• কবিতা

    কবিতা- নতুনে ভরুক ধরা

    নতুনে ভরুক ধরা
    – তড়িৎ সেন

     

    কপাটটা বন্ধ আছে বহুদিন
    মনের কালিমাগুলো যত
    আটকে আছে মনের ভিতর
    ভাবনা চিন্তা জমে আছে কত,

    এই লৌহকপাট ভেঙ্গে দিতে হবে
    মুক্ত বাতাস আসুক মনে
    এলোমেলো অগোছালো চিন্তাগুলো যাবে
    কালিমাগুলো মুছে যাবে সেইক্ষণে,

    মন যে কি চায় মনই শুধু জানে
    বিনিদ্র রজনী কাটে তারা গুনে গুনে
    ভাবনাগুলো স্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে
    নতুনের চিন্তা আসে না তো মনে,

    যদি পাখি হতে পারতাম
    জানালার গরাদ ঠিক পেরিয়ে যেতাম
    নীল আকাশে ডানা মেলে দিতাম
    পুরোনো যত চিন্তা ভাসাতাম মেঘে,

    বর্ষার জলে পুরোণো ধুয়ে যাক
    ধুয়ে যাক মলিনতা যতো
    নতুনে ভরুক এই ধরা
    সজীবতা আজ বড় অভিপ্রেত।

  • কবিতা

    কবিতা- একথোকা রঙ্গন

    একথোকা রঙ্গন
    – তড়িৎ সেন

     

     

    রঙ্গন গাছটা ফুলে ভরে আছে
    তার থেকে এক থোকা তোমার খোঁপায়
    লালচে গোলাপী তার রঙ
    ঠিক তোমার গায়ের মতন
    কালো চুলে বিশাল খোঁপা
    চূর্ণ কুন্তল কপোলে কপালে
    নাকটা একটু চাপা নাহলে সুন্দর
    শাড়িটা বাহারি করে পরা
    তোমার চলন বড় ছন্দময়
    চোখ দু’টো হরিণ নয়না
    মুনি ঋষিও চপল হয়
    তোমার চকিত প্রেক্ষণে,
    আমি কোন ছাড়,
    তবুওতো তুমি আমার সঙ্গিনী
    তোমার আধো কথা মিষ্টি ভীষণ
    আমি তোমাতেই ডুবে যেতে চাই
    এ রঙের রঙ্গন শুধু তোমায় মানায়
    আমি অপলকে চেয়ে থাকি
    এসো এ বাগানে হাঁটি কিছুক্ষণ
    মনের আবেগ অনুভূতি সঙ্গে করে নিয়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- সাদা ছবি

    সাদা ছবি
    – তড়িৎ সেন

     

     

    তোমার ক্যানভাসে যে ছবি এঁকেছো
    তা বড্ড সাদা ও ফ্যাকাশে
    এ যেন প্রাণহীণ ছন্দহীন কোন নারী
    রক্ত নেই, চোখ দুটো ম্লান বিষণ্ণ লাগে
    কপালে সিঁদুর নেই সিঁথিও যেন সাদা ,

    না না তুমি গাল দুটো লাল কর
    ঠোঁট কর পান রসে লাল
    না থাক লিপস্টিক, মাথায় তেল থাক
    রুক্ষ শুষ্ক নয় হোক পয়োধরা
    আঁকো মাতা বিশ্ব ধরিত্রীর,

    না হয় আমার মাকে আঁকো
    না হয় দিদিকে টুসটুসে মুখে
    শত সংসার ঝড়ে যারা কম্পিত নয়
    জল ব্যাধি জ্বরাতেও বড় সুধাময়
    মায়ায় ধরে থাকে তার সন্তান
    আমিতো সেই ছবি চাই,

    ফের নাও ক্যানভাস
    রঙ তুলি ধর ফের, আঁকতে লেগে যাও।

  • কবিতা

    কবিতা- চাঁদের হাসি

    চাঁদের হাসি
    -তড়িৎ সেন

     

     

    ভোরের বেলা সূর্য্য যখন ওঠে
    চাঁদমামা সাদা মেঘে খায় লুটোপুটি
    ডেকে বলে আয়, চেয়ে দেখি
    সূর্য্য ওঠা জবা ফুলের মতন,
    বলাকারা যায় ভেসে যায় দূরে
    অবাক চোখে তাইতো চেয়ে দেখা;
    আমার তো রাতেই শুধু আলো
    সূর্য্য যখন ঢলে পড়ে সুদূর অস্তাচলে,
    তার আলোতে আমার গায়ে আলো
    তখন আমার সোনা রঙে রঙ
    চাঁদবুড়ী ঘরর ঘরর চড়কা কাটে বসে
    আর বলে ওরে “চাঁদ” তুই কলঙ্কিনী
    তোর গায়ের কালো রঙ কলঙ্কেরই দাগ
    আমি লাজে মরে যাই ,
    আমার আলো পড়ে – মায়ের বুকে
    যেথায় শিশু নিশ্চিন্তে ঘুমায়
    শোনো আমি শিবের জটার শোভা
    আমি স্নিগ্ধ আলোর রেশ
    আমায় নিয়ে গান লেখে কবি
    শিল্পী আঁকে রঙ বেরঙের ছবি,
    আমি বাঁধ ভাঙা সেই হাসি
    আমার হাসি ঝর্ণার বারি পাত।

  • কবিতা

    কবিতা- রাধাচূড়া

    রাধাচূড়া
    – তড়িৎ সেন

     

     

    বৈশাখ শেষে রবি ওঠে তেজে
    রাধাচূড়া গাছ হলুদ ফুলেতে সাজে
    কৃষ্ণচূড়াও লালে হলো লাল
    গাছদুটো দূরে দূরে,
    এখনো রাধাচূড়া শাখে
    কালো কৃষ্ণ কোকিল ডাকে
    প্রিয়ারে শুধায় কোথায় তুমি,
    কৃষ্ণচূড়া ভাবে রাধাচূড়া গাছ
    যদি আরো কাছে হতো
    তাহলে পেতাম একটু পরশ,
    তখন আমি গাছের তলায়
    উদাসী বাতাস বয়ে যায়
    কাকে ডাকে! কেবা তাহা জানে,
    একটি রাধাচূড়া ফুল এসে পড়ে
    সামনে আমার, বলে রেখে আয়,
    কৃষ্ণচূড়া গছের পাদদেশে
    সে আমার অপেক্ষায় আছে,
    আমি দ্রুত ছুটে যাই
    আকাশে কালো মেঘ ভেসে আসে
    ছুটে আসে দুরন্ত বাতাস
    বৈশাখ শেষে আসে কাল বৈশাখী।

  • কবিতা

    কবিতা- মেঘে মেঘে

    মেঘে মেঘে
    – তড়িৎ সেন

     

     

    মেঘে মেঘে সারা আকাশ ছায়
    অসময়ে আঁধার আসে নামি
    বাজ পড়লো দূরে কোন মাঠে
    সূর্যাস্তের সময় নয় তো মোটে,
    ত্রস্ত ডানায় উড়ছে দেখো বক
    জল ট্যাংকে গুচ্ছ কাকের ঢল
    ফিঙেটাও পালিয়ে গেলো কোথা
    আকাশপানে আমি চেয়ে রই
    এদিক ওদিক মেঘ ছুটছে কোথা,
    ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হলো খানিক
    ভিজলো জলে সব রাস্তা ঘাট,
    গাছগুলো সব ডাকছে হেলে দুলে
    এই বৃষ্টি পড়না জোরে হেথা,
    জামা আমার ভিজে হলো সারা
    তাতেও আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠায়,
    দেখতে দেখতে সময় বয়ে যায়
    সন্ধ্যা হয়ে এলো বুঝি ঐ
    আলোগুলো জ্বালতে হবে ঘরে
    সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালবে এসে ও
    শাঁখ বাজাবে ধূপ জ্বালবে এবার
    তুলসীতলা কবেই উঠে গেছে,
    উচ্চ অট্টালিকা বসে ভাবে
    কোথায় গেলো বিস্তীর্ণ উঠান
    কোথায় সেই আম কাঠালের তলা।

  • কবিতা

    কবিতা- নিত্য আসা যাওয়া

    নিত্য আসা যাওয়া
    – তড়িৎ সেন

     

     

    শেষ রাতে ঘর ছেড়ে ছোটা
    রাত করে ঘরে ফিরে আসা ,
    আমি ঠিকা শ্রমিক
    নিত্য যাত্রী বনগাঁ লোকাল,
    বনগাঁ থেকে কত আরো যায়
    আমার সাথে নিজাম, বিভূতি, মনা,
    মনার বয়স কত হবে
    সুন্দর সুঠাম কিন্তু কালো
    ও যেন আমার এঁটুলি
    চুপ করে গায়ে লেগে বসে
    বললেও কিছুই শোনেনা,
    স্বামী তার নিরুদ্দেশ বেশ কিছুদিন
    রেখে গেছে একটা বাচ্চা আর শাশুড়িকে,
    মনার তিনশ টাকা রোজ
    তাই দিয়ে খাওয়া পরা
    মেয়েটার দুধ, শাশুড়ির পান
    নাহলেই চলে মান অভিমান ,
    রোজ রোজ কাজই জোটে না
    তাই মনাকে দু’ একশ ধার দিতে হয়
    মায়া পড়ে গেছে বড়
    মা বৌ তাও বোঝেনা,
    আমি আজ হেড মিস্ত্রি
    আমারও তো কাজ হলে টাকা
    না হলে টাকাইতো নেই,
    দিন চলে নিত্য নিত্য
    বনগাঁ লোকাল সাথে নিয়ে।

  • কবিতা

    কবিতা- জাগোরে

    জাগোরে
    – তড়িৎ সেন

     

     

    মেঘলা আকাশ মনটা উদাস
    সকাল বেলায় একটা শালিক
    ফাগুনের রঙ এ বৈশাখে
    কোকিলের উদাসী কূজন
    মন বলে চলো চলে যাই
    অন্য কোথাও অন্য কোনখানে
    উষাকালে বাউলের গানে
    মাঝিদের ভাটিয়ালি টানে
    দখিনা বাতাসে কপোতের সাথে
    অথবা করতাল বাজিয়ে
    যে রমণী কৃষ্ণ কৃষ্ণ গায়
    হঠাৎ মেঘের ফাঁকে সূর্যোদয়
    একেবারে মন ভালো করা
    যেন অমর পালের সেই গান
    “জাগো জাগোরে নগরবাসী।”

  • কবিতা

    কবিতা- কোথাও নাই

    কোথাও নাই
    – তড়িৎ সেন

     

     

    ভোরবেলা অবগাহনের পরে
    পদ্ম পুকুর পারে
    চুল আকুলিয়া দিলে
    বিস্তৃত পিঠ ‘পরে
    আমি সে রূপ নেহারি
    বিমোহিত হয়ে যাই
    তব হেলদোল নাই
    পদ্ম ফুলের ‘পরে
    একটি ফড়িং ওড়ে
    উড়ে আর এসে বসে
    শীতল বাতাস বয়
    তব রূপ অপরূপ
    প্রকৃতিতে বিলীন হয়
    হৃদয়ে আবেগ আসে
    আঁখি মুদ্রিত হয়
    সময় গড়ায়ে যায়
    আঁখি খুলে দেখি
    তুমি কোথাও নাই।

  • কবিতা

    কবিতা- আমি গান গাই

    আমি গান গাই
    – তড়িৎ সেন

     

     

    আমি যদি চারণকবি হোতাম
    গান গেয়ে আর পায়ে পায়ে
    কোথায় চলে যেতাম,
    তোমার বাড়ির উঠোন পেরিয়ে
    কাঁঠাল গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে
    গলা ছেড়ে গান মান অভিমান,
    আমার গানে হাজার কথা বলা
    ন্যায় অন্যায় সামনে নিয়ে তোলা
    মা ঠাকুমা বসতে বললে বসি
    একমুঠো চাল ঝোলায় তুলে রাখি,
    উজাড় করে গান শুনিয়ে যাই
    কতো গ্রাম যাই ঘুরে ঘুরে —
    ঘরে ফিরে আসি নতুন গানের টানে
    গান লিখে যাই একান্তে আনমনে —
    লেখাগুলো সব জমা করে করে রাখি
    গ্রাম বাংলার ছবি আঁকা আছে তায়,
    আছে সুখ দুঃখের যত কথা
    আছে ঋতু সমাগমে প্রকৃতির রূপকথা
    আছে চাষবাস নিয়ে বলা
    তোমরাও এসো যদি তা শুনতে চাও।

You cannot copy content of this page