-
অণুগল্প- প্রকৃত বন্ধু
প্রকৃত বন্ধু
–বিভূতি ভূষন বিশ্বাসলেটার বক্স খুলে দেখি কল্পনার চিঠি পোষ্ট কার্ডে লেখা,
শ্রী শ্রী ভগবান,
আমার মা খুব অসুস্থ মা’কে সুস্থ করে দিও।
ইতি তোমার বন্ধু
কল্পনা।
ঠিকানা আর কিছুই লেখা নেই, এই চিঠি আমি কাকে বিলি করি। প্রতি মাসের প্রথম দিন কল্পনার চিঠি পাই।
আগত্যা নিজের আফিসের ড্রয়ারে রেখে দিই। ড্রয়ার প্রায় ভর্তি হয়ে এসেছে। আজ তেমন কাজ নেই তাই কল্পনার চিঠিগুলি পড়তে বসেছি- একটি চিঠিতে লেখা,
“কথা দিলাম লিখবো।”কল্পনার জীবনের সুখ দুঃখের সব কথাই চিঠিতে লেখা আছে। কল্পনা ভগবানকে বন্ধু মনে করে তাতে সন্দেহ নেই। একটি চিঠি দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। চিঠিতে লেখা,
শ্রী শ্রী ভগবান,
আজ কথা রাখলাম তোমার নাম লাল কালি দিয়ে এক কোটি বার লিখলাম।
ইতি তোমার বন্ধু
কল্পনা
চিঠি পড়তেই রানাঘাট ষ্টেশনের নাম মনে পরে গেল। তড়িঘড়ি ষ্টেশনে গিয়ে দেখি সেই বৃদ্ধ মহিলা কৃষ্ণ নাম লেখায় ব্যস্ত। আমি কল্পনাদি বলে ডাক দিলাম। উনি মাথা উঁচু করে বললেন, কালের স্রোতে কল্পনা হারিয়ে গেছে বাবা। -
কবিতা- চড়ুই পাখি
অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার
চড়ুই পাখি
–বিভূতি ভূষন বিশ্বাসফুরুত ফুরুত ওড়ে,চড়ুই তো নাম,
বসত বাড়ির ঘুলঘুলিতেই ধাম ।
ওরা ঘুরে বেড়ায় উঠোনেরই ধারে,
তাই দেখে বিড়াল,ল্যাজটা শুধু নাড়ে।
কিচিরমিচির করে,বলছে বলো কী,
সুখ দুক্ষের কথা,না কলহ বিবাদি।
সন্ধ্যা বেলায় করছে নাকি সন্ধ্যারতি,
না শয্যাগৃহ নিয়ে,করছে মারামারি ।আপন মনে আমি,ভাবছি কত কথা,
চলছে যে এদের বড়ই দুরবস্থা ।
ধীরে ধীরে হচ্ছে এরা সবাই বিলুপ্ত,
এদের দুর্দশায় কে হবে অনুতপ্ত ।
মানব জাতিই ভাববে এদের কথা,
সংরক্ষণের জন্য হবে যে সুব্যবস্থা । -
কবিতা- রক্তদান
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
রক্তদান
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাসমানব শরীরে লাল তরল পদার্থ,
রক্ত তার নাম,গুরুত্ব অনস্বী-কার্য ।
ধমনী,শিরা দিয়ে হৃদযন্ত্রে প্রবেশ,
অক্সিজেন জোগান দিয়ে রাখে সতেজ।
কার্বন ডাই অক্সাইড করে বর্জন,
টিসু গুলো সতেজতা করে অর্জন ।
এ খেলা সর্বদাই চলছে নিরন্তর,
বিপদগামী হয় কদাচিৎ নামান্তর ।কত ভাবেই হয় রক্তের অপচয়,
বিজ্ঞান সব ভেবেছে অনেক নিশ্চয়।
মানব রক্তের গুরুত্ব অপরিসীম,
সংরক্ষনে রক্তদান এক মহৎ স্কীম ।
এসো তো আমরা সকলে শপথ করি,
পাড়ায় পাড়ায় রক্তেরই ব্যাঙ্ক গড়ি । -
কবিতা- জ্ঞানপাপী
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
জ্ঞানপাপী
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাসজেনেশুনে অন্যায় করে এমন ব্যক্তি,
সে কিন্তু হয় জ্ঞানপাপীর অন্তর্ভুক্তি ।
নিজ কর্মকাণ্ডে ঘটায় অনেক যুক্তি,
তার ফলে ওরা পায়না কখনো মুক্তি ।
অলস ব্যক্তি অলসতায় হয় সুখী,
জ্ঞানের কথা শুনে হয় যে অগ্নিমুখী ।
প্রকৃত শিক্ষার আছে অনেক অভাব,
জঘন্যতম খারাপ তাঁদের সভাব ।জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালো পুথির পাতায়,
ন্যায়ের স্তম্ভ গড়ো হৃদয়ের খাতায় ।
যাদের হৃদয়ে আছে সততার ভক্তি,
আছে হিমালয়ের মত সহন শক্তি ।
তারাই তো রয়েছে মানুষের হৃদয়ে,
অমরত্ব পেয়েছে সময়কে কাঁপিয়ে । -
কবিতা- ধনপতি
অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার
ধনপতি
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাসধনসম্পদের অধিকারি হতে চাও ?
অবশ্যই গ্রহের আশীর্বাদ কুড়াও ।
রাহু,কেতু,শনি,বৃহস্পতি গ্রহ গুলি,
জীবনে এদের প্রভাব নয় মামুলি ।
রাহু,খ্যাপা ভোলা মানুষ,খাবারে খুশ,
কুকুরকে খাওয়ালে,কেতু হবে হুশ ।
শনির পছন্দ কালো,সতর্কতা ভালো,
গুরুজনই হল বৃহস্পতির আলো ।দুটি ভাগে,ভাগ হয়েই,গড়ে সৌভাগ্য,
একটাকে ছাড়া আন্যটি আনে দুর্ভাগ্য ।
তুমি আমি সবাই ভাগ্যের সাথে জোড়া,
কর্মই করে যত,ভাগ্যের ভাঙ্গা গড়া ।
জ্যোতিষ শাস্ত্র এটা,মানো নাইবা মানো,
জীবনে কর্মটাই আসল কথা জানো । -
অণু কবিতা- কুঁড়ি
কুঁড়ি
– বিভূতি ভূষন বিশ্বাসছোট্ট আমি ফুলের কুঁড়ি,
পথের ধারে আছি।
পথিক তুমি মিষ্টি ভারী,
তোমার সাথে আড়ি।
আসল কারন,শোনো বারণ,
তুলো না’কো আমায়।
ফুটবো আমি ভোরবেলাতে,
আছি সেই আশায়।
ইচ্ছে আমার আছে ওগো,
যাবো দেবালয়।
পূর্ন হবে সাধ আমার,
তোমার অছিলায়।
সঙ্গ যদি দাও আমায়,
থাকবো আমি নুয়ে।
ধন্য হবে ছোট্ট জীবন,
প্রভুর চরণ ছু্ঁয়ে। -
অণু গল্প- ক্ষমাহীন ভুল
ক্ষমাহীন ভুল
– বিভূতি ভূষন বিশ্বাসহাসিটা সত্যি দেখার মতো, যেন মুক্ত ঝরে পড়ছে। মেয়েটি এক নম্বর প্লাটফর্মে আর আমি ওর সোজাসুজি দু’ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ওর সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি। মেয়েটির সঙ্গে একটি ছেলে আছে সম্ভবত ওর বয় ফ্রেন্ড হবে। ছেলেটি কতটা সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে জানিনা কারণ ওর হাতে একটা ঠোঙ্গায় পিস করা মুসাম্বি লেবু, দু’জনে একটা একটা লেবুর পিস মুখে পুরছে আর খেয়ে রেল লাইনের ভিতরে ছুঁড়ে ফেলছে । ওদের থেকে দশ হাত দূরে একটি ডাসবিন আছে তাতে না ফেলে রেল লাইনে ফেলা দেখে আমার মনে হচ্ছিল ডাসবিনটা নিয়ে রেল লাইনে মাঝে আমি দাঁড়িয়ে বলি হে সুন্দরী বালিকা লেবুর খোসা এতে ফেলুন।
হঠাৎ আমার পাশের ওভার ব্রিজ দিয়ে মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক কানে হেড ফোন হাতে লম্বা মোবাইল নিয়ে দৌড়ে নেমে এলেন। পাশে দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলেন কৃষ্ণনগর যাবার ট্রেন কখন আসবে। আমি বলতে যাবো তাঁর আগেই দোকানদার বললেন ওই এক নম্বর প্লাটফর্মে কৃষ্ণনগর লোকাল ঢুকছে, এটা দু’ নম্বর প্লাটফর্ম। ততক্ষণে ট্রেন সবে মাথা ঢুকিয়েছে প্লাটফর্মে। ভদ্রলোকটি ওভার ব্রিজ দিয়ে না গিয়ে নীচে দিয়ে এক দৌড়ে এক নম্বরে প্লাটফর্মে উঠতে গিয়ে লেবুর খোসায় পা পড়ে পিছলে গিয়ে এক নম্বর লাইনে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। সকলেই হৈ হৈ করে উঠলো। ততক্ষণে সব শেষ ট্রেনটি সেকেন্ডের মধ্যে বুকের উপর দিয়ে চলে গেলো। আমি বাক রুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ট্রেনটি চলে যেতেই প্রচুর লোকজন ঘিরে মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত। হ্যাঁ ওই ছেলেটিও মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, আর ওর বান্ধবী পাশে দাঁড়িয়ে ওকে নির্দেশ দিচ্ছে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবি তোলার জন্য।
কিছুক্ষণ পরে রেল পুলিশ এসে দেহটিকে তুলে নিয়ে গেলো। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার গন্তব্যের গাড়ি ডাউন শন্তিপুর লোকাল ঢুকছে। অনেক কিছু বলার ছিলো কিন্তু কাউকে কিছু্ই বলতে পারলাম না। শুধু ভাবলাম এই ছোট্ট ছোট্ট ভুলগুলি সত্যি ক্ষমার অযোগ্য ।
-
গল্প- ভক্তের ভগবান
ভক্তের ভগবান
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাসগতবার লে লাদাখে ঘুরতে যাবার পথে কার্গীলের কাছে আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল টিফিন করার জন্য। পাশেই একটা চা’য়ের দোকানে চা অর্ডার দিয়ে কেউ কেউ বসে আছে, কেউবা ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির মজা নিচ্ছে আর ছবি তুলছে। আমি দোকানের বেঞ্চে বসে দোকানদারের সঙ্গে কথা বলছি। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দোকান ঘরে একটি মক্কা মদীনার ছবি ঝোলানো আছে। ঠিক তাঁর নীচে শ্রী রাম এর একটি ছবি ঝুলানো আছে। আমি অবাক হয়ে ওনার নাম জিজ্ঞাসা করলাম।
– আপনার নাম কি?
উনি বললেন- একবাল রহমান।
আমি বললাম- মুসলমান হয়ে শ্রী রামের ছবি টাঙিয়ে রেখেছেন? মুসলমানদের এমন কাজ করতে দেখিনি তো কখনো, এর পিছনে কোনো সত্য ঘটনা লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই?
উনি বললেন- হ্যাঁ বাবু, গতবারের ঘটনা আমার ছেলে প্রচণ্ড অসুখে পড়ে মরার যোগাড় হয়েছিল। কবিরাজ টবিরাজ দেখিয়ে কিচ্ছুই হয় নি। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তখন এক ভারতীয় সৈনিক চা খেতে খেতে আমার কষ্টের কথা শুনে মিলিটারি হসপিটালে ভর্তি করার কথা বললেন। উনি সব ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু চা’য়ের দোকান বন্ধ থাকার দরুন সংসার প্রায় অচল তাঁর উপর ছেলের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকার দরকার ছিলো। কোনো উপায় না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। একদিন ছেলেকে হসপিটালে দেখতে গিয়ে দেখি ওই ঘরে একটি ছবির উপর মালা দেওয়া ছিলো, ছবিটি কার আমি চিনতাম না। নার্সকে জিজ্ঞাসা করাতে উনি বললেন হিন্দুদের উপাস্য ভগবান শ্রী রাম। উনি সকলের মনস্কামনা পূরণ করেন।আমি মনে মনে এই সংকট থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করলাম। বাড়িতে গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও অর্থের যোগাড় করতে পারলাম না। অগত্যা পাহাড়ের উপরের যে দোকান ছিলো যেটা কিনা বরফ পড়ার সময় বন্ধ থাকে সেখানে কিছু সামান ছিলো সেইগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত করলাম। ঘণ্টা দুই তিন বরফের রাস্তা ভেঙ্গে পাহাড় চূড়ার দোকানে পৌঁছলাম। একি দোকান ঘরের তালা ভাঙ্গা কেন! সব চুরি হয়ে গেছে হায় আল্লা…. হায় আল্লা … আমি কান্না করতে করতে দোকান ঘরে ঢুকে দেখি সব সামান ঠিকঠাক আছে। খুঁজতে খুঁজতে চা’য়ের কেটলির তলে একটি দু’হাজারের নোট খুঁজে পেলাম। তখনি ভাবলাম শ্রী রাম আমার মনস্কামনা পূরণ করেছেন। সেই দিন থেকেই এই ছবিটি ঝুলিয়ে রেখেছি আর মনে মনে পূজা করি। এই নিয়ে কট্টর মুসলিমরা আমাকে অনেক হেনস্থা করেছে। তবে ওরা ফরমান জারি করে বলেছে মক্কা মদীনার ছবির নীচে টাঙ্গাবে। আমি তাতেই রাজি হয়ে গেছি বাবু, কারণ আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমার ঠাকুর দাদা কাশ্মিরী পন্ডিত ছিলেন । বাবাই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। সে এক করুন কাহিনী পরে শুনাবো।
বাসের হর্নে আমাদের কথোপকথন আর শেষ হলো না, ওনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছিলামা না ওখানে টাকাটা কে রাখল! পরের দিন কার্গিল সেনা নিবাস দেখতে চললাম সবাই মিলে। সেনা নিবাসে নেমে আমরা একজন সিপাই এর তত্বাবধানে সব ঘুরে ঘুরে দেখছি আর উনি আমাদের সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন। দেখা প্রায় শেষ তখন আমি ওনাকে বললাম স্যার প্রচণ্ড বরফের মধ্যে ডিউটি করার কিছু স্মরণীয় ঘটনা যদি বলেন আমাদের। উনি একটু চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলেন।
একবার আমাদের সতেরো ব্যাটেলিয়ানের ডিউটি পড়ল সাদা বরফের টিলায় ওখানে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। আমরা কিছু দূর হাঁটার পর সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। সবাই বলল একটু গরম চা হলে মন্দ হতো না। সকলে চা’য়ের কথা ভাবতে ভাবতে উপরে হেটে চলেছি। হঠাৎ দেখি একটা দোকান তাও আবার তালা দেওয়া। সকলের অনুরোধে তালা ভেঙ্গে আমরা চা বানিয়ে খেয়ে তরতাজা হয়ে রওনা দিলাম। কিন্তু আমাদের মেজর একটি দু হাজার টাকার নোট কেটলির তলে চাপা দিয়ে রাখলেন। যাতে মালিক এসে কিছু মনে না করে। পরে আমরা ডিউটি শেষ করে ফেরার পথে চায়ের দোকান খোলা পেয়ে সবাই মিলে ওখান থেকে চা খেলাম আর দু’ হাজার টাকার গল্প শুনলাম। মেজরের ইশারায় আমরা সব চেপে গেলাম। সেই দিন ভক্ত ও ভগবানের মিলন দেখেছিলাম। বাসের হর্ণে সবাই হই হই করে দৌড়ে বাসে উঠে পড়ল নতুন কোনো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ।
-
গল্প- সংযোগ
সংযোগ
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাসবি.এ. পাস করার পরে প্রচণ্ড মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমার দিনগুলি কাটছিল। কোনো মতে একটা চাকরি যোগাড় করতেই হবে নইলে যে আমার ভালোবাসা হাতছাড়া হয়ে যাবে। সব সময় এই ভাবনা আমার মনে কাজ করত, আমার বন্ধুরা সকলেই ব্যপারটা জানত তাই তো মাঝে মধ্যে ব্যঙ্গের সুরে সত্যি কথাগুলি বলে দিতো। “তোর মতো ছেলের চাকরি কোনদিনও হবে না, কানে কাটা বি.এ.পাস তাঁর উপরে ইংরেজি বলতে গেলে দাঁত ভেঙ্গে যায়।” কথাগুলি শুনে আমার কোনদিন কষ্ট লাগেনি কারন কথাগুলি বাস্তব সত্য তবে আমি মনেপ্রাণে চেষ্ট করতাম আর আমার পরমপিতা ভগবানকে ডাকতাম, যদি কোনো সঠিক পথ দেখান। আমরা ছয় বন্ধু গ্রাজুয়েট হবার পরে, গ্রামের আমবাগানে মাদুর পেতে রাতদিন চাকরির পড়াশুনা করতাম। লেখাপড়ায় আমি সবথেকে কমা ছিলাম তাই সমস্ত ঝুট ঝামেলা ফাইফরমাস নির্দ্বিধায় করে দিতাম, তবুও ব্যঙ্গ বিদ্রুপের হাত থেকে নিস্তার পেতাম না ।
“বিভূতি তোর পড়াশুনা করে লাভ নেই মাঠে মুণিস দে গে যা” হ্যাঁ আমার বন্ধুর কথা শুনে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। আমি বললাম কি করলে তোরা আমার পিছনে লাগা ছাড়বি?
ওদের মধ্যে একজন বলল “তুই যে কোনো একটা বা দু’টো প্রশ্ন আমাদের ধরবি, আর আমরা যদি না পারি তা হলে তোর পিছনে আর লাগব না। কোনো কিছু না ভেবেই ‘হ্যাঁঁ’ বলে দিলাম। বেশ কয়েক দিন হয়ে গেলো, কিছু্ই খুঁজে পাচ্ছি না, হঠাৎ একদিন আমার বাবা প্রশ্ন করলেন খোকা আমাদের চার নম্বর প্রধান মন্ত্রীর নাম কি?
আমি তো হাঁ করে রইলাম এই চার নম্বর তার পরে পাঁচ নম্বর তার পরে ছয় নম্বর জিজ্ঞাসা করবে বাবাকে আমি ভালো করেই চিনি বিদঘুটে প্রশ্ন করাতে বাবা সিদ্ধহস্ত ….. কি মুশকিল ।
বাবা বললেন —- “খোকা এই রকম পড়াশুনায় চাকরি হবে না।”মনে মনে খুব কষ্ট পেলাম প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে, সঙ্গে সঙ্গে বইপত্র ঘাঁটতে শুরু করলাম। এখনকার মতো, তখন তো আর গুগল ছিলো না যে জিজ্ঞাসা করে বলে দেবো। অবশেষে প্রধান মন্ত্রীর সিরিয়াল খুঁজে পেলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে মুখস্ত করে ফেললাম কিন্তু যতবারই না দেখে বলতে যাই, সবগুলি আগে পরে হয়ে যায় অবশেষে একটা সুত্র বের করে মুখস্ত করে ফেলাম, আর ভাবলাম এই প্রশ্নটা যদি ওদের ধরি তা হলে কাজ হবে। যথারীতি একদিন প্রশ্নটা বন্ধুদের করে ফেললাম। আমাদের প্রধান মন্ত্রীর সিরিয়াল পরপর বলতে হবে কে পারবে? সবাই বলল কিন্তু আগে পরে হয়ে গেলো কারোর উত্তরই ঠিক হলো না । সেই দিন থেকে ওরা আর আমার পিছনে লাগত না বরং আমার প্রতিটি কথার গুরূত্ব দিতো। এতে আমার মনটা সব সময় ফুরফুরে থাকত। এক দিন “ও” আমাকে বলল কি ব্যপার তুমি আজকাল বেশ চনমনে থাকো ব্যপারটা কি? আমি উত্তর দিতে পরিনি কারণ রাস্তা দিয়ে চলার পথে কথাটা বলে পালিয়ে গেলো পাছে কেউ দেখে ফেলে। আমিও আর তাগাদা করিনি পাছে ওর দুর্নাম রটে।
প্রায় এক বছর পর ষ্টেশন মাষ্টার পদের লেখা পরীক্ষায় আমরা তিন বন্ধু পাস করলাম, মৌখিক পরীক্ষা দিতে পাটনার মহেন্দ্রঘাটে গিয়ে উঠলাম। প্রথম বন্ধু মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যাবার পথে আমাকে বলে গেলো বিভূতি তোর চাকরি এখানেই হবে। কথাটা শুনে দুঃখও পেলাম আর আনন্দও পেলাম। দুঃখ পেলাম কারণ মৌখিক পরীক্ষা এখনো হলনা, ও কি করে বুঝল আমার চাকরি হবে? দ্বিতীয় বন্ধু মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে বেরোবার পথে আমাকে আস্তে করে বলল তুই-ই পারবি । অবশেষে সেই চরম মুহূর্ত এসে গেলো মৌখিক হলের মধ্যে এক পা যেই দিয়েছি ভিতর থেকে ইংরেজিতে প্রশ্ন ভেসে এলো আমার কানে, ভারতের প্রধান মন্ত্রীর সিরিয়াল বলুন? আমি এক পা ভিতরে এক পা বাইরে দিয়ে দাঁড়িয়ে তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলাম JGLG IMCI RVCP বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে রইল সকলে। পরের প্রশ্ন ভেসে এলো ভিতরে আসুন ও বসুন। ভিতরে গিয়ে বসতেই পরবর্তী প্রশ্ন, আমার উত্তরটা বিস্তারিত ভাবে বলতে বলা হলো। আমি বললাম উত্তরটা হলো আমাদের প্রধামন্ত্রীদের নামের প্রথম অক্ষর স্যার। মুহূর্তেই সকলে হো হো করে হেসে উঠলেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন পি.ভি. নরসিংহ রাও তখন শেষ প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। আমাদের তিনজনের মধ্যেই কেবল আমারই চাকরিটা হয়েছিলো এখনও ওই চাকরিটাই করছি। ওঃ হো “ওর” কথা বলা হলো না, হ্যাঁ ও ধৈর্য্য ধরতে না পেরে অন্য একজনের হয়ে সুখে সংসার করছে।
-
ধর্মযুদ্ধ
ধর্মযুদ্ধ
-বিভূতি ভূষন বিশ্বাসউগ্র ধর্মের গোঁড়ামির অবস্থান,
আদিম সভ্যতার হবে পুনরুত্থান ।
পৃথিবী ব্যপী পড়বে তার প্রভাব,
দেখা দেবে মানবতার অভাব ।
সকলেই ধর্মযুদ্ধে হবে লিপ্ত,
ধর্মান্ধতাই বিফলতায় হবে ক্ষিপ্ত ।
বাস্তববাদী ধর্মই হবে প্রতিষ্ঠিত,
শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে হবে উন্নীত ।
মহাজাগতিক খোঁজে বড় সফলতা,
শক্তির নতুন উৎসে ভরপুরতা ।
আর্থিক সমীকরণ যাবে পাল্টে,
পুরাতন নিয়ম কানুন যাবে উল্টে ।
হাজার শতাব্দী কাটবে নির্বিঘ্নে,
মানবতার সুর বাজবে প্রতি কণ্ঠে ।