-
কবিতা- এই উঠোন, এই কুয়োতলা
এই উঠোন, এই কুয়োতলা
-সুনির্মল বসুসেদিনের মতো আজও এই উঠোনে প্রতিরাতে এসে পড়ে জ্যোৎসনার রোদ্দুর,তাল বনের মাথার উপর চাঁদ ভেসে যায়, বাতাসে শিউলি ফুল সুগন্ধ ছড়ায়,
রাত গভীরে এই উঠোন, এই কুয়োতলা আবহমানকাল ধরে স্মৃতির গল্প বলে, মধ্যরাতে কারা যেন ঝুমকো লতার বনে হাঁটে,
বড় দীঘির পাড়ে সুপারি বনের ছায়ায় প্রেমিক প্রেমিকা ফিসফিস কথা বলে,
অরণ্য পাখি কর্কশ কন্ঠে ডেকে ওঠে,
কাঠ বাদাম গাছের মাথায় ঢাউস ঈগল উড়ে যায়,
গভীর রাতে অরণ্য লোক ভালোবাসার কথা বলে,
কত স্মৃতি জমা হয়ে আছে দীঘির জলে,
বাতাসে ভেসে যায় প্রেমের আশ্লেষ,
এই উঠোন, এই কুয়োতলা, দূরের অরণ্য কি ভালবাসার দেশ, দোলনচাঁপার বন বাতাসে দোলে,
মাধবীলতার বনে কার উদাসী আঁচল ওড়ে, মধ্যরাতে কারা ভেসে যায় ভালোবাসার ঘোরে,
আকাশে তারার মেলা, বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
মায়াময় প্রকৃতি দিচ্ছে ভালোবাসার ডাক,
কবে কখন কারা যেন হেঁটে গেছে বড়দীঘির পাড়,
জীবন থমকে থেমে আছে, কাকে সে কথা বলি আর,
এই উঠোন, এই কুয়াতলার উপর দিয়ে মধ্যরাতে চাঁদ হেঁটে যায়, প্রেমিক প্রেমিকার মুখের উপর চাঁদের আলো পড়ে, হাজার হাজার বছর ধরে কারা ভালোবাসার নতুন ইতিহাস গড়ে,
দীর্ঘ প্রলম্বিত বাতাস বয়ে যায় প্রতিদিন জীবনের ঘরে। -
কবিতা- যেভাবে যাওয়া আসা
যেভাবে যাওয়া আসা
–সুনির্মল বসুজীবনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মৃত্যু, সুখের পাশে জেগে থাকে দুঃখ,
শ্মশানে দাউ দাউ চিতা জ্বলে,বহতা নদীর বাতাস ভারী হয় ছাই ও ধোঁয়ায়,
নিঃশেষিত জীবন স্মৃতি রেখে যায়, জীবনে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি,
জীবনের গুঢ় রহস্য বোঝার আগেই মহা প্রস্থান,
তবু আকাশ মেঘ শিল্প আঁকে,
জ্যোৎস্নায় কাঠবাদাম গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদ ওঠে,
আকাশে ঝিকিমিকি তারাদের মিছিল,
নীল সমুদ্রে বাজে সমুদ্র নীল বাঁশির সুর,
ধীর মন্থর গতিতে নদী বয়ে চলে, সমুদ্র জলে ভাসে সাধের সাম্পান, মানুষ রচনা করে জীবনের গান,
পুরনো রাস্তায় হেঁটে যায় নতুন মানুষ,
জীবন কথাকলি রচনা করে, গাছগাছালির ফাঁকে সূর্য উঠে, প্রজাপতি, গঙ্গা ফড়িং ডানা মেলে বিলের জলে,
জীবন ও মৃত্যু কত কাছে,
তবু জ্ঞানপাপী মানুষ স্বার্থের মাতে,
জীবনের লেনদেন শেষে মানুষ ফিরে যায়
অনির্দেশ্য যাত্রায়,
ভুবন জুড়ে জীবনলীলা ভেসে যায়। -
গল্প- নীলাঞ্জনা, শুধু তোমার জন্য
নীলাঞ্জনা, শুধু তোমার জন্য
-সুনির্মল বসুনীলাঞ্জনার সঙ্গে দেখা বিশ বছর বাদে। আসলে, দুর্গাপুর থার্মাল প্রজেক্টের একটা কাজ দেখতে এখানে আসা।
চীফ ইঞ্জিনিয়ার অনুতোষ চৌধুরীর
অনুরোধে তাঁর বাড়িতে আসতে হল নিরুপমকে। নীলাঞ্জনা যে অনুতোষ চৌধুরীর স্ত্রী, এটা জানা ছিল না ওর।স্মৃতিতে ধাক্কা।
সেই নীলাঞ্জনা, নিরুপমের অতীত।
পরিচয়পর্ব সারা হল। নীলাঞ্জনার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। নিরুপম স্বাভাবিক হতে পারছে না।স্মৃতি পিছু টানছে।
ভার্সিটিতে এক সঙ্গে পড়তো ওরা। সাহিত্য সভায় গল্প পড়তো নিরুপম। নীলাঞ্জনার বাবা কোম্পানির ডিরেক্টর। প্রতিদিন এম্বাসেডর চেপে আসতো ও।
নীলাঞ্জনা যথেষ্ট সুন্দরী। ছেলেদের পাত্তা দিত না। সেই মেয়ে একদিন যেচে আলাপ করতে এসেছিল নিরুপমের সঙ্গে।
আমিতো বন্ধন রায়ের প্রেমে পড়ে গেছি।
বন্ধন রায় নিরুপমের গল্পের নায়ক। সেই প্রথম আলাপ।
তারপর রাখালদের ক্যান্টিনে, কফি হাউসে, বসন্ত কেবিনে কতবার কথা হয়েছে, কত অসংখ্য বার। রাতে গোল দীঘির পাড়ে বসে চাঁদের আলোয় জ্যোৎসনায় ভিজেছে দুজন, কতদিন।এক বিকেলে কফি হাউসে গিয়ে দু কাপ কফির অর্ডার দিতেই, নীলাঞ্জনা হঠাৎ বলেছিল, ওই দ্যাখো, অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি এসেছেন!
ওনার পাশের ভদ্রলোককে চেনো?
নাতো। ঠিক বলতে পারছি না!
উনি হলেন এক্ষণ পত্রিকার সম্পাদক নির্মাল্য আচার্য।
তাই বুঝি! আমি রেগুলার ওই পত্রিকা পড়ি।
আমি ইবসেনের নাটকের উপর ওনার পত্রিকায় একটা লেখা পাঠিয়েছি।
কফিটা ঠান্ডা হচ্ছে। খেতে হবে তো!
হু।
বাংলা ভাষায় তোমার প্রিয় কবি কে?
শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
দুজনই আমার প্রিয় কবি। সেই সঙ্গে আমি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নাম যোগ করছি।
ঠিক বলেছো। ওনার নাম বাদ দিলে, সেটা বিরাট অন্যায় হয়ে যেত।
এবার উঠতে হবে। লাইব্রেরীতে যাবো। কাল ভার্সিটিতে আসছো তো?
আসবো তো অবশ্যই। ইদানিং আমার বিয়ে নিয়ে বাবা-মা খুব উঠে পড়ে লেগেছেন।
আমাদের ভালবাসার কি হবে?
তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?
আমি মোটেই সে কথা বলিনি।আরেকদিন সন্ধ্যায় বসুশ্রী হলে সিনেমা দেখে বেরিয়ে নীলাঞ্জনা বলেছিল, গত দুদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি, আমার বুকের মধ্যে যে কি কষ্ট হচ্ছিল,
তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না।
ভালোবাসা মানে একটা ঝড়, বুকের মধ্যে সব সময় থমকে থামা ঝড়ের ইশারা।
তোমার কষ্ট হয় না, আমাকে না দেখলে?
হয় তো বটেই। কাছে না পেলে, মনে মনে তোমাকে কত অসংখ্যবার পেতে চেষ্টা করি।
মানে?
মানে, আমার চারদিকে তখন নীলাঞ্জনা ছায়াছবির মতো ঘুরে বেড়ায়। বলে, কষ্ট পেয়ো না, এইতো আমি তোমার কাছেই আছি। আমাকে ছুঁয়ে দ্যাখো!
অ্যাই, সব সময় ঠাট্টা ইয়ার্কি না?
নিরুপম হো হো করে হেসে ফেলে।কত কত দিন কেটে গেছে এভাবেই। সেইসব সোনালী বিকেলগুলো, মনোরম সন্ধ্যা গুলো চার জোড়া চোখে কত যে স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিল। স্বপ্নের মিনার, স্বপ্নের গম্বুজ, স্বপ্ন দিয়ে গড়া ভালবাসার রাজপ্রাসাদ।
অথচ, তারপর একদিন এলো, সব স্বপ্নের ইমারত ভেঙেচুরে খানখান। আজ সে সব অতীত।
কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে?
নিরুপম অতীত খুঁড়ে দেখতে চায় নি কখনো।নীলাঞ্জনাও স্বামীর সামনে অতীত পরিচয়ের কথা তোলেনি, নিরুপম উদাস থেকেছে।
এক সময় কফি মিষ্টি খেয়ে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।বিকেলে পার্টিতে আবার দেখা।
অনুতোষ রিসেপশনে ব্যস্ত।নীলাঞ্জনা কাছে এলো নিরুপমের।
আবার দেখা হলো,
তাইতো,
কুড়িটা বছর পার,
জীবন তো রাজধানী এক্সপ্রেস,
হুম,
সেসব দিন মনে পড়ে?
পড়ে, না পড়াই ভালো,
কেন?
শুধু শুধু পুরনো ক্ষতে হাত,
দোষটা কার?
কারো নয়,
মানে?
দোষটা ভাগ্যের,
বিয়ে করেছো?
প্রেমহীন বিয়েতে আমার বিশ্বাস নেই, তাছাড়া সময় পাই নি,
নিজেকে কষ্ট দাও কেন?
জানিনা, বলতে পারব না,
আমি কিন্তু অপেক্ষা করেছিলাম!
জানি, আমার পায়ের তলায় তখন জমি ছিল না,
আমার বাড়ি থেকে বিয়ের চেষ্টা চলছিল, হয়ে গেল,
আর, সেই রাতে আমি কলকাতা থেকে পালিয়ে সোজা ধানবাদ,
খুব কষ্ট হয়েছিল, তাই না?
পুরুষের অক্ষমতা তুমি বুঝবে না,
জানি, আন্দাজ করতে পারি,
ভালো হয়েছে, কেউ নেই, তাই কারো জন্য ভাবনার ঢেউ নেই,
তাই নাকি?
তুমি সুখী হয়েছো তো?
দেখে কি মনে হয়?
দেখে বোঝা যায় নাকি?
চলে যাচ্ছে বেশ,
মিস্টার চৌধুরী তো যথেষ্ট সফিস্টিকেটেড মানুষ।
তা ঠিক, তবে কি জানো, বিয়ে একটা অভ্যাস, একটা দায়বদ্ধতা, এই নিয়ে বেঁচে থাকা।আমার মনে হয়, তোমাকে পাইনি বলে, তুমি রোজ আমার কাছে আসো, যখন তোমাকে দেখি না, তখন তোমাকে আরো বেশি করে দেখি,
কাজের সূত্রে আসো না এখানে,
না, ভাগ্য যে দেয়নি, তাকে ঘুরপথে পেতে চাইনা,
তুমি বদলে গেছো নিরুপম,
হবে হয়তো,
আমার তো সব মনে পড়ে,
কি?
সেই সব পুরনো দিনের স্মৃতি, সেইসব মায়াবী রাত, গড়িয়াহাটে সন্ধ্যেটা কাটানো, ঝিলের পাশে পাশাপাশি হাঁটা, আলেয়া সিনেমাতে উত্তম সুচিত্রার ছবি দেখা, সব সব,
আমি জানলে, এখানে আসতাম না,
আমি তো ভুলে থাকতে চাই, তুমি এসে আবার সব কিছু মনে করিয়ে দিলে,
নীলাঞ্জনা, এই ভালো। সেই সব দিনগুলো আমার জীবনের ওয়েসিস, স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা যায় বেশ,
তুমি পারো, আমি পারিনা,
তুমিও পারবে,
কিভাবে?
ঝরা ফুলের গন্ধ কেমন জানো, দেখবে তার মধ্যেও ভালোবাসার সুগন্ধ লুকিয়ে থাকে। আমাকে ভুলে যেও, আমাকে মনে রেখো না, স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো!ততক্ষনে পার্টিতে ঘোষণা শোনা গেল, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস চৌধুরী, প্লীজ্ কাম অন স্টেজ।
নিরুপম দেখলো, নীলাঞ্জনা আর ওর স্বামী মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল। ভালো লাগছে, ওদের দুজনকে।
ভালো থাকো তোমরা। সুখের বৃষ্টি আসুক তোমাদের জীবনে। সেই সব দিন রাত্রি গুলো আমার কাছে স্মৃতির সংগ্রহশালা হয়ে থাক, নিরুপম মনে মনে বললো।
ভালো থেকো নীলাঞ্জনা। সুখী হও।
নীলাঞ্জনা, আমি আর আসবো না। যেটুকু পেলাম, সেটুকুই আমার স্বর্ণ কমল সঞ্চয়, যা পেলাম না, তা হয়তো আমার ছিল না।
আমার নিঃসঙ্গ জীবনে সেদিনের স্মৃতি গুলো গভীর মমতায় আগলে রাখবো আমি, নিজেকে বোঝাবো,
কিছু হারায় নি আমি। ভালোবাসা হারায় না কখনো।জীবনের বিভিন্ন মোড়ে বারবার শুধু তার অর্থ পরিবর্তন হয়। ঝরা ফুলের সুগন্ধ নিতে কজন জানে।
যে জানে, সে জানে।
তার কাছে বেঁচে থাকাটা প্রতি মুহূর্তে সানাইয়ের সুরের মতো বেজে বেজে যায়।
কজন সেই সুরের মাহাত্ম্য শুনতে পায়, যে শুনতে পায়, তার বেঁচে থাকাটা অন্য মাত্রা পায়।
নিরুপম নিজেকে বোঝালো, নীলাঞ্জনাকে পেলে,
প্রতিদিনের ধূলিমলিনতায় হয়তো এই ভালবাসার
মর্যাদা নষ্ট হতো, অথচ, ওকে পায় নি বলে, আশ্চর্যজনকভাবে আজ ওদের সেদিনের ভালোবাসা চিরকালের ভালোবাসা হয়ে রইলো, এই পবিত্র ভালোবাসা স্মরণ করলে, এক জীবন পার করে দেওয়া মোটেই শক্ত নয়, নিরুপমের এরকমই মনে হল।ততক্ষনে স্যান্ট্রো গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে ও দ্রুত গতিতে শহরের হাইওয়ের দিকে ছুটে চললো।
-
কবিতা- শেষের সেদিন
শেষের সেদিন
-সুনির্মল বসুশরতের সকালে যেভাবে শিউলি তলা থেকে ছোটবেলায় ফুল কুড়িয়ে নিতাম, সেভাবেই জীবনের অস্তাচল পর্বে ভালোবাসা কুড়িয়ে নিতে চাই দুহাত ভরে,
কে কিভাবে অন্যকে বঞ্চিত করে বৈভবের অহংকারে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করল, সেদিকে ফিরেও তাকাতে চাই না, সঙ্গে করে কিছু আনিনি, সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যেতেও পারব না,
আকাশ এত মুগ্ধতা দিল, সমুদ্র দিগন্ত থেকে দিগন্তের দিকে ছুটে গেল, ভোর বেলায় ফুলের সম্ভার চুপিচুপি ভালোবাসার কথা বলে গেল,
খালের জলে, বিলের ওপর, নদীর উতরোল ঢেউয়ে
প্রতিদিন কত ভালোবাসার কথা লেখা হলো,চাঁদের মালা পরা রাত, বর্ষণমুখর মেঘমেদুর আকাশ
বৃষ্টি হয়ে ভালোবাসা হয়ে পৃথিবীর উপর ঝরে পড়ল,ইত্যাকার ভালোবাসার মধ্যে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রতিদিন
মানুষকে কত কি শেখায়,অথচ বেড়ে চালাক মানুষ কিছু শিখল না,
পৃথিবীটাকে ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ ছোট করে ফেললো,
দ্যাখো আমি বাড়ছি, দ্যাখো আমি উঠছি,ওঠা নামার তফাৎটা আজকাল বোঝেন না অনেকেই, অথচ বিজ্ঞভাব, অন্যকে ঠকানো সহজ,
নিজে যে কবে থেকে হেরে ভূত হয়ে বসে আছেন,সেটা টের পেতে জীবন চলে যায়,
জীবনের শেষ স্টেশন এসে পড়ে,উত্তর পুরুষের ভাবী জীবনে অশান্তি আনবার জন্য
লোক ঠকানো সম্পদ জীবনকে বিষ জর্জরিত করে,সেদিন নিজের অহংকারী মুখটা নিজেকেই ক্রমাগত
ঠাট্টা করে যায়। -
কবিতা- তুমি চলে যাবার পর
তুমি চলে যাবার পর
-সুনির্মল বসুকাল রাতে তুমি চলে যাবার পর সারারাত অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়েছিল,
কাল রাতে তুমি চলে যাবার পর আমি সারারাত ঘুমোতে পারিনি,কাল রাতে দমকা হাওয়ায় ঘরবাড়ি কেঁপে উঠেছিল,
দূরের তালবন, কাঁঠালিচাঁপার গাছ, বাঁশবন দুলে উঠেছিল,সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমিতো কম চেষ্টা করিনি, তবু,
কে যেন তখন মনের মধ্যে বলে উঠলো,
যে বাতাস ভুল সংলাপ বলে, তার কাছে ভালোবাসার কথা বলতে যেও না,দেখছো না, এখন প্রজাপতিরা বিলের উপর মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে না, ধানক্ষেত মরা সাপের মতো শুয়ে আছে, নদীও নাব্যতা হারিয়েছে, পাহাড় নীরব দর্শক, রাতের নীল জোছনা স্বপ্ন ছড়াচ্ছে না,
তবে তুমি কার কাছে ভালবাসার জন্য প্রার্থী হও,
তবে তুমি কার কাছে ভালোবাসার জন্য হাঁটু গেড়ে বসো, এসব তোমাকে মানায় না,এখনো সময় আসে নি,
এখনো ভালোবাসা আলোকবর্ষের ওপারে,
ইউক্যালিপটাস গাছের মাথা ছাড়িয়ে পাহাড়ের ওপারে তার অবস্থান,রাত শেষে সে আসবে, সে আসবে রাজ বেশে,
নদী ও গাছপালা এবং অরণ্য পাখির গান তার আসার কথা বলে দেবে, তখন ঝিরঝিরি বাতাস বইবে, কৃষ্ণচূড়ার বন লালে লাল, কদম ফুলের বনে
ফিঙ্গে পাখি লেজ ঝুলিয়ে বসবে,নদীর ওপর ভোরের সূর্য উঠবে, দীঘিতে দেখা দেবে পদ্ম শালুক, কাঠবাদাম গাছে বউ কথা কও পাখি গান গাইবে, কাঁঠাল গাছে এসে বসবে বসন্তবাউরি,
যে বাতাস ভুল সংলাপ বলে, তার কাছে ভালোবাসার কথা বলতে যেও না,বরং অপেক্ষা করো, আগামী বসন্ত দিনের,
সেদিন শিমূল বন পেরিয়ে কৃষ্ণচূড়ার বনে এসো,
দেখা হবে, কথা হবে তোমার আমার, জানি, একদিন আমার কাছে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে তুমি,ভালোবাসার বিশ্বাস থেকে এ কথা বলছি,
আর ,আমাদের আরণ্যক প্রেম নিয়ে কবিতা লিখবেন, একালের কোনো তরুণতম কবি।তুমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমার জন্য নির্ঘুম রাত্রিগুলো তোলা থাকুক।
-
গল্প- নির্জন নদীতীর, নীল সন্ধ্যা, ভালোবাসা
নির্জন নদীতীর, নীল সন্ধ্যা, ভালোবাসা
-সুনির্মল বসুকথা হচ্ছিল, নদীর কিনারে জেটির পাশে দাঁড়িয়ে,দুপাড়ে তখন সাঁঝ বাতি জ্বলে উঠেছে। নদীর ওপর শান্ত চাঁদের আলো। দু একটা নৌকো ভেসে যাচ্ছিল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল, মাঝিদের জলজ সংসার।
কতক্ষণ এসেছো?
আধঘন্টা হবে।
সরি, আমার একটু দেরি হয়ে গেল।
কেন?
আগের ট্রেনটা পাইনি।
অফিসের কি খবর?
কাজের প্রেসার আছে।
দুজনেই চুপ।
তোমার লেখালেখির কি খবর?
লিখছি। কিছু একটা খুঁজছি। যেখানে পৌঁছবার কথা, সেই জায়গাটা আজও খুঁজে পাই নি।
বুঝতে পারলাম না।
অতৃপ্তি। ভালো লিখতে না পারলে, আমার কষ্ট হয়।
লোকে তো তোমার লেখার খুব প্রশংসা করে।
তাই নাকি!
হ্যাঁ তো।
আমি নিজের লেখা নিয়ে খুশি নই। অথচ, খুশি হতে পারলে, কি ভালো যে লাগতো।
লেখায় এত নতুন নতুন ভাবনা তোমার আসে কি করে?
আমার ব্যর্থ অতীত, সেদিনের অপমান, এত কান্না,
যা কাউকে কখনো বলা হলো না, সেগুলোই লিখি।
পরাজয়ের কথা লিখে কি লাভ?
জানিনা, বলতে পারব না।
সেদিন যারা জিতেছিল, তারা কি তোমার বর্তমান অবস্থার কথা জানে।
তা কি করে বলবো! তবে এটা ঠিক যে,
কি?
তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
কেন?
সেদিন ওরা আমায় অপমান না করলে, আমি হয়তো কখনো কলম ধরতাম না।
তুমি কি স্বাতীর কথা বলছো?
সে আমার অন্ধ অতীত। মনে করতে চাই না সেসব।
তবু কাউকে কাউকে তো বলতেই হয়। না বললে বাঁচা যায় না।
জানি। ও তখন বেটার খুঁজে যাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারিনি। সাত বছর ধরে আমার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করে, হঠাৎ একদিন আমার হাতে প্রজাপতি আঁকা বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিল।
তারপর?
অগ্নিসাক্ষী করে যখন অভিনব চৌধুরীর সঙ্গে ওর বিয়ে হচ্ছিল, আমি সেই আগুনে আমার ভালোবাসাকে পুড়ে যেতে দেখেছিলাম। সেই থেকে ভালোবাসা আমার কাছে জলাতঙ্ক। আমার জাহাজে দাউ দাউ আগুন।
তোমার লেখায় তাই বারবার ভালোবাসার মধ্যে কান্না ফুটে ওঠে।
হয়তো হবে।
নিজেকে পুড়িয়ে তবু কেন তুমি ধূপের গন্ধ ছড়াও?
বলতে ইচ্ছে করে। না বলে নিজে সুস্থ থাকতে পারি না। তাই ক্রমাগত নিজেকে খুঁড়ে চলি। আমি বাইরে গল্প খুঁজি না। আমার মধ্যে, আমার চারপাশের মধ্যে, আমার অভাবের দিনগুলোর অতীতে গল্প খুঁজি।
একটা কথা বলবো?
বলো।
ওই আঘাতগুলো না পেলে, আজ তুমি লেখক হতে পারতে না।
যারা ভালোবাসার কথা বলে মিথ্যা নাটক করে একদিন স্বপ্নের ভালোবাসার বাড়িটা ভেঙে দিয়ে যায়, তাদের আমি মানুষ মনে করি না।
কি বলছো তুমি?
ঠিকই বলছি। ভালোবাসা খুন করা আর মানুষ খুন করার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না।
শুনেছি, আজকাল স্বাতী নাকি তোমার লেখার অনুরাগী পাঠিকা। আমায় বলছিল, একদিন তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
কিন্তু আমি ভাঙা কাঁচের আয়নায় মুখ দেখি না। আমার কাছে এলেও, ওকে ফিরে যেতে হবে।
মানুষকে ক্ষমা করতে শেখো।
কেন ক্ষমা? কিসের জন্য ক্ষমা?
ভুলে যাও।
কেমন করে ভুলি? কত বছর হয়ে গেল, পথের মোড়ে কাঠফাটা রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে আছি কতকাল।
আমার জন্য কোন ছায়াময় বৃক্ষ নেই। কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই।
তুমি কি আমার কথা একবারও ভাববে না?
কি বলতে চাইছো তুমি?
আমার বাবা শান্তিনিকেতনে প্রফেসর ছিলেন। উনি ছেলেবেলায় আমাকে বলতেন, আমার নাকি খুব
নাক উঁচু। সবাইকে পছন্দ হয় না, সব জায়গা পছন্দ হয় না।
তাহলে?
কিন্তু যেদিন থেকে তোমার লেখা পড়তে শুরু করলাম, সেদিন থেকে মানুষটাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছি। কবে কখন কিভাবে এসব হলো, নিজেও বুঝতে পারিনি।
মোনালিসা, তুমি দেখি, সুনীল গাঙ্গুলীর কবিতার মতো করে কথা বলছো!
কি?
সুনীলদা লিখেছেন, ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার,
যেন মায়াপাশ।
শোনো অগ্নিভ, এত বড় বিরাট পৃথিবীতে ভালোবাসা ঠিক কোথাও আছেই আছে। শুধু খুঁজে নিতে হয়।
তাই কি?
ভালোবাসা নিয়ে স্বাতী যেটা করেছে, জেনে নাও, সে কি সত্যিই সুখে আছে?
কি বলতে চাইছো তুমি?
অন্যকে ঠকিয়ে বড়লোক বাড়ির বউ হওয়া যায়, সত্যিকারের ভালোবাসা তো অন্য পৃথিবীর গল্প বলে।
কি সুন্দর করে বললে!
অনেক রাত হল। নতুন শীত এসেছে।
তোমার শীত করছে, মোনালিসা?
নাহ। আমরা কি আবার নতুন করে পথ চলা শুরু করতে পারিনা?
আমাকে একটু একলা থাকতে দাও। ভাঙ্গা এ মন যদি কোনদিন সাহারা মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে ওয়েসিসের সন্ধান করে, সেদিন আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো। তুমি কি অপেক্ষা করতে পারবে?
পারবো পারবো।
ওরা তখন বাড়িতে ফিরছে। স্মৃতিতে ফিরছে। হয়তো ভালোবাসাতেও ফিরছে।জীবন পথের কিনারায় ভালোবাসার একটা ঘর কবে থেকে এভাবেই খুঁজে যাচ্ছে মানুষ।
-
কবিতা- দৃষ্টিপথের পাঁচালী
দৃষ্টিপথের পাঁচালী
-সুনির্মল বসুহেমন্তের পাতা ঝরার দিনে যে পথ দিয়ে তুমি একলা হেঁটে গিয়েছো হে প্রেমিক, শীতের হিমেল স্পর্শ পেরিয়ে বসন্ত দিনে কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়ার পাশে সেই অতীত স্মৃতি ভাসে,
জীবন এমনই, বারবার পথ বদলায়, ছবি বদলায়, সুখ-দুঃখের পালাবদল ঘটে,
উতরোল নদীপথ, খাঁড়ি ও মোহনা চেয়ে দ্যাখে,
জাহাজ মাস্তুল উড়িয়ে অনির্দিষ্ট যাত্রায় এগিয়ে যায়,
ভেসে যায় মানুষের জীবন পথ,
পুরনো স্মৃতিকে কে আর মনে রাখে হায়,
পথে নামার আগে সেই পথ কোথায় তোমায় নিয়ে যাবে, সে কথা কারও জানা নয়,
আকাশ নদী ও বিজন অরণ্য পথ চেয়ে দেখেছিল,
দৃশ্যপট বদলায়, জীবনের সাকিন ঠিকানা বদলে যায়, তবু জীবনের ভবিতব্য কাকে যে কোন পথে নিয়ে যায়,
হেমন্তের ঝরা পাতার দিনে যে হতাশ প্রেমিক বসন্তদিনের দিকে চেয়ে থাকে, কৃষ্ণচূড়ার দিনে সে কি আর অতীতকে মনে রাখে,
নদীতে সাম্পান ভেসে যায়, শ্মশানে চিতার আগুন জ্বলে, পুরনো পথে হেঁটে যায় নতুন মানুষ,
সকাল দুপুর বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা আসে, দূর গ্রামে সাঁঝের প্রদীপ জ্বলে,
আকাশে একটা দুটি তারা জ্বলে ওঠে, রাতের পালকি চড়ে চাঁদ আসে,
হেমন্ত দিন থেকে বসন্তে ফিরে যাবার মতো সকাল সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসে,
আসা যাওয়াই জীবনের সরল সমীকরণ,
চলতে চলতে পথে একদিন ফুরিয়ে যায়,
পথের ওপর দীর্ঘ প্রলম্বিত ছায়া পড়ে, সেই ছায়া আসল মানুষটাকেও ছাড়িয়ে যায়,
তখন জীবনসঙ্গী স্মৃতিমালা, সাফল্য ব্যর্থতা ছাপিয়ে তখন মধ্যরাতে স্মৃতিগুলো একা একা কথা বলে,
দীঘল দীঘি, উত্তাল নদী, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র তখন একই ভাবে বয়ে যায়,
সাধের সিন্দুক ফেলে জন্ম পথিক মানুষ তখন অন্য লোকে অন্য বিশ্বাসে নতুন সংকেতে একলা হেঁটে যায়,
তারার আলোর মালা পরা রাত্রি, একলা চাঁদ, কুয়াশায় ঢাকা আকাশ অপার বিস্ময় নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথিবীর এই দৃশ্য বদল চেয়ে দ্যাখে। -
কবিতা- দৃষ্টিপথের পাঁচালী
দৃষ্টিপথের পাঁচালী
-সুনির্মল বসুহেমন্তের পাতা ঝরার দিনে যে পথ দিয়ে তুমি একলা হেঁটে গিয়েছো হে প্রেমিক, শীতের হিমেল স্পর্শ পেরিয়ে বসন্ত দিনে কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়ার পাশে সেই অতীত স্মৃতি ভাসে,
জীবন এমনই, বারবার পথ বদলায়, ছবি বদলায়, সুখ-দুঃখের পালাবদল ঘটে,
উতরোল নদীপথ, খাঁড়ি ও মোহনা চেয়ে দ্যাখে,
জাহাজ মাস্তুল উড়িয়ে অনির্দিষ্ট যাত্রায় এগিয়ে যায়,
ভেসে যায় মানুষের জীবন পথ,
পুরনো স্মৃতিকে কে আর মনে রাখে হায়,
পথে নামার আগে সেই পথ কোথায় তোমায় নিয়ে যাবে, সে কথা কারও জানা নয়,
আকাশ নদী ও বিজন অরণ্য পথ চেয়ে দেখেছিল,
দৃশ্যপট বদলায়, জীবনের সাকিন ঠিকানা বদলে যায়, তবু জীবনের ভবিতব্য কাকে যে কোন পথে নিয়ে যায়,
হেমন্তের ঝরা পাতার দিনে যে হতাশ প্রেমিক বসন্তদিনের দিকে চেয়ে থাকে, কৃষ্ণচূড়ার দিনে সে কি আর অতীতকে মনে রাখে,
নদীতে সাম্পান ভেসে যায়, শ্মশানে চিতার আগুন জ্বলে, পুরনো পথে হেঁটে যায় নতুন মানুষ,
সকাল দুপুর বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা আসে, দূর গ্রামে সাঁঝের প্রদীপ জ্বলে,
আকাশে একটা দুটি তারা জ্বলে ওঠে, রাতের পালকি চড়ে চাঁদ আসে,
হেমন্ত দিন থেকে বসন্তে ফিরে যাবার মতো সকাল সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসে,
আসা যাওয়াই জীবনের সরল সমীকরণ,
চলতে চলতে পথে একদিন ফুরিয়ে যায়,
পথের ওপর দীর্ঘ প্রলম্বিত ছায়া পড়ে, সেই ছায়া আসল মানুষটাকেও ছাড়িয়ে যায়,
তখন জীবনসঙ্গী স্মৃতিমালা, সাফল্য ব্যর্থতা ছাপিয়ে তখন মধ্যরাতে স্মৃতিগুলো একা একা কথা বলে,
দীঘল দীঘি, উত্তাল নদী, তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র তখন একই ভাবে বয়ে যায়,
সাধের সিন্দুক ফেলে জন্ম পথিক মানুষ তখন অন্য লোকে অন্য বিশ্বাসে নতুন সংকেতে একলা হেঁটে যায়,
তারার আলোর মালা পরা রাত্রি, একলা চাঁদ, কুয়াশায় ঢাকা আকাশ অপার বিস্ময় নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পৃথিবীর এই দৃশ্য বদল চেয়ে দ্যাখে। -
কবিতা- ভালোবাসার রাত
ভালোবাসার রাত
-সুনির্মল বসুনারকেল গাছের ফাঁকে রূপসী চাঁদ ভেসে যায়, দূরের নক্ষত্রেরা চেয়ে থাকে, রাত জেগে থাকে, নিঝুম প্রকৃতি চেয়ে থাকে,
আমার চোখে ঘুম নেই, আমি জানি, আজ সারারাত তুমিও জানালার কাছে জেগে আছো,
পাহাড়িয়া বাংলোয় তোমার ঘরের আলো জেগে আছে,
সেগুন মঞ্জরীতে কোয়েল পাখির ডাক শোনা যায়,
আলো-আঁধারিতে প্রকৃতির লোক যেন থমকে আছে,
শিরীষ বনে হাওয়ায় দোলা, ঝাউবনে মৃদুল বাতাস,
তুমি কি জানালায় বসে আমার কথা ভাবছো,
কী আশ্চর্য,
আমি কেবল তোমার কথাই ভেবে চলেছি,
তোমার কাজল কালো চোখ, ঢেউ খেলানো কেশরাশি মনে পড়ছে,
মনে পড়ছে, তোমার ঢেউ খেলানো বাহারী শাড়ির জরির আঁচল, কপালে সবুজ রঙের টিপ,
রমেশ পালের দুর্গার মতো মুখের হাসি,
এখানে সময় থমকে থামুক, ভালোবাসার রাত বিনিদ্র জেগে থাকুক,
দূরে ঝরনার জলে রাত পরীরা উড়ে যাক,
অরণ্য পাখির গানে বাতাস মুখরিত হোক,
পাহাড়িয়া বাংলো থেকে সমতল ভূমি এই গোপন ভালবাসাকে স্বাগত জানাক,
একদিন পৃথিবীতে আমি তুমি থাকবো না,
এই রাতটাও মুছে যাবে,
কিন্তু রাতের স্মৃতি সারা জীবন জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকবে,
বহুদিন পরে, কোনো নতুন প্রেমিক প্রেমিকা এসে বলবে,
দ্যাখো, কেমন করে ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়,
দ্যাখো, কিভাবে দুজনের ভালোবাসা চাঁদনী রাতে
সারা জীবন স্বপ্নের মতো জেগে থাকে,
আর, প্রতিদিনের জীবনে কিভাবে যে অমল আলো ছড়িয়ে যায়। -
কবিতা- মহাকাব্যের খোঁজে
মহাকাব্যের খোঁজে
–সুনির্মল বসুমাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়া এসে মানুষের সবকিছু ওলোট পালট করে দেয়,
মাঝে মাঝে বসন্তের বাতাস এসে মানুষের জীবনে খুশির স্রোত বইয়ে দেয়,
জীবন বড় অনিশ্চিত, জীবনে খুশির সময় টুকু বড় কম,
তবুও ক্ষমতার দম্ভ, ঈর্ষা ইত্যাদি সমূহ মানুষের জীবনে অকারণ অসুখ আনে,
সুখ নীলকন্ঠ পাখির মতো, এই আছে, এই নেই,
অথচ, প্রাত্যহিক স্মৃতির খাতায় একজন অদৃশ্য কবি জীবনের গল্প গাথা লেখেন,
নদীর ঢেউয়ের মতো জীবন বয়ে যায়, কান্না হাসির দোল দোলানো জীবন,
প্রকৃতি আনন্দের বেহাগ রচনা করে, আকাশ আলো নদী পর্বত ঘিরে কত তার উচ্চকিত আয়োজন,
জীবনের গভীর সত্যটিকে অনুভব করা খুব কঠিন,
আড়াইশোর উপর উপন্যাস লিখে মৃত্যুর আগে সমরেশ বসু বলেছিলেন,
জীবনটাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না,
শেষ পর্যন্ত জীবন এক রহস্যময় দুর্গম পথ,
পথের শুরুটা হয়তো জানা যায়, শেষটুকু কখনোই নয়,
স্বার্থসংঘাত তো অনেক হলো,
পৃথিবীর কাছে ভালোবাসা শিখে নাও, একমাত্র ভালোবাসাই বেঁচে থাকার পরম সত্য তোমাকে একদিন ঠিক বুঝিয়ে দেবে,
মাঝে মাঝে ভালোবাসা এলে, এই পৃথিবীটা একদিন ঠিক কবি জন মিলিটনের প্যারাডাইস রিগেনড মহাকাব্য হয়ে যাবে।