• কবিতা

    দুই আমি

    দুই আমি
    -রূপকথা ঘোষ

     

    বাইরের আমি ব্যস্ত
    ঊষা থেকে নিশি অবধি
    সচল জীবনের ধারায়।
    তারই মাঝে জেগে ওঠে
    অন্তরের আমি।
    জীবনের ছন্দে ছন্দে
    সৃষ্টির ছন্দ মিলে যায়।
    ক্লান্তিকর একঘেঁয়ে
    মুহূর্তে অন্তরে বেজে ওঠে
    ললিতে রাগিনী,
    তানসমূহ ঝরে পড়ে
    মানসে,ভাবনা শুরু করে সৃষ্টি।
    গুমোট দুপুরে মানসে বয়
    ফাগুন হাওয়া।
    মানস-নদে দোলা লাগে
    কবিতার নাও বহে যায়।
    ব্যস্ত সাঁঝে মানসে
    জ্বলে ওঠে অগুনতি আলো,
    বহে চলে স্বর্ণগঙ্গার ধারা-
    ঝরে চুপিচুপি আলোর
    রূপকথা মানসভূমিতে,
    নান্দনিক কাব্য সৃষ্টি হয়।
    নিশুতি রাতে মানসে জ্বলে
    ঝিলমিল তারারা,
    ছায়াপথ ধরে
    ছুটে চলে কবিসত্তা।
    হৃদয় লেখনী লেখে
    জীবনের কবিতা।

  • কবিতা

    যান্ত্রিক

    যান্ত্রিক
    -পাপিয়া ঘোষ সিংহ

     

    এ যেন এক হল্লা রাজার দেশ ,
    সবাই কে হতে হবে এক মন্ত্রে দীক্ষিত,
    হৃত অধিকার__শিক্ষা, চাকরি,
    প্রতিবাদ, আন্দোলনের।

     

    যদি করো প্রতিবাদ, তোমার ঠিকানা–
    হবে গরাদের ওপারের কালকুঠরি।
    যদি ক‍রো প্রশ্ন, তবে তুমি সন্ত্রাসবাদী!!
    যদি তুমি হ‌ও অসুস্থ, রোগের নাম বলা___
    যাবে না ,রাজার আছে বারণ।

     

    রাজার মর্জিতে পাবে নবজাতক
    জন্মের অধিকার।
    সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত সব‌ই তাঁর ইচ্ছে।
    আকাশ, বাতাস,জল, মাটি সব যেন রুদ্ধ
    প্রাণ ভরে শ্বাস নে‍ওয়ার জো নেই ।

     

    সমাজের উচ্চ স্তরের মানুষ গুলো
    আজ শামুক হয়ে শক্ত খোলকে
    মুড়িয়ে নিয়েছে নিজেদের।
    ত্রাস নামক যন্ত্রে সবাই বাক্ শক্তি হারিয়ে
    মন্ত্রমুগ্ধের মত রাজার স্তাবকে রূপান্তরিত।

     

    একবার এসো উদয়ন মাস্টার,
    শিক্ষিত করে তোলো ভবিষ্যত কান্ডারীদের।
    সামনে দা‍ঁড়িয়ে বলতে শেখাও_____
    দড়ি ধরে মারো টান-
    রাজা হবে খান খান ।

     

    ভাঙো যন্ত্রের জীবন শৃঙ্খল,
    ভেঙে যাক্ হল্লা রাজার মূর্তি,
    মুক্তির আনন্দে ,প্রাণের স্পন্দনে-
    সমস্বরে গেয়ে ওঠো—–
    “আমরা সবাই রাজা ,
    আমাদের এই রাজার রাজত্বে”।

  • কবিতা

    লজ্জা

    লজ্জা
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
    তোরা নিজেদের “মানুষ” বলিস?
    আর মানবধর্ম হেলায় ভুলিস!
    মানুষের বেশে এই তোরা কারা?
    হিংস্রতায় তোরা পশুদের সেরা!
    এই পৃথিবীর স্নেহরসে বেঁচে আছে প্রাণ।
    যা কিছু পেলি, সবই পৃথিবীরই দান।
    তাও তোরা হিংসা হানাহানি করিস!
    বিষবাষ্পে এই পৃথিবীর হৃদয় ভরিস!
    ধর্মের নামে তোরা অধর্ম করিস।
    জাত,বর্ণ নিয়ে তোরা কী ভীষণ লড়িস!
    একদিন তো যাবিই চলে একলা সবই ফেলে।
    এইক’টা দিন থাকিস না হয় হিংসা বিভেদ ভুলে।
    কবে তোরা বুঝবি “মানুষ” কথার মানে?
    হাতে হাত রাখবি মানুষেরই টানে??
  • কবিতা

    এই বেশ ভালো আছি

    এই বেশ ভালো আছি
    -প্রদীপ মণ্ডল
    একটা মেঘ ভেসে যায়
    একটা রাত
    একটা কলঙ্ক দাগ দেয় কালো আঁচড়
    খুলে যায় নষ্ট সামাজিকতা
    মেঘ বৃষ্টি ঝরায় ঝরিয়ে যায়
    তবু দাগ থেকে যায়, থেকেই যায়…..
    বৃষ্টি ঝরে অঝোর ধারায়
    অন্ধকার আরো অনেক নিবিড় হয়
    সেই যে সন্ধ্যা ছুঁয়ে ছিল পাখির কলকাকলিতে
    মনের শুদ্ধতা বেয়ে
    তার হদিস এখন অবান্তর
    নিলাম হচ্ছে হাটে বাজারে রাস্তার মোড়ে

     

    তবু তো ফাল্গুন আগুন রাঙিয়ে ধরে
    হয়তোবা এভাবেই বেশ ভালো আছি, হয়তো…..

  • অণু গল্প

    বিলুপ্তি

    বিলুপ্তি
    -সুদেষ্ণা সরকার

     

     

    ঋতুদের বাড়ির পাশের খালে একটা কুকুর মরে পড়ে আছে।কাল রাতেই হয়তো মরেছে, কি উৎকট গন্ধ বেরিয়েছে।কৌতূহলী লোকজন কারণ অনুসন্ধানে ব‍্যস্ত,কুকুরটার একটা পা ভেঙ্গেছে, রক্তটা শুকিয়ে জমাট বেঁধে গেছে।সাত সকালে এই অনাসৃষ্টি কান্ডকারখানাতে অনেকেই বিরক্ত।পাড়ার ছেলেগুলো গভীর আলোচনাতে মগ্ন

    বাপাই এর মা নাকে কাপড় চাপা দিয়ে ব‍্যালকোনি থেকে চেঁচিয়ে বলল-“আরে করপোরেশনের লোকদের ডেকে এটার একটা ব‍্যবস্থা করতে পারছো না? উফফ!! যত উটকো ঝামেলা।

    দীপা কাকিমা থেকে ঋতুর মা সবাই বিরক্ত হয়ে উঠছে।সকালটা বুঝি তাদের নষ্ট হয়ে গেল।

    কিন্তু ঋতু কিছু বলছে না।মৃত কুকুরটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।জমাট বাঁধা রক্তগুলোর উপর মাছি ভন্ ভন্ করছে,হয়তো এক্ষুনি বেঁচে উঠে একরাশ কাঁচা তুলতুলে মাংসের উপর থাবা বসাবে।ভয়ে গা শিউরে উঠল ঋতুর।বিপ্লবের মতো মানুষেরা কাউকে মারতে ভয় পায়না।

    সাত সকালে একটা কুকুর মারা যাওয়াতে বুঝি এক মনোরম সকালটার বারোটা বাজতে পারে,কিন্তু কেউ হয়তো জানে না এই কুকুরটা মারা না গেলে পাশের বাড়ির মেয়েটাকে আজ সকাল থেকে পাওয়া যেত না।

  • কবিতা

    খেলার পুতুল

    খেলার পুতুল
    -কল্যাণী ত্রিবেদী

     

    খেলতে গিয়ে খেলার ছলে
    খেলার পুতুল নিলে কেড়ে
    কেমন করে খেলবো আমি
    তাও দিলে না বলে আমায়
    তাও দিলে না বলে

    সামনে দেখি দুর্গম পথ
    চলতেই নাকি হবে;
    কেমন করে চলবো আমি
    সঙ্গী পুতুল ছেড়ে…
    তাও দিলে না বলে

    দিন পরে দিন চলে যায়
    নানান কোলাহলে…
    দুঃখগুলি হতাশায় মুড়ে
    লুকায় অন্তরালে.
    এমনি করে কতোটা পথ
    চলতে হবে মোরে?
    তাও দিলে না বলে!
    সকল আজ ত্যাগ দিয়েছি
    সব বাঁধন ভুলে….
    একলাই পথ চলবো আমি
    তোমায় সঙ্গী পেলে
    কেমন করে পাবো তোমায়
    তাও দিলে না বলে
    আমায় তাও দিলে না বলে!!

  • কবিতা

    বলি

    বলি
    -আত্রেয়ী নন্দ

     

    সূর্য তখনও ঘুমন্ত
    বিসমিল্লাহ খাঁ পাড়া জুড়ে
    ব‍্যস্ত সময়;
    প্রজাপতি যজ্ঞের আয়োজন,
    খুঁটি বাঁধা ছাগল
    দিনভর আদরের আদিখ্যেতা।

     

    সন্ধিক্ষণ ক্রমশ উপস্থিত
    শরীরে লেপ্টানো বেনারস ঘরানা
    চন্দনের স্টিচ ফাটা কপাল জুড়তে
    সময়মতো হন্তারক উপস্থিত।

     

    পাতার ফাঁকে শরীর ছুঁয়েছে দৃষ্টি
    প্রজ্জ্বলিত বৈদিক অগ্নি;
    সাত জন্মের গিঁটে আবদ্ধ
    পলাতক মন পুরোডাশ,
    হন্তারক রেডি – অন ইওর মার্ক সেট গো
    রক্ত ঝরছে সিঁথি বেয়ে।

  • কবিতা

    ধোয়া তুলসী পাতা

    ধোয়া তুলসী পাতা
    -ছবি মাইতি
    সব কি মুছে যায় দিনের শেষে!
    তোমার কাঁধের ঝোলাটায়-
    লুকিয়ে বাদাম খোসা,
    রেস্টুরেন্ট এর খোঁচানো কাঁঠিটা হঠাৎ
    জোনাকি হ’ল।
    অন্ধকারে তোমারই পাশেপাশে
    টিপটিপ আলো
    তুমি হাত বাড়ালে, চারপাশে
    শুধু জোনাকি
    রাতজাগা বাউণ্ডুলে পাখিটাকে
    পিছনে ফেলে কেমন পালায়।
    রাতজাগা মায়ের কাশি, দম ফাটায়
    তোমার পকেট ময়দানের হাওয়া ফেলে
    তুলসী চারা।
    তুমি দু’চামচ তুলসী রসে
    মায়ের হাঁ করা মুখটা –
    তুলে ধরলে।
    ওষুধ পাওয়া গেল না-
    মায়ের চোখের কোনে জল
    হাজার চাবুক টপটপ,
    তোমার অস্বস্তি তে, মায়ের কাঁপা হাত
    তোমার শিয়র ছুঁলেন।
  • কবিতা

    ছোট্ট সুখ

    ছোট্ট সুখ 
    -সীমা চক্রবর্তী 
    একটু খানি চাওয়া আর একটু খানি পাওয়া
    তাই নিয়ে তোমার আমার নিত্য তরী বাওয়া।
    পুড়ছে দেখো পুড়ছে এ মন পুড়েই হবে শুদ্ধ
    দহন জ্বালা জানবে না কেউ মনের কপাট রুদ্ধ।
    কষ্টটাকে বুকে চেপে হাসো কতো যত্নে
    আমিও আমার নকল হাসি সাজিয়েছি রত্নে।
    আমি জানি তোমার ব্যথা, তুমিও জানো আমার
    প্রতীক্ষা করা অ-হেতুক, সময় নয় তো থামার।
    তবুও আমরা বাঁচবো নিয়ে নকল-মুখোশ হাসি
    সর্বনাশের খেলায় মেতে হবই সর্বনাশী ।
  • কবিতা

    জীবনের প্রহসন

     

    জীবনের প্রহসন
    -কল্যাণী ত্রিবেদী 

     

     

    আমি এক ঈশ্বরের সন্তান
    কিন্তু কি আশ্চর্য্য, ঈশ্বরের কোনো ও
    শক্তি ই নেই আমার! আমি এক দুর্ভাগা অসহায় সন্তান।

    জন্মদাতা পিতা মাতার করতে পারিনি
    কোনো উপকার। সতী সাবিত্রী পতিব্রতা নারী-
    মৃত্যুর হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাবার,শত সাধনেও
    পাইনি কোনো উপাচার।

    স্নেহশীলা আদর্শ জননী আমি,
    সন্তানের জন্ম দিতে পারি, কালের হাত থেকে
    রক্ষা করার কোনো শক্তি নেই আমার। মাতৃত্বের মিথ্যা
    অহংকারে গর্বিত আমি।

    আমি এ কোন ঈশ্বরের সন্তান?
    প্রহসনের জন্ম নিয়ে বেঁচে থাকার প্রয়াস!
    তিল তিল করে গড়ে তুলি যন্ত্রণার ইতিহাস।

<p>You cannot copy content of this page</p>