কবিতা

  • কবিতা

    কবিতা- হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা

    হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা

    -অসীম দাস

    পেয়েছি অক্ষর সুখ
    ভাবনার রণে বনে জলে জঙ্গলে ,
    কোথায় সাজাবো ?
    কবিতার প্রচ্ছায়া উঁকি মেরে
    ভেসে যায় সরযূর জলে ।

    যদি বলো আজীবন ঘুমহীন থেকে যাবো
    হিরণ্য হরিণ ।
    সুস্বাদু আয়ু জ্বেলে পড়শীর পিদিমের
    রিমঝিম আলো হতে পারি ।
    অমূল্য এ সংশয়ী নিউরণ দান করে
    শ্যামাপোকা বোকা হয়ে
    শব্দের উৎসবে নির্জনে পুড়ে যাবো , বলো !

    আরও কতো রাত গোহারাণ হবো !
    আরও কতো জন্মপাত করে গেলে
    অন্তত একটা পঙতির পাখা প্রথম গজাবে !

  • কবিতা

    কবিতা- এই উঠোন, এই কুয়োতলা

    এই উঠোন, এই কুয়োতলা
    -সুনির্মল বসু

     

     

    সেদিনের মতো আজও এই উঠোনে প্রতিরাতে এসে পড়ে জ্যোৎসনার রোদ্দুর,তাল বনের মাথার উপর চাঁদ ভেসে যায়, বাতাসে শিউলি ফুল সুগন্ধ ছড়ায়,
    রাত গভীরে এই উঠোন, এই কুয়োতলা আবহমানকাল ধরে স্মৃতির গল্প বলে, মধ্যরাতে কারা যেন ঝুমকো লতার বনে হাঁটে,
    বড় দীঘির পাড়ে সুপারি বনের ছায়ায় প্রেমিক প্রেমিকা ফিসফিস কথা বলে,
    অরণ্য পাখি কর্কশ কন্ঠে ডেকে ওঠে,
    কাঠ বাদাম গাছের মাথায় ঢাউস ঈগল উড়ে যায়,
    গভীর রাতে অরণ্য লোক ভালোবাসার কথা বলে,
    কত স্মৃতি জমা হয়ে আছে দীঘির জলে,
    বাতাসে ভেসে যায় প্রেমের আশ্লেষ,
    এই উঠোন, এই কুয়োতলা, দূরের অরণ্য কি ভালবাসার দেশ, দোলনচাঁপার বন বাতাসে দোলে,
    মাধবীলতার বনে কার উদাসী আঁচল ওড়ে, মধ্যরাতে কারা ভেসে যায় ভালোবাসার ঘোরে,
    আকাশে তারার মেলা, বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
    মায়াময় প্রকৃতি দিচ্ছে ভালোবাসার ডাক,
    কবে কখন কারা যেন হেঁটে গেছে বড়দীঘির পাড়,
    জীবন থমকে থেমে আছে, কাকে সে কথা বলি আর,
    এই উঠোন, এই কুয়াতলার উপর দিয়ে মধ্যরাতে চাঁদ হেঁটে যায়, প্রেমিক প্রেমিকার মুখের উপর চাঁদের আলো পড়ে, হাজার হাজার বছর ধরে কারা ভালোবাসার নতুন ইতিহাস গড়ে,
    দীর্ঘ প্রলম্বিত বাতাস বয়ে যায় প্রতিদিন জীবনের ঘরে।

  • কবিতা

    কবিতা- সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা

    সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা

    -অসীম দাস

    সব পাওয়াই বাসি হয় একদিন সময়ের ঝড়ে ,
    শুধু ভাগশেষ ভালোবাসার
    তরতাজা ফুল ফোটে প্রতিটি দিনের অন্দরে ।

    দূরের দিগন্ত বাড়িতে খিল এঁটে ঘুমোলেও
    শেকড় শয্যার সহবাস সুখ
    ঘুমের ফাঁক গলে স্বপ্নকান্ডের কাঁধে
    পরাগের পাল হতে চাইবেই ।

    সরে যাওয়া এবং ফিরে আসার
    ছুঁই ছুঁই ইচ্ছের মধ্যে যে ফাঁকখনি
    শুয়ে আছে শরীর স্মৃতির জিনে ,
    একদিন অতীতের আকরিক টানগন্ধে
    জেগে উঠে বলবে
    — চলো চলো অমৃতের সন্তান হই আবারও আবার ।

  • কবিতা

    কবিতা- সে

    সে
    -সীমা চক্রবর্তী

    প্রতিবার আসি বলে যায়, যাওয়ার সময়,
    এই বার ‘চলি’ বলে সেই যে গেলো চলে
    হাতে দিয়ে একগোছা রক্ত গোলাপ
    আর তো এলো না ফিরে
    প্রতীক্ষার প্রতি পলে
    নদী হয়ে বয়ে যায় একরাশ দ্বিধা সংশয়…

    তারপর কত বার পৃথিবীতে দিনরাত এসে চলে গেছে
    বসন্তও ঘুরে গেছে, গেছে বৃষ্টির দিন,
    আমার নিস্তব্ধতা কে ঘিরে দৃষ্টি হয়েছে ক্ষীণ
    উৎকন্ঠিত আমি আজও আশায় আশায়…
    শব্দ পেলেই বারবার দরজা খুলে দেখি
    ফিরে কি এলো সে কী ?
    যায় না দৃষ্টি বেশি দূর অলিগলি রাস্তায়
    তবু চেয়ে থাকি এক বুক শূন্যতা নিয়ে অসীম নীরাবতায়
    সে নেই কোনখানে, অথচ আমি গভীর বিশ্বাসে।

    কথা ছিল ‘চললাম’ বলে আমি যাবো আগে
    দিয়ে যাবো তার হাতে রজনীগন্ধার স্তবক,
    দিকশূন্যপুরে… এভাবে বড় একা লাগে
    সে যে আমাকে হারিয়ে আগেই গেলো চলে
    ব্যথিত দৃষ্টিতে আমি একা জেগে পরাজয়ের মালা গ’লে..

  • কবিতা

    কবিতা- তুমি কি বোঝোনা

    তুমি কি বোঝোনা
    -গৌতম কুমার রায়

    তুমি বোঝো আর নাই বোঝ
    আমি নীরবে ভালোবেসে যাবো
    সূর্যের মতো আমার ভালোবাসা
    যতই মেঘে ঢাকুক না কেন
    আবার সূর্য হাসবেই।

    এত ভালবাসি যারে মাঝে মাঝে সে
    এমন সব কথা বলে বসে
    ভাবি সে কি আমার ভালোবাসা!
    জানিনা সে আমায় কি ভাবে
    তবে আমি তো তারে ভালবেসেছি হৃদয় থেকে।

    মোর যত ভালোবাসা ছিল
    উজাড় করে দিয়েছি তারে
    সে কি বুঝতে পারে না একবারও?
    ভালোবাসলে ব্যাথা দিয়ে যায় বুকে।
    নীরবে সহ্য করে যেতে হয় আঘাত
    এ আঘাত বোঝাই কি করে।

  • কবিতা

    কবিতা- পুরস্কার

    পুরস্কার
    প্রদীপ শর্ম্মা সরকার

     

     

    এক মালসা আগুন নিয়ে কাগজে ছিটিয়ে দিলে–
    হ’য়ে উঠলো দ্রোহকাব্য।
    এক আকাশ সংবেদনার বারি সিঞ্চন করলে পাথর বুকে,
    হ’য়ে উঠলো অনুভূতির স্নেহাধার।
    এক থোকা সত্য ছুঁড়ে দিলে নীলিমায়,
    হ’য়ে উঠলো অবোধের জ্ঞানাঞ্জন।

    একবার সুর মিলিয়ে গলা ছাড়লে সপ্তমে,
    জীবন হয়ে উঠলো গীতিময়–
    এক করে দিলে দিনরাত– ঘামে,রক্তে আর বীর্যে ;
    জন্ম নিলো নাছোড় সূর্য্যবীজ,
    একনাগাড়ে পঁয়ষট্টি পেড়িয়ে থামতে গেছিলে–
    নীতির প্রতিরোধে বাঁধা পড়ে গেলে।

    একলহমার চমক ছিল না কর্মে,
    শেষ অধ্যায়ে এসে রূপান্তরিত মর্মর–
    একদিন ছবি হবে জেনেও
    প্রচারের আলো মাখলে না গায়ে–
    একধামা মুড়ি জোগাতে গিয়ে
    ফিরে তাকানো হ’ল না হলুদ বসন্তের দিকে–
    একেশ্বরবাদী হয়ে বহুত্বের বিশ্বাসে কুড়াল চালালে–
    প্রতিবাদী তকমা জুটে গেল–
    কালকুঠুরির আমৃত্যু আশ্রয় তো নিশ্চিত হ’ল!

  • কবিতা

    কবিতা- যেভাবে যাওয়া আসা

    যেভাবে যাওয়া আসা
    সুনির্মল বসু

     

     

    জীবনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মৃত্যু, সুখের পাশে জেগে থাকে দুঃখ,
    শ্মশানে দাউ দাউ চিতা জ্বলে,বহতা নদীর বাতাস ভারী হয় ছাই ও ধোঁয়ায়,
    নিঃশেষিত জীবন স্মৃতি রেখে যায়, জীবনে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি,
    জীবনের গুঢ় রহস্য বোঝার আগেই মহা প্রস্থান,
    তবু আকাশ মেঘ শিল্প আঁকে,
    জ্যোৎস্নায় কাঠবাদাম গাছের ফাঁক দিয়ে চাঁদ ওঠে,
    আকাশে ঝিকিমিকি তারাদের মিছিল,
    নীল সমুদ্রে বাজে সমুদ্র নীল বাঁশির সুর,
    ধীর মন্থর গতিতে নদী বয়ে চলে, সমুদ্র জলে ভাসে সাধের সাম্পান, মানুষ রচনা করে জীবনের গান,
    পুরনো রাস্তায় হেঁটে যায় নতুন মানুষ,
    জীবন কথাকলি রচনা করে, গাছগাছালির ফাঁকে সূর্য উঠে, প্রজাপতি, গঙ্গা ফড়িং ডানা মেলে বিলের জলে,
    জীবন ও মৃত্যু কত কাছে,
    তবু জ্ঞানপাপী মানুষ স্বার্থের মাতে,
    জীবনের লেনদেন শেষে মানুষ ফিরে যায়
    অনির্দেশ্য যাত্রায়,
    ভুবন জুড়ে জীবনলীলা ভেসে যায়।

  • কবিতা

    কবিতা- সনাতন ভারত ভূমি

    সনাতন ভারত ভূমি
    সুমিত মোদক

    অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে বার করে নিতে হয়
    সামনের এগিয়ে চলার পথ ;
    পথিক বার বার পথ হারায় ;
    তবুও পথে নামে পঞ্চপাণ্ডব ও পাঞ্চালী ;

    ঘোর অমাবস্যায় তন্ত্র সাধনায় মগ্ন অঘোরী-জীবন ;
    গভীর জঙ্গলে থেকে উঠে আসে প্রেত-তত্ত্ব ,
    মহাকাল …
    অথচ , মুখোশের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যায় ;
    দিকে দিকে চুরি হয়ে যায় শ্মশান ;
    কেবলমাত্র পড়ে থাকে আধপোড়া চিতাকাঠ ,
    ফুটোকলসি ;

    রাতচরাপাখি গুলো রাতের অসুখ দেখে
    ভয়ে ভয়ে থাকে ;
    এই বুঝি আকাশ থেকে ভেঙে ভেঙে পড়বে
    সহজ সরল মানুষের কান্না ;
    সে কান্নার শব্দ গুলোকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা
    তাদের নেই ;
    সে কারণে অপেক্ষায় থাকে নতুন ভোরের ;

    ডোম হরিশচন্দ্র এখনও খুঁজে বেড়ায়
    একটা শ্মশান ;
    চারপাশে তার হাজার হাজার মৃত দেহ ;

    এমনই অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই হেঁটে যায়
    গৌতম বুদ্ধ ;
    খুঁজে পেতে বোধিবৃক্ষ , সুজাতা পায়স …

    এতো কান্না , এতো অন্ধকার , এতো নৈশব্দ
    তবুও করা যেন দিকে দিকে , দিগন্তে
    জ্বেলে যায় দীপ ;
    আলোয় আলোয় ভরে উঠছে সনাতন ভারত ভূমি ।

  • কবিতা

    কবিতা- বৈশিষ্ট্য

    বৈশিষ্ট্য
    -সুবিনয় হালদার

    জাতির সাথে জ্ঞাতি মিলে
    খেলছে রঙের খেলা ;
    ভূত ভবিষ্যৎ সব রসাতলে
    ভিক্ষা করে দু-বেলা !

    বর্তমান যেন লেঙরে চলে
    নবীন ক্ষেতে সরষে চাষ,
    শিক্ষা ভাঙে যাঁতাকলে
    কীটপতঙ্গের পৌষ মাস !

    চলছে দৌরাত্ম্য মিষ্টিমুখে জয়
    সৃষ্টিসুখে উল্লাসে ভয়
    বিকিয়ে গেলে ভালো ;
    না-দিলে সব নিকিয়ে নেবে
    দূতেরা কিলো-কিলো !

    কণ্ঠ খুললে বন্ধ হবে
    ছন্দপতন সুর তাল লয়,
    দ্বন্দ্ব মনে যাত্রা ভঙ্গ
    জনস্রোতে নিশ্চয় !

    ভুল বুঝিয়ে আখের গোছান
    তোমায় দিয়ে উচ্ছিষ্ট,
    কলুরবলদ গাধা হয়ে ঘুরে যান
    এটাই ওদের বৈশিষ্ট্য ।

  • কবিতা

    কবিতা- শেষের সেদিন

    শেষের সেদিন
    -সুনির্মল বসু

     

     

    শরতের সকালে যেভাবে শিউলি তলা থেকে ছোটবেলায় ফুল কুড়িয়ে নিতাম, সেভাবেই জীবনের অস্তাচল পর্বে ভালোবাসা কুড়িয়ে নিতে চাই দুহাত ভরে,

    কে কিভাবে অন্যকে বঞ্চিত করে বৈভবের অহংকারে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করল, সেদিকে ফিরেও তাকাতে চাই না, সঙ্গে করে কিছু আনিনি, সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যেতেও পারব না,

    আকাশ এত মুগ্ধতা দিল, সমুদ্র দিগন্ত থেকে দিগন্তের দিকে ছুটে গেল, ভোর বেলায় ফুলের সম্ভার চুপিচুপি ভালোবাসার কথা বলে গেল,

    খালের জলে, বিলের ওপর, নদীর উতরোল ঢেউয়ে
    প্রতিদিন কত ভালোবাসার কথা লেখা হলো,

    চাঁদের মালা পরা রাত, বর্ষণমুখর মেঘমেদুর আকাশ
    বৃষ্টি হয়ে ভালোবাসা হয়ে পৃথিবীর উপর ঝরে পড়ল,

    ইত্যাকার ভালোবাসার মধ্যে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রতিদিন
    মানুষকে কত কি শেখায়,

    অথচ বেড়ে চালাক মানুষ কিছু শিখল না,

    পৃথিবীটাকে ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ ছোট করে ফেললো,
    দ্যাখো আমি বাড়ছি, দ্যাখো আমি উঠছি,

    ওঠা নামার তফাৎটা আজকাল বোঝেন না অনেকেই, অথচ বিজ্ঞভাব, অন্যকে ঠকানো সহজ,
    নিজে যে কবে থেকে হেরে ভূত হয়ে বসে আছেন,

    সেটা টের পেতে জীবন চলে যায়,
    জীবনের শেষ স্টেশন এসে পড়ে,

    উত্তর পুরুষের ভাবী জীবনে অশান্তি আনবার জন্য
    লোক ঠকানো সম্পদ জীবনকে বিষ জর্জরিত করে,

    সেদিন নিজের অহংকারী মুখটা নিজেকেই ক্রমাগত
    ঠাট্টা করে যায়।

You cannot copy content of this page