-
ক্রমান্বয়ে
ক্রমান্বয়ে
-শিবানী গুপ্তসাঁঝের ছায়া ঘনায় বেলাশেষের
ধূপছায়া শাড়ি পড়ে
বেহালায় সুর টেনে করুণ রাগিনীতে
উদাসী বাউল ফেরে নীড়েকূলবধূ নিকোনো আঙ্গিনা প’রে
সত্যনারায়ণ পূজোর ত’রে
আলপনা আঁকে –নৈবেদ্য সাজায়
দূরে—-নামাজের কোলাজ ধ্বনি
বাতাসে ছড়ায়শঙ্খচিলেরা দিগন্ত রেখা ধরে উড়ে যায়
অচিন—ঠিকানায়
তন্ময় একাগ্রতায় পাঠরত কিশোরের
কন্ঠে–‘ভারততীর্থ’
চারপাশে মুগ্ধতা–আবেগিকসীমান্তে-স্বজনচ্যুত-দেশপ্রেমী সৈনিক
আপনারে উৎসর্গিতে উন্মুখ
কোন এক বিরহ বিধুরা রমনী
কপালে আঁকে -এয়োতির চিহ্ন !
সাঁঝের আকাশ পানে উতলা মন এক
দু’চোখে মুক্তো টলমল্বাতাসে করুণ ব্যঞ্জনায় নিঙারিয়া
কাঁদে কার–ব্যর্থ ভালবাসা !
রাত্রির কালো খামে কত কিছু
ঢাকা থাকে,নৈঃশব্দের সিলমোহরেপল–অনুপল ক্ষয়ে সময়ের ধারা বেয়ে
ক্রমান্বয়ে সূচনা হয়- নবপ্রভাতের ! -
দুঃসময়
দুঃসময়
-শিবানী গুপ্তআচমকা যখন পারিপার্শ্বিক চিত্রটা
আমূল বদলে যায়
স্বস্তি–সুখের সহজ যাপন-অংকে
গরমিল–ছল্-ছুঁতোর ছিদ্র যতোই রি্যুকরি-ছিদ্র বাড়তেই থাকে
একসময়,চারপাশের দেয়ালটা বক্ষে
চেপে বসে,দমবন্ধ নিঃশ্বাসে
আর,তখনি,মনটা অস্থিরতায় কাঁপে
দুঃসময়ের অজানা ত্রাসে !পরিচিত আবেষ্টনী ঘিরে
শুধুই চানক্যের কূটনীতি
শকুনির চতুর পাশা খেলাচেনা মুখ- চেনা বসতি-
সব কেমন অচেনা–অস্পষ্ট
চক্রব্যূহের রহস্য মোড়কে আবদ্ধ
বাতাসও কানেকানে ফিস ফিস্ করে
দুঃসময় গো,বড়োই দুঃসময়!বিপন্ন বিশ্বাস মেঝেতে মাথা খুঁড়ে-
প্রেম,ভালবাসা,মায়া,মমতা সব
কর্পূর হয়ে ওড়ে-সংস্কৃতি,দায়বদ্ধতা,সংস্কার,নীতিবোধ
পোষাকী খোলস পাল্টে
খৈ হয়ে দূরান্তে ছ”ড়ায়–
অক্টোপাশের মতোই পেঁচিয়ে ধরে
আগ্রাসী লোল জিহ্বা নাড়তে থাকে-
দুঃসময় ! -
ছন্দপতন
ছন্দপতন
-শিবানী গুপ্ত
হলুদরঙ প্রজাপতি ছাপ চিঠিটা
এখনও টেবিলে!
একরাশ স্বপ্ন শ্যামলা মেয়েটির
কালো চোখে কাজল টানে
বাসন্তী রঙ তাঁতের শাড়ি —
কপালে টিপ্ , হাতে- মেহেদীছাপ, আলতা পরা পা
খুশির রোশনাই উছল মুখে শরমের লালিমা।লোকজনের আনাগোনা, আত্মীয়ের কলকন্ঠেউলুধ্বনি ,
পুরুতের মন্ত্রোচ্চারণ, আশীর্বাদ, মিষ্টিমুখর পরিহাস —
কথকতা , চব্য – চোষ্য আপ্যায়ণে-
মঙ্গলাচরণ পর্বের সমাপ্তি- সামিয়ানা ওঠে।
সাজসজ্জা, অলঙ্কার, বেনারসীর জৌলুস,ভাঁড়ে ভাঁড়ে আসা নানা জিনিষপত্তরে,
দুরাগত কুটুম্ব সমাগমে-
গমগম বিয়েবাড়ি গীতবাদ্যে মুখর-
সহসাই ছন্দপতন!পারিপার্শ্বিক চিত্রনাট্য আমূল বদলে গেছে-
কে যেন অলক্ষ্যে রাশ্ রাশ্
আলকাতরা ঢেলে দিলো –
নিমেষে রক্তহীন বিবর্ণ মমি স’ব।যে বাড়িটা-
দু’দিন পরে বিয়ের সাজে সেজে ওঠার কথা !
যে বাড়িটার –
ভাঁড়ার ভ’রে অফুরন্ত আশা, আর সাধের তৈজস !সে বাড়িটার-
ঘুপচি চিলেকোঠার আঁধারে-
শ্যামলা মেয়ের কালোচোখে – স্বপ্নের বদলে বোবাকান্না!নিঠুর ঘাতকের থাবা ছিনিয়ে নিয়েছে-
ভাবী স্বামীর প্রাণস্পন্দন সড়ক দুর্ঘটনায়।
নিশিভোর তার স্বপ্ন পুড়ে পুড়ে
ছাই হতে থাকে,
শ্যামল অঙ্গ ক্ষীণতর ক্রমশঃ
দহনের তীব্রতা বুকে।আশ্চর্য্য! হলুদরঙ প্রজাপতি ছাপ চিঠিটা
এখনও -টেবিলে !! -
কথা ছিল- – –
কথা ছিল—–
-শিবানী গুপ্ত
এ্যাই,একটু শুনবে? কথা ছিল-
– – – ওফ্ কি বললে!
সময় নেই বুঝি? তা, কিসের এতো ব্যস্ততা শুনি!
সেই—-পঁচিশ থেকে ষাট অব্দি ছুটেই তো চলেছো বাপু!
কোনদিন, কখনো সময় হয়েছে শুনবার? হুঁ,যত্তোসব!
আজ কেন, কোনদিনই সময় আর হবেনা তোমার, সে আমি হলফ করে বলতেপারি। বিলক্ষণ জানি বটে।
অথচ, কথা প’রে কথা জমে জমে বুকের চত্বরে যে ইতিহাসের পাহাড় গড়ে উঠেছে গো!
আচ্ছা ! মানুষ এতো বদলে যায় কেন? কেউ কি বলতে পারবে?ভালবেসেই তো সংসার পেতেছিলাম আমরা দুজনে। বছরখানেক সবকিছু কতোনা শোভন, দৃষ্টিনন্দন, দারুণ রকমের রোমান্টিকতায় ভরপুর!
আর! তারপরই তো – – – –
দিনক্ষণ তো আর পাঁজিতে দেখে রাখিনি বাপু। নইলে,হিসেবটা মনে থাকতো–
তা, এখন তো, সংসারের আর দশটা আসবাবের মতো আমিও- – –
ওহ্ না, না, আসবাব দামী হলেও আমি —আমিতো নেহাৎই নগণ্য।
তাছাড়া, আমার বেলাতেই যতো সময়ের অভাব,অফিসের
চাপ, কাজের নানা ফিরিস্তি–
নইলে, ইলা, মানে, চিনা, ক্যাটরিনাদের বেলায় তো দেখি
অফুরন্ত সময়, তখন, তোমার চোখমুখের ভাষাই পাল্টে যায়, তোমার মুখে লুটোপুটি খায় বেহায়া চাঁদের বেলাজ হাসির লহর, দেখিনি ভেবেছো!
আর, আমি আশ্চর্য্য হয়ে যাই, কানপেতে শুনে দারুণ চমকও লাগে – – – – –
এতো সুন্দর সহাস্যকথাও তুমি বলতে পারো! কথা তো নয়, যেন, মিছরীরপাকে ডোবানো, সত্যি, ভাবা যায়!
তাহলে, সব কৃপনতা কি শুধু আমার বেলাতেই – – – –
যাকগে্ —————–
থাক তবে, আর বলবোই না, কথা নিকুচি করেছে— -
পয়লা বৈশাখ
পয়লা বৈশাখ
-শিবানী গুপ্তচৈত্র শেষে নতুন বেশে
বৈশাখী দাঁড়ালো এসে
মিষ্টি মধুর হাসিটি হেসে।হাতে নিয়ে তার প্রীতির ডালা
ঐক্য–প্রত্যাশার গেঁথে মালা
নতুন দিনের ভোরে।বাংলার নারী লালপেড়ে শাড়ি
মঙ্গল শাঁখে করিতে বরণ
আলপনা আঁকে দ্বারে।প্রভাত পাখির সুমধুর তানে
বৈকালিক গীতে নবীন উদ্যমে নবপ্রেরণার টানে
উল্লাস জন–চিতে।দিকেদিকেজাগেআনন্দেরসাড়া
প্রকৃতি সাজে অতি মনোহরা
বৈশাখীরে আলিঙ্গন সম্ভাষে। -
প্রেম কথা
প্রেম কথা
-শিবানী গুপ্ত
বলছে সুজন,আয়লো সজনী
নয়ন ভরে তোরে দেখি
ওষ্ঠে এঁকে অনুরাগের পরশখানি
সোহাগে ভরিয়ে রাখিশরমলালিমা সব ঝেড়ে ফেলে
ছুটে আসে ত্বরা সজনী
“ভালবাসি প্রিয়,ভালবাসি বলে
বক্ষলগ্না কামিনীপ্রেমের সায়রে যায় ভেসে দোঁহে
মায়াময় এক অপরূপ মোহে
প্রকৃতি সুন্দরী কান পেতে রাখে
প্রেমের ধুন হৃদয়েতে মাখে -
হে পুরুষ! মনে রেখো, আমি নারী
হে পুরুষ! মনে রেখো, আমি নারী
-শিবানী গুপ্ততোমরা যারা দম্ভভরে পুরুষত্ব
জাহির করো,
নারীর সমান স্নেহ–মমতা
কখন কি দেখাতে পারো!
নিজেকে নারী দেয় জ্বালিয়ে
সুগন্ধী ধুপেরই মতো,
বিনিময়ে পুরুষ তোমরা তাদের
মর্য্যাদা কি তারে দাও ততো?সেবায় নারী মাত্র মতন
মমতায় –সে বোন
বিছানায় –তোমার বিলাসসঙ্গী
বহুরূপী নারীর গুণ!
পুরুষ! তোমার তৃষ্ণা অসীম
আনপথে ধায় –বারম্বার
নারীস্বাভিমানী বড়োঅভিমানী
বুকেতে তার–পাষাণভার!
তোমার ত’রে নারীর অবদান
যাপিত জীবনভর,
বিনিময়ে কি দিলিরে পুরুষ
লজ্জা নাইকো তোর?
বিবেকদোরে তালা দিয়ে
ঘুরিস যেথা খুশি
নারী বুনে নকশিকাঁথা
শীতার্ত রাতে বসি।স্বপ্ন পুড়ে খাঁক হয় তার
পুরুষ! তোমার জন্য
মান-জ্ঞান-হুঁশে ফিরবে কবে ?
প্রশ্নটা সেজন্য।
নারী শুধুই নয়কো পুতুল
কলের মতন নড়বে,
আজকের নারী–বহ্নি সমতুল
মর্য্যাদার জন্য লড়বে।নারীশুধু নয়কো দাসী-নয়কো
শয্যাসঙ্গিনী,
নয়কো সে ভগিনী
নয়কো শুধু জননী
নয়কো কেবল ঘরনী।
দিতে হবে নারীকে তার প্রাপ্যসম্মানপুরুষ! তুমি মনে রেখো আমি নারী
আমি বিবর্তন আনতে পারি।
-
মধুনিশি
মধুনিশি
-শিবানী গুপ্ত
আকাশ জুড়ে তারারা স’ব
ঝিলমিলিয়ে হাসে
হাত বাড়ালেই নামবে জেনো
আমায় ভালোবেসে
চাঁদটা কেমন মায়াবী মায়ায়
নীলাভ দ্যুতি ছ’ড়ায়
শ্যামল বনানী উদ্ভাসিতা
তারই অরূপ ছ’টায়
মধুনিশি ডাকছে আমায়
ব্যাকুল উষ্ণতায়
উতল মন একছুটে ধায়
মাতাল মগ্নতায়
চলো না যাই সাঁকো ধরে
হেরি অনুপম ছবি
কলম আমার পাগলা ওরে
নইতো, আমি কবি
-
ইচ্ছে তর্পণ
ইচ্ছে তর্পণ
-শিবানী গুপ্ত
বুকের নিভৃতে —
তুষের আগুনে পল পল
নিত্য দগ্ধ বাসনার আশ মন-দেরাজে রাখা।
ছিল ধৈর্য্যের চাবিকাঠি ‘
দীর্ঘদিনে–তাতেও ধরেছে জং
ইচ্ছেগুলি কর্পূর হয়ে ওড়ে-
এতোদিন হাসঁফাঁস করছিল-
বন্ধ দেরাজে মাথা কুটে আমার সাধ ছিল-
একআকাশ সুন্দর নকশা দেবো ইচ্ছের গা’য় দিচ্ছিলাম,
সান্ত্বনার বাতাস সুসময়ের প্রত্যাশায় — হলো না।
বন্ধ দেরাজে—- অপর্যাপ্ত বাতাসের ছাট্ তাই,
বাতাস না পেয়ে —– আলোর ওম্ না পেয়ে ,
যখন প্রত্যাশার সলতে নিভু নিভু একদিন,
বিষম রেগে- মন-দেরাজের বন্ধ দরজাটা-
ভাঙতেই দেখি –
আমার সাধের ইচ্ছেগুলো-
আমার ভালোবাসা ইচ্ছেগুলো শুকিয়ে কাঠ!
আমার দু’চোখ ছলছল্ আমার সর্বহারা দুচোখে–
-বেদনার ধারা —- অব্যক্ত যন্ত্রণায় আমি বিমুঢ়!
ইচ্ছের অকাল –তর্পনে.-!
-
বসন্ত! আমার গঙ্গাজল (বসন্তকে )
বসন্ত! আমার গঙ্গাজল (বসন্তকে )
-শিবানী গুপ্ত
ওগো, চিরসখা বসন্ত, সেই মেয়েবেলার সন্ধিক্ষণ হতেই তুমি আমার সই—-আমার গঙ্গাজল! মনে পড়ে কি.তোমার! সেদিনের শুভলগ্নের শুভ—- মুহূর্তের অনুরাগময় একান্ত নিভৃত আলাপচারিতার কথা! বিচিত্র রঙবাহারী ফুলে বাগানটা যেন হেসে হেসে আমায় ইশারা করে ডাকছিলো আমি কাছে যেতেই তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি আমায় বিমুগ্ধ করে। কি সুন্দর কস্তুরী সুবাসে ছেয়ে আছে ফুলেরা, তোমার কবোষ্ণ স্পর্শে। ফুলেরা বললো, তুমি যখনই আসে, এমনি করেই ওরা সুশোভিত, সুবাসিত হয়ে ওঠে,তোমার অমলিন সৌহার্দ্যে——– আমার মনেও কেমন একটা অনুরণন! তুমি মিষ্টি মিষ্টি হেসে দুষ্টুমি করে আমার চুলগুলো একটু নাড়িয়ে দিলে, ‘কিগো, মিতা হবে আমার ‘? আমি তো আহ্লাদে একপায়ে খাড়া—‘হ্যাঁ, হ্যা, হবো ,আজ হতে তুমি কিন্তু আমার গঙ্গাজল! সত্যি, কি দারুণ চনমনেই না ছিলো মেয়েবেলার শাপলা্ – শালুক দিনগুলি! আমরা দু’জনে আপনমনের উচ্ছলতায় পার করেছি দিন-মাস–বছরের মধুমাখা অপরূপ দিনগুলো -কৈশোর–যৌবনের কৃষ্ণচূড়ার সুরভিতদিনগুলো- জীবনখাতার পরতে পরতে কতোনা স্মৃতির পশরা– তোমার অনুরাগের ছোঁয়ায় প্রাণমন ভরে উঠেছে পুলকে— শুধু কি আমি ! তোমার অনাবিল স্নিগ্ধপরশে বিশ্বজগৎ জুড়েইতো তোমার বন্দনাগীতি গো! কতো কতো কাব্য–কবিতা—-নাটক,আর -গীতিমালাসৃজিত হয়েছে -তোমাকে ঘিরে ,তোমারি আলোক। অনবদ্য, অনুপম লাবনীসুধায় সকলকে আকর্ষণ করেছো। ভ্রমর যেমন ফুলের মধুর আশে উন্মত্ত হয়ে ছুটে আসে, তেমনি আকুলতা জাগে সবার প্রাণে-, তোমাকে ঘিরে, তোমার স্পর্শে সঞ্জীবিত হয়ে শুকনোগাছেও কুঁড়ির ইশারা জাগে! এমনি মোহময়,প্রাণময়,প্রেমিক স্পর্শ তোমার গো সখা! ওইযে, কবি বলেন—- ‘ ‘সবারে বাসরে ভালো নইলে,মনের কালো ঘুচবেনা রে আছে তোর যাহা ভালো ফুলে মতো দে সবারে–‘ সখা বসন্ত! তুমি যে তাই গো! ভালবাসারঅমিয় ধারা সুরধুনী হয়ে বইছে তোমার উদার হৃদয়ে—-তাইতো, সবার মাঝে ,সবকিছুর মাঝে তুমি স্বরূপে উদ্ভাসিত। প্রকৃতি অপরূপ সাজে মনোলোভা হয়ে ওঠে তোমারই অকৃপণ অনুরাগে। গঙ্গাজল! সখা বসন্ত আমার! তোমার মনে পড়ছে কি সেদিনের কিশোরীটিকে? যার সাথে ফুলেরা তোমাকে সখ্যতায় বেঁধেছিল! হ্যাঁ,সেই কিশোরীতার অবোঝ সরল মনের ঊচ্ছাসটুকু তোমাকে জানাতে ব্যাকুল হয়ে হৃদয়ের সবটুকু সৌরভ ঢেলে চিঠি লিখে জানিয়েছিল তার কুমারীমনের ভালবাসার কথা—প্রথমঅনুরাগের প্রথম কদম ফুলের নির্য্যাসে——- চিত্র আষ্টেপৃষ্ঠে গম সেঁটে ফুলেদের দিয়েছিল, তোমাকে দেবার জন্য। ফুলেরা তো চিত্র বাইরের লেখা পড়ে হেসে কুটি কুটি– ‘ওমা, কি লিখেছিস এসব! –‘সাগুর দানা, বেলের পানা মালিক ছাড়া খুলতে মানা যে খুলবে তার চক্ষু কানা তবুও, যে খুলতে যাবে তিনসত্যি, চক্ষুকানা হবে’— ওদের হাসি দেখে আমি লজ্জায় ছুটে পালাই। গঙ্গাজল! সখাবসন্ত! তুমি কিন্তু চিঠিটা পেয়ে ফুলেদের মতো হাসোনি। বরং আবেগে আমায় জড়িয়েধরে সর্বাঙ্গে এঁকে দিয়েছিলে মধুর সোহাগচুম্বন! কি অপরূপ মাদকতার ছোঁয়া ছিল তোমার সেবা আলিঙ্গনে! আমি ভেসে গিয়েছিলাম গো! আর, চিঠি! সেতো আমি শুধু তোমাকেই লিখিগো, প্রতিদিন–মনেমনে! আর, সত্যি বলতে কি, বয়সের এই পড়ন্ত বিকেলে এসেও তোমার প্রতি আমার সভ্যতা, অনুরাগ, প্রীতিময়তা, ঠিক আগেরমতোই সতেজ, গাঢ়। তোমার উপস্থিতিই যে এমন, যাকে কেউ কখনো অবহেলা করতে পারে না। তাইতো তুমি বিশ্ববন্দিত !চির-ইপ্সিত, চির-আকাঙ্খিত, চিরসবুজ——-চিরসুন্দর ! যদিও, আমি এতোসব কঠিন কথা বুঝতে পারিনে সখা। আমি শুধু জানি, তুমি আমার বেঁচে থাকার অমূল্য রসদ! আমার সুহৃদ, আমার মিতা। আমার কলমকে তুমিই করো উজ্জীবিত–অনুরাগে,প্রীতিতে- ভালবাসায়— বসন্ত সখা! তুমি যে আমার গঙ্গাজল!
ইতি–তোমার গঙ্গাজল।