-
কবিতা- তুমি এক উপন্যাস
তুমি এক উপন্যাস
-নাজমুল হুদা খানবেশ কিছু দিন থেকে তোমাকে একটু একটু করে পড়ছি আমি।
ঠিক ছন্দময় কবিতার মতো তুমি…
কখনো মনে হয়েছে ঘাসের ডগায় লেগে থাকা জলকনা…
কখনোবা গভীর অন্ধকারে জানালায় আটকে থাকা জোনাকির মতো…
তুমি একেবারেই কবিতার মতো..
তোমায় পড়তে পড়তে
সূর্যের দিকে চেয়ে চাঁদ খুঁজি
চাঁদের কাছে গিয়ে তারা ছূঁয়ে আসি…আজ হঠাত কেন মনে হচ্ছে
তুমি কবিতা নও,
তমি ভীষন বড় এক উপন্যাস,
তোমাকে পড়ার ক্ষমতা আমার নেই।আমার গোলাপী কাগজে লেখা কবিতা থেকে,
টুপটাপ করে ঝরে পড়ে শব্দের
আগ্নেয়গিরি
উত্তাপ আর উত্তাপ,
বিন্দু বিন্দু হাহাকারশেষে রাতশেষে সুখনিদ্রা এসে যায় ৷
পড়ে থকে আমার শব্দে রা শূন্য টেবিলে।
উপন্যাসের পথ খুলে রেখে
আমর কবিতা দুঃশ্চিন্ত ঘুমায় ৷ -
কবিতা- নীরবতা
নীরবতা
– নাজমুল খাঁনআমাকে কখনো বলতে হবেনা
তোমায় ভালোবাসি।
কখনো গভীর আবেগ নিয়ে আমায় ছুঁতে হবে না।
হতে হবেনা আমার গভীর রাতের রাতজাগা পাখি।
আর পাঁচটা পাগল প্রেমিকের মতো
আমার জন্য পাগলও হতে হবে না।
রুটিন মেপে আমার সাথে কথাও বলতে হবে না।
আমার জন্য তোমার আত্ম-সম্মানে ফাটলও ধরাতে হবে না।
আমার সারাদিনের ক্লান্তির ঘামও তোমায় মোছাতে হবে না।
আমার জন্য আটপৌরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না বারান্দার করিডোরে।আমি শুধু চাই
আমি যখন বলবো “তোমায় ভালোবাসি”
তুমি এক দীর্ঘশ্বাসের সাথে বলো
পাগল একটা তুমি।
ভালোবাসাকে ঐচ্ছিক বিষয়ের মতো
দুরত্ব বাড়িয়ো না। -
কবিতা- জীবন চক্র
জীবন চক্র
– নাজমুল হুদা খাঁনঅর্ধেক পৃথিবী ঘুমাচ্ছে
কিছু নক্ষত্র চিরকাল জেগে থাকে
তারা আজও জেগে আছে
কেউ কেউ ভয়ানক নিঃসঙ্গতায়
দুর্বিষহ অতীতের চিন্তায়
হয়তো বা দুর্গম ভবিষ্যতের আশায়।কিছু বিষণ্ণ সকাল
ঘুম ভেঙে দেখে গভীর অন্ধকার
সেই অন্ধকারে কিছু সিগারেটের নীল ধোঁয়া
ব্যর্থতার পরাবৃত্ত এঁকে চলেছে সময়ের সাথেএই ভাবে চলছে জলচক্রের মত জীবনচক্র
প্রবল অস্থিরতার মাঝে সবাই চাইছে স্থির হতে
কিন্তু দিনের শেষে সবাই অস্থির
কেউ ভালো নেই… -
কবিতা- আমার শিক্ষক
আমার শিক্ষক
-নাজমুল হুদা খাঁনবঙ্গ থেকে বিশ্ব বঙ্গে
পিতৃতুল্য শিক্ষক মোদের অঙ্গে অঙ্গে
সুমধুর স্মৃতির স্মরণে
হয়েছিল শুরু আপনাদের বরনে
জীবনের প্রতি পদে
কেউ না কেউ দেখিয়েছে পথ
সেই পথে চলছে আজও আমাদের রথ
আপনাদের স্নিগ্ধ শীতল ছোঁয়ায় হয়েছি আমরা ধন্য
আর আজ সাগর তীরে এসেছি
আপনাদেরই জন্য।।।যতটুকু এগিয়েছি, আর আছে যত বাকি
জীবনের চোরা বালি পেরিয়ে, জীবনের ছবি আঁকি
শুধু আপনাদেরই জন্য।। -
কবিতা- প্রিয় দুঃখ
প্রিয় দুঃখ
-নাজমুল হুদা খাঁনসমগ্র বুকটা এক রক্ত মাংসের দেশলাই
বুকের পাঁজরগুলো এক একটা দেশলাই কাঠি
তারা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়
তারা জ্বলে ওঠে আবার নিভে যায়
পুড়ে খাক হয় ভিতরটা
তবে অন্যকে জ্বালায় না
আমি জ্বলি কেবল দিবা রাত্রিহাজারও দুঃখ আছে
যারা পুড়ে যায় জ্বলে যায়
আবারও যেগে ওঠে
এ দুঃখের মৃত্যু হয় না
হয়তো অমৃত পান করা এ দুঃখ অমর দুঃখযে দিন আমি চলে যাব
আমার বুকে পাটে পাটে সাজানো দুঃখগুলো
আনন্দে আত্মহারা হবে!
তারা পাবে চির মুক্তি
আর আমার অধরা সুখগুলো
আফসোস করবে আর বলবে
দুঃখ ছাড়া আমাদের সুখ কেমন করে আসবে! -
কবিতা- অবুঝ আমি
অবুঝ আমি
– নাজমুল হুদা খাঁন(হলুদ হিমু)তোর আছে চোখের জল
হয়তো বা অশ্রু ঝরে নীরবে
আমার কারণেসারা দিন জুড়ে আমার আমার কারণে
অজস্র তীর বিদ্ধ হয়েছে তোর বুকেতোর একটা মন আছে
হয়তো বা আমি ভুলে যাই
যখন মনে হয় আমার কারণে
নরম হৃদয়টা ফুপিয়ে কাঁদে তোর
আমার নিষ্ঠুর হৃদয়টাও কেঁদে ওঠেতোর একটা আকাশ আছে
সেখানেও মেঘ জমে,
সেখানে নামে বৃষ্টি
সেখানেও আছে আলো ছায়া
আমি হয়তো চেয়োছি আলোটাকে গিলে নিয়ে
অন্ধকারে ডোবাতে।
কারন অন্ধকার চিরকালের প্রিয়।তোরও আছে অভিমান
তোরও আছে রাগ
আমিও হয়তো বুঝিনা
তোরও একটা হৃদয় আছে
সেখানে আছে হয়তো স্বপ্নের খেলা ঘর
হয়তো আমি বুঝি না।তোরও আছে চোখের জল।
হয়তো আছে সেই জলের অনেক ভাষা
হয়তো আমি বুঝিনা।হয়তো বা তোর একটা জীবন আছে
আছে হয়তো অনেক ভাঙা ভাঙা গল্প।
আমি হয়তো বুঝিনাহয়তো তোর একটা জীবনের পথ আছে
হয়তো সে পথের সঙ্গী আমি
হয়তো আমি বুঝি না -
অণু কবিতা- বেদনার নদী
বেদনার নদী
– নাজমুল হুদা খাঁন (হলুদ হিমু)গভীর ক্ষত পুষে রাখা বুকের পাজরে
বেদনাগুলো সুর হয়ে বাজে তার নুপুরে
কার্নিশ ঘেঁষে পড়ে রক্তের লাল
কবিতার পান্ডুলিপিগুলো ছিল বিষাক্ত কালবেদনাগুলো বার বার হয়েছে আহত
অমরত্বের দাবি নিয়ে হয়নি নিহত
যে নদীর বুকেছিল প্রবল শ্রাবণ
ভরা আষাড়েও আজ নেই কোন প্লাবন -
কবিতা- কাল্পনিক
কাল্পনিক
– নাজমুল হুদা খাঁনহঠাৎ যদি মৃত্যু হয় আমার
যদি ছিন্ন হয় মায়ার বাঁধন
যদি দেহের কোষগুলি পরিণত হয় পাথরে
মেকি কান্নার বর্ষন হবে সেদিনকেউ বা বন্ধু হারাবে, কেউ হারাবে শত্রু
কেউবা প্রিয়জন, কেউ বা ভালো থাকবে আমৃত্যুনক্ষত্র থেকে নক্ষত্র হবে আমার বাস
আমার অস্তিত্ব আর আন্দোলিত হবে না,
তোমাদের কক্ষ পথে।
কিছু পরাধীন দেশ হবে স্বাধীন
স্বৈরাচারী রাজার হাত থেকে।
কিছু খাঁচায় বন্দী পাখি মুক্ত হবে আকাশে।
আমার মৃত্যু হলে আনন্দ পাবে
কয়েক শতাব্দীর বন্দী কয়েদি। -
কবিতা- প্রতিশ্রুতি
প্রতিশ্রুতি
-নাজমুল হুদা খাঁবাতাসে কিছু মিথ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে
যাযাবর মেঘের মতো
কিছু মেঘ বৃষ্টি ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল
কিন্তু বর্ষা আসলো না এক পশলা,
বর্ষা নামার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা
কিন্তু কোথায়???
কেবলই খরা দেখলো শষ্য ক্ষেত..
কিছু ফসল পচে গলে মিশে গেল মাটিতে।
কিছু তৃষ্ণার্ত চাতকের জলের অভাবে প্রাণ হল বলিদান।খামখেয়ালী মৌসুমি বায়ু এবার হয়তো আসার সময় হয়ে এসেছে।
আবার হয়তো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাতকের বুকের উপর দিয়ে চলে যাবে।
প্রবল বেগে বৃষ্টি ঢেলে দেবে মেঘালয়ের কোলে।
আর রাজস্থান মরুভূমি যেমন ছিল তেমনই থাকবে
তার বুকে খরা..তার বুকে যন্ত্র্ণা….
তার বুকে হাহাকার..
এরকম অজস্র মরুভূমির যন্ত্রণা…
দ্বিগুন বেড়ে যায় বৃষ্টির অভাবে.. -
কবিতা- পরিবর্তন
পরিবর্তন
-নাজমুল হুদা খাঁনহৃদপিন্ডের ভিতরে জমে থাকা অনুভূতির বীজ
স্বমূলে উৎপাটন করেছি আজ…
ফুসফুস নিংড়ে বের করে দিয়েছি কালো বাতাস।নিউরনগুলো মরে গেছে
সাড়া দেবেনা কেউ..
হৃদয় নামক বোকা বাক্সে জমে থাকা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি..
পুড়িয়ে দিয়েছি বহুকাল আগে..সময় পেলে ঘুরে যেও আমার চারপাশে
তোমার ছায়াও পড়ে না আমার ধারে পাশে
কারণ তোমার জন্য আমি এক অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই না।