-
কবিতা- বাতি ঘর
বাতি ঘর
-পারমিতা ভট্টাচার্যতুমি চলে যাওয়ার পর আমার
বহু দিন কেটেছে আনমনা….
আমার মন হয়ে গেছে কঠিন পাথর,
তা তুমি আজও জানো না।
একটা পাখি ডেকে ডেকে উড়ে গেছে তার ঠিকানায়….
তুমিও পৌঁছে গেছো তোমার সঠিক নিশানায়।
মাঝে শুধু বাদ রইলাম আমি আর আমার মন….
কেটে যাবে ঠিকই যেমন কাটে ছন্নছাড়া জীবন।
জাহাজের মাস্তুলটা যখন
দিগন্তরেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে মিলিয়ে যায়,
ডিঙ্গি নৌকো গুলো ভাব জমায় ঢেউয়ের সাথে..
আমার মন পাখি তখন
পাখনা মেলে হৃদয়ের অনুবাতে।
আর আমি শুধু জোনাক-ফুলকি খুঁজি,
একটা গোটা বাতি ঘর হওয়ার আশায়….
জীবনের সলতে গুলো জ্বালাই
বুক ভরা ভালোবাসায়॥ -
কবিতা- মৃত্যুর মিছিল
মৃত্যুর মিছিল
-পারমিতা ভট্টাচার্যনিখুঁত পরিকল্পনা ছিলই
শান্তির প্রার্থনায় নিমগ্ন ছিল ওরা
করাল ছায়া গ্রাস করলো ওদের
সার বেঁধে চলে শান্তি মিছিল।সত্যি আজ ভাববার সময় এসেছে।
ওদের পরিকল্পনায় ছিলনা কোনো
গোড়ায় গলদ একটুও,
তাই যারা গেলো,ঘরে ফিরলো না সব,
গুটিকতক নিরুদ্দেশও হয়ে যায়।
অপরিসীম ক্ষতি! মৃত্যুর মিছিল দেখে
ভগবান ডুকরে ওঠে কেঁদে।সব অপরাধ চাপা পড়ে যায়
টেবিল এর নিচে থেকে যায় অগোচরে,
মানবিকতা শুধুই মোমবাতি নিয়ে
আবেগী আলাপ সারে। -
দিশেহারা
দিশেহারা
-পারমিতা ভট্টাচার্যআজকাল ভাবি কোন পথে যে যাবো
কোথায় গেলে স্বপ্নের দিশা পাবো!
এক সমুদ্র আশা নিয়ে নিরাশায় মজে মন,
বেবাক শব্দরা থাক বুকে আমার চিরন্তন।।
আজকাল বড়ো চাতুরির ছড়াছড়ি,
তবুও করে ফেলি একটু বাড়াবাড়ি,
চোখের জলের হিসেব রাখোনি কখনো
আমার হৃদয় তটে ভালোবাসার পলি কিন্তু জমে এখনও।।কোন পথে গেলে দেখা মেলে বিশ্বাসের?
কোন পথে থাকেনা মিথ্যা মোড়ক আশ্বাসের?
আমি দিশেহারা পথিক হয়েই বেঁচে থাকি
আর প্রহর গুনি ভালোবাসার শেষ নিঃশ্বাসের।।মনের দুয়ারে কড়া নাড়া তুমি আজ
তছনছ করে দিলে আমার দেহাতি রূপের কোলাজ,
এরপরেও ক্ষমা করে দিতে বলো?
এতো মহান আমি নই।
ঘৃণার আগুনে ঝলসে গেছে আজ
আমার পুরনো হৃদয়-সাজ।। -
দূরত্ব
দূরত্ব
-পারমিতা ভট্টাচার্যআমরা দু’জন মনের ঘরের পড়শী,
তবু দূরত্বটা অনেক আলোকবর্ষী।
বুকের মধ্যে আগল ভাঙ্গা কথা,
তবু বলতে গেলেই আসে অনেক বাধা॥প্রবল তাপে ক্লান্ত যখন তুমি,
কাঠফাটা হয় মনের তটভূমি।
তখন আমি শীতল বাতাস হয়ে,
তোমার দীঘল নয়ন দু’টো চুমি॥তুমি যখন কঠিন আঘাত সয়ে,
নদীর মতো চাইতে যেতে বয়ে।
আমি তখন আমার হৃদয় তটে,
আটকে রাখি দু’ হাতখানি দিয়ে॥আমার থেকে যেতেই পারো দূরে,
ফেলতে পারো আমায় আস্তাকুঁড়ে।
তবু, আমরা দু’জন মনের ঘরের পড়শী,
তবু, দূরত্বটা অনেক আলোকবর্ষী॥ -
প্রত্যাশা
প্রত্যাশা
-পারমিতা ভট্টাচার্যজন্মলগ্ন থেকে আসা নতুন বছরের সূর্য,
সবার জীবনে আনুক শৌর্য ও বীর্য।
মানুষ হোক আরও – আরও চেতনাময়,
কালের সমুদ্রে যেন দিতে পারি পাড়ি….হে দ্যুতিময়।
সময়ের নাভি থেকে উঠুক বিজয় ডঙ্কা,
সত্যি কথা বলতে যেন কারো না হয় কোনও শঙ্কা।
সময়ের সাথে আজ ভাগ্যের ঠোকাঠুকি,
কে হবে জয়ী আর কে কাকে দেবে ফাঁকি।
নদী দিয়ে কালের ধরার জল বয়ে যায়,
সত্যি করে নতুন বছর আসলে কীই বা পায়?
প্রত্যাশা পূরণের যন্ত্র মাত্র, যা হয়নি আগের দিনে,
এ বছরে সব চোকাতেই হবে যত অধিকার বিনে।
কী লাভ বলো তোমার এমন করে এসে,
সেই তো যাবেই চলে পুরানো কে ভালোবেসে।
সময় তুমি ভারী নিষ্ঠুর অতি,
সব অহং করো চূর্ণ…. বড় ক্ষীপ্র তোমার গতি।
সময় তুমি কখনও কাঁদাও, হাসাও বা কভু কভু,
আমার মনের ক্ষয়িষ্ণু তটে একটু ভালোবেসে যেও তবু। -
হোলি
হোলি
-পারমিতা ভট্টাচার্যআজই আবীর দিয়ে রাঙাই তোমার মন
ও আমার শেষ পারানির ধন,
কোথায় রাখি তোমায় আজই
পলাশ ফুলের মালায় সাজি,
চোখের থেকে চোখ হয়েছে হারা,
তোমার হৃদয় হতে আমার মনে
বইছে প্রেমের ধারা।
সবার মাঝে রঙের হোলি
এসো আজ আবীর খেলি,
আজই আকাশ বাতাস ফাগুয়ায় মাতোয়ারা….
এসো আজ হই সবাই দুঃখ হারা।
কৃষ্ণচূড়ার রং নিয়ে আজ
আকাশ হলো লাল,
রঙের খেলায় মাতি এসো,
আজই এই বসন্তের সকাল….
রঙের ছোঁয়ায় পূণ্য হোক মন
তোমার আমার, প্রেমের অটুট বন্ধন॥ -
ভালো – মন্দ
ভালো – মন্দ
-পারমিতা ভট্টাচার্য
বেশ ভালোই তো আছে সবাই মুখ – মুখোশের ভিড়ে ,
কে যে কার মাসতুতো ভাই , ওরা চোরে – চোরে ।
মুখের সামনে ভালো সাজা, পিছন থেকে ছুরি,
বুকের মধ্যে শিকড় বিছায়, বুড়ো বটের ঝুরি।
ভালো সাজার কারখানাতে রঙ মেলানোর ভিড়,
মুখের মধ্যে মিথ্যে হাসি, বুকে ধরায় চিড় ।
ভালো থাকা, ভালোবাসা, ভালো– ভাষার অভাব,
তাই উঠতি ছেলে জীবন তটে হারিয়ে ফেলে স্বভাব।
দিনের আলোয় সব তারারা হারিয়ে থাকে বেশ ,
তোমার চোখের তারায় হয় আমার স্বরলিপি নিঃশেষ।
আমি দিনে রাতে মিলিয়ে চলি রঙ মিলান্তি লেখা,
ভালো থাকার একটাই উপায়, ভালো থাকতে শেখা।
আমি ভালো, তুমিও ভালো, ভালো মনেরই মাঝে,
ভালোর ভালো দেখতে হলে, ভালোবাসো সকাল সাঁঝে ।
আকাশের দিকে চেয়ে দেখো অপলক,
কিছু তারা এখনও জেগে আছে নিস্পলক।
ভালোর পিঠে মন্দ বসে, মন্দের পিঠে ভালো।
আঁধার বলে কিছুই নেই, সবই অভাব আলো।
ভালো আর মন্দ মিশিয়ে গোটা জীবনখানা ,
যা আছে তাই নিয়েই হবে জীবন পূর্ণ ষোলোআনা ।। -
আমার ভাষা
আমার ভাষা
-পারমিতা ভট্টাচার্যতোমার ভাষাতে বিদেশী টান
আমারটায় শিশিরের গন্ধ,
তুমি জন কিট্স্ থেকে
ওয়াড্সওয়ার্থ….
আর আমি সেই জীবনানন্দ।তুমি বিদেশী ভাষাতে অভ্যস্থ
বাংলাটা ঠিক আসেনা,
আমি বাংলায় কথা বলি….
তাই ইংলিশটা ভালো বুঝিনা।অনেক বাঙালি বিদেশবাসীর
বাংলাটা আসে শুদ্ধ,
এখনো তারা পড়ে চলে
সুনীল-শক্তি -বুদ্ধ।আমি বাঙালি তাই বাংলায় কথা বলি,
এই বাংলার মায়াভরা পথে
পা ফেলে ফেলে চলি।ইংরেজি তে কথা বলে যারা
শিক্ষিত ভাবো ভাই,
এটা জেনে রেখো এতো মধুর ভাষা
কোথাও যে আর নাই।এই ভাষাতেই মাকে প্রথম
মা বলে ডেকে উঠি….
এই ভাষাতেই জীবনে প্রথম
লক্ষ্যের পথে ছুটি।এই ভাষাতেই চর্যাপদ ভাটিয়ালির সুর
এই বাংলার মাঠে ঘাটে আমি
হেঁটেছি বহুটা দূর।তাই বলি ভাই বাঙালী হয়ে
মনে শিকড়ের টানে বাঁচো,
এমন মধুর মাতৃভাষাকে একটু….
শুধু একটু ভালোবেসো॥ -
দিশাহীন খেয়াপাল
দিশাহীন খেয়াপাল
-পারমিতা ভট্টাচার্যযদি কখনও বৃষ্টি এসে নামে তোমার হৃদয়ে
ডুবিয়ে দেয় সমস্ত উদ্বেলিত চেতনা….
যৌবনের আনচে-কানাচে উঁকি দেয়
যদি কোনো ছদ্মবেশী আলোর ঠিকানা,
তবে কি আমি সংজ্ঞাহত হবো?
আমি দিশাহীন খেয়াপাল….
আত্মস্থ করি তোমার রক্তশিরার বোধগম্য নীতি,
সুখান্বেষী অনভ্যস্ত এ প্রাণ….
মাটির গভীরে শিকড় বিছিয়ে যায় নিঃশব্দে।
তবে কি আমি কার্তিকের নবান্নে আর
নতুন ফসলের আবেগকে
ধরে রাখতে পারবো না?
হবে না কি দিশাহীন বৃক্ষের সাথে
লজ্জা-সংকুচিত কমল লতার
অবগুন্ঠনময় মিলন?
যদি কখনও বৃষ্টি নামে তোমার তরুণ হৃদয়ে
তখন কিন্তু তুমি মনে রেখো
এই আবেগ ঘন বৃষ্টি নারীর
আদিম হৃদয়ের ব্যথার কথা॥ -
শবরীমালা
শবরীমালা
-পারমিতা ভট্টাচার্যবাতাসে কত অলীক স্বপ্ন পাখা মেলে দেয় আজ
বানভাসি নদী ভাঙে বাঁধ….
মজে যাওয়া জীবন সরোবরের তাই মনে জাগে
সংস্কারের বেড়া ভাঙার সাধ।আজ পাগল হলো কী সে?
ঋতুমতী চলে শবরীমালায়?
সব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে
সেদিন কোর্ট দিয়েছে রায়।এই শবরীমালার কাছে….
পড়েনি কখনও নারীর স্পর্শ?
একি অদৃষ্টের পরিহাস??
আজ ঋতুমতী দেখাইলো স্পর্ধা
গড়িল অস্পৃশ্যতার ইতিহাস ।ঋতুমতী যেই না দাঁড়াইলো আসি
মা আয়াপ্পার দ্বারে….
ব্যাথিত হইলো সে নারী হৃদয়
ব্রাহ্মন এর তীব্র কটাক্ষ ভারে।তখন মেয়েটি বলিল প্রণাম করিয়া,
‘কোথা হতে এলে ব্রাহ্মণ তুমি?
যদি না হইতো ঋতুমতী মা,
কেমনে ছুঁইতে ভূমি?’সহস্র ঘড়া জলে ধুতে পারো
মায়ের দেবী চত্বর….
হা ধিক পাপিষ্ঠ এভাবে হয়না,
পরিশুদ্ধ করো চিত্ত -নিজ অন্তর॥