• কবিতা

    কবিতা- বন্ধু হ’বি চল

    বন্ধু হ’বি চল
    – তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

     

    আমি একটু দূরে দূরেই থাকি।
    লাজুক গাছের ছায়ায় ছায়ায় মন।
    দূরের থেকেই দেখি আসা-যাওয়া।
    দূরের থেকেই “বন্ধু” অনুক্ষণ ।

    নীরবতার ভাষাই আমার প্রিয়।
    শব্দ আঘাত এড়িয়ে আমি চলি।
    নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া।
    নিজের সাথেই নিজে কথা বলি।

    অবহেলে এড়িয়ে যাবো তোকে।
    এমন মনের জোর তো আমার নেই।
    ছুঁয়ে দিলাম দূরের তরঙ্গ।
    আমার কাছে পৌঁছে গেলো যেই।

    বন্ধুর মুখ মনের অলিন্দে।
    অনুভবে মনের কথা বল।
    ভালোবাসার আদর মেখে,
    বন্ধু হ’বি চল.. বন্ধু হ’বি চল।

  • কবিতা

    কবিতা- চলো ভুলে যাই সবকিছু

    চলো ভুলে যাই সবকিছু
    – তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

     

    চলো ভুলে যাই সবকিছু।
    বেকারত্বের জ্বালা, বঞ্চনা-শোষণের মুখ,
    লাঞ্ছিতের কান্না,মৃত মানুষের লাশ,
    মায়ের পাষাণ বুক, নারীর চোখের জল।
    শিশুদের ক্রন্দন।
    এসো সব ভুলে যাই।
    প্রয়োজন নেই মনের মধ্যে কোন প্রশ্ন তোলার।
    তার থেকে এসো বুক ভরে বিষ নিঃশ্বাসে
    ভরে নিই নিজের নিজেকে।
    মনুষ্যত্ব ভুলে হিংসার চোখে দেখি সবকিছু।
    আগুন পুড়িয়ে দিক চোখের সাহারা।
    বিষের দহনে জ্বলুক আত্মার প্রাণ।
    যদি পারো মোমবাতি জ্বেলে দিও,
    প্রেমের সমাধি পরে।

  • কবিতা

    কবিতা- শুধু ভালোবাসি বলে

    শুধু ভালোবাসি বলে
    – তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

    মিছে বদনাম,জানা ছিলো সেও,
    তাও পাশে থাকি ভালোবাসি বলে।
    কত সযতনে যত্নের ছবি আঁকি।
    রাঙিয়ে দিয়েছি পাতা।
    তবুও যে তা বিবর্ণ হয়,
    খসে যেতে চায় বৃন্তের মায়া।
    ফুলও তো ঝরে,
    সময়ও তো মরে।
    তাও সময়ের হাত ধরি শক্ত মুঠোয়।
    অবহেলা,অনাদর জমে থাকে বুকের গভীরে।
    কথার বিষে ক্ষতের দহন জ্বালা।
    সব ব্যথা রাখি লুকোনো পাতাল ঘরে।
    অদেখার ভান করে এড়িয়ে গিয়েছি সব দেখাগুলো।
    ভুলে যেতে চাই বেহিসেবী স্মৃতিগুলো।

    প্রতিদিন জীবনের ঘর্ষণে কড়া পড়ে মনে।
    হিসেব মেলেনা– অবশেষে ফাঁকিগুলো।
    শুধু দেখি ভালোবাসা ফাঁদে পড়ে আছে।
    তাই দুর্নাম নিয়ে শুধু ভালোবাসি বলে
    ভালোবেসে যাই।

  • কবিতা

    কবিতা- কাগজ নেই

    কাগজ নেই
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

    সেই তো ক’বে সাধু হলাম ঘর ছেড়ে।
    সব কাগজই হারিয়ে গেলো সেই ভোরে।
    এখন আমি সাধুর বেশেই কাটাই দিন।
    কাগজ ছাড়াই আমায় আপনি চিনে নিন।

    সেবার যখন বন্যা হলো গ্রাম ভেসে।
    কোনক্রমে প্রাণ বাঁচালাম খুব ক্লেশে।
    সব কাগজই হারিয়ে গেলো ঘর ভেসে।
    প্রাণের থেকেও কাগজ দামী এই দেশে?

    আমি এখন বৃদ্ধ মানুষ পক্ককেশ।
    জন্ম থেকেই জানি আমার এটাই দেশ।
    গন্ডগ্রামে দাই এর হাতে জন্মেছি।
    হায় রে কপাল, কাগজ এখন কই খুঁজি?

    আমরা হলাম বোকাসোকা গরীবগুর্বো মানুষজন।
    ভাতের থেকে দামী কিছু নেই এখন।
    আমাদের লোক ভোট দিয়ে তোমায় জেতায়।
    তাও আমাদের নাম কি নেই তোমার খাতায়!

    তোমরা বরং লিস্টে খোঁজ সবার নাম।
    চোদ্দপুরুষ ভোট দিয়েছি তাদের ধাম।
    কাগজ-টাগজ আর চেয়োনা দাদাভাই।
    গরীব দেশে কেমন করে প্রাণ বাঁচাই?

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- সকালের স্বপ্ন

    সকালের স্বপ্ন
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

    আজ শম্পার ঘুম ভাঙে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। ঘুম ভেঙে মনটা বেশ ভালো হয়ে যায়। সে পরিষ্কার মনে করতে পারে পুরো স্বপ্নটাকে।

    ঘুমের মধ্যে সে দেখেছে এক মহাপুরুষকে। তাঁর দু’টি চোখ মায়াময়,ঋজু সবল দেহ। প্রসন্ন মুখে মৃদু হাসি নিয়ে সে হাত নাড়ছে মানুষের দিকে। সব মানুষ বিহ্বল, উত্তেজিত এই মানুষটির একটু ছোঁয়া পাবার জন্য।ওকে শুধু চোখের দেখা দেখতে পেয়ে তারা ধন্য।

    এই মানুষটি তাদের নেতা। যার মনে কোনো মালিন্য নেই, পাপ নেই … চোখভরা স্বচ্ছতা, মনজুড়ে শুধু সাধারণ মানুষের ভালো করার চিন্তা। তারমধ্যে কোনো ভান নেই, প্রচার নেই… সবটাই আন্তরিক।

    মানুষ জানে তাদের নেতা তাদের শুধুই ভালো চায়।ভালো চায় দেশের- দশের। তাই দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প আর অর্থনৈতিক উন্নতিই তাঁর লক্ষ্য। আর সেকাজই তিনি করে চলেন নিরলস ভাবে, নীরবে।

    দেশে আজ একজনও গরীব মানুষ নেই। মাঠে মাঠে ফলছে সোনার ফসল। চাষী তার উপযুক্ত দাম পাচ্ছে।ফড়ে নেই, দালাল নেই। কতশত কলকারখানায় উন্নত যন্ত্রপাতিতে কাজ করছে শ্রমিকেরা। তাদের তৈরী দ্রব্য রপ্তানি হচ্ছে দেশে-বিদেশে। শ্রমিকেরা আজ তৃপ্ত… শ্রমের মর্যাদা পাচ্ছে তারা। উপযুক্ত বেতন তাদের জীবনকে সুনিশ্চিত করেছে। ৩৬৫ দিনই কলকারখানার চাকা ঘুরছে।

    ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে।সর্বত্রই পড়াশুনোর সুন্দর পরিবেশ…শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসেই যত্নশীল। ছাত্রছাত্রীদের বাইরে ঘুরে বেড়াতে হয়না আলাদা টিউশন নেবার জন্য। সবাই আজ শিক্ষিত,সৎ।

    দেশের যুবসমাজ তাদের অনুসরণ করার নেতাকে পেয়ে গেছে। তারা দিশা পেয়েছে। তাই তারা আজ উৎফুল্ল। সাত রঙের আবীর ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা আকাশে বাতাসে। শিক্ষা জীবন শেষ করে উজ্জ্বল চাকরী জীবনের হাতছানি তাদের সামনে।

    ঝকঝকে রাস্তা দিয়ে ধোঁয়াহীন গাড়ি চলেছে। কোথাও কোন শব্দ নেই। শহরবাসী শৃঙ্খলাপরায়ণ। রাস্তায় মিটিং নেই, মিছিল নেই, অবরোধ নেই…শান্তির বাতাবরণ।

    হাসপাতালগুলো ঝকঝকে…রোগীরা যেন বেড়াতে এসেছে সেখানে ক’দিনের জন্য। কোন হয়রানি নেই…কারচুপি নেই। সুচিকিৎসা আছে শুধু…আর আছে ডাক্তারের চোখের কোনে ভরসা আর আশ্বস্ত রোগীর মুখে হাসি।

    স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ নীরোগ থাকার লক্ষ্যে এগিয়েছে।কোন ভেজাল নেই খাবারে। বিষ নেই, রঙ নেই শাকসব্জী, ফলে। ভাগাড়ের মাংস এখানে বিক্রি হয়না। এখানে কেউ কাউকে ঠকায়না।

    এখানে বাচ্চা চুরি হয়না। মেয়ে পাচার হয়না। কিডনি পাচার চক্র নেই।

    মহান নেতা আর তার পারিষদেরা এমন সুস্থ, স্বচ্ছ, সুন্দর বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে যে এখানে চুরি নেই, জোচ্চুরি নেই। সিণ্ডিকেট নেই, মাস্তানিরাজ নেই, দালালচক্র নেই, ধর্ষণকারী নেই, মাফিয়ারাজ নেই, অপরাধ নেই, জেলহাজত নেই। সবজায়গায় সুস্থ সুন্দর সুখের হাওয়া খেলে বেড়াচ্ছে।

    এ এমন এক দেশ হয়েছে যেখানে ধনী-দরিদ্র, শিক্ষা-অশিক্ষা, জাতপাত, ধর্মের কোন ভেদাভেদ নেই, মানুষে মানুষে ঘৃণা নেই…শুধু ভালোবাসা আছে। আর আছে মানুষের মূল্যবোধ, সততা,সম্মান,চেতনা। মানুষের মানব সত্ত্বা বিকিয়ে যায়নি।

    শম্পা ভাবে — স্বপ্নটা যদি সত্যি হতো!

  • কবিতা

    কবিতা- কুয়াশা

    কুয়াশা
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

    কুয়াশারা ভিড় করে আজ,
    আবছা চাদর বিছিয়ে দিলো।
    উদাসী এক কন্যা তখন,
    মনখারাবি সঙ্গে নিলো।

    কেমন করে ফিরবে সে আজ
    অন্ধকারের পথ পেরিয়ে?
    পড়ে থাকা ঝরা পাতা,
    আলতো পায়ে মর্মরিয়ে?

    একটা সাঁকো পেরিয়ে তাকে,
    ফিরতে হবে নিজের ঘরে।
    সেই সাঁকোতেই হাত বাড়ালো
    একটি ছেলে, অন্ধকারে।

    সংশয় আর আশংকারই
    দোলায় দুলে,
    ধরলো সে হাত আপন করে,
    মনের দুয়ার আপনি খুলে।

    দেখলো চেয়ে আলোর আকাশ,
    অন্ধকারের দ্বীপ ছাড়িয়ে।
    ফুল গন্ধে ভরা বসন্তদিন,
    কুয়াশাময় রাত পেরিয়ে।।

  • মুক্ত গদ্য

    মুক্ত গদ্য- ভালোবাসার বৃত্ত

    ভালোবাসার বৃত্ত
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

     

    সবার মনের মধ্যে একটা বৃত্ত থাকে,জানো?
    ভালোবাসার বৃত্ত।
    বৃত্তের কেন্দ্র থেকে যত বড় ব্যাসার্ধ নেবে বৃত্তটা ঠিক ততটাই বড় হবে আর ভালোবাসা ঠিক ততটাই বাড়বে।

    যদিও জানি,তুমি ভালোবাসার বৃত্তের কেন্দ্রে রাখবে তোমার কিছু প্রিয় মানুষকে…তোমার পছন্দের।
    তাদেরকে তুমি একটু বেশীই ভালোবাসবে।
    প্রশ্রয় দেবে,আদর দেবে।তাদের দোষগুলোকেও ঢেকে দেবে ভালোবাসা দিয়ে।মুখে বলবে –কি আর এমন দোষ করেছে? সেই তাদের জন্যই তোমার যত পক্ষপাত। বাইরে থেকে লোকে কিন্তু ঠিক টের পাবে তোমার এই পক্ষপাতদুষ্ট ভালোবাসাকে।

    কেন্দ্র থেকে দূরে থাকা তাদেরকেও তুমি ভালোবাসবে…তবে একটু কম।এইভাবেই যত পরিধির দিকে যাবে ততই তোমার ভালোবাসা কমতে থাকবে।

    হয়তো কিছু কিছু মানুষের সামান্য দোষত্রুটিও তুমি সহ্য করতে পারবেনা।
    সামান্য মতের অমিল হলেই ধুন্ধুমার কান্ড বাঁধিয়ে বসবে, তারপর তাকে ছুঁড়ে ফেলতে চাইবে বৃত্তের বাইরে।

    কিন্তু জানো, পৃথিবী নামক বৃত্তটাও কিন্তু তার সমস্ত জিনিষকে কেন্দ্রের দিকে টেনে রাখে প্রবল আকর্ষনে। যদিও তুমি তা পারবেনা কারণ তুমি তো সর্বংসহা পৃথিবী নও। কিন্তু তাও জানি একটা টান কিন্তু থেকেই যায় আর সেটাই হলো ভালোবাসার টান…তা সে যতই অল্প হোক না কেনো।

    আবার তুমি যখন কাউকে ফেলে দেবে,ভুলে যেতে চাইবে,অস্বীকার করবে,অগ্রাহ্য করবে, এড়িয়ে যাবে — সে তখন হয়তো তোমার বৃত্তের পরিধির বাইরের দেওয়াল ঘেঁষে বসে থাকবে শুধু তোমার একটা ডাকের অপেক্ষায়।।

  • গল্প

    গল্প- আংটি

    আংটি
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

    সেই কোন ভোরবেলায় দীপ্ত তিতলিকে নিয়ে বেরিয়েছে অফিস পিকনিকে। তারপর শ্রী আবার একঘুম দিয়ে উঠে অলসভাবে এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসলো…আজ আর সেরকম কোন কাজের তাড়া নেই ওর।

    এই দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটটা ওরা কিনেছে এক বছর হলো। এমনিতে খুব শান্ত, নির্জন পাড়া…তবে সকালবেলায় ঠিক উল্টোদিকে বাচ্চাদের স্কুলটাতে কচিকাঁচাদের একটু কলকাকলি শোনা যায়। তবে আজ রবিবার, ছুটি। স্কুলের ছোট্ট মাঠটার চারদিকে শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার গাছ। একমনে বারান্দায় বসে খোলা আকাশ, গাছপালা, পাখি দেখে শ্রী। মিঠে রোদেভেজা বাতাস গায়ে মাখতে বড় ভালো লাগছে ওর।

    যৌথ সংসার ছেড়ে আলাদা হয়ে এই ফ্ল্যাটে এসে এটুকু বুঝেছে শ্রী, যে স্বাধীনতা মানে আসলে কি! এখানে যা খুশী..যখন খুশী কাজ নিজের ইচ্ছেমত গুছিয়ে করলেই হয়—কোন নিয়ম নেই। আর শ্বশুর বাড়িতে? একটু পান থেকে চুন খসার আগেই তটস্থ থাকতে হবে…সবসময় সবজায়গায় যেন সিসিটিভি লাগানো আছে!

    শ্রী মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে…দাদু-ঠাকুমা-বাবা-মা-ভাইবোন নিয়ে সুন্দর শান্তির পরিবার ছিলো ওদের।হয়তো বিরাট শখ- আহ্লাদ ছিলোনা কিন্তু খাওয়া-পরার অভাব ছিলোনা কোনোদিন। মা খুব শান্ত, চুপচাপ, সাদাসিধে…কোন চাহিদা ছিলোনা কখনো…সামান্য কিছু নিয়েই সবসময় স্মিতহাস্যে মা যেন অসামান্য।কখনো কোন ছোটখাটো অন্যায় বা দোষ করলে মা সবার সামনে নয়…পরে আড়ালে ডেকে ভুল শুধরে দিতেন…সবার সামনে অসম্মানিত হতে হতোনা…নিজের ভুল বুঝে নিজেরই লজ্জাবোধ হতো তখন।

    আর শ্বশুরবাড়িতে ছোটখাটো ত্রুটি বিচ্যুতিতে শাশুড়িমা সবাইকে শুনিয়ে চিৎকার করতেন…যেটা ঘটেনি সেটাও বলতেন…খুব খারাপ লাগতো শ্রী’র।ওর সম্মানবোধ দেখে শাশুড়িমা অভিশাপ দিয়ে বলেছিলেন—তোমার সম্মান একদিন ধূলোয় লুটোবে।খুব দুঃখ পেয়েছিলো শ্রী। সে তার শাশুড়িমার কাছ থেকে টাকাকড়ি, গহনা-শাড়ী কিছুই তো চায়নি…শুধু একটু ভালোকথা, ভালোবাসা, আশীর্বাদও কি তিনি দিতে পারতেননা? সে তো শ্বশুড়বাড়িতে একটু শান্তির পরিবেশই চেয়েছিলো…আর কিছুই না।

    দীপ্ত চাকরী করে যা পেতো তার বেশীরভাগটাই সংসারে মায়ের হাতে তুলে দিতো…তাও মাকে খুশী করতে পারতোনা। বড় ভাসুর আর বড়জা দু’জনেই চাকরী করতো কিন্তু সংসারে একই টাকা দিতো। তাদের ছেলেকে শাশুড়িমাই দেখাশুনো করতেন। তার বদলে বড়জা মাঝেমধ্যে কিছু টাকা গুঁজে দিতো ওনার হাতে…তাতেই তিনি মহাখুশী। সবসময় ওদের দিক টেনেই কথা বলতেন।

    তারমধ্যে শ্রী’র মেয়ে হ’লে শাশুড়িমা অখুশী হলেন…ওকে একটুও আদর দিতেন না। তখন মেয়ের বয়স একবছর… সলিড ফুড খেতেই চাইতো না…খুব রোগা ছিলো…শুধু দুধ খেতে ভালোবাসতো…তাই সকালে আর রাতে বোতলে করে দুধ দিতো। ওর জন্য আলাদা করে হাফ লিটারের এক প্যাকেট গরুর দুধ আনতো দীপ্ত…তাই নিয়েও কত কথা! একদিন শ্রী শুনতে পেলো প্রতিবেশীর সাথে শাশুড়িমায়ের আলোচনা চলছে—এক প্যাকেট দুধ একটা বাচ্চা কি করে খায়?নিশ্চয়ই ওর মা লুকিয়ে খেয়ে নিচ্ছে দুধ। অবাক হয়েছিলো শ্রী! একটা ছোটবাচ্চার একটা ছোট প্যাকেট দুধ খাওয়া নিয়েও এত কথা চলতে পারে! মুখ বন্ধ করে নীরবে সরে এসেছিলো সে। শান্ত শ্রী কখনো বেশী কথা বলতোনা…ঝগড়া তো নয়ই।শুধু মনে মনে কষ্ট পেতো আর চোখের জল ফেলতো।

    ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে একতলার ঘরে তিতলির খুব ঠান্ডা লাগতো। ডাক্তার বলেছিলেন ড্রাই জায়গায় ওকে রাখতে। কিন্তু সবাই বলতো—একে তো মেয়ে, তার আবার যত আদিখ্যেতা।

    দীপ্ত সবই বুঝতো। তাই লোন নিয়ে এই ফ্ল্যাটটা কেনে মেয়ের জন্যই। মাকেও আসতে বলেছিলো ওদের সাথে। কিন্তু মা বড়ছেলে-বৌ-নাতিকে ছেড়ে আসতে মোটেও রাজী নয়। উলটে শ্রীকে কথা শোনালেন—এটাই তো তোমার ইচ্ছে…তুমি একলা থাকো…একলা খাও…একলা পরো…একলা ভালো থাকো। শ্রী মনে মনে ভাবে—কিইবা এমন খাই…কিইবা তেমন পরি…কোনরকম কোন চাহিদাই তো তার নেই….তাও!

    ডিং ডং…ডোরবেলটা বাজতেই চমক ভাঙলো শ্রীর। এতোক্ষণ কি সব আজেবাজে চিন্তা করছিলো সে! ওই পুতুল এলো বোধহয়…আজ সময় নিয়ে ওকে দিয়ে ঘরদোরটা ভালোভাবে ঝাঁট দিয়ে মুছিয়ে নিতে হবে…প্রতিদিন যা ফাঁকি দেয়!

    পুতুল ঘরে ঢুকেই বলে —বৌদি, তোমার কথামতো ওই বাড়ির দাদার কাছে কুড়িহাজার টাকা চাইলাম।
    -কি বললো?
    -আর কথা বলে? বাজে লোক…মুখ ঘুরিয়ে পালালো। বৌদির সামনে মুখ খারাপ করেনা পুতুল।
    আগেরদিন ও-ই শ্রীকে বলেছিলো—ওই বাড়ির দাদা খুব মেয়ে ঘেঁষা, কাজ করতে অসুবিধা হয়, গায়ের উপর এসে পড়ে। সেদিন আবার বৌদির অবর্তমানে খারাপ ইঙ্গিত করেছিলো।
    অথচ কাজটা খুবই দরকার পুতুলের…মাইনেও বেশ ভালো….আর ও বাড়ির বৌদিও ভালোমানুষ…প্রাণে দয়ামায়া আছে। তাই শ্রীকে এসে বলেছিলো—কি করবে? শ্রীই শিখিয়ে দিয়েছিলো টাকা চাইতে…ব্যাস সরল সমাধান।

    শ্রী বলে, ঠিক আছে…আজ একটু ভালো করে খাটের তলা, সোফার তলা ঝাঁট দিয়ে মুছে নে…আমি ততক্ষণে আরেকবার চা বানাই।

    বিকেলে বন্ধু পর্ণা এসেছিলো…কাছেই না’কি ওর মাসীর বাড়ি। ফোনে ঠিকানা আর ডিরেকশন নিয়ে হাজির হলো ও মস্ত এক নতুন গাড়ি চড়ে….গাড়িটা এই মাসেই কিনেছে ওরা। নতুন কিছু কিনলে বা দেশেবিদেশে ঘুরতে গেলে তা শোনাবার ইচ্ছে হয় ওর আর তখনই খোঁজ পরে শ্রীর। ছবি তুলে পাঠাবে নয়তো ফোনে শোনাবে আর আজতো একেবারে চাক্ষুষ দেখাতে নিয়ে এসেছে। শ্রীর আবার এসবে নজর কম। কারুর কিছু দেখলে চোখও টাটায় না…হিংসা-ফিংসাও হয়না…সাথে সাথে পাবার বা কেনার ইচ্ছেও হয়না…শুধু দেখানো স্বভাব দেখলে খুব হাসি পায়।

    যাইহোক একটুবাদেই পর্ণা যাই যাই করতে শুরু করলো…কফি, চিপস আর মিষ্টি দিলাম।

    পর্ণা নাক কুঁচকে বললো—তোদের ফ্ল্যাটটা খুবই ছোট দেখছি…আরো একটু বড় নিলি না কেনো?

    মিচকি হেসে শ্রী বললো—এটাই ঠিক আছে রে…জায়গা যত বড় হবে ততই পরিষ্কার করার ঝামেলা।

    পর্ণা চলে গেলো।দীপ্ত আর তিতলি ফিরলো রাতে। অল্প একটু দুধ-কর্ণফ্লেক্স খাইয়ে দিতেই মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো…বড্ড ক্লান্ত আজ।

    – জানো আজ পর্ণা এসেছিলো কি বিশাল গাড়ি চড়ে।
    -কি গাড়ি?
    -খুব সুন্দর। আমি অত নাম জানিনা। আদার ব্যাপারীর আবার জাহাজের খোঁজ।
    – সত্যিই তো…তোমার বন্ধুর বর কত্ত বড়োলোক। তোমার ভাগ্যটাই খারাপ।
    – হিংসা করোনা…তোমারও হবে…বলে ভেংচি কাটলো শ্রী।

    দীপ্ত শুতে গেলো। শ্রী প্রতিদিনের মত ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে নাইট ক্রিম মাখছিলো। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো—আমার আংটি?
    দীপ্ত লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে বললো—কি হলো?
    – আমার আংটিটা আঙুল থেকে খুলে পড়ে গেছে।
    – সে তো যাবেই। আরেকটু কম কম খাও।

    -কি ঘটনার কি রিঅ্যাকশান! রাগে গা জ্বলে উঠলো শ্রীর। বিয়েতে তোমার দেওয়া প্রথম আংটি…আমার সবচেয়ে প্রিয় একটা জিনিষ।

    – ঠিক আছে খেয়েদেয়ে আঙুল মোটা করো আরও একটা কিনে দেবো।
    – আরো জ্বলে উঠলো শ্রী—হ্যাঁ টাকার গাছ লাগিয়েছো তো!
    – হয়তো কালকে তিতলিকে নিয়ে যাওয়া আসার সময় পড়ে গেছে।আজকে খেয়াল করলে।
    – না, না, কালকেও ছিলো হাতে আর আজতো কোথাও যাই নি সারাদিন…ঘরেই ছিলাম।
    – তা’লে তো ঘরেই আছে। চলো, চলো খুঁজি।

    দু’জনে মিলে ঘরবারান্দা, বাথরুম, খাটবিছানা সোফা, টেবিলচেয়ার, সোফার তলা মায় ডাস্টবিনের ময়লা উপুড় করে খুঁজলো। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না।

    – কমোডে ফেলে আবার ফ্ল্যাশ টেনে দাওনি তো?
    – উফফফ…এইসময়ও ইয়ার্কি?
    – না,সত্যি বলছি।
    – আজকেই আমি পুতুলকে দিয়ে ভালো করে ঝাঁট দিইয়েছি।
    – পুতুল খুব বিশ্বাসী। ও কেনো নেবে? পেলে ঠিক দিয়ে দিতো।
    – হ্যাঁ, টুকটাক সেফটিপিন, পাথরের দুল, কয়েন পেলে দেয় ঠিকই কিন্তু হীরের আংটি?
    – মিছিমিছি অবিশ্বাস করোনা শ্রী। তুমি ওকে কিছু বোলোনা। ওরা গরীব বলেই আমাদের যত অবিশ্বাস।আর বড়লোক হলে মন আর অবিশ্বাস করতে চায়না।আজ তোমার বন্ধুও তো এসেছিলো।
    – একদম বাজে কথা বলবেনা। ওরা কত্ত বড়োলোক জানো? বিশাল বাড়ি-গাড়ি। গলায়-হাতে-পায়ে সোনা-হীরের গয়নার ছড়াছড়ি।
    – না,না আমি কাউকেই দোষ দিচ্ছিনা। হয়ত ওটা আছে কোথাও লুকিয়ে, আবার পরে পাওয়া যাবে।
    আমি তোমাকে বোঝাবার জন্য বললাম –জানোতো “ক্লেপ্টোম্যানিয়া” বলে একটা অসুখ আছে তাতে মানুষ চুরি করে। আমাদের কলেজে একটা বন্ধু ছিলো…খুব বড়োলোকের ছেলে…যা ওর ভালো লাগতো চুরি করে নিয়ে নিতো। তবে দামী জিনিষ নয়… অনেক তুচ্ছ জিনিষ নিতো। ওর কোন বইএর অভাব ছিলোনা তাও বন্ধুদের বই নিয়ে নিতো। আমরা জানতাম ওই নিয়েছে। তাই ওর বাড়ি গিয়ে কাকীমার কাছে চাইতেই কাকীমা ওর আলমারী খুলে সবার সবকিছু জিনিষ ফেরত দিয়ে দিতেন। খুব লজ্জা পেতেন উনি। ওর কিন্তু এসব মনেও থাকতোনা…খেয়ালও করতো না।

    – না,আমার বন্ধুর ছোটবেলায় এরকম কোন অসুখ ছিলোনা। তবে অসুখ নয়…অনেকে স্বভাবে চুরি করে আর তারা তুচ্ছ নয়, দামী জিনিষই চুরি করে। তুমি আমায় এসব বোলোনা তো…আমার নিজের মাথাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
    —তাই তো, তুমিই তো এখন রোগী…মাথা পুরো খারাপ…আমার একটা পাগলী। এখন ঘুমোও তো।

    শ্রী জানে, যাকে নিজে চোখে নিতে দেখিনি তাকে সন্দেহ করাও অন্যায়। আর তাছাড়া জিনিষটা কোথায় পড়েছে তারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। তাও পরেরদিন পুতুলকে ভালো করেই বলল —জানিস পুতুল,আমার বিয়ের আংটি…তোর দাদার দেওয়া প্রথম উপহারটা হারিয়ে ফেলেছি। ঘর ঝাঁট দেওয়ার সময় পেলে দিস তো।

    ও কেমন থতমত খেয়ে তাকালো…মুখটা কেমন কালো হয়ে গেছে। হয়তো ভাবছে, শ্রী ওকে সন্দেহ করছে।তাড়াতাড়ি বললো, আমি যা কিছু কুড়িয়ে পাই তোমাকেই তো দিই বৌদি। ঠিক আছে খুঁজে দেখবো বলে সন্তর্পণে ঝাঁট দিতে লাগলো। শ্রী’র সন্ধানী চোখ ওকে নজরে রাখলো।

    এমনি করেই অনেক অনেক দিন পেরিয়ে গেলো। পরের বছর বিবাহবার্ষিকীতে দীপ্ত ঠিক ওইরকমই একটা হীরের আংটি দিলো। কিন্তু মনের দুঃখ কি তাতে কমে? উলটে দীপ্ত বললো, এটাও হারিও।
    শ্রী বলল, আমি হারাইনি…ওটা নিজে থেকেই হারিয়ে গেছে।

    সে যাইহোক এমনি করেই দিন কাটছিলো। একদিন সিটি মলে গিয়েছিল শ্রী, ঢোকার মুখেই দেখে পর্ণা, ডাকতে যাবো… এমন সময় দেখে, গাড়ীর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে।শ্রী’কে দেখেনি বোধহয়। হঠাৎ শ্রী -এর মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো… সে দেখল গাড়ীর দরজায় পর্ণার আংটি পরা হাত আর  সেটা সম্পূর্ণ শ্রী’র হারানো আংটিটার মত একই ডিজাইন!

  • চিঠি

    চিঠি- ঈশ্বরের চিঠি

    ঈশ্বরের চিঠি
    – তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

    স্নেহের মানুষ,

    তোরাই তো সেই মানুষ…? অধম, অর্বাচীন, হিংস্র, নিন্দুক, স্বার্থপর, পিশাচ? তোরাই তো সবসময় মুখে ধম্ম ধম্ম করে চেঁচাস…অথচ হেলায় নিজের মানব ধর্ম বিসর্জন দিয়েছিস…একবার চারদিকে তাকিয়ে দ্যাখ আমার সৃষ্ট সকল উদ্ভিদকুল, প্রাণীকুল তাদের নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে বেঁচে আছে। তোদের আমি সবচেয়ে বুদ্ধিমান করে বানালাম আর তোরাই কি’না পৃথিবীর সবচেয়ে নির্বোধ প্রাণী হলি!!

    মুখে তোদের ঈশ্বরের জয়গান–অথচ হিংসা দিয়ে, ঈর্ষা দিয়ে, লোভ দিয়ে, ঘৃণা দিয়ে আমাকে প্রতিমুহূর্তে ব্যথিত করিস। তোদের অস্ত্রের প্রতিটি খোঁচায় আমি রক্তাক্ত হই…চোখ বন্ধ করি ভয়ে, অন্ধ হতে চাই।

    তোরাই তো সেই মানুষ যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাকে ছুঁতে চাস মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়? কিন্তু তোরা কি জানিস না…আমি সেখানে থাকিই না… আমি জলে, আকাশে, বাতাসে,গাছে লতায়, সমগ্র প্রাণীকুলে মিশে আছি…আছি তোদের প্রাণের ভিতর।

    তোদের মন্ত্রোচ্চারণ, আজান,প্রার্থনা আমার কানে পৌঁছায় না কারণ তোদের স্বার্থপর, অহংকার, নিন্দা, বিবাদ বাক্য শুনে শুনে আমি ক্লান্ত…আমি বধির হতে চাই।

    তোদের ব্যবহার, তোদের মুখোশ পরা মুখ দেখে আমি নির্বাক। তোদের প্রতিটি দুষ্কর্ম আমায় লজ্জা দেয়, ব্যথিত করে আমায়.. আমি খুশী হইনা মোটেও।

    আর শোন, তোরা ধর্মের নামে হানাহানি বন্ধ কর।আর ওই যে তোরা ধর্মগ্রন্থ মানিস…ওটাও আমি বানাইনি…বানিয়েছিস তোরা…নিজেদের প্রয়োজনে। সেই অতীত যুগের নিয়মকানুন তোরা আধুনিক,উত্তর আধুনিক যুগেও চালাতে চাস নিজের প্রয়োজনে…আমার কোন প্রয়োজন নেই এসবে।আমি শুধু বলি তোরা সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চল…আধুনিক হ’ ..পুরোন ধ্যানধারণা আঁকড়ে বাঁচিসনি…মনে জ্ঞানের আলো জ্বাল আর পিছনে না ছুটে সামনে এগো…নতুন কিছু করে দেখা।

    আমি প্রতিদিন দেখি ধর্ম মানতে গিয়ে তোরা অধর্ম করিস আর ধার্মিক হতে গিয়ে অধার্মিক হোস। প্রতিদিনের জীবন সুন্দর ভাবে অতিবাহিত করাই আসল ধর্ম পালন।আমি চাই আমার নাম নিয়ে তোরা শুদ্ধ হ’,সৎ হ’,জ্ঞানী হ’, ভালোমানুষ হ’, মানবিক হ’…সব অজ্ঞানতা থেকে বেরিয়ে এসে জ্ঞানের আলো জ্বাল নিজেদের মনে…খুশী থাক, ভালো থাক আর অন্যকেও ভালো রাখ রে মানুষ।

    আর শোন স্বর্গ, নরক বলে কিছু নেই। একমাত্র এই গ্রহ পৃথিবী যেখানে তোরা আছিস, সেটাই আছে…তোরাই ভালোবেসে সেটাকে স্বর্গ বানাস আবার দলাদলি, মারামারি, হানাহানি করে সেটাকেই নরক বানাস।

    তবে এটা সত্যি যে পাপ-পুণ্য আছে আর আছে কর্মফল। একটু খেয়াল করে দেখিস তোরা অন্যায় করলে,আঘাত দিলে সেটা তোদের জীবনে ঠিক ফিরে আসে অভিশাপ হয়ে… আজ নয়তো কাল…এটাই কর্মফল…বুঝলি অজ্ঞান মানুষ?

    আর ধর্ম ধর্ম করে বিপুল অর্থব্যয় বন্ধ কর।আমার কিছুর অভাব নেই…তাই ঘুষ দিয়ে পুজো উপচারে আমাকে খুশী করতে আসিসনা…তাতে আমি রুষ্টই হবো।আর প্রচুর অর্থ খরচ করে উৎসব অনুষ্ঠান আর ধর্মস্থান…মন্দির,মসজিদ,গীর্জা না বানিয়ে সেই টাকা গরীবদের দান কর…আমি তাতে খুশীই হবো।

    ভালো করে মনে রাখিস আমার সব কথা।
    তোরা শুদ্ধ হ’…তাহলে তোদের বিশ্বাস আমি দু’হাত পেতে নেবো…তোদের সমর্পণে আমি খুশী হবো। নয়তো চিরকাল আমি অন্ধ-বোবা-কালা পাষাণ হয়েই থাকবো।

    আমি চাই সমগ্র উদ্ভিদকুল আর প্রাণীকুলকে তোরা রক্ষা করবি..প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবি..নিজেদের বিপদ নিজেরা ডেকে আনবি না। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে ভালো থাকিস।
    ইতি
    তোদের এক এবং একমাত্র ঈশ্বর

  • কবিতা

    কবিতা- জীবন তোকে

    জীবন তোকে
    – তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

    জীবন তোকে কি দিয়েছি?
    জীবন তোকে কি’ইবা দিতে পারি?
    হয়তো তোকে শুধুই দিলাম ফাঁকি –
    জীবন তোকে এই জীবনে কিছুই দিলাম না।

    জীবন তোকে কিইবা দিতে পারি?
    সুখ,দুঃখ,কান্না, হাসি সবই বেলোয়ারি।
    জীবন শুধু তোর থেকে নিয়েই গেছি রোজ।
    মিথ্যে হাজার কষ্ট মেপে নিইনি রে তোর খোঁজ।

    আবার যদি ফিরে আসি,
    নেবো তোকেই বরণ করে।
    নতুন করে সাজিয়ে দেবো দেখিস।
    জীবন তুই এইবারটা একটু পাশে থাকিস।

You cannot copy content of this page