-
কবিতা- আলোর খোঁজ
আলোর খোঁজ
– মঙ্গল মণ্ডলরাতগুলো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, জোনাকি
আর ঘোরে না , তাই রাস্তাগুলো কালোতে
ভরে আছে; চোখেতেও কেমন অন্ধকার
হয়ে গেছে, তাই দিনের আলোয় কত কি
ঘটছে তবু পুতুল হয়ে আছি, যেন অন্ধ হয়ে
গেছি; কেবল চিৎকার শুনতে পায়, কখনো
কান্না ভেসে আসে কখনো বা ঠোঁট কাঁপা
ফোঁপানো শব্দ ; চোখ থাকতেও অন্ধ
শুনেছি , আজ তার উপলব্ধি করতে হয়,
গায়ে অজস্র শক্তি আসে, মনে প্রবল
ধ্বংসের কামনা জাগে ; অন্ধ আমি,
বধির হতে হয়, তাই আজ বোবা । কেন
আমায় করেছো জড় ?,কেনই বা দিলে না
বলতে আর ভাঙতে ওই সমাজের কীট গুলোকে;
তবে যেদিন চোখে আলো ফুটবে সেদিন
আর কান্না নয় , কোনো সমাজ কলুষিত
হবে না।ওগো রবির দল আমায় একটু
আলো দাও , আর সহে না অন্ধকারের
জ্বালা , আর সহে না অজানা পথিকের
নিরব চিৎকার । আমরা বাঁচতে চায় সবাই মিলে।কেবল কয়েকটা আলো নেভানো মানুষ গুলোকে আলোর জ্ঞান দিতে হবে,
তবেই হবে আনন্দ উল্লাস মেলা পার্বন
মিলনের সে এক নতুন পৃথিবী। -
কবিতা- অজানা মায়া
অজানা মায়া
– মঙ্গল মন্ডলআমারও মৃত্যু হবে; কাঁদবে কেউ,
কেউ হাসবে,কেউ ফেলবে চোখের জল,
কেউ মনে মনে তৃপ্তি পাবে ,আবার
সময় অতীত হলে আমি যে ছিলাম
একদিন সেটাও হয়তো মুছে যাবে।
পরে রবে শুধু নিরব প্রকৃতি ;
সে জানতো আমি ছিলাম
কিন্তু সে তো বোবা,বলতে পারে না;
সময় জানে সব ,কথাও বলে, তবুও
সময় চুপ করে থাকবে ,
কারণ সময় চলে গেলে
পিছনে আর ফেরে না,
আর মনেও রাখবে না।
আমি তখন অজানা অতীত হব কেবল।ব্যঙ্গ করে ভবিষ্যত বলে উঠবে হয়তো ,-
‘ওহে শুনছ পথের
পথিক, তোমার থাকাটাই মৃত্যু।
মুছে গিয়ে অন্যের ভালো করে গেছো।’
তাই,
মনে হয়, আজ আছি কাল নাই,
তবু কল্পনা করি অনেক জগতের ।
একফোঁটা মায়া নিয়ে দৌড়ে বেড়ায়,
মোহ মায়া কামনা বাসনায় জর্জরিত
এ দেহ যেন আত্মাকে গলা টিপে ধরে।।
ঈশ্বর যদি আনন্দ স্বরূপ হয় ,
তবে কেন দুঃখটা বড়ো হয়ে
দেওয়াল হয়ে যায় ? আর ওই
আনন্দস্বরূপ ঈশ্বর থেকে বঞ্চিত করে দেয়? -
মুক্ত গদ্য- কিছু কথা ও চিন্তা
কিছু কথা ও চিন্তা
– মঙ্গল মন্ডলঅন্ধকারটা আলো হারা।সে কোনো দিন আলোর দেখা পায় না, আলোতে তার মৃত্যু।যেমন লবণ জলে মৃত্যু বরণ করে ঠিক তেমনি অন্ধকার আলোতে । কিন্তু ভেবে দেখো আলোর উৎসগুলো সব ফুরিয়ে গেলে পড়ে রবে ওই দৈত্য অন্ধকার ,যা কখনো ফুরাবে না।,আলো তাকে ক্ষণিকের জন্য মৃত্যু দিতে পারে ।ঠিক যেন কিছু ক্ষণের জন্য জ্ঞানহারা করে রাখার মতো।আসলে অন্ধকার অমর হয়।যদি জীবনটাও বর্ণনা করা যায় , দেখা যায় জড় পদার্থের থেকে সৃষ্টি এই শরীর ক্ষণিকের জন্য আলোকিত হয়ে সজীবতা ধারণ করে ।যেই তার মাঝে থেকে প্রাণটা চলে যায় সেই তার মাঝে পুনরায় পূর্বাবস্থা জড় পদার্থে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।মূল কথা হলো যে জড় স্থায়ী আর জীব ক্ষণিকের জন্য।অপরদিকে অন্ধকার স্থায়ী আর আলো ক্ষনিকের জন্য।
একটা নক্ষত্রের সব আলো ফুরিয়ে গেলে সে অন্ধকার জগতে প্রচন্ড দৈত্য হয়ে ওঠে,আর ব্ল্যাকহোলের রূপ নেয় ।নঞর্থক শক্তি চিরস্থায়ী ,সদর্থক শক্তি হয়তো বাঁধ হয়ে তাকে ক্ষণিকের জন্য আটকে রাখতে পারে মাত্র,যখনই সদর্থক শক্তি ম্লান হবে পুনরায় নঞর্থক শক্তি প্রকাশ পাবে।তাই যে কোনো মানুষের মধ্যে সদভাবনার চেয়ে অসদ ভাবনা প্রভাবিত হয়ে থাকে বেশি।
সততা অসততাকে কিছু ক্ষণের জন্য অস্বচ্ছ করতে পারে মাত্র, কিছু লোকের প্ররোচনায় হোক আর নিজস্ব ষড়রিপু বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই হোক একটা মানুষ অসৎ হয়েই পরে কিন্তু তার কোনো দোষ নেই।অসততার মধ্যে ষড়রিপুর দুর্বলতা বাস করে, মায়াটা ওইখানেই বাঁধা পড়ে যায়।চিরসত্য কিছু কথা আলোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে , সমস্ত সংসারে অন্ধকার লুকিয়ে থাকে শুধুমাত্র আলোর জন্য ।কিন্তু কেউ আলোকে সর্বদা ধরে রাখতে পারে না তাই পুনরায় অন্ধকারের জাগরণ ঘটে । যেদিন আলো আবার ফুটে ওঠে অন্ধকার আপনা আপনি হারিয়ে যায় , কিন্তু বিলুপ্ত কোনো দিন হয় না।তোমার মধ্যে আলো জাগিয়ে রাখো যতটা পারো।কিন্তু কখনো ভেবো না অন্ধকার শেষ হয়ে গেছে। তবে আলোই তার একমাত্র নিরাময়।
-
কবিতা- চন্দ্র গ্রহণ
চন্দ্র গ্রহণ
– মঙ্গল মন্ডলও পূর্ণিমা
তোমার চাঁদ বড়ই নিঠুর
আশা দেয় তবে কথা না দিয়ে
নিজেকে হারায়;ম্লান করে অমাবস্যায় মৃত্যু নেয় ,
তার এতই মরণের সাধ
তবে কেন আবার ফিরে ফিরে চায়;আবার ওই আকাশের কোণে
অন্ধকারে আপন মনে
উঁকি মেরে যায়;এতই সাহস তার
উঁকি ছেড়ে ফেরে আবার
ওই তোমার দিনে
জ্যোৎস্না ভরে দেয়;কি তার চালাকির ছলনা
যতই দিন যায় বুঝি না
ছিল শীর্ণকায় হচ্ছে অতিকায়;বেয়াদপের সীমা থাকে একটু ,
তারা গুলো এড়িয়ে
তোমার কাছে শ্রেষ্ঠ হয়ে যায়;ও পূর্ণিমা
তোমার জ্যোৎস্না
ম্লান হয়ে যায় যে,
ওই যেন চাঁদ যাচ্ছে ঢেকে ,
দেখো দানব আসছে ঝাঁপিয়ে;
তুমিও তো হারাচ্ছো নিজেকে,
এ কি চাঁদ হারালো নাকি,
জ্যোৎস্না তুমি ফিরে এসো
আমার চাঁদকে এনে দাও
দানবটারে তীর মেরে,
ফেরাও পূর্ণিমাকে
তার চাঁদ আমার চাঁদকে। -
কবিতা- অন্ধকার
অন্ধকার
-মঙ্গল মন্ডলদেখেছি তার কান্নাগুলো,
ছিটকে পড়ছে কন্ঠ দিয়ে ,
আছড়ে বাতাস টুকরো করছে,
সেই দৃঢ় কান্না;
তোমরা কেন শুনতে পাওনি সেদিন?
দেখো ওই বাঁচার চিৎকার ফুটছে মুহুর্মুহু;
ঠোঁট কাঁপছে চতুর্দিক,
নয়নে তার ভয় ঢেকে আসছে,
আত্মা যেন এই বের হয়ে পালায় পালায়;
কেন তাকে হাঁ করে দেখেই গেলে,
যদি দু’টো হাত বাড়াতে!
চোখের সামনে,
তাও তো তার ছিটকে পড়া কান্না
আর চিৎকারগুলো সমাধান পেতো;
আমি দেখেছি, আমি শুনেছি,
শিশু হয়ে অজানার মাঝে;
সে কি গভীর আর্তনাদ ,
একটু বাঁচতে চায়;
তার ছটপট করতে থাকা অমূখ শরীর,
তোমরা কেন বুঝলে না সেদিন ;
বিষটাও হার মেনেছিল,
নিজেই বেঁচে থেকে ছিল
আরো দু’চারটে ঘন্টা ;
হঠাৎ যেন লড়াইয়ে চিৎকার থেমে গেল,
সকালের রবি উঠেও ছিল ,
তবু যেন অন্ধকার নেমে এলো।
আশেপাশে হা করে তাকিয়ে দেখলো,
মরণ কিভাবে হয়?
সেদিন সে হেরে গিয়েছিল ,
তার একার লড়াইটা,
চোখে আজও তীব্র যন্ত্রণায় ফুটে আছে শীলালিপির মতো, আমার চোখে।‘তোমরা দেখেই যেও সারাটাদিন,
তুমিও জানো বাঁচতে;সেও বাঁচতে জানতো,
লড়েছিল অর্থহীন জীবনের সাথে,
শুধু কুসংস্কারের ছায়া
তাকে দিলো না ফিরতে। -
কবিতা- শান্তির সন্ধানে
শান্তির সন্ধানে
– মঙ্গল মন্ডলবিষ নিয়ে ঘুরছে ,
সবার মাঝে একরাশ বিষ আছে;
গরল দেখিয়ে সে নিজেকে লুকায় ,
বিষের আড়ালে মধু আছে ,
ওকে ঝেড়ে ফেলতে দাও,
যদি তার মধুরতা আমরা পাই।কারো গরল আবার মিষ্টি ,
কারোরটা তেতো;
তেতো তবু শুধরে দেয় ,
মিষ্টি দেয় গভীর মৃত্যু ।
কানে যেন কারা বিষ ঢালছে ,
জীবন্ত বিষ ;
আহা কি মিষ্টি তার গন্ধ,
মোহের জালে মৃত্যু একটু দিস।শ্মশান আমার শেষ দেশ ,
ঘুরতে তো যেতেই হবে;
পাসপোর্ট ভিসা বলতে মৃত্যু ,
থাকবে তখন কাছে,
কঠিন হয়ে বিছানা শয্যায়
বিলীন হয়ে রব,
আর ভস্ম হয়ে প্রভাত দেখবো ;
উড়ে যাব ,মিশে যাব বাতাসে ,
আবার নতুন দিগন্তে
যাব কোনো এক শহরে।শ্মশান আমার ভয়ের ছিল ,
ওইখানেই একদিন চিরশান্তি পাবো ।একদিন এক শান্তির নেশায়
ঘুমে স্বপনে চলতে ফিরতে মগ্ন হয়েছিলাম,
সে এক গভীর অনুরাগে।
সেদিন আমি বলতে পারিনি ,
থেমে গিয়েছিলাম
সে এক অজানা পিছুটানে;
আমিও পাল্টে গেছি,
আর নেই আমার সেই গভীর অনুরাগ।
এখনো ইতিহাসের পাতায়
তবুও খুঁজতে বের হয়ে পরি ,
যদি একবার অতীত ফিরে পায়। -
কবিতা- ব্যথার ভিখারী
ব্যথার ভিখারী
– মঙ্গল মন্ডলশরীরে অঙ্গে অঙ্গে বিপুল ব্যথা,
ছোঁয়া যায় না তারে ;
তবু অনুভবের ভাঙা জানলা ছেড়ে সে ঘুরছে ভাঙা দ্বারে দ্বারে।
একটু ব্যথা পাবে বলে;ব্যথার ভিখারী ,
ব্যথা চেয়ে বেড়ায় এ ঘরে ও ঘরে;
সহস্র পাথরের বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম অঘোরে।একটু ব্যথা পাবো বলে;
ভাঙা কাঁচ আরো ভেঙে দৌড়ে গেলাম,
তবু স্বাদ না মেটে;
ফণিমণসার সারি সারি,
দৌড়ালাম পরি মরি,
খিদে যায় না পেটে।দৌড়ে বেড়ায়,
একটু ব্যথা পাবো বলে;অজস্র ব্যথার ক্ষুধা,
নয়নে জল ভরে রেখেছি,
চলো ব্যথা খুঁজে দেখি;
তোমার কাছে একটু ব্যাথা হবে ?
আমায় দেবে গো?
হতাম একটু দুঃখী।ভব ঘুরে হয়েছি ছলে,
একটু ব্যথা পাবো বলে;একটু দুঃখ চাই,
তুমি কেন কাঁদো হে পথিক ,
ওটা আমায় দাও,
তুমি হাঁসো আমি কাঁদি;
একদিন সবার ব্যথা হরণ করবো,
ভিখারী হয়ে ছিনিয়ে নেব ,
হবো ব্যথার কোটি পতি,
আমি ব্যথা নিয়ে সবাইকে খুশি দিয়ে বাঁধি।পাগল হয়ে মাথা ফেটে গেল জলে,
ও বন্ধু ব্যথা দেবে গো,
ঘুরছি একটু ব্যথা পাবো বলে। -
কবিতা- কেউ নয় ছোট
কেউ নয় ছোট
-মঙ্গল মণ্ডলওরা সব বুদ্ধিজীবী আমরা সব বোকা,
কথা বলাটা আসেনা ঠিক করে ,
তাই মানায় না ওদের পাশে।
কথা বলতে গেলে হ্যাঁ হুঁ করে,
জোর করে দুটো কথা হয়তো বলে ফেলে ,
হ্যাঁ উনি বেঁচে আছেন ,
ওনারা বুদ্ধিজীবি।
আমাদের চালাকি টা আসে না,
তাই বোকা বোকা লাগে ,
ওরা সব বোঝে,
সময়ে না থাকতে পারুক সমালোচনায় আছে।
ওরা বুদ্ধিজীবী ,
ওদের পায়ে সোনার জুতো ;
আমরা কি আর বুঝি বাপু ,
আমরা বোকা একদিন আমাদের সাথেই ঘুরতো ফিরতো।সাদামাটা আমরা ,
ভান্ডারে কিছু জ্ঞান রাখি না ,
আমরাও যে কিছু পারি সেটা ওরা জানেনা ।
আমরা মাটি থেকে প্রাণশক্তি আনতে পারি,
যে প্রাণে আমারাও বাঁচি ,
সাথে সাথেই বুদ্ধিজীবীরাও প্রাণধারী।
ইহলোকে কেউ নয় ছোট ,
, দৃষ্টিকোণ কর্ম আর সামাজিক স্থানে বিভাজন করেছে দুটো।
বন্ধু হয়ে পাশে থাকলে বুদ্ধি পাবে শক্তি , জ্ঞান ছড়িয়ে জ্ঞান বাড়ে ,
জ্ঞান সঞ্চয়ে বিনাশ হয় সব পঙক্তি। -
কবিতা- অগ্নি শিখা
অগ্নি শিখা
-মঙ্গল মন্ডল
আগুনের যে কি ব্যথা ,
তুমি কি ভেবেছো কোনো দিন?
তার যে জ্বলার আবেগ ,কত প্রিয় মানুষকে ভস্ম করেছে ;
এটা দেখে আগুনের ওপর রাগ হয় ,কিন্তু তার ব্যথা কি কেউ দেখতে পাও?
তোমরা ভিতু ,
তাই আগুনের সব কিছু মেনে নিয়ে দূরে পালাতে চাও,
কিন্তু কাছে গিয়ে তাকেও কি ভালো করে দেখেছো?
কতোটা ব্যথায় সে জ্বলছে? ,,
ওই যে পাহাড় জঙ্গলে জীবন্ত সংসারে একটু ভুল করে এসে পরেছিল,
দাবানল বলে তাকে অ্যাখ্যা দিয়ে তো দিলে সহজেই।
সে বুঝতেও পারেনি তার ক্ষণিকের আসা ওদের নির্জীব করে দেবে!
যখন সে বুঝতে পারে হয়তো তখন সেও পারে না তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে;
বুকে যন্ত্রণা ফুঁটে ওঠে আকাশ চিরে;
তাই যেন ওই ধোঁয়া গুলো তার চোখের জলের ফোয়ারা ।
কেন জানি না কত চিৎকার করে উঠে মুহুর্মুহু!
তারো বুকে অনেক ব্যাথা;
তার বৈশিষ্ট্যে সে লজ্জিত ,
তাই যে সে লুকিয়ে থাকে লজ্জায়;
সেও বলে ওঠে কষ্টে ,-
~”আমাকে ডেকো না গো তোমার দ্বারে ,
অন্তর বড়ই ব্যথা পায়,
আমি আদিকালের সর্বচ্চ শক্তি ,
অহংকার নয় এটাই আমার ভয়।”