স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার
-
কবিতা- বরং তুমি হও
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
বরং তুমি হও
-শম্পা সাহাএকটা মন ভালো করা গান লিখতে
এতো কসরৎ?
ধুর!তাহলে তোমার কবি হয়ে কাজ নেইতুমি না হয় চাষী হও
মাটির বুক খুঁড়ে
গরম ভাতের গন্ধ খুঁজে আনো
দুয়েক জনের পেটে সেই অদম্য মোচড়
যা স্নায়ু অবশ করে দেয়
ঘুমিয়ে থাক সে শত্রু কিছুক্ষণতুমি না হয় নাবিক হও
পথহারা পথিকের দল
যারা মাঝ সমুদ্রে দিশাহারা
তাদের দেখিও পথ
পৌঁছে দিও প্রেয়সীর কাছে
তাদের চোখে ঝরুক আনন্দাশ্রুতুমি না হয় সৈনিক হও
অদম্য সীমানা পাড়ের লোভী থাবার হাত থেকে রক্ষা কোরো
দেশমাতৃকার বুকের আঁচল
হাসি ফুটুক মায়ের মুখেশেষমেষ তুমি বিপ্লবী হতেও পারো
না হয় এক জবরজং চাপিয়ে দেওয়া সভ্যতার স্থবির চাকা
তোমার জন্যই আবার নড়ে এগোক
সত্যিকারের মানবিকতার পথেকিন্তু তুমি কবি হয়ো না
যদি না লিখতে পারো এক মন ভালো করা গান
তোমার কলমের নিব পিষে ফেল
যেমন ফাঁসির ঘোষণার পরের বরাদ্দ
তুমি বরং হাতে অস্ত্রই তুলে নাও
ওতেই তোমায় মানায় বেশ! -
কবিতা- আর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
আর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই
-কাজল দাসআর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই,
সত্যি বলছি- এই শেষ বার-
আমি তোর প্রেমে পড়তে চাই!
এবারে একটু অন্য রকম প্রেম,
বিগত দিনের মত একঘেয়ে প্রেম আর নয়।তুই-
কখন ঘুম থেকে উঠলি?
চোখে কাজল পরিসনি কেন?
কিংবা বাম চোখ লাফালে কি হয়?
এসব বাদ!
এবার আর এইসব নয়।
অতীতে অনেক ভুল করেছি,
মান অভিমানেও অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে,
ঠিক করে প্রেম করাই হয়নি।
অহেতুক রাস্তা জুড়ে হাহুতাশ,
ভয়, ভীতি, লোকলজ্জা! আর নয়,
এবার আমি পরিণত এক প্রেমিক,
কি করে ভালোবাসতে হয় আমি জানি।দ্যাখ,-
এবার আর কোনো অজুহাত শুনবো না,
আর হ্যাঁ, ওই ন্যাকা ন্যাকা প্রেম নিবেদন-
আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্লীজ-
গাছ তলা কিংবা লাইট পোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে-
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া সোঁদা মাটির গন্ধে হারিয়ে গিয়েছিলাম অহেতুক,
সময় পেরিয়ে গেছে, ঘরে ফেরার সময় হয়েছে, সেভাবে প্রেম হয় নি।
আর নয়- এবার না হয় কোনো-
ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় বসে জমিয়ে প্রেম করবো, ক্যামন?তুই তো জানিস-
সেবার প্রেমে কষ্ট বেশি পেয়েছি-
সেবার খুব কেঁদেও ছিলাম,
খুব কেঁদে ছিলাম।
অনেক রাত ঘুমাই নি, ঘুমতে পারি নি,
তোকে এক পশলা দেখবো বলে-
বৃষ্টিতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ভিজেছি,
জ্বর এসেছে, ডাক্তার এসেছে,
তুই আসিস নি।
জানি একলা ঘরে তুইও খুব কেঁদেছিস,
কোনো সান্ত্বনা ছিল না, দু দিকেই,
দু দিকেই অজানা বুক চাপা কষ্ট ছিল শুধু।
ধুর- এটাকে আবার কেউ প্রেম বলে?
আর নয়-
এবার আমরা হবো বেপরোয়া প্রেমিক-
মুক্ত পাখির মতো ছুঁয়ে দেব আকাশ,
মেঘের মতো আড়মোড়া ভেঙে ভিজে যাব দুজনে,
কে কি ভাবলো,কে কি মনে করলো,
ছাড় তো।জীবনে একবারই প্রেম আসে-
শুনেছি তাও নাকি নীরবে।
আমাদের না হয় দু বার আসবে, সরবে।
কি? রাজি তো?
না কি এবারো অপেক্ষায় থাকবো দাঁড়িয়ে,
আশ্বাস হীন কোনো অভুক্ত শিশুর মতো।
খবর পাঠাবি কাগজে, সুযোগ পাইনি তাই-
রাগ করিস না যেন।
এবার আর আমি ফিরে যেতে আসিনি,
তাই অজুহাত নয়,
যেভাবে হোক আসতেই হবে,
এবার তোকে চাই।
কি আসবি তো?ভুল গুলো গুছিয়ে নিয়ে,
আর একবার তোকে ভালোবাসতে চাই।
তোকে ছুঁয়ে দেখতে চাই,
আর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই,
একবার! -
কবিতা- নিরুচ্চার
।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
নিরুচ্চার
–প্রদীপ শর্ম্মা সরকারযতবার দেখি ভোরের কমলা
তোমার ভেজা শরীরে,
ততবার আমি মরে যাই।যতবার দেখি ফিরতি আলোয় কমলা তোমার চিবুক ছুঁয়ে,
ততবার মরি নতুন করে বাঁচব বলে।যতবার দেখি থমথমে সুখ,
পিলসুজের জমাট অন্ধকারে–
ততবার কথারা আমার ঠোঁট ছুঁয়ে মায়াভাষ্য।কতবার তুমি-আমি মরি
একগলা হাঁসফাঁস কথাজলে,
অনুচ্চারিত প্রেম-উপকথনের মায়া সরোবরে।যতবার দেখি দীঘিজলে সাদা হাঁস ভাসে,
পাশে গিয়ে ভাসি পালক ছুঁয়ে–
ছোট ছোট ঢেউ কথা বলে নিরুচ্চারে,
অবিনাশ সুখে মায়া-মোহে। -
কবিতা- কেন ফিরে আসে
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
কেন ফিরে আসে
-সুশান্ত সিনহাচোখের তারায় ভেসে থাকা কিছু মুখ
সুখের সুতোয় জাল বোনে সারা দিন
কিছু মেঘ ভারী জল নিয়ে ইতিউতি
কিছু বালি মেঘে নানা রঙ অমলিনমেঠো পথে কিছু মুঠো পাতা আনমনে
নিরক্ত আবেগ সিঁদ কাটে প্রাণপণে
জীবনের পথে ফেলে আসা ভুল-চুক
বেহাগের তালে ঠোকা দেয় টুক-টুকআবার যদি পেতাম ফিরে সেই পাতা
যন্ত্রনাগুলো শুধরে ছেঁকে ভরতাম
গরমিল যত মন ভার করা খাতা
আপত কালীন যত্নে তুলে রাখতামবাতাসের কোলে ছবি আঁকা আলপনা-
বন্ধুর হাত বন্ধুর বিপ্র-দ্বারে চেনা
বিবর্ণ কোলাজ ফুটে ওঠে বৈরী রাগে
স্মৃতির আকাশ বিন্দু বিন্দু জমা ত্যাগে -
গল্প- উজান
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
উজান
-পায়েল সাহুজ্বরে মাথা তুলতে পারছেনা উজান | কালীপুজোর আর দুদিন বাকি অথচ চ্যাটার্জি পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা এখনো ওর আশাতেই বসে আছে | উজানের মতো চৌকস ছেলে আর একটাও নেই এ পাড়ায়, যেমন পড়াশোনা তেমনি খেলাধুলো তেমনি team ম্যানেজমেন্ট| সবাইকে একজোট করিয়ে কিভাবে কোনো অনুষ্ঠান সামলাতে হয় উজান বেশ ভালো জানে|
কালীপুজোটা প্রতিবছর বেশ অন্যরকম ভাবে পালিত হয় চ্যাটার্জি পাড়া নবযুবক ক্লাবে |
প্রতিমা নিজে হাতে গড়ে উজান আর প্যান্ডেল সাজানোর কাজ ক্লাবের বাকি ছেলেরা করে | কালীপুজোর পরদিন কিছু অসহায় গরীব মানুষদের নতুন বস্ত্রদান, খাওয়ানো, ওই বাচ্ছাদের নিয়ে বাজি ফাটানো… বেশ কয়েকবছর ধরে নবযুবক ক্লাব সকলের ভালোবাসার জায়গা হয়ে উঠেছে|
সন্ধ্যাবেলায় বসে ক্লাবের জলসা,সেখানেও উজানের গানেই আসর শুরু, পাড়ার কচি কাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্করা অব্দি খুব আনন্দ সহকারে অংশগ্রহণ করেন এই অনুষ্ঠানে|
কিন্তু এবারে কি হবে ভেবে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ক্লাবের নৈঋত, বিশাখ, পলাশ, নির্বাণ, শ্রেয়ানের | মূর্তি গড়া শেষ হলেও সাজসজ্জা কিছুই করতে পারেনি এখনো| প্যান্ডেলের কাজও খাপছাড়া হয়ে আছে, আসলে উজানের শরীর খারাপে ভীষণ মনমরা ওরা সকলেই |
এবারের ঠাকুর গড়ার পর আশ্চর্য হয়ে উজান দেখেছে প্রতিমার মুখ বার বার তার স্বপ্নে আসা এক নারীর মতো | নাহ, উজান তাকে চেনে না, কোনোদিন দেখেওনি, তবু রাত হলেই সেই মুখ তাকে দেখা দেয় বারবার| অনেক প্রশ্নও করে উজান তাকে, কিন্তু কোনো জবাব সে দেয়না, শুধু স্মিত হেসে কখনো উজানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, কখনো বা তার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে উজান |একদিন দুদিন নয়, বেশ কয়েকবছর ধরেই এমনটা হচ্ছে, কিন্তু সবকিছুই স্বপ্নে হলেও বড্ড বেশি যেন বাস্তব | ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে নিজের মায়ের জায়গায় তাকে কল্পনায় জড়িয়ে উজান শুয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ | নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসেও ফেলে | এসব কথা কখনো কাউকে বলেনি উজান, বন্ধু বান্ধব শুনলে হয়তো হাসবে, আর সবচেয়ে কাছের মানুষ যে হতে পারতো, সেই “মা “একদম ছোট্টবেলায় উজানকে ছেড়ে আকাশের তারা হয়ে গেছে |তাই কাউকেই বলা হয়নি আর|মায়ের মৃত্যুর কারণ টা চিরকালই তার কাছে এক রহস্য |বাড়িতে ওর মায়ের কোনো ছবিও বাবা রাখতে দেননি |
ছোট্ট থেকেই কালী ঠাকুরের প্রতি বিশেষ এক আকর্ষণ অনুভব করে উজান|ওর মায়ের গায়ের রংও শুনেছে খুব কালো ছিলো, তাই হয়তো মা কালির মধ্যেই নিজের মা কে খোঁজার চেষ্টা করেছে বার বার |মনের যত দাবী দাওয়া তার কাছেই বলেছে |ছোটো থেকেই বাবার সঙ্গে উজানের এক অনাকাঙ্খিত দূরত্ব |আর সেসব কারণেই খুব শ্রদ্ধাসহকারে ক্লাবের কালীপুজোর সমস্ত আয়োজন করে প্রতি বছর|ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ক্লাবের ছেলেদের কাছে খোঁজ নিয়ে গেছে রিমলি, ওরা সবাই জানে উজান আর রিমলির মধ্যে কিছু একটা চলছে কিন্তু সেটা উজান কখনো স্বীকার করেনি তবে ওরা আন্দাজ তো করতেই পারে | এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসিও কম করেনা ওরা|
আজ হঠাৎ রিমলি প্রস্তাব দিলো ওকে উজানের বাড়ি নিয়ে যেতে হবে, সে নিজে পঞ্চানন মন্দিরে পুজো দিয়ে ফুল নিয়ে এসেছে উজানের মাথায় ছোঁয়াবে বলে |কিন্তু উজানের বাড়ি কখনো যায়নি বলে সাহসে ঠিক কুলোচ্ছে না |
নৈঋত আর শ্রেয়ান খানিক গাঁইগুই করে রিমলি কে নিয়ে চললো উজানের বাড়ির দিকে | উজান বাড়িতে একাই থাকে সারাদিন , ওর বাবা চাকরি করেন, বাড়িতে অবশ্যই কাজের লোক, রান্নার লোক আছে, এরাই মূলত দেখভাল করে উজানকে|
ওরা তিনজনে পৌঁছতে দরজা খুলে দিয়ে রান্নার মাসি উজানের ঘর দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন তার কাজে |ওদের দেখে আধশোয়া হয়ে উঠে বসে উজান| চওড়া লাল পেড়ে ঘিয়ে শাড়ি,কপালে সিঁদুরের টিপ, মুখের দুপাশ থেকে উপচে পড়া অবাধ্য চুল সরাতে ব্যস্ত সুন্দরী রিমলি যেন আরো অপরূপা হয়ে উঠেছে| গায়ের রঙ কালো হলেও সুন্দরী রিমলি উজানের মুগ্ধ দৃষ্টি ছুঁয়ে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে |
রিমলি কে বাড়িতে আসতে দেখে উজান একই সঙ্গে ভীষণ অবাক ও আনন্দিত, যদিও কোনোটাই প্রকাশ না করে খুব শান্ত স্বরে সকলকে বসতে বলে|রিমলির কাছে সময় চেয়ে নিয়ে পুজো নিয়ে জরুরী কিছু আলোচনাও মুহূর্তে সেরে ফেলে বন্ধুদের সঙ্গে|পুজো সংক্রান্ত বেশ কিছু দায়িত্ব দিয়ে দেয় বন্ধুদের |আলোচনা শেষ হতেই ব্যস্ত হয়ে নৈঋত আর শ্রেয়ান উজানের কাছে বিদায় নিয়ে ক্লাবের দিকে রওনা দেয়| পুজোর আয়োজন নিয়ে যাবতীয় বাকি কাজ যত শীঘ্র সম্ভব শেষ করে ফেলতে হবে এবং কিভাবে সেটাও উজান বুঝিয়ে দিয়েছে ওদের|
রিমলি এতক্ষন ওদের কথার মধ্যে না ঢুকে একা একাই বাড়িটা ঘুরে দেখছিলো, ছোট্ট কিন্তু ছিমছাম সাজানো গোছানো |নৈঋত আর শ্রেয়ানের সঙ্গে ব্যস্ত থাকার জন্য প্রসাদী ফুলটা ছোঁয়ানোর সুযোগ পায়নি উজানের মাথায় | এখন ওদের দুজনকে বেরিয়ে যেতে দেখে তাড়াহুড়ো করে উজানের ঘরে ঢুকে প্রসাদী ফুলটা ওর মাথায় ছোঁয়াতে যেতেই পায়ে শাড়ি জড়িয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই উজান মুহূর্তের মধ্যে রিমলির কোমর টা জড়িয়ে টেনে আনে বুকের কাছে |
প্রবল এক আকর্ষণে নিমেষে এক হয়ে যায় দুজনের ঠোঁট, আদরে আদরে ভরিয়ে তুলে আবেগ আর বাঁধ মানতে চায়না দুজনের |
শরীরের সব আবরণ সরিয়ে দুজনে মিশে যায় দুজনের শরীরে |ওদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলেও কাছে আসা এই প্রথম| আচমকাই ঘটে যাওয়া ঘটনায় সারাজীবনের সঙ্গী হওয়ার অঙ্গীকার আরো দৃঢ় হয় দুজনের|
সেদিন রাতেই উজান বাবা কে রিমলির কথা জানায় কিন্তু তিনি রিমলির ছবি দেখে এক কথায় নাকচ করে দেন, উজানকে জানান তার একমাত্র ছেলের বৌয়ের গায়ের রঙ কালো হোক তিনি চান না |উজানের কোনো কথাই তিনি শুনতে চান না |
অদ্ভুত ভাবে সেদিন থেকে উজানের স্বপ্নে আসা সেই নারী মুখের আসাও বন্ধ হয়ে যায়|কালীপুজোর সকালে শরীর টা বেশ ঝরঝরে লাগতেই ক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় উজান, সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে লেগে যায় |
রিমলিকে কিন্তু এই দুদিন কেউ দেখতে পায়নি, উজানও যে খোঁজ নিয়েছে এমনটা নয়| পুজোর মণ্ডপেও না দেখে সন্ধ্যাবেলা রিমলিকে ফোন করতে ফোন টা switch off আসে |
পুজোর কাজ মিটতে মিটতে প্রায় ভোর রাত্রি, বাড়ি না ফিরে ক্লাবেই সব ছেলেরা শুয়ে পড়েছিল বিশ্রাম নিতে |
ভোররাতের ঘুমের ঘোরে উজান আবার স্বপ্ন দেখে তার এতো বছরের স্বপ্নে আসা নারীকে | আজ তিনি স্ব মহিমায় কালী মূর্তিতে, হাতে উদ্যত খাঁড়া নিয়ে, উজানকে ডেকে তিনি বলেন “যেদিন তুই নিজের পুরুষ সত্ত্বার প্রমান দিলি নারী সঙ্গমে, তার সাথে জীবন কাটাবার, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তুই স্বীকার করলি, তবে কেনো এতো উদাসীন এখনো নিজের জীবন সঙ্গিনীর প্রতি ?
তোর মায়ের জায়গায় স্থান দিয়েছিলি আমাকে, এতো বছর তোকে আগলে রেখেছি | এখন আর আমার প্রয়োজন নেই, যে তোকে সারাজীবন আগলে রাখবে সে এসেছে তোর জীবনে|কিন্তু আজ সেও আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে শুধু মাত্র গায়ের রঙ কালো হওয়ার হীনমন্যতায় ঠিক যেমন তোর মা করেছিলো “|এতগুলো কথা বলে তিনি মিলিয়ে যান|
আচমকা ঘুম ভেঙে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে উজান | কোনো দিকে না তাকিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড় লাগায় রিমলির বাড়ির দিকে |
কাকডাকা ভোরে রীতিমতো হইচই বাঁধিয়ে দেয় উজান রিমলির বাড়িতে, হতবাক রিমলির মা বাবার চোখের সামনে রিমলির ঘরের দরজা ভেঙে উজান উদ্ধার করে রিমলির খুব ধীরে ধীরে শ্বাস পড়া অচেতন দেহ |মেলে একটি খালি হওয়া ঘুমের ওষুধের শিশিও |
তড়িঘড়ি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পথেই উজান শোনে তার বাবা গতকাল সন্ধ্যায় রিমলিদের বাড়ি এসে সমস্ত পাড়া প্রতিবেশীর সামনে প্রচন্ড অপমান করে গেছেন রিমলি ও তার বাবা মা কে |গায়ের রঙ কালো মেয়েকে তিনি কখনোই বাড়ির বৌ হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না এটাও জানিয়ে দিয়ে গেছেন |
বিকেলের দিকে রিমলি সুস্থ হতেই উজান মুখোমুখি হয় ওর বাবার|এতো বছর বাদে জানতে চায় মায়ের মৃত্যুর কারণ |সঙ্গে এও জানায় যদি সে সদুত্তর না পায় তাহলে তার মা এবং রিমলিকে আত্মহত্যার প্ররোচনার দেওয়া অপরাধে জেলের ঘানি টানাতেও পিছু হটবেনা |
ছেলের রুদ্র মূর্তির সামনে ভেঙে পড়েন বাবা| ” তোর মায়ের সঙ্গে সমন্ধ করেই বিয়েটা হয়েছিলো আমার, কিন্তু গায়ের রঙ কালো হওয়ায় কোনোদিন তাকে ভালোবাসতে পারিনি ;ঘৃণা করেছি, অনেক অত্যাচার করেছি|বিয়ের বছর ঘুরতেই তোর জন্ম | আমার মতো তোর গায়ের রঙ ফর্সা হওয়াতে তোর মায়ের ওপর আমার আক্রোশ আরো বেড়ে যায়, প্রতিদিনই তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতাম |আর তাই একদিন রাতে সে বেরিয়ে যায় আর ফেরেনি, আমিও খোঁজ করিনি|দুদিন পর তার লাশ ভেসে উঠেছিলো রেললাইনের পাশের পুকুরে|আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস বাবা ” বলে কাঁদতে কাঁদতে উজানকে জড়িয়ে ধরতে যেতেই উজান বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করা পুলিশ অফিসারকে ডেকে তার হাতে বাবাকে তুলে দেয় | “এতো বছর পরেও নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয়েও গায়ের কালো রঙের ওপর থেকে তোমার ঘৃণা যায়নি বাবা, যদি যেতো রিমলির বাড়ি গিয়ে পাড়ার সবার সামনে অপমান করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আসতে না ;তুমি শাস্তি না পেলে যে স্বয়ং মা কালী আমাকে ক্ষমা করবে না বাবা “এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বাবাকে বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে শুয়ে পড়ে উজান |কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে জানেনা, আজ আবারও দেখলো তার স্বপ্নে আসা সেই ভীষণ পরিচিত নারীকে |তিনি হাত নেড়ে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছেন আর বলছেন “তোর মধ্যে আমার সমস্ত শক্তি রইলো, পাপীকে শাস্তি দিয়ে জ্ঞানের আলোয় সমাজকে উজ্জ্বল করে তোলার দায়িত্ব রইলো তোর ওপর “| ঘুম ভাঙতেই উজান দেখলো শেষ রাতের শুকতারাটা ওর দিকেই তাকিয়ে যেন হেসে অভিনন্দন জানাচ্ছে নতুন দিনের শুরুর |সমাপ্ত
-
রম্য- “নেই কাজ তো খই ভাজ”
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
“নেই কাজ তো খই ভাজ”
-রাখী চক্রবর্তী“নেই কাজ তো খই ভাজ “
প্রবাদ বাক্যটি শুনে একটা বিষয় মাথায় ঢোকে না খই ভাজা কি কোন কাজের মধ্যে পড়ে না ?অকর্মণ্য গুলোই
কি খই ভাজার দায়িত্ব নিয়েছে, জানি না বাপু!
চিড়ে ভাজা, মুড়ি ভাজা, চাল ভাজা এগুলো কাজের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ।খই সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি তাই বোধহয় খই ভাজাকে পরিশ্রমের আওতায় আনা হয়নি।
সাধারণত
হাতে কাজ না থাকলে মানুষ কি করে।বৌ ,ঝি ,পাড়ার কাকিমা জেঠিমা মাসীমা ঠাকুমা এনারা পিএনপিসি অর্থাৎ পর নিন্দা পরচর্চা করতেন ।না ,না রাগ করলে হবে না সবার কথা বলিনি কিন্তু।
কেউ কেউ ঠাকুর দেবতা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।তাহলে খই ভাজার কথা এলো কেন?
ছেলেরা বা বয়োজ্যেষ্ঠরা হলে চায়ের দোকানে আড্ডা বা ক্লাবে আড্ডা দিতেন। না,না
বড় ভুল হয়ে গেছে তখন কি ক্লাব ছিল না কি,তখন মাঠ ঘাট ছিল, পথে ঘাটে বনে জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে যেতেন আর নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন
।সেখানে তো খই ভাজার কোন প্রশ্নই আসত না ।এমন প্রবাদ প্রবচনও তো হতে পারতো “কাজ নেই তো ধম্ম কম্ম কর” বা “কাজ নেই তো সেলাই ফোড়াই কর” বা “কাজ নেই তো রাজনীতি কর” ।এই
রাজনীতি’র ব্যাপারটা ঠিক না,ছেড়েই দিলাম, রাজনীতির গভীরে প্রবেশ না করাই ভালো।আসল কথায় আসা যাক
গ্রামের মা ,বৌ ,ঝি’রা অন্ন সংস্থানের জন্য খই ভাজে।শুধু খই কেন মুড়ি, চিড়ে, চাল ভাজে।ওনাদের পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানাতে হয় ।সবচেয়ে বড় কথা
দই দিয়ে খই খেতে যে অসাধারণ লাগে তা কম বেশি সবাই জানি।তাই খই বা খাবার নিয়ে
কোন রকম ব্যঙ্গ রসিকতা করা একদম ঠিক না।ধনীদের কাছে সবই হাস্যকর।খেটে খাওয়া মানুষ গুলো জানে খই ভাজতে গেলে আগুনের প্রয়োজন হয়।ইদানীং রান্নার গ্যাস সব জায়গায় পৌছেছে।কিন্তু কয়েক বছর আগেও জ্বালানীর জন্য কাঠ জোগাড় করা কতো কষ্টের ছিল ।
বর্ষায় কাঠ ভিজে থাকতো।হাঁড়ি চড়তো না।মাটির দাওয়া বসে কপাল চাপড়াতো আর বৃষ্টি দেখতো অসহায় মা ঠাকুমারা , ওনাদের চোখের জলের সাথে বৃষ্টির জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতো।
প্রত্যন্ত গ্রামে আজও জ্বালানি হিসেবে কাঠই ব্যাবহৃত হয়,
আধুনিক যুগে এয়ারকন্ডিশন ঘরে বসে বলা যেতেই পারে ” নেই কাজ তো
পপকর্ন ভাজ”।কিন্তু কে বলবে ? আমি আপনি না কি নতুন প্রজন্মের কেউ ?
” নেই কাজ তো পপকর্ন ভাজ “
খই ফোটার মতোই শব্দ হবে ফুটফাট।হাঁড়ি চড়বে ।ভাত ফোঁটার গন্ধ পেয়ে ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলো মাঠ থেকে ছুটে এসে বলবে,” মা ভাত খিদে পেয়েছে “
দিন বদলাচ্ছে জীবন ধারণের গতি পাল্টাচ্ছে ।তাই খইয়ের বদলে প্রবাদ বাক্যে পপকর্ন যদি যুক্ত হয়।”নেই কাজ তো পপকর্ন ভাজ” । বেশ বড়লোক বড়লোক ব্যাপার শোনাবে তাই না।
আর খইটা থাক আগের মতোই দই ,কলা, মিষ্টি দিয়ে খাওয়ার জন্য।আর সবশেষে প্রার্থনা করি প্রতিটি শিশুর মুখে যেন খইয়ের মতো বুলি ফোটে,বোবা শব্দটি চিরতরে মুছে যাক,চিরতরে,,,,, -
কবিতা- স্থিতধী সুন্দর সতত অজেয়
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
স্থিতধী সুন্দর সতত অজেয়
-অসীম দাসআপাতত , শমীবৃক্ষে তোলা আছে প্রতিবাদ!
সময়ের ক্রুর কূট জালে বৃহন্নলা সাজ ,
বদ্ধ আছে অসহ অজ্ঞাতবাসে।
অচিরেই , সূচ্যগ্র মেদিনী না দেওয়ার
অহঙ্কার খাবি খাবে দ্বৈপায়ন হ্রদে !ততদিন ,
কুরুক্ষেত্রের বিস্তীর্ন ত্রয়োদশী জ্যোৎস্নার ক্ষেতে
নিশ্চিন্তে খেলা করুক রামধনু-ফড়িং এর দল ।
দূর্বা-আকাশ নেমে চুমু খাক
স্বাদু মৃত্তিকার ঠোঁট ।মানবের পৌনপুনিক জয় পরাজয়ের
মাঝে আছে এক অনিবার্য বাঁক ।
ফাঁকি নয় , সুনির্দিষ্ট ফাঁক রেখে
বাঁক- নিরপেক্ষ সবুজকে
অবিচ্ছিন্ন বেঁচে নিতে হয় ।
কেননা , প্রকৃতির ব্যাকরণে কোনো
সময়ই অসময় নয় ।
সুন্দরের খোঁজে রিক্ত শাখায় আসে পাতা ,
ঊষর নদীতে ফোটে সপ্তডিঙ্গা মধুকর ফুল ,
পরিত্যক্ত প্রবীণ আমের উঠোনে
নাচে সহাস্য অমৃতের ফল !দুঃখ সুখে স্থিতধী সুন্দর ,
সতত অজেয় এক অদাহ্য অমরের নাম । -
কবিতা- অনিচ্ছের ইচ্ছে
।।অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
অনিচ্ছের ইচ্ছে
-অমল বিশ্বাস ( বাংলাদেশ)একটু চা
আর সামনে টানাবৃষ্টির ঝকঝকে নদী,
কাপটি মাটিতে ছিলো।হাতের আঙুলে আঙুল ঢুকে
জলকাটা মাটি সেলাই করতে করতে
কাদায় তৈরি হলো
জলজশয্যায় শীতলপাটির লেপ্টে থাকা শরীর,
কাপটিকে অক্ষত রেখে
শ্রেয়সী ঠোঁটে মেখে নিলো টানাবৃষ্টির স্রোত,
ঠাণ্ডায় কিছুটা উষ্ণতা।কিছুক্ষণ আগের কথকতার আবেগ থামিয়ে
মুখোমুখি অথচ বন্ধচোখে
হারমোনিয়ামের রিডে আঙুল টিপেটিপে
শ্বাস-প্রশ্বাসে শুষে নিলো
অক্ষত কাপের চায়ের উপরে পড়ে থাকা
হালকা সরের ঘ্রাণ।ছেঁড়ামেঘে আকাশের ইতস্তত নীলশাড়ি
পুরোটা শরীরে ছিলোনা
যেমন পাখির ডাক দীর্ঘ থেকে সরু হয়ে
মিলিয়ে যায় ঝাপটানো ডানার বাতাসে।ঝড়ের তাণ্ডবে যখন সে বিধ্বস্ত ঘাস
মেঘ সরে নেমে আসে আকাশের শাড়ি,
চোখ খুলে লজ্জা পায়নি সে
আমার শার্টে আবৃত ছিলো তার বর্ধিত বুক।একটু নেশা!
আর অনিচ্ছের আচমকা ইচ্ছেয়
কাপে ধোয়া উড়েছিলো। -
প্রবন্ধ- খাদ্যরসিক বাঙালি
।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা ।।
খাদ্যরসিক বাঙালি
-সুমিতা দাশগুপ্তবাঙালি যে চিরকালের খাদ্যরসিক, সেকথা কে না জানে ! এই অবিসংবাদিত সত্যটি এক লহমায় জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় সুরসিক সাহিত্যিক শ্রী সুকুমার রায়ের লেখা বিখ্যাত “খাই খাই” কবিতায়। বাঙালিকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন –“যতো কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে ,
জড়ো করে আনি সব ,থাকো সেই আশাতে” ।
এককথায় এইটিই হলো আমবাঙালির মনের কথা।
কথায় বলে রসে বশে বাঙালি। তাতে আর সন্দেহ কী! হাস্যরস আর খাদ্যরস উভয় ক্ষেত্রেই যে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার আমাদের কাব্য সাহিত্য ,গান চিরকাল তার সাক্ষ্য দিয়ে এসেছে।
প্রাণধারণের জন্য প্রাণীমাত্রেরই খাদ্যের প্রয়োজন , মানুষও ব্যতিক্রম নয় ,যেটা ব্যতিক্রমী সেটা হলো একদল খায় বেঁচে থাকার জন্য আর অপরদল খাওয়ার জন্যই বাঁচে। বাঙালিকে এই দ্বিতীয় শ্রেণীতেই মানায় ভাল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই তো বলে গিয়েছেন–বাসনার সেরা বাসা রসনায় “
প্রাচীনকাল থেকে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের মূল কাঠামোটি অপরিবর্তিত থাকলেও, তার খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েই চলেছে নিত্যনতুন রেসিপি।
বাংলাভাষায় রান্নাঘরের অপর নাম রসবতী কারণ এইখানেই বাঙালি,স্বাদের তিক্ত ,কটু ,কষায় , লবণ,অম্ল , এবং মধুর এই ষড়রস অবলম্বনে রসনা পরিতৃপ্তির, নিত্যনতুন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’মেতে থাকে । তবে
যতোই আধুনিক হোক না কেন , বাঙালির আজও ভাত ছাড়া চলে না।ভেতো বাঙালি তকমাটি সে সানন্দেই বয়ে বেড়ায়, নইলে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানো ,মুর্গমুসল্লম্, কাবাবে অভ্যস্ত শ্রী সৈয়দ মুজতবা আলী খোলাখুলি ঘোষণা করবেন কেন , একবার জাহাজে ভ্রমণকালে ‘চারটি আতপ চাল ,উচ্ছেভাজা, সোনামুগডাল , পটলভাজা আর মাছের ঝোলের’ জন্য তাঁর প্রাণ কেঁদেছিলো!
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী নীহাররঞ্জন রায় বলেছেন ”ইতিহাসের ঊষাকাল হইতেই ধান যে দেশের প্রধান উৎপন্ন বস্তু, সে দেশে প্রধান খাদ্য হইবে ভাত ইহাতে আশ্চর্য কিছু নাই’।
দ্বাদশ শতকের কবি শ্রীহর্ষের নৈষধ চরিত গ্রন্থে ভাতের একটি অনবদ্য বর্ণনা মেলে।
‘পরিবেশিত অন্ন হইতে ধূম উঠিতেছে, তাহার প্রতিটি কণা অভগ্ন,একটি হইতে আর একটি বিচ্ছিন্ন ,সে অন্ন সুসিদ্ধ, সুস্বাদু শুভ্রবর্ণ ,সরু ও সৌরভময় ‘।
এমন চমৎকার অন্নসুবাসের আখ্যান, বাংলা ছাড়া অন্যত্র কোথাও সম্ভব কিনা জানা নেই ।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন,
সে যুগে কৃষি গবেষণাগার ছিলো না ,সম্পন্ন চাষীরা নিজেদের চেষ্টায় মাটি বদলে বদলে , নতুন ধরনের সার ও গন্ধদ্রব্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ধান চাষে ব্রতী হতেন। বংশানুক্রমে, সেই সব ধান চাষ করিয়ে ধান বীজ রক্ষা করা হতো ।তাঁর পিতামহের সৃষ্টি, সজনেফুলি ,বাসরভোগ , রাঁধুনিপাগল, নামের চালগুলি আজও সেই সাক্ষ্য বহন করে।
‘ধন্য ধন্য বলি তাঁরে’।
প্রাচীনকালে সম্পন্ন গৃহস্থের ভাতের থালায় নাকি চৌষট্টি পদ পরিবেশিত হতো।শেষ পাতে দই । এযুগেও বাঙালির পাতে পঞ্চব্যঞ্জনের সমাহার। অভিজাত সবজির পাশাপাশি খাদ্যগুণসমৃদ্ধ থোড় ,মোচা ,ডুমুরও পিছিয়ে নেই। রন্ধনপটিয়সীর হাতের গুণ ও মশলায় এগুলির স্বাদও যে অনন্যসাধারণ , বাঙালি মাত্রেই তা জানে। জানিয়ে রাখা ভালো এইসব রান্নায় ফোড়ন এবং মশলার আনুপাতিক হারটি পাটিগণিতের তেলচিটে বাঁশ আর অক্লান্ত বানরের , অঙ্কের চাইতে কিছু কম জটিল নয়!
কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের খালবিল যেন সোনালী, রুপালি আঁশে ভরা মছলি কাঁথার মাঠ, ফলে বাঙালি যে ‘ চিরকাল মৎস্য মারিবে খাইবে সুখে’ তা-তো স্বতঃসিদ্ধ।
বৈদিক যুগের মুণিঋষিদের ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে বঙ্গবাসী মাছকে বেশ করে তেলে মশলায় , কষিয়ে ঝালে, ঝোলে অম্বলে রসনার তৃপ্তি সাধন করে এসেছে, এমনকি কণ্টকের কল্পনাতে ম্রিয়মান না হয়ে,নির্দ্বিধায় মাছের মাথা এবং কাঁটাচচ্চড়িটুকুও সাপটে খেয়ে নিয়েছে।
প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে নাকি সরষের তেলের প্রচলন ছিল না , পর্তুগীজদের হাত ধরে সর্বপ্রথমে বাঙালিই তৈলবীজ থেকে ঝাঁঝালো সরষের তেল নিষ্কাশনের ব্যাপারটা চালু করেছিলো। ভাগ্যিস্ ! নইলে আমরা তেল কই ,ইলিশপাতুরি ,চিতলমাছের- মুইঠ্যার স্বাদ পেতাম কী করে! আর আলু ভাতে মাখতে কাঁচালঙ্কার সঙ্গে এক ফোঁটা সরষের তেল !!
মাংসেও বাঙালির অরুচি নেই। প্রাচীন গ্রন্থে শূল্যপক্ক মাংসের উল্লেখ তো মেলেই ,আধুনিক যুগে মোগলাইখানার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাও তার প্রমাণ। চপ কাটলেট, বিরিয়ানি- চাপ, ছাড়া আজ বাঙালির ভোজই অসম্পূর্ণ।
চা-স্পৃহ চঞ্চল, বাঙালির স্ট্রিটফুডে আসক্তির তুলনাও মেলা ভার। ফুচকা , সিঙারা, আলুরচপ, ঝালমুড়িই তার প্রমাণ।
বাঙালি সর্বদা
মধুরেণ সমাপয়েৎ-এ বিশ্বাসী।বাংলার পোশাকি মিষ্টির জগৎজোড়া সুনামের পাশাপাশি, ঘরোয়া নলেন গুড়ের পায়েস পিঠে, ,নাড়ু,মোয়া ,মুড়কিও কম আদরণীয় নয়!
এক কথায় পুরো বঙ্গসংস্কৃতিতেই জুড়ে রয়েছে সুখাদ্যের আঘ্রাণ।
এইখানে উল্লেখ করা ভালো , কোলোষ্টরেলের তোয়াক্কা না করা, শ্রমবিমুখ বাঙালির শরীর স্বাস্থ্য ,তাকে প্রায়ই বিপদে ফেলে।
এই রসগোল্লার আবিষ্কারক হিসেবে বাঙালি যতোই কৃতিত্বের দাবিদার হোক না কেন ,বহির্বাংলায় চিরকালই সে ‘বাঙালিবাবু’ নামে টিটকিরির পাত্র। তবে সুখের বিষয় আধুনিক বাঙালি এখন অনেক বেশী স্বাস্থ্যসচেতন , সুষমখাদ্য ও শরীরচর্চায় মনোযোগী।
বাঙালির সংগীত, শিল্প , সাহিত্য , ছেলেভুলানো ছড়া, ব্রতকথা– এককথায় সম্পূর্ণ জীবনচর্যায় নানাভাবে খাবারের প্রসঙ্গ,প্রমাণ করে দেয় বাঙালির খাদ্যরসিক তকমাটি কতোটা উপযুক্ত।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানসীর উদ্দেশ্যে
লিখেছিলেন ,
‘একালে চলে না সোনার প্রদীপ আনা
সোনার বীণাও নহে আয়ত্তগত ,
বেতের ডালায় রেশমি রুমাল টানা
অরুণবরণ আম এনো গোটাকত।’
এতেই পরিষ্কার, কবি মাত্রেই বায়ুভূক নয়। তাঁরাও দিব্যি রসে বশে জীবন কাটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসতেন। তাঁদের বাড়িতে বিদ্বদজনসভায় প্রচুর সুখাদ্য পরিবেশিত হতো যদিও কবি স্বয়ং ভোজনরসিক হলেও ভোজনবিলাসী ছিলেন না।
সুকুমার রায়ের মন্ডাক্লাবেরও এই বিষয়ে যথেষ্ট সুনাম ছিল। অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিই এই সভার নিয়মিত সভ্য ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামও কম যেতেন না। জেলবন্দী থাকাকালীন নিয়মিত মোগলাইখানা রেঁধে নিজে তো খেতেনই, সঙ্গে রাজবন্দীদেরও খাওয়াতেন। শিবরাম চক্রবর্তী যখন স্বদেশী আন্দোলনের জেরে জেলে গেলেন, নজরুল ইসলাম যারপরনাই খুশি হয়ে, তাঁকে খাইয়ে দাইয়ে, এমন একখানা মোগলাই চেহারা বানিয়ে দিলেন যে , সারা জীবনেও সেই চেহারা একটুও টসকায়নি।
সাম্প্রতিকতম উদাহরণ
জুনিয়র উইম্বলডন চাম্পিয়ান, আমেরিকাবাসী বঙ্গসন্তান সমীর ব্যানার্জি ।একটি সাক্ষাৎকারে,নিজেকে বাংলার বিরিয়ানি আর চাটের ভক্ত বলেই দাবি করেছেন । আরও অজস্র উদাহরণ পেশ করাই যায়, তবে মনে হয় তামাম বঙ্গসন্তানের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাদটি বোধহয় দিনশেষে, শৈশবের নৈশাহারে, ঘুম জড়ানো চোখে মায়ের হাতের রূপকথার গন্ধমাখা গরাসখানাতেই মেলে। -
গল্প- স্মৃতির পাতায়
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
স্মৃতির পাতায়
-সুমিতা পয়ড়্যাতমসা এখনো বসে বসে ভাবছে সেই দিনগুলোর কথা। আজ তমসার শাশুড়ি মায়ের বাৎসরিক কাজ শেষ হলো। ঘর গোছাতে গোছাতে ছবিটির সামনে বসে পড়ল, চোখে জল, ডুকরে ডুকরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। মনের ভেতর দিয়ে এক ঝড় বয়ে গেল এক লহমায়। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যেন এক আবর্তে ঘিরে থাকা পুরো অজানা গল্পটা পড়ে ফেলল এক মুহুর্ত।
জন্মের পর জ্ঞান হবার মুহূর্ত থেকেই কালী কালী শুনে বড় হয়েছে তমসা। সত্যিই এত কালো যে তা বলার অপেক্ষা রাখে না; পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে শুনতে-শুনতে কখন যেন আর ভালো নামের আড়ালে ডাকনামটাই বেশি প্রচলিত হয়ে গেছে। কালী বলে পাড়াই পরিচিতি।
22 বছর সংসার করেছে, তার শাশুড়ি মায়ের কাছে থেকেছে কিন্তু কোনদিন শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে এমন কথা শোনেননি কিংবা কোন কাজে কোনো কটু মন্তব্যও কানে আসেনি– নিজের বাবা-মা যা অনায়াসে বলতে পেরেছিল যখন পাত্রপক্ষ পছন্দ করত না। কোন একদিন ছেলের বিয়ে দেবে বলে এই মা তো তমসাকে দেখতে এসেছিল। সবাই যেমন চা- জল- মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে তেমনি করেছিল তমসার বাবা-মা। এই নিয়ে পঁচিশ জন পাত্রের বাড়ির লোক দেখে গেছে। কালোর জন্য কেউ পছন্দ করে নি। তমসার বাবা-মা জানতো এনারাও পছন্দ করবেন না। তবুও মেয়ের বিয়ে দেবার চেষ্টা তো করতেই হবে আর তাই দেখতে আসতে বলা এবং তমসাকে সামনে হাজির করা।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের তমসার জন্ম। এক দাদা, এক দিদি ও বাবা মাকে নিয়ে পরিবার। সবাই যেমন তেমন হলেও তমসার গায়ের রং খুব কালো। তাই ওর বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিল তমসা। মানুষ ভাবে এক আর হয় এক। যতদিন এগোচ্ছিল নামের তাৎপর্য সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিল। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা মায়ের মনেও এক নীরব দ্বন্দ্ব শুরু হয়। খুবই খারাপ লাগত তমসার।
একের পর এক পাত্রপক্ষ দেখছে আর চলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বার আর কোন খবর আসছে না। এত কালো মেয়েকে নেওয়া যায় না। প্রত্যেকেই প্রথমে রূপ দেখে। তারপর গুণ বিচার করে। তমসা ছোট থেকেই খুব মেধাবী। সব কাজেই সে পারদর্শিতার পরিচয় দেয়। কিন্তু পাত্র পক্ষের কাছে সেটা ব্রাত্য। যাকে চোখে ধরছে না, তাকে মনেই বা ধরবে কেন! এইভাবে দিনগুলো চলছিল।
তবে তমসা এবার মনে মনে কি যেন একটা ঠিক করে রেখেছিল। যা কাউকে বলেনি। এমনকি বুঝতেও দেয়নি। দিন যায়-রাত যায় আর মনে মনে ভাবে তাকে একটা কিছু করতেই হবে। বাবা-মা তো কালো বলে চাকরি করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না সেটা তমসা বুঝেই গেছিল। দাদা দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তারই পালা। কিন্তু পাত্রপক্ষ কিছুতেই তাকে পছন্দ করছে না। এমনই এক সম্বন্ধ আবার এলো এবং সেইদিনও উপস্থিত হল। পাত্রের বাবা-মা, মাসি মেসো, দিদি- জামাইবাবু দেখতে এলেন।
যথারীতি চা জলখাবার পরিবেশনের দায়িত্ব এল তমসার হাতে। একই প্রথা। নীরবে তমসা তা পালন করল। পরিপাট্য আভিজাত্যের একরাশ আন্তরিকতা। পাত্রপক্ষের আদব-কায়দা দেখে সবাই খানিকটা বুঝেই গেল যে, এটাও হবার নয়। তবুও পাত্রপক্ষ বলল বাড়ি গিয়ে আলোচনা করে জানাবো। ইত্যবসরে পাত্রের মা একটু বাইরে থেকে এসে ওয়াশরুম খুঁজতে লাগলেন। তখন তমসাই এগিয়ে এসে দেখিয়ে দিল। যখন উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন ঠিক তখনই তমসা উনার পা দুটি জড়িয়ে ধরল আর বলতে শুরু করল———-
মা, তুমি তো মা। একজন মেয়েও। তুমি সর্বংসহা। তুমি জগৎ জননী। তুমি তো সব জানো মা। তুমি জানো আমি কালো, আমাকে কেউ পছন্দ করছে না। এমনকি তুমিও না। তোমার বাড়ির লোকেরা ও না। কিন্তু তুমি তোমার সন্তানকে বাঁচাতে পারো। তুমি আমাকে বাঁচাও মা, বাঁচাও। না হলে আমার আর বাঁচার উপায় থাকবে না। তুমি পারো আমাকে বাঁচাতে বলে তমসা কাঁদতে শুরু করল।
পাত্রের মা একটু অপ্রস্তুত এর মধ্যে পড়লেন। তবু তমসার মাথায় হাত রেখে বললেন, তুমি কেঁদোনা। আমি দেখছি কতটা কি করা যায়। তুমি ভালো থাকো। নিজেকে এত ছোট মনে কোরো না। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। এমনটা আর কেউ জানলো না। সবার অলক্ষ্যে এমন এক কাণ্ড ঘটে গেল। এরপর পাত্রপক্ষ বিদায় নিল। বাড়িতে গিয়ে সবাই এক বাক্যে বলল—-এত কালো মেয়ে; বাদ দাও। সবাই সব কিছু আলোচনা করলেও পাত্রের মা সেদিন কিছু আর বললেন না। খাওয়া-দাওয়া সেরে যে যার ঘরে শুতে চলে গেলেন। শুধুমাত্র পাত্রের মা সারারাত না ঘুমিয়ে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। কোনটা দেখবেন—কালো না মেয়েটির গুণ! অনেক ভাবলেন! কিন্তু স্বামীকে কিছু বললেন না। অবশেষে রাত্রি থেকে সকাল হলো।
সকলে সকালবেলা থরর চায়ের আসরে বসেছেন। এমন সময় কথা প্রসঙ্গে পাত্রের মা বলে বসলেন—ওই কালো মেয়েটিই আমার ছেলের বউ হবে। সকলে সমস্বরে বলে উঠল, কি বলছো তুমি! ওই কালো মেয়েটা তোমার ছেলের বউ হবে! তোমার কি মাথাটা খারাপ হলো! পাত্রের মা অবিচল । তিনি আবারো দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন হ্যাঁ! ওই কালো মেয়েটি আমার ছেলের বউ হবে। ছেলেও শুনল সে কথা। ছেলেতো নিরুত্তাপ। মা হ্যাঁ বলেছে মানে হ্যাঁ। কিছুতেই মায়ের কথা ফেলতে পারবে না। মা কে দুঃখ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং আর কোন কথা থাকতেই পারে না।
কথা বলা, বিয়ে সব হয়ে গেল। কালো মেয়ের সংসার বসল। তমসার চলাফেরা, আদব-কায়দা, চিন্তাভাবনা এক অনন্য পর্যায়ের দাবিদার হয়ে উঠল। সংসারের সকল কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা তাকে গুনগ্রাহী করে তুলল। মনে মনে সকলে সমীহ করতে শুরু করল। সব সময় সংসারকে আগল দিয়ে রেখেছে তমসা। আর মাকে রাজরানী করে রেখে দিল। মা মায়ের কাজ করেছে– তার সন্তানকে সমাজজীবনে কালোর হাত থেকে রক্ষা করেছে। সংসার দিয়েছে। নতুন জীবন দিয়েছে। তমসাকে আর কিছু বলতে হয়নি। নিজের সর্বস্ব দিয়ে আজ বাইশ বছর সংসার সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। কখনো কোনো আঁচ পড়তে দেয় নি। যদিও কখনো পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কটুক্তি এসেছে কিংবা আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে কটুক্তি এসেছে তা মা একাই প্রতিবাদ করেছে । সুতরাং তমসার আর কিছু ভাবতে হয় নি।
স্বামী তাকে সত্যিই গ্রহণ করেছিল কিনা তা সে কোনদিন জিজ্ঞাসাও করে নি কিংবা ভাবেও নি কোন কিছু। কারণ তমসার বিয়ে হয়েছে এই না কত! নতুন জীবন পেয়েছে আর কি চাই!
তবে মাঝে মাঝে রবি ঠাকুরের কবিতার মাধ্যমে কিছুটা বুঝিয়ে দিতেন—-
“কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক—“।
তবে তমসা কখনো যাচাই করতে চাই নি। তমসা শুধু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিল।এই ভাবেই সুন্দর সংসার চলছিল তমসার জীবনে।
কিন্তু আমাদের জীবন এমনই যে, সব দিন একই রকম যায় না। জীবনে ওঠাপড়া থাকবেই। তাই হল। মা চলে গেলেন।হঠাৎ মায়ের চলে যাওয়াতে তমসা খুব ভেঙে পড়েছিল। তমসা এখনো বসে বসে ভাবছে সেই দিনগুলোর কথা। মা ও মেয়ে সেইদিনের অজানা ঘটনা তমসার স্মৃতির পাতায় একেবারে জ্বলজ্বল করছে উত্তর আকাশের ধ্রুবতারাটির মত। মাও কোনদিন কাউকে কিছু বলেননি এই প্রসঙ্গে।যা আর কেউ কখনও জানতে পারবে না।
ওমা কাঁদছো কেন? ছেলের ডাকে তমসার চমক ভাঙে আর ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে আবেগে কাঁদতে থাকে। না বলা বাণী তমসার স্মৃতির পাতায় পাতায় কালো রং দিয়ে আজ পুরোটাই লেপে দিলো–যা আর কেউ কোনদিন পড়তেও পারবে না। পুরোটাই তমসার একান্ত গভীর গহনে সঙ্গোপনেই থেকে গেল।