-
কবিতা- হুজুর বাঙ্গালীর ভবিতব্য
হুজুর বাঙ্গালীর ভবিতব্য
– উজ্জ্বল মল্লিকজাতীয় উৎসব চলছে সারা দেশ জুড়ে,
মন্ত্রী, সান্ত্রী, অমাত্য সবাই পুজোর আমেজে
রাস্তার পাশে পড়ে থাকা শিশুর চীৎকার
দিয়ে চলে চাপা, উল্লাস-মত্ত বাদ্য-
ঝঙ্কার।দুর্গা-মা এসেছেন দেশে আনন্দ-বার্তা লয়ে
আলোর চমক আর কাশের সুবাস ভরে,
কাগজ কুড়ানি মেয়ের কাঁধে বিরাট ঝোলা
নেই তার কোন হেল-দোল, রুক্ষ চুলে খোলা।মা এসেছেন মণ্ডপে, সোনার মুরতি সাজে
হুজুগে বাঙ্গালী দেখি ভিড় করে ধেয়ে মত্তে ;
শিশুর মা ‘ভিগ্-মাগে’ শিশুর দুধের লাগি,
উৎসবে মত্ত, নেই কাল শোনার সে আর্তি।কোলে লয়ে, মা ও শিশুর গর্জিত অভিমান
এতো বৈভব, তবু আমাদের জোটে না ফ্যান;
মরতে বসেছে শিশু, না পেয়ে বুকের দুধ
পুজো-প্রাঙ্গনে কালো হয় দুর্গা-মায়ের মুখ:অভিশাপে মা, থাকুক অধরা তোদের সুখ।
-
অণু কবিতা- মুক্তি
মুক্তি
– উজ্জ্বল মল্লিকচাওয়া-পাওয়ার মাঝে যতদিন,
লোভ-বিদ্বেষে হবে মমতাবিহীন;
অহংবোধে আচ্ছাদিত সোহম্-বাণী
অতীতের নালন্দা-স্তূপেরই মত।আত্মকেন্দ্রিকের অনন্ত একাকীত্ব,
নগর-সভ্যতা, রহিত মনুষ্যত্ব,
মুখোশে ঢাকা সব যান্ত্রিক, কৃত্রিম,
আত্মারামের ক্রন্দন রয় অব্যক্ত:কালে, মুক্তির আনন্দে রয় সতত।
-
কবিতা- আমার আমিকে
আমার আমিকে
– উজ্জ্বল মল্লিকআমার আমিকে সামলে রাখি
বেফাঁস বোল না, করি তোয়াজ,
গোপন কথাটি রাখো গোপনে
নতুবা—অপযশ একরাশ।স্বাধীনতা লিখিত সংবিধানে
বাজখাঁই অক্ষরে কী -সুন্দরে!
করে লড়াই লোকে নির্বাচনে,
আহা! গণতান্ত্রিক রীতি মেনে।ফাঁক নেই, রীতিনীতিতে ত্রুটি
আসলে সব ফাঁকি, বুজরুকি
প্রতিবাদী হলেই তুমি বাগী,
হাজত-লেপসি জেনো নিয়তি।দেশ-নেতার হয়েছে কী শাস্তি!
শুধু ভর্ৎসনা, সব চালাকি,
থাক তবে গা ভাসিয়ে তেমনি
কেবল দেশের আচার মানি:গণতান্ত্রিক বাবা! গড় করি,
ভজি কেবলই তোমার ছবি। -
কবিতা- বিদায়-কাল
বিদায়-কাল
– উজ্জ্বল কুমার মল্লিকহে বন্ধু! হে সখা! পার্থিব সবই ফেলে
ভালোবাসার নির্যাসটুকু দিয়ো ঢেলে
বিদায় নেব, সে আবেশ সম্বল করি
স্মৃতি-ভরা অন্তরে আপ্লুতিত হরষে।হৃদয়ে ওঠে যে ডাক, গুরুমন্দ্র রবে
আয় চলে আয়,মায়ার বাঁধন কেটে,
সঞ্চারিত ধ্বনি দেহ-চক্রে, তত্ত্বমসি,
মানস-লোচনে বোধিত সকল-ই যে।আয়োজিত রয় নাও জীবন-নদীতে,
উঠে বসার কাল, সঞ্চয়-থলি হাতে
পরদেশে, পরবাসে যেতে হবে বাহি
অজানা, অচিন পথে কোন যোনি-স্রোতে!–
-
অণু কবিতা- প্রস্তুতি
প্রস্তুতি
– উজ্জ্বল কুমার মল্লিকআমার সকাল হয় সূর্য ওঠার আগে,
আমার শুরু দিন-যাপনের গ্লানি মাঝে,
আমার দিন কাটে মনো-ব্যথা সহে সহে,
আমার মন ভারি, তবু রই হাসি-মুখে।
আমার আমিকে নিয়ে সদা আছি ব্যাকুল,
আমার আড়ালে তুমি রও, হেসে আকুল।দিনান্তে, অবসন্ন হৃদয়ে খুঁজি তোমাকে,
শুনি বাঁশরী তোমার, প্রস্তুত চিরঘুমে। -
কবিতা- বসে আছি
বসে আছি
– উজ্জ্বল কুমার মল্লিকবহুদিন ধরে বদ্ধ আছি আমি,
হাঁফ ধরে গেছে সব কিছু দেখে,
লেখা-পড়া শেষে রুটি-রোজগারে
কেটেছে সময় কোন সে অজান্তে,
ধরে গেছে হাঁফ,ভাই! আছি বসে।যৌবন-উপনীতে, কৈশোর-গতে,
চলেছি পথ রঙিন স্বপ্নালু-চোখে;
শত-ধারায় নেমেছে হলাহল,
করেছি পান ঐ নীলকন্ঠ-রূপে,
বোধশক্তি -হীন, তাই আছি বসে।কালে, ঘটেছে কত পরিবর্তন,
উত্থান-পতন, ঢেউ উছলন;
মোহনায়, আমি চলি তির-তির
আগ্রহে স্থিতিশীল, হ’তে সুস্থির,
মিলন-প্রয়াসী ভাব আতিশয্যে:হাঁফ ধ’রে গেছে ভাই! আছি বসে।
-
কবিতা- সোহম্ আনন্দম্
সোহম্ আনন্দম্
– উজ্জ্বল কুমার মল্লিকসাবাস রে মন বল না হেসে,
সোজা রাখি শির দ্বিধা না রেখে,
থাক্ না আনন্দে সব-ই ভুলে।কাল বহে যায় অনবরত,
ইতিহাস হয় সকল-ই যে:চালাও পানসি ছলাৎ-শব্দে
উঠুক হিল্লোল মহা-আনন্দে।ঝনক্ বাজুক মনো-দুয়ারে,
মিলন পিয়াসি ভরা অন্তরে:তৎ ত্বম্ অসি উঠুক ধ্বনি,
মনো -বীনা তারে শাহী-গাম্ভীর্যে।আনন্দধারায় ভাসুক মন,
নির্মল আলোক প্রদীপ হাতে।বিদুরিত হোক অজ্ঞান-গ্লানি
দীপিকা-আলোকে, মধুর-সাজে। -
কবিতা- কবি প্রণাম
কবি প্রণাম
– উজ্জ্বল মল্লিকঅন্তর রবি, আকাশ রবি
মিলে মিশে সব একাকার,
যে দিকে তাকাই তুমি রহ,
সব কিছু দিয়েছ উজাড়।শান্তিনিকেতনে নীড় গড়ি
রেখে গেছো অগণিত গান,
অজস্র কবিতার সম্ভার,
মাতৃ-ভাষাকে দিয়েছ প্রাণ।নোবেলে ভূষিত তুমি কবি,
বিদেশে পেয়েছো সমাদর;
স্বদেশে তুমি-ই ভৎর্সিত–
কত না সহেছ অনাদর।শেষ যাত্রা কালেও তোমায়
বাঙালি দেয়নি কো নিস্তার,
দাড়ি ছিঁড়ে করে অসম্মান,
এ লজ্জা, কোথায় রাখি আর! -
অণু কবিতা- ক্লিষ্ট ধরিত্রী
ক্লিষ্ট ধরিত্রী
– উজ্জ্বল মল্লিকহায় ঈশ্বর! যৌনতার মত্ততা
দেখি সর্বত্র;ভালোবাসা মূঢ়তা,
আসক্তি ভিন্ন নয় কিছু;অচিরে
মোহভঙ্গেই বিচ্ছেদে অবসান,
শ্রদ্ধাহীনের এই তো পরিণাম।
তোমার মহান সৃজিতরা সব দেখি
অপজাত;পশুর মত একমাত্র
মৈথুন সাথে ভোগলিপ্ত:এ তোমার
সৃষ্টির চরমতম অবনমন,
দ্বিধাহীন ভাবে চলে মনোপূরণ;
নিরন্তর মানবত্ব লঙ্ঘিত,
মিথ্যার বেসাতিতে ধরিত্রী আজ
ক্লিশিত,চলনে অপারগ, পীড়িত,
মাগে নিবারন তোমার কাছে,সতত। -
কবিতা- কাম্য-শয্যা
কাম্য-শয্যা
– উজ্জ্বল মল্লিকনিস্তব্ধ রাত, অদূরে নীরস অশ্বত্থ গাছ,
ডালে বসা গৃধিনীর ঝটপট আওয়াজ,
তলে,স্তরে সাজানো ভয়াল করোটি-বেদিকা,
আমি কবি, অনন্যমনায় ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টা।প্রভাতী সূর্যে কখনও আমি ভিক্ষা মাগিনি,
সোনালী রৌদ্রে দেখি অমোচিত কলঙ্ক-ছাপ,
উষসী,বেলার উষ্মা, সন্ধ্যার মলিন আঁখি,
রাত্রির বিবর্ণ-মুখ লাগে বড়ই করুণ,
স্মৃতির পটে তাই আঁকি শুধুই অন্ধকার।প্রাণের উৎস-ই যদি এত কালিমা-মাখা,
মৃত্যুর হিমশীতল ছায়া হোক্ কাম্য-শয্যা।