• কবিতা

    কবিতা- অবুঝ পাখি

    অবুঝ পাখি
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    মনের মধ্যে অবুঝ পাখির বাস-
    যখন তখন গুমরায় দিনরাত
    রাত যত বাড়ে বুকের মধ্যে চাপ-
    মনের ঘরের সব আগল ভেঙে পড়ে।

    অবুঝ পাখির আর্তনাদটা শোনো-
    সে কোন রূপসী প্রণয় ভিক্ষা করে,
    কালিদাস কবে মেঘদূত লিখেছিলো-
    প্রিয়া তার ঘরে প্রণয়ের চিঠি পড়ে।

    বিশ্বামিত্র মেনকাকে কে পেতে চায়
    মোহময়ী পরী উঁকি দিয়ে চলে যায়,
    সব তপস্যা ব্রহ্মচর্যগুলো –
    অবুঝ পাখির ডাকে ধুলোয় মেশায়।

    জানো কি বন্ধু নিষ্ফল বেদনায়-
    দূর হতে কারা ডাকে কতো ঈশারায়,
    অবুঝ পাখিটা মনেতেই গুমরায়
    দেবরাজ তাই অহল্যাকেই চায়।

    অবুঝ পাখিরা কাকে যে ডাকে কোথায়
    ঋষি মুনিরা তো ব্রাহ্মমুহূর্তে জাগে
    গৌতম মুনি নদী ঘাটে স্নানে যায়
    কাক ডেকে ওঠে প্রেমিক হাজির হয়।

    তারা সুন্দরী চাঁদকে ইশারা করে
    গুরু পত্নী তো অগম্যা হয় জানে
    অবুঝ পাখিটা সবখানে হানা দেয়
    জ্যোৎস্নায় তারা চাঁদ প্রেমে ডুবে যায়।

    বৃষ্টি পড়ছে শুনশান চারিধার
    অবুঝ পাখিটা ডানা ঝাপটায় জোরে
    সে বুঝি এসেছে নির্জন নিরালায়
    এমন দিনেই কে কে যাবে অভিসারে।

    শকুন্তলারা আজও পথে পড়ে কাঁদে
    চোরি পিরীতি লাখো গুণে শ্রেয় হয়
    পথের ধূলায় আজও তো ভূমিষ্ট হয়
    আদি কাল থেকে অবুঝ পাখি টা ডাকে।।

  • কবিতা

    কবিতা- ধূসর গোধূলি

    ধূসর গোধূলি
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    সেদিন একটা ধূসর গোধূলি ছিলো
    প্রিন্সেপ ঘাট, গড়ের মাঠও ছিলো
    বাদামের খোসা ছাড়ানোর অছিলায়
    স্পর্শ সুখের অনুভূতি টাও ছিলো।
    ধূসর গোধূলি আবছায়া অবয়বে
    চেনা নাকি কেউ কার ও গলার স্বর
    মুখটা লুকানো দু হাঁটুর ছোট ফাঁকে
    পাশে বসে সেও ওড়নায় মুখ ঢাকে।

    মুঠো ভরা কিছু সোহাগ আলতো ছোঁয়া
    হৃদয়ে উথাল পাথাল ঢেউয়ের দোলা
    অভিমানী মুখ থমথমে গোধূলিতে
    ব্যাকুল আবেগ হার মানে ব্যর্থতায়।
    সন্ধ্যা নামলে চেনা অতিথিরা নেই
    সাহস করেই হাত খানি ধরা যায়
    লজ্জা জড়ানো কুন্ঠিত প্রশ্রয়ে
    ঠোঁটের আলতো পরশ টুকুও দেয়।

    হারানো বিকেল হারানো গোধূলি ডাকে
    ফেলে আসা সেই যৌবন স্মৃতি ঘাটে
    তরণী ভেসেছে সুদূর দ্বীপের গায়ে
    সেও চলে গেছে গোধূলির আবছায়ে।।

  • কবিতা

    কবিতা- অসহায়

    অসহায়
    (বয়স্ক নিগ্রহ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে লেখা )
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    একটা সময় ছিলো যখন তারাই ছিলো সহায়
    বয়সের ভারে ন্যুব্জ এখন তারা আজ অসহায়।
    কেউ কথা আর বলে নাকো ডেকে সবাই পাশ কাটায়
    অসহায় হয়ে বৃদ্ধ বৃদ্ধা আকাশের পানে চায়।
    বয়স হলেই একা করে দেয় অদ্ভুত এ সমাজ
    জেনারেশন জেড এড়িয়েই চলে এড়ায় তো নীতিবাজ।
    নিগ্রহ চলে বুড়ো বুড়ীদের নিত্য দেখে সমাজ
    মারধোর করে বের করে দেয় পথে ঘোরে তারা আজ।

    নিগ্রহ শুধু শারিরীক নয় মনেও অত্যাচার
    সব কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়াই দারুণ বীরের কাজ।
    অবহেলা টাও ভয়ানক এক নির্যাতনের কাজ
    চিকিৎসা না করা না খেতে দেওয়াতে নির্মম এ সমাজ।
    সাগরে তীর্থস্থানে নিয়ে গিয়ে গলগ্রহ ছেড়ে যায়
    স্বার্থপর এই দুনিয়াটাতে কুকর্ম করে যায়।
    পরিচর্যার কাজে এসে কেউ সব লুটে নিয়ে যায়
    টাকা ও গহনা লুটে নিয়ে শেষে খুন করে রেখে যায়।

    বৃদ্ধ বৃদ্ধা অক্ষম নয় তারা গলগ্রহ নয়
    তাদেরই অন্নে পালিত শিশুরা রয়েছে বিশ্বময়।
    বয়স্কদের নাকি কোনো দেশ নেই তারা পৃথিবীর জঞ্জাল
    মানবিক দেশ মরমি মানুষ সকলের চোখে জল।
    সমাজের দায় আছে নিশ্চয় বন্ধ হোক নিপীড়ন
    দেশের আইন, মানবতাবাদী থামান নির্যাতন।
    বয়স্করাও একদিন ছিলো পিতা মাতা ভাই বোন
    হিংসা ও দ্বেষ মুছে দিয়ে করো তাদের আপ্যায়ন।।

  • কবিতা

    কবিতা- স্মিত মুখের আড়ালে

    স্মিত মুখের আড়ালে
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    তোমরা সবাই দেখছো যে স্মিত মুখ-
    মুখের হাসিটি সদা অমলিন রাখি,
    হাসির আড়ালে বুকে আছে যত ব্যথা,
    সে ব্যথাকে আমি হাসি দিয়ে ঢেকে রাখি।
    জীবনে জীবনে আছি পুরাতন গানে-
    জানিনা কেন যে আশার স্বপ্ন টানে,
    ব্যথার মুকুল সব ঝরে গেলে প্রিয়,
    আমার কবরে শ্রীচরণ রাখিও।

    ভুলে যেও প্রিয় ভুলে যেও সেই গান-
    যে গানে পরাণ সঁপে দিয়েছিনু গো,
    এই বুঝি তারই অভিনব প্রতিদান,
    বিরহ আমার নিয়তিই দিয়ে গেলো।

    জীবন আমার বিরহেই কেটে যাবে-
    পথ চেয়ে হোক সঘন অশ্রুপাত,
    হৃদয়ে যদি ঠাঁই না দিলে গো প্রিয়,
    মরণের পরে কবরেতে মাটি দিও।
    কবরে যখন ধূপ দীপ জ্বালা হবে-
    বাতাসকে বোলো অতি ধীরে যেন বয়,
    মাটির গভীরে তোমার সুবাস নেবো,
    ভালো বাসা মোরে ভিখারি করেছে প্রিয়।।

  • অণু কবিতা

    অনু কবিতা- মেঘলা আকাশ

    মেঘলা আকাশ
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    এমন দাবদাহের দিনে মেঘলা আকাশ ভালো
    বৃষ্টি ফোঁটা নাইবা ঝরুক মনে আশার আলো।
    নাইবা চাতক তৃপ্ত হলো উড়লো মেঘের গায়
    পরাণ আমার আনন্দে তাই মেঘের পানে ধায়।
    ঘেমে নেয়ে বেশ তো আছি কেউ কি ডেকে গেলো
    জানি অভিমানী প্রিয়ার মনে মেঘের কালো।
    অভিমানেই কাটুক না দিন এই বিরহ ভালো
    বৃষ্টি এলে হাসবে প্রিয়া বৃষ্টিতে মন ভালো।।

  • কবিতা

    কবিতা- বিরহ বেদনা

    বিরহ বেদনা
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

    রাতজাগা পাখি আকাশের তারা গোনে,
    অপেক্ষা রাত জানে কতো সুকঠিন –
    প্রিয়কে না পেলে কতটা কষ্ট হয়,
    ইচ্ছেগুলো যে গোকুলে বাঁশি বাজায়।
    যখনই পৌঁছে দিতে চাই মৌরেণু,
    নিয়তি বোধহয় অলক্ষ্যে বসে হাসে-
    অদর্শনের তীর এসে বেঁধে বুকে,
    শতজনমের বিরহী প্রাণ হারায়।

    কেউ তো বলবে একবার ডাকো প্রিয়,
    স্বপ্নে দেখেছি প্রিয়তম হাসি মুখ –
    জীবনের শেষ সম্বল বাজি রেখে,
    প্রিয়ার বুকেতে চেয়েছি স্বর্গসুখ।
    চোখের জলেতে ধুয়েছে মায়া কাজল,
    বিনিদ্র রাত ক্রমশ দীর্ঘ হয়-
    চাতক পাখিটা কি করুণ সুরে গায়
    প্রিয় হয়ে থাক প্রিয়াতেই তন্ময়।

    বিরহ যাতনা অসহ্য মাথা ঘোরায়,
    বিন্ধ্যাচলের বাতাস কি লাগে গায়-
    খাজুরাহো আজও মানুষের বিস্ময়,
    কোনার্কে সব মিথুন মূর্তি কি বার্তা দিতে চায়!
    হাজার রমণে ব্রহ্ম প্রাপ্তি হলে,
    কন্যা দানের পূণ্য কি অক্ষয়?
    বিরহ বেদনা কি বার্তা বয়ে আনে,
    বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা কি নয়?
    গুণমুগ্ধ তো অনেকেই হয়ে থাকে-
    সৌন্দর্য সে তো দেবতার মহা দান,
    বিরহ বেদনা কাকে বলে প্রিয়া জানে,
    প্রিয় মানুষ কে তাই করে সম্মান।।

  • অণু কবিতা

    অনু কবিতা- বৃষ্টি এলে

    বৃষ্টি এলে
    সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    বৃষ্টি এলে আমার সাথে কইবে কথা আজ
    এই খোলা চুল এলিয়ে দিয়ে ভিজবো সকাল সাঁঝ।
    বৃষ্টি এলে বলবে কথা আমার রাঙা ঠোঁটের ব্যথা
    কেউ জানেনা গোপন কথা প্রথম চুমুর দাগ।
    বৃষ্টি এসে শরীর ভেজায় অঙ্গে আমার কাঁপন লাগায়
    সে লাজ কথা বলবো কারে কাব্য লেখার কাজ।
    বৃষ্টি এলো চলেও গেলো ভিজিয়ে দিলো আজ
    সে সব কথা কইতে ব্যথা অঙ্গে দারুণ লাজ।।

  • কবিতা

    কবিতা- বৃষ্টি

    বৃষ্টি
    সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    মেঘের ওপার হতে কে তুমি এমনি এলে,
    এতদিন পর!
    নিদাঘের প্রতপ্ত দুপুরে ডেকে বলো
    দরজাটা খোলো—
    খুলে দিই দ্বার। একরাশ মেঘলা আকাশ
    উঁকি দিয়ে যায় যেন খোলা জানালায়।
    ঢুকে পড়ে শীতল বাতাস।
    মুখে হাসি, বুকে তার সদ্যভেজা মাটির আশ্বাস।
    গভীর বিস্ময়ে বলি, তুমি!
    তুমি এলে এতোদিন পর!
    তবু তো এসেছি।
    এই ছিল তার উত্তর।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রকৃতিও কথা বলে

    প্রকৃতিও কথা বলে
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    প্রকৃতির কথা শোনাতে চাই শুনবে কি বলো তবে
    একবার যদি শোনাই সে কথা অতি চমকিত হবে।
    জীবনে তুমি তো বাড়ি বানাবেই থাকবে আরাম করে
    সেখানে গড়তে পারো ইমারত যেখানে সাপেরা খোলস ছাড়ে।
    সাপ উষ্ণতা পেলে সেখানেই খোলসটা ছেড়ে যায়
    স্বাস্থ্যকর ও মনোরম হবে সেথায় বাড়ি যে বানায়।
    বাড়ি বানালেই শখের বাগান করবেই তুমি জানি
    যে জমিতে কেঁচো মাটি তুলে রাখে সেটাই চাষের ভূমি।
    সারের কাজটা কেঁচোরাই করে সারাটা বছর ধরে
    বাগান করো গাছও লাগাও ফসল তুলবে ঘরে।
    সবুজ খাদ্য শাক আনাজ খাও দেহটা সতেজ হবে
    শরীর ও হৃদয় সুস্থ সবল মনটাও ভালো রবে।
    জল পান করে তৃষ্ণা মেটাতে অশ্বকে নিয়ে যাও
    নির্মল জল পথ সে দেখাবে নির্মল জলই খায়।
    ঘরে শুয়ে যদি আরাম করবে একবার দেখে নাও
    পোষা মেনি দেখো কোথায় শুয়েছে সেখানেই শুতে যাও।
    ঘুম ভাঙা আর ঘুমিয়ে পড়াটা ঘড়িতে মেলাতে চাও
    বিহঙ্গ কূলকে ভালো করে দেখে ওদের পন্থা নাও।
    শৃঙ্খলা কাকে বলে সেটা তুমি পিঁপড়ের কাছে শেখো
    নিজের বাসাটি নিজেই বানাতে বাবুই পাখিকে দেখো।
    মাছ সাঁতরায় শরীর সুস্থ, থাকে খালে বিলে জলে
    মাছ দেখে তুমি নিজে সাঁতরাও পরে নয় মাছ খেলে।
    মুখ তুলে তুমি আকাশটা দেখো মন আলোকিত হবে
    চাঁদ তারা রাতে মন ভালো রাখে সূর্য শক্তি দেবে।
    পাহাড়ের কাছে শিক্ষা নিয়েই উঁচু করে রাখো মাথা
    দেশের জন্য জীবন দিলেও লাগবে না কোনো ব্যথা।
    প্রকৃতি যখন কথা বলে সেটা কান পেতে তুমি শোনো
    জীবনটা হবে ছন্দ মধুর ভালোবাসা পাবে জেনো।

  • কবিতা

    কবিতা- আবির

    আবির
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    ফাগুন এসেছে রঙিন আবির নিয়ে
    রঙের মাধুরি ছড়িয়ে জগৎ জুড়ে
    শিমূলে পলাশে মাধুরি ছড়ালো কে
    লজ্জার লাল প্রিয়ার আবির হাসি।
    আবির মাখতে মাখাতে দারুণ লাজ
    অন্তর চায় কেউ তো আবির মাখাক
    লজ্জায় লাল বাহিরের আবরণ
    অন্তর এক পুরুষ স্পর্শ চায়।

    মৌমাছি দেখো কোরকে পৌঁছে যায়
    মৌটুসী এসে কোরকে ঠোঁট ডুবায়
    অন্তর দিয়ে যদি কেউ ভালোবাসে
    সারাটা জীবন তাকেই তো দেওয়া যায়।
    কি জানি কি করে দোল পূর্ণিমা আসে
    প্রতি বছরেই মনটা উদাস হয়,
    প্রিয়া যদি রঙে উন্মুখ হয়ে থাকে
    সারাটা শরীরে আবির মাখানো যায়।

You cannot copy content of this page