• কবিতা

    কবিতা- বাস্তব বড়ো একা

    বাস্তব বড়ো একা
    – প্রীতি মান

     

    ইমোশনগুলো সব ক্যাপশনে বন্দী,
    নোটিফিকেশন জমেছে হাজার —
    কত লাইক আর কত কমেন্ট
    বাস্তব করে হাহাকার।

    কত বন্ধু কত ফলোয়ার
    মেসেঞ্জারেতে লেখা,
    দেখা হয়েও যে হয়না দেখা
    বাস্তব বড়ো একা ।

    কত হাহা-হিহি, কত হৈহৈ,
    কত রাস্তার মোড়ে,
    সে সব এখন গল্পকথা
    চ্যাট্ দুনিয়ার জেরে।

    আপনজনেরা বহুদূরে আজ
    চাপা পড়ে গেছে মন,
    তাই নিজেকে একা লাগে খুব
    স্তব্ধ সারাক্ষণ।

  • কবিতা

    অনেকদিন তাকে দেখিনি

    অনেকদিন তাকে দেখিনি
    -প্রীতি মান

     

    তার সাথে আমার বহুদিনের আলাপ ।
    তবে অনেকদিন জানো তাকে দেখিনি ।
    সেই স্নিগ্ধ মধুর হাসি,
    যেন ঝরনার জলে, অবিরল চলে
    মুক্তো ঝরানো জলস্ফূলিঙ্গ
    রাশি – রাশি।
    তবে আজ যেন মলিন হয়েছে,
    হারিয়েছে সুর- তালের ছন্দ ।
    জানো–
    সবাই বলে তার মধ্যে যেন মা সরস্বতীর বাস,
    সারাদিন মত্ত নৃত্যারাধনায়;
    তবে আজ সে ঘরের লক্ষ্মী,
    সেই দুরন্তপণা
    আজ বিলুপ্তপ্রায়।
    হারিয়ে গেছে সে
    অনেকদিন তাকে দেখিনি —
    অনেক খুঁজেছি জানো, কিন্তু খুঁজে পাইনি…

    হ্যাঁ গো, কে সে ?

    কে জানে ।
    তাহলে ! তুমি চিনলে কিভাবে ?

    জানিনে ॥

  • কবিতা

    প্রলয়

    প্রলয়
    -প্রীতি মান

     

     

    ওগো সুন্দরী, অপরূপা নারী
    পরমা প্রকৃতি বসুন্ধরা,
    নিজ রূপে – গুনে মুগ্ধ করেছো
    নিজেকে সঁপেছো জগৎ – সেবায় —
    তবে আজ একি রূপ তোমার !
    আজ তুমি উন্মাদিনী, তুমি ভয়ংকরী,
    অদ্ভুত তোমার নৃত্যলীলা,
    আজ তোমার শান্ত বাতাসে অশান্তের ধ্বনি ।
    রুগ্ন তোমার দেহে তুলেছো প্রলয়,
    মহাপ্রলয় —
    একি উথাল – পাথাল, ওরে
    স্বর্গ – মর্ত্য – পাতাল ।
    তুমি থামো, মাগো থামো
    চারিদিক ছাড়খার শেষে
    ফিরে এসো নিজ রূপে – গুণে মাগো
    স্নিগ্ধ আনন্দধারায় ।
    নিত্য – নতুন ছন্দে তোমার বাজুক জয়ধ্বনি,
    মহাকালের চক্রে আজ উঠুক বিজয়বাণী ॥

  • কবিতা

    একটি কুঁড়ির স্বপ্ন চুরি

    একটি কুঁড়ির স্বপ্ন চুরি
    – প্রীতি মান

     

     

    দুটি পাতার আড়াল ছায়ায় থাকবি কে আয় বল,
    একটি কুঁড়ি মাঝখানে তার লুকিয়ে চিরকাল ।
    ভোরের আলোয় কুঁড়ির ছোঁয়ায় কীসের আশা দল,
    পাখনা মেলে উড়বে সেতো স্বপ্ন মায়াজাল ।
    মায়াজালের স্বপ্ন ঘেরা এই দুনিয়াতে,
    থেকে ছিলাম, থাকছি আর থাকবই সাথে ।
    কুঁড়ির ভাষা তোমার চোখে, ফুটবে দিনে রাতে,
    স্বপ্ন চুরি করবে পরি এই খেলাতে ।
    যেমন ছিলাম, তেমন আছি, থাকবই সাথে,
    মায়াজালের স্বপ্ন ঘেরা এই দুনিয়াতে ।
    ভালোবাসার রঙিন কথা বলবে মনে তাই,
    রূপকথার আলো-আলেয়ায় এ কোন রোশনাই।
    সারা জীবন থাকব আমি তোমার পাশেতে।।

  • কবিতা

    নদীর তটে দেখা হবে

    নদীর তটে দেখা হবে
    – প্রীতি মান

     

     

    তিনটে নদীর একটা গল্প,
    মেঘ, আলো, ছায়া অল্প স্বল্প,
    সে নদীর তটে, বুঝিনি আগে
    দেখা হবে, দেখা হবে।
    রূপকথার মায়াজালে বাঁধা এ সুর —
    যেদিকে চাই, তোমাকে পাই
    কাছ থেকে বহুদূর।
    ভাবিনি আগেও এতো যে শোভা,
    সান্ধ্য নদীর মনোরবে।
    সোনা, ও সোনা, মনোরমা
    এই পরিবেশে—
    আশা, ভাষা, ভালোবাসার
    কী আবেশে
    পাখিদের সুরে কী জানি মনের কলরবে।
    দীঘির জলে, রঙীন ফুলে, 
    কথা বলে যায়,
    তাই তার ডাকে, সুরে – সুরে, বেলা বয়ে যায়।
    নদীর বুকে তৃষ্ণা আমার শেষ কী হবে?

  • কবিতা

    মা ভগবতী

    মা ভগবতী
    -প্রীতি মান

     

    জয় জয় হে ভগবতী তুমি যে সুর-ভারতী,
    প্রনাম জানাই তোমায়, বিদ্যা-বুদ্ধি দাও মা আমায় ।
    শুভ্র তোমার পদ্ম মাগো শুভ্র তোমার বসন,
    শ্বেত অঙ্গুরীয় হাতে তুমি যে পদ্মভূষণ ।
    তুমিই হলে বিদ্যাধরী, কিংবা তুমিই মন্থরা,
    দেবতা-অসুর তোমায় পূজে তুমিই যে বারি-ধারা ।
    পুষ্পার্ঘ্য দিই মা তোমার চরণ তলার প’রে,
    সদা সুরময় হোক পৃথিবী  মাগো তোমার বরে ॥

  • কবিতা

    শেষ আশা

    শেষ আশা
    -প্রীতি মান

    মরুভূমির বালুর চর আর মরীচিকা,
    বালিয়াড়ি ধূলোর ঝড়, আছি আমি একা ।
    ভাবি কতদিনে জল নামবে দুচোখে —
    বৃষ্টি রঙধনু আঁকবে আমাকে ।
    জানি না এতো ব্যথা কেন এ বুকে,
    চোখে জল বানভাসি, ফুটবে মুখে ।
    কথায় কথায় দিন চলেতো গেলো —
    মনের মাঝেতে নদী, খেয়া ভাসালো ।
    হঠাৎ যদি দিন, রাত হয়ে যায় !
    জল ভরা নদী, মূহুর্তে শুকায় ।
    গহন নিবীড় মন জাগালো ব্যথা,
    স্বপ্নের শেষ আশা  হলো রূপকথা ॥

  • কবিতা

    মেঘের আড়ালে মেঘলা দিন

    মেঘের আড়ালে মেঘলা দিন
    -প্রীতি মান

     

     

    মেঘলা ছায়ায় সূয্যি ডোবে
    মেঘের অস্তাচলে,
    বৃষ্টি রে তুই আসবি কবে
    আজি চাতকেরা বলে ।

    মেঘ দে না তুই জল থৈ থৈ
    হোক নদী দিশাহারা,
    জানি একদিন হবে রে মিলন
    বলে সাগরের ধারা ।

    সেই শুভক্ষণে, তোর আগমনে,
    হবে রে মিলন অধিক,
    জানি সেই ক্ষণে পাহাড়ের বুকে
    খুঁজে পাবি তুই দিক।

    তোর আসায় ঘুচবে তাপ
    বলবে ওই ঝিল,
    জানি একদিন চলে যাবি তুই
    ভরে দিয়ে খাল-বিল।

    ছোট্ট খোকার মুখের হাসি
    রাখবি তুই জানি,
    ছোট্টবেলার কত খেলাধূলা
    মনে পড়ে স্মৃতিখানি।

    পাখিরা উড়বে দূর-দিগন্তে
    দিয়ে অরন্য-বন,
    কিছু দিন তুই না হয় থাকলি
    থাক আরও কিছুক্ষণ ॥

  • কবিতা

    প্রয়োজনীয়তা

    প্রয়োজনীয়তা
    – প্রীতি মান

     

     

    তোমার জন্মে খুশি সবাই, আনন্দ, উচ্ছাস,
    আমার জন্মে হাসলো ধরা, হাসলো এই আকাশ ।
    তোমার জন্মে ঘর ভর্তি মিষ্টি বিতরন,
    আমার জন্মে ‘ ছোট্ট খোকা ‘ নাম দিলো ভুবন ।
    তুমি যখন সবার কোলে ঘুরছো আনন্দেতে,
    আমি তখন উঠছি জেগে কোনো এক ফুটপাথে ।
    তুমি যখন হামাগুড়ি দিচ্ছো আপন মনে,
    আমি তখন দাঁড়িয়ে আছি মহা রনাঙ্গনে ।
    তবুও সে রনাঙ্গনে বাড়ছি ধীরে ধীরে,
    দেখছি আমি এই ধরাকে দুটি নয়ন ভরে ।
    হাঁটছো তুমি ভীষন সুখে মায়ের হাতটি ধরে,
    আমিও বেশ হচ্ছি বড়ো রোদ্-বৃষ্টি-ঝড়ে ।
    হঠাৎ দেখি আমায় নিয়ে অনেক লোকের জোট —
    আমি নাকি এই পথকে করছি অবরোধ ।
    বড়ো হওয়ার স্বপ্ন তুমি দেখছো দুটি চোখেই,
    গাছ বলে কি আমার কোনো স্বপ্ন থাকতে নেই ।
    মায়ের থেকে উপড়ে দিতে তোমার কত সরঞ্জাম,
    ভুলে গেছো আমারও আছে ছোট্ট একটা প্রান ।
    মা যে এতো শক্ত করে জড়িয়ে আমায় আছে,
    তবে কেন মায়ের মনে কষ্ট দিছো মিছে ।
    হায় রে মানুষ ! তুমি বড্ড বোকা, বড্ড অসহায় —
    থাকলে আমি, থাকবে তুমি, ভুলেছো আজ তাই ॥

  • কবিতা

    নকল দূর্গা

    নকল দূর্গা
    -প্রীতি মান

     

     

    তুমিও দূর্গা, আমিও দূর্গা
    তুমিও নারী, আমিও নারী, শুধু পার্থক্য —
    তুমি শিল্পীর হাতে গড়ে ওঠা এক প্রতিমা,
    আর আমি এক রক্ত-মাংসের জলজীবন্ত উমা।

    শুভ শারদীয়ায় সবাই যখন তোমার সেবায় মগ্ন,
    আমি তখন একটুখানি অন্ন পেলেই ধন্য।
    তোমার এখন রঙীন বস্ত্র, গা ভর্তি সোনা
    আমার তখন জীর্ণ কাপড়, হাজার ধূলিকনা

    অসুর বধে তুমি যখন দেবী সবার কাছে,

    আমি তখন দুশ্চরিত্রা, নষ্টা সমাজ মাঝে।
    তুমি যখন মুগ্ধ তোমার মনের মতন সাজে,
    আমি তখন ব্যস্ত নানা সংসারের কাজে।
    অকাল বোধনে তোমার যখন বাজছে খুশির ঢাক,
    আমি তখন কাঁদছি মুখে অ্যাসিড পোড়ার দাগ।
    তোমার রক্ত পিপাসাতে পাঁঠার বলিদান,
    কন্যাভ্রুন বলে আমার চির অবসান।
    তোমার যখন সিঁদুরখেলা, ধান-দূর্বা-পান,
    ভাঙলো আমার শাঁখা-পলা, পরনে সাদা থান।
    ঘরের দূর্গা লুকিয়ে আছে, অনেক ছদ্মবেশে।
    আসল দূর্গা কাঁদছে আজ, নকল দূর্গা হাসে॥

You cannot copy content of this page