• কবিতা

    কবিতা- রঙ

    রঙ
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    দুষ্টুমি তোর ষোলআনা পুষিয়ে দেয় খুনসুটিতে
    রং দেওয়ার অছিলায় ছোঁয়ার পরশ দেহমনে,
    আমার হাত তোর গালে আবির আরো হয় রঙিন
    লজ্জায় মুখ লাল এত ভালোবাসা লুকিয়ে রাখিস!

    ফাগুনের আগুন লাগে ভালোবাসার মধুর ছোঁয়ায়
    আলিঙ্গনে উষ্ণতা ঠোঁটে ঠোঁট লজ্জায় পলক নামায়,
    ঠোঁটের কম্পনে অনুভব শিহরণে কেঁপে শরীর পোড়ে
    গোধূলির আলো ছায়া তোর আঁচলে কখন মুখ ঢাকে।

    ঋতুরাজ বসন্ত যেন ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত প্রকৃতিকে
    পলাশ ফুলের সাজ গলায়, চুলের খোঁপায় মানাবে তোকে,
    ভালবাসার রঙ লাল হয়ে সাজবে তোর সিঁথিতে
    ভালোবাসা রঙ হারিয়ে ধূলোয় মিশে আছে মাটিতে।

    বসন্ত উৎসব পাড়ার পাড়ায় রঙ লাগে না তোর শরীরে,
    সমাজের রীতি নীতি প্রথার ফাঁসে জীবন জড়িয়ে
    জানি লাল রঙ খুব প্রিয় তোর সাদা আঁচল মুখ ঢাকে
    রঙ কেড়েছে সব সুখ সাদাশাড়ি বড় বেরঙিন ফিকে।

  • কবিতা

    কবিতা- ছোঁয়া”

    “ছোঁয়া”
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    সবাই কিছু না কিছু ছুঁতে চায় হয়তো স্বপ্ন দেখে
    ছোঁয়া কি এতই সহজ যদি সেটা হয় কল্পনা অলীকে
    তুমি ছোঁয় আমিও ছুঁই স্পর্শ করি হাতে হাত রেখে
    কঠিন বিষয় মন, ওকে ছোঁয়া যায় কি অত সহজে!

    ভালোবেসে কাছাকাছি পাশাপাশি কত সময় কেটেছে,
    আলিঙ্গনে উষ্ণতায় ঠোঁটে ঠোঁট রেখে স্বপ্নে ভেসেছে ,
    কামনার আগুনে শরীরে পুড়ে ভিন্ন খাঁজও ছুঁয়েছে,
    ছোঁয়াতেও বিষ আছে, ভালোবাসা অনুভূতির অভাবে।

    পুরুষ গর্ব করে আমি নারীকে ছুঁয়েছি সত্যিই কি তাই?
    দেহ স্পর্শ ওতো সহজ নানা অছিলায় ভিন্ন উপায়
    বেশ্যার দেহও তো স্পর্শ করে, বিনিময় টাকায়
    কিন্তু মন ছুঁয়ে যাওয়া, না, মন কখনো বিক্রি হয়?

    ছোঁয়াও বিশ্বাসঘাতক যখন বিশ্বাসে আঘাত হানে,
    শিকার যখন অবুঝ শিশু কন্যা প্রৌঢ়ের লালস্যের,
    প্রেমিকের লালসার শিকার যখন তরুণী অবুঝ কন্যা,
    ছোঁয়ার সুযোগ কখন বদলে যাবে কেউ তা জানে না।

    স্নেহের ছোঁয়া আপন করে মাথায় আশীর্বাদের হাত,
    স্বপ্ন ছোঁয়া কঠিন ভীষন অদম্য লড়াইয়ে দাঁতে দাঁত,
    তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে ছুঁতে চায় স্বপ্ন আশা,
    ছোঁয়া থাকুক দীর্ঘ বিশ্বাসে মুক্ত নিঃশ্বাসের বাসা।

  • কবিতা

    কবিতা- নারী

    নারী
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    নারী সৃষ্টির প্রতীক, সৃষ্টির সম্মান রক্ষা করেছো
    নারী বংশের প্রদীপ, প্রদীপের নীচের অন্ধকার দেখেছো
    নারী শরীর কোমল, কখন কঠিন হয় অনুভবে ছুঁয়েছো
    পরম সুখ দুঃখের হেতুও নারী, কখনো কারণ খুঁজেছো

    দেবীর পূজা কর, অথচ নানা অছিলায় নারীর অসম্মান
    নারী কি কেবল ভোগ্যপণ্য , শরীরী বিনোদনের ভূমিকায়
    জীবনসঙ্গী নির্বাচনে কেন রূপ রঙে পছন্দের তকমায়
    স্বাবলম্বী হয়েও সামাজিক নিয়মে নারী কেন পরগাছা

    আজও কন্যা সন্তান জন্ম হলে আনন্দে কেন ভাঁটা
    ছেলেই সোনার আঙটি কেন? হোক না সে যতই বাঁকা
    দু’টো চোখই সমান, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য কেন তবে
    এখনো যদি থাকে লিঙ্গবৈষম্য সমাজ কবে এগোবে!

    সমাজ নাকি পুরুষতান্ত্রিক, নারীর কেন নয়
    বিধিনিষেধের রক্ষাকবচে কখন সুরক্ষিত হয়?
    লড়াই করে টিকে আছে ওরা দিনরাত পরিশ্রম করে
    নাম, পরিচয় বদলে নারীরাই কেন সমাজে সংসারে?

  • কবিতা

    কবিতা- একা-একলা

    একা-একলা
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    প্রশ্ন কর তাকে যে নিঃসঙ্গ,
    একা থাকার যন্ত্রণা কেমন কুড়ে কুড়ে খায়
    জীবন সে ভালই জানে।
    ভালোবাসা তার কাছে ফানুস ঠকেছে যে বারংবারে।
    ভুল করেছিল নিঃস্বার্থ ভালোবেসে প্রশ্ন জাগে অজ্ঞাতবাসে?

    ভালোবাসার মাকড়সার জাল কখনো জড়িয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে,
    ঘৃণায় মুখ লুকিয়ে ঠকে যায় প্রেম নিঃশব্দে,
    সুখ বলতে কী বোঝায়, সংজ্ঞা কোথাও আছে!
    দুঃখ বলতে হা হুতাশ নীরবেও মন কাঁদে অলক্ষ্যে।

    অনুভূতি আবেগ মূল্যহীন আজ চাহিদার নিরিখে
    খাঁটি মন নিষ্পাপ মুখ কোথাও যেন লুকিয়ে অদৃশ্যে,
    ভালোবাসা অদৃশ্য অদ্ভুত খেলা শুরু হয় নেপথ্যে,
    সঙ্গী কখন একলা পথিক জীবন পথের নানা বাঁকে।

    নিশুতি রাতে বৃষ্টির শব্দে কান্না মিশে যায় যখন,
    ঠিক-ভুলের মাশুল গুনছে প্রভাতফেরি মুহূর্তরা এখন,
    অতীত স্মৃতি বেদনাদায়ক সুখের ঘরে চুরি তখন
    খেলাঘর ভেঙে ছারখার নীড়ের খোঁজে একা একলা মন।

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- প্রতিবন্ধকতা

    প্রতিবন্ধকতা
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    সৌভিক হুইল চেয়ারেই স্কুলে আসে। একটা রোড এক্সিডেন্টে ওর ডান পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য অ্যাকটিভিটিতে ভীষণ ভালো, ক্লাসের ফার্স্ট বয়। একবার স্কুলের অ্যানুয়াল স্পোর্টস এর আগের দিন ওর এক বন্ধু ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলল, সৌভিক, তুই কি ‘গো অ্যাজ ইউ লাইক’-এ নাম লেখাবি?

    উত্তরে সৌভিক বললো- না রে, আমি অংশ নিতে পারবো না কোনো ইভেন্টে।
    বন্ধু- কেন?
    সৌভিক- কয়েকটা ইভেন্টে স্যার আমাকে জাজ হতে বলেছেন, তাই।
    বন্ধুটি সৌভিকের কথাগুলো শুনে মাথা হেঁট করে দ্রুত চলে গেল…

  • কবিতা

    কবিতা- “ফিরতে চাই”

    “ফিরতে চাই”
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    ফেরা কি সবসময় সম্ভব? যদি ফিরতে চাই অতীতে
    বয়ে যাওয়া কালবেলা ছেলেবেলার মধুর স্মৃতিতে
    ফিরতে চাই বন্ধুদের মাঝে স্কুলের বেঞ্চে শ্রেণীকক্ষে

    ফিরতে চাই প্রথম ভালোলাগা ভালোবাসার মানুষের চোখে

    ফিরতে চাই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলিতে যা কখনো ফিরবে না
    ফিরতে চাই মুক্ত বাতাসে যেখানে নিঃশ্বাসে বিষ মিশবে না
    ফিরতে চাই সবুজ অরণ্যে পাখিদের কুহুতানে শিমুল পলাশের বনে
    ফিরে দেখা মেঠো পথ সহজ সরল অকৃত্রিম জীবনে

    ফিরতে চাই রাবার পেন্সিলে ভুলগুলো মুছতে এক লহমায়
    ফিরতে চাই অকৃত্রিম স্নেহে কারো আঁচলে মোহ মায়ায়
    ফিরতে চাই আবিষ্কারে অকৃত্রিম প্রাণখোলা হাসি খুঁজতে
    খুঁজে ফিরি মনের আশা ভাষা কারো হৃদয়ের গভীরে

    ফিরতে চাই সম্পর্কের গভীরতায় আয়নার মতো স্বচ্ছ
    ফিরতে চাই সেই সংসারে যেখানে নেই কোন কলহ
    ফিরতে চাই সেই সমাজ জীবনে যেখানে নেই কোন ভেদাভেদ
    দারিদ্র কুসংস্কার উঁচু নিচু জাত পাত ধর্মের নামে নেই খেদ

    আয়নায় দেখি নিজের মুখ অনেকটা বদল হয়েছে
    বদলেছে দিন বদলেছে বছর সময়ের কালচক্রে
    নদীর ঢেউ পাহাড়ি ঝরনা সময় কেউ তো থেমে নাই
    ফিরতে চাই সেই সন্ধিক্ষণে যেখানে নতুন করে শুরু করা যায়…

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- আয়না

    “আয়না”
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    উষসী এককথায় প্যারাগন বিউটি। ওর রূপের ছটায় যে কেউ ক্রাশ খায়। এই রূপ একদিন কাল হল, এসিডের হামলায় ক্ষতবিক্ষত। প্লাস্টিক সার্জারির পর ডাক্তার মুখের ব্যান্ডেজ খুলবে। ইতস্ততঃ মুখে বলেন, ভেঙে পড়ো না..
    উষসী: আয়না নিয়ে আসতে বলে।
    ডাক্তার: কেন?
    উষসী : কতটা বদল হয়েছে দেখব …নিজের চোখে। ওরা অ্যাসিড বাল্ব ছুঁড়ে আমার মুখটা পুড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু আমার মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি। ওদের যোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করব, সমাজের স্বার্থে, যাতে এই ঘৃণ্য কাজের পুনরাবৃত্তি না হয়…

  • কবিতা

    কবিতা- আলোর উৎসব

    আলোর উৎসব
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    অমাবস্যা, আকাশ অন্ধকার চাঁদ ওঠেনি আজকে
    আলোর বন্যা চারিদিকে প্রদীপ মোমবাতি চায়না লাইটে
    নিমেষ কালো অন্ধকার গেল দূরে‌ আলোর বুক চিরে
    আজ দীপাবলী আলোর উৎসব পালিত ঘরে ঘরে

    মা কালীর আরাধনায় পুজা মন্দিরে, শশ্মানে মধ্য নিশিতে
    কোথাও কালো কোথায় শ্যামা রূপে মা আসেন ধরাতে
    মনের কালো অন্ধকার ঘুচলো কি, গেল কি দূরে
    ভক্তি পুষ্পাঞ্জলী অন্তঃস্থল ঢাকে উপঢৌকনের বাহারে

    তোমার অট্টালিকার আলোর বাহার দেখে ভিখারী বস্তিবাসী
    ওদের স্যাতস্যাতে কুঁড়েঘর সূর্যের আলোও দেয় ফাঁকি
    অন্ধকারে সর্বস্ব ঢাকে ওদের, ভাগ্যও বোধহয় বিরূপ
    পেটের ক্ষুধার্ত লেলিহান শিখার আলোয় দগ্ধ ওদের চিবুক

    আলোর রোশনাইয়ে সমাজের অন্ধকার যাক ধুয়ে মুছে,
    অমানবিকতা জ্বলে খাক হয়ে যাক আগুনে পুড়ে
    জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক মানব সমাজে
    জীব সেবাই শিব সেবা আজ লক্ষিত শুধুই নীতি বাক্যে…

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- তবু আনন্দ জাগে

    তবু আনন্দ জাগে
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    বস্তির ছোট্ট মেয়েটি শিউলি (১২ বছর) রাস্তার ফুটপাতে ফুল, মালা, বেলপাতা নিয়ে বিক্রি করে বস্তির সামনের বড় রাস্তায়। শিউলির বাবা হকারি করত ট্রেনে। মহামারীর আতঙ্কে ছয় মাস হল সব বন্ধ। ওর বাবা দিন মজুরের কাজে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যায়। প্রায় দিন খালি হাতে ঘরে ফেরে লকডাউনে সেরকম কাজ কর্ম নেই। মা পাঁচজনের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতো কিন্তু লকডাউনে তাও বন্ধ। শিউলির এখন ইস্কুল বন্ধ তাই ওর খুব মজা। সকাল হলেই পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন গাছের ফুল তুলে মালা গেঁথে বেরিয়ে পড়ে ওদের বস্তি থেকে বড় রাস্তার মোড়ে। হঠাৎ একদিন বিকেলে শিউলির মা ওকে ও ছোট্ট ভাইকে নিয়ে রাস্তার ধারে একটি বড় দোকানে যায়। দোকানে খুব ভিড়, ওদের পোশাক দেখে সিকিউরিটি ঢুকতে দেয় না। দোকানের মালিক ব্যাপারটি লক্ষ্য করে। লোক মারফত একটি শাড়ি, একটি ফ্রক, বাচ্চাটির জন্য একটি জামা দিয়ে পাঠায়। শিউলির মা আত্মাভিমানী। গরীব হতে পারে কিন্তু কারো কাছে কোনোদিন হাত পেতে কিছু নেয়নি। জিনিসগুলো ফিরিয়ে দেয়। এবার দোকানর মালিক ওদের ভেতরে ঢুকতে দেয়। কেনাকাটা করে দাম দিতে গেলে দোকানের মালিক খুব আশ্চর্য হয়ে ওদের তিনজনের দিকে তাকায়। শিউলির বাবা সন্ধ্যায় ফিরে নতুন জামা কাপড় দেখে চমকে যায়। তখন শিউলির মা শিউলির ফুল বিক্রি করে রোজগারের কথা জানায়। আনন্দর রোজগার সেরকম নেই, তাই ছোট্ট ছেলে, মেয়ের ও স্ত্রীর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে পারেনি দুর্গোৎসবে। মেয়ে শিউলির এই কাজে আনন্দে দুচোখের কোণে কিছু চিকচিক করে…

  • কবিতা

    কবিতা- নিঃসঙ্গ

    নিঃসঙ্গ
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    পিছুটান প্রেমে নেই তবে একাকীত্বের সাক্ষী
    নিঃসঙ্গতার নিজস্ব উপলব্ধিতে জীবন মুক্ত পাখি
    বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলায় আবেগী মন কখন বন্দী
    ভালোবাসা ধাক্কা মারে অদৃশ্য প্রাচীরে দিয়ে ফাঁকি। 

    নিঃসঙ্গতা মুক্তির স্বাদে জীভ ক্লান্ত রস আস্বাদনে
    অবসন্নতা আচ্ছন্ন জীবনের উঁকিঝুঁকি কোলাহলে
    মুখ ও মুখোশের ভীড়ে ঠাসা একাকী জনসমুদ্রে
    আসল নকলের পরীক্ষায় আঁচড় কাটে কষ্টিপাথরে। 

    মেকাপের কৃত্রিম সুন্দরী এনগেজ কিম্বা লিভ-ইনে
    শিক্ষিত বেকার যুবকরা প্রেম বিলাসিতায় স্বপ্ন উড়ানে
    ফাঁকা পকেটে বাস্তব অভিজ্ঞতা দীর্ঘশ্বাসে সংগ্রামের পথে
    লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে কেউ বিজয়ী কেউ ইতি টানে। 

    খাঁটি মানুষ কজন খোঁজে চরিত্রহীন ঢাকে স্ট্যেটাসে
    ভালবাসা কখন কর্পূর হয়ে উবে যায় বেখেয়ালে
    নিঃসঙ্গতার হাতছানিতে প্রেম ইতি টানে ডিভোর্সে
    সুউচ্চ প্রাচীর তোলে বেনামী গোত্রহীন মৃত সম্পর্কে। 

You cannot copy content of this page