-
কবিতা- বৃষ্টি তুই
বৃষ্টি তুই
-সীমা চক্রবর্তীবৃষ্টি, আজ লিখবো তোকে নিয়ে
সাথে থাকবে টুকরো কিছু মেঘ,
মনকেমনের দুপুরগুলো ভুলে
তোর সাথেই গল্প আর আবেগ।বৃষ্টি, তুই বল’না তোর কথা
কেমন করে জন্ম হয় তোর,
কখন তুই আছড়ে পরিস কেঁদে
কখন তোর নরম হাসির ভোর।বৃষ্টি, তুই থাকিস কত দূরে
কোন মেঘেতে করিস তুই বাস,
ডাকি যখন আসিস নাতো তুই
বল’না তুই কখন ছুটি পাস।বৃষ্টি, তুই আকাশ কালো করে
চাঁদকে ঢাকিস জুটিয়ে মেঘ যত,
জানিস তোকে বলছি সত্যি করে
চাঁদকে আমি ভালোবাসি কত।বৃষ্টি, তুই আসবি কখন বলিস
তোর জন্য থাকবো আমি বসে,
আমার শহর ভিজিয়ে দিতে তুই
প্রবল জোরে পরিস কিন্তু খসে।বৃষ্টি, তুই শুনবি আমার কথা
যদিও তেমন নেই কিছু বলার,
আছে অনেক স্বপ্ন ভাঙা ভাঙা
পিছিল একটা পথ আছে চলার।বৃষ্টি, তুই একটাই আমার সই
দেবো তোকে মিষ্টি একটা নাম,
চিঠি তে সেই নতুন নামে ডেকে
তোর ঠিকানায় পাঠাবো নীল খাম। -
কবিতা- বৃষ্টি যখন
বৃষ্টি যখন
-সীমা চক্রবর্তীবৃষ্টি যখন ভিজিয়ে দিলো আমায়
আমি তখন সেই চেনা রাস্তায়
বহু দূর হেঁটে গিয়েছি আনমনে
শব্দের ভাঙা-গড়ার খেলায় আত্মমগ্ন মন,
এক আলৌকিক উদ্ভবে
আসর জমিয়েছে সবে….
বুঝিনি এভাবে আসবে বৃষ্টি আমার শহর জুড়ে,
আলবেলা মেঘ হঠাৎই যেন খুঁজে পাওয়া উৎসবে
এলো দ্রিমিদ্রিমি উল্লাস ভরা সাঁওতালি সুরে।গোধূলির শেষে সন্ধ্যা নেমেছে পায়ে পায়ে
মুঠো মুঠো অন্ধকার দলা দলা হয়ে ভাসছে
মাস্তুল ভাঙা জাহাজের মতো বৃষ্টির খেয়ালিপনায়…
গুমোট আবহের উষ্ণ মুহুর্তরা অচিরেই খেই হারায়,
জনশূন্য রাস্তায় ভিজে চড়ুইর মতো আমি, আর
আমাকে জড়িয়ে বৃষ্টি…. এক আদিম মাদকতায়
দুজনেই ঠিক একই ভাবে শিহরিত উৎকন্ঠায়
জল মেপে চলেছি….. -
কবিতা- স্মৃতির অবগাহন
স্মৃতির অবগাহন
-সীমা চক্রবর্তীযখন তুমি থাকো না, তখনও আমি একলা নই
তোমার অপেক্ষায় নিজেকে ব্যস্ত রাখি অক্ষয় স্মৃতিচারণে,
নিরন্তর তোমাকেই দেখি আমার প্রতিবিম্বের সোপানে,
তোমার রেওয়াজি সুরে শিরা-উপশিরায় চঞ্চল রক্তস্রোত
আমাকে ঘুমাতে দেয় না
না জানি কত জন্ম এভাবেই জেগে আছি
তোমার বিরহী বাসরে,
ব্যস্ততার মাঝেও কিছু মুহূর্ত জন্ম নেয় বিকেলের অবসরে…তাই আমার অশান্ত মন আজ ভীষণ শান্ত,
একটা নিবিড় বিহ্বলতা… একটা নিগুঢ় প্রেম
ক্রমশ পঙ্গুত্ব বয়ে আনছে…. হৃদয়ের প্রতি কোষ আক্রান্ত,
আক্রান্ত আমার অপেক্ষার মুহূর্তগুলো
সবই তো তোমার কাছে ধার করা,
আমার আক্ষেপ…. আমার ভালোলাগা, সব…
চতুর্দিকে শুধুই স্মৃতির ধুলো
সব জড়ো করে পালন হয় নীরব উৎসব।
বড় ভালো লাগে এই অবগাহনের গোপন কলরব
এই অপেক্ষা হোক চির অক্ষয় ….. -
কবিতা- কি উপহার সাজিয়ে দেবো
কি উপহার সাজিয়ে দেবো
-সীমা চক্রবর্তীকখনো তো চাওনি কিছু,
অথচ চাওয়ার কত যতিচিহ্নহীন মাহেন্দ্রক্ষণ এলো গেলো…
একাই চেয়ে গেছি আমি, বেহিসাবি… এলোমেলো… ।
তোমাকে কিবা আর দিতে পারি….
পৃথিবীর ঝড় থেমে এখন ধূসর বেলা,
এপার ওপার শুধু ভাঙনের খেলা,
এ যেন এক ধ্বংসস্তুপ নগর…
সম্রাট নিরোর বাঁশি তে আবহ বিভোর…
সেই সুরে দেখো, কি অকরুণ ভাবে পড়ছে ভেঙে
আমাদের নাগরিক অবেলা….।এই ভাঙন একদিন জানি,
গ্রাস করে নেবে আমাদের আলো
তবুও তো সাজিয়ে যাচ্ছি দলছুট পংক্তিদের
যদি কন্ঠে তোলো….?
যদি শব্দের মিছিলে ইচ্ছেরা রং মাখে শেষের খেলায়,
কোনো এক আবেগতাড়িত মেলায়…..
ক্ষতি কি…. ?
তোমার তো নেই জীবনের সাথে কোনো সংঘাত,
আমার জন্য বরাদ্দ লক্ষ কোটি নির্ঘুম রাত।বলো…. এই অসময়ে আর কি দিতে পারি…
কিছু ভাঙা ভাঙা শব্দ-সারি… ?
সবই তো সেই অলিখিত নিয়মের অঙ্গীকারবদ্ধ।
তোমার অপেক্ষায় চাঁদের সলমাজরি,
আমাকে ছুঁতে চায় চিতার আগুন।
এটাই কি জীবন ….
নাকি, অপারগতার সাতকাহন….. -
কবিতা- আমার নববর্ষ
আমার নববর্ষ
-সীমা চক্রবর্তীযতবারই তুমি আমাকে ডেকেছো সময়ের ফাঁক ধরে,
ততবারই আমি মৌন থেকেছি আমার বিজন ঘরে।
পাওয়ার আমার যা ছিল বাকি
সবেতেই দেখি রয়ে গেছে ফাঁকি,
তবুও দেখো তোমার আকাশ রঙে রঙে আছে ভরে,
দেয়াল জুড়ে তারই ছায়া আমার বিজন ঘরে।অবসরে তুমি নিজের মতো ঘোরো পাড়া বে – পাড়া,
মুঠোর ফাঁকে ঝরুক সময়, নেই যে আমার তাড়া।
এ মনে তোমার আঁকবো ছবি
নই তো আমি তেমন কবি,
এই আমি আজও আছি সেই আমি, পাও না তাই সারা
তোমার বাঁশি হাঁপিয়ে মরুক, নেই যে আমার তাড়া।কখনো তুমি দূরে সরে গেছো, আবার এসেছো ফিরে,
উদাস এ’নয়ন দেখেও দেখেনি, থেকেছে আপন নীড়ে।
ক্লান্ত তুমি মানোনি তো হার
গুটিগুটি পায়ে ফিরেছো আবার,
কখনো আবার গিয়েছো মিশে হাজার রঙের ভীড়ে,
অনুরাগী এ মন সব রং মুঝে থেকেছে আপন নীড়ে।এভাবেই তুমি বারবার আসো বারবার ফিরে যাও
আশ্বাস রেখে আমার এ মন বারবার ছুঁতে চাও।
যা গেছে তা যাক না চলে
কি হবে মিথ্যে আক্ষেপে ঢলে,
স্মৃতির জটে জড়িয়ে অতীত কি এমন সুখ পাও…
কায়া বিহীন ছায়াকে কেন যে বারবার ছুঁতে চাও! -
কবিতা- একটু উষ্ণতার জন্য
একটু উষ্ণতার জন্য
-সীমা চক্রবর্তীরাত্রি বাড়লেই শুরু হয় স্বপ্নের সাতকাহন
ফসিল আলিঙ্গনের মসৃণতায় ঢাকা তনু-মন,
এখন একটু উষ্ণতার বড়ো প্রয়োজন।
আকাশ জুড়ে ঝুরো মেঘের পসরা
ঝরবে কিন্তু নিভবে না আগুন পোড়া ফাগুনে…
সূর্য বুঝি আলস্য অবসরে
কক্ষপথ থেকে যাচ্ছে সরে সরে
তুলোট শব্দরা জুড়তে চায় মুহুর্তের উষ্ণ আলিঙ্গনে।গুমোট দুপুরে হঠাৎ আসা তুমুল ঝড়ের শেষে…
ঝোরো গাছটা অসহায় দাঁড়িয়ে
বাঁচার রসদ পাতাগুলো হারিয়ে…
সময়ান্তরে আবার সবুজ হওয়া
ওর শাখাতেও লাগুক একটু উষ্ণতার ছোঁয়া।
রাত্রি জুড়ে লক্ষ তারার ভীড়
জ্বলছে আর পুড়ছে, তবুও…
অন্ধকার আকাশে আজও জমাট বাঁধা হিম,
মাপাজোখাও অপরিসীম…
আঙ্গুলের ডগা একবার ছুঁয়ে দেয় যদি
বয়ে যাবে এক উষ্ণ প্রসবী নদী।চরৈবতি ক্লান্ত জীবন দিগভ্রান্ত পথের বাঁকে
অপদস্থ শেষ মোহনায়, ইথারের আশায় থাকে,
দূর্বিষহ দিনযাপনে হেমলক করে পান,
নাটকের শেষটা লেখা হয় টান – টান…
চোখের জলে বুকের মরুর পিপাসা মেটাতে–
অবিশ্বাস্য ছায়ারা সারি দিয়ে আসে…
চক্ষু কোঠর পুড়ে হয় খাক,
সেই ছায়াদের কাছেও একটু উষ্ণতা জমা থাক।জীবন খাতায় চাওয়া পাওয়ার গাণিতিক হিসাব,
শেষে কিছুই তো হবে না গণ্য
শ্বাপদের মতো বেয়ে বেয়ে শুধু চলা,
দিন রাত্রি… কঠিন মাটির বুকে….
একটু উষ্ণতার জন্য। -
কবিতা – কি উপহার সাজিয়ে দেবো
কি উপহার সাজিয়ে দেবো
-সীমা চক্রবর্তীকখনো তো চাওনি কিছু,
অথচ চাওয়ার কত যতিচিহ্নহীন মাহেন্দ্রক্ষণ এলো গেলো…
একাই চেয়ে গেছি আমি, বেহিসাবি… এলোমেলো… ।
তোমাকে কিবা আর দিতে পারি….
পৃথিবীর ঝড় থেমে এখন ধূসর বেলা,
এপার ওপার শুধু ভাঙনের খেলা,
এ যেন এক ধ্বংসস্তুপ নগর…
সম্রাট নিরোর বাঁশি তে আবহ বিভোর…
সেই সুরে দেখো, কি অকরুণ ভাবে পড়ছে ভেঙে
আমাদের নাগরিক অবেলা….।এই ভাঙন একদিন জানি,
গ্রাস করে নেবে আমাদের আলো
তবুও তো সাজিয়ে যাচ্ছি দলছুট পংক্তিদের
যদি কন্ঠে তোলো….?
যদি শব্দের মিছিলে ইচ্ছেরা রং মাখে শেষের খেলায়,
কোনো এক আবেগতাড়িত মেলায়…..
ক্ষতি কি…. ?
তোমার তো নেই জীবনের সাথে কোনো সংঘাত,
আমার জন্য বরাদ্দ লক্ষ কোটি নির্ঘুম রাত।বলো…. এই অসময়ে আর কি দিতে পারি…
কিছু ভাঙা ভাঙা শব্দ-সারি… ?
সবই তো সেই অলিখিত নিয়মের অঙ্গীকারবদ্ধ।
তোমার অপেক্ষায় চাঁদের সলমাজরি
আমাকে ছুঁতে চায় চিতার আগুন।
এটাই কি জীবন ….
নাকি, অপারগতার সাতকাহন….. -
কবিতা- পালাই চল্
পালাই চল্
-সীমা চক্রবর্তীভেজা ভেজা হাওয়ার বেগ
সোঁদা গন্ধে ভরছে দিক,
এমন দিনে আমার চোখ
তোকেই জানি খুঁজবে ঠিক।
ঘন কালো ডাকছে মেঘ
নামলো বুঝি বৃষ্টি জল,
করছে মন কেমন কেমন
এবার আমরা পালাই চল।দ্রিমি দ্রিমি বাজছে মাদল
পাতা ঘেরা পিয়াল বনে,
নিষিদ্ধ নেশা জাগছে বুকে
চল ডুবি ওর আলিঙ্গনে।
দেখ না কেমন চারদিকে
ধারাপাতের অকূল ঢল,
এই সুযোগে চুপিসারে
এবার আমরা পালাই চল।ভাসছে দেখ জলের ভিতর
লজ্জা রাঙা তোর মুখ,
আমার চোখে লাগছে ঘোর
এটুকুতেই অনেক সুখ।
নয়তো এসব কথার কথা
ভাবিস না তুই আমায় ছল,
কালকের ভাবনা কাল হবে
এবার আমরা পালাই চল।কলা পাতার নৌকা গড়ে
আজকে যদি হই নিখোঁজ,
বন্দী সবাই আপন কুলায়
কেইবা আর নেবে খোঁজ।
আমার সাথে মন্দ হতে
রাজি কিনা আছিস বল,
থাকনা পড়ে মায়ার বাঁধন
এবার আমরা পালাই চল। -
কবিতা- গভীর রাতের নেশা
গভীর রাতের নেশা
-সীমা চক্রবর্তীরাতের আকাশ বড় মোহময়…
নেশা নেশা ঘোর লাগা,
নীরবেও কত কথা বলে যায়
সে কথা শুনবো বলেই আমার রাত জাগা।
থমথমে আকাশটাও থাকে আমার অপেক্ষায়,
রাতের গভীরতায়….
চঞ্চল চোখে স্মৃতিদের ভীড়
খামখেয়ালি ভাবনাগুলো বুকের ভিতর অস্থির,
কেবলই ডানা ঝাপটায়…এই দীর্ঘ রাত আমার একার…
ভেবেই ভালো থাকা,
রাতের আয়নায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া,
বাকি সময়ের সবটুকু তো জলজে ঢাকা।
জীবনটা এখন স্বচ্ছ ক্ষীণ স্রোতের মতো
রাতের চাদরে যে টুকু প্রাণ পায়
তাই নিয়েই মন সূর্যের আলোয় বসে
অন্ধকার দিয়ে রাতের দুঃখ সাজায়
যন্ত্রণাগুলো নীল হয় চাঁদের ছায়ায়…ঘুম নেই, তাই স্বপ্নও নেই…
রাত জাগা চোখে জমে অনিয়মের ক্ষত
বলতে না পারা কথারা রাতের তারা হয়ে
জাগিয়ে রাখে অবিরত।
এভাবেও টিকে থাকা যায় পৃথিবীর বুকে
বোবা কান্নায় মাথা ঠুকে,
আমার ভালোবাসার রাতের গভীরে অতি চুপিসারে…
নজরবন্দি শরীর থেকে একদিন, এরকম এক রাতে,
অধীর মনটা ঠিক পৌঁছে যাবে মুক্তির দ্বারে।নাগরিক জীবনে অনিবার্য বলে কিছু নেই,
সবই মিশেছে সেই অনিশ্চতাতেই….
তবু আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই,
একটা মরলে আরেকটা জন্মায়…
দলছুট মেঘেদের মতো…
চিন্তার জটে বিবর্ণ রাত মুখ ঢাকে
তারার আঁচল টেনে
আরেকটা দিন শুরু হয় রাত্রির আশায় দীর্ঘ প্রহর গুনে… -
কবিতা- অনীক্ষণ
অনীক্ষণ
-সীমা চক্রবর্তীযে অলীক প্রেম গেছো রেখে
সে প্রেমে ঢেকে গেছে স্বপ্নের বেলাভূমি
লতাগুল্মের মতো ছেয়েছে আঁখি-পটে মৌসুমি…
বেলা অবেলায় মেঘবৃষ্টির আদর মেখে…. ।
ছোঁয়া না ছোঁয়ার দ্বন্দ্বে বেঁধেছো পাঁকে পাঁকে
তাই বুঝি প্রতি পলক সম্মোহিত হয়ে থাকে।
অনুভবের গাঢ় স্নিগ্ধতায় রচেছি তোমার অবয়ব,
তোমার আবেগের সাতকাহন,
যদিও কল্পনার সাথে চির বৈরীতায় বাস্তব….।তবু যে ভালো লাগার বীজ বুনে গেছো
জান্তে অজান্তে….ঊষর প্রান্তে…
কে পারে এভাবে তাকে অনুভবের দুয়ারে আনতে…?
জীবনের অসাধ্য অঙ্কের নিগূঢ় দীর্ঘশ্বাসে…
অনেকাংশেই যায় না বোঝা নিত্যতার অভ্যাসে।
হলেই বা অদর্শিত…. অগোচরিত ….
তাও তোমার মোহনায় মিশে যেতে অক্লেশে
দিনের শেষে দ্বিধাহীন সুখ….
সোহাগ সিঁদুরে রক্তিম হবে নদী – মুখ
তুমি তোমার নন্দিত ছোঁয়া দিয়ে যেও ভালোবেসে… ।