-
কবিতা- আনমনা এক মেয়ে
আনমনা এক মেয়
-পারমিতা ভট্টাচার্যমেঘের ভিতর মেঘ জমেছে দেখো
মনের মেঘের খোঁজ আর কে রাখে?
মেঘে মেঘে বেলা বাড়ছে বাড়ুক
দু চোখ বেয়ে বৃষ্টি নামে স্মৃতির প্রতি বাঁকে।আকাশে ওই কালো মেঘের ঘনঘটা
মন খারাপেরা দল বেঁধে আসে আজ,
বুকের মধ্যে বাজে মেঘমল্লার রাগ
সঙ্গোপনে আবেগ মেখে হৃদয় সারে কাজ।চুল খোলা ওই আনমনা এক মেয়ে
দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টিসিক্ত ঝোলা বারান্দায়,
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বুকে মেখে
মেঘের দেশে অতর্কিতে হারিয়ে সে আজ যায়।আজ বাকি না হয় শুধু স্মৃতিটুকুই থাক
মুখরিত হোক বিরহ স্মৃতি এই বর্ষামুখর দিনে,
একলা পাগল গান গেয়ে চলে পথে
শুধু তোমার আমার দূরত্ব শতেক যোজনের। -
কবিতা- নোঙর
নোঙর
– পারমিতা ভট্টাচার্যআজ আমি নিঃশব্দতার নুড়ি কুড়াই
এক আবেগী ক্ষীণস্রোতা নদীর বুকে।মনের জ্বালাগুলো শুধুই দাবানল হয়ে জ্বলে,
মিথেন গ্যাসের স্পর্শে আলেয়াও হয় কখনো কখনো।সমুদ্রের বালুকা ফসল হাতে ধরে রাখি প্রাণপণ,
পাথরের খাঁজে আটকানো স্বপ্নেরা করে আর একটা
জোয়ারের অপেক্ষা দিগন্ত ছোঁবার আশায়।মিথ্যা মোড়কের ভালোবাসা, ভোরের আলো ফোটার
সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়ে জাগতিক অন্বেষণে।আর, আমি অপেক্ষা করি একটা সুখের ডিঙির
কখন সে নোঙর করবে আমার হৃদয় তীরে।সমাপ্ত।
-
কবিতা- উত্তীর্ণ
উত্তীর্ণ
– পারমিতা ভট্টাচার্যআজ আর আমার কিছুই বলার নেই
আমার সমস্ত হাড়ে আজ ভীষণ ঘুন,
লকলকে জিভের থেকে বাঁচাতে পারিনি নিজ অস্তিত্ব
তাই সুখের ঘরে হই রোজ গুমখুন।নিশি পদ্মের ডাক উপেক্ষা করা আমি
মনের সুখে অঝোর ধারায় কাঁদি,
রাতের আঁধারে ছায়াপথ পাড়ি দিতে দিতে
আজ সুখের সাগরেও হয়ে যাই আহ্লাদি।যতই আসুক ঝড়, তবু বাড়িয়েই রাখি হাত
একটা ছোটো ফোটন কণা আলো জ্বালায় মনে,
একদিন আবার ছায়াপথ দেবো পাড়ি
কালের দধীচির সমস্ত হাড় ভেঙে। -
কবিতা- সময়ের নিরিখে
সময়ের নিরিখে
– পারমিতা ভট্টাচার্যকে বলে চোখ শুধু জলে ভরা থাকে?
থাকে ডুব সাঁতার দেওয়া স্বপ্নগুলো ও জেগে,
নদীর চড়ায় ঢেউ ভেঙে যায় রোজ
জোয়ার – ভাঁটার পলি রঙ গায়ে মেখে।আর একটা জন্ম চাই এ জীবনের
করতে চাই স্মৃতি মেখে ধুলো স্নান,
ক্লান্তি কখনো বিছিয়ে থাকেনা শিকড়ে
গমনের বেড়াজাল ছিঁড়ে হই আবর্তমান।মৌনতা অবলম্বন করা সময়
মরুতে ফোটায় ফুল,তাকে অজস্র কুর্নিশ,
ক্ষীণস্রোতা নদী বর্ষায় হয় যৌবনবতী
সময়ের কাছে আমরা ছেলেমানুষ অহর্নিশ।সমাপ্ত।
-
কবিতা- পরিক্রমণ
পরিক্রমণ
– পারমিতা ভট্টাচার্যআমি একটা চেনা বৃত্তের বাইরে বেরোতে চাই,
যেখানে লোকে লোকারণ্য ভূমিতেও
আমি হবো এক্কে বারে একলা একটা মানুষ।
শহরের হাজার লোকের কোলাহলেও
আমি হবো কলকল করে বয়ে চলা একটা নদী,
কিংবা,শ্যাওলা ধরা একটা বুড়ো পাইনের গাছ।
নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে একদিন
আমি হবো সূর্যোদয়ের প্রথম কিরণ।
পথ হাঁটবো সানুদেশের সুঁড়ি পথ ধরে
যদিও জানিনা সেই পথের শেষ কোথায়।
চেনা পরিধির বাইরেও হবে আমার অস্তিত্ব,
চেনা পরিবেশের বাইরেও হবে আমার পরিচয়
মাথার মধ্যে কিলবিল করে কত স্বপ্ন,
নদী দিয়ে বয়ে যায় কত জল,
বৃষ্টিতে আপাদ মস্তক ভিজতে ভিজতে কাঁদবো,
বুঝতেও পারবেনা কেউ।বড় অস্থির লাগে চেনা বৃত্তের মাঝে থাকতে,
চেনা বৃত্তে অচেনা হওয়াটা এতো সহজ নয়।
একেবারে গোটা একটা আকাশ হবে আমার
তাই,একটা চেনা বৃত্তের বাইরে বেরোতে চাই।সমাপ্ত।
-
কবিতা- অন্ধকার ছড়িয়ে
অন্ধকার ছড়িয়ে
-পারমিতা ভট্টাচার্যআজকাল বড় পূণ্য জলে
স্নান করতে ইচ্ছে করে।
অপবিত্র মনের বাকল ছড়িয়ে
পূণ্যবতী হবার আশায়।জলের মধ্যে রামধনু রঙ ছড়িয়ে
জোনাকিরা করে অবগাহন।
সলিল সমাধি ঘটা বিশ্বাসের
আজ ঘটা করে পালিত হয় মৃত্যুদিবস।আমি সেই পূণ্য জলে দিই ডুব
সমস্ত শরীর আমার ডুবে যায়
নিঃসীম অন্ধকারে,কিন্তু তবুও
মেরুদণ্ডটা থাকে সিধে।মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া মানুষ তো
কাপুরুষতার পরিচয়ই বহন করে।সমাপ্ত।
-
কবিতা- ক্লান্ত শোণিতধারা
ক্লান্ত শোণিতধারা
– পারমিতা ভট্টাচার্যআজ চেনা অচেনার ভিড়ে
হারিয়ে যায় চেনা মুখের কারুকাজ,
কয়েক আলোকবর্ষ পেরিয়ে আসা আমি
আজ বুঝি সম্পর্কের মেকি সাজ।সব একই থাকে হয়তো সময়ের নিরিখে
একই থাকে মুখ মুখোশের লড়াই,
মেকি দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড়ই দুষ্কর,
তবু হাঁটতে হয় অনেকটা পথ একাই।চুপচাপ গিলে খায় আবেগী মুহূর্তগুলো
তাদের শরীরে আজ সাঁঝ বেলার সাজ,
আমি শুধু অস্তিত্বের দোটানায় পড়ে রই
ভুলে যাই হিসেবী হওয়ার কাজ।রক্তের কাজ কি শুধুই বিদ্রোহী হয়ে ওঠা?
তার মাঝেও বয় বেইমানী – ধারা,
মুখ – মুখোশের দ্যোতনায় আজ
ক্লান্ত হয়ে উঠে আমার বাঙ্ময় শোণিতধারা। -
কবিতা- প্রতিবাদের দীক্ষা
প্রতিবাদের দীক্ষা
– পারমিতা ভট্টাচার্যবাঙালীকে তুমি শেখালে ভাষা
সরালে কুসংস্কারের কালো,
নোংরা রাজনীতির শিকার তুমিও
নিভে যায় শ্রদ্ধার যত আলো।কে বা কারা দোষী জানা নেই
তবু ধিক্কার জানায় মন,
এ শুধু তোমার নয় মহামানব
এ সারা বাঙালীর অপমান।এসো না আজকে আমরা সবাই
প্রতিবাদের ঝড় তুলি,
ক্ষমতা দখলের লড়াই এ আজ
শিক্ষা হচ্ছে বলি।সমাজের অধঃপতনে আজ
আমাদের মেরুদন্ড গিয়েছে বেঁকে,
গর্জে উঠো বাঙালী এবার
দলমত ব্যতিরেকে।অশিক্ষিতের নোংরা কার্যে
ভূলুণ্ঠিত হয় শিক্ষা,
বাঙালী আজ জাগ্রত হও
নাও প্রতিবাদের দীক্ষা।গর্জে উঠার সময় এসেছে
মসি কে করো অসী,
আবার বলব আমি বাঙালী
বাংলাকে ভীষণ ভালোবাসি।। -
কবিতা- অধম ছেলে
অধম ছেলে
-পারমিতা ভট্টাচার্য
মা গো, যত বার পেতেছ আঁচল
চোখের জলে
নিঃস্ব করেছি আমি
তোমায় তত বারই বারেবারে।
যত বার বলেছি সময় নেই
তোমাকে দেওয়ার মত,
ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছ
আমায় তুমি তত।
যত বার বলেছি সব ঋণ
তোমার দিলাম আমি শুধে,
তত বার রেখেছ সুখের স্পর্শ
আমার দুটি হাতে।
মা গো, রাখতে পারিনি নিজের করে
নিজের দুটো ঘরে,
তুবও তুমি বাড়িয়েছ হাত
আবার স্নেহ ভরে।
তোমার ঠিকানা করেছি বৃদ্ধাশ্রম
আমি তোমার অধম ছেলে,
কত অদৃষ্টের ফলে
তুমি আমায় কোলে পেলে।তুই যে আমার আঁধার রাতের আলো
ওমনি মা বলল হেসে,
সারা জীবন রাখবো বুকে
শুধুই তোকে ভালোবেসে।
তুই যে আমার সাত রাজা ধন
মানিক হীরে যত,
তোকে আমি চোখে হারাই
এখনও ছোট্ট খোকার মত।
তোকে পেয়ে ধন্য আমার
পূর্ণ নারী জীবন,
তোর কোলে তেই মাথা রেখে
আসে যেন আমার মরণ।আজকে মা গো নেই তো তুমি আছ অনেক দূরে
আজকে বুঝি মায়ের ঋণ কেউ চোকাতে পারে? -
কবিতা- নদীর মত মেয়ে
নদীর মত মেয়ে
-পারমিতা ভট্টাচার্যমেয়ে:নদী তুমি কোথায় যাও?
আমি যে বড়ই পিপাসার্ত।
আমায় একটু জল দাও।
নদী:আমার হৃদয় ভালোবাসায় পূর্ণ
তুলে নাও আঁচলা ভরে জল,
শুধু হৃদয় করোনা বিদীর্ণ।
মেয়ে:তোমার গভীরতা কত নদী?
নদী: মাপতে এসো না !ডুবে যাও যদি।
মেয়ে: নদী তুমি এপাড় ভাঙো
ওপাড় গড় কেনো?
নদী: এটাই নিয়ম জেনো।
মেয়ে: তোমার বুকে জোয়ার ভাঁটা খেলে
ঢেউ যে তার পাখনা মেলে ধরে!!!!
নদী: তাতে কিই বা আসে যায়?
নদী তবু নিয়ম মেনেই
সাগরের পানে ধায়।
মেয়ে: একি,নদী তুমি কাঁদছো?
এমন করে চোখের জলে
কাতর সুরে ফুঁসছো?
নদী: বুঝবে না কেউ জানি
হাজার বার মানি।
তোমরা কেনো বাঁধের বেড়ায়
আমায় আজকে বাঁধছো?
মেয়ে: নদী তোমার বুকেই
নৌকা ভেসে যায়।
নদী: আমার বুকেই রাধারাণী
শ্যামকে খুঁজে পায়।
মেয়ে: নদী তোমার এত স্রোত?
ছলাৎ ছলাৎ করো।
নদী: ছুঁলে যে তুমি।
তাই যে ঢেউ উঠলো বুকে
আমার এমনতরো।