• কবিতা

    কবিতা- ছায়াপথে …

    ছায়াপথে …

    -অমল দাস

     

     

    আগুন জ্বলে, বাইরে জ্বলে -ঘরে জ্বলে
    মনের বনেও আগুন জ্বলে…
    তখন আকাশ জুড়ে বৃষ্টি
    ভিজতে চাইলে ভিজতে পারি কাক-পক্ষীর মতো
    পারলাম না চার-দেয়ালের বন্দী ছেড়ে
    পারলাম না…
    ঠিক যেমন পারলাম না প্রতিবাদের প্রদীপ খানি জ্বালতে
    প্রতিবাদের প্রতিঝড়ে আঁধার না ফের ফিরে আসে
    তাই নিঝুম রাতের তারার মতো চেয়ে থাকি নিঃশব্দে
    বৃষ্টি ভেজা মাটির মতো চুপসে থাকি ঘুম-পৃথিবীর বুকে
    ইচ্ছে হলে শব্দগুলো ইটের মতো ছুঁড়তে পারি
    মন চাইলে বন্দী ঘরের বদ্ধ দেয়াল ভাঙতে পারি
    বদলা নিতে ছুরি বুকে -পাল্টা ছুরি গাঁথতে পারি
    এই যে, আমার এপার ওপার লুট করেছো
    দেয়াল-দেয়াল তোমার নামে বদ-স্লোগান লিখতে পারি
    তবু মধ্যযামের একপশলা বৃষ্টি ’পরে
    রাত্রি নিবিড় অন্ধকারে নীরব থাকি
    -মৌন ছায়াপথে …

  • কবিতা

    কবিতা- চৈতি বেলায়

    চৈতি বেলায়

    -অমল দাস

     

     

     

    এই চৈতি বেলায় উড়ছে ও কি

    শঙ্খচিল না চিলের মতো

    কোনো পাখি ভাঙছে ডানা?

    নেই ঠিকানা আমার মতো!

     

     

    নেই ঠিকানার এই দুনিয়ায়

    যত ছন্নছাড়া পথিক ঘোরে

    বৃক্ষ বিমূঢ় উলঙ্গ পথ

    ভর দুপুরে রৌদ্রে পোড়ে।

     

     

    পুড়ছে পুড়ুক আজন্মকাল

    একলা উঠোন ঘাসের নামে

    নীল শাড়িতে মেঘ দেখি না

    বৃষ্টি কি আর আসবে নেমে?

     

     

    নামছে পারদ আরশি বেয়ে

    আর্তনাদের সন্ধ্যা ঝরে

    একটি পায়ের একলা শালিক

    হারিয়ে যায় রোজ অন্ধকারে।

  • কবিতা

    কবিতা- আত্মগ্লানি

    আত্মগ্লানি

    -অমল দাস

     

    এখনো লুঙ্গিতে প্রকৃতির হাওয়া লাগছে,

    পাশ্চাত্য আভিজাত্যের গলাবন্ধনী বাঁধা হয়নি।   

    খবরের সকালে মনুষ্যত্ব গরম চায়ের কাপে-  

    নোনতা বিস্কুটের মত ভিজে যায়নি ।  

     

    এখনো মেঠো সোঁদা গন্ধ গায়ে মাখি রোজ

    জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের সাথে করি খেলা

    নদী, নদী-জল ডাঙায় ছলছল ।

    সূর্যের সাথে ঘর্মাক্ত সারাবেলা

     

    পেট্রোলিয়ামের মত উদ্বায়ী নই,

    উবে যাব চোখ বন্ধ করে!

    অ্যাসিডের মত তেজস্বী নই, পুড়িয়ে দেবো !

    বৃশ্চিক নই যে দংশাবো বিষ ঝেড়ে ।

     

    উত্তাপ লাগে তবু নিরুপায়

    রুটি সেঁকা ধার্মিক তাওয়ায়

    পক্ষে বিপক্ষে ভয়ঙ্করী নিরপেক্ষ

    মূর্তির ছয়লাপ, রক্তের সুবাস হাওয়ায়।

     

     

    ওখানে সাম্প্রদায়িক আগুনে

    মহাভোজের খিচুড়ি তৈরি

    কতেক থার্মোকলের পাত পেতেছে -পশুর চামড়া। 

    নরকীট পড়ে আছে মরে।

    হায় হায় অসহায় আত্মগ্লানি

    আফসোসের নৌকায় আমি, আমরা।

  • কবিতা

    কবিতা- জল-নূপুর

    জল-নূপুর

    -অমল দাস

     

     

    আকাশের নীল মখমলি শামিয়ানার আড়ালে-

         মেঘেদের নির্বাক হরতাল।

    চিল দূরত্বে নজর-বান নিক্ষেপ করলেও

    গোপন ডেরার সম্মিলিত সম্মেলনের শর্ত জানা দুরহ।

    উত্তরোত্তর সান্ধ্য জলসার সম্মানিত নর্তকী জল-নূপুর  

    নিমিত্তের আরও খোঁজ – আরও খনন

    পৃথিবীর উপরে – বাতাসের গভীরে – নক্ষত্রের অন্তঃপুরে।

     

    দ্বিপ্রহরের তাপীয় উৎপাতে স্বেদ-শ্রাবণের স্রোত-  

    সমতলে নেমে নদী হতে চাইলে,

    উপত্যকার তৃষ্ণার্ত মৃত্তিকা গিলে খায় গোগ্রাসে।

    লাল বলয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পত্র পাঠের শেষে

    একাদশীর সাঁঝে বৃষ্টি খুঁজতে গিয়ে

                  -আমি তোমার চোখে মায়া দেখেছি!

    বিবশ করেছ আমায়…

    অমল আঁধারে মিটিমিটি আলোর ইলশেগুঁড়িতে

    কতগুলি ধুসর বক রূপালী আভা নিয়ে ফিরে যায়…

    তুমি জল নূপুর পায়ে এলে না…

    বৃষ্টিতে তোমায় পেলাম না।

  • কবিতা

    কবিতা- ভোকাট্টা

    ভোকাট্টা

    -অমল দাস

     

     

    প্রকৃতির অনুশোচনার ল্যাবে-  

    ভাবনা ও বাস্তব নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্কে মিশ্রণ করলে

    একটি যৌগ রাসায়নিক উৎপাদিত হয়,  

    -যা কিনা সূত্রের সমাধান।  

    সমাধানের উৎপাত বড়ো বেআব্রু

    -জীবনের নোঙর গাথা নাব্যতাহীন জলে। 

     

    জীবনকে যৌবন দিয়ে ভাগ করে

    যে অবশেষ থাকে অমীমাংসিত পাতায়,

    তা অনুযোগের দানা পাকায় পিচ গলা রৌদ্রে!

    এই বেনামী ধাতুর দানা বুলেটপ্রুফ ভেদ করে-  

    হৃদপিণ্ডের পাঁজর ভাঙে।

     

    -নির্বিশেষে ভাঙা পাঁজরে গা-সওয়া মনোভাবে আমি-আমরা

    কুয়াশা ভোরে সন্তর্পণে রেলগাড়ীতে উঠে পড়ি

    গুদাম ঘরে মজুত মালের মতো।

     

    জীবনের এক্কা-দোক্কা খেলায় মৃত শহরে মূল্য খুঁজতে গিয়ে

    পলাশের লালে সিগন্যালের ভ্রম দেখে

        -নেমে পড়ি ভোকাট্টার দেশে।

     

  • কবিতা

    কবিতা- সাঁকো

    সাঁকো

    -অমল দাস

     

     

    বিগত রাতের স্বপ্নপরীর মতো

    ঘুম ভাঙা ভোরে শার্সি বেয়ে আলোর স্রোত নেমে এলে,  

    বনাঞ্চলের মৃতপ্রায় আগাছার মতো জেগে উঠি।

     

    যদিও আঙিনায় দাম্পত্য কোলাহলের ধুলো বালি-  

    সঙ্গতিহীন সংজ্ঞা হারায় না।

    যা কিছু বিনম্র বিরহের খড়কুটো জমে ছিল, তা-

    শৈত্য কুয়াশায় তাপ পোয়াতে জ্বালিয়ে রাখি অগ্নিকুণ্ডে।   

     

    অথবা কখনো কোনো মৃত সকালে-

    নোনতা স্বাদ মিশিয়েছি ঈষৎ উষ্ণ চা’য়ে।

     

    যদিও অবেলায় তেপান্তরে এসেছো তুমি

    তোমার আঁচলেও শেষ বেলার ধুলো ওড়ে

    ওই ধুলোরই ঘ্রাণ-মগ্ন ঝিল পারের দু’ই পাখি…

     

    যে কটা ফুল ডালিতে এনেছো খোঁপায় সাজাবে ভেবে

    সুতো দিয়ে সাঁকো বাঁধলে

          তুমি আমি অবলীলায় করেছি পারাপার।

  • কবিতা

    কবিতা- ঘ্রাণ

    ঘ্রাণ

    -অমল দাস

     

     

    একটি অমীমাংসিত ঘ্রাণ

    আমাকে টেনে হিঁচড়ে ক্রমশ নামিয়ে আনে পাদদেশের খাদে।  

    বিগতগামী অনুযোগের নুড়ি-কাঁকর 

    গড়িয়ে গড়িয়ে হোঁচট খায় সমাবেশ ভাঙা

     ছন্নছাড়া পথে।

     

    ঝরা পাতার উপত্যকায় বৃন্তচ্যুত দিনে দেখি

    উল্টো পারের কতেক দূরে কোন পূর্বসূরির ধোঁয়া ওড়ে আজও..  

     

    প্রতিবিম্ব দেখা থালার কার্নিশ বরাবর অভুক্তের আহার সাজিয়ে ভাবি

    এই ঘ্রাণ কি তুমি দিয়েছ?

     

    মাদকাতার মৌন অহংকার মাত্রাহীন অনুচ্চারিত শব্দ লেখে

    ফটিক জলের দানার মতো চমকে ওঠে ভিতর ঘরে

    আবার বাস্পনীতির অন্ধ যামে সংসারী হয় মাটির ধুলোয়।

     

    একটি ঘ্রাণ অনাচ্ছাদিত রাত্রি জঠরে স্বপ্ন বাঁধে গভীরতর

    আমি বিভোর থাকি আছড়ে পড়া জলে-  

       তট ভাঙার খেলায়।

    কালসর্প কুণ্ডলীর মণ্ড গুনে পিণ্ডি দিই নিজের..  

    আদিমতায় বর্বরতার নিশাচরী ডানা হলে

    কবর কাটি মৃত কবিতার।

  • কবিতা

    কবিতা- ছিন্ন বীণা

    ছিন্ন বীণা

    -অমল দাস

     

     

    ভোরের শিশু ফুল এনেছো? ফুল!

    পয়সা নেবে না? এমনিই তুমি যাবে?

    যাও না তবে আমার অর্ধ-প্রেমের আঁধার ঘরে

    ফুলগুলোকে যত্নে নিও

    -তার ডালায় দিতে হবে!   

     

    একটি দুটি যন্ত্রণা সে গাঁথতে থাকুক রবির গানে

    সজল চোখে সাজিয়ে দিক তার দেবতার চরণে।

     

    কেঁদো না আর!

    এই সমস্ত ফুল পাঠিয়েছি আমি

    যে যন্ত্রণা টাঙিয়ে রাখো ক্যালেন্ডারের মতো

    টান দিয়ে সব ছিঁড়ে ফেলো দুয়ার থেকে দূরে

    একটিবার -একটিবার জাগিয়ে তোল

       -তোমার সাহস যত!  

     

    ভাবছ কি! আত্মীয়তা গীটারের তার

    বাজবে না আর  

    ছিন্ন হলে। চুলোয় হোক ছাই… 

    মৃত্যুমুখী তোমার দিকে চায়নি যারা চেয়ে

    কি পেয়েছ? কি পেয়েছ?

    এতো মৌন আবেশ ছেয়ে!

     

    বলতে পারো…

    এই এতকাল কার ছবিতে রঙ দিয়েছ ঢেলে?

    কোন ছবিকে টাঙিয়েছ প্রদর্শনী দেয়ালে?

    ধূল জমেছে তোমার ঘরে

    -তাপ মাপনি জ্বরে

    সমস্তটাই লুটে গেলো রোদহারা বিকেলে!   

     

    ভাবছ তুমি, সব তোমার ব্যাপার?

    -হ্যাঁ তোমার ব্যাপারই বটে!  

    তবে মূল্য পাঠিও ফুল শিশুটির হাতে  

    পারানিতে লাগবে কাজে

    আমার অপেক্ষারা জ্বলছে শ্মশান ঘাটে। 

     

  • কবিতা

    কবিতা- আবছায়া অবয়ব.. 

    আবছায়া অবয়ব.. 

     -অমল দাস

     

     

     

    শৌচালয়ের দেয়াল জুড়ে কতগুলি অস্পষ্ট দৈহিক কাঠামো-

    ঘিরে ধরে আমার নগ্নতার নিসর্গ।

    রোজ তারা দাঁড়িয়ে থাকে নিস্পলক নির্বাকে

     – আছে স্বৈরাচারী রাত্রির বিগত শতক ধরে।  

    সময়, পেন্ডুলামে ফাঁস লাগিয়ে গোঙানি দেয়  

    টিকটিক না ফিকফিক, জানে আর্যাবর্তের আর্য।

    আমার ‘আ-এ আলস্য ত্যাগ করো’র অর্জিত সব জ্ঞানের পোকা-  

    যৌগ জলে ভেসে চলে- নোনতা সাগরে।

    দেয়াল ছাপে দাঁড়িয়ে আছে যারা –

    জানতে ইচ্ছা করে -এরা কারা?

    এই চক্করে কি সবাই পড়েছে? না একলা আমি!

    বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ, ভূত-প্রেত, সাধু-সাধ্বী, দস্যু -কত রূপ!

    তুমিও আছো এই আবছায়া চিত্রলেখার অলীক গৃহের দ্বারে?

    তোমায় পাইনা কেন তবে!

    কোন চরিত্রে তুমি আছো -আমার জন্ম রূপের সামনে। 

    কোনো ডাকপিওনের হাতে আছো মুখবন্ধ খামে?  

    সিমেন্টের এই আস্তরণের পিছে-  

                   কোন মুলুকের মানচিত্রে তুমি?

    আছো? না কচুরিপানার ঝিলে আমার বোধের বুদবুদের আতস ফাটে…    

    হয়তো হিম শীতল পৌষে সূর্যের মতো তামাসা দ্যাখো-

    মেঘের আঁচলে ঢেকে -স্তনে মুখ দিয়ে। 

    প্রশ্ন মনে আমার…  

    না কি পাল্টা প্রশ্নে দাঁড়িয়ে আছে ওরা!

    যা শুনতে পাইনি আজও -ঝিমিয়ে পড়ছি বধিরতার গ্রামে!    

     

      

  • কবিতা

    কবিতা- ঘুণপোকার বাসা

    ঘুণপোকার বাসা

    – অমল দাস

     

     

     

    ঘুণপোকার বাসা রসালো কাঠ ,

    শুকনো কাঠে পিঁপড়ের ঝাঁক।

    এক মুঠো মাটি সোঁদা গন্ধের স্বাদ,

    বিতৃষ্ণা লাগে কেঁচোর আহ্লাদ।

    সবুজ পত্রে ছাইয়ের আস্তরণ,

    কুয়োয় পড়া ব্যাঙের নেই উত্তরণ।

    পাখির কুহুতান সাধনার ফল,

    মাছের আর্তনাদ তপ্ত হাঁটু জল।

    বাতাসে খনিজের অবাধ বিচরণ,

    আশ্রয় চায় ছায়া ক্লান্ত চরণ।

    প্রজাপতি ডানা ক্ষণিকের ভালো,

    পরক্ষণেই ঘৃণ্য শুঁয়ো হয়ে গেল।

    নদীর মহানতায় পচনের জয়,

    ধৈর্য্যের মৃত্তিকায় ধীরে ধীরে ক্ষয়।

    গাই-এ অতি প্রেম, গৃহে বলদে না

    বোয়াল আপনে আপন খোঁজে না।

    সাজানো ঘরে মাকড়সার জাল,

    চুপ গৃহগোধিকা শিকারির চাল।

    লতা আলোয় ভয়ে মাথা তোলে,

    ছাগল এসে সমূলে তা নেয় গিলে।

    মৌমাছি জড়ো হয় খুশির ছন্দে,

    মধুচোর চক্রান্তে খোঁচার আনন্দে।

    বিড়াল এসেছে -মৃদু ম্যাও করে,

    ইঁদুরের ছোটাছুটি স্বরেই ডরে।

    চিল আকাশ হতে শকুনের চোখ,

    হেঁসেলের চিকেন -মরুতে মরক।

    সূর্যের ক্রোধে আসে আগুনি বেলা,

    মজুরের রক্তে -আমীরের ভেলা।

    বৃক্ষ পুষ্প অতি লালনে ফল ধরে,

    শিলা হঠাৎ নির্দয়ী আঘাত করে।

    ঘর্ষণে চাকা তপ্ত পিচে মিশে যায়,

    চালক- গিয়ার ঠ্যালাতে মজা পায়।

    সুগন্ধি পুষ্প আবহে সুবাস ছড়ায়,

    দুষ্ট ভ্রমরের দল বোঁটা ছিঁড়ে খায়।

    শিশির কান্না জুড়ে দূর্বার যাপন,

    সবার পদতলে হাসে -নেই আপন।

    জমাটি হিমস্খলন অতি সন্তর্পণে,

    রক্ত পিপাসুর সভা এই তপোবনে।  

    শোভা নয় ডানার ফড়িঙের ভয়,

    ভাদ্রের কুকুর পিছে পিছে ধায়।

    কবুতর ঝাঁকে ওরা খাদ্য ছড়ায়,

    উড়ো পথে চড়ূই ভাগ মেরে যায়।

    স্বাদ নেই আর পাতে দেওয়া খাদ্যে,

    মাছিদের দিন কাটে অতি নিরানন্দে।

    বন্য বিচারে হাতি হুঙ্কার তোলে,

    ক্ষুদ্র বন্যেরা -ভয়ে পাতা দোলে।    

    ব্যস্ত লোকালয়ে সময় -অসহায়,

    হিসেব নিকেশ সব হবে যমালয়।

     

You cannot copy content of this page