অণু কবিতা
-
অণু কবিতা- ভরসা
ভরসা
– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্তযাদের মাথায় একদম ছাতা নেই
একমাত্র পাখিওড়া ছায়াটুকু ছাড়া,
ওদের কি কোনো হিসেবের খাতা নেই?
তোমাদের ডাকে ওরা কেন দেবে সাড়া?ওদের বাইরে রেখে বন্ধ ক’রে ঘর
এখন দেখছো চোখে ধু-ধু বালুচর।ওরা ডেকেছিলো, তুমিই দাওনি সাড়া
তাই সব নদীনালা শুকিয়ে সাহারা।তোমাদের ছেড়ে গেছে অভিমানে তারা
অন্ধের ভরসায় পথ হাঁটে কি কানারা? -
অণু কবিতা- কবির শেষপাতা
কবির শেষপাতা
-বিকাশ দাস
কবিতা কি পাথর
কল্পনাতীত
দু’হাতের শ্রম ভেঙে ভেঙে মানুষের আদলে
মূর্তি বানানো
শব্দের আঁচড় অনুসন্ধিৎসু
সৌন্দর্যয়ের লাবণী রক্তঘাম।কোন এক খোলা প্রত্যহে
বাজারের চৌমাথায় একলা ছেড়ে আসা
জমজমাট মানুষের যাওয়া আসার ভিড়ে মুক্তির বোধ।ক্রমশ কবির নির্মাণ
নিঃশ্বাস নিস্তরঙ্গ
অযত্নে ভেঙে ভেঙে মৃত্যুর খটকা
আর এক পাথর রুদ্ধশ্বাস সমাধি কবিতার শেষ পাতা। -
অণু কবিতা- বোধ
বোধ
– দীপ্তিমান ভাণ্ডারীগনগনে সূর্যের দুপুরে
একখন্ড অবসাদ ঢুকে পেরে
মনের অলিন্দে।
কেবলই ছায়ার সাথে নিষ্ফল বোঝাপড়া।মুঠো খুলে আজ উড়িয়ে দিতে হবে
সেইসব স্নিগ্ধতা-শিশির কণা-ভালোবাসা;
কিন্তু হায়, মুঠো খুলে দেখি
পরে আছে ফাঁকা বিলকুল।ঠিক তখনই চোখের কোণায়
দু-এক ফোঁটা চিকচিকে নোনা জল।
একি তবে
নিজের জন্য নিজের সহানুভূতি! -
অণুকবিতা- সময় প্রবাহ
সময় প্রবাহ
– তাপসী শতপথীহাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আমি
পারছি না আর চলতে,
কত কথা সেই শুরু থেকে বলা
পারছি না আর বলতে।
বৃদ্ধ এ মন কুব্জ এ দেহে
অনেকটা পথ হাঁটলাম।
নীহারিকা থেকে ধ্রুবতারা হয়ে
কত অজানাকে চিনলাম।
অবশেষে আমি অবসর দেশে
তোমাতেই পাই খোঁজ।
প্রতিক্ষণ আসি ক্ষণেতে হারায়
সময়ের স্রোতে রোজ। -
অণু অবিতা- ভিতর
ভিতর
-সুমিত মোদক
আজকাল নদীর ওপারের শব্দও শুনতে পাই ;
নদীর দুকূল এখানে অনেকটা কাছাকাছি ;
ঠিক তোমার আর আমার মতো ….
বুকের ভিতরের নৌকটা শীতের কুয়াশায় ঢাকা ;
যেখানে সাজানো আছে ভবিষ্যতের আড়বাঁশি ;
সেখানেই সাজিয়ে রাখবো অতীতের যত ক্ষত . -
অণুকবিতা- বারি
বারি
-সঙ্কর্ষণবুকেতে যদি বা রাখো পরিযায়ী ডানা
পালকে জড়ানো আছে অচেনা ঠিকানা।যে মেঘে ঝরালো জল এ শুষ্ক হৃদয়ে
আকাশও বাঁধেনি তাকে সে চেনা সময়ে।তুমি কি ভিজেছো তবে হে অনামী পাখি
মুছেছো আহত ডানা না জেনে বেবাকই? -
অণুকবিতা- “অনুভূতি”
“অনুভূতি”
– সোমা কর্মকারজীবন বয়ে চলে স্পন্দিক গতিতে,
মানুষ চলে তারই তালে তালে।
যেমন করে চলে নৌকা নদীর জলে।
গড়ে ওঠে অনেক ঘটনা স্মৃতির অতলে।
কিছু হারায়, কিছু পায়, কিছু সাথে চলে,
হারিয়ে ও হারায় না যে স্মৃতি,
তাইতো শিহরণ জাগায় হৃদয় জুড়ি।
ভুলেও ভোলা যায় না কিছু অনুভূতি।
না দেখে মেটে না তৃষ্ণা, দেখে মেটে না তৃপ্তি,
অতৃপ্তিতে প্রাণ কাঁদে, হিয়া হয়ে ওঠে অধীর।
ভাবের ঘোরে ক্লান্ত হয় আঁখি,
ভাবে শুধু বিরলে বসি। -
অণু কবিতা- জীর্ণ রক্ষা কবজ
জীর্ণ রক্ষা কবজ
– শুক্লা রায় চৌধুরীমখমলের ওই আসন পড়ে তোমার দম্ভ কিসের রাজন?
জীর্ণ বর্মে যুদ্ধ আমার তোমার হয়েই রক্ত করি হরণ;
কূটনীতিতে সিদ্ধ তুমি আমিই কেবল স্থূল,
ঠিকের রাজ্যে শাসন তোমার আমিই কেবল ভুল;
শীর্ষে যে ওই বিরাজ করো সুখ তো তোমার হস্তগত,
রক্ষা কবজ হয়েও আমি রয়েছি তোমার পদানত।। -
অণুকবিতা- শেষ থেকে শুরু
শেষ থেকে শুরু
– অরুনজিতএমনও তো হতে পারে
পথ যেখানে শেষ
জীবন সেখানে শুরু।এমনও তো হতে পারে
মৃত্যু যখন নিছকই খেলা
স্বপ্ন তখন আলো।আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না,
পাহাড়ের ঢেউ ঘুমাবে আকাশের কোলে
টুপ টুপ করে ঝরবে বরফ গলা জল,
আবার পাবো তোমায়
হারিয়ে যাবার সেই উন্মুক্ত বিন্দুতে …….এমন কি হতে পারে কখনো?
শেষ থেকে শুরু। -
অণু কবিতা- আনন্দ
আনন্দ
– পলি ঘোষআষাঢ়েরর প্রবল রবীন আনন্দে।
গানখানি প্রিয় গাঁথিলাম মোর ছন্দে।
দিল তারে বনবীথি
কোকিলের কলগীতি
ভরে দিল মোর বিশ্বভুবন
বকুলের গন্ধে।
চারিদিকে বয়ে চলে
মাধবীর মধুময় মহামন্ত্র
নদীতে মাঝি বৈঠা বায়ে
তরণী পরে
রঙ্গে রঙ্গে রাঙ্গালো এ ত্রিভুবন
বানীমম নিল তুলে
পলাশের কলিগুলি
বেঁধে দিল মোর হৃদয়ের
মনিবন্ধে।