-
গল্প- নাম তার নিপীড়িতা
নাম তার নিপীড়িতা
-পরিতোষ ভৌমিক
নামটাতেই একটা ভীষণ আকর্ষন । নিপীড়িতা নামটা কেমন করে হল ! বিশেষণ থেকে বিশেষ্য হওয়ার পেছনের যুক্তি বা বিশ্লেষণ তো একটা আছেই কিন্তু সেই ইতিহাসের দিকে এখন আর খুব বেশি কেউ ঘাটায় না । এছাড়াও ডাকনামটাই বেশি পপুলার হয়ে গেছে বলে অফিসিয়াল কাজ ছাড়া এই নাম খুব একটা বলতেও চায়না নীপা । তবুও প্রথম দিন থেকেই দীপেশকে এই নিপীড়িতা নামটাই বলেছে এবং দীপেশ এই নামেই তাকে চেনে । পশু চিকিৎসক দীপেশ বাবু অন্য পাঁচটা দিনের মতোই সেদিন কল পেয়েছিলেন ভিজিট করার জন্য , গরুর অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণগুলো শোনে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা হাতে নিয়ে আগে থেকে বলে দেওয়া লোকেশানের বাড়িটিতে প্রবেশ করেই ডাক্তার বাবুর আক্কেল গুড়ুম হয়েছিল । এত সুন্দর পরিপাটি ছিমছাম বাড়িতে কেউ গরু পোষে এ কথাটা মানতেই পারছিল না সে । অথচ নিজের কর্মপরিসরের মধ্যেই এই বাড়িটি । দুপুর বেলা , বাড়িতে মানুষজন বলতে গেটে নক্ করার সময় যে মহিলাটি গেট খুলে দিয়েছিল, একমাত্র সেই মহিলা ব্যতিত আর কাউকে দেখতে পেল না দীপেশ । লম্বা গড়নে শ্যামলা রঙের গৃহবধুটিকে দেখে ডাক্তারমশাই একবারের জন্য ভাবেনি যে এই মহি্লাই গরুর পরিচর্যা করে । এই সেই নিপীড়িতা । প্রথম দেখাতেই একটা নিস্পাপ ভাল লাগা এসেছিল দীপেশের মনে । কথা বলতে বলতে মুক্তোর মতো সাদা দাঁতের হাসি, ঝিলের জলে ঢিল পড়লে যেমন হয় ঠিক তেমনি প্রতিটি হাসিতেই একটা টোল পড়ে গালে ; কপালে সিঁদুরের বড় করে একটা ফোটা যেন পূর্ব দিগন্তে স্নিগ্ধ ভোরে সূর্য উদয় হচ্ছে , কথা বলার মাধুর্যে স্বল্পভাষী ডাক্তারবাবুর কথাও যেন আর শেষ হয় না । নিষ্পাপ ভাল লাগাটা বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি মনে মনে । ধীরে ধীরে বুক থেকে গলা বেয়ে মুখ দিয়ে ফোঁস করে বেরিয়ে গেল ভালবাসা হয়ে । তবে প্রথম দিনেই কিন্তু নয় , বেশ কিছুদিন নিয়মিত যাতায়াত শেষে যখন দীপেশ জানতে পেরেছিল যে, নিপীড়িতা নামটা তার মায়ের ইচ্ছাতেই রেখেছিল বাড়ির সবাই, মায়ের নিপীড়নের সাক্ষী হয়ে নীপা যখন এক পৃথিবী সমান স্বপ্ন নিয়ে ধনে জনে পূর্ণ স্বামীর বাড়িতে পা রেখেছিল তখনকার দিনের কথা, দিনে দিনে গরীব হওয়ার কথা, স্বামীর দীর্ঘ্য দিনের অসুস্থতার কথা, একমাত্র মেয়েটার একটা বড় অপারেশানের আবশ্যকতার কথা ইত্যাদি সব খুব তাড়াতাড়িই জানতে পেরেছিল দীপেশ । কথা বলতে বলতে সুন্দর করে স্পন্দনে দোলা দিয়ে নিজের জীবনের গল্প করার সাবলীলতা যেন নিপীড়িতার অলঙ্কার । জীবনের যৌবন পেরিয়ে যখন প্রৌঢ় , এই মুগ্ধতা পাওয়ার কথা ছিল না , তবুও দীপেশের জীবনে একটু একটু করে মুগ্ধতা ছেয়ে গেল সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল অতঃপর সন্ধ্যা, রাত এবং গভীর রাত পর্যন্ত । বর্তমানের এই দুঃসময়ে নীপার সংসারে দুটি গরুই যখন উপার্জনের একমাত্র সম্বল তখন সেগুলির দিকে বিশেষ নজর তো থাকবেই, সেবাযত্ন যতটা করা যায় প্রতিদান ততটুকুই পাওয়া যায় । দিনে দিনে দীপেশ এই পরিবারের সাথে একাত্ম হতে শুরু করেছে বটে, নিজের আপ্রাণ চেষ্টায় কিভাবে গরুগুলির থেকে প্রতিদান আরেকটু বেশি পাইয়ে দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা থেকেই যেন নিপীড়িতার পরিবারের সঙ্গে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে গেল ডাক্তার বাবু । অথচ ডাক্তার বাবু দিনের শেষে নানান পশুপাখির সঙ্গে দিন গোজরান করে ক্লান্ত শরীরটাকে নিয়ে যখন ঘরে ফেরেন, নিয়ম করে প্রতিদিন প্রথম দশ মিনিট সাত বছরের ফুটফুটে পরীর মতো নিজের মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে, আদর করে, একটু হাসি খুশীর খেলা খেলে, স্কুলের খবর নেয় তার পরে ডানাকাটা ফুল পরীর মতো দশ বছর আগে শহর থেকে ধরে আনা স্ত্রীর সাথে সময় দিয়ে সবশেষে মায়ের ঘরে গিয়ে রাতের ঔষধ খাইয়ে তবেই নিজে শোবে । ইদানিং রুটিন এ কিছু খামতি পড়ছে, সপ্তাহের দু একদিন একটু রাত হয়ে যায় ঘরে ফিরতে, ততক্ষণে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে , চোখের অচেনা ভাষা দেখে স্ত্রী দূরে সরে যায়, কোন দিন মায়ের ঘরে যায় আবার কোন দিন তার আগেই শুয়ে পড়ে ।
নিপীড়িতার স্বামী মানুষটাও বেশ প্রাণ চঞ্চল, একটা লম্বা হাসি মুখে লেগেই থাকে, পুরুষের মতোই দেহের গড়ন , শ্রম দিতেও খামতি নেই তার কিন্তু তবুও একটা বিরাট হতাসা ভাব চেহারায় । গল্পের ছলেই নিপীড়িতা বলেছিল, “মরদ আছে মরদাঙ্গী নাই” । চমকে উঠেছিল দীপেশ, চোখের ভাষা আর মুখের ভাষার মধ্যে কোনই পার্থক্য ছিলনা তার, “ আমি নারী, ডাক্তার বাবু আমার চিকিৎসা আছেনি !” নিপীড়িতার এই কথাগুলোর মধ্যে কত রকমের ইঙ্গিত ছিল সেটা পরতে পরতে টের পেয়েছিল দীপেশ, টের পেয়েছিল বলেই আজকের দিনে দীপেশ এই রোগীর বাড়িতে যখন তখন নানান বাহানায় কখনো সখনো আড্ডার দৌলতে আসা যাওয়া করে । নিপীড়িতার স্বামীর সঙ্গে এখন তার বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে ।স্বামীটা কিন্তু মোটেই হাবাগোবা না, দীপেশ আর নিপীড়িতার সম্পর্কের কথা বুজতে পারেনি এমনটা হতেই পারেনা ।তবে এই বিষয়ের উদাসীনতাই দীপেশকে আরো অনেক বেশী ভাবিয়েছে বা সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট করেছে এটাও বলা যায় । নিপীড়িতার মেয়েটাও আজকাল বেশি বেশি ‘আঙ্কেল আঙ্কেল’ করে, কখনো সখনো বাবার মতো বায়না করে বসে ‘আঙ্কেল আজকে কিন্তু সিঙ্গারা আনবে না, চিকেন চপ খাবো’ । সে সময়ে ডাক্তারবাবুর নিজের মেয়েটার কথা খুব বেশি মনে পড়ে, ফুটফুটে মেয়েটার প্রতি অবিচার হচ্ছে বলেও মন খারাপ করে, মনে মনে ঠিক করে আজকে থেকে আর হবে না, সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়েই আগে মেয়েটাকে বেশি বেশি করে আদর করবে । কিন্তু বিকেল নামতেই যখন নিপীড়িতার স্বামী ফোনে জানিয়ে দেয় “ বস, আজকে কিন্তু আপনের পছন্দের ব্র্যান্ড আনছি, নীপা কইছিল আপনে বাড়িতে শুয়োরের মাংস খাইতে পারেন না, এর লাইগাই আজগা ভর্তাও বানাইছি”।দীপেশ নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি, পারে না নিজের কথামতো সন্ধ্যে বেলায় বাড়িতে ফিরতে । নিপীড়িতার মেয়েটা পড়ার টেবিলে মন লাগিয়ে বসে যায়। তারপরেই রান্নাঘরে ‘আমি, তুমি ও সে’ এর মত করে তিন জনে একসাথে প্রাণ ভরে গল্প করা, খাওয়া দাওয়া। এক সময় নিপীড়িতার স্বামীটা নেশায় বুঁদ হয়ে নিস্তেজ সূর্যের পশ্চিম দিগন্তে ডুবে যাওয়ার মতো এলিয়ে পড়া, তারপরে নিপীড়িতার মুখে একপ্রস্থ সুখের কথা, কষ্টের কথা, ছেলেবেলার কথা শোনাতে শোনাতে আসুস্থতার কারণে বর্তমানে নপুংসক স্বামীটার প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে নিজের দেহের জ্বালা জুড়াতে, পাল্টে যাওয়া জীবনের প্রতি যেন প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেয় সে, নিংড়ে নিতে চায় দীপেশের সমস্ত পুরুষত্ব। চলছিল বেশ । ছক বাঁধা জীবনের ছন্দ যখন পাল্টে যায়, সহজ সরল সুন্দর সংসার আস্তে আস্তে মলিন হতে থাকে । দীপেশের মায়ের অসুখ এখন চরম, শেষ দিনের প্রতিক্ষার পালা । পুত্রের অমনযোগ এই অসুখ বাড়ার মূল কারণ বলাই বাহুল্য । এই সময়ে এসে দীপেশের মনে উপলব্দি হয়, মা হল তার শেষ কথা, বাবা যখন মারা গেলেন তখনো পড়াশোনার কোর্স শেষ হয় নি তার, ভাই বোন বলতে আর কেউ নেই, একমাত্র কাকা বিলাসী উন্নত জীবনের সোপান ধরে সুদূর লন্ডনে। এমন সময়ে মা একা ঘর সামলেছেন, উৎসাহিত করেছেন, দায়িত্ব নিয়ে খরচ পাতি সব জোগাড় করে ছেলেকে পশু চিকিৎসক বানিয়েছেন বটে । সুতরাং মা’কে এত সহযে হারানো যায় না । খুব তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে কাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ত্রী কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন । নিপীড়িতার কথা মনে হয়, খুব খুব বেশি করে কিন্তু মায়ের এই অসুখের সময়ে নিপীড়িতা আটকে রাখতে পারেনি তাকে । এন্ড্রয়েড মোবাইল নেই বলে নিপীড়িতার সঙ্গে কথা হয় না, কথা বলা সম্ভব হয়ে ঊঠে না তার । একদিন দুপুর বেলা একটা অচেনা নাম্বার থেকে ভিডিও কল এসেছিল, নিপীড়িতার মুখটা ভেসে উঠেছিল কয়েক সেকেন্ডের জন্য বটে কিন্তু হাসপাতালে ব্যস্ত থাকায় কথা বলা হয়ে উঠেনি । মাস দেড়েকের চিকিৎসা ভ্রমণ সেরে সুস্থ মা’কে নিয়ে যখন দেশে ফিরলো দীপেশ তখন আকাশে চাঁদ সূর্য সবই ছিল আগের মতো ছিল না শুধু তার বিগত মাস ছয়েকের জীবন বৃত্তের সঠিক ছন্দ । খবরটা রাতেই পেয়েছিল সে, দিন দশেক আগে স্বামী স্ত্রী এর ঝগড়ার পরিনামে নিপীড়িতা নিজের গায়ে আগুন দিয়েছে, বাঁচার কোনো আশা নেই মৃত্যুর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে সে হাসপাতালের বিশেষ শয্যায় । দীপেশ মনে মনে ঠিক করেছে আগামীকাল সকালেই হাসপাতালে যাবে সে । এখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে, নিপীড়িতা চিনতে পারবে তো, কথা বলবে কি ? যদি বলে, তবে কি বলবে সে !
-
কবিতা- সোপান
সোপান
-পরিতোষ ভৌমিক
এই সোপানে অনেক ভাষা
অনেক রং অনেক আশা,
গাছের ডালে পাখির বাসা
ইট পাথরের ভালবাসা ।
এই সোপানে পাহাড় নদী
মরু সাগর তরু জলধি,
জাতের বিচার কর যদি
হিন্দু মুসলিম বা ইহুদি ;
এক সারিতে দাঁড়িয়ে আজ
গোনছে পল নেই ইলাজ,
রাজার প্রচার রণসাজ
নেই শত্রু নেই কারুকাজ ।
চলছে মিছিল হাহাকার
অধম উত্তম একাকার,
বিবাদী ভীষণ অবিকার
জীর্ণ ধরা নেই প্রতিকার । -
কবিতা- আমার পৃথিবী
আমার পৃথিবী
-পরিতোষ ভৌমিক
দিনান্তে সূর্যের মতো লাল দেহে অর্ণবে অবগাহন
নিয়মিত আমার জীবনে রপ্ত ;
লাবনীর ছেঁড়া সিন্থেটিক শাড়িতে ঘেরা
সাঁঝের বিহঙ্গের মতো নীড় পরিচিত ,
দু এক ঘণ্টার নাগরদোলায়
সারাদিনের ক্লান্তির নিঃসরণ ,
আজ বড় স্মৃতি, নিবৃত নিয়ন্ত্রন ।
ছেঁড়া কাপড়ের দ্যূতিময় রঙীন আলোকে
বস্তির ঘরগুলোকে মনে হয় স্বর্গপুরী,
অভাবের তাড়নায় উর্বসী লাবনী
আমার সমাজে এখন ভয়ঙ্কর রাক্ষসী ।
পাখিদের নীড় আছে, চলছে অস্তোদয়
তবুও থেমে গেছে আমার পৃথিবী
সুমেরু – কুমেরু একসাথে রয় । -
অণু কবিতা- কেন?
কেন… ?
-পরিতোষ ভৌমিক
মা’গো তুর আঁচলখানি এত ছোট কেন
সত্যি করে বলবি কি মা চোখে পানি কেন !
বাঁশ বাগানের মাথার উপর শুধুই শুকনো রুটি
চাঁদ কেন যাচ্ছে ঢেকে “কাগজ পত্রে ত্রুটি” ।
আজ কেন মা মেঘে মেঘে শুধুই অ্যাসিড বিন্দু
ঈশাণ কোণে ভীষণ কালো , লড়াই বিশাল সিন্ধু ।
মানুষ কেন মরছে পুড়ছে, জ্বলছে রোশানলে
কাঁদছে মাতা হাসছে ত্রাতা , দেশটা রসাতলে ! -
গল্প- ওকি ধুনকর ভাই…
ওকি ধুনকর ভাইআই…
-পরিতোষ ভৌমিক
গত ক’বছর শীতের তেমন দাপট দেখা যায়নি। আসছি আসছি করে একটু আধটু আলতো ছোঁয়া গায়ে মাখিয়ে ডিসেম্বরেই টাটা বাই বাই বলেছে।কবে শীত এল আর কবে গেল এই বুঝতে বুঝতে দিন চলে গেল। গত বছরতো আমার খেজুরের রস খাওয়াও হল না, ভাগ্যিস গিন্নী একদিন চালের গুঁড়ির রুটি খাইয়েছিল। এবছর অবশ্য অন্য কথা। হেমন্তেই শীতের সুন্দর আবেশ মাখা পরশ পেয়ে গা ফুরফুরে হয়ে গেছে।
চারিদিকে গন্ধরাজ, মল্লিকা, কামিনী ফুলের গাঁয়ে ভোরের শিশির বিন্দু এবং তার উপড়ে সকালের সোনালী রোদের স্বর্নালী আভায় মন মাতিয়ে তোলে, ইচ্ছে করে পাতায় পাতায় কবিতা লিখতে। এ সময়ে বকফুলের বড়া পাতে না পরলে আমার জমে না। সেই সাথে নবান্নের ধান ভানার গান, তাল সব কিছুই আমাকে দোলা দেয়। আদিখ্যেতা মনে হলেও এটাই বাস্তব, আমি হেমন্তকে খুব বেশী ভালবাসি, এই হেমন্তকাল চিরদিন আমাকে হাতছানি দেয় তার অমোঘ মোহময়তায়। শীতের কথা বলতে বলতে হেমন্তের গুন গান অনেক হল এবার আসা যাক কাজের কথায়। বলছিলাম মাস দেড়েক আগের কথা, সেদিন সকালে পড়াতে গেছিলুম টুম্পাদের বাড়িতে। টুম্পার ছোট ভাই ভারি দুষ্ট কিন্তু পড়াশোনায় খুব ভাল, তাই আমাকে শুধু সামনে থেকে তাকে মনযোগী রাখতে হয়, এর বাইরে খাটাখাটুনি খুব একটা বেশী না ফলে আমি কিন্তু প্রায়ই অমনযোগী হয়ে পড়ি। সেদিন পড়াতে পড়াতে হঠাৎ বাইড়ে নজর গেলে দেখতে পাই, দু-জন ধুনকর সবে বিছানা পাতছে, তখনো টুং-টাং শুরু হয়নি, টুম্পা বাড়ান্দায় পিঁড়ি পেতে বসে আছে ।সামনে এক থালা পান্তা, পেঁয়াজ আর শুকনো লঙ্কা পুড়া। ধুনকর দু’জনের মধ্যে তাদের প্রচলিত বিহারী ভাষার কথা বার্তা বুঝতে না পারলেও এতটুকু আন্দাজ করতে পারলাম, তাদের সম্পর্কটা খেয়াল মশকরার সম্পর্ক, অন্তত বাপ-বেটা বা কাকা –ভাতিজার নয়।ধুনকররা তাদের স্বভাব সিদ্ধ ভাবেই লুঙ্গি মুরি দিয়ে বসে সামনে ছোট পাহাড়ের মতো এক স্তূপ তোলা নিয়ে টুং টাং তালে তুলো ধুনতে শুরু করেছে। ছোট ছেলেটার বয়স আনুমানিক কুড়ি একুশ হবে, তালে তালে চোখ তার উঠানামা করছে বাড়ান্দায় বসা টুম্পার থালে-গালে। দেখতে তেমন সুঠাম দেহের মালিক না হলেও বেশ হৃষ্ট পুষ্ট চেহারা, একগাল খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখের মধ্যে একটা বিরাট মায়া মায়া ভাব। বসার ভঙ্গিমায় একটা আভিজাত্য রয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পাশের সহকর্মীকে যে তার নিজস্ব ভাষায় রাজকীয় ভাবে আদেশ নির্দেশ করছে আবার একটা অন্যরকম ভাল লাগার কথার ঈঙ্গিত দিচ্ছে তা কিন্তু আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিলাম। আর বুঝতে পারছিলাম বলেই যেন আমার মনযোগ আরো বেড়ে গেল। হালকা শীতের আবেশ মাখা সুন্দর সকালের এই দৃশ্য আমি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিলাম। না আমি এর মধ্যে কোন দোষ দেখতে পাইনি। কেননা টুম্পা ষোড়শী, সুন্দরের বর্ণনা করলে টবে ফুটন্ত গাঁদা ফুল যেমন রূপের আলোর রোশনাই ছড়ায়, পান্তার সামনে বসা টুম্পার আনমনা চাহনি দেখে সে কথাই বার বার মনে পড়ছিল। প্রকৃতির কাছে আমরা প্রত্যেকে নত মস্তিষ্ক। না সেদিন আমি আর বেশীদূর এগোতে পারিনি, কেননা ততক্ষণে আমার বরাদ্দ সময় শেষ।
এ সময়ে ধুনকরদের প্রচুর আনাগোনা থাকে। আমাদের দেশে চিরাচরিত ভাবে বিহার রাজ্য থেকে এই সমস্ত ধুনকরেরা এসে বাসা বাঁধে, ঘর ভাড়া করে দল বেঁধে থাকে, রাতে হৈ হুল্লুর করে রান্না বান্না করে, হিন্দি বিহারী গান গায় আবার সকাল হলেই যে যার মতো বাইসাইকেলে ধুনা যন্ত্র বেঁধে বেরিয়ে পড়ে অলিতে গলিতে, ধুনা যন্ত্রে টং টং শব্দ করে হাঁক ছাড়ে, যে বাড়িতে ডাক পড়ে বিছানা পেতে বসে যায়। আধা বাংলার কথাগুলো শুনতে আমরা খুব মজা পাই, বেশীর ভাগ ধুনকর সরল সোজা প্রকৃতির হয়, আমাদের সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় চলে। দূর দেশ থেকে আসে বলে কি না জানিনা, এরা হীনমন্যতায় ভোগে, আমাদের সঙ্গে সামাজিক ভাবে কোনদিন সমান সাজুস্যে চলার কথা ভাবেও না। ওদের এই দূরত্ব আমাকে কাছে টানে, আমি প্রায়ই ওদের সঙ্গে ভাব করার চেষ্টা করি; বাইরে থেকে দু’একজনের সঙ্গে ঘনিষ্টতা তৈরী হলেও আন্তরিক ভাবে কতটা কাছে যেতে পেরেছি জানিনা। তবুও ওদের দেশের বাড়ির জীবন যাপন, কৃষ্টি, রীতি-নীতি ইত্যাদি জানার কৌতূহলী বলেই আমি জানতে পেরেছিলাম, সেদিনের টুম্পাদের বাড়ির উঠানে দেখা ছেলেটার নাম রোশন। রোশনদের বাড়ি বিহারের একেবারে বদ্ধ গাঁয়ে। রাজধানী পাটনা থেকে ওদের বাড়িতে যেতে প্রায় ছাপ্পান্ন ঘণ্টার জার্নি। বাড়িতে মা বাবা ছাড়াও একটা বিধবা বোন রয়েছে। বাবা একফালি জমি নিয়ে পড়ে থাকে, কাজের খোঁজে আর দশ জন গ্রামের মানুষের মতোই ছোট বোনের জামাইয়ের সাথে রাজ্যান্তরী হয়েছে সে। গত বছরও ছিল, এবার একটু আগে থেকেই চলে এসেছে। ভগ্নীপতির সাথে খুব সুন্দর সম্পর্ক। ছেলে হিসেবে রোশন খুব ভদ্র, গরীব ঘরের ছেলে অথচ কথা-বার্তায়, চাল চলনে সব সময়েই অন্য দশজন বিহারীদের থেকে সে আলাদা। চোখে বিরাট স্বপ্ন, খুব সুন্দর গানের গলা। আমরা রাতের বেলায় প্রায়ই যে গানের জলসা শুনি, বেশীর ভাগ গান রোশনের গলা থেকেই বেরোয়। মোবাইলে সারেগামাপা অনুষ্ঠান দেখে সেখানে অংশগ্রহণ করার কথা মাঝে মধ্যে বলে বৈকি এখনো সে সাহস যোগাড় করে উঠতে পারেনি। তবে একদিন সে সেখানে যাবেই, এটাই তার প্রতিজ্ঞা।
হেমন্তের প্রভাব শেষ, শীত জাঁকিয়ে বসেছে। চারিদিকে সকাল বিকেল রাতে অগ্নিস্তুপের চারপাশে অলস মানুষের ভিড়, কূয়াশার চাদরে ঢাকা সকাল বেলায় গাছের মধ্যে বাঁদরের মতো কোমরে কলসি বাঁধা লোক ঝুলে থাকে, নেমে এসে হাঁক পারে “রস খাবেন রস…খেজুরের রস”, দাওয়ার পাশে মাটির ঊনানে রমণীরা ঘোমটা মাথায় পিঠে বানায় সেই সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় ভাঙ্গা বাই সাইকেলের কড়কর আওয়াজের সাথে ধুনা যন্ত্রের টং টং তাল সঙ্গে চেনা সূর ,”লেপতোশক বনাইবেন………”। প্রতি দিনের মতো আজও এই চেনা সকালে আমি ছিলেম লেপের আড়ালে হঠাৎ করে একটা চিৎকার চ্যাঁচাম্যাচিতে ঘুম ভাঙ্গল, খেয়াল করে দেখলাম পশ্চিম দিকে অর্থাৎ টুম্পাদের বাড়ির দিকে। হৈচৈ ধীরে ধীরে বাড়ছে দেখে গাঁয়ে কম্বল জড়িয়েই এগিয়ে গেলাম, দূরত্ব একেবারে কম না হলেও গ্রামের রাস্তা তাই যেতে যেতে আরোও কয়েকজন সঙ্গী পেলাম এবং ঘটনার বিষয়ে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে একটা সংক্ষিপ্ত ধারনাও পেলাম । গন্তব্যে পৌঁছে যেটুকু আবিষ্কার করতে পাড়লাম তা হল, টুম্পাকে পরশু রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না । টুম্পার মা বাবা সহ পরিবারের ধারণা টুম্পা ধুনকর রোশনের সঙ্গেই পালিয়েছে তাই তারা এখন আজকে এদিকে আসা অন্য দুইজন ধুনকরকে আটকে রোশন সম্পর্কে জানতে চাইছে এবং এ নিয়ে দু-একজন অত্যুতসাহী যুবক ওদেরকে কিছু উত্তম মধ্যমও দিয়েছে । আমি এগিয়ে গিয়ে বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবে পরিষ্কার করার জন্য আটক দুই ধুনকরের কাছ থেকে প্রথমে রোশনের মোবাইল নাম্বার নিয়ে স্যুইচ অফ পেয়ে পরে রোশনের ভগ্নীপতির নাম্বার নিয়ে ফোন করে জানতে পাড়লাম, ঘটনা সত্যি। গত পরশু রোশন টুম্পাকে নিয়ে মোম্বাইএর উদ্দ্যেশে পাড়ি দিয়েছে। ভগ্নীপতি একথা জানতে পেরে ভয়ে গতকাল বাড়ির উদ্দ্যেশে ট্রেন ধরেছে। টুম্পার সাথে নাকি তার মায়ের অনেক স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।
তবে কি টুম্পা রোশনের স্বপ্ন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে এ কদিনে! আরো অনেক অনেক প্রশ্ন মনে জাগছে। স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কত মানুষ কত রকম ভাবে খাটে, রোশন কি সে স্বপ্নের কথা টুম্পাকে জানাতে পেরেছিল! টুম্পা কি রোশনের কন্ঠের জাদুতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিল! নাকি বয়সের রসায়নে নিছক প্রেমের গল্প ওদের দু’জনের জীবনে! অনেক প্রশ্নের জবাব হয়ত সময় দেবে, আগামীকালের সুর্যোদয় টুম্পা রোশনের জীবনের কোন দিক আলোকিত করবে এ ধারণা বহন করা দুঃসাধ্য তবে স্বপ্ন সুখের সন্ধানে দুই রাজ্যের দুটি পরিবারকে এক সুতোয় বেঁধে টুম্পা রোশন এখন যে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাড়ে ভালবাসার নির্জন দ্বীপে নিজেদের টেনে নিয়ে গেছে সেকথা বলাই বাহুল্য। তবে কি টুম্পা গত বছর থেকেই “ওকি গারিয়াল ভাই…” সুরে পথ চেয়ে ছিল রোশনের এ বছরের ফিরে আসার পন্থের পানে!
-
গল্প- প্রশান্তি
প্রশান্তি
-পরিতোষ ভৌমিক
শহরের বিকেল আমাদের গ্রামের মতো হয় না। শুধু লম্বা লম্বা ছায়া। ইট পাথরের গাঁয়ের গরম যেন গাঁয়ে লাগে। এমন হেমন্তে আমাদের গ্রামের মাঠের পাশে গেলেই একটা সোনালী পরত পড়ে চোখে। আমার ছোট ভাইটার জন্মের আগের দিন মাকে যেমন দেখেছিলেম, গর্বে ভরা অভিজাত চেহারায়; ঠিক তেমন লাগে ধান ক্ষেতগুলোকে। হৃদয় জুড়িয়ে যায়, বাতাসে দোল খেলে পাকা ধানের একটা ঝনঝন শব্দ কানে ভাসে। যেন কিষাণী মনের সুখে গাইছে আর রাতের আন্ধকারে জোনাকি পোকার মেলায় ধান সিদ্ধ করছে। সিদ্ধ ধানের একটা অন্যরকম গন্ধ আছে, যেন নেশা নেশা লাগে। কিন্তু শহরে এসব ভেবে লাভ নেই। আমি আর ত্রিদিব দু’জনেই এখন শহরের মানুষ। তবে এই নষ্টালজিয়ার জন্য সব সময়ই আমাকে অনুযোগ পেতে হয়। তবুও গ্রামের টান আমি ছাড়তে পারি না, আর পারি না বলেই এই সুন্দর বিকেলে যখন আমরা দু’জন আজকে আমাদের শত ব্যাস্ততার মধ্যেও একটু ছাড়া পেয়ে সন্ধ্যাটা গতানুগতিকতার বাইরে অন্য রকম ভাবে কাটানোর পরিকল্পনায় আমাদের অস্থায়ী হলেও বেশ কয়েক বছরের স্থায়ী ঠিকানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখন এই সব নষ্টালজিয়ার কথা যদি ত্রিদিব জানে তবে আর রক্ষে নেই। আজকের বেশীর ভাগ খরচের দায় দায়িত্ব সে নিজে নিয়েছে, যদিও দু’জনের কামাই রোজগার মোটামোটি একই রকম তবুও আমার অভাবটা একটু বেশী । কেননা অল্প বয়সেই বিয়ে শাদী করে একেবারে দুই সন্তানের পিতা আর ত্রিদিব ! এখনো স্বপ্ন দেখে, কলেজের হিমাগ্নীর মতো একটা মেয়ে না পেলে হয়তো তার জীবনে আর বিয়ে করে সংসার গড়ার স্বপ্ন পূরন হবে না । হিমাগ্নী আমাদের কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী, দেখতে মোটেই রূপসী ছিলনা কিন্তু গানের গলা ছিল অসাধারন , নিজের লেখা কবিতা নিজে আবৃত্তি করতো । সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম, অন্য আরো বেশ কিছু ছেলেদের মতো ত্রিদিবও তাকে ভালবাসত কিন্তু প্রস্তাবটা পাঠাতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল । যেদিন দেখা করে মনের কথা জানিয়েছিল তার আগের দিন হিমাগ্নীর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেছিল । সেকারনেই এখনো মাঝে মধ্যে এই অবসরের দিন গুলোতে যখন একটু বেশী খরচা পাতির কথা ভাবি তখনই ত্রিদিব নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দেয় । আজকেও দুজনে ইট পাথরের গরম হাওয়া ঠেলে যখন ঘড়ের দিকে যাচ্ছিলাম, আমি আমার অবচেতন মনেই পশ্চিমের লাল সূর্যটাকে খুঁজতে খুঁজতে একসময় যখন একটু পিছিয়ে পড়লাম, হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি ত্রিদিব একটি থামানো অভিজাত প্রাইভেট গাড়ির চালিকার সঙ্গে কথা বলছে । দু একবার না বলেছে, আমি আপনাকে চিনিনা’ এই কথাগুলোও আমার কানে পৌঁচেছে কিন্তু তার পরেও দেখলাম গাড়ির সামনের দড়জাটা খুলে একটা হাত ত্রিদিবের হাতে টান দিয়ে গাড়িতে তুলে নিল । আমি কিছু বলার সাহস বা ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না । কেননা যে হাতটা ত্রিদিবকে আহ্বান করছিল সে হাতটা আর দশটা সাধারন হাতের মতো নয় । যেন স্বপ্নের রাজকুমারীর হাত, সাদা রং দেখেই বুজা যায় এ বড় লাস্যময়ীর হাত । হাতের অলঙ্কারের বাহার দেখেই বুজা গেছে রাজরানীর মতোই তার পরিধান । এ কোন সন্ত্রাস বাদী বা ছিনতাইকারীর হাত হতে পারে না । আমি পা চালিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে গাড়ির কালো গ্লাস উঠে গেছে, ত্রিদিব হাত দিয়ে আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছিল আমি বুজতে পারিনি । আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম, সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হল, আমি আসছি বলতে বলতেই লাইনটা কেটে গেল, তার পরে স্যুইচ অফ । কিছু বুজে উঠতে পারলাম না একটা অজানা উৎকণ্ঠায় পথ চলতে শুরু করলাম । তবে নিজে নিজে এটুকু ধারনা করতে পারলাম কোন বিপদ নয়, দেখা যাক । না বেশীক্ষণ উৎকণ্ঠায় থাকতে হল না , পাঁচ সাত মিনিট পরেই ত্রিদিব আমায় ফোন করে জানিয়ে দিল, চিন্তা করার কিছু নেই ঘণ্টা খানেক পরেই ফিরে আসবে সে, আমি যেন ঘরে চলে যাই ।
চিলি চিকেনটা আমি ভালো বানাই বলে এই কাজটা আমাকেই করতে হয় সব সময় , তাই বেশী কিছু চিন্তা না করে বাজার থেকে আনা পণ্য সামগ্রীর যথাযথ ব্যাবহার করে চিলি চিকেন তৈরীর দিকে মন দিলাম, মাঝে মধ্যে একটু বিরক্তি আসছিল বটে আবার উৎকণ্ঠার ভাবটাও মাথাচারা দিচ্ছিল । এভাবেই দেখতে দেখতে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে বাবু এল , একে বারে হেলতে দুলতে, অবসন্ন একটা দেহ নিয়ে । যেন কোন রকমে দেহটাকে বিছানায় এনে রাখল । আমার শত সহস্র প্রশ্নের পরে, ত্রিদিব বিরক্তির স্বরে উত্তর দিল, তর সইছেনা কেন রা ! আমি তো এসে গেছি, তুই খেয়ে নে, আমার আর আজকে কিছু লাগবে না, যা পেয়েছি, খুব খুব, খাওয়া দাওয়া, সুখ আহ্লাদ, টাকা পয়সা যথেষ্ট যথেষ্ট । আমি ঘুমাই, একদম ডিষ্টার্ব করবি না । সকালে জাগতে দেরী হলে জাগাবি না, আমি হয়ত আর এই চাকরি করব না , করতে হবে না ।
আমি কিছু বুঝলাম, কিছু বুঝলাম না, কিন্তু আন্দাজ করতে পারলাম অনেক কিছু । শহরের অভিজ্ঞতা দিয়ে যতটা ঠাহর করতে পারলাম, তার পরে ত্রিদিবকে আর আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলাম না , নিজে নিজে রাতের খাবার সেরে বাড়িতে স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে আলাপ সেরে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে দিলাম, কেননা রাতের বেলা চার্জ ঠিক মত না হলে আগামীকালের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে । বিছানায় যেতে যেতে এক বার ত্রিদিবের মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম, উপড়ে ফ্যান চলছে, তবুও তার চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, চেহারার মধ্যে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও একটা মিষ্টি প্রশান্তির ছায়া যেন পরে আছে মুখটার উপর । আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । -
কবিতা- আমি বিস্মৃত বিলাশ
আমি বিস্মৃত বিলাশ
-পরিতোষ ভৌমিক
তটভূমির বালুচরে দেখেছ কি লম্বা ছায়!
আমি বিস্মৃত বিলাশ, তোমাকে রোজ দেখি
সুর্যোদয়ের মোহময়ী লাল আভাতে
দুপুরের তপ্ত রোদের আল্পনাতে
দেখি তোমায়, শেষ বিকেলে দিগন্তের নীলাঞ্জনেে।
স্মৃতিমেদুর তটরেখার বিস্তৃতে বিদুষী
কবিতার ক্যানভাসে মেঘেমাখা আকাশ আঁকে,
কূড়ানির ঝিনুকে মুক্তো থাকেনা শত সহস্র বছরের জঠরে
তটভূমির বালুচরে শুধুই লম্বা ছায়
সুতো নেই, রং নেই , বিবস্ত্র জোড়ার পাশাপাশি হাঁটা ।