• কবিতা

    কবিতা- মাধুর্য কোরাস কণ্ঠে

    মাধুর্য কোরাস কণ্ঠে
    – মানিক দাক্ষিত

    সকালের মিষ্টি আলোয় সেদিন
    পুতুল খেলায় আতিশয্যে মাতোয়ারা।
    স্বপ্নের মৃদু ঝাঁকুনিতে
    বহুরূপীর সাতটা রঙ এসে হাজির
    নির্বাক পুতুলের অচল অবস্থিতিতে
    আনন্দের অসীম তৃপ্তি।

    ডাগর চোখে যদিও অনন্ত জিজ্ঞাসা
    তবুও ক্লান্তিহীন পুতুলের জমাট আসর।
    কে জানে অনতিদূরে শক্ত পাথরে
    বাধা খাবে বেড়ে যাওয়া কালের বয়স।

    বেলা বাড়ে, সূর্য আসে মাথার ওপর।
    কালো কালো অমসৃণ পাথরগুলো
    চেপে বসে পেটে আর বুকে।
    এতদিনে নির্বাক পুতুল সব
    ভেসে গেছে দায়িত্বের ভরা বান দিয়ে।
    বিষয়ের আতিশয্যে উন্মত্ত
    শরীরের শিরা উপশিরা।

    আকাঙ্খার পদক্ষেপ বিশালের পরিমাপ—
    ভোগ বাড়ে আগুনের জ্বলন্ত শিখায়।
    আদিমের রূপ নিয়ে সুখ ফেরে
    বিষয়ের জঙ্গলে শান্তির খোঁজে।

    ধীরে ধীরে বেলা পড়ে, সূর্য নামে পাটে,
    জীবের কপালে কড়াঘাত
    অতীতের উপলব্ধির খেয়ালী ভাষায়।
    অশান্তির অস্বস্তিতে দেখে
    সত্যের কাঠামো খাড়া পাশে;
    উপায় কি, সময় নাই–অন্ধকার হাসে।

    চোখের তারায় গেরুয়ার ছোঁয়া লাগলেই
    সাদা পোষাক জমে।
    উপলব্ধির খেয়ালী ভাষার পরিবর্তন
    অবশ্যই সাদা পোষাকে।
    গাণিতিক সমাধান ক্রমশ: জটিল,
    চরম উপলব্ধির হালফিল খাতায়।
    সত্যের নগ্নতায় আমাদের সার্থক রূপায়ণ—
    মাধুর্য কোরাস কণ্ঠে যখন জীবনের জয়গান।।

  • কবিতা

    কবিতা- ভালো থাকো ভালো রাখো

    ভালো থাকো ভালো রাখো
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    এবার থামো অনেক হলো
    আর নয়কো আস্কারা,
    মাস্ক নিয়ে করছো তোমরা
    নিত্যনতুন মস্কোরা।

    দুলের মতো কানে ঝোলাও
    কখনও ঝোলে দাড়িতে,
    আড্ডাখানা চায়ের দোকান
    মন বসে না বাড়ীতে।

    বিড়ি ফোঁকো পানও চিবাও
    হাঁচি কাশি থুথুতে,
    মাস্ক তোমার হাতের মুঠোয়
    নয়তো ঝোলে দাড়িতে।

    খাওয়ার এখন ধূম বেড়েছে
    আনন্দে যাও বাজারে,
    হামলে পড়ে বাজার করো
    ভরাতে পেট গাবারে।

    চোখের সামনে দেখছো মরণ
    কেমন নাচে ভূতের নাচন,
    সব বুঝেও বুঝছো নাকো
    নিজের হাতে মরণ বাঁচন।

    জীবন বড় অমূল্য ভাই
    গেলে আর ফেরে নাকো,
    তাই তো বলি সাবধানী হও
    ভালো থাকো, ভালো রাখো।

  • কবিতা

    কবিতা- ন্যায়বৃত্তিকে জাগিয়ে

    ন্যায়বৃত্তিকে জাগিয়ে
    – মানিক দাক্ষিত

    রাগ আসে রাগ যায়..
    মাঝে মাঝে সমুদ্রের জোয়ার হয়ে
    আছড়ে পড়ে জীবনের তটে।
    ভীষণ দোটানা সঙ্কট।
    জীবন সঙ্কট, না ধর্ম সঙ্কট!

    কিসের জন্য রাগ, কার জন্য রাগ…
    অপরের ভালোর জন্য, নাকি
    নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য!

    যদিও রাগ মহাশত্রু;
    তবুও তাকে মনের ভিতর
    সযত্নে লালন করি,
    দুধ কলা দিয়ে পুষি।

    কিন্তু পোষ মানাতে পারি না।
    অজান্তে কখন রাগটা কেউটে হয়ে
    নিজেকেই মারে ছোবল।

    দেখা যাক ন্যায়বৃত্তিকে জাগিয়ে
    চিত্তের কুৎসিত প্রাসাদটাকে
    অনুপম করা যায় কি-না!

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- ভাষা

    ভাষা
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    ভাষা হাসায় ভাষা কাঁদায়
    ভাষা সর্বনাশা।
    ভাষা আবার মনেতে দেয়
    গভীর ভালবাসা।

    ভাষা করে পরকে আপন
    আপন করে পর্।
    ভাষাই বাধায় দক্ষযজ্ঞ
    মনেতে আনে ঝড়।

    ভাষা ঘটায় বিরহ মিলন
    ভাষা আনে রাগ।
    ভাষা মনের বড় ওষুধ
    মিষ্টি মধু সোহাগ।

    এসো আমরা সবাই মিলে
    মিষ্টি করি ভাষা।
    জিভের আগায় লাগাম টানি
    বাড়ুক ভালবাসা।

  • কবিতা

    কবিতা- রূপলাল

    রূপলাল
    -মানিক দাক্ষিত

     

     

    পরপর দু’বছর ফেল মেরে রূপলাল,
    পড়া ছেড়ে ঝাণ্ডা ধরে ঝাড়ে শুধু বোলচাল।

    কান ধরে চড় মেরে বলে বাবা রূপকে,
    “বাড়ী ছেড়ে কেটে পড়ে ধান্ধা করো টাকাতে।

    সর্বনেশে ঘাড়ে বসে গিলবে তুমি কতকাল,
    বলছি তোরে ঝরঝরে ইহকাল পরকাল।

    জারিজুরি গুণ্ডাগিরি চলবে নাকো বেশীদিন,
    সব ফেলে যাবি জেলে চুকবে যত আছে ঋণ।

    লেখাপড়া করে যারা পায় তারা কতো মান,
    গাড়ি-বাড়ী টাকা-কড়ি সবার কাছে সুসন্তান।

    নাই টাকা সব ফাঁকা বৃথা হবে জারিজুরি,
    ভগ্নদশা সব আশা কেরামতি বাহাদুরি।”

    রূপলাল ঠুকে তাল বলে পূজ্য বাবাকে,
    “জিও জিও দেখে নিও ক’দিন বাদে আমাকে!

    নাই নীতি রাজনীতি করি আমি বাজারে,
    এই ধন মূলধন পাবে নাকো হাজারে।

    বিদ্যে ডিগ্রি টাকাকড়ি লাগে নাকো ইহাতে,
    হলে নেতা জাতে ওঠা সবার আমি মাথাতে।

    মান-খ্যাতি প্রতিপত্তি এসে যাবে দূয়ারে,
    আমি বেটা কেউকেটা ভাসবো সুখ জোয়ারে।

    হাতে ঝাণ্ডা সব ঠাণ্ডা চালিয়ে যাবো দাদাগিরি,
    খাপে খাপে ধাপে ধাপে উঠে যাবো শেষ সিঁড়ি।”

    শর্ত মানি কথাখানি রূপলাল রেখেছেন,
    ছলে বলে কৌশলে মস্ত নেতা বনেছেন।

    এখন?
    রূপলাল গোলগাল গণ্যি-মান্যি ভদ্দরলোক,
    গাড়ি-বাড়ী টাকা-কড়ি লক্ষ্য রাখে লক্ষ চোখ

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- জীবন কাটাই দ্বন্দ্বে

    জীবন কাটাই দ্বন্দ্বে
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    বারো মাসে তেরো পার্বণ
    লেগেই আছে বঙ্গে,
    বলতে পারো ভুলেই আছি
    নানান যাদু রঙ্গে।

    ভক্তি শ্রদ্ধা চুলোয় গেছে
    সকাল থেকে সন্ধ্যে,
    খানা-পিনা-রসে-বশে
    কাটছে ভাল-মন্দে।

    মানবতা কথার কথা
    নাইকো কোনো ছন্দে,
    অধর্মকে ধর্মে মুড়ে
    জীবন কাটাই দ্বন্দ্বে।

  • কবিতা

    কবিতা- শান্তির সুখ আর…

    শান্তির সুখ আর…
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    নিঃস্তব্ধ নিঝুম রাতের অন্ধকারে
    আকাশের দিকে চেয়ে দেখো–
    আমাদের মানবিক সত্ত্বাগুলো তারাকারে
    মিট মিট কিংবা জ্বল জ্বল করে জ্বলছে!

    আমাদের যতটুকু ভালবাসার সমতা
    যতটুকু শান্তির পাশাপাশি সততা
    ততটুকু আমাদের প্রকাশের ক্ষমতা।

    সূর্যকে দেখলে এখনও কাঁপি।
    সূর্যের আলোর ছোঁয়াতে এখনও ভাবি
    শঙ্করাচার্য বুদ্ধ হজরত এবং চৈতন্যের কথা।
    কিন্তু গভীর শোকে কাঁদি অমাবস্যায়
    যখন রক্তের নোনা স্বাদ নেকড়ে চাখে।

    চোখের আগুনে ফুলের পাপড়ি ঝরলে
    স্পষ্ট দেখতে পাই—
    বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়া রক্ত জমায়।
    বেশ জানি, সূর্যের ভাগীদার আমরা সবাই।
    তবুও মলিন প্রকাশ অন্ধকার আকাশে
    বাদলের শুকনো শ্রাবণে।

    বছরের নতুন মাসে এসো—
    আমরা ব্যাখ্যা করি আমাদের মানবিক সত্ত্বার।
    সত্যের সংসারে নিশ্চিত ভরসা
    শান্তির সুখ আর হৃদয় নিরাপত্তার।

  • কবিতা

    কবিতা- ভাবতে অবাক লাগে

    ভাবতে অবাক লাগে
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    ভাবতে অবাক লাগে..
    জন্মাচ্ছি আমরা একই জায়গায়।
    স্থান কাল পাত্র সব এক।
    শুধু পার্থক্য — তুমি ছেলে আর আমি মেয়ে।
    কিন্তু ফলটা দ্যাখো একেবারেই পৃথক।
    ছোট থেকে বীরদর্পে তুমি
    সব কিছু করছো জয়।
    আর আমি?
    ছোট থেকেই আমার শরীরের চারপাশে
    আঠার মতো জড়িয়ে আছে
    মান লজ্জা ঘেন্না আর ভয়।
    পদে পদে লক্ষ্মণরেখা- সতীত্বের স্তব,
    স্বাধীনতার ধ্বজা ওড়ালেই গেল গেল রব।

    কি বিচিত্র পিতৃতান্ত্রিক এই দেশ!
    তুমি দশজনের সাথে
    শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করো,
    সাতখুন মাপ, নেই আপত্তি।
    আমি একজনের সাথে হেসে কথা বললেই
    নষ্ট মেয়ে—গোল্লায় গেল—যত বিপত্তি!
    ভালবাসার অভিনয়ে
    আমার সর্বনাশ করে ছেড়ে দাও,
    ক্ষতি নাই; নি:শব্দে সকলে মানবে।
    আমি ছাড়লেই দুনিয়া জানবে-
    অশ্লীল ভিডিও ছাড়বে— অ্যাসিড ছুঁড়বে–
    নয়তো ধারালো ছুরি দিয়ে কাটবে।
    তখনই বাঁচার আশাটা
    ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে যাবে।
    রাগে লজ্জায় ঘেন্নায়
    আমি গলায় দড়ি দেবো, নয়তো
    রেললাইনে মাথা- কিংবা..
    গলায় তীব্র বিষ ঢেলে
    জীবনটাকে শেষ করবো।

    ভাবতে অবাক লাগে-
    জন্মাচ্ছি আমরা একই জায়গায়
    স্থান কাল পাত্র সব এক।
    শুধু পার্থক্য- তুমি ছেলে আর আমি মেয়ে।
    অথচ, একবার ভেবে দেখো-
    আমিই তোমার পৃথিবী।

  • কবিতা

    কবিতা- তুমি আছো বলেই

    তুমি আছো বলেই
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    তুমি আছো বলেই পৃথিবীকে বড়
    সুন্দর মনে হয়।
    তুমি না থাকলে পৃথিবীটা আজ
    হয়ে যেত মরুময়।
    তুমি আছো বলেই জীবন-কবিতা
    পদে পদে পায় ছন্দ।
    তুমি না থাকলে কবিতা থাকতো
    মনের কপাটে বন্ধ।
    তুমি আছো বলেই জোছনার চাঁদ
    দেখে যায় চোখ দুটি।
    তুমি না থাকলে চাঁদ হয়ে যেতো
    পোড়া ঝলসানো রুটি।
    তুমি আছো বলেই রাগে অভিমানে
    ভালবাসা বাড়ে এত।
    তুমি না থাকলে মনে দেখা দিতো
    শোক-দু:খের ক্ষত।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- মুক্তি দাও আমায়

    মুক্তি দাও আমায়
    – মানিক দাক্ষিত

     

     

    খাঁচাতে বন্দী তোমার সাথে। চারপাশ
    কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। নাভিশ্বাস
    উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। চাঁদের আলোটা
    শোকাতুর নিওন বাতি। জীবনের মানেটা
    নিরুদ্দেশ। অনেক হয়েছে আর নয়,
    মুক্তি দাও আমায়। সময়ের অপচয়
    বন্ধ হোক। প্রাণ ভরে মুক্ত বাতাস
    নিই, তার সাথে পাই খোলা আকাশ।
    লক্ষ্মীটি ছেড়ে দাও। থাক তর্ক-যুক্তি,
    স্থির বিশ্বাস—-তুমিও পাবে মুক্তি।

You cannot copy content of this page