-
কবিতা- তুমি আসবে বলে
তুমি আসবে বলে
-তাপসী শতপথী পাহাড়ীআকাশটায় একবার মন ছুঁয়ে দেখলাম, ঠিক তোমার মতো সে যেন নীলাম্বরী শাড়ি পরে উদার বুক মেলে ধরেছে দিগন্ত বিস্তৃত করে।তাতে ডানা মেলে উড়ছে পেঁজা তুলোর মতো শ্বেতশুভ্র মেঘ- বলাকার দল। আকাশ বাতাস মুখরিত হচ্ছে আগমনি সুরে।
দিক্ দিগন্তে নেমেছে আনন্দের ঢল।
শিশির ভেজা ঘাসের ওপর টুপটাপ ঝরে পড়ছে শিউলি ফুলের গন্ধ।
দিঘির পদ্ম শালুখে লাগছে আনন্দের ঢেউ।
দোল খাচ্ছে কাশ বন। চারদিকে জানান দিচ্ছে শারদীয়ার আগমনি খবর।
শুধু তুমি আসবে বলে আজো মগ্ন হয় সারা মন, শিহরিত হতে চায় সুপ্ত চেতনারা-সেই সর্বজনীন ভালোবাসায়। হয়তো আরো একটা বনলতার খোঁজে,
শুধু তুমি আসবে বলে…. -
কবিতা- জীবন বুনন
জীবন বুনন
-তাপসী শতপথী পাহাড়ীআমি ততক্ষন পর্যন্ত শব্দ বুনে যাবো,
যতক্ষন না পর্যন্ত একটা গল্প শুরু হয়।
সময়ের নিপাট ভাঁজে ভাঁজে রাখবো প্রত্যেকটা স্বপ্নকে।
গভীর প্রত্যয়ে প্রতিটি চেতনায়
আঁকবো জাগৃতির স্বস্ত্বিক চিহ্ন।
সুপ্ত আকাঙ্খাকে সাজাবো কঠিন বাস্তবতায়।
প্রত্যেকটা উষ্ণতাকে রাখবো
রক্তের শিরায় শিরায়।
মাখবো ভালোবাসার জীবন পরাগ।
আমি ততক্ষন পর্যন্ত একটা গল্প লিখে যাবো,
যতক্ষন না পর্যন্ত কাহিনীর জীবন দীপ
শেষ তেলের বিন্দুতে স্নাত হয়ে নির্বাপিত হয়।
আমি ততক্ষণ পর্যন্তই শব্দের আর
আমার যুগলবন্দীতে জীবনের গল্প বুনে যাব। -
কবিতা- থমকে যাওয়া ভোর
থমকে যাওয়া ভোর
– তাপসী শতপথী পাহাড়ীহঠাৎ যদি এমনটা হয়
থমকে গেলো ভোর,
সুপ্রভাতটা রইলো পড়ে
তোমার ঘরের দোর।
হলো না তার গৃহপ্রবেশ,
তার আগেই হলো সে শেষ
ভোর পেলো না আমার আকাশ
জীবন আঁধার ঘোর
হঠাৎ যদি এমন টা হয়
থমকে গেলো ভোর।হাতটি রেখে মুঠোফোনে
ভাববে তুমি বসে,
এতোক্ষণ তো হয় না দেরি
কি বা হলো শেষে!
আজকে তবে এলোনা নাকি
সুপ্রভাতটা দিলো ফাঁকি,
অজানাই থেকে যাবে
সে রহস্য ঘোর।
হঠাৎ যদি এমনটা হয়
থমকে গেলো ভোর। -
কবিতা- যীশু
যীশু
– তাপসী শতপথীযীশু আজো দাঁড়িয়ে দেখি,
পেরেক ঠুকে তোমার বুকে,
যন্ত্রনাতে বিদ্ধ হয়েও
মাতছো তবু সৃষ্টি সুখে।
ঝরিয়ে পাতা শীর্ণ হলো
পুড়লো হৃদয় শুকনো কাঠে
যখন তখন রক্ত ঝরায়,
যখন তখন তোমায় কাটে!
ফুলের ডালি ,ফলের ডালি,
দিচ্ছো তুমি দুহাত ভরে,
দিচ্ছো ছায়া রৌদ্রে সেঁকে
পুড়ছো শরীর মোদের তরে।
দূর আকাশের মেঘকে ভেঙে
আনছো টেনে সুধার বারি
শুদ্ধ বাতাস টানছি সুখে,
সে কথা কী ভুলতে পারি!
তবুও যীশু দাঁড়িয়ে একা
ক্রুশে বিদ্ধ রক্তক্ষরণ,
ইতিহাসের কাল থেকে সেই
কষ্টটাকে করছো বরণ।
বিজ্ঞাপনের পেরেকগুলো
প্রতিদিনের যন্ত্রণাতে,
অশ্রু ঝরায় শরীর বেয়ে
মানুষ তবুও সুখ টানেতে!
ভাঙছে শাখা ইচ্ছেরা সব,
পাতায় আঁকে পতন রেখা,
অট্টালিকার হাতছানিতে,
ধ্বংস স্তূপে দাঁড়িয়ে একা!
আসবাবেতে ফসিল হয়ে,
আত্মা পোড়ে আগুন জ্বেলে
খান্ডব বন দহন হবে
লোলুপ ক্রুর দৃষ্টি ফেলে।
জীবন যজ্ঞে প্রতিদিনই
আত্মাহূতি দিচ্ছো বিভু,
নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছো রোজই
যীশুর মতো দাঁড়িয়ে তবু! -
অণু কবিতা- অচেনা বোধ
অচেনা বোধ
– তাপসী শতপথী পাহাড়ীহয়তো পৃথিবীকে দেওয়ার মতো কোনো ইচ্ছেই অবশিষ্ট ছিলো না আর!
ছিলো না নিজের প্রতি নিজের,
সমস্ত দায় দায়িত্বহীন অস্তিত্বের খোঁজে,
ভারমুক্ত হতে চেয়েছিলো সেও একদিন।
তাই দিনান্তের শেষে,
রাত্রি খুঁজে পেয়েছিলো বহুদিন পর।
সমস্ত নির্যাস ফেলে নিশ্চিন্তে
নির্বিঘ্নে, সেও চেয়েছিলো কাটাতে বহু বছর!
তারপর অনন্ত শান্তির বার্তা দিয়েছিলো মন,
পরম আত্মার সাথে মিলনের ক্ষণ। -
কবিতা- গল্পন্যাস
গল্পন্যাস
-তাপসী শতপথী পাহাড়ীআজ যতোই তুমি মেঘ সাজাও,
আকাশে বৃষ্টি আর ঝরবে না!
খন্ড খন্ড মেঘমালা ভেসে যাচ্ছে
মন কেমনের দেশে!
পাতা ঝরা শুরু হয়ে গেছে,
নিঃশব্দে তারই শব্দ শোনো!
ইচ্ছাকৃত সুখগুলো আজ
অনিচ্ছাকৃত খাদের সামনে দাঁড়িয়ে,
শুধু মুহূর্তের অপেক্ষা!
মৃত্যুকে জেনে নাও, চিনে নাও!
জেনে যাও- নিবেদনের ভাষা আছে,
আছে আবেগের প্রেম আর প্রাণ!
বিসর্জন! সে তো মিশে যায় নিঃশব্দের কৃষ্ণগহ্বরে!
অন্তহীন অপেক্ষার পর
উপেক্ষার নিঃসীম অন্ধকারে!
তারপর বেওয়ারিশ গল্পের লাশ!
অপেক্ষায় আরো গল্প!
হায় ! দীর্ঘ উপন্যাস.. -
কবিতা- তোমাকে দেখেছি
তোমাকে দেখেছি
– তাপসী শতপথী পাহাড়ীতোমাকে দেখেছি নীলচে তারার মাঝে,
তবু,কখনো ভাবিনি আলোক বর্ষ দূর!
নিয়ত তোমার অদৃশ্য ছোঁয়া গুলো,
চেতনায় আজ উপ্ত প্রেমাঙ্কুর।তোমাকে দেখেছি অতল সাগর তলে,
সোনারে তবুও খুঁজিনি তোমার মন।
নিয়ত পেয়েছি অজস্র ঢেউগুলো,
হৃদয়ের তীর আবেগে ছুঁলে যখন!তোমাকে দেখেছি দিগন্ত লাল আলোয়,
তবুও পাইনি আগুনের রূপ খুঁজে,
কনে দেখা আলো মায়াবি গায়েতে মেখে,
মুখখানি দেখি রঞ্জিত হয় লাজে।তোমাকে পেয়েছি ঘন অমানিশা রাতে,
তবুও ভাবিনি কালো মৃত্যুর হাত!
নিদ্রা বিহীন স্বপ্ন দিয়েছি সঁপে,
একসাথে দোঁহে জাগরিত দুই রাত। -
গল্প- স্বপ্ন উড়ান
স্বপ্ন উড়ান
– তাপসী শতপথী পাহাড়ীআর হাতে মাত্র দু’ দিন। তারপর শুরু হয়ে যাবে মহোৎসব, তাই আর যেন তর সইছিলো না লিপির।কবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটা আসবে সেই অপেক্ষাতেই অস্থির হচ্ছিল সে। এবার সে কয়েক দিনপিসির বাড়িতে থেকে বেশ ভালো করে ঘুরে ঘুরে কোলকাতা বই মেলাটা দেখবে।অনেক দিন ধরেই লিপি বাবার কাছে আবদার ধরেছে কোলকাতা বই মেলা যাওয়ার কিন্তু বাবা কিছুতেই আর রাজি হতে চায় না, এরকম কি ভালোলাগে? না হয় তার তেমন নাম ডাক নেই, তবুও তো সে ছোটোখাটো ধরনের একজন কবি, তার তো অবশ্যই যাওয়া উচিত, কিন্তু তার এই ঔচিত্যকে কে আর পাত্তা দেয়! ইদানিং তার কিছু কবিতা পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, তা দেখে মা বেশ খুশি। লিপি এই সুযোগে মাকে পটিয়ে বাবাকে রাজি করানোর আর্জি জানিয়েছে।
বাবা এতোদিন মেয়ের এই আবেগকে প্রশ্রয় দেন নি, কিন্তু এবারে একটু আলাদা উন্মাদনা যেন দেখা গেল তাঁর মধ্যে। মেয়ের একটু নাম ডাক শুনতে সব বাবারই বেশ ভালো লাগে। তাই বাবার রাজি হওয়ার কথা শুনে মেয়ের তো যেন আর আনন্দ ধরে না, এতো দিনের স্বপ্ন সার্থক হতে যাচ্ছে সে উচ্ছ্বাসকে ধরে রাখতে না পেরে স্কুলে পৌঁছে আগেভাগেই সব বন্ধুদের সাথে আনন্দের খবরটা শেয়ার করে সে।
সবচেয়ে কাছের বন্ধু যুথিকা শুনে বলে ওঠে – আমার জন্য একটা গল্পের বই আনিস কিন্তু।
– আনবো আনবো, তুই চিন্তা করিস না। বাবাকে পটিয়ে, আর মার কাছ থেকেও কিছু নিয়ে এবারে অনেকগুলো কবিতা আর গল্পের বই কিনবো।জানিস বাবাকে এর আগে অনেকবার বলেছি কিন্তু কিছুতেই শোনে নি,তবে এবারে দেখছে মেয়ের একটু নাম ডাক হচ্ছে, স্পেসালিটি বাড়ছে তো তাই রাজি হলো।
– কেন,কি ব্যাপার বই টই প্রকাশ হচ্ছে নাকি? বলিস নি তো,
ইতিমধ্যে দিদিমনি থেকে বন্ধুরা সবাই জেনে গেছে তার কবিতা অনুরাগের কথা। স্কুল ম্যাগাজিনে তার কবিতা পড়ে দিদিমনিরা তো খুব আপ্লুত, তাই যে কোনো দিন তার বই প্রকাশ হতেই পারে। লিপির কাছ থেকে উত্তর আসার আগেই ঢঙ ঢঙ করে ঘন্টা পড়লো প্রার্থনার। সবাই ছুটলো প্রার্থনার উদ্দেশ্যে। তারপর টানা ক্লাস থাকায় লিপিকারও আর বলা হলো না, যুথিকারও শোনা হলো না বই ছাপানোর ব্যপারটা।
স্কুল থেকে ফিরে রাত্রে খাওয়ার পর টেবিলে ছড়িয়ে থাকা খোলা পাতায় লেখা কবিতার পান্ডুলিপিগুলো গোছাতে গোছাতে লিপি তার মাকে বলে- মা বাবাকে বলে দিও আমি কিন্তু পিসির বাড়িতে এক সপ্তাহ থাকবো, সব স্টল ঘুরে ঘুরে দেখবো। জানো তো আমাদের যে সাহিত্য গ্রুপ আছে সবাই যাবে, সবার সাথে পরিচয় হবে। শুধু কি তাই! কত বড়ো বড়ো কবি আসবে। তাদের সাথেও পরিচয় হবে। সবার অটোগ্রাফ নেবো এবার। মা তার কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠেন – ওরে থাম থাম, এতো উথাল পাথাল ভালো নয়, তোর বাবার যা মতিগতি, আজ হ্যাঁ বলছে তো কাল না না বলে বসে।
– না না বাবা আমাকে প্রমিস করেছে, এবারে নিয়ে যাবেই।
এরপর লিপি তার ড্রেসগুলো গুছিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে পড়ে। কালকের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় গভীর ঘুমের দেশে।
এইটা কোলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা!খুব আশ্চর্য হয়ে যায় লিপি, এর আগে কোনোদিন তো এতো বড়ো বইমেলা সে দ্যাখেনি। এতো জমজমাট দেখে বেশ বিষ্ময় লাগে তার। কতো বড়ো এলাকা, কতোগুলো তার দরজা, লোকে লোকারণ্য, কতো স্টল, স্টলগুলোতে যেন উপচে পড়ছে ভিড়। এতো বড়ো মেলা হয়! যতোই দ্যাখে ততোই আশ্চর্য হয়ে যায় সে।
আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন তার জীবনের, আজই প্রকাশ পাচ্ছে তার একক কাব্য গ্রন্থ’ নিঃশব্দের শব্দ’। তাই তার মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি, একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করছে।একজন কবির কাছে এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কিই বা হতে পারে!
হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বাবার সাথে সব স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে লিপি। কত রকমের বই! সবগুলো উল্টে পাল্টে দেখছে আর পছন্দ মতো কিনেও নিচ্ছে, বাবাও টাকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলছে না, তাই যতোগুলো পারে কিনে নিচ্ছে।বিশেষ করে নতুন লেখকের বইগুলোই বেশি আকর্ষণ করছে তাকে কারণ পুরোনো লেখকদের বই-য়ে তার তাক ভর্তি আছে। দেখতে দেখতে অনেকগুলো বই কেনা হয়ে গেলো তার। শুধু কি তাই, কতো বড়ো বড়ো লেখকদের সাথেও পরিচয় হচ্ছে তার, কতো বিখ্যাত কবির কবিতা পাঠ শুনলো, আলাপ করলো। আজ যেন সব স্বপ্ন সার্থক হলো।
আর বেশি দেরি নয়, একটু পরেই তার বই প্রকাশের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে, সে বাবাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি মেলা থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলো অনুষ্ঠান হল ঘরে। যথাসময়ে অনুষ্ঠানও শুরু হয়ে গেল, হয়ে গেল তার বই এর উদ্বোধন। বইটাকে হাতে পেয়েই বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো সে,তার চোখের কোনে আনন্দাশ্রু চিক চিক করে উঠলো। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার প্রাপ্য বইগুলো নিয়ে এবার সে চলে এলো ‘মুক্ত’ প্রকাশনীর স্টলে যেখানে তার বইগুলো থর থরে সাজানো আছে।
আজ মেলার প্রথম দিন, সাহিত্য গ্রুপের আয়োজকের সাথে তার দেখা হয়ে গেল,কতো জন আজ তার বই কিনছে, কতোজন উল্টে পাল্টে দেখছে, কতোজন নিজস্বী তোলার আবদার করছে। এসবে কি যে আনন্দ লাগছে তার!
কিন্তু একি! সবাই এমন ছুটোছুটি আরম্ভ করলো কেন? হঠাৎ করে কি হলো আবার ! স্টলগুলো ও তো নড়তে শুরু করে দিয়েছে বইয়ের পাতাগুলো কেমন উল্টে উল্টে যাচ্ছে! এ তো তীব্র হাওয়ায় বেগ! কিন্তু হঠাৎ এতো হাওয়া এলো কোথা থেকে! মেঘও কালো করে আসছে, দেখতে দেখতে তো বেশ জোরেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। ঝড়ের বেগ বাড়তে লাগলো, আর দেখতে দেখতে তার তীব্রতা ভয়ঙ্কর রূপ নিলো। সাথে প্রবল বৃষ্টি, কড় কড় করে বাজ পড়তে লাগলো, সারা মাঠ থৈ থৈ জলে ভরে গেল। ঝড়ের তান্ডবে তখন সে কি অবস্থা! বইগুলোও দুড়দাড় করে পড়তে লাগলো। লিপি ছুটে এসে নীচে থেকে সব বইগুলোকে আবার সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু যতোবারই রাখতে যায় দমকা হাওয়ায় ততবারই যেন পড়ে যেতে লাগলো। কেন এমন হচ্ছে তার বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড় করে তার সামনেই বই সমেত স্টলটাও হুড়মুড় করে পড়ে গেল। লিপি এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে বইগুলোকে জড়ো করতে লাগলো, কিন্তু কিছুতেই যেন পারছে না, সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তীব্র হাওয়ায় বইগুলো উড়ে উড়ে জল থৈ থৈ মাঠের ভেতর পড়ছে। লিপিও বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে সারা মাঠ ছুটোছুটি করতে লাগলো, কিন্তু কিছুতেই যেন ধরতে পারছে না বইগুলোকে, যতোবারই ধরতে যায় দমকা হাওয়ায় আর জলের তোড়ে সব বই যেন হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এতো বইয়ের মধ্যে সে খুঁজে ও পাচ্ছে না কোনগুলো তার। শুধু বইগুলোর পেছনে ছুটছে… ছুটছে….
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ার তোড়ে জানালার পাল্লাটা দড়াম করে বিকট শব্দে খুলে যেতেই পাশে টেবিলে রাখা ফুলদানিটা সজোরে পড়লো মেঝেতে আর তার চৌচির হওয়ার আওয়াজে আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় লিপির।ধড়পড় করে উঠতে গিয়েই পড়লো একেবারে ডিভানের নীচে, স্বপ্নের ঘোরে উত্তেজিত হয়ে সে কখন যে ধারের দিকে চলে এসেছে বুঝতে পারেনি। বেশ জোরেই লেগেছে কোমরে কিন্তু তখনো যেন স্বপ্নের কোলকাতার সেই তান্ডব ঝড়ের বই মেলাতেই আছে! পাল্লাগুলা হাওয়ার দাপটে বেশ জোরেই দড়াম দড়াম করে যাচ্ছে। আর সেই হাওয়ার তীব্রতায় সারা ঘরময় ছড়িয়ে পড়ছে তার টেবিলে রাখা কবিতার পান্ডুলিপির পাতাগুলো। লিপি কোনো মতে উঠে, জানালাটাকে বন্ধ করে একটা একটা করে সব পান্ডুলিপির কাগজগুলো তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে। তারপর একটু সম্বিত ফিরলে সেগুলোকে যত্ন করে আবার তুলে রাখলো টেবিলের ওপর।
ওরাও হয়তো প্রকাশের আকাঙ্ক্ষায় কোলকাতা বই মেলায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে!…সমাপ্ত
-
কবিতা- অধিকার
অধিকার
-তাপসী শতপথী
জানিনা কতদিন অধিকারে
থাকবে আমার!
নরম আলোর রেণু গায়ে দিয়ে
উদ্দীপিত করবে আমায়।
তোমার প্রথম পরশ পায়
কাকলির কলতান,
তন্দ্রা জড়িমা চোখে
প্রকৃতি ও লোভে চুম্বন!
পুব কোনে রাঙা আলো
কচি আগুনের মতো
সবারে জড়ায়-
জল ,স্থল,অন্তরীক্ষ!
তবু একা অধিকারী আমি!
তারা শুধু ভোগ করে,
পায় না তোমায়!
জানি না কত দিন অধিকারে
থাকবে আমার! -
কবিতা- প্রেমাবর্তন
প্রেমাবর্তন
-তাপসী শতপথীতোমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল যেদিন,
সূর্যের শেষ অস্তরাগে রাঙিয়ে দিয়েছিলাম তোমার হৃদয়।
ভৈরবী রাগে তুলেছিলাম ভালোবাসার গান!
সন্ধ্যারাগে বেঁধেছিলাম
তোমার এলো চুলের বেনী।
সারারাত ধরে গল্প বুঝেছিলাম
তোমার স্বপ্ন নীড়ে! সে গল্প কি শেষ হয়,হতে পারে!
সে গল্প তো শ্রাবণ ধারার মতো্
মিশে যায় তোমার নীল হৃদয়ে!
মৃত্যু নীলে লীন হয় সমস্ত সুখ আর অবাধ্য চাওয়াগুলো।
অর্ধ- নারীশ্বর বেঁচে থাকতে চায় -শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বা বসন্তের রাতে!
সে তো বার বার জীবনের ঋতু চক্রে ফিরে আসে!
ফিরে ফিরে আসে…..