• কবিতা
    কবিতা

    নিজস্ব ভাবনা

    নিজস্ব ভাবনা
    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

     

    বিত্তরা প্রাপ্তির সুখে
    ভগবানে দেয় অর্ঘ্য ঢালি,
    অর্থ,পেশী নাই যাদের
    তারাও ডাকে ভগবান
    কখনও চিৎকারে,কখনও বা গালি।

    আমি বোধহয় ‘ নাই’ দের দলেই পড়ি
    তাইত মাঝে মাঝে বিশ্বাসে চীড়,
    অজানা আশংকা মিটাতে, নাই কানাকড়ি
    চিত্ত থাকে সদাই অস্থির।

    ভগবান বেটাও তাই, দেয়না ডাকে সাড়া
    শুধু বলে, হবে সব ‘ একটু দাঁড়া ‘।
    আর কবে হবে? জীবন ত শেষ,
    ভগবান বলে ‘ আরো কিছু ভোগ কর’
    জীবনের ক্লেশ।

    অতি দুঃখে আমি হাসি
    ধর্মের ব্যাখ্যা শুনে শুনে,
    আর কত যুক্তি আছে
    ভাবি মনে মনে।

    বুঝলাম সম্পদের সুসম বন্টন
    ভগবানের অভিধানে নেই,
    বিত্তের আবাসে তার বাস
    আমাদের প্রাপ্তি সুখ, শুধু উচ্ছিষ্টেই।

  • কবিতা
    কবিতা

    অবশেষে

    অবশেষে
    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

    রৌদ্র স্নাত দিনের শেষে পড়ন্ত বিকেলে,

    বয়সী বটের ছায়ায় তুমি এসো,

    কথা হবে, শুনা হবে জীবনের গান।

    কিভাবে কাটিয়েছি এতটা দিন,

    কিভাবে হয়ে গেলো স্বপ্নের প্রয়াণ।

    যৌবনের কোন এক দিনে বলেছিলে,

    চলো সমুদ্র স্নানে যাই নোনা জলে মন ভেজাবো,

    ঝিনুকের বুক চিরে, মুক্তা এনে দেবো।

    আরো কত কি! তুমি কথা রাখোনি,

    স্বপ্নের জাল বোনা শেষে দেহ মন সব কেড়ে নিলে বুঝলাম,

    পরে আর কিছু তোমার মনে থাকেনি।

    আমিতো অবোধ ছিলাম বিলাসী স্বপ্নের ভীড়ে,

    তোমার অগুনতি মিথ্যে কথায় নিজেকে হারিয়েছি বিষন্ন তিমিরে।

    দেহ মরে, ভালোবাসা থেকে যায় মনের গভীরে,

    কাঁদে হিয়া, কাঁদে তৃষা স্মৃতি ভাসে নয়নের নীরে।

    শুনেছি তোমার যৌবন এখন প্রায় নিঃশেষ,

    তবু এসো, হিসেব টা মেলাবো এবার শেষমেশ।

  • কবিতা
    কবিতা

    কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়তা

    কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়তা

    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

     

    আমার সকল অনুভুতি যখন একই

    সরল রেখা বরাবর চলছিলো-

    ঠিক তখনই তুমি এসে আমায়

    দেখালে এক ভিন্ন অনুভুতির রেখা,

    শেখালে ওই অনুভূতির নাম ভালোলাগা।

    আমি ভালো লাগার অনুভূতি গুলোকে

    একে একে আলাদা করতে শিখলাম।

    তুমি আমায় এই শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়তা।

    সব ভালো লাগা যখন এক সাথে মিশে যাচ্ছিলো-

    ঠিক তখনি তুমি এসে দেখালে ভিন্ন ভালো লাগার রেখা,

    শেখালে ওই ভালো লাগার নামই হচ্ছে ভালোবাসা;

    আমি ভালবাসার অনুভূতি গুলোকে একে একে আলাদা করতে শিখলাম,

    আমায় এই শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য তোমায় কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়তা।

    ভালবাসার সকল অনুভূতি গুলো যখন মিলেমিশে একাকার-

    ঠিক তখনই তুমি শেখালে এক ভিন্ন ভালোবাসার রেখা,

    তুমি শেখালে এই ভালবাসার নামই হচ্ছে প্রেম;

    যার সাথে এক হয়ে মিশে গেছে কামের রেখা,

    আমি কামের অনুভূতি গুলোকে একে একে আলাদা করতে শিখলাম।

    আমায় এই শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয়তা তোমায়।

    আমি ধীরে ধীরে পুরুষত্বের অনুভূতি গুলোকে আলাদা করতে শিখেছি,

    এই অনুভূতির মাঝে টানতে শিখেছি পার্থাক্য রেখা।

    তবে এত কিছু শেখার পরেও আমার শিক্ষাটা হয়তো অপূর্ণই থেকে যেত-

    যদি কিনা তুমি আমায় শেষ শিক্ষাটা না দিয়েই চলে যেতে।

    আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা, প্রেম, কামনা শেখার পরেও যেন বাদ পরে যায় কিছু,

    সে জন্যই মনে হয় সবশেষে তুমি আমায় বিশ্বাস-ঘাতকতা শেখালে।

    তুমি শেখালে বিরহের অনুভূতির আরেক ভিন্ন রেখা।

    বুঝালে যে এটাই সত্যি, এটাই একমাত্র স্থায়ী।

    বিষন্নতার কালো রেখায় হারিয়ে গেছে সব অনুভূতি গুলো।

    বিরহের অনুভূতি গুলোর স্বাধ দেবার জন্য সত্যিই চিরকৃতজ্ঞ তোমার কাছে প্রিয়তাl

  • কবিতা
    কবিতা

    স্বপ্নে কল্পনা

    স্বপ্নে কল্পনা

    শর্মিষ্ঠা শেঠ

     

    জানি তুমি আসবে, অবশেষে তুমি আসবে

    সকল জল্পনা কল্পনাকে মাড়িয়ে

    দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তুমি আসবে;

    এক অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে তুমি হয়ত ফিরে আসবে।

    লাল পাড়ের সাদা শাড়ী, হাত ভরা রংগিন কাঁচের চুড়ি,

    কানে বাহারি দুল আর গলায় পুতির মালা পরে তুমি আসবে।

    খোঁপায় গোঁজা সুগন্ধি ফুল

    আর বরাবরের মতই কপালটা থাকবে ফাঁকা,

    কি যে ঈর্ষনীয় সে সৌন্দর্য;

    এক আকাশ অপার মুগ্ধতা নিয়ে তুমি ফিরে আসবে।

    তোমার ফিরে আশায় আকাশে হবে তারাদের মিলন মেলা,

    পূর্ণিমার চাঁদের করুন লজ্জা;

    দলে দলে জোনাকি পোকাদের বিয়ের ধুম।

    এই খুশির পৃথিবী কেবল আমি দেখবো না

    দেখবে সারা জাহানের সৃষ্টি।

    তুমি এসে প্রমাণ করে দেবে অপেক্ষায় কোন অবিশ্বাস ছিলো না,

    তবে আসবেই যখন স্বপ্নে না এসে বাস্তবে কেন আসবে না;

    স্বপ্নঘোরেই যদি আসবে ঘুম ভাংগিয়ে চলে যেওনা ।

  • কবিতা
    কবিতা

    ওই মেয়ে

    ওই মেয়ে

    -শর্মিষ্ঠা শেঠ 

    ও মেয়ে তোর জন্য  সমাজ গড়েছে নিয়ম,

    বয়স বাড়ার সাথে সাথে বদলায় তোর অন্তর্বাসের গঠন ।

    বিয়ের পিঁড়িতে বসলে তোকে  রাঙিয়ে দেবে লাল সিদূঁরে ।

    পুরুষ কিন্তু তোর চিহ্ন  রাখবে নাকো তার শরীরে ।

    মরলে স্বামী, তোকেই কিন্তু পরতে হবে বিধবা বসণ

    তুই মরলে স্বামীর কিন্তু  বদলাবে না একটুও ঢং ।

    মাছ, মাংস, ডিম এসব ছাড়তে কিন্তু তোকেই হবে

    তুই মরলে স্বামী কিন্তু  দিব্যি এগুলো চিবিয়ে খাবে ।

    লাইগেশন যে তোর শরীরেই শুধু শোভা পায়

    ভ্যাসেকটোমি? শুনে হাসি পায়

    ক’টা পুরুষ আর এতে নাম লেখায়?

    বিধবা নারীর কামেতে মন?

    “সর্বনাশ ” কয় বিচক্ষণ ।

    বিপত্নীকের শয্যায় নারী ?

    দোষের তো নয়_ এটাই স্বাভাবিক পুরুষালি ।

    তোর শত্রু তোরই জাতি তোর পিছনেই মারছে লাথি

    অত্যাচারী শাশুড়ি আর ননদিনি রায়বাঘিনি

    তোর মুখেতেই ঢালছে অ্যাসিড ছুঁড়ছে গায়ে দেশলাই কাঠি ।

    ও মেয়ে তোর মন্দ কপাল

    চাকরি পেলে ও ফেরে না হাল

    তোর বেতনে ভাগ বসাতে কত পুরুষই তাকিয়ে থাকে ।

    তোর শরীরেই জন্ম নেবে অন্য বংশের বংশধররা

    নামের সাথে তোর পদবী জুড়বে নাকো কেউ তো তারা ।

    সকল কিছু সমাজ নিয়ম মানতে হবে তোকে

    আড়ালে তুই চোখটা মুছে হাসি রাখিস ঠোঁটে ।

  • কবিতা
    কবিতা

    ভালোবাসার যবনিকা

    ভালোবাসার যবনিকা

    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

     

     ভাঙ্গলে যখন দীর্ঘ সময়ের একটু একটু করে গড়া সম্পর্ক,

    তখনো ভাবোনি! কি হতে পারে

    তোমার আমার ভবিয্যৎ এবং বর্তমানের সম্পর্ক?

    কোথায় দাঁড়াব তুমি আমি?

    কি হবে তোমার আমার দ্রুপদী ভবিষ্যত!

    তুমি যতোটা কষ্ট দিলে ঠিক ততোটাই হারালে,

    সুযোগ করে দিলে অন্যকে অনুপ্রবেশের।

    তোমার ঐসময়ের বলা প্রতিটি শব্দ

    সুনামির বেগে আঘাত হেনেছে আমার হৃদয়ে,

    প্লাবিত করেছে সমস্ত শরীর,

    করেছে সমস্ত অঙ্গ পতনোন্মুখ।

    ধ্বংস যজ্ঞে দাঁড়িয়ে ভাবছি জীবন নামক খেয়ার কথা।

    যে তরী এক সময় ভিড়ে ছিলো তোমার উজানে!

    আজ কোথায় সেই তুমি? কোথায় সেই দিনগুলি?

    অথচ তোমার বলার ভঙ্গিমা ধ্বংস যজ্ঞেও আমায় ভাবিয়েছে।

    যা কোন প্রেমিক যুগল চিন্তাও করেনি এর আগে,

    ভাবেনি এভাবে, আজ অনেক দিন পর!

    এখন হন্য হয়ে খুঁজি সেই স্মৃতি।

    স্মরণ করি তোমার বলা অতীত অত্যুচ্চ প্রশংসা;

    যা তুমি বলেছিলে সব শেষে এক ছোট্ট সংলাপে অতি অহংকারে।

    হয়তো তুমি ভুলে গেছো সেই ভালোবাসা!

    যার যবনিকা হয়েছিলো সেই ক্ষণ থেকে———-

  • কবিতা
    কবিতা

    তুই আবার কবে কবি হলি ??

    তুই আবার কবে কবি হলি ??

    শর্মিষ্ঠা শেঠ

    তুই আবার কবে হলি কবি?

    প্রায়শই প্রশ্নের সন্মুখিন হই।

    বলি —

    দেখে আয় রাতের আঁধারে

    খোলা আকাশের নীচে

    শুয়ে থাকা শত শত মানবতার ছবি

    তাহলে তুইও হয়ে যাবি কবি।।

    কখনো কি গিয়েছিস—-?

    নিরন্ন মানুষের কাছে

    শুনেছিস কি মানুষের কান্না?

    বুক ভাঙ্গা হাহাকার,

    ঝরে পড়া জীবনের গান?

    যদি শুনে থাকিস,

    তুইও হয়ে যাবি কবি।

    নিয়ন বাতির নীচে ল্যাম্পপোস্ট টার আড়ালে

    যে রমণী নিয়ত অপেক্ষা করে

    শরীর বিকোয় জীবিকার তরে

    দেখেছিস কি তারে?

    অনুভবে ভেবে নে তার দীর্ঘশ্বাস

    তাহলে তুইও কিন্তু হয়ে যাবি কবি

    লিখতে পারবি দুর্ভাগাদের ব্যর্থ ইতিহাস।।

    কবি ত অনেকেই হয়,

    প্রেমের,প্রকৃতির,বিরহের কবি

    শোষিতের শিকল ভাঙ্গার কবি হতে গেলে

    থাকতে হয় সুকান্ত হৃদয়I । 

  • কবিতা

    প্রিয়তা

    প্রিয়তা

    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

     

    এসো তুমি-

    চোখের লজ্জা সরিয়ে সামনে এসো।

    দেখি স্পর্শ পেলে কিভাবে

    লজ্জাবতীর মতো গুটিয়ে যাও তুমি।

    সামনে এসো ঠোঁটের আরষ্ঠতা সরিয়ে,

    ছুঁয়ে দেখি কতোটা আদরে-

    তুমি চোখ বুজো পরম নির্ভরতায়।

    কাঁচুলি খুলে সামনে এসো দাঁড়াও,

    পরীক্ষা করে দেখি—

    কতোটা সুরক্ষায় ঢেকে রেখেছো হৃদয়।

    সামনে এসো অন্তর্বাসটাকে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে,

    থার্মোমিটারে মেপে দেখি—

    কতোটা উষ্ণতা জমিয়ে রেখেছো ঐ দেহে।

    প্রিয়তা –

    যে পাঁজরের হাড় থেকে তোমার জন্ম,

    ছুঁয়ে দাও সেই বুক—

    ছুঁতে দাও তোমায়।

    আমি তোমাকে ভালোবাসি,

    আমাকে অধিকার দাও ভালোবাসার । 

  • কবিতা

    প্রথম ভালবাসা

    প্রথম ভালবাসা
    -শর্মিষ্ঠা শেঠ

    কেমন আছো তুমি বহু বছর অজানা,

    বহুদিন তোমাকে নিয়া কবিতা লেখা হয়না;

    একটু বিশুদ্ধ প্রেমের অভাবে,

    আমার মন পড়ে থাকে-

    অবচেতন, অলস আর সৃষ্টিহীন।

    জানি, একদিন পৃথিবী বদলাবে-

    নেশার ঘোর কাটবে পথভ্রষ্ট মানুষের।

    ছল-চাতুরী আর মিথ্যা দূরীভূত হবে,

    ভালবাসার রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে সত্য প্রেম।

    যে মাতাল প্রেমিক একদিন-

    প্রেমিকার নরম বুক হাতড়ে প্রেম খুঁজেছিলো,

    সেই একদিন খুন করবে-

    তার ভেতরের জানোয়ারটাকে।

    একদিন মানুষ বদলে যাবে,

    প্রেমের নামে দৈহিক চাহিদা পূরণের জঘন্য লোভ;

    সেদিন আর স্পর্শ করবে না-

    কারও পরিশুদ্ধ হৃদয়।

    প্রিয়তা, একদিন তোমার আর আমার স্বপ্ন পূরণ হবে;

    স্বর্গীয় প্রেম থেকে খসে পড়বে,

    কামুকতার কীট; সেদিন পৃথিবীতে কেবল-

    সত্য ভালবাসাই টিকে থাকবে।

    তোমার আর আমার বিচ্ছেদে-

    যে পবিত্র ভালবাসার জন্ম হয়েছিলো,

    আজ তার প্রমাণ রেখে গেলাম আমার কবিতায়।

    ভবিষ্যত প্রজন্ম স্বাক্ষী হোক,

    এক সুন্দর, সত্য আর স্বার্থহীন ভালবাসার;

    জানি, একদিন পৃথিবী বদলাবেই বদলাবে।

     

     

You cannot copy content of this page