• গল্প

    গল্প- অলৌকিকতার আলো অন্ধকারে

    অলৌকিকতার আলো অন্ধকারে
    -সুনির্মল বসু

    তখন তাঁর ভয়ংকর ব্যস্ততার দিন।
    সারাদিন স্কুল করবার পর, অনেক সময় খাবার সময় জোটে না, তাঁকে এ বাড়ি ও বাড়ি টিউশনি করে বেড়াতে হয়। যাতায়াতের জন্য সাইকেল একমাত্র ভরসা।
    সেদিন স্কুল থেকে বেরিয়ে একটা ব্যাচ পড়িয়ে সুদিন বাবু সবে দ্বিতীয় ব্যাচ পড়াতে শুরু করেছেন, গিন্নী জয়ার ফোন।
    তুমি কোথায়?
    স্টেশন রোডের কাছে, পড়াচ্ছি তো!
    একবার একটু এখানে আসতে পারবে?
    কোথায়?
    জয়দেব দার দুর্গা বাড়িতে।
    কেন?
    এসোই না, তখন বলবো।
    ছাত্রদের টেস্ট পেপার থেকে কাজ দিয়ে সুদিন বাবু
    ওখানে উপস্থিত হলেন।
    সন্ধ্যেবেলায় আরতি পর্ব চলছিল। প্রচুর ভক্তদের ভিড়।
    জয়া বললো, এসো।
    জয়দেবদা, সুদিন বাবুর হাতটা দেখতে চাইলেন।
    অনেকক্ষণ দেখার পর বললেন, আজ কিছু বলবো না। আপনি তো সাংঘাতিক লোক মশাই,আপনি পরে একদিন আসুন।
    সুদিনবাবু ফিরে গিয়ে পুনরায় ছাত্র পড়াতে বসলেন।
    কদিন বাদে সময় বের করে দুর্গা বাড়ি গেলেন।
    জয়দেবদা বললেন, আপনার তো এখানে জন্মাবার কথা না!
    মানে?
    আপনি তো বিরাট বড় বাড়ির লোক মশাই।
    কি বলছেন?
    আপনার তো বিরাট বাড়ি। বিরাট প্রজামহল। সবাই আপনাকে খুব মান্যতা করে।
    দাদা, আমি খুব সামান্য মানুষ। দেখছেন না, সারাদিন দুটো পয়সার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছি।
    আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না?
    কি করে হবে?
    আমি আপনাকে একটা কাজ করতে বলবো। সেটা করতে পারবেন? তাহলে আপনি নিজেই বুঝে যাবেন।

    তিনি কানে কানে একটা প্রক্রিয়ার কথা বললেন। বললেন, কাউকে বলা যাবে না কিন্তু! আজ রাতেই করুন। আপনি নিজেই জানতে পারবেন।

    সুদিন বাবু টিউশনি পড়াতে ঢুকলেন। ছাত্র পড়াতে গিয়ে ব্যাপারটা মাথার মধ্যে নেননি কখনো।
    অনেক রাতে বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি যখন শুতে গেলেন, তখন জয়দেব দার গোপন প্রক্রিয়াটার কথা তার মনে পড়ল।

    পরীক্ষার ছলে তিনি সেটি করে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। একটু বাদেই ঘুম এসে গেল। সারাদিন খাটাখাটুনির পর এমন ঘটনাই স্বাভাবিক।

    ঘুমের মধ্যে খানিকটা সময় বাদে জিনিস দেখলেন, তিনি যেন ওপর থেকে নিচের দিকে চাইছেন। দেখলেন, প্রচুর সবুজ গাছপালা। একটা বড় রাজপ্রাসাদের মত সাদা বাড়ি। বড় বড় জানালার উপর লাল রঙের সেড দেওয়া। বাড়ির বিশাল বড় গেট। সুদিন বাবু দৃষ্টি নামিয়ে দিলেন। দেখলেন, বড় একটি আম গাছের নিচে এক ভদ্রলোক হলুদ ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে জমিদারী স্টাইলের পাঞ্জাবী ও ধূতি। পায়ে সাদা রঙের চটি।
    সুদিন বাবু ভদ্রলোকের দিকে ভালোভাবে চাইলেন।
    ওনার পাঞ্জাবিটা ঘাড় থেকে সামান্য নেমে এসেছে।
    পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে সুদিন বাবু বিভিন্ন সভায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভাষণ দিতে যান।
    বক্তৃতা দেবার সময় বারবার জামার কলারে হাত দিয়ে তাকে উঁচুতে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। স্বপ্নের মধ্যে তাঁর মনে হচ্ছিল, ওনার পাঞ্জাবিটা উনি একটু তুলে দিলেই পারতেন। ভদ্রলোক শ্যাম বর্ণ। সুদিন বাবুর সঙ্গে ভদ্রলোকের চেহারায় কিছু মাত্র মিল নেই। কিন্তু ওনার চোখের দিকে তাকাতেই, সুদিন বাবু একটু আশ্চর্য হয়ে গেলেন। হুবহু ওনার নিজের চোখ। চিন্তান্বিত অবস্থায় তাঁর চোখটা এমনই দেখায়। প্রথম দিন এই পর্যন্ত।

    পরদিন সুদিন বাবু দুর্গাবাড়িতে গেলেন। জয়দেবদাকে বললেন, আমি আমাকে গতকাল রাতে দেখেছি।
    জয়দেব দা বড় মাপের সাধক। বললেন, মাঝে মাঝে আবারো করুন। নিজেই সব দেখতে পাবেন।
    সুদিন বাবুর কৌতূহল বেড়ে গেল।

    দুদিন বাদে তিনি আবার ওই প্রক্রিয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নে দেখলেন, আগের দিনের সেই ভদ্রলোক একটা বিরাট জলাশয়ের কাছে এসেছেন।
    তাঁর চারপাশে ফতুয়া আর ধূতি পরা কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে। ভদ্রলোক জলাশয়ের দিকে আঙ্গুল উঁচু করে ওনাদের কিছু একটা দেখিয়ে কিছু একটা নির্দেশ দিচ্ছেন।

    পরদিন সুদিন বাবু জয়দেব দার কাছে দ্বিতীয় দিনের স্বপ্নের কথা জানালেন।
    তৃতীয় দিন রাতে ওই প্রক্রিয়াটি করবার পর, সুদিন বাবু ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নের ঘরের মধ্যে দেখলেন, টানা বারান্দা দিয়ে এক দীর্ঘকায় ভদ্রমহিলা হেঁটে চলেছেন।
    পরদিন তিনি দুর্গা বাড়িতে গেলেন।
    দাদা, কাকে দেখলাম?
    আপনার আগের জন্মের স্ত্রী।

    কদিন বাদে সুদিন বাবু ওই প্রক্রিয়াটি করে শুতে গেলেন। খালি বাদে স্বপ্নের মধ্যে দেখলেন, মাটির চওড়া রাস্তা। পথের দুপাশে সবুজ গাছপালা। অনেক লোক বাসের মাচায় করে দুর্গা ঠাকুর নিয়ে যাচ্ছে।
    জয়দেবদা, এমন স্বপ্ন দেখার মানে কি?
    আপনার বাড়িতে পূজোর জন্য দুর্গা ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আপনি মায়ের মুখটা দেখতে পেয়েছেন?
    নাতো দাদা। দেখিনি। তবে অনেক মানুষ বাসের মাচাটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, দেখেছি।

    কদিন পর সুদিন বাবু আবার ওই প্রক্রিয়া করলেন। তারপর শুতে গেলেন।
    ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলেন। আগের দিনের সেই ভদ্রমহিলা গোল ঘোরানো সিঁড়ির দোতলায় উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ভদ্রলোক প্রধান দরোজা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন। তাঁকে ঘরের ফিরতে দেখে, ভদ্রমহিলার চোখে মুখে একটা স্বস্তির ছাপ পড়লো যেন।

    এর কিছুদিন পর সুদিন বাবুর বাবা বার্ধক্য জনিত কারণে পরিণত বয়সে মারা গেলেন। শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে গেল।

    সুদিন বাবু এই অশৌচ কালের মধ্যে জয়দেব দার শেখানো প্রক্রিয়াটি করলেন। কিন্তু কোনই ফল পেলেন না। বারে বারে চেষ্টা করা সত্ত্বেও, কিছুতেই আর সেই ছবিগুলো আসছিল না।

    তিনি দুর্গা বাড়িতে গেলেন।
    দাদা, বারবার চেষ্টা করছি। আর তো আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
    পাবেন না তো!
    কেন?
    আপনার এখন অশৌচ কাল।

    সুদিন বাবু নানান ব্যস্ততার কারণে পরবর্তীকালে আর কখনো ওই চেষ্টাটা করেননি।

    কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, এইসব অলৌকিক ব্যাপার নিয়ে ঘাটাঘাঁটি করা ঠিক নয়। বর্তমান সংসারের প্রতি মায়াটান কমে যায়।

    জয়দেবদা বললেন, আগামী জন্মে আপনি ও বাড়িতেই জন্মাবেন। আগের জন্মে কালী মন্দিরটা অসম্পূর্ণ রেখে আপনি মারা গিয়েছিলেন। আগামী জন্মে ওখানে জন্মে আপনাকে সেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।

  • কবিতা

    কবিতা- টুকরো মনের অল্প কথা

    টুকরো মনের অল্প কথা
    -শুক্রাচার্য্য

    টুকরো পানার ফুল ফুটেছে ভর দুপুরে…
    ঘাস ফুলেদের ঘুম ভেঙেছে রং নুপুরে…
    টুকরো আলোর ঝিকির মিকির অল্প কথা…
    আকাশ ছাড়া নীহার বুকে ভীষণ ব্যথা…
    টুকরো আলোর খামখেয়ালে গানের তালে…
    টুকরো নদীর উজান বেয়ে আকাশ চলে…
    টুকরো আমি টুকরো তুমি টুকরো সবাই…
    টুকরো কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচছি তো তাই…
    টুকরো দিয়ে তৈরি করা অসীম ঘরে…
    অনন্তকে রাখবো এনে বন্দী করে…

  • কবিতা

    কবিতা- বোধের ছায়া অশথ পাতায়

    বোধের ছায়া অশথ পাতায়

    -অসীম দাস

    এ পথ ও পথ সে পথ ঘুরে
    ঘুমের ঘুর্ণিপাকে ,
    তাকিয়ে আছি ‘ বোধহয় ‘ চোখে
    কালকে পাবো তাকে ।

    ‘ তাকে’র মানে ‘ তুমি ‘ই কেন !
    দৃশ্য হতে পারে ,
    কিংবা গাভীন বোধের ছায়া
    অশথ পাতার আড়ে ।

    সার বুঝেছি , সত্য না হোক
    স্বপ্ন সুজন দামী ,
    ভাটার শোকে উজিয়ে উড়ান
    আসবে উজানগামী ।

    — উজান , উজান , উৎসে যাবো
    সূর্য টলোমলো ,
    আয়ুর আলো বিকেল ছুঁলো
    সময় ফিরে চলো ।

    ফেরার নদী পেরিয়ে ফেরাও
    আর এক জন্মদ্বীপে ,
    নতুন জন্মে , নতুন দৃষ্টি
    পাতবো নতুন ছিপে !

  • কবিতা

    কবিতা- স্বামী

    স্বামী
    –প্রদীপ শর্ম্মা সরকার

     

     

    ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো,
    দাঁত তো নয় সাদা মূলো।
    বেরোজগেরে ধম্মের ষাঁড়,
    ফুটো নৌকোয় বাইছে দাঁড়।

    জড়দ্গব নারাণশিলা,
    দুষ্টকোপী পাথর নীলা।
    দুচক্ষের নষ্টবালু,
    ভীমরতি বেশ আলুথালু।

    নীরেট মাথা গবেট ষণ্ড,
    পত্নীপ্রিয় আকাট ভন্ড।
    দৃষ্টিনিরোধ গন্ধমাতন,
    নিমের ডালের কষ্ট দাঁতন।

    বংশীধারী কলির কেষ্ট,
    মদমত্ত মাতাল শ্রেষ্ঠ।
    চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা,
    যূপকাষ্ঠে বলির পাঁঠা।

    তামাদি এক সাবেক ঢেঁকি,
    অবিশ্বাসী বেজায় মেকী।
    ঘ‍্যানর ঘ‍্যানর সারাক্ষণ,
    গায়ে এঁটুলি অনুক্ষণ।

    কথার ‘পরে কথা সাজায়,
    পিরিং পিরিং সেতার বাজায়।
    অকাজ পেলে বেজায় ফুর্তি,
    টগবগিয়ে ঘোটক মূর্তি।

    প‍্যাচালপারা খেয়াল গান,
    গিলতে হেথায় হোথায় যান।
    ঠিক ধরেছ,ইনিই আমি,
    হতভাগা  মূর্ত স্বামী।

  • কবিতা

    কবিতা- হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা

    হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা

    -অসীম দাস

    পেয়েছি অক্ষর সুখ
    ভাবনার রণে বনে জলে জঙ্গলে ,
    কোথায় সাজাবো ?
    কবিতার প্রচ্ছায়া উঁকি মেরে
    ভেসে যায় সরযূর জলে ।

    যদি বলো আজীবন ঘুমহীন থেকে যাবো
    হিরণ্য হরিণ ।
    সুস্বাদু আয়ু জ্বেলে পড়শীর পিদিমের
    রিমঝিম আলো হতে পারি ।
    অমূল্য এ সংশয়ী নিউরণ দান করে
    শ্যামাপোকা বোকা হয়ে
    শব্দের উৎসবে নির্জনে পুড়ে যাবো , বলো !

    আরও কতো রাত গোহারাণ হবো !
    আরও কতো জন্মপাত করে গেলে
    অন্তত একটা পঙতির পাখা প্রথম গজাবে !

  • কবিতা

    কবিতা- এই উঠোন, এই কুয়োতলা

    এই উঠোন, এই কুয়োতলা
    -সুনির্মল বসু

     

     

    সেদিনের মতো আজও এই উঠোনে প্রতিরাতে এসে পড়ে জ্যোৎসনার রোদ্দুর,তাল বনের মাথার উপর চাঁদ ভেসে যায়, বাতাসে শিউলি ফুল সুগন্ধ ছড়ায়,
    রাত গভীরে এই উঠোন, এই কুয়োতলা আবহমানকাল ধরে স্মৃতির গল্প বলে, মধ্যরাতে কারা যেন ঝুমকো লতার বনে হাঁটে,
    বড় দীঘির পাড়ে সুপারি বনের ছায়ায় প্রেমিক প্রেমিকা ফিসফিস কথা বলে,
    অরণ্য পাখি কর্কশ কন্ঠে ডেকে ওঠে,
    কাঠ বাদাম গাছের মাথায় ঢাউস ঈগল উড়ে যায়,
    গভীর রাতে অরণ্য লোক ভালোবাসার কথা বলে,
    কত স্মৃতি জমা হয়ে আছে দীঘির জলে,
    বাতাসে ভেসে যায় প্রেমের আশ্লেষ,
    এই উঠোন, এই কুয়োতলা, দূরের অরণ্য কি ভালবাসার দেশ, দোলনচাঁপার বন বাতাসে দোলে,
    মাধবীলতার বনে কার উদাসী আঁচল ওড়ে, মধ্যরাতে কারা ভেসে যায় ভালোবাসার ঘোরে,
    আকাশে তারার মেলা, বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
    মায়াময় প্রকৃতি দিচ্ছে ভালোবাসার ডাক,
    কবে কখন কারা যেন হেঁটে গেছে বড়দীঘির পাড়,
    জীবন থমকে থেমে আছে, কাকে সে কথা বলি আর,
    এই উঠোন, এই কুয়াতলার উপর দিয়ে মধ্যরাতে চাঁদ হেঁটে যায়, প্রেমিক প্রেমিকার মুখের উপর চাঁদের আলো পড়ে, হাজার হাজার বছর ধরে কারা ভালোবাসার নতুন ইতিহাস গড়ে,
    দীর্ঘ প্রলম্বিত বাতাস বয়ে যায় প্রতিদিন জীবনের ঘরে।

  • কবিতা

    কবিতা- সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা

    সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা

    -অসীম দাস

    সব পাওয়াই বাসি হয় একদিন সময়ের ঝড়ে ,
    শুধু ভাগশেষ ভালোবাসার
    তরতাজা ফুল ফোটে প্রতিটি দিনের অন্দরে ।

    দূরের দিগন্ত বাড়িতে খিল এঁটে ঘুমোলেও
    শেকড় শয্যার সহবাস সুখ
    ঘুমের ফাঁক গলে স্বপ্নকান্ডের কাঁধে
    পরাগের পাল হতে চাইবেই ।

    সরে যাওয়া এবং ফিরে আসার
    ছুঁই ছুঁই ইচ্ছের মধ্যে যে ফাঁকখনি
    শুয়ে আছে শরীর স্মৃতির জিনে ,
    একদিন অতীতের আকরিক টানগন্ধে
    জেগে উঠে বলবে
    — চলো চলো অমৃতের সন্তান হই আবারও আবার ।

  • কবিতা

    কবিতা- সে

    সে
    -সীমা চক্রবর্তী

    প্রতিবার আসি বলে যায়, যাওয়ার সময়,
    এই বার ‘চলি’ বলে সেই যে গেলো চলে
    হাতে দিয়ে একগোছা রক্ত গোলাপ
    আর তো এলো না ফিরে
    প্রতীক্ষার প্রতি পলে
    নদী হয়ে বয়ে যায় একরাশ দ্বিধা সংশয়…

    তারপর কত বার পৃথিবীতে দিনরাত এসে চলে গেছে
    বসন্তও ঘুরে গেছে, গেছে বৃষ্টির দিন,
    আমার নিস্তব্ধতা কে ঘিরে দৃষ্টি হয়েছে ক্ষীণ
    উৎকন্ঠিত আমি আজও আশায় আশায়…
    শব্দ পেলেই বারবার দরজা খুলে দেখি
    ফিরে কি এলো সে কী ?
    যায় না দৃষ্টি বেশি দূর অলিগলি রাস্তায়
    তবু চেয়ে থাকি এক বুক শূন্যতা নিয়ে অসীম নীরাবতায়
    সে নেই কোনখানে, অথচ আমি গভীর বিশ্বাসে।

    কথা ছিল ‘চললাম’ বলে আমি যাবো আগে
    দিয়ে যাবো তার হাতে রজনীগন্ধার স্তবক,
    দিকশূন্যপুরে… এভাবে বড় একা লাগে
    সে যে আমাকে হারিয়ে আগেই গেলো চলে
    ব্যথিত দৃষ্টিতে আমি একা জেগে পরাজয়ের মালা গ’লে..

  • কবিতা

    কবিতা- তুমি কি বোঝোনা

    তুমি কি বোঝোনা
    -গৌতম কুমার রায়

    তুমি বোঝো আর নাই বোঝ
    আমি নীরবে ভালোবেসে যাবো
    সূর্যের মতো আমার ভালোবাসা
    যতই মেঘে ঢাকুক না কেন
    আবার সূর্য হাসবেই।

    এত ভালবাসি যারে মাঝে মাঝে সে
    এমন সব কথা বলে বসে
    ভাবি সে কি আমার ভালোবাসা!
    জানিনা সে আমায় কি ভাবে
    তবে আমি তো তারে ভালবেসেছি হৃদয় থেকে।

    মোর যত ভালোবাসা ছিল
    উজাড় করে দিয়েছি তারে
    সে কি বুঝতে পারে না একবারও?
    ভালোবাসলে ব্যাথা দিয়ে যায় বুকে।
    নীরবে সহ্য করে যেতে হয় আঘাত
    এ আঘাত বোঝাই কি করে।

  • কবিতা

    কবিতা- পুরস্কার

    পুরস্কার
    প্রদীপ শর্ম্মা সরকার

     

     

    এক মালসা আগুন নিয়ে কাগজে ছিটিয়ে দিলে–
    হ’য়ে উঠলো দ্রোহকাব্য।
    এক আকাশ সংবেদনার বারি সিঞ্চন করলে পাথর বুকে,
    হ’য়ে উঠলো অনুভূতির স্নেহাধার।
    এক থোকা সত্য ছুঁড়ে দিলে নীলিমায়,
    হ’য়ে উঠলো অবোধের জ্ঞানাঞ্জন।

    একবার সুর মিলিয়ে গলা ছাড়লে সপ্তমে,
    জীবন হয়ে উঠলো গীতিময়–
    এক করে দিলে দিনরাত– ঘামে,রক্তে আর বীর্যে ;
    জন্ম নিলো নাছোড় সূর্য্যবীজ,
    একনাগাড়ে পঁয়ষট্টি পেড়িয়ে থামতে গেছিলে–
    নীতির প্রতিরোধে বাঁধা পড়ে গেলে।

    একলহমার চমক ছিল না কর্মে,
    শেষ অধ্যায়ে এসে রূপান্তরিত মর্মর–
    একদিন ছবি হবে জেনেও
    প্রচারের আলো মাখলে না গায়ে–
    একধামা মুড়ি জোগাতে গিয়ে
    ফিরে তাকানো হ’ল না হলুদ বসন্তের দিকে–
    একেশ্বরবাদী হয়ে বহুত্বের বিশ্বাসে কুড়াল চালালে–
    প্রতিবাদী তকমা জুটে গেল–
    কালকুঠুরির আমৃত্যু আশ্রয় তো নিশ্চিত হ’ল!

You cannot copy content of this page