• অণু কবিতা

    মূল্যবান

    মূল্যবান
    -সৌরভ ঘোষ

     

    পরিত্যক্ত নদীর বাঁকে চুপচাপ
    মাঝে বান এসেছিলো,
    চলে গেছে,
    আরও বেশি ফাটাফুটি ফেলে

    কলমের ঠকিয়ে দেওয়া লেবু গাছ আমি
    কাঁটাগাছের প্রথম ফল শেষ ছিল…

    জানি,
    অশোক গুল্মের মত একদিন কাটা পড়ব
    আমাকে সমূলে উপড়ে ওরা পুঁতে দেবে
    ভালো জাতের আসল কদম চারা

    তা’হলে,
    অন্তত কয়েক বছরেই কাঁচা কাঠ পাওয়া যাবে…

  • কবিতা

    এ কেমন পাওয়া

    এ কেমন পাওয়া
    -সৌরভ ঘোষ

     

    প্রতিমাসে দশ তারিখ,তারপর টানা চার রাত
    তোর আর তোর বরের মাঝে পালবালিস,শ্যাওলা ছাপ
    বিছানায় রক্তে আঁকা মানচিত্র,পাহাড় -পর্বত।

    ইজ্জতের আততায়ী এ-ক’রাত নিরীহ,
    ঘুম ছটপটে।
    বাকি রাতগুলো তোর পিরামিডের পিঠ চাটে,
    রং চটানোর জন্য ঘষামাজা,কসরত।
    রকমারি কেরামতিতে তুই সজীব বিদেহী…

    পাগল ভাবছিস?
    ভাবছিস এতে আমার কি ?
    ওই চারদিন তুই যে শৃঙ্খল হীন,
    পরনে স্বপ্ন নিয়ে ভীনদেশের নাবিক ।

    তোর স্থাবর সম্পত্তির সাময়িক বিশ্রামের দিন গুলোয়-
    মধ্যগগনে হাঁটি আমি আর অভিমানী তৃপ্তি।
    তৃপ্তির সায়াহ্নে ঝড় ওঠে, মেঘ ডাকে, বৃষ্টি নামে
    প্রথমে ভিজি জল বাড়লে
    সাঁতার কাটি, ডুবে যাই শেষে।

    নষ্টদের মধ্যে আমি। বাজে পাগল। তাই না!

  • কবিতা

    কথা ছিল

    কথা ছিল
    -সৌরভ ঘোষ

     

    কথা ছিল-
    পাহাড় জয় করে একখানা রডোড্রেনডন পুঁতে দেব,
    পাদদেশের পাহাড়ি বাঁশের ডগলা থেকে
    আড় বাঁশি করে –
    তিস্তার সরু ধারার পাশে
    ছোট্ট টিলায় বসে বাজাব।
    কথা ছিল-
    কোমরে কলসি না থাকলেও
    তুমি বেনী দুলিয়ে আসবে।
    কথা ছিল-
    তিস্তার তীরে নতুন লীলা লিখবে…

    সব আলেয়া
    হারিয়েছো পালকির শব্দহীন আঁধারে…

    বাঁশি তিস্তার জলে,
    স্মৃতি হাতড়ে পাহাড় জয়ের সংসাপত্র সম্বল…

  • কবিতা

    আমি ভুয়ো কমপোসার

    আমি ভুয়ো কমপোসার
    -সৌরভ ঘোষ

     

     

    তিন মাথা রাস্তা
    ঠাঠা রোদ মিলিয়েছে পায়ে পায়ে
    পর্ণস্টার একা, মিছিলের শেষে।

    ঈশারা করতেই উঠে এলো,
    সাদা হোন্ডা গাড়ি , কালো কাচ
    আমি আর ওই মেয়েছেলে পেছনের সিটে ।

    মেধাবী গলিতে নামাতেই ভ্যানিলার গন্ধ,
    দঙ্গল ভেঙেছে
    ঘরগুলো ঘুটঘুটে।
    (পথ ব্যভিচার আগলে)
    ওর ডান হাত ধরে একটু এগোতেই-
    উজবুক শিশুটা হাসলো হাততালি দিলো…

    ও কি জানে!
    আমিই পৃথিবী ;
    আমি সর্বজ্ঞানী;

    বৃথা ভয় পাই আলো রং,সৃষ্টি স্রোত…

  • কবিতা,  প্রথম বর্ষ - ২০১৯,  বর্ষপূর্তি কলম

    সব ধারা এক ঠিকানায়

    সব ধারা এক ঠিকানায়
    -সৌরভ ঘোষ

     

     

    ব্রহ্মপুত্র থেকে বাঁক নিয়ে রাজমহল
    সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ।

    দোটানা, ভাগিরথী না পদ্মা!
    গন্তব্য ঝাপসা…
    এক ঝাপটা কুয়াশা মাখা মেঘ বন্ধু পাতায়।
    মেঘে মাদুর পেতে কিছুক্ষণ জিরোন,
    উদ্বাস্তুদের সীমান্ত আলাপন।
    ঠিকানা জিজ্ঞেস করতেই টিপটিপ।
    বিহুর সুর ঝলমলিয়ে বলে-
    “আমরা চুলোহীন মেঘে পুড়ি,
    গোত্রহীন পোষ্টার পরিচয় লিপি,
    কোনোখানেরই নয়।
    সম্বল তাড়া,
    শুধু তাড়া…”

    মেঘ নামিয়ে দেয় মোহনায়,
    গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা’র ঢেউ ফুটকিতে মিলায়…

  • কবিতা

    ডাউন পাঁচটা পাঁচ ক্যানিং লোকাল

    ডাউন পাঁচটা পাঁচ ক্যানিং লোকাল
    -সৌরভ ঘোষ

     

     

    “May you have your Attention please
    the DN Canning Local wiil be comming
    at platform no. two.
    কৃপয়া ধ্যান দিজিয়ে কি ডাউন ক্যানিং লোকাল
    দো নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর আ রহি হ্যে।
    অনুগ্রহ করে শুনবেন ডাউন ক্যানিং লোকাল
    দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে। “

    কাঁধে চামড়ার ফুটিফাটা ব্যাগ,
    পরনে নীল শাড়ি এলোমেলো ভাঁজ ।
    স্টেশন থেকে কিছুটা দূরেই- অস্থায়ী বাস,
    আটপৌরে বৃদ্ধা…
    কোঠর গামী চোখ থেকে-
    ঠিকরে বেরিয়ে আসছে নেপোলিয়ন।
    মুখে বলিরেখায় ফ্রয়েডের স্পষ্ট ছাপ।
    এ বয়সে সঞ্চয়িতা কোনো কাজে আসেনি,হতাশা ছাড়া।
    প্ল্যাটফর্ম থিকথিক,
    উদ্বাস্তু ভিড়, ঘেঁষাঘেঁষি আড্ডা ,
    হকার,কাজের মেয়ে,মালপত্র,ছাত্র,কয়েকটা বেহায়া হতভাগা।
    বসার জায়গা খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায়,
    কংক্রিট বেঞ্চের কোণা…
    পাশে ভাটিয়ালি ধরা কালো মেয়ে,
    যার মুখের হাসি শোকহরা বার্তা, আনমনা
    চোখে তন্বঙ্গী সরলপুঁটির মত ঝিকিমিকি,তণ্ হা…

    -এই মেয়ে নাম কি রে তোর?
    -বীনা…
    -কোথায় থাকিস?এখানে কাজ করিস?
    – থাকি কালিকাপুর দিদি,রোজ আসি
    এখন ধরা পাঁচটা বাড়ি,
    কাপড় কাচা, বাসন মাজা,একটা ঘরে রান্না করা।
    -তোর বর কিছু করে? না…
    -সে তো থাকে নেশার ঘোরে
    -আর ছেলেপুলে?
    -বড়টা জুয়া খেলে
    ছোটটা পাঁচ,মায়ের কাছে।
    -অত ছোট!কি খায়?
    – যা পায় দিদি,যখন যাই ঘুমায়
    যখন আসি তখনও ঘুমায়
    -প্রতিদিন আসিস?
    -আসতে হয় কামাই করার জো নেই যে…
    -তোর কষ্ট হয় না?
    -হয়তো..
    পেটের এই’খানটা মোচর দেয় জোরে
    দড়ি বেঁধে ব্যাথা দমিয়ে রাখি,দিদি…
    -হ্যা’রে,তোর বর তোকে মারে?
    -সে তো মারেই।আবার ভালোওবাসে
    ভোর চারটে দশ আপ ক্যানিং লোকাল
    ওই সাথে থাকে,রাতেও আসে নিতে।
    উঠি দিদি, পরে দেখা হবে
    ক্যানিং লোকাল ঢুকে গেছে…

    বারো কামরা ক্যানিং লোকাল গিলে নেয় হট্টগোল।
    নীল শাড়ি বজবজ লাইন,ভাসা অপেক্ষা…
    আকাশ প্রদীপ সাধ, নতুন কাজের আশা।
    অবাত ঘর,স্বামী স্বেচ্ছা নির্বাসিত প্রাথমিক শিক্ষক,
    নিতান্তই অচল,দু-দুবার মাইনর স্ট্রোক,
    যক্ষের ধনে অমিত কীর্তি, ছেলের ডিপ্লোমা
    তার নতুন সংসার,আ-মরি আমেরিকা…

    ছেলের এক ফোনেই বাজিমাত -‘মম অনেক চাপ’।
    ষাটোর্ধ্ব মা এই বয়সে কোথায় যাবে?
    স্থিতপ্রজ্ঞ স্বামী,
    তিনরকমের ওষুধ, কে জোটাবে?
    বোনের বর, মার্কেটিং এর কাজ দেখেছে
    শিক্ষিত ছেলের মা না হলে-
    অন্তত কয়েকটা ঘর নয় হাত পুড়িয়ে …

    মনের ভেতর সত্যবাদী মন,উপলব্ধি –
    -পেতেই হবে , খুব দরকারী।
    না হলে,
    কাল ডাউন পাঁচটা পাঁচ ক্যানিং লোকাল,
    ইত্যাদি লোকের ভিড়,প্লুটোনিক কোলাহল,
    কিছুক্ষণ মৌনতা…
    মম মায়া দুরাত্যয়া।
    তারপর,
    আর কোনোও দিনও দেখা হবে না-রে, বীনা…

  • কবিতা

    মা’কে লেখা শেষ চিঠি

    মা’কে লেখা শেষ চিঠি

    -সৌরভ ঘোষ

     

     

    মা জেলেহা’র দাবী নাকচ হল…
    তাবৎ জননেতা, মানবাধিকার সংগঠন, তামাম জনগন সবাই নাকচ।
    সবে সূর্যমুখী পাপড়ি চোখ মেলতে শুরু করেছে,
    শিশির তখনও মুথা ঘাস আঁকড়ে, আড়মোড়া ভাঙেনি।
    শাসক বদ্ধ পরিকর…
    মহামান্য বিচারক ফাঁসির আদেশ দিতে বাধ্য।
    সবে ছাব্বিশে পা দেওয়া তরুণী ইরানী সাবারি
    জীবনের শেষ পাতায়-
    চরকায় বোনা পাকানো দড়ির জলছাপ…

    মা’কে লেখা শেষ চিঠিতে ইরানী তরুণীর জবানি

    প্রিয় শোলেহ,
    আজ জানতে পারলাম চুড়ান্ত সময় আসন্ন।
    সৃষ্টিকর্তা পাহাড়ের চূড়ায় জাদু লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে
    অস্থীর বাতাসের হাতে আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছে।
    শুধু এই ভেবে খারাপ লাগছে
    এই খবরটা তুমি আগে জানালেনা?
    ফাঁসি হবে জানার পর থেকে তুমি আব্বার হাতে চুমু খেতে দাওনি।
    টান বাড়াতে চাওনি না !
    ঊনিশ বছরে দুনিয়ার অনেক কিছু দেখেছি ।
    তোমার আদর আব্বার আদর আহ্ জান্নাত।
    বেশ ছিলাম বলো?

    সেদিন পূর্নিমা,উৎসবের রাত
    কোথা থেকে হঠাৎ উন্মাদের মত
    রাশি রাশি কালো মেঘ গোটা আকাশকে ছেয়ে ফেললো…
    ইজ্জতের কালো লুটেরা-
    তীক্ষ্ণ দাঁত আর দানবীয় শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো
    অজগরের মত আমার সর্বাঙ্গ পেঁচিয়ে,
    মাংসাশী চিলের মত শরীর ছিঁড়ে আঁচড়ে
    সমস্ত নির্যাস, সবকিছু গোগ্রাসে গিললো…
    সেই রাতেই মরে গেলে ভালো হত, তাই না মা!
    সেই রাতেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে
    শহরের কোণে, কোনো আস্তাকুঁড়ের উঁচু ঢিবিতে,
    যেখানে আমার অবশ শরীরটা’কে
    আস্তাকুঁড়ের কুকুর গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেত,
    অন্তত তাড়াতাড়ি মুক্তি হত…
    অবশিষ্ট হাড়গোড় পরদিন পোষ্টমর্টানে যেত,
    কুকুর গুলো যদি বিক্ষত যৌনাঙ্গ ফেলে রাখত
    তাহলে এটাও জানতে পারতে নিষ্ঠুর শয়তানটা সে রাতে কতবার,
    কতবার ধর্ষণ করেছিল তোমার প্রিয় সাবারিকে …

    ভেঙে পোড়ো না মা…
    অর্থহীণ, ক্ষমতাহীন দের ভাঙতে নেই,লড়াই করেই বাঁচতে হয়।
    সেদিন যদি আমি মরেই যেতাম হয়ত গুমরে কাঁদতে,
    সীমাহীন বালি বালি শোক, অসহ্য মহাসাগরীয় লজ্জা তোমায় ছিঁড়ে খেত
    তুমি হয়ত মরে যেতে …
    বিশ্বাস কর সে-রাতে ছুরি ধরে আমার হাত একটুও কাঁপেনি।
    কেমন যেন সব ওলট- পালট হয়ে গেল,না!
    যদি শয়তানটা বাঁচত-
    তাহলে আমার শরীরটা এভিন জেলে ছুঁড়ে ফেলা হত না,
    সেখান থেকে এই অন্ধকার কারাগারের নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে।
    তবে,এ সব নিয়ে অনুযোগ কোরো না
    এটাই হয়ত নিয়তির বিধান…
    মৃত্যুতেই কি সব শেষ হয়?

    তুমি শিখিয়েছিলে বাঁচার জন্য লড়াই করতে হয়।
    তুমিই তো শিখিয়েছিলে শিক্ষা পাওয়ার জন্যই আমাদের জন্ম।
    তুমি বলেছিলে জন্মের পর থেকেই আমাদের কাঁধে বিশেষ দায়িত্ব চাপে।
    মনে পড়ছে তুমি যে গল্প গুলো শোনাতে?
    “সেই লোকটা যে চাবুকের আঘাত সহ্য করতে করতে মরেই গেল
    কিন্তু মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি”।
    সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ধৈর্য তো ধরতেই হবে,
    তার মাঝে মৃত্যু এলে তাও সই…
    হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বুঝিয়েছো
    “যেন কোনো ভাবেই নারীসত্বাকে না বিসর্জন দিই”।
    কত যত্ন করে মেয়ে দের খুঁটিনাটি সহবত শিখিয়েছিলে।
    কিন্তু তুমি ভুল জানতে মা
    এই ঘটনার সময় সে -সব তালিম একেবারেই অকেজো।

    আদালত আমায় বলল,”ঠান্ডা মাথার খুনি”
    না মা এক ফোঁটাও চোখের পানি ফেলিনি।
    আইনের প্রতি অটুট আস্থা দেখাতে গিয়ে
    বিচারক বলল,”খুনের অভিযোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও আমি নিস্পৃহ নিরুত্তাপ! “
    তুমি তো জানো –
    একটা পিঁপড়ে পর্যন্ত কখনো মারিনি
    হা,আমিই হয়ে গেলাম ঠান্ডা মাথার খুনি!

    জানো, ছেলেবেলার কথাগুলো শুনে
    বিচারপতি বললেন,আমি না কি মনে মনে পুরুষালি।
    আমার লম্বা নোখের লাল নেলপালিস,
    নরম তুলতুলে হাতের তালু,
    ধর্ষিতা হয়েও আমি পুরুষালি?
    এই অন্ধ বিচারকের থেকে এর বেশি কি বা আশা করতে পারি!
    অপরাধের পুরষ্কার হিসাবে মাথা মুড়িয়ে এগারো দিন নির্জন কারাবাসের হুকুম।
    দেখেছ মা, তোমার ছোট্ট সাবারি এই কয়েকদিনে কত বড় হয়ে গেছে…

    এবার আমার অন্তিম ইচ্ছে বলি শোনো-
    কেঁদো না ,এখন শোকের সময় নয়,
    ফাঁসির পর, আমার চোখ, কিডনি, হৃদপিণ্ড,
    আর যা কিছু নেবার থাকে একজনের শরীর থেকে সব নিক,
    তাতে যেন কয়েকটা গরীব বাঁচতে পারে।
    আমি চাই না আমার সমাধিতে কেউ ফুলের তোড়া রেখে আসুক,
    আমি চাই না কালো পোষাক পরে কবরের সামনে কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ুক,
    বুক চাপড়াক, এমনকি তুমিও নও…
    বরং তুমি আমার হাসি কান্নার দিনগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও।

    পৃথিবী আমাকে ভালোবাসেনি
    পৃথিবী চায়নি আমি সুখি হই।
    মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গনে ইহলোক ছাড়তেই তার দেখা পাব।
    তার এজলাসে নিশ্চিত সুবিচার হবে-
    সেখানে কাঠগোড়ায় শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াব।
    অভিযোগের আঙুল তুলব –
    সেইসব পুলিশ অফিসারের দিকে,অন্ধ বিচারকের দিকে,
    মিথ্যেবাদী আইনজীবীদের দিকে
    বিচারের নামে যারা মিথ্যা ও অঞ্জানতার কুয়াশায়
    সত্যকে প্রতিমূহুর্তে আড়াল করছে তাদের দিকে
    আর তাদের দিকে যারা আমাদের অধিকার বুটের নীচে পিষে দিয়েছে…
    আমার নরম মনের মা,
    মনে রেখো সেই দুনিয়ায় আমি আর তুমি থাকব
    অভিযোগকারীর আসনে
    আর ওরা দাঁড়াবে আসামির কাঠগড়ায়।
    এবার দেখব,সৃষ্টিকর্তা কি চায়…

    একটা শেষ আর্জি –
    মৃত্যুর হাত ধরে দীর্ঘ যাত্রা শুরুর প্রাক মুহুর্ত পর্যন্ত
    তোমায় জড়িয়ে থাকতে চাই মা।
    তোমার যে খুব ভালোবাসি,এই দুনিয়ার থেকে অনেক বেশি…

  • কবিতা

    ব্যতিক্রমী কোট

    ব্যতিক্রমী কোট
    -সৌরভ ঘোষ

    ব্যতিক্রমী রঙের জহর কোট টা-ই বাবার পছন্দের
    আমি কুড়ি বছর পরতে দেখেছি
    আমাদের কলোনিতে এই রঙের জহর কোট কেউ পরেনা
    আমার বন্ধুদের বাবা’রাও নয়
    কলেজে কোনও স্যারকেও পরতে দেখিনি
    অফিসে সিনিয়র কলিগদের নয়,
    মঞ্চ কাঁপানো কোনো নেতাকেও নয়…

    বাবাকে কোট পড়তে বাধা দিলে বলত,
    “তোর বড়ো হওয়া
    তোর আদর
    তোর মায়ের সখ আহ্লাদ
    তোদের ভালো থাকা সবকিছু
    প্রতি সুতোয় বাঁধা,গিঁট পড়ে গেছে।
    এই রং তো আপোষ করেনি,আলাদা
    আপোষের আবদার এসেছিল
    দেখ কিছু জায়গা সাদা
    আঠার মত আটকে থাকতে চেয়েছিল
    বারবার ড্রাই ওয়াস করেছি।
    পিঠে দেখ কত ফুটো প্রতিবাদ
    ফুটো দিয়ে আলো বাতাস ঢোকে
    জানি এই কোট আরও অনেক ফুটোয় ভরে উঠবে
    প্রথমে আঙুল তারপর মুষ্ঠি তারপর গলা গলে যাবে।
    ফুটো কলোনিতে প্রতিবাদ প্রান্তিক…

    ভেবেছিলাম তোকে দিয়ে যাব ,অক্ষত হয়ত…
    আমার মৃত্যুর পর সুতোটুকু হলেও,রাখিস চিনিস
    যদি পারিস ঠিক এই রকম একটা কোট পরিস
    যদি পারিস … “

    বাবা নেই
    শেষ মুহুর্তের উপসংহার, ঠোঁটে শান্তির হাসি –
    মা দেখেছিল কাঁদতে কাঁদতে,আমিও…

    ঠিক বাবার মতোই বছরে একআধ বার
    দূরান্তে…  চেয়ে দেখি-
    হাজার হাজার মানুষের ভীরে মিশে যাচ্ছে
    ব্যাতিক্রমী রং, জহর কোট…

    ওই রং অনেক খুঁজেছি
    পেলে নগদে কিনে নেব যত দামই হোক…

  • কবিতা

    বাউন্স স্বপ্ন

    বাউন্স স্বপ্ন
    -সৌরভ ঘোষ

     

     

    ভোরের আকাশ বলেছে,
    “এখন শুনশান পথ পাড়ি দেওয়ার সময়”…

    সাদা এম্বাসাডারের সিটে নীপ তরুছায়া ঠায় দাঁড়িয়ে,
    দুপুর হল,

    আমি অরিজিনাল কপিরাইট
    দরদাম পেরিয়ে আলস্য পেরিয়ে ছুটি।
    শালিকের একটানা ঝগড়া,
    কুলি-কামিনদের রাস্তা ড্রিল করার ছন্দ,
    বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন
    যেন ঘুমপাড়ানি গান…
    ছায়ার স্নিগ্ধ হাওয়ায় চোখের পাতা বুজতে চায়।
    স্বপ্নে ভেসে আসে,কস্তুরিমৃগ সম পাগল ব্যাঙ্কার-
    তাকে পদ্মডাঁটি বোঝায়,
    ” টাকা,নোংরা আর পাঁকেই জন্মায় না,ফুলেও জন্মায়”।

    ঘুম ভাঙতেই তালু দিয়ে লাল মুছি,
    বুক পকেটে স্বপ্ন আর চেক, দুটোই বাউন্স।
    হেঁটে ফিরি,
    তুলসিতলায় সাঁঝবাতি…

  • কবিতা

    মহানগরের গরীব

    মহানগরের গরীব
    -সৌরভ ঘোষ

     

     

    গরীবের সংসারের রং মনখারাপ…

    লম্বা লোকটাও মাথা নিচু করে
    ছোট্ট ঘরে সেঁধিয়ে যায়।
    সেখানে ফ্লাইটের ওঠানামার শব্দ
    আর মিটমিটে লাল নীল আলো।
    গ্যারেজে খারাপ, রঙচটা বাইকের মত
    কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওরা দশ বা বারো।

    পাঁচিলের ওপাড়ে-
    গগনচুম্বী ক্যাপসিউল এলিভেটরের ভেতর দিয়ে
    দিন-রাত ওদের চালে ছায়া নামে…

    মহানগরী ব্যস্ত,
    রাতের রাজপথ এল.ই.ডি.তে ঝকমক,
    পীচ
    চকচকে
    ব্ল্যাক
    বাঙ্কোয়েট

    তার নীচে জ্বলজ্বলে অনেক চোখ,গরীব…

You cannot copy content of this page