• কবিতা

    কবিতা- মনখারাপের দিস্তা

    মনখারাপের দিস্তা
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    আজকের এই উৎসবের মেঘলা দিনে,
    মনে জমল মনখারাপের দিস্তা,
    তোমার দেওয়া আঘাত অলঙ্কারে
    আমার দু’চোখ আষাঢ়ে ভয়াল তিস্তা।

    ভালোবাসায় আঘাত আছে জেনেও
    মরণ ফাঁদের সমুদ্রে ঝাঁপ দিলাম,
    স়াঁতারু তো নই আমি কখনোই,
    গভীরতার অতলে তলিয়ে গেলাম।

    তিস্তা থেকে হ’লাম ফল্গুধারা,
    মনে জমাট দুখের হিমবাহ,
    তোমার আঘাত নিলাম মাথা পেতে,
    দিস্তাগুলো করবো এবার দাহ।

    ভালো থেকো তোমার স্বজন সাথে,
    সুখের ফোয়ারা ঘিরে রাখুক তোমায়,
    জটিল, কুটীল পঙ্কসম মনের
    সরল মানুষ হদিশ পেতে কি চায়?

    আয়নাটারে শুধাবো শেষবার,
    দেখতে পারিস মনের জটিল ব্যথা?
    দিস্তাগুলোয় লেখা নেই কেন সুখ!
    মনখারাপের আঁচড়েই ভরা খাতা।

    আমার সাথী মনখারাপের দিস্তা,
    হারিয়েছি যত আনন্দ গান-সুর,
    অধিকারের সীমানা ভুল করে
    অজান্তেই চলে গেছি বহুদূর

    ভুল যত সব আমার হয়েই থাক,
    আঘাত গুলো মনের খাতা ভরে,
    ভালো থেকো তুমি তোমার মতো,
    ফল্গু রবো, সারাজীবন ধরে।

  • কবিতা

    কবিতা- একলা ক্ষণে

    একলা ক্ষণে
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

     

    আজকের এই গোধূলির একলা ক্ষণে,
    মন পাড়ি দিল সেই সুদূর অতীতে।
    বড় নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ এই গোধূলি-
    হঠাৎ আলোকিত ঝাড়বাতির আলোয় ঝলমলে।

    চলমান মন পৌঁছে গেছে বর্ষাদিনের এক অপরাহ্নে,
    কলেজ শেষে সেদিন হঠাৎ
    বৃষ্টিস্নাত তোকে দেখে মনে এক অদ্ভুত শিহরণ,
    এই তুই তো আমার বড় অচেনা,
    প্রতিদিনের ক্লাসে পাশাপাশি বসা তুই তো নয়।
    তোর চোখে-মুখে গভীর অনুসন্ধিৎসা,
    মুখে না বলা হাজার কথার স্রোত যেন বাঁধ ভাঙতে চাইছে।

    বৃষ্টি ভেজা আমি কুন্ঠিত, আমার পরম আপন
    তোর কাছে?আজ কি যেন এক অন্য রকম।
    কেন?প্রতিদিনের থেকে কি আলাদা আজ?
    সেদিন বুঝিনি জানিস।
    কিন্তু যত দূরে গেছি ততই উপলব্ধি করেছি তোকে।

    আচ্ছা তোর আর আমার মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব ছিল?
    না কি আরও অনেক কিছু, যা কখনও বলা হয়ে ওঠেনি।
    এতগুলো বছর পড়ে মনে পড়ে কেন তোর কথা?
    কেন থাকিস আমার একলা ক্ষণ জুড়ে।
    এই অনুভূতি কি শুধু আমার ?
    এই প্রশ্ন কুঁড়ে খায় মন,
    তোর কখনও এমন একলা ক্ষণ আসে?

  • কবিতা

    কবিতা- অভিমানিনী

    অভিমানিনী
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

     

    প্রিয়া তোমার দু’চোখে ঝরছে আষাঢ় শ্রাবণ,
    জল থৈ থৈ নয়নে ‌‌ আজ বর্ষা দিনের প্লাবন ।
    থমথমে ঐ মুখখানা আজ জমাট বাঁধা মেঘ,
    কোথায় গেল জল তরঙ্গের তালে চলার বেগ?
    কোথায় গেল ঝর্ণা ধারার মতো উন্মাদনা,
    কোন আঘাতে আমার প্রিয়ার এমন মুখখানা?
    গোলাপ পাঁপড়ি ঠোঁট দু’খানি ফুলিয়ে কেন আছো?
    লাল আপেল ঐ গাল দু’টিতে কালো ধারা মোছো ।
    দোষ করেছি, চলে গেছি তোমায় ছেড়ে দূরে
    দাও না ধমক, মেঘের দমক, আমায় বেশী করে ।
    তারপরে ঐ মুখখানিতে জাগবে আলোর দ্যুতি
    বিদ্যুতের চমক যেন কাটাবে মোর ভীতি ।
    একটু হাসো খিলখিলিয়ে ঝরুক শিলাবৃষ্টি,
    অভিমানী মুখটা দেখে যে থেমে যাবে সৃষ্টি ।
    আমার মনেও মেঘ জমবে, তুফান হবে শুরু,
    লন্ডভন্ড ধরিত্রী, ধ্বংস লীলায় বক্ষ দুরুদুরু.
    যাও ভুলে যাও সব অভিমান, দাও না করে ক্ষমা,
    প্রিয়া তোমার মান ভাঙাতে এনেছি ফুল এক ধামা ।
    সাজিয়ে দেবো ফুলে ফুলে মোদের বাসর ঘর,
    প্রকৃতিতে বৃষ্টি শেষে নামবে প্রেমের ঝড় ।।

  • কবিতা

    কবিতা- তন্বী বালা

    তন্বী বালা
    – পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    এক কিশোরী তন্বী বালা ,যেন নৃত্যের তালে চলে,
    দুধবরণ কন্যা, চাওনি ঠিক তন্বী- হরিণ,কাজলকালো চোখের,
    রোজ সকালে কোকিল কন্ঠে গান গেয়ে ফুল তোলে।
    ঠোঁট দুটো তার পাপড়ি যেন সদ্য ফোটা ফুলের।

    একটি কিশোর মুগ্ধ হয়ে রোজই দেখে তাকে,
    কে এই মেয়ে!অপ্সরী সে যে ,নয়নরঞ্জন রূপ,
    নেশা জাগে সেই ছেলেটির, বসে জানলার ফাঁকে,
    রোজ সকালের সূর্য সোনার স্নিগ্ধ কোমল ধূপ।

    সেদিন ফাগুন মাসের আগুন রূপে মগ্ন সেই ছেলে,
    শুধায় তারে নাম কি তোমার?রূপসী না তন্বী?
    হেসে মেয়ে উত্তরে কয় ,তোমায় কেন দেবো বলে?
    হয়তো সোনা, অনামিকা, প্রেরণা কিংবা বহ্নি।

    কি‌শোর বলে , নামটি তোমার যাই হোক না,
    ঐ রূপে আমি পাগল পারা ,মন আমার উতলা,
    তোমার নাম হোক না নদী, না হয় হোক ঝরণা।
    স্বচ্ছ শীতল বারির মতো তিরতিরিয়ে চলা।

    খিলখিলিয়ে হাসলো মেয়ে,অঙ্গে ঢেউয়ের দোলা,
    কিশোর টি তার মগ্ন চোখে ,প্রেমেই দিশেহারা,
    তন্বী, তরুণ প্রেম জোয়ারে সেই তো ভেসে চলা,
    মত্ত দু’জন দু’জনাতে, এইতো প্রেমের বহতি ধারা।।

  • কবিতা

    কবিতা- নামের দোষে

    নামের দোষে
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    আমরা বড়োই আধূনিক, পয়সাওয়ালাও বেশ,
    অনলাইনে খাবার অর্ডার, আভিজাত্যের আয়েশ।
    খাবো আমি বিরিয়ানী, আফগানি, মোগলাই,
    ডেলিভারি বয় ফারুক আলি, চলবে না তো ভাই।

    আমার এদেশে আমন্ত্রণে, রথী,মহারথীর আগমনে
    পাঁচতারার ডাইনিং এ ব্যস্ত অতিথি পরায়ণে।
    দেখতে যায় কি শেফের নাম? বা বাবুর্চি, খানসামা,
    গরীব ফারুক আলি বলেই, খাবার দেওয়া মানা?

    ইফতার পার্টিতে যাওয়ার নাটকটা বেশ জমে,
    মন্ত্রী, সান্ত্রী সবাই বসে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে-
    উদারতার নজির গড়ি, ভোটের বাজার গরম,
    শুধু গরীব ফারুক আলী হ’লেই খোয়া যায় ধরম!

    এদেশ না কি তোমার, আমার, হিন্দু-মুসলমানের,
    শিখ, বৌদ্ধ, পারসিক, জৈন এবং খ্রিষ্টানের,
    ধর্মনিরপেক্ষতা আজকে চাইছো দিতে মুছে,
    সংবিধানে আঘাত হেনে, ভাবছো যাবে বেঁচে?

    হয়তো তোমরা আজকে হয়েছো মহান শক্তিমান,
    জনগণ জেনো, স‌ইবে না এত ক্ষমতার আস্ফালন।
    ইতিহাস সাক্ষী আছে, গনতন্ত্র উঠবে জেগে।
    তুষের আগুন উঠবে জ্বলে, যেতে হবেই সেদিন ভেগে।

  • কবিতা

    কবিতা- ওঝা –সাজা

    ওঝা –সাজা
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    মেহেপুর গঞ্জের বামাপদ লেট,
    জটাধারী, দেবাংশী পায় নানা ভেট।

    গ্রামের প্রান্তে তার আশ্রম খানি,
    দশগ্রাম হ’তে লোক আসে ওঝা মানি।

    কেউ আসে সাপে কাটা, কেউ বর ছাড়া,
    কেউ আসে পুত্রশোকে হয়ে দিশেহারা।

    সবের ওষুধ জানা, অশিক্ষিত বামার,
    দেবাংশী নামে চলে বাণিজ্য- বাহার।

    মরার মাথা আর শিকড়- বাকড়,
    ভূতে পেলে পিঠে মারে ঝাঁটার চাপড়।

    বামাপদর এক ছেলে মহাদেব নাম,
    পিতার সহায়ক হয়ে চালায় এই কাম।

    সাপে কাটা মূমূর্ষু রোগী বেঁচে যায়,
    চারিদিকে দেবাংশীর নাম ছড়ায়।

    বিষধর সাপ নিয়ে রোজ তারা খেলে,
    মন্ত্রতন্ত্রের কেরামতি দেখায় কেউ গেলে।

    এহেন মহাদেবে কাটিল সাপেতে,
    সবাই বলে যাও ডাক্তার দেখাতে।

    পিতা ক’ন না’ কোনো ডাক্তার-বদ্যি নয়,
    ওঝা আমি ,ঝাড়ফুঁকের দেখাবোই জয়।

    তিনদিন, তিনরাত চলে ঝাড়া, জলঢালা,
    বৃথা গেল মন্ত্রতন্ত্র, বিষে নীল মুখ ও গলা।

    দেহ পচে, গন্ধ ওঠে, মৃত মহাদেব ওঝা,
    অশিক্ষা, কুসংস্কারের- এটাই হয় সাজা।।

  • কবিতা

    কবিতা- অবস্থান

    অবস্থান
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    আমি ভালো নেই, তুমি ভালো নেই,
    সে কি ভালো আছে? নিশ্চয়ই না।
    আকাশে মেঘের ঘনঘটা,
    বাতাসে কার্বনডাইঅক্সাইডের প্রাচূর্য,
    নিঃশ্বাসের বিষে বিষাক্ত মন, হৃদয়।
    খিদে কেড়েছে সম্ভ্রম, ধরিয়েছে ভিক্ষার ঝুলি।
    কাজ নেই তো! তাই ক্ষুন্নিবৃত্তির একটাই পথ।

    আমি ভাবি তুমি ক্ষমতাশালী,
    অর্থ, প্রতিপত্তির কার্পেট বিছানো তোমার পথ।
    না তুমিও সুখী ন‌ও। ঐ প্রাচূর্য তোমার —
    সন্তানকে করেছে নেশাগ্রস্ত।
    জীবনে পেতে পেতে পাওয়াটাই করেছে হতাশাগ্রস্ত,
    আর‌ও চাওয়ার উদগ্র বাসনা করেছে পথভ্রষ্ট।

    সে মধ্যবিত্ত, সরকারি চাকুরে।
    ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়ায়,
    আমি, তুমি ভাবছি, দেখছি ঈর্ষান্বিত হচ্ছি।
    সেও ভালো নেই। সরকারের কাছে মুচলেখা দিয়েছে।
    উঠতে, বসতে সরকারের বদান্যতায় মাথা ঝুঁকে পড়ে।
    শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা বেকারত্বের জ্বালায় মরছে।

    আমি, তুমি, সে ভিন্ন অবস্থানে।
    তবুও কোথাও একাকার হয়ে আছি।
    বেঁচে আছি, না পাওয়ার যন্ত্রণা কুুুরে খায়

    ভালো থাকতে পারি, তুমি একটু ত্যাগ করো,
    সে এসে পাশে দা়ঁড়াবে। আমি একটু উঠবো।
    তুমি, আমি, সে —এক‌ই অবস্থানে, এক চাহিদায়।
    সমান হয়ে বড়ো সুখে

  • কবিতা

    কবিতা- তোমার কথা ভেবে ভেবে

    তোমার কথা ভেবে ভেবে
    – পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    দিবানিশি ভাবছি তোমার কথা,
    এখন তুমি আমার থেকে দূ্রে,
    মনের ঘরে তোমার অবস্থান
    অহরহ আছো আমায় ঘিরে।

    আজকে ভোরে পূব দিগন্তে চেয়ে
    রবির আলোয় তোমায় দেখি আমি,
    কিচিরমিচির পাখির কূজন শুনে
    মনে হ’ল শুনছি তোমার বাণী।

    দুপুরবেলায় বিষণ্ণতায় মোড়া
    এখন তোমার অসীম ব্যস্ততা,
    আমি একা ক্লান্ত উদাস মনে
    লিখছি খাতায় প্রেমের গল্পগাথা।

    সাঁঝবেলাতে সবাই আসে ফিরে,
    আমি শুধু তোমার অপেক্ষায়,
    আছো তুমি কোন সে সূদূরে!
    স্বপ্ন, আশায় কাটছে সময় বৃথায়।

    এখন সময় মধ্য নিশিরাত,
    এখন আমার বুকটা তোলপাড়,
    অনুভবে পাচ্ছি তোমার ছোঁয়া,
    আমার মতোই একই হাল কি তোমার?

  • কবিতা

    মানুষ মানুষের জন্য

    মানুষ মানুষের জন্য
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    ঈশ্বর, আল্লাহ ,আছেন জানো কেহ?
    মন্দিরে মসজিদে পুড়ছে কত দেহ!
    মার কোল খালি করে সন্তান ছাড়লো পৃথিবী,
    এখনো ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করে যাবি?

    মন্দিরে হয় শিশু ধর্ষণ, মহাদেব দেখেন চোখ মেলে,
    মসজিদে হ’ল বিষ্ফোরণ, শান্তি কোথায় গেলে?
    রক্ত, হানাহানি ভুলতে দেয় না হিংসা,
    ধর্মজীগির পারে না করতে, এসবের মীমাংসা।

    তোমার, আমার ধর্মবিভেদ কোথাও কিছু নাই,
    মন্দির, মসজিদ, গীর্জা মানুষের তৈরি ভাই।
    তোমার রক্ত যেমন লাল, আমার রক্ত‌ও লাল,
    উন্নততর এদেশ জুড়ে এ কী শিক্ষার হাল!

    মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে স্বার্থপর,
    মানবধর্ম সবার সেরা, সবে তাতেই র‌ই অনড়।

    তুমি, আমি, সে একজোট হয়ে শিক্ষা নেবো, শিক্ষা দেবো।
    অখণ্ড রাখি আমার এদেশ, সকলে শপথ নেবো।

  • কবিতা

    অবরোধ

    অবরোধ

    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    আজ আর ফুটবেনা ফুল
    সাজানো হবেনা বাসর,
    চারিদিকে মৃত্যুর হাহাকার
    গুমগুম শব্দের প্রতিধ্বনি।
    মানুষ নেই আজ কেউ আর,
    পুতুল নাচের আসর।
    সূতো আছে মালিকের হাতে,
    চিত্রনাট্য তার‌ই লেখা,
    নাটকের চরিত্ররা আজ —
    মানুষের রক্ত মাখা।

    চারিদিকে কালবৈশাখী
    ভয়াল মেঘের ঘনঘটা,
    আঁধারের রাতে আছি বসে,
    মাঝে মাঝে দামিনী চমক।
    এ আলো দেখাবে কি পথ!
    হবে কেউ আলোর দিশারী?

    ফিরে পাবো ফুলের বাগান,
    ফিরে পাবো পাখিদের গান।
    ফিরে পাবো মানব জীবন,
    ফিরে পাবো আবার এ মন।
    এইসব ফিরে পেতে হ’লে
    আজ এসো করি অবরোধ,
    পুতুল র‌ইব না কেউ আর
    ফিরে পাবো মানবিক বোধ।।

You cannot copy content of this page