• কবিতা

    কবিতা- রক্তের ঘ্রাণ

    রক্তের ঘ্রাণ

    কাজল দাস 

     

    যত ভাবি ভুলে যাবো সব
    এই শহর, রাস্তা জুড়ে মোমবাতি উৎসব,
    এই মহা মিছিল, পথ ঘাট,
    রক্তের ছিটে এসে ভরে যায় শার্ট
    কলারে পড়ে টান, কানে আসে কলরব
    কি করে ভুলে যাই এতো সহজেই সব।

    যত ভাবি এড়িয়ে চলে যাই
    থুতু এসে পড়ে পায়ের পাতায়, অযথাই
    আমি ডুবে যাই আবেগের রঙে
    ক্ষুধার্ত মানুষের ছেঁড়া পরিধানে-
    কিভাবে সযত্নে মুখ লুকাই,
    শোভিত উদ্যানে কি করে পা বাড়াই।

    যত ভাবি আমার কি আসে যায়
    ওরা প্রতিদিন রাস্তায় খায়,সেখানে ঘুমায়
    হকের ভাতে জমে পিশাচের ছাই
    এ আমার শহর- বলতে লজ্জা নাই,
    দিনে দিনে বেড়ে যায় মানুষের দায়
    আন্দোলনের ঘ্রাণ আসে, ঘরে পুনরায়।

  • কবিতা

    কবিতা- হাসনুহানা

    হাসনুহানা

    -কাজল দাস 

     

     

    কিছু দুঃখ তোকে দিতে পারি,
    আমার মানচিত্রে মহামারী,
    ভাবনায় তোর ঘরবাড়ি-
    তোকে ছুঁয়ে দিলে ভেঙে চুরে যায়।

    শব্দের রঙ গায়ে মেখে
    অজুহাতে নিজেকে সাজাই,
    তোর নামে আকাশটা এঁকে
    অনায়াসে উড়ে যেতে চাই,
    মেঘেদের উত্তরসূরী
    নোনা বৃষ্টিতে তোকে ছুঁতে চায়।

    ভালোবাসা রঙিন অসুখে
    রাত জ্বলে ঘড়ির কাঁটায়,
    নিকোটিনে ধূসর চিবুকে
    নিয়নের আলো নিভে যায়,
    হাসনুহানার কুঁড়ি
    তোর ডাকনামে ঝরে কবিতায়।

  • কবিতা

    কবিতা- জয়া কাকিমা

    জয়া কাকিমা

    -কাজল দাস 

     

     

    কাল সারারাত একটুও ঘুম হয়নি, জানিস
    কতোদিন পরে তোকে দেখলাম- অনিশ
    সাদা সার্ট ডেনিম জিন্স, লাগছিল ব্যাপক।

    ইচ্ছে করছিল তখনই ছুটে যাই তোর বুকে
    টান মেরে খুলে ফেলি দু’হাতে- নিজেকে,
    যদিও তুই ছেলেরই বন্ধু, -সে যাই হোক।

    অসময়ে জোয়ার এলে আমার কি দোষ বল,
    কাল সারারাত শুধু সাঁতরেছি নদী অনর্গল-
    এভাবে নিজেকে দেখিনি কখনো আয়নায়,

    খুব সুন্দর লাগছিল জানিস, শরীরের ক্ষত
    কারো চোখ পড়েনি সেভাবে,প্রেমিকের মত
    নিজেকে এভাবে আর পুষে রাখা যায় না।

    আগুনের ভেতর এতো সুখ বুঝিনি কখনো,
    প্রতিরাতে নিয়মের স্রোতে শুধু শরীর ভেজানো,
    কিছু বোঝার আগেই হাঁটু -ডুবে যেত জলে।

    তারপর লড়ে যাওয়া খাবি খেতে খেতে,
    বহুদূর ভেসে যাওয়া বিষাদের স্রোতে,
    উঃ কি তীব্র যন্ত্রণা,তাকে কি আর প্রেম বলে!

    তোকে দেখে আমার কি জানি কি হয়,
    কাল পারলে আসিস, থাকবে না জয়,
    শুধু তুই আর আমি খোলা আকাশের পাখি।

    এক নতুন ঠিকানায়- অন্য পরিচয়-এ
    আরো একবার স্বেচ্ছায় মরবো না হয়,
    আর কাকিমা নয় আমাকে জয়া বলেই ডাকিস।

  • কবিতা

    কবিতা- ভালো থেকো

    ভালো থেকো
    -কাজল দাস

    ধরো- আমি নেই,
    ধরো- আমি আছি, এখনো আছি,
    তোমার পাশে, খুব কাছাকাছি।
    যতটা কাছে থেকেও বুঝতে পারনি আমায়,
    যতটা পাশে থেকেও ছুঁয়ে দেখনি কখনো,
    ঠিক ততটাই!
    ঠিক ততটাই পাশে আছি।
    সময়ের আলো ঠেলে অন্ধকার দরজায়,
    বিগত দিনের মতো- আমি অপেক্ষায়,
    ছায়ার মতো লেগে আছি অতীতের ঘ্রাণে,
    কিংবা এলোমেলো বিছানার এক কোণে!
    তবুও আছি!
    কলহহীন ভাঙা সাঁকোর মত-
    ভেঙে আছি বিভাজনে আপাদমস্তক।
    প্রয়োজনের সম্পর্কে-
    আমার পছন্দ অপছন্দ, ইচ্ছে, অনুভূতিরা-
    বেজন্মার মতো-
    জানালা ভাঙা আকাশের দিকে চেয়ে আছে, দু’ ফোঁটা অস্তিত্ব খুঁজে পেতে।
    পাওয়া না পাওয়ার মাঝামাঝি অবস্থানে-
    নামহীন গোত্র হীন সমঝোতা হয়ে,
    বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম নিজের পরিচয়।
    তোমার বোঝার কথা নয়-
    কারণ চিৎকার করে শব্দ ছড়াইনি কখনও।
    তাই সম্পর্কটা নিছক সম্পর্কই থেকে গেল।
    তবুও আছি,
    ছেঁড়া মাস্তুলে এক চিলতে উপহাসের মত-
    রিক্ত, সিক্ত অনুরণনের বাতাস হয়ে।

    ধরো, আমি আছি
    ধরো, আমি নেই! কোত্থাও নেই,
    দু-চোখ বেঁধে আমি খেলছি কানামাছি।
    অন্ধকার চারিদিক হাতড়ে মরছি জলে,
    অথবা হারিয়ে যাচ্ছি বিচ্ছিন্ন অসমতলে।
    রোদ্দুর ভাঙা সন্ধ্যের শরীরে,
    জোর করে কবিতা শোনাতো যে-,
    অবোধ্য কবিতার আকালে
    আর তাকে বলবে না কেউ –
    একমুঠো রোদ্দুর কণা ফিরিয়ে দে!

  • কবিতা

    কবিতা- মানুষ ও প্রেমিক

    মানুষ ও প্রেমিক
    -কাজল দাস

     

     

    তারপর!
    যতবার মানুষ হতে চেয়েছি;
    ততবারই প্রেমিক হয়ে উঠেছি।
    শীতের শরীরে স্বপ্ন ভেঙেচুরে –
    কয়েক গুচ্ছ নগ্ন শরীর বিছানা খোঁজে,
    মৃত্যুর মতো প্রাসঙ্গিক প্রেম-
    ঢেলে দেয় বুকের আগুনে।
    যতবার মানুষ হতে চেয়েছি;
    প্রেমিক হয়েছি অনায়াসে।

    ফুটপাত ধরে হেঁটেছি মানুষের ভীড়ে,
    পায়ে পায়ে শালীনতার গন্ধ মেখে-
    পেরিয়েছি নিষিদ্ধ পল্লী,
    নরম শরীরের উন্নত ভাঁজে ফেলেছি নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস,
    রাতের চোখে আমি এক যাযাবর,
    নীল আলোর বৃন্তে আমি নিলাম হয়ে যাই,
    ঠোঁটের রঙ, গালের রঙ, নখের আঁচড়ের-
    রঙিন উচ্ছ্বাসে- আমি এক যাযাবর,
    দিকহীন, দিশাহীন আঙুল হাতড়ে হাতড়ে,
    একটা আস্তানা খুঁজি পৃথিবীর।
    মধ্যরাতের চাঁদ ঘোলাজলে ডুবলে,
    কয়েক গুচ্ছ শরীর আমি স্বপ্নে দেখি,
    তারা মানুষ হতে দেয়না,
    অন্ধকার হলেই প্রেমিক হয়ে যাই।

    নৈরাশ্যের আলো ফোটে যেই,
    সেই আবার রাস্তা যায় বিছিয়ে,
    গায়ে গায়ে চুরি হয় শালিনতা বোধ।
    একগাল হেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ারা,
    স্ফিত বক্ষ যুগলে ফোটে পারিজাত,
    ঘর্মাক্ত ফুলের গন্ধে নামে অন্ধকার।
    আবার একটা সকাল আমাকে-
    মানুষ হতে বলে,
    অথচ অন্ধকার কাটে না কিছুতেই।

  • কবিতা

    কবিতা- একটি অপ্রত্যাশিত ফুল সজ্জা

    একটি অপ্রত্যাশিত ফুল সজ্জা

    -কাজল দাস 

     

    পেসমেকার মাপছে সময়, হার্টবিট
    দুটি শরীর প্রতিঘাতেই মৃত প্রায়
    জোছনার রং ভিজিয়ে দিচ্ছে বেডসিট
    যাচ্ছি পুড়ে ভীত সন্ত্রস্ত উষ্ণতায়

    শবের ঘরে খবর এলো- গোপনে
    আমিও নেই তুমিও নিখোঁজ ভিতরে
    লজ্জা বসন আবীর রাঙা দর্পনে
    বৈতরণী পার হবো নীল আবদারে

    একফোঁটা জল অপরিচিত পথ ধরে
    তোমায় ছোঁবে মরণ সুখের প্রলাপে
    নিয়ম ভাঙা অস্থিরতার আঁচড়ে
    মৃত্যুপুরী সাজবে- রক্ত গোলাপে

    বাইরে তখন কৌতূহলের কড়ানাড়া
    অজানা সব বেহিসাবি মৃত্যু ভয়
    অধৈর্য্যতে ঘুমিয়ে পড়েছে ওপাড়া
    এ পাড়াটা না ঘুমিয়ে নষ্ট হয়।

    শব্দগুলো নিঃশ্বাসে খুব আনকোরা
    ঠোঁটের কাব্যে অচেনা সব অন্ধকার
    বেহায়া সময় আজকে ভীষণ মুখচোরা
    অন্য কারো কন্ট্রোলে আজ পেসমেকার। 

  • কবিতা

    কবিতা- পঞ্চমুখী জবা

     

    পঞ্চমুখী জবা

    -কাজল দাস 

     

     

    দিনটা ছিল ৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭৫
    প্রতিদিনের মত সেদিনও অফিসে বেরুবার তোড়জোড় চলছে।
    খাবারটা কোনোরকমে মুখে নিয়ে-
    দরজার পাশ থেকে জুতোজোড়া তুলতেই,
    হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।
    -“এখন আবার কে ফোন করলো, থাকগে্ ধরবো না।”
    খানিকটা বিরক্তির সাথে হলেও ফোনটা তুললাম।
    মা! যাকে আমি দশ বছর আগে রেখে এসেছিলাম, একটি সাধারণ বৃদ্ধাশ্রমে।
    মা ভাঙা ভাঙা গলায় বললো-
    -“বাবা, সকাল থেকেই শরীরটা খুব খারাপ লাগছে- রে, ভেবেছিলাম ফোন করবোনা তোকে, তোর তো আবার অফিস, না?
    তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, পারলে একবার আয়!”

    হঠাৎ করে মনটা ডুকরে উঠলো, কাউকে কিছু না বলেই- বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
    বাড়ি থেকে বৃদ্ধাশ্রমের দূরত্ব প্রায় তিন ঘন্টা।
    আমার পৌঁছতে প্রায় দু’টো বেজে গেল।

    বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় ধাক্কা দিতেই-
    ফ‍্যাকাশে নীল রঙের আধ খাওয়া দরজাটা
    বার্ধক্যের করুন সুরে বিলাপ করে খুলে গেল।
    ভেতরে ঢুকতেই- মনে হলো,
    একটা নীরবতার ঠান্ডা বাতাস যেন,
    সম্পূর্ণ আশ্রম-টাকে বেঁধে রেখেছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
    সারা শরীর যেন ভার হয়ে আসছে।

    মনটাকে শক্ত করে, সোজা চলে গেলাম মায়ের ঘরে।
    -“মা, মাগো!”
    কোন উত্তর এলো না।
    একজন ভদ্র লোক এগিয়ে এলো আমার দিকে।
    আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললেন-
    -“তোমার মা ঘন্টা খানেক আগেই…..”
    আমি বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম!
    তারপর চিঠিটা পকেটে পুরে, মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম।

    তখনও মা-
    অম্লান হাসিতে নিজের বুকের যন্ত্রণা আগলে রেখেছে।
    যেমন করে মা তার সন্তানকে আগলে রাখে।
    জানেন!
    এটা মায়ের চির কালের স্বভাব,
    নিজের যন্ত্রণা কোনোদিন কাউকে বুঝতে দেননি।
    খুব অভিমানী কিনা!

    কিছুক্ষন নিজের ভেতরের অনুতাপের আগুনে-
    পুড়িয়ে নিলাম পরিস্থিতির সমস্ত অজুহাত।
    তারপর সকলে মিলে তুলে দিল মায়ের নিষ্প্রাণ দেহ খানি, একটা ম‍্যাটাডোরে।
    আমি বেরিয়ে পড়লাম মাকে নিয়ে।
    ম‍্যাটাডোরে তখন দুটো মানুষ, একজন মৃত আর অন্য জন বিবর্জিত।

    গোধূলির পড়ে আসা আলোয়-
    মায়ের ক্লান্তি-মোছা মুখের দিকে তাকাতেই,
    মনে পড়ে গেল চিঠিটার কথা।
    তড়িঘড়ি করে চিঠিটা খুলতেই-
    মনটা বিষাদে ভরে উঠলো, তাতে লেখা-
    “বাবা তোমার সাথে হয়তো আমার আর দেখা হবে না, আমি আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কিছুই আবদার করিনি, এমন কি তোমাকে চোখের দেখাও দেখতে চাইনি, কিন্তু আজ আমার একটা ইচ্ছে, বলতে পারো মৃত মায়ের একটা দাবি তোমাকে রাখতে হবে যে!
    এই বৃদ্ধাশ্রমের মানুষ গুলো খুব অসহায়, গরমের সময় সারারাত কেউ ঘুমোতে পারে না, আমার দেখে ভারি কষ্ট হয়,
    বাবা, পারলে তুমি তাদের দুটো পাখা কিনে দিও।”

    হয়তো তারপর আর কিছু লিখতে পারেনি। কিন্তু খুব গভীর একটা দাগ কেটে গেল, একটা জিজ্ঞাসা-
    তবে কি মা এতোটা বছর গরমে কষ্ট পেয়ে কাটালো, একবারও কি মুখ ফুটে বলতে পারলোনা, -খোকা আমি ভালো নেই।
    “হে ঈশ্বর আমায় ক্ষমা করো, আমায় ক্ষমা করো তুমি।”

    তারপর চোখের জল মুছে তাকাতেই-
    চোখ পড়ল চিঠিটার শেষ প্রান্তে, তাতে সন্ধ্যের আবছা আলোয় অস্পষ্ট ভাবে জড়িয়ে আছে একটা কথা,- ‘পঞ্চমুখী জবা।’

    আমার বয়স যখন এগারো বছর।
    আমার মা আমাদের সদর দরজার পাশে-
    একটি জবা গাছ রোপণ করে।
    তারপর সহাস্যে আমাকে বুকে জড়িয়ে বলে,-
    “ খোকা আমি যখন তোর পাশে থাকবো না, এই গাছটা থাকবে তোর পাশে, দেখবি!
    প্রতিদিন নতুন নতুন কুঁড়ি, কত ফুল……”

    সেদিন আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলাম,
    দু’হাত দিয়ে মায়ের মুখ চেপে ধরে বলেছিলাম-
    “ অমন কথা বল’না মা, আমি তোমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবনা, তুমি ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই।”

    বাবাকে আমার ঠিক করে মনেও পড়ে না, বাবার মৃত্যুর পর মায়ের নিঃসঙ্গ জীবনের শেষ আশ্রয় আমি।
    কিন্তু জীবনের টানাপোড়েনে সেটুকুও ছিঁড়ে গেল।
    যেদিন মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল, গাড়িতে ওঠার সময় আমার হাত দুটো ধরে বলেছিল-
    “বাবা- দেখিস গাছটা যেন শুকিয়ে না যায়।”

    আজ ৭ই ডিসেম্বর ২০১৪,
    আজ আমিও সংসারের অতিরিক্ত একজন।
    নিয়ম মাফিক আমার ছেলেও আমাকে আজ নিয়ে চলল সেই আশ্রমের দিকে।
    বাড়ি থেকে বেরুবার সময় অনুভব করলাম,
    কত কষ্ট বুকে চেপে মা আমার……..
    আমার দু’চোখ ভরে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়লো জল।
    শেষ বারের মত মাথা উঁচু করে দরজাটার দিকে তাকাতেই-
    চোখে পড়লো ছোট্ট একটি ফনিমনসা,
    আর ঠিক তার পাশেই মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
    -আমার মায়ের পঞ্চমুখী জবা গাছটি।
    যেন সে চিরতরে একা হয়ে যাওয়ার বেদনায়, অভিমানে ভেঙে পড়েছে আজ।

    আমি আমার একমাত্র নাতির ভরসায় রেখে এলাম তাকে,
    আর হাতদুটো ধরে বলে এলাম,-
    “ দাদুভাই দেখ’ গাছটা যেন শুকিয়ে না যায়, শুকিয়ে না যায়।”

     

  • কবিতা

    কবিতা- তুমি রক্ত পলাশ

    তুমি রক্ত পলাশ

    -কাজল দাস 

     

     

    বেলা শেষে তোমার বুক থেকে খসে পড়ে যে প্রেম,
    আমি তার অপেক্ষায় থাকি.
    তুমি একটু একটু করে পবিত্র হওয়ার সিঁড়ি ভেঙে-
    চলে যাবে কোনও দেবতার ঘর আলো করতে।
    তোমার শরীর ভেজা বসন্তের আতর মাখা আঁচলের গন্ধ ছড়িয়ে-
    নিয়ে যাবে আমার সবটুকু সঞ্চয়, আর-
    রক্ত পলাশের রঙে রাঙিয়ে দেবে আমার অব্যক্ত প্রেম.
    যাকে বুকে নিয়ে রাতজাগা কাব্যের ঢেউ- আমার বিছানার চাদরে মুখ ঢাকে উৎসবে.

    হয়তো আরও একটা সকাল হবে,
    অপেক্ষার ঘন নীল কেটে যাবে নির্দ্ধিধায়,
    আলো আসবে সংকটের আঁধারে,
    তুমি আসবে, আর আসবে-
    নতুন বসন্ত ছুঁয়ে আমার পুনর যৌবন।

  • কবিতা

    কবিতা- বন্ধু কথা

    বন্ধু কথা
    -কাজল দাস

     

     

    নিয়ম মতোই বন্ধু-রা ঘরে ফেরে
    ছোটো থেকে বড় সময়ের চেতনায়
    কখনো লিঙ্গ, বয়সের হেরফেরে
    কখনো আবার টাকাকড়ি পয়সায়।

     

    কখনো বন্ধু ফেল করে সরে যায়
    কখনো আবার অভিমানে থাকে সরে
    কাজের তাগিদে বাড়িঘর বদলায়
    ফিরতে পারে না কেউ বা ইচ্ছে করেই।

     

    কেউ বা শুধু ভুল করে ভুলে থাকে
    ভুল পথে গিয়ে কেউ কেউ হেরে যায়
    অনেক সময় বন্ধু ভাবছো- যাকে
    সেও যে তোমার অতীত ভুলতে চায়।

     

    চাকরি পেলেও অনেকে বলে না কথা
    ব্যর্থতা দেখে অনেকে মুখ লুকায়
    প্রেমিক পেলেই হাসি মুখে- সমঝোতা
    কেউবা আবার বদনামে ভয় পায়।

     

    আঙুলে আঙুল ছোঁয়ালেই ভাব আড়ি
    সময়ের স্রোতে সব কিছু বদলায়
    হয়তো আমরা কাছে না থাকতে পারি
    বন্ধু কিন্তু বন্ধুই থেকে যায়।

  • কবিতা

    কবিতা- জন্ম হয় জন্ম নয়

    জন্ম হয় জন্ম নয়
    -কাজল দাস

     

     

    প্রতিবারই জন্ম হতে হতে মিলিয়ে গেলাম অন্ধকার গহ্বরে! তাই আর জন্ম হয়নি, ভ্রূণেই থমকে আছে আমার অজ্ঞাত পরিচয়। আমার পূর্ব পুরুষের জন্ম হয়েছে, হয়তো আমার উত্তরসূরীরও জন্ম নিশ্চিত। তবু আমার জন্ম হতে হতে আজও হল’ না। যেমন ফলের জন্ম হয় ফুলের মৃত্যুতে, তেমনই একটা জন্ম চাই।

    জন্ম সে তো জন্ম নয়,
    জন্ম হলো পরিচয়
    অজানা সুখে জন্ম নিলাম
    সুখেই হলাম অপচয়।

    মায়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে
    সাঁতর দিলাম মন পুশিয়ে
    মানিক সে তো হৃদ গভীরে
    পড়ে আছে তুচ্ছতায়।
    গর্ভে থাকা, ভু-গর্ভে থাকা
    দুইটি জীবন একই হয়,
    তোমরা যাকে জন্ম বলো-
    জন্ম সে তো জন্ম নয়।

    আতশবাজির বারুদে কাঁদে যন্ত্রনা, তাই ঝরে পড়ে আলোর রোশনাই হয়ে। জন্ম হয় এক উজ্জ্বল আত্ম তুষ্টির ফোয়ারার, সেই আলোর উন্মত্ততায় জন্ম তার- আত্মপ্রকাশ, ক্ষণিকের সেই আলোর বিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে- এক জন্ম-রঙিন মধূর ইতিহাস। সেই পুড়ে যাওয়া আনন্দ মিছিলে আমার জন্ম হোক।

    সত্যি যদি জন্ম হতো,
    চিনতো সবাই অবিরত
    সবার চোখে নামের কাজল
    বল তো কালো মন্দ নয়,

    জাত ধর্ম ডাক পদবী
    বিভেদ আনে জগৎময়
    বর্ণে গন্ধে মাতাল করা
    সেই তো ফুলের পরিচয়,
    যে ঝিনুকে মুক্ত থাকে
    সে যে পুরুষ থেকে নারী হয়
    জন্ম জন্ম বলো ঠিকই
    আসলে সে তো জন্ম নয়।

    সূর্য অস্তমিত হলে জন্ম নেয় আঁধার রাত, সে রাত জন্ম দেয় অসংখ্য তারকার, সেই তারার বাসর ঘরে জন্ম নেয় চাঁদ, আবার চাঁদের মুখ চেয়ে জন্ম হয় চন্দ্রমল্লিকার, চন্দ্রমল্লিকার মধূ মেখে জন্ম হয় মধুচন্দ্রিমার। সেই স্মৃতি-মধুর জোছনায় জন্ম নিতে চাই-“আমি।”

    যে ফুলেতে গন্ধ নাই
    সে ফুল দিয়ে ঘর সাজাই
    সেই ফুলেরই দোলায় দুলে
    আবীর খেলে শ্যাম-রাই

    হাজার তারা বসত করে
    লক্ষ্য কোটি তারার ঘরে
    এক নজরে ধ্রুব তারা
    সবার চোখে হয় উদয়,
    তেমন করে জগৎ মাঝে
    দাও গো নিজের পরিচয়।
    আসলে যা কে জন্ম ভাবো
    সে তো জন্মের অভিনয়।

    জন্ম সে তো জন্ম নয়
    জন্ম সে তো জন্ম নয়।

You cannot copy content of this page