-
কবিতা- একুশের সংগ্রাম
একুশের সংগ্রাম
-অমল দাস
তুমি আমাদের চম্কাতে পারবে না
আমরা নবীন -নবজাতকের ঢেউ,
ভাঙতে যতই আঘাত হানো বারবার
মাটির মূর্তি আমরা নইতো কেউ!
সাগরের মতো স্রোত এনে দেবো পথে
সাগরের মতো ধুয়ে নিয়ে যাবো সব,
কোটি আক্রোশ জমা হবে ময়দানে
শুনে নিও তুমি উত্তাল কলরব।
এবার যদি পালাতে পারো পালাও
নিজেকে তুমি আর ভেবো না বড়ো,
পদধ্বনিতে কাঁপিয়ে দেবো ভূমি
তাইতো আমরা আজকে হয়েছি জড়ো।
আজকে তোমার শমন হয়েছে জারি
আমরা নেবো না অনুনয়-অনুরোধ।
ধর্ম নেশার আঁতুড়ে আগুন জ্বালিয়ে
দেয়া নেয়া বুঝি এইবার হবে শোধ।
অতীতের ভুল শুধরে নিয়েছি আমরা
এখন একুশ- একুশের সংগ্রাম,
আমাদের তুমি আটকাতে পারবে না
আমরা এখন শহর থেকে গ্রাম।
পাহাড়ের মত রোধে গড়েছি আমরা
অতিক্রমের স্পর্ধা রেখো না তুমি
কত শক্তির সৈন্য জমেছে দেখাও
ধুলোয় মেশাবো ক্ষমতার পাগলামী
হাজার সালের চাবুক-পাথর পিঠে
পৌঁছে গেছি মাল খালাসের সীমায়
এখানেই ফের রামসেতু হবে কলির
এই পাথরে চাপা দেবো আজ তোমায়
ছন্নছাড়া ভেবো না তুমি আমাদের
আমরা উৎসাহী, চঞ্চল, উদ্যম!
ডুবে যাবে তুমি আমাদের গভীরতায়
আমরা সবুজ শৃঙ্খল উত্তম।
-
কবিতা- হয়তো তুমি জানো না!
হয়তো তুমি জানো না!
-অমল দাস
হয়তো জানো না! তুমি আমার তৃষ্ণার একঘড়া জল,
প্রচণ্ড রোদ্দুরে ম্যাস্টিক পথে বিস্তীর্ণ শিরীষ-ছায়াতল।
তুমি জানো না যে তা নয়! আমার জাহাজের মাস্তুল
তুমি,-কবিতার খাতা। কলম, তোমার আদুরে আঙুল।
জানো না!তুমি সন্ধ্যার জোনাকি আমার, চাঁদের আলো
শৈত্যে কুয়াশা উঠোনে তুমিই-তো প্রত্যহ আগুন জ্বালো।
বাগানের জ্যৈষ্ঠী-আম তুমি, চির বসন্তে শিমূলের ফুল,
ছলছল উত্তল নদী জলে তুমি, অচ্যুত আশ্রয়ের দু-কূল।
তোমার রক্তিম সুডৌল কায়া আমার প্রিয় প্রাণের শহর,
হাওয়ায় দোদ্যুলদোলে কুন্তল মেঘ, বৈশাখীর সান্ধ্য প্রহর।
তুমি তো আমার রাত্রি নিঝুম, হৃৎপিণ্ডে রক্তের চলাচল,
আমার নির্জনতার আত্মীয়া তুমি সরোবরের শুভ্র শতদল।
তুমি, অরণ্য দিনে অজ্ঞাতবাসে আমার তপস্যার কুঠিঘর,
তুমি জানো না আজও তুমিই আরাধ্য, তুমিই আমার স্বর।
আকাশ রঙে এঁকেছি তোমায় দেখেছি একটিই নীল তারা
আমার সেই তারাতে তুমিই তুমি, আমি নীলেই সর্বহারা।
কতটা যে বাসি ভালো, জানো না! জানতে চাওনি কখনো,
আমি পারবো না বলতে, বলবো না! তুমি বোঝনি এখনো!
-
অণু গল্প- বিকেলের আঁধার
বিকেলের আঁধার
-অমল দাস
গত রাতে ফোনে কথা হয়েছিল আজ একটা ‘ফিনিসিং টাস্ক’ আছে। সেটা সম্পূর্ণ করে বিকেল বেলায় পাঁচটার মধ্যে দেখা করবে। সেই হেতু আজও অন্যান্য দিনের মত প্রত্যুষা নিউ মার্কেটের একটি অভিজাত রেস্তরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে অম্লানের জন্য অপেক্ষা করছে।
অপেক্ষা যেন তার জীবনের ছায়া সঙ্গী এই সম্পর্কের মাঝে। দেখা করার প্রশ্নে তাকেই অপেক্ষা করতে হয়। বিয়ের কথা হলেও অপেক্ষা। এমনকি প্রেম নিবেদনের পর হ্যাঁ উত্তর শুনতেও এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অপেক্ষার এই দীর্ঘ সেতুর দৈর্ঘ্য আর কমেছে না তার জীবন থেকে।
প্রত্যুষা একটি সংস্থায় চাকরি করে। অম্লান কিসের একটা ব্যবসা করে। মাঝেই মাঝেই ব্যবসার কাজে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কিন্তু কিসের ব্যবসা কবে কোন শহরে থাকে তা প্রত্যুষা জানে না। সময় হলে নাকি জানবে। প্রশ্ন জাগে, রাগ হয় কিন্তু নিষ্পাপ মুখের হাসিটা নিয়ে যখন দীর্ঘ দিন পর অম্লান এসে সামনে দাঁড়ায়, তখন সব প্রশ্নেরা, রাগ, অভিমান অদৃশ্য হয়ে যায় সেই হাসির আড়ালে।
এই নিউমার্কেট চত্বরেই তাদের প্রথম আলাপ বছর কয়েক আগে। সেই আলাপ-ই আলপনা এঁকেছিল মনে। ক্ষণে ক্ষণে বাসা বাঁধারও স্বপ্ন দেখেছে চোখের নিস্পলক পাতায়। কিন্তু আত্মিক দূরত্বের কারণে আলপনার দাগ যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে চলেছে।
হাতের মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতেই প্রত্যুষা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যত দেরি হোক আজ দেখা করেই বাড়ি ফিরবে। চরম সিদ্ধান্তটা নিতেই হবে। তাতে সম্পর্ক না থাকে না থাকুক! কাঁদার হলে আগামী ছুটির দু’দিন বাড়িতেই একলা ঘরে কেঁদে নেবে। কিন্তু আর নয়… অনেক হয়েছে…
এমন সময় একটি নিউজ চ্যানেলের খবরে চোখ আটকে যায়। আই.বি অফিসার অম্লান চ্যাটার্জী একটি সিক্রেট মিশনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, কোলকাতার মোমিনপুর এলাকায়। ছবিটা চোখে পড়তেই প্রত্যুষার চারিদিক আঁধার নেমে আসে।
-
কবিতা- প্রশ্নেরা হাঁটে
প্রশ্নেরা হাঁটে
-অমল দাস
পূবাকাশে মেঘ ঢেকে যায়
বিষাদের জল মাঠে,
ব্যাঙাচির দল জানায় আছি
প্রশ্নেরা সাথে হাঁটে।
বৃষ্টি বেলায় মেঘ লুটে যায়
সৃষ্টি নদে ঢেউ,
চিতায় কারো শান্ত নিদ্রা
আগুন জ্বালে কেউ।
উল্কাপাতের আঁধার রাতে
ভয় জেগেছিল চোখে,
শিউলি তলায় ফুল মরে যায়
গন্ধ হারায় শোকে।
রাত পোহানো ভোরের পাখি
যতই মধুর হোক
আলোর সাথেই বাড়-বাড়ন্ত
শব্দ ধ্বনির রোগ।
দূর্বা তুমি স্নেহের আশিস
এই গৃহ মন্দিরে,
যে গর্ভেই জন্মে জাগো
পুড়তে হয় রোদ্দুরে।
প্রহেলিকার ওড়না সকাল
নেত্র পাতায় জল,
রঙ বদলে শিকার খোঁজে
রক্তচোষার দল।
দিনের শেষে ফেরার পথে
শুধু বিষণ্ণতার ভিড়,
উপেক্ষার গার্হ-স্থ দেয়াল
আঁকছে ক্ষয়ের চির।
ভগ্ন তটেই আঘাত যত
যত ভঙ্গুরতার খেল,
নাবিক ঠোঁটে লাজের স্তুতি
মিছে উদ্বেগ উদ্বেল।
-
কবিতা- বৈধব্য
বৈধব্য
-অমল দাস
রক্তিম সিঁদুরের কেমিক্যালে মৃত সূর্যের ছাপ-
মণিবন্ধের শাঁখা ভেঙে ফেলা মরু-ললাটে!
অগ্নিসাক্ষীর ছায়াসঙ্গী বাইপাস ধরে নিরুদ্দেশ,
সি.সি টিভির ফুটেজ নেই কোনো চৌরাস্তার মোড়ে।
ফ্ল্যাশব্যাকে স্মৃতি-মন্থনের অবকাশহীন একাদশী, দ্বাদশী…
স্পর্শকাতর নদীর কিনারে আলতা রাঙা পা ধুয়ে যায়,
পহেলা রজনীতে আত্ম-সমর্পণের আস্থা ডুবে অতলে!
বেদুইন কোনো নৌকা রেখে যায়নি বেহুলার দিকমার্গে..
আঁচলে গিঁট বাঁধার আড়ম্বরে হিসাবে উপচে পড়ে যোগ,
অথচ বিয়োগে! ঋণখেলাপীর ভয়ে সংখ্যারা পগারপার
একটানে খাতার পাতা ছিঁড়ে উঠোনে, ঝাড়ুর ডগায়..
জন্মের দায় কাঁধে পল্লবিত শান্ত নয়নসলিলে বিমর্ষ জনক
জননী ‘স্বর্গাদপি গরিয়সী’র মানে বোঝে না,
-পদ্মা যমুনার বাঁধ ছিন্ন হয় উৎকণ্ঠায়!
মদনাগ্রাসী লোলে পিঁপড়েরা চকোলেট ডে’র অপেক্ষায়
লংমার্চে ঘিরে রাখে বাস্তুর চারিপাশ… মুহূর্ত সন্ধানী!
সংগ্রাম, মিষ্টান্নের পাত্র সুরক্ষায় বৈধব্য হেঁটে চলে-
রেললাইনের মাঝ বরাবর পথে..
-
কবিতা- ইস্তেহার
ইস্তেহার
-অমল দাস
শব্দগুলো শিশুসুলভ ছুটতে থাকে ইচ্ছে মতন
গোলাপের ঘায়ে পথের মোড়ে হোঁচট খায়
ভিজে আঁচলে লেপটে থেকে হিঁচড়ে চলে
নত চোখ- অতি বে-নামীর কবর দেয়।
মৃত কোষ ধুলো হয়ে পা জড়িয়ে ধরে,
পৌঁছে যায় সেই ভালোবাসার আঙিনায়।
সেথা ঝাঁটার আদর গৃহ থেকে বাইরে ফেলে..
চৈত্র-বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দিনের রৌদ্র ’গায়।
আষাঢ়ে বর্ষা এসে ধুয়ে দেয়, মলিন উঠোন।
ইতিহাস সব জমা হয় কোনো পলিস্তরে..
এই পলিতে কমল ফোটেনি কোনো কালেই,
ঘূর্ণি ঝড়ের সে ঘর বেঁধেছিল ইস্তেহারে।
শ্বসন পথে সব ধূলিকণা আটকানো যায়?
ফুসফুসেতে নিমোনিয়ার চর হবে সাড়…
তারার নদে রোজ ডুবে যায় মৃত তারা
ছেঁড়ে যাওয়া আলোও যে হয় শেষ উপহার!
-
কবিতা- এও এক ভালোবাসা
এও এক ভালোবাসা
-অমল দাস
জোয়ার-ভাটার খেলায় এক চোরা স্রোত
পাড়ে এসে ঘা দেয়,
ঘোলা জলে স্মৃতি ভেসে ওঠে ডানে বামে।
কল্পনার খাঁচায় বন্দী রেখে সুরে বাঁধি
আমরা নতুন আগামীর,
স্বপ্ন জমা করি ভালবাসার বর্ণালী খামে।অলেখা চিঠির শব্দেরা ডানায় পাড়ি দেয়
ভিনদেশী এক গ্রামে,
ঘাস-শিশির পায়ে খোঁজে আপনের ঠিকানা।
প্রত্যুত্তরের প্রহর কাঁদে দীর্ঘ থেকে দৃশ্যহীন
আদি-অনাদি ছুঁয়ে,
এও এক ভালোবাসা, যে বাসার নাম জানিনা।
কলঙ্ক চাঁদের জ্যোৎস্নায় কৃষ্ণনিশি যৌবনের
নিষিদ্ধ আলোর স্নান,
মন মাতালের পাতাল ঘিরে দুর্বোধ্য শিলালেখ!
আশার প্রভাতী বন্যায় আধো উন্মোচন মাগে
মৃত্তিকাবৃত শায়িত শহর,
আগামীর দ্বারে পুষ্পবরণে ভালোবাসার অভিষেক।
-
কবিতা- মেঠো পথ ধরে…
মেঠো পথ ধরে…
-অমল দাস
আমরা এগিয়ে গেলাম মেঠো পথ ধরে..
তুমি ওখানেই হাঁটু যুগল দৃঢ় করে দাঁড়িয়ে থাকো!
যে পথ ভঙ্গুর, দুঃসহায় দুর্গম, অন্তহীন.. অ-বিলীন
যে পথ অজস্র গভীর পঙ্কিল ডোবায় পূর্ণ
যে পথ রক্ত লালে রঞ্জিত, সেই পথই আমাদের।
তুমি নিরুত্তাপ, দেখতে থেকো নীল দিগন্তে মিশে যেতে!
চিন্তা করো না, সমস্ত শস্য দানা রেখে যাবো,
তুমি একলা খেলে শেষ হবেনা, এজন্মে!
তোমার তো দোসরও নেই!
সেও আমাদের পথের সাথী, এই রণ হুঙ্কারে।
তুমি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো, ভিজে মাছ হয়ে!
আমরা এগিয়ে গেলাম সংগ্রামের ওই পথ ধরে…
পলাশ,শিমূল,বসন্ত আজ রেখে গেলাম,
কবিতা, গল্প, নাট্য, গীতি সব এখন তোমার,
আমরা কেবল বুকে সাহস বেঁধে নিলাম!
ঐক্য গড়ে ভাঙবো শোষণ নিদ্রা…
তুমি ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকো উদাসীন!
রক্ত আমাদের ঝরেছে, ঝরুক…
শ্বাস আমাদের থামছে, থামুক…
মাটিতে লাশ লুটিয়ে পড়ছে, পড়ুক…
সংখ্যা না হয় কমবে, আরও কমুক…
শেষ হাসিটা আমরাই হাসবো, জেনে রাখো…
শেষ তরীটা আমরাই বইবো, মনে রেখো…
শেষ হোলিটা আমরাই খেলবো, দেখে রেখো…
শেষ ছবিটা আমরাই আঁকবো, তুলে রেখো…
তুমি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো, মূক বধির!
আমরা এগিয়ে গেলাম মেঠো পথ ধরে…
-
কবিতা- দশমিক
দশমিক
-অমল দাস
যেখানে ভিড়ের শেষে ফাঁকা ময়দান,
ছিল ফুরফুরে হাওয়ার কথা..
সেখানেই আঁধারে নেমে আসে দিন,
মসৃণে আসে নীরবতা।
নীরবতা আর স্বাধীনতা মিলে
গভীর স্বপ্ন রচনার রাত।
কুয়াশা দেয়ালে বন্দী হতে হতে…
বিগলিত সঞ্চিত ধারাপাত।
এখানে নিঝুম রাতের ফিসফিসানি
সব অধিবাসীরা নিশ্চুপ
আমার জ্যোৎস্নালোর চালা ঘর
গভীর স্মৃতি মন্থনে ডুব।
অনাহুতরা আসে বারবার ফিরে
কলম বঞ্চিত হয় পথে
জীবনের যা চাওয়া পাওয়া, সব
ঝুলছে অভিসম্পাতে।
‘হে মহাজীবন’-এর ঝলসানো রুটি
জানলায় গ্রহ গ্রাসে বসে,
যেটুকু আলো লেগেছিল বদ্ধতটে, তা-
আর্যের দশমিক হিসাব কষে!
-
কবিতা- কারশেড
কারশেড
-অমল দাস
রাত বারোটার পর গাড়িটি কারশেডে দাঁড়াতেই..
কতগুলি নোংরা দেহ গিট বাঁধা পুটলি নিয়ে,
ধুপধাপ শব্দ করে লাফিয়ে ওঠে নির্জন কামরায়।
না! কোন ডাকাত নয়, রেলের পাত বিক্রি করা মাফিয়া নয়,
এরা চোর ছেঁচোড়ও নয়!
এরা উপেক্ষিত নাগরিক, দেশের বোঝা, দশের বোঝা।
এমনকি এই একবিংশ শতকের পৃথিবীরও বোঝা…
ধূলা মিশ্রিত খর্ব কুঞ্চিত শীর্ণ চামড়ার দেহে পেটে খিল দেওয়া নাগরিক।
খিলটা বেশ শক্তপোক্ত, কারণ..
বাইরের হাওয়া পেটে-
আবার পেটের হাওয়া বাইরে যেন আসতেই দেয়না।
ওরা একটু আগেই লাইনের ধারে আগুন শিখা জ্বেলেছিল।
খাবার কি? আর কতটা ছিল জানা নেই!
তবে অনেকক্ষণ ধরে ফুটছিল খুব..
আসলে ফুটছিল শিরা উপশিরায় জমাট বাঁধা রক্তও..
বাইরে কুয়াশায় ঢেকে এসেছে, ফুরফুরে হাওয়ায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা,
বোধহয় তাপ নিচ্ছিল –
ফাটাফুটি পোশাকে উলঙ্গ মানচিত্রের শরীরে!
নিয়েছে যা, আবার ক্ষণিকে বেরিয়েও গেছে।
ধরে রাখতে পারেনি, ধরে রাখাও যায়না..
ওরা ঝুলি থেকে কয়েকটি অ্যালমুনিয়ামের অর্ধচন্দ্রাকৃতি থালা বার করে
পাত পেরে খেয়েছিল।
চাল সিদ্ধ বা আটা সিদ্ধ হবে!
মনে হয় সব্জি ছিলনা.. সব্জি ওদের বিলাসীতার মত!
পেট ভরেছিল? জানিনা!
গরিবের খিদে মিটলেও সই, না মিটলেও সই।
কে আর খোঁজ রাখে…
এতো রাতে ঘুম তো একটা দরকার, তাই.. কারশেডের গাড়িটায়…
এখন প্রায় মধ্যরাত!
এ গাড়ি তিনটেয় ফের ছেড়ে যাবে..
হাতে মোটে ঘণ্টা দুই তিন, তাহলে?
ট্রেনেই ওরা থেকে যাবে।
ঘুম ভাঙলে যেখানে দাঁড়াবে ট্রেন, সেখানেই ওরা নেমে যাবে।
সেখানেই ওদের সংসার, সেখানেই ওদের দেশ..
আঁধার নামলে কারশেডের কোন গাড়িই হবে মাথার ছাদ!
ওদের প্রতি কারও খেয়াল নেই, দরদও নেই..
কর্তারা বলেন ‘অবাঞ্ছিতদের দল!
মরুকগে, যেখানে খুশি মরুকগে… আমাদের কি’?
আমাদের কিছুনা, তোমাদেরও কিছুনা, জন্তু জানোয়ারের তো নয়ই…
দায় কার? ঈশ্বরের..?
সে তো অনেক আগেই দায় ঝেড়ে মুক্ত হয়েছে!
ছেড়ে দিয়েছে জীবিতের জঙ্গলে..
এ জঙ্গলে পশু আছে, পশুর মত মানুষ আছে
কেবল কারও হুঁশ নেই…
অবাঞ্ছিতের প্রতি প্রেম নেই,
মানবতা.. না! তাও নেই…