-
কবিতা- অনির্বাণ বাঁচতে চেয়ে ছিল
অনির্বাণ বাঁচতে চেয়ে ছিল
-কাজল দাসবাঁচতে চেয়ে ছিল অনির্বাণ,
ছিল বিশ্বাস তার ষোলোআনা,
অপেক্ষাতে পড়ে ছিল এক কোনে।
অক্সিজেনের দাম দিতে পারলো না,
বাঁচতে চেয়ে ছিল অনির্বাণ।শব্দগুলো ছিল নিঃশ্বাসে ঢাকা,
কোনো কথাই শুনতে পারেনি সমাজ
অনেক কষ্ট ছিল পাঁজরেতে চাপা,
শুধু হৃদপিন্ডের ছিল না কোনো কাজ।
স্বপ্নগুলো তার আকাশ ছোঁবে বলে,
ঘুমিয়ে পড়েছিল হাসপাতালেই।
বাঁচতে চেয়ে ছিল অনির্বাণ।বাঁচতে চাওয়া তার অলীক কল্পনা,
নিঃশ্বাসে ছিল না যে আয়ত্ব,
কান পেতে শুনে ছিল আলোচনা,
মৃত্যুতে চেনা তার- বেকারত্ব।
স্বপ্নগুলো তার আকাশ ছোঁবে বলে,
ঘুমিয়ে পড়েছিল হাসপাতালেই।
বাঁচতে চেয়ে ছিল অনির্বাণ।বাঁচতে চেয়ে ছিল অনির্বাণ,
ছিল বিশ্বাস তার ষোলোআনা,
অপেক্ষাতে পড়ে ছিল এক কোনে।
অক্সিজেনের দাম দিতে পারলো না,
বাঁচতে চেয়ে ছিল অনির্বাণ। -
কবিতা- অচেনা শহর
অচেনা শহর
-কাজল দাস
কেন জানি রাত নামে
পুরনো অবুঝ খামে
স্বপ্নেরা আসে ভিড় করে
মাথার গভীরে ক্ষত
নোনা জল অবিরত
খোঁজে প্রেম বুকের ভিতরে।হয়তো বা রাত গুলো
তোমাকেও আজ ছুঁলো
একা একা জলে ভেজা ঘরে
অস্বস্তি বোধে কারা
রাত দিন দিশাহারা
আমাদের মত পুড়ে মরে।আমার দুহাতে যদি
বেহিসাবি হয় নদী
ফিরে এসো চেনা বন্দরে
এখনও তোমায় জুড়ে
ভিজি আমি রোদ্দুরে
নামহীন অচেনা শহরে। -
কবিতা- “মা”
মা
-কাজল দাস
কেমন আছো- মা,
রক্তের সম্পর্ক ছেড়ে আগুনের সংসারে!
এই টানাপোড়েনের জীবনের টানাটানি মুক্ত করে-
কেমন আছো- মা!চলে গেলে- কিছু না বলে,
চলে গেলে, নতুন ঠিকানায়,
কেন ফেলে গেলে শূন্য আঁচলে,
সত্যি বলছি ভীষন কান্না পায়।
শাঁখার শব্দ গুলো ভীষন বুকে বাজে,
বাটনা বাটার শব্দেও হাহাকার,
আয়না ভরা সীমন্তিনী সাজে,
মেঘের মতো জমেছে অন্ধকার।দুপুর হলেই জানতে ইচ্ছে করে,
কার মাথায় হাত রেখে আজ ঘুমাও,
ঘুমের রাজ্যে অনেক যত্ন করে,
কার মুখেতে খাবার তুলে দাও!
আমার মা!
বাটনা বাটা মা,
আয়না ভরা সীমন্তিনী মা,
আর যে তোমায় দেখতে পাইনা।আঁচল খানি ছুঁয়ে দিয়ে গেলেই,
ভরসা ছিল, এই তো তুমি আছো।
এখন আমার ভেজা চোখের জলে,
উড়িয়ে আঁচল কেমনে তুমি বাঁচো!
এখনো যে ঝড় ওঠে, ভয় পাই,
জ্বরের রাতে আগুনে যাই পুড়ে,
আগলে রাখার আর যে কেউ নাই,
কোলের ছেলে একলা যে রোদ্দুরে।
আমার মা,
কান্না মোছা মা,
খুব আদরে আগলে রাখা মা,
আর যে তোমায় দেখতে পাইনা।সন্ধ্যে নামে এখনো তোমার নামে,
ধূপের গন্ধে হয়ে থাকি মশগুল।
দুঃখ জমে রাত বদলের খামে,
সময় যেন অচেনা কোনো ভুল।
কঠিন বড় এই পৃথিবীর আলো,
চোখে আমার দারুন তৃষ্ণা ভরা।
এখনো আমি পথ চিনিনা ভালো,
বাঁচার লড়াই মরছে তোমায় ছাড়া।
আমার মা
প্রদীপ জ্বলা মা,
মিষ্টি মধুর দুষ্টু ছেলের মা,
আর যে তোমায় দেখতে পাইনা।রান্না ঘরে আজো তোমায় খুঁজি,
ঠাকুর ঘরের কাঁকন কাঁপা হাতে।
বুকের ভেতর আয়নাতে মুখ গুঁজি,
খুঁজি তোমায় স্বপ্ন ভাঙা রাতে।
এখন সকাল ভীষন অভিমানী,
দুপুর গুলো একাই ভাত বাড়ে,
সন্ধ্যে হলে পড়ে থাকে ধুপদানি,
ছেলে এখন একাই থাকতে পারে।
তোমার ছেলে একাই থাকতে পারে!
একাই থাকতে পারে…. -
কবিতা- অশরীরী প্রেম
অশরীরী প্রেম
-কাজল দাস
একটা চুমু খেতে ভীষন ইচ্ছে হয়
মৃত শরীর গুলো লজ্জায় মুখ লুকোয়
বৃথা ছুঁতে চাওয়া অশুচি শরীর
আমি একা কবি এই পৃথিবীর
কেন ছুঁয়ে ফেলি
শুকনো মাথার খুলি
অজানা চোরাগলি- লাগে ভয়
লাগে ভয়
একটা চুমু খেতে ভীষন ইচ্ছে হয়অনুভূতি হীন শহর মহেঞ্জোদারো
মুখে বালিশ চাপা দিচ্ছে আমারও
নিঃশ্বাসে মেলে মেকি অক্সিজেন
মৃত শরীর নিয়ে করছে লেনদেন
বিক্রি হচ্ছি নির্দ্বিধায়
মৃত্যুর উপত্যকায়
এক অজানা মুগ্ধতায়- অ-সময়
অ- সময়
একটা চুমু খেতে ভীষন ইচ্ছে হয়চেনা শরীর গুলো অচেনা লাগে
চোখের ইশারাতে ডাকছে আমাকে
হাজার অশরীরী দিচ্ছে প্রলোভন
নীল রক্তে মিশে যাচ্ছে আমার মন
আমি বাঁচতে চাই
যেদিকে তাকাই
কোথাও কেউ নাই- ছায়াময়
ছায়াময়
একটা চুমু খেতে ভীষন ইচ্ছে হয় -
কবিতা- আত্ম পরিচয়
আত্ম পরিচয়
-কাজল দাসতোমায় খুঁজে পেতে, কখন যেন,
হারিয়ে গেছি নিজেই…
সিঁদুরের বয়স বেড়েছে এখন,
কলম হয়েছে পাকা.
এখন নিজেকে খুঁজে পেতে,
হয়না আর দেরি.
তোমার ঠোঁট কেঁপে সোচ্চার হয়,
আমার বায়োডাটা.
মিলিয়ে দেখি আয়নার রঙে,
ভাঙা কাঁচে জীবনী হয়েছে লেখা.
হুবহু আমার মতই,
অযোগ্য এক কালপুরুষের গল্পো…
এখন খুঁজে পেতে, সময় হয় না ব্যয়।
যখন তাকাও এসে চোখে…
নেমে আসে-
এক পাহাড় সমান আত্মপরিচয়… -
কবিতা- অস্থায়ী ছুটি বারো মাস
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
অস্থায়ী ছুটি বারো মাস
-কাজল দাসআমাদের স্কুলে প্রজাপতি আসে না যে আর,
শুকিয়েছে ফুল গাছ আসেনা হেড মাস্টার।
ঘরে বসে অনলাইন শাস্তি ভীষণ রকম,
আমাদের শৈশব নিচ্ছে কিনে মুঠোফোন!
ভালো লাগছে না,
যেন সব অচেনা,
মিছে এই সান্ত্বনা,
বন্ধু নেই-
যেতে দাও স্কুলে,
ছুটে যাই মন খুলে,
মেঘেদের পাল তুলে,
আকাশেই-
লাগছে না ছুটি ভালো আর।আকাশের নীলে মেঘেদের শুনি হাহাকার,
অনেক হয়েছে, ছুটিদের নেই দরকার।
পড়ে আছে ক্লাসরুম ধ্বংস স্তূপের মতন,,
সময়ের পেন্সিল সিলেবাসে বন্দি এখন।
ভালো লাগছে না,
বসে বসে দিন গোনা,
মোবাইলে পড়াশোনা,
ইচ্ছে নেই-
বন্ধন ছিঁড়ে,
ইউনিফর্ম পরে,
গল্পের আসরে,
ফিরতে চাই-
লাগছে না ছুটি ভালো আর। -
কবিতা- মাঙ্গলিক
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
মাঙ্গলিক
-কাজল দাসনতুন কোনো কাব্যের অধিকারে
রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরে
আকাশ পেরিয়ে সন্ধ্যে ফিরুক ঘরে
রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরেরাঙিয়ে তোলো শহরের ধূসরতা
জীবন ফিরুক ঘাস ফড়িং এর রঙে
উচ্ছলতায় মেতে থাক সভ্যতা
আগামী আসছে চেয়ে দেখ সঙ্গোপনে
আলোর চিঠি রঙিন স্বপ্ন ভোরে
রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরেআগমনী সুর সময়ের রঙ মেখে
আবার আমরা গাইব সব্বাই
মুখোশের ঋণ অনায়াসে ভুলে থেকে
জীবনের রঙে আবার ফিরতে চাই
আবার কোনো একতার মন্তরে
রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরে। -
কবিতা- অ-সমকামী
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
অ-সমকামী
-কাজল দাসএইতো সবে দুঃখ জমেছে গাঢ়
মেঘের মতো উড়নচণ্ডী বিষাদ
এখনি যদি রাতের হিসেব কর
নিখোঁজ হবে মধ্য রাতের চাঁদ।এইতো- সবে প্রেম হয়েছে গাঢ়
বুকের ভেতর নিয়ম ভাঙা ঝড়
ভেজা ঠোঁটে রাত কুড়াতে পার
জল ছুঁয়ে যাক জলেরই ভিতর।এইতো- সবে রঙ ধরেছে গাঢ়
সবুজ ডালে ফুল ফুটেছে লাল
এখনই যদি আগুনে ভয় করো
পোড়ার মানে খুঁজবে চিরকাল।এইতো- সবে মেঘ করেছে গাঢ়
বৃষ্টিতে মন- প্রেমিক হয়ে যায়
সময় দেখার সময় নেই কারও
দুঃখ গুলো,- বৃষ্টি কিনতে চায়। -
কবিতা- আমি সেই মুখ
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
আমি সেই মুখ
-কাজল দাসআমি সেই অপেক্ষারত মুখ!
আমি সেই অপেক্ষারত চোখ,
যার বিগত ইতিহাস গুলো জীবাশ্মের মতো আজো লেগে আছে ক্ষয়িষ্ণু পাথরের বুকে,
আমি সেই ক্ষুধার্ত বেদনার রঙে আবৃত-
এক মুখ,
অপেক্ষারত!
যুদ্ধের আগে ও পরে,
কাঁটাতারের এধারে বা ওধারে,
চটচটে রক্ত ঘ্রাণে লেগে থাকা ধানের শীষে আচ্ছন্ন সময়ের মতো সেই মুখ,
মেঠো রাস্তা থেকে রাজপথে,
মাটির ঘর থেকে অট্টালিকায় সাজানো সাঁওতালি রঙের মুখোশে ক্ষুধার্ত সেই মুখ।আমি সেই আস্তাকুঁড়ের যোদ্ধা,
যাকে আপনারা নাম দিয়েছেন স্বাধীনতা,
যাকে আপনারা নাম দিয়েছেন গণতন্ত্র,
পাতাবাহার গাছের মত গুছিয়ে রেখেছেন-
শহরের আনাচে কানাচে।
আমি সেই মুখ,
আমি সেই নীল বিদ্রোহীর উত্তরসূরী,
আমি সেই মহেঞ্জোদারোর ভগ্নাবশেষ,
আমি সেই দীর্ঘ মেয়াদী লংমার্চ।কখনো আমি আন্দোলন,
কখনো বা আমি আন্দোলনের বিষয়,
কখনো উৎসবে, কখনো রাস্তায়,
কখনো আবার ডাস্টবিনে।
জ্বলন্ত রজনীগন্ধার শরীরজাত ধূসরতার পোড়া ঘ্রাণে আমার পরিচয়।
আমি সেই মুখ,
যাকে ভুলতে চেয়েও ভোলা যায় না,আমি সেই ক্ষুধার্ততা।
-
কবিতা- আর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই
।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।
আর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই
-কাজল দাসআর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই,
সত্যি বলছি- এই শেষ বার-
আমি তোর প্রেমে পড়তে চাই!
এবারে একটু অন্য রকম প্রেম,
বিগত দিনের মত একঘেয়ে প্রেম আর নয়।তুই-
কখন ঘুম থেকে উঠলি?
চোখে কাজল পরিসনি কেন?
কিংবা বাম চোখ লাফালে কি হয়?
এসব বাদ!
এবার আর এইসব নয়।
অতীতে অনেক ভুল করেছি,
মান অভিমানেও অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে,
ঠিক করে প্রেম করাই হয়নি।
অহেতুক রাস্তা জুড়ে হাহুতাশ,
ভয়, ভীতি, লোকলজ্জা! আর নয়,
এবার আমি পরিণত এক প্রেমিক,
কি করে ভালোবাসতে হয় আমি জানি।দ্যাখ,-
এবার আর কোনো অজুহাত শুনবো না,
আর হ্যাঁ, ওই ন্যাকা ন্যাকা প্রেম নিবেদন-
আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্লীজ-
গাছ তলা কিংবা লাইট পোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে-
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া সোঁদা মাটির গন্ধে হারিয়ে গিয়েছিলাম অহেতুক,
সময় পেরিয়ে গেছে, ঘরে ফেরার সময় হয়েছে, সেভাবে প্রেম হয় নি।
আর নয়- এবার না হয় কোনো-
ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় বসে জমিয়ে প্রেম করবো, ক্যামন?তুই তো জানিস-
সেবার প্রেমে কষ্ট বেশি পেয়েছি-
সেবার খুব কেঁদেও ছিলাম,
খুব কেঁদে ছিলাম।
অনেক রাত ঘুমাই নি, ঘুমতে পারি নি,
তোকে এক পশলা দেখবো বলে-
বৃষ্টিতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ভিজেছি,
জ্বর এসেছে, ডাক্তার এসেছে,
তুই আসিস নি।
জানি একলা ঘরে তুইও খুব কেঁদেছিস,
কোনো সান্ত্বনা ছিল না, দু দিকেই,
দু দিকেই অজানা বুক চাপা কষ্ট ছিল শুধু।
ধুর- এটাকে আবার কেউ প্রেম বলে?
আর নয়-
এবার আমরা হবো বেপরোয়া প্রেমিক-
মুক্ত পাখির মতো ছুঁয়ে দেব আকাশ,
মেঘের মতো আড়মোড়া ভেঙে ভিজে যাব দুজনে,
কে কি ভাবলো,কে কি মনে করলো,
ছাড় তো।জীবনে একবারই প্রেম আসে-
শুনেছি তাও নাকি নীরবে।
আমাদের না হয় দু বার আসবে, সরবে।
কি? রাজি তো?
না কি এবারো অপেক্ষায় থাকবো দাঁড়িয়ে,
আশ্বাস হীন কোনো অভুক্ত শিশুর মতো।
খবর পাঠাবি কাগজে, সুযোগ পাইনি তাই-
রাগ করিস না যেন।
এবার আর আমি ফিরে যেতে আসিনি,
তাই অজুহাত নয়,
যেভাবে হোক আসতেই হবে,
এবার তোকে চাই।
কি আসবি তো?ভুল গুলো গুছিয়ে নিয়ে,
আর একবার তোকে ভালোবাসতে চাই।
তোকে ছুঁয়ে দেখতে চাই,
আর একবার তোর প্রেমে পড়তে চাই,
একবার!