• কবিতা

    কবিতা- ফাগুন ও চাঁদ

    ফাগুন ও চাঁদ
    – সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

    ও ফাগুন তুই ক্যামনে এলি
    আমার ভাঙ্গা গরাদ গলে?
    হঠাৎ কেন দোল লাগালি
    আমার পাপড়ি-ছেঁড়া ফুলে?
    চোখের জলে ভাসিয়ে নেওয়া
    আমার বুকের গরম হাওয়া,
    আমার দুটো শুকনো ঠোঁটের
    পরশ পাবি বলে?

    ফাগুন তোর ঐ গোলাপ গোলাপ
    মাতাল করা রঙ এ
    আমার এ মন রাঙে না!

    ও চোরা চাঁদ সিঁদ কেটেছিস
    আমার খোড়ো চালে?
    ফাঁক পেয়েছিস, আর বসেছিস
    আমার নোনতা ভেজা গালে?
    হাহাকারের এই মহলে
    যার কাঁদে পেট রাত পোহালে
    তোর কি সাজে এই কারুকাজ
    তার তেল না পড়া চুলে?

    ও চাঁদ, তোর ওই
    মুক্তো-গলা আলোর সোহাগ
    আমার জন্যে না!

    ফাগুন ও চাঁদ, যাবিই যদি
    ওই মহলে যা…
    তিনতলার ওই জানলা দিয়ে
    পর্দা ঠেলে যা!
    নরম গদির বিছানাতে
    খুনসুটি কর, যা!

    ফাগুন ও চাঁদ, রাত্রি ভোরে
    ফেরার সময় হলে
    আকাশপারের মেঘকে বলিস
    হঠাৎ দেখা পেলে

    আসছে শ্রাবণ মাসে যেন
    আমার ভাঙ্গা ঘরে
    বাদল ঝরে না!

    ফাগুন ও চাঁদ
    যা রে এবার
    সাত মহলায় যা!!

  • কবিতা

    যাচ্ছি চলে

    যাচ্ছি চলে
    -সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    যেমন করে ভাবার কথা ছিল
    তেমনটি আর পারলাম কই- বলো!!
    মনে মনে মেলাচ্ছিলাম যেটা-
    বেরিয়ে দেখি সেসব এলোমেলো!!

    মনের মধ্যে পল-অনুপল বেয়ে,
    যেসব হিসেব নিয়েছিলাম টুকে,
    বাইরে দেখি রকম-ফেরের ভীড়ে
    সে সবকিছু মুখ লুকোচ্ছে বুকে…

    ঘড়ির কাঁটা, আমোঘ যে তার গতি
    বসে আছি ট্রেনের জানলা ধরে,
    স্পষ্ট তোমায় দেখতে পাচ্ছি আমি,
    দাঁড়িয়ে আছো বেশ কিছুটা দূরে…

    দেখতে দেখতে সূর্যাস্তের শেষে
    লম্বা বাঁশি, উদগীরিত ধোঁয়া…
    চলন্ত সেই জানলা থেকে আমি
    হাত বাড়াচ্ছি, লক্ষ্য শুধু একটুখানি ছোঁয়া…

    বাড়ছে আঁধার, নিবিড় হচ্ছে ধোঁয়া…
    সরে যাচ্ছি একটু একটু করে….
    আবছা হয়ে আসছি তোমার কাছে…
    মিলিয়ে যাচ্ছি দিগন্তের ওপারে।

  • কবিতা

    “বৃষ্টিকণা হয়ে….”

    “বৃষ্টিকণা হয়ে….”
    -সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    অলস ভাবে মেঘ ভাসছে কিছু,
    সাহস করে স্বপ্ন দেখছো তুমি,
    বৃষ্টি যদি নামেই একটিবার
    বেপরোয়া ভিজবে, জানি আমি।

    আমায় যদি একটি সাহস দাও,
    আমি তবে বৃষ্টি হতে পারি….
    চুলের থেকে চুঁইয়ে পড়ব গালে,
    ভিজিয়ে দেবো তোমার ডুড়ে শাড়ি।

    ঘাসের ওপর শিশির যেমন থাকে,
    তেমনি করে তোমার চোখের পাতা
    সাজিয়ে দেবো বৃষ্টিকণা হয়ে,
    চলকে পড়বে তুমুল মদিরতা!

    মেঘে আকাশ কালো, জম-জমাট
    তারই মাঝে বজ্র ঝলক হানে –
    সেই আলোকে বজ্রাহত আমি,
    নির্নিমেষে তাকিয়ে তোমার পানে…

  • অণু কবিতা

    অন্য জীবন

    অন্য জীবন
    -সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    ওখানে শীর্ণ নদীর কায়ায়
    সময় থমকে গেছে,
    ঝুরি বুনে বুনে জটাধারী বট
    ওখানে দাঁড়িয়ে আছে…

    পাথরে-ফাটলে জেরবার
    ওই রুগ্ন অগ্রগতি,
    তবু চরাচরে ওখানেই কেউ
    কষছেনা লাভ-ক্ষতি…

    ওখানে একলা মুথা-ঘাস
    তার শিকড়ের সংগ্রামে;
    সাক্ষী কেবল রোদে পুড়ে যাওয়া
    আকাশ, দিবস-যামে…

    তবু সেখানেই বটের ঝুরিতে
    বাবুই-এর বাসা বাঁধা –
    নিবিড় মমতা করে চলে সেথা
    জীবনের মুসাবিদা…

  • কবিতা

    আমি একটি নদী লিখতে চাইছি…

    আমি একটি নদী লিখতে চাইছি…
    -সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    মুহুর্ত দিয়ে তৈরী করছি জল,
    দেখা দিয়ে বানালাম পাড় –
    আর, অদেখাকে রাখলাম বাঁকের ওপাশে…

    আলো-আঁধারি রাতগুলো দিয়ে
    লিখতে চাইছি ঢেউ,
    কর্মব্যস্ত দিনগুলো দিয়ে
    তার বুকে লিখতে চাইছি
    একটা ডিঙি –
    আর, আমার সব গানগুলো দিয়ে
    লিখে দিচ্ছি তার প্রবাহ…

    হাসি আর কান্নাগুলো
    দু’ধার থেকে মিশিয়ে দিচ্ছি জলে,
    অপেক্ষাগুলোকে গাছের মত
    সাজিয়ে দিচ্ছি পাড়ে,
    ইচ্ছেগুলো দিয়ে লিখছি গাঙচিল –
    আর, স্বপ্ন দিয়ে ভরাচ্ছি ওপরের আকাশ…

    আবেগ দিয়ে জোয়ার,
    আর ক্লান্তি দিয়ে ভাঁটা লিখলাম –
    মুগ্ধতা দিয়ে লিখলাম
    তার ছন্দময় এগিয়ে চলা…

    বোঝাপড়া দিয়ে লিখে দিলাম
    এপাড়-ওপার জোড়া সাঁকো…

    আমি একটি নদী লিখতে চাইলাম.

  • কবিতা

    তোমাকে, শুধু তোমাকেই…

    তোমাকে, শুধু তোমাকেই…
    – সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    আগোছালো টেবিলেতে
    ডাঁই করা বই, আর, পেন্সিল-খাতা-
    উড়ে যাওয়া জীবনের ছেঁড়া ছেঁড়া পাতা-
    তেপান্তরের মাঠ, বিকেলের ভাঙ্গা হাট,
    মনের গহন কোনে কানা ঘুঁজি-গলি-
    দেওয়ালের উজ্জ্বল কলি-আনন্দ-বিষাদের,
    গোধুলি ও ঊষাদের জলরঙা ছবি-
    আলমারী-দেরাজের, জীবনের জাহাজের একগোছা চাবি-
    এ্যালার্ম ঘড়ির মত জানিয়ে যাওয়া-
    দিন-বদলের পথ-চলতি হাওয়া-
    অবসান এ রাজের,
    শ্রেণী-হীন সমাজের, অনাগত এ আমার পরম পাওয়া-
    মায়ের মমতা-মাখা, কোলেতে শুইয়ে রাখা-
    দুধের গন্ধে ভরা ঘুম-ভাঙ্গা হাই,
    নস্ট্যাল্‌জিক এক সাঁঝের সানাই-
    অম্লান কৈশোরে খেলা, হই-চই,
    অন্তিম সেদিনের হরি-বোল, খই-সব
    তোমাকে দেবো, তুমি তৈরী থেকো-
    জীবনের ওমে সব সামলে রেখো..

  • কবিতা

    অনুভূতি

    অনুভূতি
    – সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    সুন্দর এক কাঁচের পেয়ালা
    আমার ভেতর ছিল
    সুন্দর তার গড়ন-ধরন,
    কল্কাও জমকালো
    ঠুনকো একটি কাঁচের পেয়ালা
    আমার ভেতর ছিল

    সেই কবে থেকে সব অনুভূতি
    দিনশেষে জড়ো হত
    পল-অনুপল, মুহুর্ত সব,
    আহুত ও অনাহুত
    পেয়ালায় সব পানীয়ের মত
    একসাথে জড়ো হত

    আনন্দ-রস, আঘাত-পাচন
    মিলেমিশে একাকার
    স্মৃতিগুলো সব দানা দানা,
    কিছু তার ভাসে আর,
    ভারী যত ছিল, পেয়ালার নীচে
    থিতিয়েছে বার বার
    অনুভূতি যত, পেয়ালার মাঝে
    মিলেমিশে একাকার

    পেয়ালা বৈ তো নয় –
    কতটুকু বলো আধারটি তার
    কতটুকু সঞ্চয়….
    মাঝে মাঝে তাই কানা ভরে ওঠে
    চলকিয়ে পড়ে কিছু
    বুকের মধ্যে ক্ষরণ তখন
    টের পাই আগুপিছু…

    তারমধ্যেই যতটুকু পারি,
    আঁজলায় ভরে নিয়ে
    কাগজ ভরিয়ে আখর গড়িয়ে
    ধরে রাখি বুক দিয়ে..

<p>You cannot copy content of this page</p>