• কবিতা

    কবিতা- চাই চেনা দিগন্ত…

    চাই চেনা দিগন্ত…
    – কৃষ্ণ বর্মন

     

    যে দিগন্তে নীল নেই
    যে দিগন্তে রঙেরা আঁকে না রংধনু
    যে দিগন্তে পৃথিবীর গর্ভ থেকে
    জন্ম নেয় না প্রভাতী সূর্য
    সেই দিগন্ত আমার না

    যে দিগন্তের ধূসর অভিমান
    যে দিগন্ত আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকে অভ্রভেদী অট্টালিকা
    যে দিগন্ত হাতছানি দিয়ে ডাকে না শৈশবেকে
    যে দিগন্ত ভেঙে যায় কাঁটা তারে
    সেই দিগন্ত আমার না

    আমি যে দিগন্তের কথা বলছি
    খুব অচেনা লাগছে কি তাঁকে
    নাকি আমরাই চিনতে ভুলে গেছি
    আমি এমন এক দিগন্ত চাই
    যেখানে আমি আমি আর তুমি তুমি থেকে
    একাকার হয়ে যাব অন্তহীন পথের দিশারী নিশানে।

  • কবিতা

    কবিতা- সত্য-মিথ্যা

    সত্য-মিথ্যা
    – কৃষ্ণ বর্মন

     

    মিথ্যেটাকে অবিকল সত্যের মত মনে হলেও
    আসলে সে সত্য নয়।
    সত্যের জন্য যারা সব ছাড়ার পণ নেয়
    তাঁদের পণটাই একটা আস্ত মিথ্যের বেসাতি।
    মরা মরা বলে শুধু জপ করলেই
    রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হওয়া যায় না।
    মরার ভিতরের প্রাণ স্পন্দনটাকেও অনুভব করতে হয়,
    তবেই না রামনাম আসে সচেতন কিংবা অবেচতনে।

    সত্যকে এখন মিথ্যের মোড়কে আবৃত করে
    সুকৌশলে মিথ্যেবাদীরাই স্বীকার করে–
    আমার কোনো সত্য নেই।
    মিথ্যের মৃত্যু বলে কিছু নেই।
    মৃত্যু শুধু সত্যের।

    একটা অসৎ সত্যের থেকে সৎ মিথ্যে
    সত্যি সত্যিই হয়তো বেশী সত্য
    তবে যেকোনো ভাবেই হোক সত্যের সৎকার
    কোনো দিনই কারো পক্ষে সুখকর ছিল না।
    মিথ্যেকে যারা মদত দেয়
    তাঁরাও জানে মতাদর্শে কিংবা দর্শনে
    সত্য সর্বদা সত্যই।

  • কবিতা

    কবিতা -শান্তি শহীদ

    শান্তি শহীদ..
    -কৃষ্ণ বর্মন…

     

    সবাই একে একে এক পক্ষ নিলে
    বিপক্ষ বলে কেউ থাকে না
    নিরপেক্ষতা তাই অলীক তখন
    তখন বিরোধ বলে কিছু নেই
    বিরুদ্ধ বলে কেউ নেই
    বিক্ষুব্ধও তাই প্রশ্নাতীত
    তখন শুধু শান্তির সময়
    শ্মশানে শান্তি যেমন

    শান্তির বানী ঘোষিত হয় মধ্যরাত্রে কিংবা ভোরে
    হৃদয় বিদারি নির্ঘোষ শব্দে
    সবাই বিশ্বাস করে ওটাই শান্তি
    এই বিশ্বাস নিয়েই অনেকে শহীদ হয়ে যায়
    উপাধি পায় শান্তি শহীদের
    আর অন্যদিকে পক্ষপাতীরা পক্ষাঘাতের শিকার হয়ে
    শান্তির উপাসনা করে চলে শিথিল স্হিতিশীল দিন বদলে।

  • কবিতা

    কবিতা- দেখাটা বড় দোষের…..

    দেখাটা বড় দোষের
    – -কৃষ্ণ বর্মন

     

    শোনাটা আজ দোষ
    তার চেয়ে বড় দোষের দেখা
    আর সবচেয়ে বড় দোষের
    যা যা যেরকম যেরকম দেখা হল
    ঠিক সেরকম সেরকম বলে দেওয়া।
    সব শোনা হয়তো ঠিকঠাক হয়না
    কিন্তু সব দেখাই যে অসত্য
    তা বিশ্বাস করতে শেখা যে
    নিজের অস্তিত্বের প্রতিই সন্দেহ প্রকাশ।

    আসলে সব দেখাটাকে সরাসরি সপাটে বলে দেওয়া হয়তো
    সকলের সহ্যের প্রিয়পাত্র হতে পারে না।
    তাই নিজের চোখের দেখার বাইরেও
    আরেকটা দেখাকে দেখতে হয়
    যা অন্যের বা অন্যদের মত।

    যারা অন্ধ তাঁরাও দেখে নেয় জগতটাকে নিজের মত।
    তাঁদের দেখা দেখার প্রকৃত দেখার সংজ্ঞাটাই যে পাল্টে দেয়।
    অথচ যারা অন্ধ থেকে সাজে
    তাঁরা অন্যদেরও অন্ধ ভাবতে
    কিংবা অন্ধ করে রাখতে ভালবাসে।
    দুঃসাহসী দেখায় তাঁরা কখনো বিশ্বাস করে না।
    তাই তাঁরা বলার মত সব চেয়ে বড় দোষে
    কলঙ্কিত করে না নিজেদের।

    দেখাটাও এক সাহস
    সেই সাহস অর্জন করতে হয়
    যে সাহস দুর্গম দুর্দিনেও
    ছদ্ম -অন্ধত্বকে করে জয়।

  • কবিতা

    কবিতা- হতে চাই না বখাটের মত ভালো

    হতে চাই না বখাটের মত ভালো
    -কৃষ্ণ বর্মন

     

    একুশে গ্র্যাজুয়েশন
    তেইশে এম.এ. পাশ
    তারপর ফর্মের পর ফর্ম ছাড়া
    তেরোতেই লেখা হয়ে গেছে নাম এক্সচেঞ্জের জমা খাতায়
    তারপর যোগ্যতা পাল্টেছে শুধু

    ইন্টারভিউয়ের কালো জুতো সাদা জামা কালো প্যান্ট
    এখন বিষাদে বিশ্রামে
    তিরিশ পেরিয়ে এখন ছেলেটা খুঁটে খুঁটে খায় শুধু
    পাড়ার রক গঙ্গার ধার স্টেশনের ছাউনি
    অবসর আর অবসাদের আশ্রয় আর সাথী

    ছেলেটাকে সবাই বখাটে বলে
    কেউ দেয় গাল
    কারো তাকানোতে ঈষৎ ব্যঙ্গ আর তীর্যক শ্লেষ
    এভাবেই কাটছিলো তাঁর দিনগুলি বেশ
    অবশেষে আজ পেলো সে পরিচয়ের নব আলো
    তবুও হতে চাই না বখাটের মত ভালো

  • কবিতা

    কবিতা- প্রতি স্পর্ধা…

    প্রতি স্পর্ধা…
    – কৃষ্ণ বর্মন

     

    শুধু ডালপালা পাতা নয়
    স্পর্ধা আজ ফুল হয়েও ফুটেছে
    এতদিনের অবনত প্রশাখা
    এবার হয়ে উঠেছে একরোখা
    স্পন্দনের অনুরণন আজ প্রতি স্পর্ধার প্রতিধ্বনি
    ফলের আর তাই মারণ রোগ নেই
    ছায়া ক্রমশঃ দীর্ঘতর

    প্রখর খরার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই আর
    বৃষ্টি শুরু হয়ে ভিতরে ভিতরেই
    হা-ভাতের ভাতের অভাবের চির ভবিতব্যতা
    এখন এক অনিশ্চিত পংক্তি

    আজা স্পর্ধা থেকে প্রতি স্পর্ধা
    ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনির প্রত্যর্পণ।

  • কবিতা

    কবিতা- কাগুজে ফুলশয্যা

    কাগুজে ফুলশয্যা
    -কৃষ্ণ বর্মন

     

    কাগজের ফুল দিয়ে যে শয্যা সাজানো
    সেখানে ভালবাসার সুগন্ধ নেই,
    ভয় নেই প্রথম রাতের শেষে
    বিছানায় গোলাপ চিহ্নের,
    নেই মিছি মিছি শয্যা সুখের লজ্জায়
    রসিক টিপ্পনির আলতো ছোঁয়া,
    আছে শুধু ভুঁইফোর সন্দেহ
    আর লোক দেখানো তৃপ্তির অন্তরালে
    অপরিমেয় অতৃপ্তি।

    প্রতিরাতে কাগুজে ফুলের সজ্জায়
    ক্রমশ শিথিল হয় শীতল শয্যা,
    আমদানী হয় সুগন্ধীর,
    পাল্টায় কাগুজে পাঁপরির রঙ,
    অথচ কুড়ি আসেনা,
    ফুলও ফোটেনা
    পরিকল্পনায় কিংবা অসতর্ক ভুলে।

  • কবিতা

    কবিতা- আমিও যাব চলে

    আমিও যাব চলে
    -কৃষ্ণ বর্মন

     

    একদিন আমিও চলে যাব
    কাউকে না বলে
    সেদিন আমি একাই একশো
    নেবোনা কাউকে দলে।

    সে দেনি তোমরা ভাবতে বোসো
    কত ভাল ছিলাম।
    ভুলে যেও খুব তাড়াতাড়ি
    স্মৃতি করে নিলাম।

    চোখের কোণে জল এলে
    লুকিয়ে না হয় কেঁদো
    কালক্রমে ভুলে যেও
    ভুলে যেও খেদও।

    সত্যিই আমি যাব চলে
    মিথ্যে কথা বলে
    সেদিন শুধু আমিই জয়ী
    নেবোনা কাউকে দলে।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- কদর্য…..

    কদর্য…..
    – কৃষ্ণ বর্মন

     

    কদর্য স্বপ্ন আর্য হতে চেয়েছিল বলে
    বিতাড়িত সে স্বপ্নের কুলীন সমাজ থেকে।
    কৃতকর্মের ফল তাঁকে দাড় করিয়েছে
    বাস্তবের নির্লজ্জ রাস্তায়
    যেখানে স্বপ্নেরা নিলাম হয়
    মানহানির অনুপাতে
    মৃতের চেয়ে সস্তায়।

    নিলাম শেষে পড়ে থাকে কিছু
    কিছু ওজনে অতিরিক্ত
    স্বপ্নের ফেরিওয়ালার অবশেষে
    ঝুলিটা হয় রিক্ত।

  • কবিতা

    সাধারণ পরিচয়

    সাধারণ পরিচয়
    -কৃষ্ণ বর্মন

     

    প্রতিভা সোনার পাথর বাটি নয়।
    প্রতিভা সকলেরই আছে।
    তবুও সবাই প্রতিষ্ঠিত অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে না।
    চর্চা আর পরিচর্যার স্নেহে ভালবাসায়
    বিকশিত কুসুমের ন্যায়
    প্রতিভাও হয়ে ওঠে প্রস্ফুটিত প্রত্যাশিত।
    সাধারনের সুপ্ত সাধ সেদিন সাধ্য ছাড়িয়ে
    অবাধ্য আকাশ চুম্বী স্বপ্নের সহচর।

    সব সাধারণই অসাধারণ হতে চায়।
    সব অসাধারণ সাধারণে থাকতে পারেনা।
    সাধারণ থেকে অসাধারণে উত্তরণের পথ বড় স্বার্থপর,
    কেবলই সে উপেক্ষা আর অবহেলায়
    পেরিয়ে যায় দায়,দায়িত্ব আর কর্তব্যের প্রান্তর,
    ত্যাগ আর তপস্যার অজুহাতে
    নিষ্ফলা ঊষর মরুকায় নির্বাসিত করে সম্পর্ককে।

    এভাবেই একদিন সাধারণ প্রতিভা অসাধারণ হয়ে ওঠে।
    অথচ আমি আজও স্বপ্রতিভ হয়েও নিষ্প্রভ।
    আজও আমি সাধারণের সাধ্যের সাথে সমঝোতা করে
    জড়িয়ে আছি করণীয় আর কর্তব্যের কুহেলিকায়।
    এভাবেই বেঁচে আছি স্বার্থ সংঘাত এড়িয়ে
    সাধারণই হোক আমার একমাত্র পরিচয়
    প্রতিভা ফিরিয়ে নাও হে দাতা নিঃশর্তে তুমি ফিরিয়ে।

You cannot copy content of this page