-
অণু কবিতা- না কবিতা
না কবিতা
-ডাঃ তারক মজুমদারযন্ত্রণাক্লীষ্ট মেঘেরা ও একদিন
মেঘমল্লার রাগে ধরে গান,
যন্ত্রণাক্লীষ্ট কোন হৃদয়ের গান
কারো কারো কাছে এটা ফান।আটপৌঢ়ে জীবনের বাঁকে বাঁকে
পলি আর দাম্ভিকতা
মনের অতল গহ্বরে তখন
ওষ্ঠাগত প্রাণ বাক স্বাধীনতা।মনটা তখন ছিল নরম
সেই ছোট্ট ছেলে বেলা
ঘাত প্রতিঘাত দিন রাত এখন
সবই শনিবারের বারবেলা। -
অণু কবিতা- জন্মনেয়
জন্মনেয়
ডাঃ তারক মজুমদার
কত শব্দ কত গল্প
ছড়িয়ে আছে চারিদিক
বনস্পতির গলায় দোলে
লতা গুল্মের উজ্জ্বল আলো।খিদের আগুন ম্লান ফাগুন
এ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত সমাজ
শ্বাসকষ্টে ওষ্ঠাগত প্রাণ
জ্যোৎস্নাস্নাত সকাল খায় হোঁচট।নষ্ট সময় কষ্ট পায়
সাহিত্য কারিগর
স্বস্তির বিশ্বাস শব্দের ফিসফাস
জন্ম নেয় প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা। -
কবিতা- ভালোবাসায় সব আছে
ভালোবাসায় সব আছে
ডাঃ তারক মজুমদারভালোবাসায় কষ্ট আছে
আছে অভিমান
কষ্ট পেলে নষ্ট সময়
ঝরে অশ্রু সমান সমান ।ভালোবাসায় দুঃখ আছে
আছে সুখ ছদ্মবেশী
মাখামাখি ভালোবাসা
অল্প দিনেই হয় বাসী।ভালোবাসায় ঝগড়া আছে
আছে গভীর প্রেম
উত্তর কালের জন্য
রাখছে ধরে ফ্রেম।ভালোবাসায় আগুন আছে
সময় স্রোতে বৃষ্টি
চোখের তারায় সব হারায়
রোমিও জুলিয়েট সৃষ্টি।ভালোবাসায় আছে শুরু
আছে যেমন শেষ
পূর্ণতা পেলে ভালোবাসা
আহা বেশ !বেশ ! -
অণু কবিতা- কোথায় তুমি সুখ ?
কোথায় তুমি সুখ ?
ডাঃ তারক মজুমদাররাত্রির পায়ে ঘুঙুর বাজে
বেসামাল বহু মুখ
সাদা ভাতের সকাল কাঁপে
সবাই খোঁজে প্রকৃত সুখ।সুখের দাম্ভিকতায় যখন
গ্রাস করে অ-সুখ
দিগন্তে চুম্বন আঁকে জলরাশি
কত দুরে তুমি সুখ?সুখ পাখির পিছনে ছুটে
পরে খসে সম্পর্ক যত
উপোসী মনে শুধু অকারণে
বর্দ্ধিত আজ ক্ষত। -
গল্প- অবিনাশ হৃদয়ে বাঁচো
অবিনাশ হৃদয়ে বাঁচো
– ডাঃ তারক মজুমদারওয়েনড্রিলা যথারীতি খেঁকিয়ে উঠে অবিনাশকে বললো- “তোমার মত লেখক কবিকে ওই রকম লোকেরাই সম্মান জানায়”। বলার মধ্যে অবিনাশ শুধু বলেছিল- “জানোতো ওয়েনড্রিলা, ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৯ (দঃ)২৪পরগনার একটি সাহিত্য সংস্থা আমায় “বঙ্গ সন্তান সম্মান২০১৯”এ ভূষিত করবেন। ব্যাস আর যায় কোথায়? সাথে সাথেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেই ওয়েনড্রিলা, যা না তাই বলে অবিনাশকে অপমান জনক কথা বলে তিরবিদ্ধ করতে লাগলো। আসলে অবিনাশের বউ আর ছেলে কোন দিনই অবিনাশের সাহিত্যচর্চাকে ভালো চোখে দেখেনি। কটূক্তি,অস্রাব্য কথা এখন অবিনাশের নিত্য দিনের পাওনা। কী নিদারুণ পাষাণ চাপা দিয়ে বুকে, কত শত অবজ্ঞা, জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করে যে অবিনাশ সাহিত্যচর্চা করে চলেছে, তা ঈশ্বর আর অবিনাশ ছাড়া কেউ জানে না।
অবিনাশের সৃজনশীল সাহিত্যসৃষ্টির নৈপুণ্যে পঃবঃ তথা ভারতবর্ষের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ চিন জাপান তেহেরান জার্মানি আমেরিকা ফিলিপাইন্সে ও প্রচুর পরিচিতি। সাহিত্য এবং চিকিৎসা সূত্রেই। বাড়িতে কাগজ কলম নিয়ে বসবার সে সুযোগ নেই অবিনাশের। যেটুকু লেখে চেম্বারে রোগী দেখার অবসরে। ওয়েনড্রিলা মাঝে মাঝে অবিনাশকে হুশকিও দেয়- “এই সমস্ত ছাইপাঁশ, পত্র পত্রিকা, লেখালেখির খাতা, ডায়েরি আজ ছেলেটাকে দিয়ে সব বিক্রি করে দেবো, নয়তো পিন্ডির লেখা আজই সব চিতায় তুলে দেবো।”
অবিনাশ চেম্বারে বেরনোর সময় ওয়েনড্রিলার এমন উগ্র চন্ডীমূর্তি আর অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর বুকের ভিতরটা আজ কেন যেন এক অদৃশ্য আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। দু’চোখ দিয়ে শ্রাবণ ধারা ঝরে পড়ছে। কোনোক্রমে নিজেকে সামলে নিয়ে চেম্বারের উদ্দ্যেশে রওনা হয়। ওদের দেখে শুনে বিয়ে। ওয়েনড্রিলা বিয়ের আগে ভালো করে জেনে শুনেই অবিনাশের সাথে এই বিয়েতে সন্মতি দিয়েছিল। অবিনাশ যে সাহিত্য চর্চা করতো ওয়েনড্রিলা সব জানতো। অথচ বিয়ের পর থেকেই অবিনাশের সাহিত্যচর্চায় বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
অবিনাশ এখন আসল কথাটা বুঝতে পেরেছে যে, সাহিত্যকে সকলেই ভালোবাসে না। মর্যাদাও দিতে পারে না। আর এই ধরনের অবজ্ঞা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আমাদের মত মানুষদের বাড়ি থেকেই শুরু হয়। যাদের কাছে শাড়ী গহনা অর্থই সব কিছু, তারা মানুষকে কী করে ভালবাসতে পারবে? মানুষের শরীর স্পর্শ করা খুব সহজ, কিন্তু তার হৃদয় স্পর্শ করা ততোধিক কঠিন কাজ।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অবিনাশ ব্যারাকপুর রেল স্টেশানের উদ্দ্যেশে ছুট ছিল রেল লাইন ধরে। মাথায় তখন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ওয়েনড্রিলার সেই রনচন্ডী মূর্তি তার সাথে অশ্রাব্য কথাবার্তাগুলো- “বই খাতা লেখালেখি পত্রপত্রিকা আজ সব চিতায় তুলবো। তোর মত কবিকে ওই রকম লোকেরাই সম্মান জানায়…” অবিনাশের পিছনে তখন দৈত্যের মত ছুটে আসছে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। হুইসেলের পর হুইসেল। সে শব্দ আর অবিনাশের কর্ণ কুহরে পৌঁছোলো না। অবিনাশকে নিমেষের মধ্যে দ্বিখণ্ডিত করে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস অদৃশ্য হয়ে গেল। অবিনাশের নিথর দেহের সাথে পড়ে রইল একরাশ উপেক্ষা, অনাদর, ঘৃণা, অবজ্ঞা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের বারি বর্ষণ অদৃশ্যভাবে, যা বাড়ি থেকে ওর উপর বর্ষিত হতো প্রতিনিয়ত। অবিনাশ বাড়ির সবাইকে মুক্তি দিয়ে গেল, এই উলঙ্গ সমাজে, উন্মুক্ত আকাশের নিচে নিজে চির মুক্তি পেয়ে।
-
কবিতা- জীবন এখন
জীবন এখন
– ডাঃ তারক মজুমদারজীবন এখন মরুভূমি
কিংবা অচেনা পথ
জীবন এখন রঙিন স্বপ্ন
ভালোবাসার শপথ।জীবন এখন অবুঝ মন
একটু খুশির হাওয়া
জীবন এখন আবেগ প্রবণ
প্রিয়াকেই কাছে চাওয়া।জীবন এখন প্রতারিত
প্রত্যাশার সিঁড়ি বেয়ে
জীবন এখন আলট্রা মডার্ণ
তুমি বলার কে হে?জীবন এখন ধূঁকছে দেখো
মারণ ব্যাধির মত
জীবন এখন খাঁ খাঁ রোদ্দুর
পুড়ছে হৃদয় যত। -
কবিতা- মানুষ কোথায়
মানুষ কোথায়
– ডাঃ তারক মজুমদারমানুষ কোথায় এখন
চারিদিক শুধু আকৃতি মানুষ।
মান আর হুঁশ উবে গেছে কবেই
পড়ে আছে শুধু রঙিন ফানুস।দেখতে অবিকল মানুষের মত
অথচ মানুষ নয়
পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত এরা
তবু মূল্যবোধের অবক্ষয়।প্রেম ভালোবাসা বিলুপ্ত প্রায়
হৃদয় ক্যানভাস থেকে
ছলা কলায় নিয়েছে আশ্রয়
আকৃতি মানুষ একে একে।লোভ লালসায় পূর্ণ জীবন এখন
হিংস্রতার বিভীষিকা
চলো সাহিত্য করি। সাহিত্য সাথী
সময় স্রোতে বড্ড একা। -
কবিতা- আবেগ কম্পন
আবেগ কম্পন
– ডাঃ তারক মজুমদারপ্রেমের সম্পর্কে যখন ধরে ফাটল
অস্তরাগে সূর্যের মাথায় অঙ্কুর
ওষ্ঠাগত প্রাণে সুমিষ্ট ফল
শত প্রশ্ন মনে রাত্রি হল দূর…।রোমান্টিক সিনেমা দেখা শেষ হলে
ক্লান্তির কালো চোখ
সব কিছু দ্রুত বদলায়
বিধ্বংসী প্রাণে হায়! হায়!প্রতিশ্রুতি বহুদিন তবুও যাই ভুলে
সম্পর্কের সাতকাহনমধু সন্ধানী মৌমাছিদল ফিসফিস শব্দে
তুলেছিল ঢেউ আবেগ কলম.. -
কবিতা- কি মুশকিল!
কি মুশকিল!
– ডাঃ তারক মজুমদারকি মূশকিল !
কোথায় থাকি নিরাপদে?
বিধ্বংসী বিপন্নতার জাল
বিছিয়ে দিয়েছে দেশ সীমানা গন্ডি পেরিয়ে।অর্থ আজ অর্থহীন দুর্নাম ঘুচিয়ে
অথৈ জলে হাবুডুবু আমাদের চেতনা।অর্থ আজ নির্লজ্জ অর্থনীতি
তবুও কিছু কিছু শব্দার্থ খুঁজতে খুঁজতে
সময় যায় গড়িয়ে।অর্থ লোভী মানুষ পরিচ্ছন্নতা হারায়
লুকিয়ে থাকা মুখোশের আড়ালে।যত সহজে অমূল্য বক্তব্য যায় রাখা
তত সহজ নয় তাকে লালন করা,
কথা আর কাজে বৈপরীত্য টানে যবনিকা
অর্থহীন অর্থের লালসার….কি মুশকিল!
কোথায় থাকি নিরাপদে? -
কবিতা- কবি হয়ে ওঠা হলো কৈ
কবি হয়ে ওঠা হলো কৈ
– ডাঃ তারক মজুমদারকবিতা লিখতে লিখিতে কখন যেন
পার হয়ে গেলো পঁচিশটা বসন্ত ।এখন বদমেজাজি কোন সম্পাদককে দেখলেই
কবিতাকে গুছিয়ে রাখি ডাইরীর ভিতর।
আসলে আমি এখনো কবি হয়ে উঠতে পারিনি,
কিছু সাহিত্যিকের অমূল্য মতামত।
আমার পূর্ব পুরুষ যে ভাবে কবিতা লিখতেন
আমিও সেভাবে হাঁটছি এবড়ো খেবড়ো পথে।অন্ধকারে ছড়িয়ে আছে যত সব স্তব্ধতা
ব্যালকনিতে রেখে আসা উষ্ণ চায়ের ধোঁয়া।মূল বক্তব্যটা প্রস্ফুটিত করতে
আমার এই কলমের সাথে সখ্যতা।
সাদা কাগজে সাজাই শব্দের আঁতুর ঘর
আর সেখান থেকেই জন্ম নেয়——
“কবিতা পৃথিবীর শুদ্ধতম্ ভালোবাসা”।