• কবিতা

    কবিতা- রবিঠাকুর

    রবিঠাকুর
    – ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    এসে গেলো আরেকটি পঁচিশে বৈশাখ –
    রবিঠাকুর – তোমার জন্মদিন।
    তবে একি শুধু জন্মদিন!
     জন্মদিন বলবো না একে ,
    এযে এক জন্মোৎসব, এদিন এক সাগরকে সরবে ছুঁয়ে দেখার দিন-
    যে উৎসবে সংস্কৃতির সব ধারা,
    নদী হয়ে মিশতে চায়, ছুঁতে চায় এক সাগর –
    মহাসাগরীয় গভীরতায় এক হিল্লোল তুলে।

    পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ,
    আবার  নতুন বছরের প্রথম দিন,
    তোমাকে ঘিরে ভালবাসা আর শ্রদ্ধার বিস্ফোরণ!
    পুষ্পস্তবক, আর মালাতে তোমার ছবি ঢাকা-
    প্রভাতফেরী, পথ পরিক্রমা, অনুষ্ঠান, নাটক,
    আর তোমার গান আর কবিতার বাহুবন্ধনে
     এক অনন্য আবহে বিদ্যমান আজকের
    আরেকটি পঁচিশে বৈশাখ-
    সব পঁচিশে বৈশাখ, নববর্ষ,
    আর শ্রাবণের বাইশে
     যেমন অন্য সব বছরেও হয়-
    তেমন রঙিন,আর ছন্দময়,আজও তেমন করে।

    তোমার মর্মরমূর্তি আর ছবিতে দেওয়া,
     মালা আর ফুল
    যেন তাদের অমূল্য অস্তিত্ব,
    নতুন করে বুঝতে পারে এই তিনটে দিন;
    মাল্যদানের প্রতিযোগিতা চলবে, নানাস্থানে-
    গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মতো,
     সভামঞ্চে, বিদ্যালয়ে, প্রতিষ্ঠানে, প্রশাসনিক কার্যালয়ে
    তোমার গান বাজবে,
    কেউ বলবে রবীন্দ্রসঙ্গীত,
     কেউ বা বলবে, রবিবাবুর গান-
    কারো কন্ঠে গান, কারওবা কবিতা
    কেউ বলবে আমাদের “রবিপুজোর” উপাচার,
    তাঁর সৃষ্টি দিয়েই কি সুন্দর করে সাজানো!

    কবিতা পাঠ আর আবৃত্তির আবহে,
    পুজোর মাঙ্গলিক সানাই বেজে উঠবে,
    প্রতিবারের পঁচিশে বৈশাখের মতো ;
    নিজের জন্মদিনের জন্য নৈবেদ্য
    তুমি নিজেই সাজিয়ে রেখে গিয়েছ, রবিঠাকুর!
    জীবনের নানা উৎসবে, তাকেই আমরা
    সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করে থাকি-
    আর তুমি যেন চিরবিগ্রহের মতো, সেই পুজো
    নিয়ে চলেছ নিরন্তর!

    আমি তোমাকে ওই তিনটে দিনের বাইরে,
    সারাটি বছর, বাকী তিনশো বাষট্টি  দিন,
     বড় আপন করে পাই-
    একেবারে নিজের মতো করে;
    কখনও জাগরণের রাত ভোর করে,
    স্নিগ্ধ, শান্ত উষার বুকে
    কখনও সন্ধ্যার মেঘমালায়-
    আবার কখনও রঞ্জন- নন্দিনীর বাহুস্পর্শে,
    অমিত- লাবণ্যর নির্মল প্রেমে ভাস্বর হয়ে,
    আবার কখনও,
    সুধা আর অমলের চোখের আলোয়
    তোমার উপস্থিতি এক অনন্য জীবনদর্শন –
    কখনো বা হতাশার অন্ধকারে আলোর পথ বেয়ে
    সকল দুঃখের ত্রাতা হয়ে,
     বিরহে, বেদনায়, মরণে,আনন্দে,
     বাঙ্ময় তুমি রবীন্দ্রনাথ।

    আবার নতুন জীবনের পদার্পণ ঘিরে-
    তুমি এই হৃদয়ের গহন প্রান্তরে,
    আপন উজ্জ্বলতায় দীপ্যমান আজও –
    যেমন ছিলে বিগতের কালে;
    সুরের ঝর্ণাধারায় ভাসিয়ে, পাগলপারা করে-
    শুধু নয় পঁচিশে বৈশাখে, শ্রাবণের বাইশে,
    কিংবা নববর্ষের উন্মাদনায়,
    সর্বক্ষণে, সর্বকালে, মননে, মনের গোপনে
    রয়ে গেছো অচঞ্চল, তুমি রবীন্দ্রনাথ;
    যেন এক বিগ্রহের মতো হয়ে,
    আমৃত্যু অবিচল থাকবার ব্রত নিয়ে-
    তোমাকে এই কটা দিনের বাইরে জীবন ধুয়ে,
    জীবন দিয়ে আবিস্কার করতে চাই
    অবগাহন করতে চাই অনন্যতায়,
     তোমার দর্শনে,
    তোমার জীবনদর্শনে স্নাত হয়েছি বারবার,
    সবার মতো আমিও জ্বেলেছি, জ্বালতে চেয়েছি মশাল-
    তোমার  দীপ্তিতে দীপ্যমান হয়ে ওঠার সংকল্প নিয়ে,
    নতুন সে আলো জ্বেলে,
    যে আলো আমার সারাটি পথ
    আলোকময় করে দেবে,
     আরও  অনেকের পথের আলোকবর্তিকা হয়ে;
    আলো জ্বেলে দেবার  প্রত্যয়ে, রাবীন্দ্রিক  দর্শনে।

  • কবিতা

    কবিতা- মেঘলা মনে

    মেঘলা মনে
    – ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    মেঘলা মনে, আজও আকাশ হাসে
    আজও লুকিয়ে রাখতে চায়,
    নিভে যাওয়া প্রদীপটাকে;
    একটু আগেও একফালি রোদ্দুর
    সেই আকাশে ছিল,
    এখন তা যে আর নেই!

    আকাশ তার ক্ষতকে অনেক দিন ধরে,
    লুকিয়ে রেখেছিল, তার বুকের মাঝে
    রক্তক্ষরণ হত অনেক, তবু
    যন্ত্রণা সয়ে, হাসিমুখে দিনযাপন –
    সবাইকে নিয়ে;
    সেই ক্ষতকে সামলে পথ চলা
    তবু তাকে সবার সামনে,
    হাট করে খুলে দেওয়ার ইচ্ছে,
    আকাশের কোনদিনই ছিলনা!
    বুকের মধ্যে অনেক যত্নে,
    লালন করে সেই যন্ত্রণাকে নিয়ে যাপন,
    ভোর থেকে সাঁঝ পেরিয়ে রাত-
    এমন করেই।

    সেই রাতে নেমে এসেছিল,
    আকাশের কান্না, বৃষ্টি হয়ে;
    উজাড় করে দিয়েছিল সে,
    তার বুক, তার এতদিনের জমিয়ে রাখা
    সব ব্যাথা, সব দুঃখের কথকতা-
    আকাশের সে কান্না তো মাপা যায়না ;
    আকাশের মেঘলা মনে, অনেক ব্যাথা-
    যে ব্যথার মেঘ কোনদিনও
    অস্ফুটে কিছু বলেনি কোনদিন ;
    আজ সেই ব্যাথার মেঘ,
    ঝরে পড়ল বৃষ্টি হয়ে, অবিশ্রান্তভাবে,
    সামলে রাখতে পারেনি তাকে আকাশ।

  • কবিতা

    কবিতা- সাগর

    সাগর
    – ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    সেই ছোট্ট জলরাশি নিয়ে এক নারীহৃদয় ;
    যার বুকে শুধু সবাইকে নিজের করে নেবার ইচ্ছে;
    ভালবেসে সবাইকে হৃদয়ের মাঝে, জড়িয়ে রাখবার ইচ্ছে –
    সে শুধু একটা নদী হতে চেয়েছিল,বহমান ভরা জোয়ারের এক নদী ;
    যে পলি তার চলার পথে ছিল, এক হলুদ বিকেলে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল–
    আষাঢ়ের সকালে প্রথম কদম ফুটেছিল সেদিন।।

    জোয়ারের কথা, তার জানা ছিল না কোনদিন;
    নির্বাক, নিস্পন্দ সে চলা; মাসের পর মাস, বছর পেরিয়ে
    আরও অনেকগুলো বছর, এমন করেই, অবিরাম বয়ে চলা ;
    কিন্তু সে বয়ে চলা কি, তার নিজের জন্য!
    হয়তো নয়, হয়তো বা শুধু একবার নিজের মতো করে,
    সাগরকে ছুঁয়ে দেখবার বাসনায়।

    নদীর একটি অবয়বের সাথেই, তার ছিল যত সখ্যতা
    ভাটা! ভাটার উচ্ছ্বাস তার কাছে ছিল জোয়ার;
    এক তুফানের রাতে সত্যিই জোয়ার এলো, তারপর ছোট্ট সেই থমকে যাওয়া নদীকে
    সাগরের ঠিকানায় পৌঁছে দিল, অজান্তেই!
    সেই মগ্নতা বুঝলোনা সাগর, নদী দুজনেই –
    শুধু সবুজ,ধুসর, নীল, সব রঙ যে তখন মাখামাখি;
    অভিন্নতায় যেন নতুন করে নদী তখন বাঙ্ময়-
    সাগরের উত্তাল, উদার, প্রশস্ত বুকে।

  • কবিতা

    কবিতা- নববর্ষ

    নববর্ষ
    – নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    একদিন ঠিক কালের নিয়মে,
    পুরানো সকল যায় যে থেমে
    তিনশো পয়ষট্টির গেরোর গ্রহনে
    নতুনের আগমনে।
    এসে যায় গুটিগুটি নতুন বছর,পুরনো পোশাক ফেলে
    রাজার সিংহাসনে, নতুনের অভিষেকে-
    রঙিন চোখটি মেলে –
    সাজ সাজ রব, সরে যায় চৈতালি রাত,
    অশ্রুসজল ম্লানমুখে।

    এলো বৈশাখ এলো নবসাজে, পুরিয়ে যত আবর্জনা –
    শেষ চৈত্রের রাত দিয়ে গেল যে অভিষেকের আল্পনা।
    সে কবিতা, গান, ছন্দে, সুরে, ধ্বনিত যেন নতুন করে –
    দীনতা সকল মুছে গেল, বৈশাখী এই উষার ডোরে।

    আম্রমুকুল গাছে গাছে তার, নতুন সবুজ পাতা –
    তেমন করেই হৃদয় বীণে, তন্ত্রী নতুন বাঁধা।
    নতুন বছর, নতুন আশা, রক্তিম নীলাকাশ –
    বৈশাখী রাতে শুকতারা, শোনাবে নতুন ভাষ।

  • কবিতা

    কবিতা- জননী জন্মভূমিশ্চ –

    জননী জন্মভূমিশ্চ 
    – ডঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     


    ৷ ৷ ১ । ।

    মা আছেন অজ গাঁয়েতে, একটি ভাঙা ঘরে,
    বর্ষাকালে ঘর ভেসে যায়
    ফাটে চাঁদি ভাদ্দরে।
    মায়ের বাছা পায়না সময়-
    সময় কাটে পার্টিতে,
    কুচকায় নাক “ভিলেজ” বলে,
    বলে, “ওসব জায়গা আমার পছন্দ নয়”
    ওসব ভীষন নাকি “ডার্টি” যে,!
    চারিদিকে বন্ধু স্বজন, আলো ঝলমল –
    ভাবে আত্মজ, মায়ের আঁচল,
    এত ধরবার কি প্রয়োজন!
    অনাদরে, অনাহারে মায়ের শরীর,
    যায়, ক্ষয়ে যায়,
    ছেলের পথের দিকে চেয়ে-
    নিষ্পলকে মায়ের চোখ ;
    অশ্রু ঝরে পড়ে,
    দু গাল বেয়ে,চিবুক ছুঁয়ে।।

    ৷৷৷ ৷ ২ । ৷

    দিনও রাত কাটলো কত-
    মায়ের কান শুনলো অনেক, অনেক কথা –
    মাকে না দেখবার শত বাহানা;
    মা কি এসব শুনতে চায়,
    মা যে প্রানভরে দেখতে চায়
    একটিবার ছেলের মুখ,
    একবারটি ইচ্ছে করে বলতে কথা-
    দূরে থাকলেও,
    কল্পলোকে ঘুমিয়ে আছে,
    মা ও ছেলে একই সাথে।
    মায়ের ভালবাসা, হয় না যে ক্ষয়-
    ছেলের জন্য মায়ের বুকে স্নেহ ফল্গু-
    তেমন করেই যায়, বয়ে যায়।।

    ৷ ৩ ।

    অপেক্ষা আর অপেক্ষা –
    ছেলের পথের দিকে চেয়ে, অপেক্ষা তো অনেক হোলো!
    আসেনি ছেলে ; কাটছে সময় কড়িকাঠের দিকে চেয়ে;
    মা শুনেছে, তাঁর বাছা অনেক বড় চাকরি করে-
    গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, কলকেতায় বড় অফিস –
    লোক লস্কর অনেক আছে,-!
    ব্যস্ত ভীষন, অনেক কাজে,
    তবু মায়ের জন্য, হয়না সময়
    সময় বড় কম!
    জননী আর জন্মভূমির আছে কি শুধুই,
    দেওয়ার অধিকার!
    চোখের জলে লেখা হলো অনেক কবিতা
    মায়ের বুকের মাঝে ব্যাথার প্রদীপ
    জ্বলছে অনিবার।।

    ৷৷ ৷৷ ৷ ৪ । ।

    চেনা, অচেনা কতজনের কাছে,
    মা শুধোলেন জনে জনে–
    ” তোমরা কেউ খবর দিতে পার, আমার ছেলেটাকে,
    যদি একবার এসে চোখের দেখা , দেখে যায়
    এই বুড়ি মা টাকে”– সবাই নিরুত্তর,
    কারো দুচোখ ভেসে, যায় চোখের জলে;
    কারো কথা বলতে গলা কাঁপে;
    “আমার ছেলের জন্য ,
    নারকেল নাড়ু,পুলি করে রেখেছি,
    কোমরের ব্যাথা নিয়ে পাটিসাপটাও করেছি
    সব রেখে দিয়েছি, কৌটোয়;
    বড্ড ভালোবাসে খেতে”, মায়ের সবটুকু সোহাগ
    ঝরে পড়ে; শিশিরবিন্দুর মতো যা, স্নিগ্ধ,পবিত্র –
    তাঁর শুন্য দৃষ্টি, সামনের পথ ছাড়িয়ে আরও দূরে,
    অস্তগামী সূর্যর রক্তিম আলোয় মাখামাখি হয়ে যায়।।

    ৷ ৷৷ ৷ ৫ । ৷ ৷

    এলো ছেলে দুমাস পরে, সেদিন সাঁঝে,চুকিয়ে পার্টি,
    আর সব কাজ; সাথে বান্ধব, অফিসের লোক-
    বাড়ি ভরপুর, রাস্তায় নিওনের আলোয় স্তব্ধতা ,
    কুড়েঘরের উঠোনে তখন শুধুই অন্ধকার-
    আছে সবাই, আছে ঘর, আছে যা ছিল এই ছোট্ট ঘরে,
    সবই আছে ঠিক তেমনই,
    শুধু মানুষটা আজ নেই-
    হাজার বাতির রোশনাইতেও,
    এ ঘর আজ চির অন্ধকারের আবর্তে –
    পৃথিবীতে আজ ছেলের কাছে সবই আছে,
    শুধু নেই তাঁর মা!
    পাটিসাপটা, নাড়ু, পুলি
    ছোট্ট ঘরে, খোকার জন্য এককোনেতে ;
    তেমন করেই রাখা।।

    । ৷ ৬ ।।

    দাউদাউ ওই চিতার আগুন-
    জ্বলছে ঐ মায়ের চিতা,
    চাইছে আগুন ছুঁতে, উদার আকাশটাকে,
    বড় আপন করে-।
    রইবেনা মা আর কখনও, দাঁড়িয়ে ওই জানলা ধরে,
    ছেলের পথের দিকে চেয়ে-
    বলবে না মা, আর কারোকে –
    “সময় করে তোমরা কেউ খবর দিও আমার ছেলেটাকে,
    একবারটি সময় করে আসতে বোলো তাকে”–
    চিতার আগুন পুড়িয়ে দিল সকল স্বপ্ন, আশা,
    শুধু মায়ের সাথেই রয়ে গেল মায়ের ভালোবাসা;
    বলবেনা মা আর কখনও, “আয়না খোকা আমার কাছে,
    থাকনা বাছা,কাছে আমার একটা, দুটো দিন-
    যাসনে, ওরে যাসনে এখন, আমায় ছেড়ে;
    এখনই তুই যাসনে কলকেতা “।।



  • কবিতা

    কবিতা- উনিশের বুকে

    উনিশের বুকে
    – ডঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    আঠারো আমায় করেছে তরুণ,
    পুঁথি নয়, দিনপঞ্জিকা দিয়ে পাঠ-
    জেনেছি প্রাজ্ঞ উনিশে, দামাল হৃদয়
    আগুন জ্বেলে, মোছাবে আঁধার – রাত।।

    অবহেলা মেনে, অপমান সয়ে,
    উনিশই পারবে, সাঁঝ,রাত ছুঁয়ে-
    ভোরের কপালে, রাজটীকা এঁকে,
    দিতে এনেই সিংহাসন , দিনের বুকে।।

    লাঞ্চনা, যত অন্যায়, ঘটে যায়;
    উনিশের বুকে ততই বেজেছে
    একশো হাতুড়ির ডঙ্কা, তীব্র নিনাদ-
    আগ্নেয়গিরি সম, বুকে জমা প্রতিবাদ।।

    উনিশ জেনেছে মানুষ হওয়ার পাঠ,
    মুল্যবোধের সবটুকু বোধ নিয়ে-
    উনিশ বুঝেছে, শিক্ষা পুঁথিতে নয়,
    জীবনের পথ হেটে, শিক্ষা নিতে যে হয়।

    মানবতা, ত্যাগ, ভালবাসা ; একান্ত সম্ভারে-
    স্বর্গ- বেহেস্ত মাটিতে, উনিশই দেবে যে গ’ড়ে।
    রনে, প্রেমে যে, নেই কোন বিধি বাম-
    উনিশের তেজে নামে, মরুতে বৃষ্টি – বাণ।।

    শুন্য যা কিছু, পুর্ণ করুক উনিশে-
    রাজার নীতি তে, প্রজার মন কি মেশে!!
    দেশাত্মবোধ, শ্রদ্ধা, সেবা, সহমর্মীতা- বিনে-
    উনিশের কন্ঠ ভরেছে, ব্যতিক্রমী কথা, গানে।

    পেরিয়ে অনেক সাগর,পাহাড়, মরুদেশে –
    জীবন হয়েছে আরও রঙিন, গতিময়।
    জীবনের তার, বেঁধেছি এবার উনিশে,
    তাই এ জীবন, জানেনা কোন যে ভয়।

    ঝড় প্লাবনে স্থির সে জীবন আজ-
    সব বাঁধা ভেঙে, সে আরও বেশি বাঙ্ময়।

    উনিশের চোখে ভরা সারল্য, ভীষণ করেছি সবুজ-
    উনিশের মন আজও যে দেখি, শিশুর মতোই অবুঝ।
    যে মন বাসতে জানে, ভীষণ করেই ভালো –
    সে “উনিশ- মনেই” জ্বেলেছি দীপ,
    আঁধার মুছে, আজ জ্বালাবো সকল আলো।

  • কবিতা

    কবিতা- ভাঙন

    ভাঙন
    – ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    যা চাওনা তোমরা, তাই ভেঙে ফেলো –
    লেখা, রেখা, সব শিল্পকলায়, আগুন জ্বালো!

    যা চাওনা তোমরা, তাই ভেঙে ফেলো –
    লেখা, রেখা, সব শিল্পকলায়, আগুন জ্বালো,
    তোমরা তো মনের সুখে, আগুন জ্বালো।

    ভেঙে ফেলা তো সহজ খুবই, সৃষ্টি করতে পারো!
    সভ্যতা যা বুকে ধরে আছে,তোমাকে বাঁচিয়ে;
    তাকেও হত্যা করো!
    তোমরা তো মনের সুখে আগুন জ্বালো!

    তোমরা তো মনের সুখে আগুন জ্বালো
    তিল তিল করে যা গড়ে ওঠে, এক পলে ভাঙা যায়-
    ধ্বংস- কেতন কোথা কোনো দিন, করেছে বিশ্বজয়!
    চাওনি তোমরা কৃষ্টির ধারা বহমান হয়ে থাক,
    মুছতে চেয়েছো ক্যানভাসে রেখা, হয়ে গেছি হতবাক।
    তোমরা তো মনের সুখে, আগুন জ্বালো।

    করেছ স্তব্ধ কণ্ঠের সুর, সাহিত্য -আলপনা;
    আলোকের পথ রুদ্ধ হয়নি,
    বেড়েছে যতই সে পথে, হিংসার আনাগোনা।
    চাওনি তোমরা মনিষী, মহান শ্রদ্ধাসনে থাক-
    নামিয়েছ তারে তরবারি কোপে,
    বাজিয়ে হিংসা-ঢাক!
    তোমরা তো মনের সুখে আগুন জ্বালো।

    শক্তি এমনই তোমাদের দেখি, সব করো খানখান-
    প্রতিবাদে আজ চেতনা প্লাবন, এসেছে তুফান।
    ভেবেছো এমন! কৃষ্টির ধারা মাটিতে মেশাবে-
    ভেদাগ্নি তে আগুন জ্বালাবে!
    এমন ভাবনা ভুল-
    ভেদ সব ভুলে, ভাঙনের বুক চিরে,
    তোমাতে -আমাতে ফোটাবো গোলাপফুল।
    তোমরা তো মনের সুখে আগুন জ্বালো।

    দুর্বল, তাই ভেঙে ফেলে দাও,
    অন্যের ভালো যত কিছু আছে-
    করবে ধ্বংস, এ কেমন কথা,
    এতো, সৃষ্টির বুকে বাজে।
    এবার, ভাঙবে যতই, নামবে আঁধার,
    ভাঙবে যতই, নামবে আঁধার,
    গোলা, কামানের বুকে!
    ততই উঠবো লাভার স্রোতে,
    ভাঙছে যে হাত, পুড়িয়ে দিতে-
    লেখনীর আগুন হয়ে;
    ফুটন্ত ওই লাভার স্রোতে,
    ভিসুভিয়াস থেকে।

  • কবিতা

    কবিতা- নারীদিবস

    নারীদিবস
    ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    সারাবছর কতরকমের দিবস,
    কড়া নাড়ে, আসে আবার চলেও যায়-
    চলে যায়; বাদ্যি- বাজনা বাজিয়ে,
    বেশ হৈ হট্টগোল, কলরব করে।
    প্রচারের নিনাদ, অনেক অন্ধকারকেই
    ঢেকে দেয়;যে আলোর বন্যায়
    চারপাশে হাজার সূর্যের বিচ্ছুরন,
    তাকে অনেকসময় মেকী মনে হয়-।
    পুজোর আবহ রচনায় কোন
    কার্পণ্য নেই, তবু কি পুজো হয় পরিপূর্ণ!
    কাঁসরঘণ্টায় পুজোর আয়োজনের ছোঁয়া-
    উৎসবের আমেজ,নারীদিবস আজ
    যেমন করে কাল ছুঁয়ে গেছে
    মাতৃদিবস,বন্ধুত্বের দিন,পিতৃদিবস,
    ভালোবাসার দিন-
    আরো কত,এমন দিন!

    বিল্টুদের দিকশুন্যপুরের গ্রামের বাড়িতে
    এসব কথা কেউ শোনেনি আগে-
    বাড়ী থেকে ইস্কুলে আসবার পথে
    আজ কত হৈচৈ,গান কত সভা-
    সে শুনেছে আজ নারীদিবস –
    সবাই কত ভাল ভাল কথা বলছে
    গান বাজছে,বেশ লাগছে তার;
    সবজায়গায় আজ শুধু,
    শ্রদ্ধা, ভালোবাসার –
    রকমারি ফুল নিবেদন।।

    বিল্টুর এসব দিনের প্রয়োজন নেই-
    সে এসবের মানে ঠিক বোঝেনা-
    একটি দিনে সব ভালবাসা আর সন্মান
    বাদ্যি, বাজনায় ছুটে ছুটে আসে-
    তার পরের তিনশো চৌষট্টি দিন
    বিল্টুর চোখে পড়েছে
    অনেক মায়ের, অনেক দিদির,
    অবহেলা, অনাহারের বেলা-
    দু চোখ ঝাঁপিয়ে নেমে আসে
    লবণাক্ত জল, নীরবতার পালা-
    সূর্যোদয়ের সাথেই, সুর্যাস্তের খেলা।।

    সব দিন হোক এমন, একটু একটু করে;
    উদাসীন নয়
    এমনই রঙীন,ছন্দময়;
    আঠারোর কৈশোর মন এমন ভাবেই চায়
    মাতৃদিবস, পিতৃদিবস,নারীদিবস
    শ্রদ্ধায় আন্তরিক,
    বাহুল্যহীন, রঙিন
    তিনশো পঁয়ষট্টি দিন।।

  • কবিতা

    কবিতা- রক্তদান

    রক্তদান
    – ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    জল যেমন জীবনের অন্য একটি নাম,
    তেমনই রক্ত জীবনের একটি প্রতিশব্দ যেন-
    বুঝেছিলাম সেদিন, যেদিন মাঝরাতে
    আমার দরজায় কড়া নেড়েছিল কেউ ;
    আমি দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছিলাম,
    যদি কোন বিপদ সেই নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে,
    আমার ছোট্ট ঘরটাতে ঢুকে পড়ে,
    তার হায়নার মতো থাবায় আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে ;
    আবারও, করাঘাত আমার দরজায়
    পাঁচবার, ছবার, সাতবার – বেশ জোরেই,
    দরজা খুলে দিলাম, আমার ছোট্ট মেয়েটির বারণ সত্বেও –
    সামনে দাঁড়িয়ে মনিরুল,
    আমাদের সাতনাপাড়ার পুরানো পল্লীর শেষেই ওঁদের ঘর,
    “দাদাভাই আমার ছেলেটা মরতে বসেছে গো,
    শহরের হাসপাতালে ভর্তি, রক্ত লাগবে তার
    মিলছেনা গো”-
    মনিরুলের সজল চোখে করুন আর্তি
    আমি কি করবো, মনি,?
    ওর কালো হয়ে যাওয়া, ফ্যাকাসে মুখটার দিকে তাকিয়ে,
    আমার প্রশ্নটা ঝড়ে উড়ে যাওয়ার মতো,
    কোথায় যেন মিলিয়ে গেল-
    মনিরুলের সব আবেগ আর যন্ত্রণা
    চোখের জল হয়ে নেমে এলো,
    “যতীনদাদা তোমার রক্তের গ্রুপের সাথে,
    আমার ছেলেটার রক্তের মিল আছে,
    আমার সাথে মেলেনি ওর গ্রুপ,
    সেবার আমাদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে জানতে পেরেছিলাম
    এখানে একমাত্র তোমার সাথেই রক্ত মেলে,
    আমার ছোট খোকার ;
    তাই, তো এত রাতে, হুড়মুড়িয়ে
    তোমার কাছে ছুটে আসা আমার যতীনদাদা-
    একবারটি চলো, তোমার রক্তে আমার খোকা
    জীবন ফিরে পাক-যতীনদাদা”
    “যাবো মনিরুল,আমি যাবো –
    রক্ত যে জীবন ফিরিয়ে দিতে জানে-
    সে জানে না, সে রক্তের মালিক হিন্দু, না মুসলমান-
    সে জানেনা, জানতে চায়না
    যাকে দেবে কিংবা যে নেবে সে বৌদ্ধ, পার্সি না খৃষ্টান!
    রক্ত জানে শুধু মানবতা,
    আর জীবনের কথকতা –
    তাই সেখানে মিলে যায় টমাস -যতীন- মনিরুল, আরও সবাই
    আজীবন, এমন করেই একবুক ভালোবাসা নিয়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- অপরাধী

    অপরাধী
    ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

     

     

    আহাঃ, আঠারো পেরোলে তবেই তো সত্যি অপরাধী!
    ষোলো বা তার আগে কেউ কি আর দাগী!
    প্রতারণা, ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি-
    “চোদ্দোয় অপরাধী! বয়স তো কম;
    ও তো নাবালক জানি!”

    যদি খসে যায় কারো জীবনের তারা;
    যারা খসিয়েছে, হয় যদি নাবালক তারা-
    জেনো, দোষ দিতে হয়না তো আঠারোর আগে,
    আইনেই বাঁচে, মরে;
    ধিক! বড়ো অদ্ভুত লাগে।

    প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আজও মাথা ঠুকে মরে-
    মোমবাতি মিছিলে মূক আর কবে বলো
    মুখর যে হবে!
    নির্ভয়া, শুধু নয় আর ও কতো –
    এভাবেই, জীবনকে ছুটি দিয়ে যায় সরে,
    আজও তাই নির্ভয়ে কত অভাগিনী আজও,
    এই দেশে প্রতিদিন, প্রতিপলে মরে।

You cannot copy content of this page