কবিতা
-
কবিতা- নিজেই নিজের খোঁজে
নিজেই নিজের খোঁজে
-অসীম দাস
ফিরছি নিজের কাছে
আমায় ছেড়ে নড়ছে নোঙর ইচ্ছে খেলো মাছে ।মাছ খেয়েছে স্মৃতি
মাছের পেটে লুকিয়ে আছে নামের আগে ইতি ।কী যেন সেই নাম?
ইতিই শুধু যাচ্ছে বোঝা, নাম গায়ে চুনকাম ।কোথায় যাবো এবার ?
পরিচিতির প্রমাণ দেবার সাধ্য যে নেই আমার ।উৎস ফেরায় মুখ
মাঝনদীতে কাটছি সাঁতার সাগর দেবে সুখ।সুখ পাওয়া কী সোজা?
আগুন জলের সন্ধি তলায় প্রেম হারিয়ে খোঁজা ।খুঁজছি অন্ধকারে
নিজের কাছে ফিরবো বলেও হারাই বারেবারে । -
কবিতা- ঠোঁটকাটা
ঠোঁটকাটা
-সুবিনয় হালদারসব জিনিস দেখতে পাওয়া
সব জিনিস শুনতে পাওয়া
নিজেকে নিজে এক-বুক নদী কষ্টে হাবুডুবু খাওয়ার সামিল !
সেই সঙ্গে শত্রুর সংখ্যা অহেতুক বৃদ্ধিতে জীবন্ত আত্মাকে চক্রবূহ্যে ঘেরাটোপে আবদ্ধ করে,
নিজেকে কাঁটাতারে টুকরো-টুকরো ক্ষতবিক্ষত রক্তক্ষরণে ভাসানো !
বিশেষ করে যদি আপনি সব কিছু বুঝতে পারেন-
ধরে ফেলতে পারা- অনুভব করতে পারার বিলুপ্তপ্রায় শ্রেণীর অংশ হয়ে থাকেন,
তাহলে আপনার কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই-
এই বলে দিলুম ।
এরপরও যদি আপনি ঠোঁটকাটা হন
সবার সামনে সত্য বিবেককে মান্যতা দিয়ে অকপট ভাবে ভাব-ভালোবাসা দেখিয়ে কণ্ঠ চর্চা করেন-,
তাহলে জানবেন আপনার মহাপ্রস্থানের দিন আগত !
এর জন্য অবশ্যই আপনার জন্য একটা পুরস্কার জুটবে-
তা হলো- তিরস্কার কিংবা উপহাস !
সে আপনি মানুন আর নাই মানুন ।
তাই আগ-বাড়িয়ে প্রতিকূলগামী না হয়ে অনুকূল-গামী হয়ে মচ্ছবে সামিল হোন আর কৃষ্ণ ভজন করুন ;
দেখবেন মানসিক শান্তি পাবেন
“যে তৃষা জাগিলে তোমারে হারাবো সে তৃষা আমার জাগায়না,
যে ভালোবাসার তোমারে ভুলিবো সে ভালোবাসায় ভোলায়না “ -
কবিতা- মাটির সুর
মাটির সুর
-সুমিত মোদকনতুন করে শুরু করাটা মোটেই সহজ নয় ;
একটা একটা করে পুরানো সকল স্মৃতি মুছে ফেলে ,
আল্পনা দেওয়া উঠান জুড়ে ;দিগভ্রান্ত পাখি আকাশ পথে উড়তে উড়তে
নেমে আসে মাটির কাছাকাছি ;
তার পর খুঁটে খুঁটে তুলে নেয় শস্য দানা ;
মাদি ছাগলের পিঠে চড়ে কিছুক্ষণ রোদ্দুর
মেখে নেয় সারা শরীরে ;আলপথে কৃষকের পদ চিহ্ন থেকে যায় ;
সে পথেই এগিয়ে চলতে হবে সামনে ,
দিগন্ত রেখার দিকে ;
এক এক করে যখন সকলের ভুলে যাও চেনা মুখ ,
ঠিক তখনই ভেঙে পড়া কাকতাড়ুয়া
বড় বড় চোখ তুলে থাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে ;এই বুঝি কুয়াশা নেমে আসবে আবাদি জমি জুড়ে ;
হৃদয়ের অলিন্দ জুড়ে ;
তবুও তো কেউ কেউ এখনও মেঠো সুর তোলে ;
শুনিয়ে যায় মাটির সুর ,
আনন্দ উৎসব কথা ;ঘরে ঘরে নতুন চালের ঘ্রাণ ওঠে ;
শিশুরা মুখস্থ করে ধারাপাত , নামতা …এ সকল ছেড়ে , সুতি খালের ওপারে গিয়ে
পা ফেলাটা সহজ কাজ নয় ;
ওপারে অনেকটা জায়গা জুড়ে সবুজ ঘাস ;
সেখানেই ঘুড়ে বেড়ায় , উড়ে বেড়ায়
সেই পাখিটা ; -
কবিতা- টুকরো মনের অল্প কথা
টুকরো মনের অল্প কথা
-শুক্রাচার্য্যটুকরো পানার ফুল ফুটেছে ভর দুপুরে…
ঘাস ফুলেদের ঘুম ভেঙেছে রং নুপুরে…
টুকরো আলোর ঝিকির মিকির অল্প কথা…
আকাশ ছাড়া নীহার বুকে ভীষণ ব্যথা…
টুকরো আলোর খামখেয়ালে গানের তালে…
টুকরো নদীর উজান বেয়ে আকাশ চলে…
টুকরো আমি টুকরো তুমি টুকরো সবাই…
টুকরো কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচছি তো তাই…
টুকরো দিয়ে তৈরি করা অসীম ঘরে…
অনন্তকে রাখবো এনে বন্দী করে… -
কবিতা- বোধের ছায়া অশথ পাতায়
বোধের ছায়া অশথ পাতায়
-অসীম দাস
এ পথ ও পথ সে পথ ঘুরে
ঘুমের ঘুর্ণিপাকে ,
তাকিয়ে আছি ‘ বোধহয় ‘ চোখে
কালকে পাবো তাকে ।‘ তাকে’র মানে ‘ তুমি ‘ই কেন !
দৃশ্য হতে পারে ,
কিংবা গাভীন বোধের ছায়া
অশথ পাতার আড়ে ।সার বুঝেছি , সত্য না হোক
স্বপ্ন সুজন দামী ,
ভাটার শোকে উজিয়ে উড়ান
আসবে উজানগামী ।— উজান , উজান , উৎসে যাবো
সূর্য টলোমলো ,
আয়ুর আলো বিকেল ছুঁলো
সময় ফিরে চলো ।ফেরার নদী পেরিয়ে ফেরাও
আর এক জন্মদ্বীপে ,
নতুন জন্মে , নতুন দৃষ্টি
পাতবো নতুন ছিপে ! -
কবিতা- স্বামী
স্বামী
–প্রদীপ শর্ম্মা সরকারছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো,
দাঁত তো নয় সাদা মূলো।
বেরোজগেরে ধম্মের ষাঁড়,
ফুটো নৌকোয় বাইছে দাঁড়।জড়দ্গব নারাণশিলা,
দুষ্টকোপী পাথর নীলা।
দুচক্ষের নষ্টবালু,
ভীমরতি বেশ আলুথালু।নীরেট মাথা গবেট ষণ্ড,
পত্নীপ্রিয় আকাট ভন্ড।
দৃষ্টিনিরোধ গন্ধমাতন,
নিমের ডালের কষ্ট দাঁতন।বংশীধারী কলির কেষ্ট,
মদমত্ত মাতাল শ্রেষ্ঠ।
চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা,
যূপকাষ্ঠে বলির পাঁঠা।তামাদি এক সাবেক ঢেঁকি,
অবিশ্বাসী বেজায় মেকী।
ঘ্যানর ঘ্যানর সারাক্ষণ,
গায়ে এঁটুলি অনুক্ষণ।কথার ‘পরে কথা সাজায়,
পিরিং পিরিং সেতার বাজায়।
অকাজ পেলে বেজায় ফুর্তি,
টগবগিয়ে ঘোটক মূর্তি।প্যাচালপারা খেয়াল গান,
গিলতে হেথায় হোথায় যান।
ঠিক ধরেছ,ইনিই আমি,
হতভাগা মূর্ত স্বামী। -
কবিতা- হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা
হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা
-অসীম দাস
পেয়েছি অক্ষর সুখ
ভাবনার রণে বনে জলে জঙ্গলে ,
কোথায় সাজাবো ?
কবিতার প্রচ্ছায়া উঁকি মেরে
ভেসে যায় সরযূর জলে ।যদি বলো আজীবন ঘুমহীন থেকে যাবো
হিরণ্য হরিণ ।
সুস্বাদু আয়ু জ্বেলে পড়শীর পিদিমের
রিমঝিম আলো হতে পারি ।
অমূল্য এ সংশয়ী নিউরণ দান করে
শ্যামাপোকা বোকা হয়ে
শব্দের উৎসবে নির্জনে পুড়ে যাবো , বলো !আরও কতো রাত গোহারাণ হবো !
আরও কতো জন্মপাত করে গেলে
অন্তত একটা পঙতির পাখা প্রথম গজাবে ! -
কবিতা- এই উঠোন, এই কুয়োতলা
এই উঠোন, এই কুয়োতলা
-সুনির্মল বসুসেদিনের মতো আজও এই উঠোনে প্রতিরাতে এসে পড়ে জ্যোৎসনার রোদ্দুর,তাল বনের মাথার উপর চাঁদ ভেসে যায়, বাতাসে শিউলি ফুল সুগন্ধ ছড়ায়,
রাত গভীরে এই উঠোন, এই কুয়োতলা আবহমানকাল ধরে স্মৃতির গল্প বলে, মধ্যরাতে কারা যেন ঝুমকো লতার বনে হাঁটে,
বড় দীঘির পাড়ে সুপারি বনের ছায়ায় প্রেমিক প্রেমিকা ফিসফিস কথা বলে,
অরণ্য পাখি কর্কশ কন্ঠে ডেকে ওঠে,
কাঠ বাদাম গাছের মাথায় ঢাউস ঈগল উড়ে যায়,
গভীর রাতে অরণ্য লোক ভালোবাসার কথা বলে,
কত স্মৃতি জমা হয়ে আছে দীঘির জলে,
বাতাসে ভেসে যায় প্রেমের আশ্লেষ,
এই উঠোন, এই কুয়োতলা, দূরের অরণ্য কি ভালবাসার দেশ, দোলনচাঁপার বন বাতাসে দোলে,
মাধবীলতার বনে কার উদাসী আঁচল ওড়ে, মধ্যরাতে কারা ভেসে যায় ভালোবাসার ঘোরে,
আকাশে তারার মেলা, বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
মায়াময় প্রকৃতি দিচ্ছে ভালোবাসার ডাক,
কবে কখন কারা যেন হেঁটে গেছে বড়দীঘির পাড়,
জীবন থমকে থেমে আছে, কাকে সে কথা বলি আর,
এই উঠোন, এই কুয়াতলার উপর দিয়ে মধ্যরাতে চাঁদ হেঁটে যায়, প্রেমিক প্রেমিকার মুখের উপর চাঁদের আলো পড়ে, হাজার হাজার বছর ধরে কারা ভালোবাসার নতুন ইতিহাস গড়ে,
দীর্ঘ প্রলম্বিত বাতাস বয়ে যায় প্রতিদিন জীবনের ঘরে। -
কবিতা- সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা
সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা
-অসীম দাস
সব পাওয়াই বাসি হয় একদিন সময়ের ঝড়ে ,
শুধু ভাগশেষ ভালোবাসার
তরতাজা ফুল ফোটে প্রতিটি দিনের অন্দরে ।দূরের দিগন্ত বাড়িতে খিল এঁটে ঘুমোলেও
শেকড় শয্যার সহবাস সুখ
ঘুমের ফাঁক গলে স্বপ্নকান্ডের কাঁধে
পরাগের পাল হতে চাইবেই ।সরে যাওয়া এবং ফিরে আসার
ছুঁই ছুঁই ইচ্ছের মধ্যে যে ফাঁকখনি
শুয়ে আছে শরীর স্মৃতির জিনে ,
একদিন অতীতের আকরিক টানগন্ধে
জেগে উঠে বলবে
— চলো চলো অমৃতের সন্তান হই আবারও আবার । -
কবিতা- সে
সে
-সীমা চক্রবর্তীপ্রতিবার আসি বলে যায়, যাওয়ার সময়,
এই বার ‘চলি’ বলে সেই যে গেলো চলে
হাতে দিয়ে একগোছা রক্ত গোলাপ
আর তো এলো না ফিরে
প্রতীক্ষার প্রতি পলে
নদী হয়ে বয়ে যায় একরাশ দ্বিধা সংশয়…তারপর কত বার পৃথিবীতে দিনরাত এসে চলে গেছে
বসন্তও ঘুরে গেছে, গেছে বৃষ্টির দিন,
আমার নিস্তব্ধতা কে ঘিরে দৃষ্টি হয়েছে ক্ষীণ
উৎকন্ঠিত আমি আজও আশায় আশায়…
শব্দ পেলেই বারবার দরজা খুলে দেখি
ফিরে কি এলো সে কী ?
যায় না দৃষ্টি বেশি দূর অলিগলি রাস্তায়
তবু চেয়ে থাকি এক বুক শূন্যতা নিয়ে অসীম নীরাবতায়
সে নেই কোনখানে, অথচ আমি গভীর বিশ্বাসে।কথা ছিল ‘চললাম’ বলে আমি যাবো আগে
দিয়ে যাবো তার হাতে রজনীগন্ধার স্তবক,
দিকশূন্যপুরে… এভাবে বড় একা লাগে
সে যে আমাকে হারিয়ে আগেই গেলো চলে
ব্যথিত দৃষ্টিতে আমি একা জেগে পরাজয়ের মালা গ’লে..