-
কবিতা- “অধরা ভালোবাসার উপাখ্যান”
“অধরা ভালোবাসার উপাখ্যান”
–সুমিতা পয়ড়্যাভালোবাসার রুদ্ধদ্বার খুলে দাও প্রহরী!
স্বপ্নের অরূপ রতনকে সাজিয়েছিলাম সংগোপনে
গাঁথা মালা পরাবো বলে হারিয়েছি বারংবার।
কখনো অভিমানের সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে
কখনো অপরাজিতা জন্ম জন্মান্তরে;
যতবার ভালোবেসে গড়েছি অন্তস্তলে শাশ্বত চিরন্তন সত্যকে–সে আমার প্রেম।
এক দুর্নিবার আকর্ষণ!
অধরা জ্যোৎস্না ভেসে যায়—
অধরা সময় বয়ে চলে আপন স্রোতে–
চেতনা জুড়ে শুধু এক সৌম্যকান্তি অবয়ব–
যা অনন্য সুন্দর।অধরা মেঘে মেঘমল্লার রাগে তানের ঝড় ওঠে
পাহাড়ি মেঘে ঘন কালো কুয়াশার আবরণ
অস্থির সময়ে উষ্ণতার আলতো ছোঁয়া
তবু অধরা বাস্তব মুহূর্তগুলোকে ভাগ করে,
সমস্ত সত্তা জুড়ে অধরা ভালোবাসার উপাখ্যান,
দূরে দুরান্তে ছুটে চলা অধরা ভালোবাসার গন্তব্যহীন ব্যাকুলতায়।
ভরসার জলাধার পূর্ণ অধরা ভালবাসার প্লাবনে
অবিরাম অশ্রুধারা অধরা বিশ্বাসে
হৃদপিন্ডের অধরা গতি তখনো প্রাবল্যের কথা বলে।ওগো চির সখা কালের প্রবাহে এগিয়ে চলেছি চিরন্তন সত্যের দিকে—
এখনো বিষন্নতার একাকিত্বে দাঁড়িয়ে দিন গোনা
নীল আকাশের নিচে নিঃসঙ্গতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
গভীর রাত্রির নির্জনতায় অসহায়তার গান।
একবার ভালোবাসার রুদ্ধদ্বার খুলে দেখো–বিষন্নতার ছোঁয়াচ পার হওয়া চাহনি!
আর রুদ্ধদ্বার নয়; অধরা অতৃপ্তের অনাবিল স্বপ্নে জাগরনের গান–
সুরের মূর্ছনায় চির জাগরুক হয়ে উঠুক।
সমাগত প্রায় বসন্তের দোলা লাগুক প্রাণে।
অধরা ভালোবাসা ভেসে যাক চরাচরে।
সুন্দর হয়ে উঠুক সত্যেরা।
সৃষ্টি হোক কল্যাণকর।দিগন্তব্যাপী বিরহী মনে চাতকের উদাস চাহনি
অধরা স্রোতে অপেক্ষারা ডুব দেয় আঁধারে,
ক্লান্ত চোখে অধরা ঘুম; শুধু অপলক চেয়ে থাকা,
মন জুড়ে ভালোবাসার অধরা স্বপ্নরা রাতের তারার মত খসে পড়ে এক অলিক কল্পনায়
জন্মেছে অধিকারবোধ শেষ বিকেলের এক চিলতে আলোয়।
অধরা বন্ধন বাঁধা পড়ে আছে রূপকথায়–
সোনার কাঠি রুপোর কাঠি ছুয়ে দিলেই অনুভবের দ্বারে অধরা মুক্তির আনন্দ।ভালোবাসার রুদ্ধ দ্বার খুলে দাও প্রহরী!
একবার দক্ষিণা বাতাস আসুক ছিন্ন ভিন্ন হৃদয়ে
একবার কাছাকাছি এসে দোঁহে মিলি
একবার নীরবে নিভৃতে ভালোবাসি
এক অদ্ভুত মুগ্ধতা খুঁজে ফিরি এই গোপন অধরা ভালবাসায়। -
কবিতা- লিখেই কিন্তু তোমায় দেব
লিখেই কিন্তু তোমায় দেব
–সুমিতা পয়ড়্যাইদানিং তোমার বদলে যাওয়া কথাগুলো আমার সঙ্গী
ভাবতে ভাবতে আমি হাজার মাইল পেরোতে পারি
কখনো হাসি, কখনো কাঁদি একার পথ চলাতে।
সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম-
ভালোবাসার মোড়কে তা অনেক দামি!
তাই ছুঁতে পারিনি কখনো কোনদিন!
এক বিরহী মন নেশায় বুঁদ হয়ে কত আঁকিবুকি আঁকলো-।
ওই সাদা ক্যানভাসটাতে!
সুপ্ত আগ্নেয়গিরিতে যদি হঠাৎ স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়!
হৃদয় মাঝে যে শূন্যতার চাপা আর্তনাদ…
তা ফিসফিস করে বলে ওঠে-
কবিতা লেখ; কবিতা…
তাই লিখলাম একটানা।
কতশত অপেক্ষায় প্রহর গুনেছি
প্রতীক্ষার আড়ালে একলা একা পথ চলেছি
সৃজনশীলতায় মেতেছি
উন্মত্ত ঝর্ণা যেমন ফল্গু ধারায় বয়ে চলে
দুঃখ কষ্ট চাপা পড়ে থাকে উচ্ছ্বাসে
ঠিক তেমনই….
স্মৃতির অতল গভীরে স্বপ্নগুলো কেমন যেন মগ্ন হয়ে থাকে!
সে কি উন্মাদনা!
সত্য শক্তির এক নিদারুণ মনোলোভা অরূপ রতন।
ভালোবাসার প্রগলভাতে অবগাহন।
সেই অধরা অমরত্বের শিহরণে কম্পিত আমি
কবিতা লিখছি; লিখে চলেছি একটানা
সেই লেখা অভিমানীর চোখের জলের
এক চিলতে ভালোবাসার মাদকতা।
যত্ন করে রেখেছি সব লিখে…
কেন? জানতে চাও না!
কারণ, লিখেই কিন্তু তোমায় দেব।
এই আশে। -
কবিতা- লোভের আগুন
লোভের আগুন
-সুমিতা পয়ড়্যাসভ্যতা যখন ক্রমশ উচ্চশিক্ষার হারে
মানুষের মানবিকতা ক্রমশ তখন পাশবিকতার তরে।
পরিবর্তন যখন অনিবার্য
তখনও রঙগুলো সব এলোমেলো।
এমনটা কেন!
বিবর্তনের নাকি বৈচিত্র থাকে!
পরিবর্তনের বিভিন্ন রূপ থাকে।
যখন আধুনিক সভ্য সমাজে দাবি ওঠে—
পণ নেব না; পণ দেব না।
তখন ও লোভ-লালসা যে মনের ঘরে গাঁথা
এবড়ো কঠিন সামাজিক ব্যাধি
এ বড় কঠোর কু-প্রথা
এ বড় বাস্তব কুসংস্কার।নারী-জীবনের অনগ্রসর যৌতুক ব্যাধি!
যখন পণপ্রথার হাতে নির্যাতিত অবহেলিত,
যখন আত্মহত্যায় জীবনের চরম প্রাপ্তি,
যখন অপমানের কষাঘাতে জর্জরিত,
তখনো সমাজের প্রচলিত বিধি-বিধান—
“স্ত্রীধন” যৌতুকের বিলাসিতার অঙ্গ।
বয়স বেড়ে গেলে জাত চলে যায়
এক ঘরে রাখাই যখন নিয়ম
তখনও ছিল এইরকম—
কেউ গায়ে আগুন দিচ্ছে
কেউ হতাশায় দিনে দিনে মৃত্যুর পথে পাড়ি দিচ্ছে;
কেউ মুখ বন্ধ করে নিষ্পেষণ সহ্য করছে
কেউবা আরও একটা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।
সামাজিক বর্বরোচিত নিয়মে বাধা সমাজ
খন্ডাবে সাধ্য কোথায়!পণপ্রথা নারী জাতির জীবনে অন্ধকারে এক অমোঘ মৃত্যু!
বিদ্রূপের নির্যাতনের বৃত্তাবদ্ধে সমাজ দর্পণের আলো।
এত করুণ বিসর্জন জীবনের যেন জীবন্ত সংকট!দেখে শিখে পড়ে শুনে পণের হই হই
তবু পণের চাহিদা বাড়ে বিবাহে হই চই।পণপ্রথা দীর্ঘদিনের কুপ্রথা।
নির্যাতিত মহিলা; আইন নিষিদ্ধকরণ
তবুও ফাঁকফোকর পণেই নারীর মরণ।
হায়রে সমাজ; হায়রে শিক্ষা
লোভের হাতিয়ারে নিচ্ছে পণ
এমন মারণব্যাধি বিনাশ কবে হবে
সভ্য সমাজে এ যেন চির বিস্ময়! -
কবিতা-“নতুন দিগন্ত”
“নতুন দিগন্ত”
-সুমিতা পয়ড়্যাআগামী পৃথিবীকে আমি দিয়ে যেতে চাই
আমার ভালোবাসা, স্নেহ আর শুভেচ্ছা।
আমার সম্পদ এইগুলোই—
এছাড়া আমার আর কিছু দেবার নেই।
স্রষ্টার কাছে আমার প্রার্থনা–
আগামীর পৃথিবীতে কোন বিবাদ নয়,
কোন বিরোধ নয়, কোন খন্ড চিত্র নয়,
কোন মিথ্যা নয়, নয় কোন ধর্মের দলাদলি।
বিরাজ করবে শ্রেষ্ঠ মানব সন্তান,
বিরাজিত হবে পবিত্র শান্তি;
প্রতিস্থাপন হবে সত্য- সুন্দরের,
মানুষ আর প্রকৃতির মেলবন্ধনে হবে বৈচিত্র্যময় আলো।
মানবতাই হবে শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
উঁচু-নিচু, সাদা-কাল বৈষম্যের ইতি ঘটবে,
ইতি ঘটবে অন্ধকার কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের;
আলোকের ঝর্ণাধারায় চেতনারা রাজ করবে।
সুন্দর পৃথিবী, স্বপ্নের পৃথিবী থাকবে নিজস্ব সত্তা নিয়ে।
থাকবে না দূষণ; অলংকৃত হবে প্রকৃতির উচ্চাসন।
হে স্রষ্টা তোমার সৃষ্ট পৃথিবী আগামীর নতুন স্বপ্নে বিভোর হবে!
এই শুভ কামনায় রেখে যেতে চাই।
আগামীর পৃথিবী ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক
সুন্দরের সাম্রাজ্যে গড়ে তুলুক তার দিগন্ত!
ঐক্ষণেই সূচনা হোক নতুন দিগন্তের। -
কবিতা- “পিয়াসী মন”
পিয়াসী মন
-সুমিতা পয়ড়্যাঝরা পাতা গো আজ আমি তোমার দলে—
দক্ষিণ সমীরণে সঙ্গীত বেজেছে তালে তালে,
উদাস এ মন ঘোরে চঞ্চল বাতাসে
ফাগুনের হাওয়া বয় রঙে- রঙে, ঘাসে ঘাসে।
অনেক হাসি মুখরিত আজ, কুঞ্জ কাননে দোলে
ব্যাকুল হৃদয়খানি আজও ভাসে অতীতের অশ্রুজলে।
শিমুল,পলাশের রঙে রঙে সেজেছে ফাগুন
প্রকৃতি অশোক, মাধবী, কাঞ্চন, রঙ্গনের রঙে আগুন;
এক ফাগুনের মনের কথা বলব বলে….
খুঁজি তারে, কাঁদায় বলে, নতুন কালের ফুলে।
চোখের মিলন মেলায় খেলেছিল কোনদিন,
মিলব আবার তার সাথে আজ বাজিয়ে বীণ।
এক বসন্ত যায়,অন্য বসন্ত আসে….
কোন সুদূরের অতীত খালি স্মৃতি সাগরে ভাসে।
বিরহ ব্যথা লুকানো ক্রন্দন আভাসে
হৃদয় পুলকিত আজ উৎসুক সুখ ভাষে।
ব্যাকুল চিত্তে লাগুক আগুন মাখনো পরশ,
শেষ বেলার বসন্তে জাগুক হৃদয়ে হরষ।
কান্না হাসির দোলাচলে তার বাঁশির সুর—-
পারি না এড়াতে, বসন্তের রূপ-মিলন মধুর।
আজ মুখরিত হয়েছে সুবাস আকাশে বাতাসে
শিহরিত প্রাণ-মন উঠেছে দুলে অশ্রু সরসে।
দুঃখের রাশি লুকিয়ে রেখে এসেছি হাসির রঙ মেখে,
আকাশে দীপ্ত উজ্জ্বল তারাগুলি যায় নি তো ধূলায় ঢেকে! -
কবিতা- প্রবহমান
প্রবহমান
-সুমিতা পয়ড়্যাযাবার সময় বলেছিলে-
শেষ নিয়ে এত ভাবতে নেই!
সময় প্রবহমান।
যা ঘটবার তা ঘটবেই-
যা নিত্যকালের সত্য তা মানতেই হবে।
সময়ের স্রোতে অবগাহন করো।
দেখ না, পাহাড় কেমন দাঁড়িয়ে আছে
স্থির, নিশ্চল, নিরব, প্রতিবাদহীন!
তাকে কি অবসাদ ঘিরে রাখে না!
সংঘাত কি ঘটে না!
তবু বিশ্বাসের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়েই থাকে।
প্রসারিত করে তার দেশ- কাল- সময়।
সেই সময়ের উপরেই তার বহমান কাল।যাবার সময় বলেছিলে-
চোখ বন্ধ করে উপলব্ধির ঘরে অপেক্ষা আর অপেক্ষা করো
ইচ্ছামতির কালের প্রবাহে প্রসারিত হও
এই ক্রান্তিকালের রক্তের প্রবাহের বয়ে চলো।
স্নায়ুর প্রতিটি কণায় কণায় মুহূর্তরা কথা বলে।
সময়ের ভেলায় ভেসে যাক আবেগ- ভরসা।
দেখ না, সবুজেরা কেমন আত্মবিশ্বাসী!
অনর্গল না বলা কথাদের কেমন করে বয়ে নিয়ে যায়
ভুলে যায় গভীর গহনে অন্ধকারের কথা,
এক চিলতে ছটায় কেমন ঝলমল করে ওঠে,
ওরা আলোর ভাষা জানে,
ওরা রোদ্দুরের ডাকে সাড়া দেয়,
প্রতীক্ষার আলো জ্বেলে বসে থাকে সময়ের কারণে।
সেইতো সময়কাল; যা থেমে থাকে না
বহমান আর রহমান; চিরকাল বহমান!
তবু মাথা তুলে সবুজেরা বাতাসে বাতাসে খবর পাঠায়-
আমরা আছি।
আমরা থাকবো।
কারণ সময় যে প্রবহমান।
শুধু বয়ে চলা যার কাজ।এত ভেবো না।
শেষ নিয়ে এত ভাবতে নেই।
মজে যাওয়া নদী দেখেছো!
তির তির করে বয়ে চলে—
যা শান্ত,নিশ্চুপ কিন্তু প্রবহমান।
হঠাৎ করে একদিন ফুলেফেঁপে উঠবে এই আশায়
হঠাৎ করে একদিন বানভাসি হবে এই ভাবনায়
অপেক্ষা আর প্রতীক্ষার ক্ষণ গুনতে থাকে।
প্রাপ্তি সেই মহা ক্রান্তিকালে।
যেদিকেই দেখো, দেখবে শুধু সময়ের ভিড়ে বাস
যেখানেই দেখো, দেখবে শুধু সময়ের ঘরেই আশ্রয়স্থল।
জীবনের ভালো-মন্দের কিনারায় দাঁড়িয়ে থেকো
সময় তোমাকে নির্দেশ দেবে।
সময় ভাসাবে প্রতিকূলে অনুকূলে।
তাই শেষ নিয়ে এত ভেবনা।
যেতে দাও।
যেমন করে যেতে চাইছে।
যেভাবে চলতে চাইছে।ফুল ফল কে দেখনি!
সময়ের সাথে সাথে কেমন করে চলে!
ওই সময়টা না দিলে সব অথৈ জলে।
বন্ধ হয়ে যাবে সব দ্বারগুলো
সংঘাতে সংঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে তরীখানা
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ঘুমের অনন্ত সাগরে পাড়ি দেবে
ভুলে যেতে হবে মহা ক্রান্তিকালের অনন্ত প্রবাহ।
তাই সময় বয়ে যাক।
বয়ে যাক নিত্য প্রবাহের গান।
বুইঝা মুহূর্তেরা রক্তের মত শিরা-উপশিরায়।
হৃদয় প্রকোষ্ঠ প্রসারিত করো
সময়ের বিশুদ্ধতায় তা গ্রহণ করো
হৃদয়ের আকাশটাকে আরও নীল করো
সংকোচনের দূষণকে দূর করো।
সময়ে সঠিক মর্যাদায় ভেসে যাও দূরে দুরান্তে
অনেক অনেক দূরে, বহুদূরে।
প্রবহমান কালের অনেক অনেক
অনেক সময় ধরে। -
কবিতা- “অলীক নেশা”
“অলীক নেশা”
-সুমিতা পয়ড়্যাসেই তো ওই নীলাম্বরের হাতছানি!
কেন্দ্রের অভিমুখে যেমন তীব্র আকর্ষণ
বৃত্তের বাইরেও তেমন স্রোতস্বিনী
রহস্যময় নেশা, আবেগপ্রবণ কৃষ্ণগহ্বর
নীল আঁচলের অমৃতটুকু রাশি রাশি প্রেম।ভাবনাগুলো খন্ড খন্ড, তাই হয়তো বিচ্ছিন্ন,
চেতনার বৃত্তে অহেতুক একটা শিহরণ,
হৃদয়ের গভীরে অবোধ একটা ক্ষরণ;
ছোট্ট অনুভূতি জুড়ে শুধু তুমি আর তুমি।নীল আঁচলের জলাল্পনায় শুধু চঞ্চলতা
অন্তর জগতে, বাহিরে জগতে যেদিকে তাকায়
শুধুই এলোমেলো ভাবনারা তল খুঁজে ফেরে।যেমন করে নীলকন্ঠ পাখিটা সম্মোহিত আলোক নিয়ে আসে,
যেমনভাবে নীল জলে ধুয়ে যায় সব বিষন্নতা,
যেমনভাবে মোহনার বুকে সাগর নদী মেশে;
ঠিক এমনটাই বেদনা মুছে যায় নীল আঁচলে অবগাহনের কালে।এ যেন এক মায়াবী শক্তি; আগুনের পাহাড়
নীল শিখা, নীল আলো, নীলাম্বরীর সাজ
অকুতোভয় অনন্ত তৃষ্ণার শিহরিত উৎসব
অন্তরের আলিঙ্গনে অন্তরের পুণ্যস্নান।উত্তাল গর্জন, নিয়ন্ত্রণহীন উষ্ণতার প্রগলভ
তবু শান্ত নীল আকাশে নক্ষত্রদের উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা
অলীক বিষাদে যেন অজস্র ফুলঝুরির অভিবাদন। -
কবিতা- “ছায়াবৃতা নীলাকাশ”
ছায়াবৃতা নীলাকাশ
-সুমিতা পয়ড়্যাশুনতে পাচ্ছো সাম্যের সুর
ওই যে নীল সমুদ্রের শোঁ শোঁ শব্দ
জোয়ারের গর্জন ভাটায় দূরে বহুদূরে
নীল যেখানে নীলে মেশে!
অস্পষ্ট নীল আকাশে মেঘের আনাগোনা
শেষ রাতে কুয়াশার খামখেয়ালীপনা
তখনো জেনেছে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কোথাও একটা ছিল অগাধ বিশ্বাস
কোথাও একটা হারিয়ে যাওয়ার গন্ধ
কোথাও একটা মিশবে যেভাবেই হোক!
অনন্ত নীল আকাশের মতই অগাধ বিশ্বাস
সাদা ক্যানভাসে ছবি এঁকেছিল নীল রঙে
ভয়হীন, লজ্জাহীন এক সাম্যের গান ধরে
শুনেছো কি ওই সাম্যের সুর?
নীলাম্বরীর সাজে নীল নীলিমার গুঞ্জন
নীল চিঠিদের হইচই, আদান-প্রদান
কিন্তু হায় ছায়াবৃতা!
নীল আকাশের কালো মেঘের ত্রস্ত রূপগুলি ছিল ঢাকা
কখন সব ছিঁড়ে ছুটে যাবে; কখন বৃষ্টি নামবে
কখন ভিজে যাবে অন্তরাত্মা তা অজানাই ছিল।
তবু শেষ রাতে কুয়াশা ভালোবাসার নীল আঁচল
ঝকঝকে নীলের মতো কেমন যেন একটা আলগা ভালোলাগা
সাদা সাদা ফুলের বাহারি সংসারে চলাফেরা
আর সেই অনন্ত পথের সাক্ষী হল নীল আকাশ। -
কবিতা -পালা বদল
পালা বদল
-সুমিতা পয়ড়্যাকে কাকে জানে না!
দিন যায়, রাত যায়, বাতাস বয়ে যায়
শুধু কত আসা যাওয়া, কত কানাকানি
কত দেখাদেখি, কত বলাবলি;
কত স্বপ্ন; কত ইশারা ওই চন্দ্র তারাদের
কত ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে
কত মেঘেরা এলোমেলো ভেসে বেড়ায়
কত বছরের জানা চেনা ভোরের আলো
কখনো আদরে আড়ালে সাড়া দেয়
কখনো অনাদরে খাপছাড়া।
বসন্তের শেষ প্রহরে সাত সতেরো মনে গাঁথা।
তার কত বছরের চেনা জানা অতীত!
কত খুঁজে বেড়ানোর এদিক ওদিক!
শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার!
সব ঝাপসা অস্পষ্ট দিনগুলো, রাতগুলো।
জবাব খুঁজে পায় না; শুধু ভাবনায় ভালোবাসা
ক্লান্ত প্রহরে ছড়িয়ে পড়ে,কাজে-অকাজে এসে ভিড় করে
এক দুর্লভ রত্ন!
সেখানে পালে লাগে হাওয়া।
দক্ষিণ সমীরণে এক চিলতে রোদ্দুরের ছটায় চুম্বিত পৃথ্বী।
নিয়ন্ত্রনের রাঙা চিঠি হৃদয়ে তাল তোলে
কেঁপে ওঠে রজনীগন্ধা
ধূসর জগতে বাহিরে আলোর আঙিনা।
আকাশে ওঠে কালপুরুষ,সপ্তর্ষি।
অচেনা, অদেখা ভুবন ভ্রমন করতে থাকে মন,
বৃষ্টি আসে ক্লান্ত হয়
কোন এক দমকা হাওয়া মনকে মাতাল করে,
অন্তরের আলিঙ্গনে অন্তরে পুণ্যস্নান করে,
এক অস্থিরতা সৃষ্টি করে;
আঁখিভরা হাসি মুখ জীবন জুড়ায়।
তুমি সেই সত্য নীরব মাঝারে।
তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাওয়া ষোলো আনা।
চার বছরের চেনা জানা এক মুঠো রোদ্দুর
সত্যিকারের ভালোবাসা, অপেক্ষার ভালোবাসা
অনুভবের ভালোবাসা, বিভোর হয়ে থাকার ভালোবাসা—
যা আমৃত্যু দীর্ঘশ্বাসের শুভক্ষণ। -
কবিতা – মুক্তির পথে
মুক্তির পথে
-সুমিতা পয়ড়্যা“এই আকাশে আমার মুক্তি
আলোয় আলোয়…………”না আলো নয়; শুধু মুক্তি ছিল!
আর ছিল তমসাচ্ছন্ন বাইশে শ্রাবণ
ভরা শ্রাবণ মাস। জলজ মেঘ,
কখনো মুষলধারায় বৃষ্টি তো কখনো ছিপছিপে
চারিদিকে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ!
বর্ষার সঙ্গে এক মোহময় মায়া জড়িয়ে আছে বাঙালির মনে।
বাঙালি কেন সমগ্র পৃথিবীবাসীর মনে!
শ্রাবণ মাসের বাইশ তারিখ।
এক বিরাট আকাশের এক নক্ষত্র পতন।
মেঘলা দিনে মেঘলা আকাশে রবি আজ অস্তমিত।
বিভিন্ন পত্রিকায় সমাচার,
একেলা পথচলার পথিক এগিয়ে চলেছেন একা একাই।
এক ঝাঁক বিষন্নতা শ্রাবণের আকাশে বাতাসে।
যে ঠাকুর ছিল অতল গভীরে, শিহরণে,
অভিসারে, সমগ্র সত্তার দিগ্বিদিকে,
যিনি মানবতার নিবিড় ধারার মাঝে প্রবলভাবে রয়েছেন;
যিনি মৃত্যুকে বন্দনা করেছেন—“মরণ রে,
তুঁহুঁ মম শ্যামসমান।
মেঘবরন তুঝ মেঘজটাজূট,
রক্ত কমলকর, রক্ত অধরপূট,
তাপবিমোচন করুণ কোর তব
অমৃত অমৃত করে দান।
তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান।।”যে ঠাকুর প্রয়াত হওয়ার আগেই উপলব্ধি করেছেন নানাভাবে
মানুষের প্রতিটি আবেগে, অনুভবে, অনুভূতিতে জড়িয়ে আছে
তিনি আর কেউ নন—–
তিনিই প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যে ঠাকুর মানবতার সংকটে কাঁদেন
যে ঠাকুর মানবতার জয়ের আস্থা রাখেন
যে ঠাকুর মানবতার হৃৎস্পন্দনে শিহরণ জাগায় (কাব্য সাহিত্য সৃষ্টি তাঁর ধর্ম)
জীবনের মহাযজ্ঞে যাকে বাদ দিলে অস্তিত্বহীন হতে হয়
সেই ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আজ তার মহাপ্রয়াণ দিবস।
কালের অমোঘ নিয়মে নিত্য আসা- যাওয়া।
আর তাই বাইশে শ্রাবণ মানে বিষাদে বিমর্ষ হওয়ার দিন।
জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
দুঃখ থেকে উত্তরণের পথের সন্ধান যার কুক্ষিগত
তাকে আর কে ভাসাবে!
বাইশে শ্রাবণ আবার আসবে; বারবার আসে
তবু তার অমরত্ব বিলীন হবার নয়।
কখনো হবে ও না।
তিনি আছেন সব সময় আমাদের মাঝেই।
বর্ষার শ্রাবণে জীবনের পরিসমাপ্তি হয় তো ঘটেছে
কিন্তু তাঁর আলোকোজ্জ্বল সত্তার জয় চিরন্তন সত্য।
আর তখনই সমগ্র মানবজাতি তাঁর কথায় ও সুরে গিয়ে ওঠেন—–“তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমায় নিশীথিনী সম……..।”