-
জন্মবৃত্তান্ত
জন্মবৃত্তান্ত
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়১
ঠিক তখনই উদাসীন জন্মবৃত্তান্ত হাতিয়ে
কয়েক খণ্ড ইতিহাসের পাতায় আন্দোলনের
‘অ’ অথবা লাশের নিরীহ চন্দ্রবিন্দুতে।
কেউ সরেনি, কারোর ভিতেরের মেরুদণ্ড
ঘরে কোন টিকটিকির জলপ্রপাত কাহিনী
লেখা নেই, এমনকি কারো গ্রাম থেকে শহরে
আসার রাস্তা চিহ্ন।অথচ ঐ কোণে কাকতাড়ুয়ার
বেশে ছদ্ম যুদ্ধ, হাতে ছদ্ম অস্ত্র,
শরীরের কোষে কোষে ধার করবার পাথর।২
এদিকে জঙ্গলে আরেকটা হরিণ
নিজেকে ভোজের টেবিলে তুলে শ্বাস নিল
শেষ অঙ্কে, কোন ভুল বা ঠিকের লুডো খেলা নেই,
দুপুরে রোদ গায়ে নেমে আসা তাসের দেশে
ইংরাজি অক্ষরের সতেরোর আমিষ চাবুক
জেগে যাচ্ছে এমনিই পুরুষত্ব।৩
এদিকে বিষমদের নাম সংকীর্তনে
আবার সব খোল খঞ্জনি এখানে আকাশের
কাঁচ পড়ে, ওখানে দরজার ব্রেক, গাড়ির
ভিতর আবার উপন্যাস, প্রতিদিনের সূচনা পর্বে
মিছিলের হাত পায়ে এখনও আটকে আছে চাঁদ।৪
এরপর আর শেষ হয় না,
এপাশে যে কাঁদে এপাশে যে
মৃত সন্তানের বাবা এপাশে যার শোকে
আগুন হয়, জল ছুঁয়ে যায় জন্মদানের
মিষ্টি বিতড়নে, ওপাশে ফুসফুস নেয়
হৃদয়ের গায়ে লেখা নাম,
এরপর হাত পা এমনকি লিঙ্গ বা যোনি
কারোর থেকে ধার নেওয়া হবে। -
শুভরাত্রি
শুভরাত্রি
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়এই মাত্র খবর এল বায়ু আর প্রজাপতির
সম্মোহনে নতুন এক যৌগিক রসায়ন
আর তার ঘাড়ের কাছে মস্ত আঁচিল।
তাড়াতেই গুলি, মারা গেল কয়েকটা চুল লোম।
দুজন বিজ্ঞানির গ্রাফ খুঁজল চুলের উপত্যকা
লোমের ঘনত্ব।
তারমানে কি চুল আর লোমের কোন
বৈবাহিক যোগ নেই?
বাঁচা গেল, না পুড়িয়ে রোদের আড়াল রাখতে
সব পাণ্ডুলিপি কবর বন্দি, পাহাড়া আছে,
নদী মরূভূমি, আর সীমান্তের ঘর বাড়ি।
বেশ কৌশলে নদীর একটা দেহ ভাঙে,
রাজনীতিতে মরূভূমি বাকি আছে কবরের হাড়কখানা,
ওটাকে নিয়েই রাস্তাঘাট যানবাহন আর
কয়েকটা ফোঁটা কান্নার সালোকসংশ্লেষ,
এই মুহূর্তে কার কার শুভরাত্রি? -
চলমান শব
চলমান শব
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়রক্ত ঝরে, মেঘে মেঘে অসমীকরণ,
জলে নামে শরতের ঢাক,
উন্মাদ মাদলের মাঝে অনবরত
ভূতের হাতে রহস্যমৃত্যু।
উঠে চলে যায় রানীর ভৃত্য।
পিঠের কলোনিতে জমা হওয়া বেওয়ারিশ লাশ,
কবরে হৃদধ্বনি শোনে কাওয়ালির রাস্তাঘাট।
কখনও কেউ আঙুল তোলেনি,
অন্তত এখনও অবধি কারোর সরকারি উপমার
লেজে পা নেই,বৃষ্টির মালকোশে প্রতিশ্রুতি,
বড় হচ্ছে সাইকেলের টায়ার,
এর মাঝেই ভালোমন্দ কাবাডির ডাংগুলি খেলা।
মেঘ যদি ধারাপাতের বই, ওপারেই চলমান শব। -
অসমীকরণ
অসমীকরণ
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়১
যেভাবে লুকোচুরি ডাক দেয় হাতছানি রোদ
অপেক্ষার সময় নামে,
চাঁদ সাম্রাজ্যের এক পাশে নৌকা,
যেভাবে না বলা শর্ত সাপেক্ষে তৈরী হয়
গবেট বয়, মিছিলের পায়ে চটি,
যেভাবে আর্তমুখ হাহাকারেও রাগাশ্রয়ী বিকাল,
বড় হয় তখন কি স্বাদ জাগে?২
জানি ভুল চন্দে কার্ফুর ডাক
হাত তুলে ধর্মের অজুহাতে আগে
কয়েককর্মের বিশ্বকর্মা,
পাশে ফর্মা ঘাঁটা হলদে আঙুল,
চটকে বাঁশ আছে ,লাভের অসমীকরন।
তবুও কি মহালয়ায় কানবন্ধ ভোর?৩
এখন বুঝতে পারি অভাবের লোক শ্রুতি
চামড়ায় আবার মানচিত্র
জমির পিছনে এক দুই তারপর আরো
ভোরের অপেক্ষায় নির্ভেজাল ডিভোর্স।
আমার সাম্রাজ্যের মোড়কে নতুন স্বপ্নের রোদ,
তবুও প্রতিদিন হাওয়ার আপসে,
কোনো চোখে মেঘ জমতে পারে। -
প্রযত্নে
প্রযত্নে
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়সবাই বেরোলেও সবাই ফেরেনা,
রাত মিশে অশ্লীল নক্ষত্রের পথে,
তারপর লোহার রাস্তার পাশে খণ্ড শরীর,
যেন সব্জি টুকরো, ডেকে বলে, ‘যারা ফিরে গেছে,
তাদের ভালো রেখো।’ সেখান থেকেই শুরু হয় নদী
আর রাস্তার গল্প, মাঠ ভাঙা উগ্রতার মাঝে ‘হা’ এর গল্প,
সোজা কথা সরিয়ে রাখবার কথা।
এখানেও মেঘ নামে, ভয়ের বিষাক্ত চুমুতে
সবাইকে ঘর পাঠানোর ব্যবস্থার মাঝেই
না ফেরা মানুষটা দাঁড়ায়।বাড়ির ছোট হাত,
ছোট পা, অপেক্ষার শ্রেণীতে।না ফেরা লোকটাও অপেক্ষা করে,
‘একটু বাঁচলেই বেল বাজানো যাবে।’ -
নিরক্ষরের ভূগোল ছায়া
নিরক্ষরের ভূগোল ছায়া
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়বেঁচে আছি, যেভাবে দ্রাঘিমা বেঁচে বইয়ের পাতার ভিতর,
মুহূর্তের শ্বাস গুনে বাদুড়ের সাথে ঝুলে বিষুব রেখার নীচে
ঘর বাঁধে ঘরে থাকা মশা মাছি দল।
এই তো লাল পড়ে, এই তো জোনাকির মত শ্বাস,
যারা এখনও খাতায় কলমে জীবিত।
ভয় নেই, একদিন ধুলো মেখে নিরক্ষর হয়েই তো
ঘর থেকে পথের ধুলোর সাথে।
আশে পাশের সব গোনা গুন্তি লোকজন, মাথা নিচু।
এভাবেই কেঁচোরা বাঁচে। যারা হাওয়া গায়ে পাতার
শরীরে শরীর রাখে, পরের ভোর ছোঁয় তাদের হৃদয়।
অদ্ভুত আকাশের থেকে ঝুলছে শুধু দুটো পা। -
নো এন্ট্রি
নো এন্ট্রি
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়এই যে নো এন্ট্রি,
এখান থেকে আরো বাঁ দিকে বা
ডানদিকে গেলেও সেই এক।
তখনই ডানার কথা, মেঘের কথা,
অথবা বৃষ্টির কথা মনে আসে।
জমাট ধুলোবালি কণা সরিয়ে বুক চিত করে
একটা শরীর একটি নো এন্ট্রির রাস্তায়
পা ফেলে একটু স্বাধীন ভাবে হাঁটবে,
এর থেকেও বড় গণতন্ত্র ? -
লুডো
লুডো
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়প্রতিদিন উঠছি মানেই প্রত্যহ নামছি,
এরপরেও হাজার প্রশ্ন অক্টোপাস অথবা জোঁক,
একদিকে শ্বাস বন্ধ অন্যদিকে বেরিয়ে
যাচ্ছে হিমোগ্লোবিন।
এই তো বাঁদিকে আমার প্রেমিক,
তাও শরীরে বর্গী আক্রমণ, খুঁটে খাচ্ছে পরিযায়ী দাগ।
অথচ হাঁটছি, চলছি,
বাঁচার চেষ্টার মাঝে প্রতিদিন মরছি। -
নাগরিক
নাগরিক
-ঋভু চট্টোপাধ্যায়যা আমার অস্ফুট অজ্ঞাতবাস,
শিরা ধমনি জুড়ে নতশির স্থাপত্যের ওপর
খোদাইএর ভাবনা, তার থেকে সরে সরে
যেভাবে সাজানো সংলাপ শেখানো হল,
এখন সেই শ্রেণিতে উপস্থিত।
বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দুখণ্ড বাটিতেফোঁটা ফোঁটা আলোর খোঁজে রাতদিন সব এক করে
শুরু করবার চেষ্টা চলছে।
তবু এখনও দেখার বাকি কোন রাস্তায়
কতটা দাঁত আর কঙ্কালের উপস্থিতি।