• কবিতা

    কান্না

    কান্না
    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    দেখেছি তো নগরের পথে পথে ঘুরে
    একলা একাই কাঁদে কেউ
    চোখের অবিরল জল ঝরিয়ে
    পথিক যতো অলস দৃষ্টি মেলে
    একবার শুধু চেয়ে দেখে আরবার নয়
    তাদের যে দাঁড়ানোর সময় নেই
    তাদেরও কাঁধের ঝোলায় কত কি দুঃখ
    থরে বিথরে সাজানো
    কাঁদবার সময় কোথায়…
    তাদের কান্নাগুলো মেলে ধরে একান্ত অবসর যদি মেলে
    যারা সব অন্যের বেদনায় কাঁদার ইচ্ছে করে
    তারা মন ভোলানো অভিনয় করে…
    এখানে এ নিঠুর মানুষের সমুদ্রে
    কান্নাগুলো তোলা থাক আস্তিনের গোপন পকেটে
    এ জাগতিক দুঃখ কোন দুঃখই নয়
    এও এক সুখ-আমি দুঃখ পাই…
    মন আছে তাই কষ্ট রোদে পুড়ি
    অন্তরালে ফুলপাখি লতাপাতায়
    সুখ পাখি গান গায়
    অমর অজেয় আত্মার গভীরে
    সে গানে কেউ শোনে আনন্দের রাগিণী
    কেউ বা বেহাগের সানাই
    আমরা তবু শুনি এই আমাদের গৌরব…

  • কবিতা

    পরম্পরা

    পরম্পরা

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    একার আয়োজনে কখনো
    ছড়ায়নি বিশ্বভরা এ বিপুল
    মানব জীবন ব্যবস্থা,
    পরম্পরা দাগ রেখায়
    সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে এনেছে
    একটু একটু করে বাড়িয়ে কমিয়ে
    এ বিশাল মানব জীবনের যতো আয়োজন…

    আছে সুস্রোত ঘোলাস্রোত
    বিশ্বনদীর দু’ধারায়
    কেউ ভেসে চলে সুস্রোতে
    কেউ ডুবে যায় ঘোলাস্রোতের
    অতল তলে–হারিয়ে যায় চিরতরে
    এই হয়-হচ্ছে অবিরাম জীবন সংগ্রামে…

    আবার সূর্য ওঠে রাঙা প্রভাত নিয়ে
    আবার সূর্য ডোবে দিগন্ত রাঙিয়ে
    রাত্রির গায়ে নবপ্রভাতের প্রতিশ্রুতি রেখে
    মুহুর্মুহু ঐক্যতানে প্রকৃতি রূপসী গান গেয়ে যায়…

    দিনের গায়ে কেউ ভাঙে হাসির ঢেউ
    কেউ বা কান্না জলে ভিজায় মাটির বুক
    জীবন শুধু এগিয়ে যায় আগামীর পানে…

  • কবিতা

    চিঠি

    চিঠি

    -নীলোৎপল সিকদার

    তবুও রক্তে রক্তে আয়োজন চলে
    অজানা আনন্দের খোঁজ…

    নীল সমুদ্রে উড়ে যাওয়া
    বলকার পাখায় লেখে
    আসব ফিরে ফিরে
    তব বাহু ডোরের কম্পনে
    শিহরিত হতে প্রেম ছলনায়।

    মাংসের গভীরে ফেলে যেতে কামরস
    অকস্মাৎ মনে পড়ে
    আকাশের পরীদের কথা
    যারা ভালোবাসতে চেয়েছিল
    রুটি আর ভাতের মত ক্ষুধা,
    গিলে খেতে চেয়েছিল সুখ আর ঐশ্বর্য…

    দুঃখ একা হেঁটে যায়
    এই সব ছলনার সুখ সম্পদ ছুঁয়ে,
    তাই তারা সব ছেড়ে
    আকাশে বেঁধেছে ঘর,
    আমার পিয়ন কোনদিন
    পাইনি খুঁজে তাদের ঠিকানা।

    পিয়নের হাতের ঘামে ভেজা চিঠি
    আজও পৌঁছায়নি পরীদের হাতে,
    কয়েক কোটি জন্ম পরে
    হয়তো পরীরা আমার রক্তের
    ঘ্রাণমাখা চিঠি পেতেও পারে!

  • কবিতা

    বদলাবে

    বদলাবে

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    এই সব অপ্রাপ্তি আর হতাশার আগুনে
    একদিন ঠিক পুড়ে যাবে
    যত আছে অন্যায় অবিচার।

    চেতনার বিস্ফোরণে মুছে যাবে
    শাসকের তৈরী খরা আর অনাবৃষ্টি,
    একদিন ঠিক বদলাবে পৃথিবী আর তার মানুষ।

    প্রবাহমান মিঠা জলের ধারায় ভরে উঠবে
    নদ নদী এঁদো ডোবা
    আছে যত শুকনো পুকুর।

    একদিন সাম্যের গান গাইবে
    এই সব গণমানুষেরা
    হয়তো সেই শুভ সোনালী দিনে
    আমি তুমি থাকব না…

    গণমানুষ শান্তির গান গাইবে
    প্রাণে প্রাণে মুখরিত হবে
    বৈচিত্রময় ধরনী
    ওগো বন্ধু একদিন বদলাবে
    কবে কখন তা জানিনা
    তবে বদলাবে…

  • কবিতা

    ভালোবাসি

    ভালোবাসি

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    ভেজা পথে পা রাখতেই পিছল খেলো
    পিছলে যেতে যেতে মেয়েটি বললো
    ভালোবাসি
    হঠাৎ দুটি কাক বৃষ্টি ভেজা ডানা
    ঝাপটাতে ঝাপটাতে কা কা রবে ডেকে উঠলো
    সর্বনাশের শুরু
    কাদা মাখা পথে পিছলে যেতে যেতে
    সর্বনাশ শুরু হলো…

    হোঁচট খেতে খেতে মন বাউলা
    যৌবনের মৌবনে বিভোর হয়ে
    স্বপ্ন দেখলো
    পলাশে শিমুলে রঙে রঙে ফাগুনে
    বসন্ত উৎসব যেন না ফুরায়
    জীবনে যৌবনে…

    মেয়েটি যেতে যেতে পথে বারবার বলে
    ভালোবাসি
    কেন ভালোবাসে কখনো তা বলে না…
    উত্তর মেলে না…
    শুধু বলে ভালোবাসি-ভালোবাসি স্বপ্নে
    দিবসে রজনীতে…

    মুগ্ধ রাঙা আঁখি মেলে তাকিয়ে থাকে
    আবেশে আবেগে
    যৌবনের পাগলা ঘোড়া ছুটে চলে
    ধুলি উড়িয়ে
    দূর থেকে দূরে সুদূরে-তেপান্তরে
    রূপকথা পারে…

    মন্ত্র ধ্বনির মত কানে বাজে রয়ে রয়ে
    ভালোবাসি
    মেয়েটি পিছল পথে যেতে যেতে বলে
    কেন ভালোবাসি তা জানিনে
    শুধু জানি
    ভালোবাসি…

  • কবিতা

    এক পৃথিবী এক জাতি

    এক পৃথিবী এক জাতি

    -নীলোৎপল সিদার

    তবুও এই সব বাধা ভেঙে ভেঙে
    গড়ে যেতে হবে জীবনের গান
    প্রজন্মে প্রজন্মে এগিয়ে
    নিতে হবে
    আমাদের সকল আয়োজন…

    পথ করে যেতে হবে আগামীর
    সে পথেই হয়তো একদিন আসবে
    সোনালী শুভ মানবতার দিন…

    হয়তো সেদিন থাকবে না
    মানুষে মানুষে ভেদাভেদ
    মানুষের দুঃখ কষ্ট দারিদ্রতা
    ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোত্র চিহ্ন
    থাকবে না আলাদা ধর্ম পরিচয়
    এক জাতি পরিচয়ে ধর্ম হবে মানবতা…

    মানুষ তখন গাইবে শান্তির গান
    এক পৃথিবী এক জাতি একই স্বপ্ন
    মানুষ আর মানবতার।

  • কবিতা

    শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু

    শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    হে প্রেমদাতা কলিহত জীবত্রাতা
    সর্বকারণের কারণ জগদীশ
    দ্বাপরে শ্রীমুখে বলেছিলে
    “এক দেহ আস্বাদনে রস নেই বিলাসনে
    সে কারণে দেহ হলো ভিন্ন “…

    সেই তুমিই আবার কলিতে
    দুই দেহ এক করি
    হলে প্রেমদাতা গৌর হরি
    এ কথা বলেছেন তব ভক্ত
    সাধু গুরু বৈষ্ণবে শাস্ত্র বিচারী…
    হলে তুমি প্রেম দাতা দয়াল গৌর হরি…

    তুমি তো দিয়েছ ঘুচিয়ে
    অভিশপ্ত চতুরবর্ণ বিভাগ
    নিয়ে এসেছ সব মানুষকে
    মানবতার মহান এক কাতারে,
    শ্রীমুখে বলেছ
    মানুষে মানুষে নেই কোন ছোট বড়
    স্পৃৃশ্য অস্পৃশ্য উঁচু নীচু ভেদাভেদ,
    শুনিয়েছ এ পবিত্র কথা বারেবারে
    তোমার অসীম করুণার সুরে…

    প্রকৃত মানুষ হওয়ার মহান বাণী
    হে পরম দয়াল তব শ্রীমুখে শুনি
    “তৃণাদপী সুনীচেন তরুরীব সহিষ্ণুতা অমানেনো মানে দেনো কীর্তনীয়া সদা হরি ”
    তব শ্রীমুখে শুনি এ মহান অমৃত বাণী…

    কি মধুুর করেই দিলে এ অমৃত শিক্ষা
    বিনয়ে তৃণের থেকেও নীচু হও
    বৃক্ষের মত প্রতিবাদহীন সহিষ্ণু হও
    কোন মানুষকে ঘৃণা করো না
    যার কোন সম্মান নেই তাকেও
    সম্মান করো–মানুষের মর্যাদা দাও
    কি অপূর্ব তব শিক্ষা বাণী হে দয়াল…

    আজ তাই দেখি যে জন কৃষ্ণ তত্ত্ববেত্তা
    ভক্তিতে নিস্কাম পরম বৈষ্ণব
    সেই গুরু হয়
    কিবা হাড়ি কিবা মুঁচি অথবা চন্ডাল…

    তুমি তো এনেছ গোলকের
    গোপন ধন কৃপা করে
    কলিহত জীব উদ্ধারে
    মধুর ” হরে কৃষ্ণ ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর ”
    কেঁদে কেঁদে বিলিয়েছ তা প্রতি ঘরে ঘরে
    হে পরম করুণাময় তব কৃপা অপার…

    বাংলা সাহিত্যের অচল অন্ধকার যুগে
    তুমিই একমাত্র ছিলে বাংলাভাষার কান্ডারী
    বাংলা ভাষা প্রদীপ জ্বালাতে কত করুনা তব…

    হে পরম আরাধ্য পরমেশ্বর
    মধুর কৃষ্ণ নাম মহামন্ত্র দাতা
    তব অপার করুণার কৃপায়
    আমা হেন পতিতকে উদ্ধার করো…
    হরে কৃষ্ণ

  • কবিতা

    তাকিয়ে থাকা শব্দ

    তাকিয়ে থাকা শব্দ

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    চোখ ভরা কথা হয়ে শব্দরা তাকিয়ে থাকে
    হৃদয় থেকে চোখে–গলায়,
    কিছু শব্দ তাকিয়ে থাকে-অনুচ্চারিত,
    উচ্চারিত হওয়ার প্রবল আকাঙ্খায়
    শব্দরা কেবল তাকিয়ে থাকে…

    শব্দরা তাকিয়ে আছে আলো-আঁধারি
    গুহা জীবন থেকে নগ্ন গায়ে,
    উদোম গায়ে গুহা জীবন ছেড়ে
    সূর্য রশ্মির আলোকিত আকাশ তলে
    বেড়িয়ে আসার ক্রমবিকাশের কাল থেকে
    শব্দরা ভাষা হতে তাকিয়ে আছে…

    আদিম জীবনে ঝিনুকের মালা গলায়
    নৃত্যরত পায়ের ছন্দ থেকে তাকিয়ে আছে,
    পশু শিকারের আদিম পাথুরে অস্ত্রের ভোঁতা ধারে,
    তীর ধনুকের সাঁ সাঁ আওয়াজ হয়ে
    শব্দরা তাকিয়ে আছে আজও
    বলি বলি করে বলা হয় না…

    আলোকিত সভ্যতার সুললিত ভাষার পোষাকে
    শব্দরা তাকিয়ে থাকে লজ্জা আর সংকোচে,
    ভালোবাসি দুটি শব্দ আজও লজ্জাবনত
    কিছুতেই সহজে উচ্চারিত হতে চায় না,
    কেবল চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে…

  • কবিতা

    ভেনাস দেবী

    ভেনাস দেবী

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    এখানে পলে অনুপলে আগুন ছড়িয়ে
    যতসব ঝরা পালক ফেলে,
    ডুবোচর ছেড়ে ডানা মেলে উড়ে গেল পাখি,
    আরো উত্তরে যেখানে প্রেমের দেবী ভেনাস
    ক্ষণে ক্ষণে বসন্তের রঙ বদলায়…

     

    উত্তরে শ্বেত কবুতরের বুকে
    সে খুঁজে পেয়েছে জীবনের মোহনীয় গন্ধ,
    এই মাছ ভাত জল-জলো-জংলা প্রান্তে
    সে দেখেছে জীবন ম্যারমেরে শিথিল,
    উদ্দাম উচ্ছ্বাসহীন সেকেলে…

     

    অথচ একদিন এ সবুজ শ্যামলের কাজল পরে
    পাড় ভাঙ্গা দুরন্ত স্রোতে ভেসে
    ওপাড়ের চরে ধবল কাশফুল হয়ে
    জলো হাওয়ায় দুলতে চেয়েছিল…

     

    আজ বরফ পড়া বরফ ঝড়ের দেশে
    ভেনাস দেবীর পায়ের কাছে বসে
    উষ্ণতায় আগুন রূপসী দোল খায়…

  • কবিতা

    আলো

    আলো

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    দেখেছি স্থূল ইন্দ্রিয় ভোগের ক্লান্তি,
    অবিরত ভোগে ইন্দ্রিয় শিথিল- অকেজো,
    এমন মহা মুর্খ সুখ মন না চায়,
    মন চায় অস্তিত্বহীন–অস্তিত্বময়
    হৃদয় ফুলবন…

    মন তো অমল ধবল জোছনা
    আলোর মধুর সরোবর,
    যেখানে স্নেহ-মায়া-মমতার ফল্গুধারা
    নীরবে নীরবে বয়ে বয়ে যায়,
    সে মধু স্রোতে ভাসাও ভাসাও
    স্থুল ইন্দ্রিয় সুখে নয়…

    যে হৃদয়ে রাগ-অনুরাগের পুষ্পধারা
    ভালোবাসার অমল মধুর স্বপ্নভরা,
    সেই মনবাগিচার ফুলদোলায় দোলাও দোলাও
    স্থুল ইন্দ্রিয় সুখে নয়…

    স্থুল ইন্দ্রিয় মাংস গন্ধভরা
    ক্ষণিক মাতাল মাদকে গড়া,
    মিটে গেলে পিপাসা-আর না চায়,
    অস্বস্তির বিরক্তিতে মন চঞ্চল হয়,
    মায়া-মমতা-স্নেহ-আদর-ভালোবাসা
    মন যত পায় ততো আরো চায়,
    পিপাসা কখনো ফুরায় না
    এ চাওয়ার নেই তো কোন শেষ,
    স্থুল ইন্দ্রিয় তৃপ্তি নাইবা দিলে
    ও সে যে চির দুঃখভরা…

    বাস্তব অস্তিত্বহীন যা কিছু -অনুভব অনুভূতিময়,
    সেই তো চিরসুন্দর চিরমধুময়
    প্রেমময় আনন্দধারা,
    সেই ধারায় আমায় ডুবাও ভাসাও
    তুচ্ছ ইন্দ্রিয় সুখে নয়…

You cannot copy content of this page