• কবিতা

    কবিতা- অস্থিরতা

    অস্থিরতা
    – কাজল দাস

    হ্যাঁ, শব্দগুলো যদিও প্রতিবাদের
    আমি কিন্তু আদৌ প্রতিবাদী নই
    যারা দুবেলা নিয়মিত গলা সাধে
    তারা প্রতিবাদ করবে, অবশ্যই।

    কলম- জোরে দু’ এক কথা বলি
    শব্দ-বন্ধে সাজাই নিজের চিতা
    যুদ্ধ ভয়ে খুঁজে ফিরি চোরাগলি
    শব্দ- শোকেই প্রসবিত কবিতা।

    মিডিয়াগুলো ভয়ের ছবি দেখায়
    রাতজাগা চোখ স্বপ্নে দেখে দেশ
    অকাল মৃত্যু ঘরে ফেরে অসহায়-
    কখন যেন‌, রাত হয়ে যায় শেষ।

    কোথাও যেন দিনের আলো নেই
    উঠোন জুড়ে না খাওয়াদের ভিড়
    সহজ মৃত্যু চেনেনা যে- কাউকেই
    প্রতিটা অক্ষরে হয়ে ওঠে অস্থির।

    তবুও যুদ্ধ আমকে দেয় না ধরা
    সবাই জানে আমি প্রতিবাদী নই
    অন্ধকারে মশাল জ্বালবে যারাই,
    তাদের জন্য  -কলম চালাবই।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রেমিক পুরুষ

    প্রেমিক পুরুষ
    – কাজল দাস

     

     

    আজ থাক- ব’লো না প্রেমের কথা।
    নীরব যত ব্যথার আজ হোক উন্মোচন,
    শুধু ভালোবাসার কথায় নয় সমঝোতা-
    আজ অচেনা প্রেমেই ভিজবো সারাক্ষণ।

    যে ভাষায় সমস্ত পৃথিবী কথা বলে,
    যে ভাষায় শব্দ নিরাকার,
    জন্ম হোক সেই ভাষার অন্তঃস্থলে-
    তোমায় ছুঁয়েই প্রেমের কবিতা।

    আজ আর হাতে হাত চোখে চোখ নয়
    গতানুগতিক গল্প গুলো আজ না হয় থাক-
    থাক ভালোলাগা আর ভালোবাসার অভিনয়,
    শুধু ইচ্ছেগুলো আকাশ খুঁজে পাক।

    অযথা ঢেকে রাখা ভয়-  লোকলাজ-
    ছুঁড়ে ফেলে- হয়ে ওঠো মেঘবতী নারী।
    তোমার অঝোর ধারায় স্নাত হয়ে আজ,
    আমি যেন প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠতে পারি।

    প্রেম বলতে লোকে যা বোঝে-
    ঠিক সেই রকম ভালোবাসার কথা হোক-
    প্রেম বলতে- এপাড়া ওপাড়া যেভাবে খোঁজে,
    অশ্লীলতায় নিমগ্ন চোখ।

    আজ সেভাবেই প্রেম হোক বেপরোয়া,
    যে প্রেমের অভিধানিক অর্থ শুধুই-
    প্রেম, প্রেম আর প্রেম আকাশ ছোঁয়া,
    আজ আর নয় অন্য কিছুই।

    বলতে পারো- এ ভারী অসভ্যতা,
    বলতে পারো বেহায়া কোনো প্রেমিক,
    আজ আর শুনবো না কোনো কথা-
    আজ না হয় একটু- হলামই অসামাজিক।

    তোমার বুকে ওপর আছড়ে পড়তে চাই,
    যেন ভেজা ঠোঁটে আগুন হয়ে যাই,
    আজ থাক না- শালীনতার উৎসব,
    তোমাকে ছুঁয়ে অচ্ছুত করবো সব।

    তোমার বুকে অসম পরিচয়,
    আমার শরীর অস্থির ঠিকানা,
    সব প্রেমিকার আকাশ হতে হয়,
    প্রেমিক মানেই উদভ্রান্তের ডানা।

    খুলে ফেল আজ বাঁধন আছে যত,
    জানি অসম্মতির পাড়ায় ঢোকা মানা,
    মেলে ধরো তুমি অবাধ্যতার ক্ষত-
    দরজা খোলার মন্ত্র- আমারও জানা।

    লাজুক চোখে আগুন জ্বলে যাক,
    সেই আগুনেই পুড়বো নির্দিধায়
    পুড়তে পুড়তে সময় হবে খাঁক,
    প্রেম যে আজ নষ্ট হতে চায়।

    তুমি বলবে এমন করতে নাই,
    প্রেম বলতে শুধুই শরীর নয়-
    নিভলে আগুন থাকবে উড়ো ছাই,
    প্রেমের অর্থ ভালোবাসা সঞ্চয়।

    তাই যদি হয় শরীরটা কোন কাজে?
    কাছে আসার কি আর প্রয়োজন?
    মনেই যদি শ্যামের বাঁশি বাজে-
    রাধার কেন তাও ভরে না মন।

    শুনবো না আজ কোনোই অজুহাত-
    যদি তোমায় ছুঁয়ে মরতে হয়- রাজি,
    আজ যে প্রেম -নিসর্গের পারিজাত,
    তোমার শরীর উন্মুক্ত ফুলের সাজি।

    জামার বোতামে আটকে থাকা মেঘে-
    কিশোরী রঙের আকাশ ছুঁয়েছে বুক,
    এখন শুধুই বৃষ্টির অপেক্ষায় জেগে-
    হাত বাড়িয়ে মাখবো অলীক সুখ।

    তুমি ছুঁয়ে দিলে প্রেমিক পুরুষ হবো-
    সত্যিই বলছি-
    ছুঁয়ে দিলেই প্রেমিক পুরুষ হবোই!
    ছুঁয়ে দিলে মেঘ আকাশও নষ্ট হয়,
    আমি তো ভারী সাধারণ এক প্রেমিক,
    তবুও ছোঁয়ায় অকাল বৃষ্টি হয়।
    তবুও ছোঁয়ায় অকাল বৃষ্টি হয়!

  • কবিতা

    কবিতা- ঘরে বাইরে

    ঘরে বাইরে (লিমেরিক)

    -কজল দাস 

     

     

    চলো যাই চুপিচুপি পুকুরের ধারে
    সর্ষের ক্ষেতে আর নদীর কিনারে
    ঘরে বসে লাভ নাই
    চলো ঘুরে আসি ভাই
    বনে বাদারে আর ঘন ঝোপঝাড়ে। 

    মিছে কেন বারবার করো ডাকাডাকি?
    এখনো অনেক খানি পড়া আছে বাকি
    বাবা যদি শোনে ভাই
    এক্কেবারে রেহাই নাই
    তার চেয়ে তুমি যাও- আমি ঘরে থাকি।

    সারা দিন থাকো বসে ঘরের ভেতরে
    পাখিরাও ঘরছাড়া সেই কোন ভোরে
    চলো আমরাও ঘুরে আসি
    রঙিন ডানায় ভাসি
    রোদ মেখে সারাদিন সোনালী দুপুরে

    কি করে যাব বলো আকাশের কাছে
    অনেক কাজ যে বাকি পড়ে আছে
    ঘর বন্দি নীলাকাশে
    সূয্যি ডোবে জানলা ঘেঁষে
    ইচ্ছে গুলো অন্ধকারে মুখ থুবড়ে বাঁচে

    অজুহাত যত তোমার, বড়দের মত
    খোলো সব ছিটকিনি দরজার যত
    খেজুর গাছে ডাহুক ডাকে
    জাম জামরুল পাতার ফাঁকে
    ঘর বন্দি থাকবে যে আর কতো?

    দ্যাখো আমার ঘরেও আলোর শাখে
    কতো ছায়ার পাখি- দেয়ালে ডাকে
    গাছ- গাছালি, নদী- পাহাড়
    হাজার রকম ফুলের বাহার
    ইটের ভাঁজে দেয়াল জুড়ে থাকে।

    ধুর- তা…ও কি আবার হয় নাকি রে
    দেখি আন’তো একটা গোলাপ ছিঁড়ে
    কোথায় দেখি ছায়ার পাখি
    করছে না তো- ডাকাডাকি
    অন্ধকারে বন্ধ দ্বারে থাকবে সে কি করে। 

    সত্যি বলছি, মিথ্যে নয় গো মিথ্যে নয়
    মনের পাখি মনের চোখেই দেখতে হয়
    চোখ বুজলেই অন্ধকার
    তাই বলে কি হয় আঁধার!
    আকাশ গঙ্গা, আসলেই কিন্তু গঙ্গা হয়?

    বেশ তো- তাই যদি হয়, -হোক তবে
    ফুল ফুটে থাক তোমার মনের সৌরভে
    ভালো থেকো তুমি নির্জনে
    মিছে কল্পতরুর উঠোনে
    পড়লো বেলা, এবার আমি যাই তবে।

    যেওনা এভাবে, যেওনা আমায় ফেলে
    আমি খুব যে একা- তুমি চলে গেলে
    তোমার চোখেই দেখতে চাই
    খোলা আকাশ কেমন ভাই
    কেমন করে ওড়ে ডাহুক উরন্ত মিছিলে। 

    তবে যাই চলে যাই দূর দেশে
    এই জানালা ভেঙে একপেশে
    আকাশ যেথা অকৃপণ
    উদার যেথা সবুজ বন
    দূর জঙলা নদীর পাড় ঘেঁষে।

    চলো বাঁধন ছেঁড়া রোদ জুড়ে (দ্বৈত কণ্ঠে)
    চলো- যাই উড়ে যাই খুব দূরে,
    যেথায় যেতে নেই মানা
    হাজার রঙের কল্পনায়
    আজ ইচ্ছে ডানায় ভর করে।

  • কবিতা

    কবিতা- ঈশ্বরীয় অনুভূতিগুলো

    ঈশ্বরীয় অনুভূতিগুলো
    – কাজল দাস

     

     

    আমি ঈশ্বরী হতে চাই না!
    -ভালবাসো,
    ভালোবেসে গড়ে তোলো মানস প্রতিমা।
    ঘুমন্ত বিসর্জন থেকে তুলে আনো-
    তারপর প্রতিটি অঙ্গে লেপে দাও শারীরিক অনুভূতি,
    পায়ের আঙুল হতে শুরু হোক-
    তোমার দগ্ধ নিঃশ্বাসের নিপুণ কারুকার্য।
    তোমার হাতের তর্জনীতে লেগে থাক
    আমাকে সৃষ্টির বর্ণময় উষ্ণতা।
    কঠিন হাতের নিবিড় স্পর্শে,
    একে একে সৃষ্টি হোক পেশল জঙ্ঘা,
    কাঙ্খিত যোনিপথ, নিটোল নিতম্ব।
    উন্মত্ত আবেগ মেখে আমি হতে চাই নারী।
    তুমি সুধারসে স্নাত করো আমার শরীর,
    প্রতিটি ক্ষুধার্ত ভাঁজে জ্বেলে দাও আগুন।
    সুকৌশলে নিবিড় নিখুঁত উত্তাপে-
    আমার নাভি মূলে গেঁথে দাও মধ্যমা,
    কোমরের বক্র তল ছুঁয়ে- দাও অস্থিরতা,
    গড়িয়ে পড়তে দাও অশালীন অনুভূতি জল,
    তীব্র যন্ত্রনা থেকে তুলে আনো প্রেম।

    তারপর-
    ক্রমেই- তোমার হাত তুলে আনো বক্ষে,
    আলতো ছোঁয়ায় উন্মোচিত করো স্তন যুগল,
    পুরুষ চেতনায় ধ্বংস করো দু’হাতে আমায়,
    মুক্ত করো আমাকে আমার থেকে।
    সকাতর মসৃণ অনুভূতির রঙ মেখে-
    আমার শরীর যেন আমাকেই প্রমাণ করে শতবার,
    -আমি রক্তে মাংসে শুধু নারী।
    শিহরিত ঔদার্যের রসে-
    আমার কন্ঠ বেয়ে নেমে এসো তুমি,
    আমার ঠোঁটের ওপর রাখো উষ্ণতা,
    আমার চিবুক বেয়ে নেমে আসুক তৃষ্ণার জল।
    আমি পুজো চাই না,
    আমাকে তুলে আনো মাটি থেকে -হে পুরুষ।
    আমার শরীর খুঁজে ছুঁয়ে দাও প্রাণ,
    আমাকে সুন্দর করে তোলো- প্রতিটি স্পর্শে।
    আমি পুজো চাই না,
    আমাকে ভালোবেসে গড়ে তোলো মানস প্রতিমা-

  • কবিতা

    কবিতা- ডিয়ার কমরেড

     

    ডিয়ার কমরেড

    -কাজল দাস 

     

     

    যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি,
    যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

    ধীরে ধীরে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছি,
    পেছনে সরে যাচ্ছে অবিলুপ্ত ভবিষ্যত।
    শেষবারের মতো আঁকড়ে ধরছি-
    বিশ্ব বিপ্লবের খড়কুটো।

    বিপর্যস্ত মানুষের চোখে আমার শরীর,
    একটা বিপ্লবী স্তম্ভের মত নির্ভুল উচ্চারণ-
    অথচ আমার কোনো নাম নেই,
    -কোনো পরিচয় নেই।
    অতঃপর আমি এক অনন্ত জনতার ভিড়।
    আমি এক অনন্ত সম্ভবনার আঁচড়, স্বতন্ত্র স্লোগানে-
    আমি কমরেড।

    অযথা অন্য নামে আমাকে খোঁজো-
    অন্য মানে খোঁজো সংগ্রামী চেতনার।
    সমস্ত পৃথিবী জুড়েই আমার অবদমিত চিৎকার,
    সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আমিই, রক্তাক্ত বিপ্লব।
    স্টেনগানের শব্দে অপ্রতিরোধ্য নিঃশ্বাসে,
    বলিভিয়ায় জঙ্গলী বারুদের ঘ্রাণে আমার-
    অঙ্কুরিত প্রসব,
    বক্ষে নেশাতুর রক্তোচ্ছ্বাস।
    আমি কমরেড।

    আমি যে আসন্ন শৈশবের গান,
    চির বসন্তে নবীনের উদ্দাম।
    উদ্ভ্রান্ত মিছিলের বহ্নিময় বলিষ্ঠ সংগ্রাম,
    কাস্তের বুকে আমি রক্তস্নাত ধান,
    আমি মানুষ, খেটে খাওয়া মজুরের ঘাম,
    আমার মৃত্যুতে আসন্ন চেতনা সংগ্রাম,
    আমি কমরেড।

    প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমি কমরেড,
    প্রতিটি রক্ত কণায় আমি কমরেড,
    ছুটে আসা একে একে নয়টি গুলির সামনে দাঁড়িয়ে-
    আমি চিৎকার করে বলতে চাই-
    আমি কমরেড।
    প্রতিটি বিপ্লবে আমার রক্ত,
    প্রতিটি প্রতিবাদে
    সংগ্রামে
    চেতনায়
    স্লোগানে আমি কমরেড।
    আগুনের স্ফুলিঙ্গের মত আমি জ্বলন্ত জনরব-
    আমাকে হত্যা করা অসম্ভব।
    আমি কমরেড।

  • কবিতা

    কবিতা- মেঘে ঢাকা তারা

    মেঘে ঢাকা তারা

    -কাজল দাস

     

     

    কি করে বোঝাই তোমাকে-
    আমার বিছানায় কেমন নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে।
    পাশাপাশি দু’জনে, কাছাকাছি, তবু-
    স্বপ্নেরা আলাদা, আলাদা রঙ।
    আমি ছুঁয়ে থাকি সম্পর্ক,
    তুমি দূরত্ব টেনে টেনে আকাশ ছুঁতে চাও।

    কি করে দেখাই-
    সম্পূর্ণতার উৎসবে আমি কতো একা।
    হাতের কাছে হাত, তবু-
    দীর্ঘ নিঃশ্বাসে ভালবাসা যোজন যোজন দূরে।
    তুমি আগলে রাখো অজুহাতের পরিধি, পরিসীমা,
    আর আমি-
    ভাঙা দরজায় সহজ মানুষ খুঁজে ফিরি।
    বানভাসি আমার আমুদে সংসার বড় তৃষ্ণার্ত,
    কোথাও যেন কিছু খোয়া গেছে,
    খুব ‘তুমি’ -হীন লাগে, এই পৃথিবী।

  • কবিতা

    কবিতা- কিছু ডাকনাম অঙ্কের স্রোতে

    কিছু ডাকনাম অঙ্কের স্রোতে

     -কাজল দাস 

    তোকে তুমি বলে ডেকে ফেলি যদি
    কেন আকাশকে ছুঁয়ে ফেলে নদী
    আমি দিশেহারা বয়সের খোঁজে
    তোকে খুঁজে পেতে হারাই নিজেকে
    তবু বার বার কেন মনে হয়
    আমি সারাদিন ভিজি রোদ্দুরে-
    আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
    আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

    বোকা কবিতায় প্রেম নিবেদন
    এলোমেলো সব জ্যামিতিক কোণ
    কিছু ডাকনাম অঙ্কের স্রোতে
    খুব ভয় পায় উঠোন পেরোতে
    তবু বার বার কেন মনে হয়
    আমি সারাদিন ভিজি রোদ্দুরে-
    আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
    আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

    চেনা রাস্তারা ফিরে যেতে চায়
    হাতে লেখা চেনা ঠিকানায়
    তবু কান্নারা ভিড় করে আসে
    জলে ভেজা কোনো অঙ্কের ক্লাসে
    তবু বার বার শুধু মনে হয়
    আমি সারাদিন ভিজি রোদ্দুরে-
    আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
    আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

  • কবিতা

    কবিতা- আর্তনাদ

    আর্তনাদ
    -কাজল দাস

     

     

    হয়তো তোর সুখের আঙিনা-তে
    দক্ষিণ বাতাস আকাশ ছুঁয়ে থাকে,
    আমার আকাশ এঁদো গলি ধরে-
    কালিঘাটের বস্তিতে পা রাখে।
    তোর বারণ ভাঙা উন্মুক্ত আকাশ
    তুই তো এখন সোনা রঙের পাখি,
    আমার বুকে অসম রক্ত ক্ষরণ
    খুব সহজে আতর দিয়ে ঢাকি।

    তোর শয্যা একটি মাত্র মানুষ,
    আদর মেখে ঘুমিয়ে থাকবে বুকে।
    আমার শরীর চিল-শকুনের রাতে
    সুখ খোঁজে রোজ বিষাক্ত অসুখে।
    তোর সূর্য নতুন সকাল দেখে-
    চুমুক দেওয়া উষ্ণ চায়ের কাপে।
    তখন আমি দেহের ক্লান্তি ধুয়ে
    পোড়াই বিবেক নিজের অনুতাপে।

    আলতা পরা আলতো পায়ের ছোঁয়া,
    শ্বেত পাথরের বুকে জাগে সুখ।
    আমি নগ্ন পায়ে ঘর থেকে বেরোলে
    ঘৃণার চোখে ফেরায় সবাই মুখ।
    লালচে রঙা সোহাগী শরীরে
    আছড়ে পড়িস যখন স্বামীর বুকে,
    আমি তখন সস্তার মেকআপে,
    রক্ত ঝরাই অন্য কারোর সুখে।

    বন্ধু স্বজন অনেক প্রিয়জন,
    বুক বাড়িয়ে তোকে কাছে ডাকে।
    আমায় দেখে চৌরাস্তার মোড়ে
    নিজের বাড়ি মুখ লুকিয়ে থাকে।
    তুই তো জানিস ঘরছাড়া আজ আমি
    যার সঙ্গে ঘর বাঁধবার আশে।
    গভীর রাতে সেও খিদের জ্বালায়,
    প্রেম কিনতে আমার কাছে আসে।

    বুকে ধরে আমার এঁটো শরীর
    খুঁজে ফেরে বিকিয়ে যাওয়া মন।
    আঁচড় কেটে আমার শিরদাঁড়ায়
    বৃষ্টি মাকে দুহাতে সারাক্ষণ।
    আমিও তখন সকল ব্যাথা ভুলে
    এক নিমিষে অতীতের বুকে ছুটি,
    দুরন্ত প্রেম জ্বলন্ত চৌকাঠে,
    গোলাপ রঙের আগুন হয়ে ফুটি।

    ক্ষনিক চাওয়া ক্ষনিক পাওয়ার মাঝে
    হারিয়ে গেছে নিজস্ব পরিচয়।
    তুই তো জানিস গাছের ছায়ায় বসে
    নষ্ট হওয়ায় ছিল আমার ভয়।
    সেদিন যদি নষ্ট হতাম আমি
    কি আর এমন ক্ষতি হতো আর,
    তোর মত আমিও আজ পেতাম
    স্বামী সন্তান সুখের সংসার।

    তবে কেন আজ নষ্ট মেয়েই হলাম?
    কি কারণে এমন পরিনাম?
    তোর সিঁদুরের বিদগ্ধ সৌরভে
    আমাকেই কেন দিতে হলো দাম?

  • কবিতা

    কবিতা- অষ্টম আশ্চর্য, তুমি

    অষ্টম আশ্চর্য, তুমি

    -কাজল দাস 

    প্রতিবারই মুগ্ধতায় চেয়ে থাকি তোমার দিকে,
    আমার অষ্টম আশ্চর্য, তুমি;
    তাজমহল দেখার পর, মাটিতে নেমে এসেছি,
    তার পর ফিরেও দেখিনি ওই দিকে।
    তুমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে!
    তখনও যেভাবে চেয়ে থাকতাম!
    অষ্টাদশীর উঁচু নিচু কল্পনায় ঠিক সেই ভাবে,
    ঠিক সেই ভাবেই তাকিয়ে থাকতাম মুগ্ধ হয়ে।
    তারপর শাড়িতে, টি-শার্টে, ওয়ান পিস
    কিংবা জিন্সে, দেখেছি…
    ক্লাবে, প্রতিবাদে, প্রেমে এমনকি মিছিলেও তোমাকেই দেখেছি, শুধু তোমাকে…

    মন্দিরে প্রদীপের আলোয় তোমার মুখ দেখতে আমি ধুপ জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি বহুবার।
    ……..আবার কখনো গির্জার দরজায়।

    খিদিরপুর বাসের ভিড়ে ইতঃস্তত দাঁড়িয়ে থাকতে তোমাকে দেখেছি,
    দেখেছি বলবো না, খুব চেষ্টা করেছি তোমায় দেখার,
    তুমি কালো পর্দার আড়ালে আপাদমস্তক ঢাকা ছিলে,
    যেমন ঢেকে থাকে মুক্তো ঝিনুকের আড়ালে।

    মাথায় করে ঝুড়ি ভর্তি খিদে নিয়ে এক হাঁটু কাঁদা সরিয়ে তুমি হেঁটে গেছ বহুদূর।
    পলাশের আগুনে তোমার আধফোঁটা তামাটে শরীর জ্বল জ্বল করে উঠেছে চোখের কোটরে।
    কখনো আবার শপিংমলের দুরন্ত ব‍্যস্ততায় আমায় ছুঁয়ে গেছ, আমি চেয়ে থেকেছি
    …….. এক অজানা মুগ্ধতায়।

    তুমি ফিরিয়ে দিয়েছ খেতাব, অস্বীকার করেছ-
    লোক দেখানো উপহার, মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে বার বার প্রমাণ করেছো, তুমি অদ্বিতীয়া।
    কলমে, অস্ত্রে, কাব্যে- তুমি অদ্বিতীয়া।

    যখন তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি যুক্ত করে যুক্তি নিষ্ঠ ভাবে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছ-
    “আমি সেই মেয়ে”, অপূর্ব সুন্দর লাগছিল তোমায়।
    মনে হয়েছিল তুমিই সেই মেয়ে, যাকে খুঁজে পেতে বারবার এসেছি,
    ……..আর বারংবার মুগ্ধ হয়েছি।

    কখনো দুটো অসম্পূর্ণ পা নিয়ে অসম পাহাড় জয়,
    আবার কখনো হৈ হৈ করে ছুটে গেছ মহাকাশে।
    কোমরে আঁচল গুঁজে তুলসী তলায় বাজিয়েছ শাঁখ,
    কখনো আবার যুদ্ধ নিনাদে বুক পেতে রুখে দাঁড়িয়েছ শত্রুর মোকাবেলায়।

    তোমার এক ডাকে ভরে উঠেছে ব্রিগেডের মাঠ,
    তোমার সয়ে যাওয়া অঙ্গীকারের পেছনে
    বিশ্ব জয়ের হাসি দেখতে মন্ডপে মন্ডপে আমার ভিড়।
    কখনো ঘুমোতে দেখিনি তোমায়-
    যতবার ভয় পেয়েছি, আঁতকে উঠেছি,তোমায় দেখেছি!
    তুমি মাথার ওপর হাত রেখে অভয় দিচ্ছ।

    নাচতে নাচতে পড়ে গেছ বলিষ্ঠ মঞ্চের ওপর,
    আবার উঠে দাঁড়িয়েছো আত্মবিশ্বাসের সাথে,
    নকল স্বপ্নের পায়ে বেঁধে নিয়েছ নুপুর।

    সারাদিনের ক্লান্তি বুকে করে ঘরে ফিরেছ, আর বলেছ-
    -“বাবা, ওষুধ খেয়েছো?”
    কখনো নিজের খাবার টুকু তুলে দিয়ে বলেছ-
    “বিশ্বাস কর এতটুকুও খিদে আমার নেই।”
    শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি আর ভেবেছি-
    তুমিই সেই মেয়ে, তুমি অদ্বিতীয়া।
    তোমাকে দেখতে শতাব্দীর পিপাসা
    তোমাকে জানতে কবিতার এতো প্রেম!
    তুমিই আমার অষ্টম আশ্চর্য,
    ……..শুধু তুমি-

  • কবিতা

    কবিতা- প্রেমে পড়া

    প্রেমে পড়া
    -কাজল দাস

     

     

    ভালো লাগে ভালোবাসতে এটাই আমার দোষ
    আসলে কি- প্রেমে পড়ার নেই কোনো বয়স।
    যখন তখন,যেথায় সেথায়, সকাল কিংবা রাত,
    প্রেমে পড়ি, আসলে যে আমি প্রেমিকের জাত।

    ছোট্ট বেলার পুতুল খেলায় প্রথম যেদিন দেখি,
    সেদিনই প্রথম হাতে খড়ি- প্রেম করতে শিখি।
    মাটির রুটি কাদার পোলাও যেইনা মুখে দিলাম,
    সেদিনই প্রথম ধরাস করে প্রেমে পড়ে গেলাম।

    প্রেয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম- জনগণ মন,
    কি বলবো লজ্জা লাগে, তবুও বলি শোনো-
    নতুন নতুন দিদিমণির দেখা যখন পেলাম,
    নতুন করে আমিও আবার প্রেমে পড়ে গেলাম।

    বুড়ি ছোঁয়া খেলার মাঠে পাশের বাড়ির মেয়ে
    আচমকা দৌঁড়ে এসে আমাকে দিল ছুঁয়ে,
    চিকন চিকন নরম হাতের যেই না পরশ পেলাম,
    কি আর বলি নিয়ম মতই প্রেমে পড়ে গেলাম।

    প্রাইমারি গেল এবার হাই, বেশ হয়েছি বড়
    মিনি স্কার্ট আর টপেরা সব ক্রমশঃ হচ্ছে জড়,
    আহ্লাদে আটখানা, এ কোথায় আমি এলাম,
    আবার আমি প্রেমে পড়ার সুযোগ হাতে পেলাম?

    তারপর যেদিন একটু বড়, বড় বলতে উনিশ
    প্রথম প্রেমের চিঠি পেলাম রঙিন খামে, ইশ্
    সবই যেন এলোমেলো, স্বর্গ হাতে পেলাম
    কোনো দিকেই না তাকিয়ে প্রেমে পড়ে গেলাম।

    সেদিন ছিল বিয়ে বাড়ি বেশ মনে আছে,
    বসে ছিলাম রিসেপশনে বৌ-মনির কাছে।
    ঠোঁটের পাশে তিলের নদী দেখতে আমি পেলাম,
    তিলোত্তমার প্রেমের নদে হাবুডুবু খেলাম।

    লং ড্রাইভে বেড়িয়ে ছিলাম বন্ধুদের নিয়ে,
    একটি মেয়ে একলা দেখে হাত দিল বাড়িয়ে।
    ব্যাকসিটা ফাঁকাই যখন সুযোগ নিয়ে নিলাম,
    অগত্যা মধুসূদন প্রেমে পড়ে গেলাম।

    তারপর যতই বয়স বাড়ে প্রেমও বাড়ে তত
    আসতে যেতে যাকেই দেখি লাগে তোমার মত।
    তোমার মাঝে সব চরিত্র খুঁজে আমি পেলাম,
    শেষ বারের মত তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম।

    মৃত্যু যখন সন্নিকটে প্রেম হয়েছে উধাও,
    হসপিটালে একলা ঘরে ডুবছে প্রেমের নাও।
    এখন শুধু প্রেম বলতে যমের দুয়ার চিনি,
    চোখ খুলতেই নার্স বলল- কেমন আছো তুমি?
    আবার যেন নতুন করে জীবন খুঁজে পেলাম,
    কি আর বলি- ইনসাল্লা প্রেমে পড়ে গেলাম।

You cannot copy content of this page