়ার নীল জলের বিষ ঘিরেছে চারপাশ,
মানুষে দেবতা গড়ি ,দেবতা গড়ে না মানুষকে,
মনীষীরা পুনঃ উঠবে জেগে মানগ্রোভের শ্বাসমূলে। -
অক্ষর-চাষি
অক্ষর-চাষি
-আব্দুল লতিফ মন্ডলশব্দ-মদে ডুবে থাকি,
অজানা এক রোগ।
নাগরিকতা সয়না ধাতে,
চলে নিজেই নিজের খোঁজ।
এ মদে সত্য লাগে চোখে,
কাটেনা কিছুতেই সে ঘোর।
শব্দ খুঁজে মরি আজ,
ঝাপসা কুয়াশায়।
সত্য দেখে সব –
গায়ে মাখব কবিতা।
লাঙল দিয়েছি আজ,
আমার অক্ষর-ভূমিতে।
বিষ ঝাড়াতে চাই –
ব্যস্ত মানুষের। -
বিশ্ব-পথিক
বিশ্ব-পথিক
-আব্দুল লতিফ মন্ডলফাগুন-মাখা সন্ধ্যায়,
ভাবি,ধরে রাখব তোমায়।
বোকা মনের বোকামি,
বসে বসে, খড়ির ঢেউ গুণি।
নৌকা-নৌকা ভাবনায়,
রাত্রি নামে, বিপরীত ডাঙায়।
বাঁশির শব্দ মেশাও তুমি,
ঝিঁঝির কলতানে।
চাঁদের হাসি লাগছে গায়ে,
অমাবস্যার মেঘ চাদর ঢাকে।
চিরকালীন বাউল তুমি,
তোমার খোঁজে, এই আমি।
বিশ্ব-পথিক,তোমায় পাবো,
বলে দাও, ঠিক কি উপায়ে ? -
নীল খাম
নীল খাম
-আব্দুল লতিফ মন্ডলতোর দেওয়া দুঃখদের,
উড়িয়েছি নীল খামে ভরে।
ধুলো জমা বইয়ের মলাটে,
অবশিষ্ট সমস্ত সুখ।
আকাশ এলো কাল হয়ে,
ঘনীভূত খামেদের মেঘ।
গগন কাঁদে অঝরে,
মুছে দেয় স্মৃতিকে।
রয়ে যায় ক্ষত,
অম্ল বৃষ্টির মতো।
সাহাজানের স্মৃতিও আজ,
রইল না অক্ষত।
তারও ছিল নীল-খাম,
হয়ত আমারই মতো। -
বাঁকা পথ
বাঁকা পথ
-আব্দুল লতিফ মন্ডল
জন-বিস্ফোরণের রেলগাড়ি,
তারই মাঝে সল্প-সহনশীল মানুষ।
এগোচ্ছে যত, পিছোচ্ছে তত,
মানবিকতা আর মূল্যবোধ।
আট হোক কিংবা আশি,
সমস্ত ফুলই তাদের কাছে বাসি।
টুকরো মানুষ, টুকরো জীবন,
মুঠোফোনেই বদ্ধ জীবন।
পাশের জনের পা মাড়িয়ে,
একটিবারও চায় না ফিরে।
ভার্চুয়ালে স্বপ্নের জাল,
সেখানেই শুধু ন্যায়-পরায়ণ।
নির্ভয়া হোক কিংবা পার্কস্ট্রিট,
স্ট্যাটাসের কল্লোল উঠবেই ঠিক।
রেল তো চলে সমান্তরালে,
তবে আমরাই শুধু বক্রপথে?
-
পোড়া মাটি
পোড়া মাটি
-আব্দুল লতিফ মন্ডলদুঃখ-স্বপ্নরা তোকে ছাড়া চলতে পারেনা,
বিশ্বাস কর চাইনা তোকে আর ফিরে পেতে
দুঃখগুলো এই শুধু নীল আকাশে ঝাপটে মরে,
মরুক রে,মরেই না হয় বাঁচতে দে তাকে।
বারে বারে বড্ডো বিরক্ত করে রে তোর কানের দুল,
কি চাস তুই,আর তোর চোখের চাউনিরা?
প্রতি রাতের নিস্তব্ধতায় আমি আর তোর স্মৃতিরা,
একটিবার সত্যি করে বলতো তুই,
কি পাস অন্য ঠিকানায়?
একটিবার সত্যি করে বলবি কি তুই?
জমতে থাকা শক্ত কাদা আজ যে পোড়া ইট।
শহুরে বৃষ্টি কি আর পারে ভেজাতে?
নারে সে আর হয়না,তুই আর আসিসনা,
এত আঁচড় কেটেও তো আর মাটি হয়না।
ওরে পোড়া ইট রে আর কত পুড়তে থাকবি?
তুই সম্মতি দেরে ক্ষতটা একটু শুকোয়।
ধরিয়েছি আগুন সিগারেটে, সে ধোঁয়াতেও তুই,
বুকে জমা দুঃখ গুলো সুনীলে একটু উড়িয়ে দেনা,
নীরবে শুনে কেন হঠাৎ পালাস রে তুই?
কথা দে তো রাতের গভীরে আসবি না।
ঝাপসা জীবন আর তাঁরারা, তুই কেন স্বচ্ছতায়?
ধুলো-ঢাকা শহরে দিয়েছি তোর কবর,
তবুও তুই যাতায়াতের পথ ছাড়ছিস না।
ওরে আমার জীবনে এই গ্রহণ কি দূর হবে না?