• কবিতা

    কবিতা- বসন্ত বৈরাগ্য

    বসন্ত বৈরাগ্য
    – জিৎ সাহ 

     

     

    বসন্ত তুমি আর এসো না আমার দরবারে!
    -এই আমি ভালো আছি বেশ দামোদরের পারে,
    বাঁধ না ভাঙার শপথ করেছি।
    কথা দিয়েছি আমিও যে তারে….
    কোকিলের কুহু কূজন,
    শালিকের কলতানে
    সুজন মাঝির ভাটিয়ালি গানে,
    পাল তুলে দিয়ে নৌকায় ভেসে যাব না আর উজান ভাটির টানে

    হৃদি মোর যদিও ভারাক্রান্ত হয় ভারে,
    তবুও আমি যে ভালোবাসি শুধু তারে।
    আজ সাতপাকে বাঁধা আমি জনম জনমের তরে…
    বসন্ত তুমি আর এসো না হলে মোর দরবারে।
    সহিতে পারি না আর,
    ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি হৃদয়বিদারি হাহাকারে..
    আমি এই বেশ ভালো আছি,
    শতসহস্রের কাছাকাছি।
    নির্জন ফুটপাথ, না হয় নির্জন থাক!
    তার কথা ভেবে ভেবে আর বাড়িয়ে দেবো না হাত।
    এই বেশ ভালো আছি,
    এই ভোর,
    শীতের আদরে কুয়াশার চাদরে মাখামাখি।
    এই বেশ ভালো আছি
    শতসহস্রের হিয়ারও মাঝামাঝি।

  • কবিতা

    কবিতা- আমি অন্নদাতা নই

    আমি অন্নদাতা নই
    -জিৎ সাহ

     


    আমি নই অন্নদাতা আমি কারো পিতা,
    কারো সন্তান,
    কারো বা ভ্রাতা…
    কারো ভালোবাসার মানুষ, যে আমায় ভালোবাসে আমিও তাকে ভালোবাসি।
    এই আমিই কারো কাছে সব পেয়েছির আসর…
    সেই আমি ধরার বুকে ফলাই ফুল ফল,
    ফলাই সোনার ফসল।
    -আমিই তোমাদের সেই চাষিভাই।
    কখনো তো আমার কথাও ভাবো,
    নাকি শুধুই চাই আর চাই!
    যদি সেবা চাও- সেবা দেব
    জান দিয়েও …
    হাত চাইলে বলো হাত কোথা পাব?
    -এই হাত
    কেড়ে নিলে যে পাবে নাকো দু’বেলা দুমুঠো ভাত।
    ভেবে দেখো মন,
    দেখো অন্তর দিয়ে
    লড়াই চাও -নাকি অন্ন?
    আমি নই অন্নদাতা,
    যিনি দেন, তিনিই তো বিধাতা।

  • কবিতা

    কবিতা- অচেনা আমি

    অচেনা আমি

    -জিৎ সাহ 

     

     

    … বুঝতে পারছি আমায় চিনতে তোর বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে !
    বিশ্বাস কর, এই সেই তোর আমি
    একটু বেশিই সাবধানী।
    —এখন আর কথায় কথায় বলে না রে,
    ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি।
    কষ্টগুলো সামলে রাখি,
    দাঁতে দাঁত চেপে থাকি তবুও বাঁধ ভাঙার কথা স্বপ্নেও ভাবে না রে
    আমার এই দুই আঁখি।‌
    একটি খাঁচায় বন্দী ছিল যে বনটিয়া দুই পাখি,
    সুযোগ বুঝে একদিন উড়ে গেল সে দিয়ে আরেকজনকে ফাঁকি।
    এখন আমি একটু বেশিই সাবধানী।
    আমিও খুঁজে নিয়েছি আকাশের ঠিকানায় লেখা
    চিঠিগুলো ছাড়াই কেমন করে বাঁচতে শেখা,
    একলা
    একাই মেঘলা
    আকাশ জুড়ে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসা
    যেন না গা ভাসায়।
    কষ্টগুলো থাক না মাপা,
    ছেঁড়া ডায়েরীর পাতায় পাতায় দূই মলাটের মাঝেই চাপা..
    সময় করে খুঁজে নেব বেঁচে থাকার যন্ত্রণাখানি,
    কেন না
    আমি যে একটু বেশিই সাবধানী।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- পুরুষ কার!

    পুরুষ কার!

    -জিৎ সাহ 

     

    (১)
    অভীকটা বড্ড আজব ধরনের একটা চরিত্র। মাথার ভেতর কি সব আজগুবি চিন্তা ভাবনা নিয়ে যে ঘুরে বেড়ায় তার ঠিক নেই। উৎপটাং সব কথাবার্তা। এই নিয়ে মাঝে মাঝেই নিজের বৌ থেকে বন্ধুবান্ধব সকলের কাছেই একটা জোকার জোকার ইমেজ তৈরি করে নিয়েছে। অবশ্যই নিজের অজান্তেই। এই ইমেজ টিমেজ নিয়ে তার বিশেষ হেলদোল দেখি না। যদিও ভেতরে ভেতরে সে বেশ রগচটা বলতে পারেন। সে নিজেও কিছুটা হলেও তার এ ধরনের ক্যারেকটার নিয়ে চিন্তিত।এই ভালো তো এই খারাপ। তার সত্বেও তার ঐ আজগুবি চিন্তা ভাবনা গুলো সকলকে একরকম মাতিয়ে রাখে। এই যেমন বন্ধুদের নিয়ে ফুচকা খেতে খেতে হঠাৎ তার মাথায় এল_আচ্ছা! এই ফুচকা তে জলের বদলে যদি মদ গেলে খাওয়া হত, তাহলে কেমন হতো, বলত?
    অথবা, র-টী বদলে মদের সাথে চায়ের লিকার বানিয়ে খেলে কেমন হয়!
    অথবা বৌ বাচ্চা নিয়ে খেতে বসেছে। হঠাৎ, আচ্ছা সজনে ডাটার আঁচার, শুটকি মাছের আঁচার, গুগলি পোস্ত আর মুড়ি, পটলের চাটনি, কচু পোস্ত-র মত আজগুবি সব রেসিপি। এই অশান্তি যে একটু আধটু হয় না তাই নয়। তবে তার ঐ পর্যন্তই…


    (২)
    ছেলেবেলায় ভাবতাম বিয়ে করব না। বিয়ে টিয়ে আবার কেউ করে নাকি! ওসব করলে মা’র থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে। মা যখন কথায় কথায় বলত এবার দেখে শুনে অভি’র জন্য একটি ফুটফুটে বৌ এনে দেবো। তাই শুনে অভি’র সে কি রাগ। রেখে টেগে একধারে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত।


    (৩)
    আজ সেই অভীক আর ছোট্টটি নেই। তবে তার উৎপটাং ভাবনা গুলোর বয়স কিন্তু একদমই বাড়েনি। তাছাড়া এই বিয়ের বাসর রাতে বৌকে নিয়ে এমন চিন্তা করে কেউ আনকম্ফোর্ট ফিল করে! বদ্ধ ঘরে সে আর তার নতুন বৌ। এছাড়া তৃতীয় প্রানীটি আর কেউ নেই, এমন সময় সেই জানি না চিনি না বৌ যদি রনচন্ডী রূপ ধারণ করে। যদি খড়গহস্ত হয়ে থাকে অ্যাটাক করে বসে। তার সঙ্গে আর ক’দিনের-ই বা পরিচয়!

  • কবিতা

    কবিতা- সূর্য এখন অস্তাচলে…

    সূর্য এখন অস্তাচলে…

    -জিৎ সাহ 

     

     

    আমি যখন সাদা গোলাপ হাতে, যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছি!
    — তখনও তুই অস্ত্র উঁচিয়ে রক্ত বন্যায়
    ব্যস্ত রেখে গেছিস! মরা কাক,
    সেদিন বুক পেতে ছিল রক্ত গোলাপের কাঁটায় শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ।

    এই গোধূলিবেলায় অস্তমিত সূর্যকে সাক্ষী রেখেই আজ যুদ্ধ বিরতি চাই।
    শান্তি চাই।
    শান্তি চাই।
    ভাল্লাগে না আর প্রেম প্রেম খেলা, ভালোবাসা-বাসির মিছে অভিনয়,
    শুধু স্বার্থের সুক্ষ্ম সমন্বয়।
    —তবুও অন্ধের মত তোকে ভালোবেসেছি বলেই আমার হাতে আজও সাদা গোলাপ!

     

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- কাঁটাতার

    কাঁটাতার

    -জিৎ সাহ 

     

     

    অযাচিত অনুপ্রবেশে ছিঁড়ে যায় তন মন,
    জানি না, কি কারন !
    বারে বারে বিচলিত হয় উতলা প্রায় মম হৃদয়।
    ছিঁড়ে যায় তানপুরা, হারিয়ে যায় সুর।
    ছিঁড়ে যায়
    ইতস্তত স্মৃতিরা সব উদ্ভ্রান্ত উল্কাপিন্ডের ন্যায় ধায়!
    –এই বুঝি পথ হারায়।
    হয়তো বা কৃষ্ণ গহ্বরে হায় !
    তবুও
    হাতড়ায় দুর্ভেদ্য আঁধারে জানি না কিসের অভিপ্রায়।

  • কবিতা

    কবিতা- দূষণ মুক্ত হোক এই পৃথিবী

    দূষণ মুক্ত হোক এই পৃথিবী

    -জিৎ সাহ 

     

     

    …. আরও একটা বর্ষা চাই !
    যে বর্ষার জলে
    ধৌত হবে ভরসাহীন সেই সব মুক্ত আবর্জনার দল সমূলে।
    যাতে ধূয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় ধূসর এই পৃথিবী
    —সেই রকম একটি বরষা চাই।
    সে যদি হয় মেঘ ভাঙ্গা হড়কা বান
    অথবা
    আমফানের মত ভয়ঙ্কর কোন ঘূর্ণাবর্ত !
    তার বিভৎসতায় আবার ফিরে পাবে হারানো মান সম্মান।
    সুন্দর করে সাজবে আবারও এই মর্ত্য।।
    আবর্জনা মুক্ত পৃথিবী গড়তে হলে
    সুযোগ নয়,
    প্রতিবাদ চাই।।

  • কবিতা

    কবিতা- আমার ঠিকানা কেয়ার/অফ….

    আমার ঠিকানা কেয়ার/অফ….

    -জিৎ সাহ

     

     

    আমার স্বর্গ আমি নিয়েছি খুঁজে,
    আমার স্বর্গ আমি নিয়েছি খুঁজে–

    আমার তপোবন বিস্তীর্ণ এই বুকে! যেথায়,
    অপার শান্তিতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকার একশোভাগ নিশ্চয়তা,
    তোর জন্য রেখে দেবো দুঃখ সুখে।
    হাজার অনিশ্চয়তার মাঝে ও
    সূর্য ওঠার সাতসকালে
    পড়ন্ত বিকেলে অস্তাচলের গোধূলি সাঁঝেও…
    আমার স্বর্গ আমার নরক—আমি নিয়েছি খুঁজে
    সম্ভবত কিশলয় সবুজে।
    ঝরাপাতা বিবর্ণ হলুদেও
    একলা মন মেঘলা আকাশে,
    গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের নির্জন ফুটপাথ ধরে তোর একলা হেঁটে যাওয়া ছায়া রোদেও।
    অথবা বৃদ্ধাশ্রমের অফুরান অবকাশে!
    সকালের চায়ের টেবিলে ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে একসময় ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ের কাপে।
    লিখতে লিখতে
    ছন্দে ছন্দে মিলাতে মিলাতে
    একসময় ফুরিয়ে যাওয়া কলমের খাপে
    আমি খুঁজে নিয়েছি একটুকরো জমি স্বর্গ হোক অথবা নরক।
    আমি খুঁজে নিয়েছি আমার স্বর্গদ্বার ,
    ধূলো জমতে থাকা ছেঁড়া ডায়েরীর পাতায় পাতায়
    কবিতা আর কাব্যিকতার মিশেলে
    কাব্যরসসম অমৃতসুধায়।
    আমি খুঁজে নিয়েছি স্বর্গ আমার ব্যস্ত কামার,
    উত্তপ্ত লোহায় যেভাবে আঘাত হানে
    জারিত হতে পারি দি হাজার লাঞ্ছনা অপমানে।
    অভাগীর স্বর্গ দেখা ধোঁয়ায়, অথবা…
    নিভে যাওয়া জ্বলন্ত চিতায়
    পোড়াকাঠ আর ভাঙা কলসীর বিজারিত নিঃস্তব্ধতায়।
    হায় !!

  • কবিতা

    কবিতা- এ ভাবেও কি….

    এ ভাবেও কি

    -জিৎ সাহ 

     

     

    এ ভাবেও কি সুখে থাকা যায়?
    —এভাবে বেঁচে থাকা গেলেও ভালো থাকা যায় না।
    আমি সীমিত আমার সীমানায়
    আমি অধিকার বোধে আবদ্ধ।।
    আমার সাধের এই পৃথিবী ওলটপালট হয়ে গেলেও
    অযাচিত মঙ্গলের বুকে আমি পা রাখছি না…
    জানি,
    তোর চাঁদ ! –যার স্নিগ্ধ জোছনায় ,
    স্নিগ্ধা ।
    আলোয় আলোকিত তূই।।
    কিন্তু !
    আমার যে মত ঋণ
    শুধু এ বসুধার সাথেই।

    –তোর নীরবতায় মা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে দিনের পর দিন।।



  • কবিতা

    কবিতা- ।। ইতি –তোর অস্বীকৃত আমি ।।

    ইতি –তোর অস্বীকৃত আমি

    -জিৎ সাহ 

     

     

    (১)
    মেঘ কালো,
    আরাধিকার কৃষ্ণও কালো,
    কালো আঁধার রাত।
    বেলা শেষে তোকে ভালোবাসাটাই আমার একমাত্র অপরাধ।
    নাকি আমিও কালো কৃষ্ণসম,
    সেই কারণেই সাধলি তাতে বাধ !
    কত বেসেছিলাম ভালো তোকে,
    ভেবেছিলাম আপন করে আগলে রাখবো বুকে,
    রইব পাশে দুখে সুখে।
    গতর কালো সাদা মনে
    বুঝিনি রে এত কিছু সেই খনে !
    হয়তো ভুল ছিলাম আমি,
    ভুল ছিলো আমার সুখে থাকার মানে।।
    তবুও ভালো থাকিস,
    যদি ভালো থাকার সংজ্ঞাটা খুঁজে পাস কোনো এক খানে…


    (২)
    আমার রাধা এক যমুনা—সকালে জোয়ার, বিকেলে ভাঁটার টান,
    উজান ভাঁটার দো-টানেতে বিহ্বল কানাই গাহে ভাটিয়ালির সুরে গান।

You cannot copy content of this page