-
কবিতা- বসন্ত বিলাপ
বসন্ত বিলাপ
-পাপিয়া ঘোষ সিংহকবিতার ছন্দ আজ পথভ্রষ্ট
গতিপথ হারিয়েছে শব্দতরঙ্গ।
ভালোলাগা,ভালোবাসা বনবাসে আজ
মাতৃ হারা অসহায় শাবক বিহঙ্গ।খুশি গুলো মুখঢেকে দূরে গেছে চলে,
হাসি গান কেড়েছে এ বিষম সময়,
কথাকলি কথা খোঁজে, রাতদিন ধরে
শূন্যতা এ জীবন জুড়ে ছেয়ে রয়।বসন্তবিলাপ করে, দেয় যেন শীতের কামড়
সুমিষ্ট কুহুতান হয়না তো কর্ণগোচর,
দূর থেকে ভেসে আসে বেহাগের সুর,
অশ্রুজলে ধুয়ে যায় কলম আঁচড়।সাগরের ঢেউ নিয়ে যায় বালি ঘর,
দৃষ্টি যায় যতদূর– অসীম শূন্যতা,
আর কি আসবে ফিরে, স্বর্ণালী ক্ষণ?
আর কি আসবে ফিরে স্নেহ-শীতলতা? -
কবিতা- ভুলের পাতা
ভুলের পাতা
পাপিয়া ঘোষ সিংহসাঁজের বেলায় মেঘ ভাঙা মন ভেজায় শরৎ
ভুলের পাতায় হচ্ছি জমা,শ্রাবণ আঁকা উদাস মন–
বলছে হেঁকে, বুঝিস না কি কমছে ক্রমে ভালোবাসা–
যায় না দেখা ওজন করে, অনুভবেই মনকে বোঝা।ভালোবাসা বোঝাই করা এ মন নিয়ে
নিজেই নিজের জীবন সাজা কান্না দিয়ে।
তোর জন্য ভুল যতসব,তোর জন্য উদাস ভরা-
প্রেমের কথা যায় উড়ে যায় ঐ সুদূরে-
তোর বরাতে নাই তো প্রেমের মিঠে-কড়া।উপহার আর উৎসবে জীবনতরী থাকবে ভ’রে –
এই দুরাশা’র মনের মাঝে জন্ম দিলি কেমন করে?
ভালোবেসে ভালোবাসা আঁকড়ে থাকা কঠিন বড়ো,
তোর কাছে যার মূল্য অসীম তার কাছে নয় তেমনতরো।হতেই পারে যাচ্ছে ভুলে, চায়ছে ভুলে থাকতে তোকে,
একইরকম ভালোবাসা থাকে বুঝি উভয়দিকে!
অদম্য এই মনকে আমি কেমন করে সারিয়ে তুলি!
সারাদিনই ভাবনা ছুটে চলছে মনের অলিগলি,দিনের শেষে হিসাব কষে যেই মেলাতে খুলছি খাতা,
অমনি স্মৃতির পাল্লা গুলো করছে ভারি চোখের পাতা।
আবার পুণ মুষিক হয়ে ভালোবাসায় আটকে থাকি,
ওখানেই যে বাঁচা-মরা, আর যে কিছু পাই না বাকি।। -
কবিতা- শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমেছিল
শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমেছিল
-পাপিয়া ঘোষ সিংহসেদিন শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমেছিল,একটা নতুন গল্পের থিম নিয়ে
ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে গেল আগমনের বার্তা পৌঁছে দিয়ে,
ব্যস্ত মেঘের ক্ষণিক বিরতিতে-ঝলকে দেখা সোনালী রোদের ছটা,
নতুন রঙে রঙিন হয়েছিল বৃষ্টিস্নাত গরবীনি গাছটা।পথের বাঁকে দাঁড়িয়েছিল মেয়ে অপেক্ষার অবসানের আশায়,
দোয়েল এসে গুনগুনিয়ে গেল হাজার বাতি’র আলোয় সাজলো হৃদয়।
বরষার মন কানায় কানায় ভরা,ডগমগো টলোটলো জলে,
রিমঝিমঝিম বাজছে অনর্গল,নীরবতা চলছে কথা বলে।এরই মাঝে বিদ্যুতের ছটা,চোখে লাগে আলোর ঝলকানি
নিমেষে সরিয়ে দিয়ে গেল,মেঘে ঢাকা আঁধার ঘোমটাখানি।
ঐ দূরে বাজছে নতুন সুর,মেঘমল্লার তুললো যে তার তান,
দ্রিমিদ্রিমি মৃদঙ্গের তালে উঠলো বেজে ভালোবাসার গান।। -
গল্প- কুয়াশা–২
কুয়াশা-২
পাপিয়া ঘোষ সিংহকয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পর আজ আকাশ পরিস্কার। সন্ধ্যা বেলা ছাদে পায়চারি করতে করতে হঠাৎই চাঁদের দিকে চোখ পড়তেই কত ভালোলাগা সাথে হাজার প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলো রুমেলার।
বছর দুই হলো রুমির বিয়ে হয়েছে। রোমান্টিক দীপনের সাথেই। অনেক মান-অভিমান টানাপোড়েন পেরিয়ে ভালোবাসা পরিণতি পেয়েছে। বিয়ের পর এক বছর ওদের কেমন স্বপ্নের মতো কেটেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে থেকে রাতভোর পর্যন্ত সবসময়ই যেন এক দুরন্ত প্রেম একটা বছর কিভাবে দাপিয়ে নিয়ে গেল। তারপর কেমন যেন ফিকে হতে থাকলো জীবনের রঙ। দীপন–দীপঙ্কর চ্যাটার্জি তার অফিসে প্রোমোশন পেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সারাক্ষণ কাজ আর কাজ,ভীষণ চাপ। এরপর যেটুকু সময় পায় তখন আত্মীয়-বন্ধু, কলিগ ও তাদের ফ্যামিলি ফোন আসা-যাওয়া এসব নিয়ে দীপনের রুমির জন্য সময় থাকে না। সারাদিনের সমস্ত সেরে রাতের বিছানায় ও দীপন ঘুমন্ত এক পাথর।
রুমি একটি কলেজে পড়ায়, সকাল থেকে তারও কাজ থাকে। দীপনকে অফিসের আগে ব্রেকফাস্ট দেওয়া, লাঞ্চ বানিয়ে প্যাক করে দেওয়া, দীপন বেরিয়ে গেলে নিজে স্নান-খাওয়া সেরে কলেজে যাওয়া। রুমি প্রতিদিনই দীপনের পরে বেরিয়ে আগে বাড়ি ফেরে। যদিও কাজ অনুসারে এটাই স্বাভাবিক। রুমিও সংসার, কলেজ,সোশ্যাল ওয়ার্ক, বাগান করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তবুও দীপনের কাজের ব্যস্ততা য় দূরে সরে যাওয়া যেন ক্রমশ রুমিকে একা করে দিচ্ছে। এত কাজেও যেন রুমির দিন কাটতে চায়না।
চাঁদের দিকে তাকায় রুমি, মনে পড়ে কত পুরোনো কথা। এই চাঁদকেই তো দীপন রুমির রূপের প্রতিচ্ছবি বলতো। কত প্রতিশ্রুতি ছিল দীপনের! রুমি আমরা কখনও বুড়ো হবো না, রুমি আমরা সারাজীবন একসাথে চাঁদ দেখবো। আকাশে মেঘ চাঁদের লুকোচুরি খেলায় আমরা দুজন রূপকথার দেশে পারি দেবো।আমি তোমার আকাশ,আর আমার বুকে তুমি আমার চাঁদ রুমি।
আজ আকাশের বুকে চাঁদকে দেখে রুমির মনে হলো এদের তো চিরন্তন সম্পর্ক। মানুষের সম্পর্ক কেন এত আপেক্ষিক? দীপন এখনো ফেরেনি, আজ কি দীপন আমার সঙ্গে চাঁদ দেখবে?
কলিং বেলের শব্দে নীচে তাকায় রুমি। ঐ তো দীপন এসেছে। ছুটে নীচে নেমে আসে রুমি। দীপনের, হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ঘরে রেখে আসে,তারপর চা নিয়ে দীপনের কাছে গিয়ে বলে দীপন একবার ছাদে যাবে? দীপন একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন করতে করতে অন্য ঘরে চলে যায়। মনে কুয়াশা ঘন হয়ে আসে রুমেলার। দীপনের ব্যবহার পাল্টে যাওয়ার কারণ কি শুধু কর্মব্যস্ততা?না কি অন্য কিছু? কি করবে রুমি!কুয়াশার আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে। সামনের পথ বড়োই অস্পষ্ট।
-
কবিতা- উদ্বাস্তু
উদ্বাস্তু
-পাপিয়া ঘোষ সিনহা
আমি একটা ভালোবাসার ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম,
যতবার ভালোবাসার জমাট বুনটে একটি নীড় গড়েছি,
ততবার ঠিক ঈশাণ কোনে অশনিসংকেত দেখা গেছে।যখন প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া বাতাসের স্পর্শে- তোমার বন্য প্রেম অনুভব করতে চেয়েছি,
ঠিক তখনই এক প্রলয় এসে আমার নীড়
ভেঙে দিয়ে চলে গেছে।আমার হৃদয়ে উষ্ণতা টিকিয়ে রাখতে যতবার তোমার স্পর্শ চেয়েছি,
ঠিক ততবার উদাসীনতা র কালোমেঘ বজ্রপাত হেনেছে।বিদ্যুতের ঝলকে যতবার আমি রোমঞ্চিত হতে চেয়েছি,
ততবার এক অযাচিত মৃত্যু সংবাদ আমার হৃদয়কে দীর্ণ করেছে।ভালোবাসার রাজপ্রসাদ তো দূর, একফালি ঝুল বারন্দাও গড়ে উঠলো না।
উদ্বাস্তু মানুষদের ঘর বাঁধতে নেই,
ঘর বাঁধলে আটকা পড়ে, পরিযায়ী মন ছুটে চলে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।পা ও মনের সাযুয্য থাকে না,
চলমান জীবন হঠাৎ থেমে যায়,
গতিবেগ ভারসাম্য হারায়।
ভালোবাসা তবুও আছে,থাকে, থাকবে। -
কবিতা- ভালোবাসা দিবসে
ভালোবাসা দিবসে
-পাপিয়া ঘোষ সিংহভালোবাসা কিভাবে হয় নিয়ম কারও নেই তো জানা,
দুটি মনের মিলন হলে কোনো বাধায় আর মানে না।
বসন্ত তো আসবেই তার উজার প্রেমের ডালি নিয়ে
দুটি প্রেমীর মনের ভেতর প্রবেশে সে যায় রাঙিয়ে।তোমার-আমার ভালোবাসায় ফাগুন হাওয়ায় লাগবে মাতন,
তোমার-আমার চোখের চাওয়ায় পলাশ ফুলে প্রেমের নাচন।হৃদগগনে আলোর জোয়ার, সাঁঝের তারার ঝিকিমিকি,
চাঁদ জোছনা শরীর বেয়ে , ঝিলের জলে দেয় যে উঁকি।ভালোবাসা বয়স মানে?
ঈর্ষাকাতর চোখ এড়িয়ে ডিঙিয়ে যাওয়া বাধার প্রাচীর,
চোখে চোখে কত কথা,পেরিয়ে সীমা এই পৃথিবীর।দিবারাত্রি গল্পকথন, আশ মেটে না তোমায় দেখে,
সব ব্যাথাটা য় জুড়িয়ে যাবে ঐ দুচোখে এ চোখ রেখে।থাকবে আড়াল, থাকবে বাধা, থাকবে অনেক কূটকাচালি,
তবুও তুমি শুধুই আমার রোজ যে কথা তোমায় বলি।এক পৃথিবী ভালোবাসা, এর তো কোনো হয় না দিবস,
প্রতিপলে আমার তুমি এইখানেতে নয় তো আপোষ। -
গল্প- কুয়াশা
কুয়াশা
-পাপিয়া ঘোষ সিংহসকালে উঠে বাইরের দিকে তাকায় রুমেলা। চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। এরপর বিছানা ছেড়ে আয়নার কাছে এসে দাঁড়ায় রুমি, চোখ গুলো খুব ফুলেছে তার। আসলে গতরাতে সে ঘুমোতে ই পারেনি। মাথার মধ্যে একটা কথায় ঘুরছে, কি এমন বলেছিল রুমি, যে দীপন ওরকম করে খেঁকিয়ে উঠলো??
রুমেলা মিত্র, ইউনিভার্সিটির বাংলা এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, ছোট থেকেই রুমেলা খুব শান্ত,ধীর স্বভাবের। সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করার জন্য তাকে ভালোবাসে সবাই। বাবা-মায়ের আদরের রুমি জীবনে কখনও কোনো আঘাত পায়নি। বেশ আদরে, আবদারে দিন কাটতো তার,খুব রিজার্ভ হ’লেও রুমেলার বন্ধুর অভাব ছিল না। তবে একটু অন্য ইঙ্গিত পেলেই রুমেলা সেই সব ছেলে বন্ধুদের থেকে দূরেই থাকতো।
হঠাৎ সেদিন কি হলো?? রুমি মনে মনে ফিরে গেল বছর পাঁচেক আগের সেই দিনে। খুব ঠান্ডা, রুমি তখন টিউশন থেকে ফিরছিল।একে শীতকাল,তাইতে আবার টিপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তায় পাশে চায়ের দোকানটায় দাঁড়ালো। সাইকেলে এই রাস্তায় রুমি রোজই যায়, এই দোকানে একদল ছেলেদের আড্ডা দেওয়া দেখতে পায়। তবে আজ সেই দল নেই। আছে একজন। এগিয়ে এসে রুমিকে প্রশ্ন- আমরা একে অপরকে চিনি?? রুমি বলে হ্যাঁ দেখেছি তো। তবে সেভাবে চেনা জানা হয়নি। অপরজন আবার বললো বন্ধু হ’তে পারি? এই বলে এক কাপ কফি এগিয়ে দিয়ে সে বললো তুমি খুব ভালো কবিতা বলো। রুমি র মুখে লাজুক হাসি। তারপর সে বললো আমি দীপন, দীপঙ্কর চ্যাটার্জি, বি-টেক ফাইনাল ইয়ার। রুমি বললো আচ্ছা। দীপন কথা বলতেই থাকে। সুন্দর, সাবলীল, আন্তরিক কথা বলা রুমিকে কেমন মোহিত করে দেয়। বৃষ্টি থেমেছে, সময় অনেক পেরিয়ে গেছে, রুমি ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়ে। রুমিকে উঠতে দেখেই দীপন বলে এখনই চলে যাচ্ছো? আবার কবে দেখা হবে?? রুমি হাসে, বলে অনেক দেরি হয়ে গেছে, দেখা প্রায়ই তো হয় আসতে-যেতে। এবার দীপন এগিয়ে এসে বলে রুমেলা আমরা আলাদা দেখা করতে পারি না?? রুমেলা চুপ করে যায়। কিছু না বলেই বেরিয়ে আসে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে আসার পর থেকেই রুমেলার কানে একটাই কথা প্রতিধ্বনিত হতে থাকে-“আমরা আলাদা দেখা করতে পারি না”? দীপঙ্কর চ্যাটার্জি হ্যান্ডসাম, কর্মদ্যোগী, ছটফটে, অদ্ভুতভাবে কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। রুমি অনেক মেয়ের কাছে দীপনের নাম শুনেছে। কেউ বলে আমাদের দীপনদা এরকম, তো কেউ বলে দীপন তো আমার খুব ভালো বন্ধু। অত্যন্ত মেধাবী, সু-বক্তা ছাত্রনেতা দীপঙ্কর চ্যাটার্জি যে এভাবে রুমেলার বন্ধুত্ব চায়বে সেটা রুমেলা কখনও ভাবেই নি। সেই ডাক তার কানে বাজছে,কেমন করে ফেরাবে সে?
না ফেরানোর ক্ষমতা রুমির নেই, শুরু হলো তাদের আলাদা দেখা করা, কথা বলা, প্রেম-ভালোবাসা। রুমি হায়ার সেকেন্ডারি, কলেজ পেরিয়ে আজ ইউনিভার্সিটিতে। দীপন বি-টেক,এম-টেক করে বড়ো কোম্পানির অফিসার, জীবন পাল্টেছে,শহর পাল্টেছে, তবুও তাদের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দু’জনে দু’জনকেই খুব ভালোবাসে। রুমির মাস্টার্স কমপ্লিট হলেই দু’জনের বিয়ে হবে।
সম্পর্কের গভীরতা অধিকারের জন্ম দেয়।রুমির প্রতি দীপনের অধিকার রুমি সবসময়ই সাদরে মেনে নেয়। কিন্তু রুমি যদি কোনসময় দীপনকে অধিকার নিয়ে কিছু বলে দীপন মেনে তো নেয় না উপরন্তু রেগে যায়। কথা বন্ধ করে দেয়। দীপনকে ছেড়ে থাকতে পারে না বলে রুমি নিজেই মানিয়ে নেয়।এভাবে চলছে আজ একবছর। রুমির মনে কিছু প্রশ্ন জমা হয়। প্রশ্নহীন আনুগত্য কি ভালোবাসা? কেন এমন হচ্ছে মাঝে মাঝে? কেন দীপন ভুল বুঝছে রুমিকে? আগের দীপন তার রুমির কাছে কবে ফিরবে কুয়াশা কাটিয়ে ? মনের জমাট বাঁধা প্রশ্ন আজ প্রাক বরষার মেঘে পরিণত। রুমির মন চায়ছে বৃষ্টি নামুক। ধুয়ে দিক দুজনের মনের সমস্ত জটিলতার কালো। রুমি কে বুঝতে পারবে দীপন,অবশ্যই পারবে। রুমির ভালোবাসা তার দীপনকে ঠিক কুয়াশার চাদর থেকে বের করে আনবে ঝলমলে রোদ্দুরে।
-
কবিতা- তোমার আমি
তোমার আমি
-পাপিয়া ঘোষ সিংহহয়তো আমি একটু বেশিই অভিমানী,
হয়তো আমার অনেক ত্রুটি কথা বলায়,
অনেক কথা মনের মাঝে সাজিয়ে চলি,
বলার সময় ঠিক গুছিয়ে যায় না বলা।হয়তো আমার ভালোবাসা ভীষণ বেশি,
রঙ ও তুলির আঁচড় নেই ছিটেফোঁটা,
তোমার প্রতি যা কিছু সব নিখাদ-খাঁটি
আমার চাওয়া আবেগ যত সাদামাটা।তোমার কাছে সব দিয়েছি উজাড় করে,
কোনকিছু আড়াল টানা নেই তো আমার
হাজার কাজের ব্যস্ততাকে ঠেলে দূরে
ইচ্ছে যে হয়- সারাদিনই তোমায় দেখার।জানি তোমার ব্যস্ত জীবন, কাজের মাঝে,
দিনের শেষে একটু যখন মিলবে সময়,
হিসাব খাতা মিলিয়ে দেখো সামনে রেখে
উঠবে ভেসে একটি ছবি চোখের পাতায়।হাজার একটা বাহানা যতই দাও না আমায়,
মনের মাঝে থাকবো আমি সারাজীবন,
কখনও যদি আঘাত করো আমায় তুমি-
দ্বিগুণ ব্যাথায় ভরবে জানি তোমার ও মন।তোমার আমি তোমার কাছে অগোছালো,
নাই তো তাতে জটিলতার চক্রব্যুহ,
পাপড়ি মেলে সদ্য ফোটা গোলাপ হয়ে,
বৃন্তে তোমার করবে বিরাজ আমার দেহ।কখনও যদি বিষের ছোবল ধেয়ে আসে,
তুফানে হয় দুই জীবনের ছন্দপতন,
অশুভকে চার হাতেতে দূরে ঠেলে
নতুন বাসা তুলবো গড়ে আমরা দু’জন।আমরা দু’জন গল্প হবো সবার মুখে,
যুগে যুগে ভালোবাসার এই যে কথা-
বলবে একে অপরকে তা পরম সুখে,
রচবে নতুন হৃদয় দানের গল্প গাথা। -
কবিতা- খোলা জানলা
খোলা জানলা
-পাপিয়া ঘোষ সিংহদক্ষিণের জানলাটা উন্মুক্ত রেখেছিলাম
বসন্ত তোমার আগমনের অপেক্ষায়,
শীতের কুয়াশায় ধূসর শরীর ও মন-
ক্লান্ত ছিল অশীতিপর জড়তায়।একদিন যৌবনের প্রারম্ভে বসন্ত কড়া নেড়েছিল,
বন্ধ দ্বারে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ফিরে গেছে সে,
অভিমানে দিয়েছিল শুকনো ধূধূ বালিয়াড়ি।
একরাশ অভিযোগে আজ হয়েছে বুঝি আড়ি!ভরা ভাদরে বাদলও আজ যেন বৃষ্টিহীন,
বিরহ জ্বালায় জ্বলছে গাছগাছালি,
নদী- পুকুর কেউ বাকি নেই,
সবাই শুধু অভিমানে একাকিত্বে দিশাহীন।আমি একদৃষ্টে, খোলা জানলায় চোখ রেখে
দেখতে চেয়েছিলাম ফুলে-ফলে শোভিত চারিদিক,
বসন্তের মিঠেল স্পর্শে পল্লবিত হ’য়ে,
ভ্রমরের গুঞ্জনে পুলকিত হ’তে চেয়ে
আজও তোমার অপেক্ষায়।আজ উন্মুক্ত জানলা দিয়ে উড়ে এলো
খড়কুটো, রাশি রাশি বালি, কাঁকড় ধূলো,
তুমি এলে না, রাতে বিরহী জোছনায়
চোখের জল রোজ বালিশ ভেজায়।
তবুও দু’চোখ আটকে থাকে খোলা জানলায়। -
কবিতা- চাঁদমালা
চাঁদমালা
-পাপিয়া ঘোষ সিংহআঁধার কালো হলো চারিধার
শূন্য যে পথ, যতদূরে চায়,
একলা বসে শুনছি মেঘের ডাক
কান্না গুলো শ্রাবণ হয়ে যায়।হাতড়ে মরি হারিয়ে যাওয়া ক্ষণ,
সেই গোধূলি, সেই যে মেঠো পথ,
বন্ধু-স্বজন, গাছপালা আর পাখি
চলতো ছুটে কিশোর মনোরথ।পড়ছে মনে অতীত দিনের স্মৃতি,
বৃষ্টি ভেজা শাড়ীর আলিঙ্গনে
এলো চুলে তড়িৎ পরশ মেখে
বর্ষা প্রেমের ঢেউ উঠতো মনে।শরতের আজ বড়ই অভিমান
জায়গা দখল করছে বাদল এসে,
আসবে এবার তার শারদীয়া
যাক না বাদল ঐ আকাশে মিশে।বাইরে- মনে ঝরছে অবিরাম
ঝরার বুঝি শেষ হবে না আজ,
একলা এ মন শুধুই খুঁজে ফেরে,
ঐ বুঝি সে এলো ফেলে কাজ।অপেক্ষার শেষ হয় না জানি
তবুও অবুঝ আজকে সাঁঝবেলা,
আসবে তুমি মেঘ সরিয়ে দিয়ে-
সাথে নিয়ে খুশির চাঁদমালা।