-
কবিতা- দিশাহীন
দিশাহীন
-সঞ্জিত মণ্ডলতোমার জন্য কান্না একটা ছিলো
হয়তো ভুলেছ কবেকার সেই কথা,
পথের দিকে রোজ তাকিয়ে থাকি
অশ্রুসিক্ত সেই চোখে আজও ব্যথা।
দোহাই, তোমার বাহানাটা ভালো জানা,
জোড়া না লাগায় মন ভেঙে দুখানা,
একটা ভাঙা তোমার দিকেই আছে
অন্য দিকটা কাউকে দিতে মানা।পাশ কাটিয়ে বাঁধন ছেঁড়া সোজা
পালিয়ে বাঁচে সবাই সেটা জানি,
বড্ড কঠিন প্রেমের জগতটাই
মানুষ চেনা কতো না হয়রানি।
আজও মেঘ ছুঁলে বৃষ্টি হয়ে যাই
মনের কথা গুছিয়ে বলি না তাই
সেদিন গুলোতে তুমি ই তো মেঘ ছিলে
তোমার স্বপ্নে আজও তাই ভিজে যাই।আকাশ প্রদীপ জ্বালি আজও
দূরে তারার পানে চাই
নির্মল নীলাকাশ খুঁজি
তোমাকে দেখবো বলে তাই।
দিশাহীন আজও বসে আছি
মন দিলে মন পাওয়া যায়
বেদনার বালুচরে একা
আজও বসে তব প্রতীক্ষায়।
ব্যথার বেদনা ঝরে গানে
শোনা যায় আকাশের চাঁদ আর তারায়
দিশাহীন পথে যেতে ভাবি
কি করে যে ভুলেছ আমায়।। -
কবিতা- বিজয়া
বিজয়া
-সঞ্জিত মণ্ডলবিজয় হয়েছে কি এই শুভ বিজয়ায়
দশটি মহা শত্রু নাশ হয় বিজয়ায়।
প্রথম শত্রু অহংকার ভাবো একবার,
তাকে আগে নাশ করো পারো যতবার।
অমানব মন হয় দ্বিতীয় শত্তুর,
মানবিক মন যার দেশের সুপুত্তুর।
তৃতীয়টা অন্যায় আর অন্যায়ে পাপ হয়,
কাম-বাসনা চতুর্থ তাই ত্যাগ করো তায়।
ক্রোধ পঞ্চম জাত শত্তুর সব ধ্বংস করে,
ষষ্ঠে লোভ হয় লোভী অপরাধ করে।
সপ্তমেতে দম্ভ ডেকে আনে বিপর্যয়,
অষ্টমেতে ঈর্ষা দোষ ক্ষতি করে দেয়।
নবমেতে আসে মোহ- মাৎসর্যেই ক্ষয়
দশমে স্বার্থ পরতা দোষে সব নষ্ট হয়।
দশেরাই দশ হরা দশ শত্রু নাশ
কাম ক্রোধ লোভ আদি শত্রুর বিনাশ।
শত্রু জয়ে বিজয়ায় মহোৎসব হয়,
বিজয়া দশমী বলে তার পরিচয়।
এই দিনে শ্রীরামচন্দ্র শত্রু নাশ করে
জয় দুর্গা বলে মানুষ মহোৎসব করে।।
ভক্তি পূর্ণ তত্ত্ব জ্ঞানী রামাবতার হয়
শক্তি আরাধনায় রামের রাবণ বিজয়।। -
কবিতা- মরমিয়া
মরমিয়া
-সঞ্জিত মণ্ডলগান পাঠানো তো বন্ধ হয়েছে কবে,
লুকোচুরি কথা সে ও তো বন্ধ জানি,
তবু ভালোবাসা দিয়ে যায় হাতছানি,
সুপ্রভাতের আশায় থাকি গো প্রিয়।
কতোদিন কতো রাত জাগা ছিল বলো,
আবেগী হৃদয় কতো না পরশ চায়,
সে হাসি গানের রেশ আজও আছে প্রিয়,
কেন বুঝলে না প্রেম আজও কেঁদে যায়।কবিতা ও গান আজও যারা ভালোবাসে,
তাদের হৃদয় নরম ও কোমল হয়,
এতোটুকু ব্যথা শেল হয়ে বুকে বাজে,
প্রেম নিয়ে খেলা কখনো কাম্য নয়।
রবিঠাকুরের গানে সান্ত্বনা চাই,
প্রসাদী গানেও সান্ত্বনা খুঁজে পাই,
বিরহের ব্যথা আজও ডুকরিয়ে কাঁদে,
এই কি গো তব ভালোবাসা মহাদান।অপেক্ষা টুকু শুধুই পাথেয় হয়,
কবে দেখা দেবে আশা করে এ হৃদয়,
প্রেম ভালোবাসা মনের গভীরে আছে,
ভালোবাসা নিয়ে আজও বসে আছি প্রিয়।
মনের শান্তি তুমি চেয়েছিলে জানি
তবু ঘটে গেলো করুণ বিপর্যয়,
পৃথিবী থেকেই চির বিদায় নিলে
বোধনের আগে বিসর্জন হয়ে যায়।
তার থেকে ভালো না হতো সে পরিচয়,
প্রতি শরতেই আগমনী ও বোধন হয়
অপেক্ষায় আজও পথ চেয়ে থাকি প্রিয়
পরজনমেই না হয় দেখা দিও
ভালোবেসে আজও কেঁদে যায় এ হৃদয়।। -
কবিতা-গতানুগতিক নয়
সঞ্জিত মণ্ডল
-গতানুগতিক নয়অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিরাশাও অবিরাম চলে,
তারই মাঝে স্বপ্নে দেখা রাজকুমারীও আসে
কথা বলে না বলুক এ জীবন সুন্দর হয়,
তীর বেঁধা পাখিরাও শেষ গান ভালোবেসে গায়
সব কিছু ঠিকঠাক হলে এ জীবন সুন্দর চলে।
গতানুগতিক এই জীবনের পেন্ডুলাম দোলে।এ মানুষ ই দুর্বার, স্বপ্ন বোনে ঘুরে দাঁড়াবার,
বৃষ্টি পড়লে কবিতা লেখে, না পড়লেও লেখা হয়,
শুধু শীত বসন্তে নয়, গ্রীষ্মে ও বর্ষায় প্রেম দেখা দেয়,
প্রেম ভালোবাসা তার থাকুক বা না থাকুক
পোড়খাওয়া মানুষের দিন কেটে যায়।
প্রভাতে প্রভাত রবি সাথে কতো আলাপন হয়,
নির্ভেজাল ভালবাসা মেঘলা দিনের মতো কান্না ঝরায়
শোক দুঃখ ভয় ত্রাস নিরাশ প্রণয়
সব কিছু মিলেমিশে একাকার হয়।
দিন যায় রাত আসে পৃথিবীর আপন খেয়ালে।
আমিও তো চেয়েছি সে নিয়ম, নিয়মের বেড়াজালে
আমিও থাকতে চাই আমারই মতন,
সবকিছু বানচাল হয়-
অদৃশ্য কেউ যেন আমাকে চালায়,
বেলাশেষে জীবনের শেষ খেয়াঘাটে অন্য কেউ আসে
অন্য মাঝি চেনে না আমায়,
স্বপ্ন বুনতে ভালোবেসে, জীবনের শেষ খেয়া শূন্যে যেন ভাসে
এ জীবনে সঙ্গী কেউ নয়, একা একা চলে যেতে হবে
প্রেম ভালোবাসা আর অন্তহীন কাজ সব তুচ্ছ হয়ে যায়।। -
কবিতা- একটু বিদ্যে দাও
একটু বিদ্যে দাও
– সঞ্জিত মণ্ডলসরস্বতী বিদ্যাবতী ধরি তোমার পায় –
একটু বিদ্যে দিও মা গো রোজের পড়াশোনায়।
বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস সই জানা পন্ডিত,
টিপ ছাপেও নেতা চলে কম্পিত দশদিক।
মা গো আমার পড়াশোনায় মন নেই একটুও,
খেলাধুলো ভালো লাগে করি যে পেট পুজো।
আবার ভাবি পড়লে কি আর চাকরি ভালো পাবো,
দুন্দুভিদের কেনাবেচায় বেকার থেকেই যাবো।
তার থেকে মা ব্যবসা করে অনেকটা কামাবো,
কূটবুদ্ধির ব্যবসা নয় মা সদবুদ্ধিই দিও।
তোলাবাজদের দূরে রেখো সবসময় ওজর,
কু-দৃষ্টি দেয় সব কিছুতে ওদের বিষের নজর।
বলবো কি মা দুঃখ কথা জানাই বা আর কারে,
রোজগার যা করি মা গো লোটে তা সরকারে।
হাজার রকম ট্যাক্সের উপর জিএসটির ও বোঝা,
খেতে শুতে পাশ ফিরতে এও বিষম সাজা।
প্রতিবেশী সৎ দিও মা হিংসুটে না হয়,
এসব আমি চাইছি গো মা বুদ্ধি করে নয়।
মূর্খ যদি চোর হয় মা গো তত বিপদ নেই,
শিক্ষিত লোক চুরি করলে ধরার উপায় নেই।
চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা হয় উকিল মামলা লড়ে
ফোঁড়ে মিডিলম্যানের দলে দেশ শাসনও করে।
আজকে মা গো সাক্ষরতা ভয় লাগছে শুনে,
বিদ্যে বুদ্ধি বিকোয় মা গো ঘুষের টাকা গুনে।
আর ভাবি না মা গো তুমি যা করার হয় করো,
গাধা জ্ঞানী গুণী চাইনা মানুষ করেই গড়ো।। -
কবিতা- ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
-সঞ্জিত মণ্ডলঅনেক সাধার পরেও যে আসলে না-
হঠাৎ দমকা বাতাসে ওড়ালে চিঠি,
অগের মতোই আজও দুষ্টুমি করো,
গোধূলি আলোয় শুরু করো খুনসুঁটি।
দিশেহারা মন বেশ ছিলো গৃহকোণে-
ভালোবেসে মন আনমনা করে দাও,
হৃদয় দুয়ারে সাদরে আসন পাতি,
ঝড়ের বেগেতে এসেই সব উড়াও।খরকর তাপে ক্লান্ত হৃদয় মন-
ভাব ভালোবাসা হৃদয়েই পুড়ে খাক,
ভিতর ও বাহির শান্ত হবে যে কবে,
ফসল বোনার সময়টুকুই থাক।
অপেক্ষা রাত জানি গো দুঃসময় –
কতো দিন একা একা জেগে ভোর হয়,
আসলে তখুনি উদ্দাম প্রেমে তছনছ করে দাও,
সে মধু যামিনী সবটা মধুর হয়কি বলোনা প্রিয়।। -
কবিতা- মনস্থির
মনস্থির
-সঞ্জিত মণ্ডলভালোবাসা যেচে ভিক্ষা করতে নেই,
ভিতরে যতই ভাঙুক মন হৃদয়-
বাইরে তা তুমি দেখিও না একটুও,
দয়িত তোমার ফিরবে সুনিশ্চয়।
না বুঝে যে চলে গিয়েছে সীমানাপার,
খোঁজ নিও তার কাছে ডেকো নাকো আর,
যে ফিরে আসার সে ফিরে আসবে জেনো,
বিধি বাম হলে কেউ ফেরে না কক্ষনো।
পরীক্ষা দিয়েছে সীতা সাবিত্রী সব-
তাদের ব্যথায় কে করেছে কলরব?
সুখ পরশের অগ্নিবীণার রব
যে পুড়ে যাচ্ছে সেই করে অনুভব।
সন্দেহ হলো বিষ মাখা এক তির-
অন্তর পোড়ে তীব্র দহন জ্বালায়,
কার দিকে তাক করেছো তোমার তীর,
যাকে ভালোবাসো তাতে করো মনস্থির।
সাধুবাদও নয়, দুঃখিত নয় আর-
উদ্বিগ্নতা ক্ষুব্ধ মনের ছায়া,
সবার মনেই এক হিমবাহ আছে,
প্রিয় সংসারে সে শুধু ছড়ায় মায়া। -
কবিতা- প্রিয় মানুষ
প্রিয় মানুষ
-সঞ্জিত মন্ডলপ্রিয় মানুষটা অপ্রিয় যদি হয়-
তার থেকে তুমি নিজেকে সরিয়ে নিও,
ভালোবেসে মনে রেখো নাকো সংশয়,
এ জীবন জেনো ভালোবাসাটুকু চায়।রাত সুন্দর চাঁদের জ্যোৎস্না নীলে-
সূর্যালোকেই দিন সুন্দর হয়,
বাগিচায় ফুল ফোটে তাই সুন্দর,
মন ভালো হয় সুন্দর কিছু পেলে।নতুন দিনের নতুন সকাল আসে-
নতুন ভাবনা মনের আকাশে ভাসে,
দিন কেটে যাক সুখ আর শান্তিতে,
কুটিলতা যত কবরে নিক আশ্রয় ।অনুভূতি দেখো কতো সুন্দর হয়-
অনুভব সে তো স্পর্শ থেকেই আসে,
ভালোবাসা শুধু মনের আকাশে ভাসে,
সম্মান দেখি ব্যবহারে পরিচয়।গুরুত্ব তুমি তাকেই দিয়ে যেও-
যে সব বন্ধু তোমাকে বোঝে সেভাবে,
মূল্য তুমি তাদের চুকিয়ে দিও,
মর্যাদা দিও তোমার কথা যে ভাবে।। -
কবিতা- বিপদ
বিপদ
-সঞ্জিত মণ্ডলবিপদ থাকে ঘাপটি মেরে সবাই সেটা জানি,
পাচার হবো জেনেও আমরা হাটে-বাজারে নামি।
সকলের মুখে একটাই কথা ছেলেদের কাজ নেই,
পেটে খিদের জ্বালায় বুঝি ফাঁদ তো সবখানেই।
জোড়া ফলায় ঘায়েল আমরা উম্পুন লকডাউনেই,
গ্রামগঞ্জের মানুষ জনের পেটেতে ভাত নেই।
অশান্তি তাই ঘরে ঘরে সব কিছুর আকাল,
খাবার চাকরি দুটোই মিলবে হাতছানি দেয় ‘কাল’।
বাঁচার জন্যে লড়াই করতে পথে নামে মেয়ে,
পাচার হবে জেনে বুঝেই উপায় নেই তাই নামে।
ঝড়ে কারোর ছাদ উড়েছে কারোর বা গাছপালা,
লকডাউনে চাকরি গেলো জীবন ঝালাপালা।
টাকার টোপে দিশেহারা জীবন মরণ দায়,
পাচারকারী আড়কাঠিরা সুযোগ খুঁজে পায়।
গরীব গাঁয়ের মানুষ দুটো খেতে-পরতে চায়,
পাচারকারী আড়কাঠিরা টাকার লোভ দেখায়।
নাবালিকা সাবালিকা সবার পেটের টান,
কাজ পাবে আর বিয়েও হবে বাবুর বাড়ি যান।
না বলবে তার সাধ্যি কোথায় সংসার ভেসে যায়,
গাঁ গঞ্জের মানুষ বুঝেও ফাঁদেই পা বাড়ায়।
বন্ধ ইস্কুল পাঠশালা তাই মিডডে মিলও নেই,
পেটের খিদে মেটাতে সব জেনেও লাইন দেই।
উপায় কি যে উপায় নেই তাই ব্যস্ত সবাই ভোটে,
নাবালিকা সাবালিকা পথেতে তাই জোটে।
গরিবী কি ঘুচবে বলো নীতির দোহাই দিয়ে,
বাঁচার লড়াই বড়ো লড়াই নীতি খাবে ধুয়ে?
অভিনেতা নেত্রী যত ভোটের জন্যে লড়ে,
গাঁ গঞ্জের অভাবী লোক পেটের জ্বালায় মরে।। -
কবিতা- ফাগুন
ফাগুন
-সঞ্জিত মণ্ডলআজ ফাগুনের নতুন দিনে পলাশ লালে লাল,
কেমন করে বলি মিতে মন উথাল পাথাল।
ও মিতে, ভোমরা হবি, মধু পিবি, হবে মন মাতাল,
তুয়ার সনে পিরীত মনে, হই যে বেসামাল।যাবি নাকি, মন ভুলাবি, বনের ধারে কাল,
শিমূল পলাশ ফোটে বটে, আকাশ লালে লাল।
ফুলের রঙে রঙ মিলাবি, খোঁপায় দিয়ে মন ভুলাবি,
হবি রে মাতাল, ও তুই হবি রে মাতাল।সবুজ টিয়ে বসছে গিয়ে, খাচ্ছে ফুলের ঝাল,
ময়না এসে বায়না জুড়ে, করছে কি কামাল।
ও তুই লাচ দেখাবি, মধু পিবি, খাবি হামার গাল,
বুঝিস কেনে, যাবি বনে, হবে কি পয়মাল।বনের পাশে ফুলের বাসে হোস নে বেসামাল,
সামলে মনে চলিস কেনে করিস নে কামাল।
প্রেম পিরীতে ফাগুন মাসে মন উথাল পাথাল।
কৃষ্ণচূড়ায় রঙ ধরেছে বাতাস বেসামাল।মন যে বড় উদাস লাগে,
বাতাসে ফাগুন ভাসে, কেমন হল হাল।
এমন দিনে তুয়ার সনে হব বেসামাল।।