-
কবিতা- সুগন্ধিত ভালোবাসা
সুগন্ধিত ভালোবাসা
-পায়েল সাহুতার চোখ হাসে, হাসে তার চাহনি
এক অপরূপ ভালোলাগা ছুঁয়ে যায়,
ফিরিয়ে দেওয়া হাসিতে তার মন গলে কিনা জানা নেই;
তবু চোখ থাকে তার আসা যাওয়ার পথে
ইতি উতি খোঁজে পলকের আড়াল হলেই,
চাওয়া-পাওয়া নেই, স্পর্শসুখের আবদার নেই,
মধ্যবয়সী প্রেমে অনুভূত হয় ষোড়শীর লাজুক অনুভূতি।
ভালোবাসার বয়স নেই, ভালোবাসায় জাত ধর্ম নেই
ভালোবাসায় কুল-মান নেই,
আছে শুধু আড়চোখে পলকে ছুঁয়ে যাওয়া,
আছে শুধু ইলশে-গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ভালোলাগা,
আছে দৃশ্য সুখের এক অপূর্ব মুগ্ধতা,
আর আছে বাক চতুর দুই প্রেমীর কথা হারানোর কাহিনী,
আছে শুধু চোখে চোখে হাসি বিনিময়ে হাজার না ফুরোনো কথার নির্ঝরিণী।
এ ভালোলাগা ভালোবাসা হবে কিনা জানা নেই
ভালোবাসায় প্রেম কতখানি জানা নেই
আছে শুধু চোখের দৃশ্যমানতায় থাকার আনন্দ
আছে শুধু সে আনন্দে ভেসে যাওয়ার সুগন্ধ।
যে সুগন্ধ পবিত্র করে মন,
যে সুগন্ধে কেবল দেবতার বাস
সে সুগন্ধে ভেসে চলে মন আবার দেখা হওয়ার উজানে। -
কবিতা- বাঁচার ভাবনা
বাঁচার ভাবনা
-পায়েল সাহুএকলা আকাশ, একলা বাঁচা, একলা মনের কোণ,
সব ছেড়ে চল আজ ভাসি রে শ্রান্ত হোক দু’নয়ন।
দড়ি-দড়া সব খুলে আজ দেবো পাড়ি অথৈ সাগরে,
নোনা জলের পাহাড় চড়ে পৌঁছবো ওই মেঘ-মিনারে।
দূর পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়,
আঁকবো ছবি সাত রঙের ধারায়
প্রাণ খুলে চল আজ বাঁচি রে,
কাল যদি না থাকি আর নতুন দিনের রাত্রি ভোরে।
নিঃসীম নীল আকাশখানা, ওকে নাকি ছুঁতে মানা!
শুনবো না তো কিছুই সে সব,
প্রাণ খুলে চল বাঁচবো এবার মন্দ ভালোর জীবনখানা। -
কবিতা- আরও একবার
আরও একবার
– পায়েল সাহুআরও একটা দিনযাপন, নিখুঁত ব্যস্ততায় সাজানো,
আরও একবার ইচ্ছেগুলোর অপমৃত্যু
নকশা কাটা দেওয়ালের পাঁজরে।
আরো একবার বাঁচতে চেয়েও
তলিয়ে যাওয়া সংসারের যাঁতাকলে,
আরও একবার সূর্য ওঠা দেখেও
দীর্ঘশ্বাস প্রসব অন্তরের অন্তস্থলে।
আরও একবার সহবাস দীর্ঘশ্বাসের বন্দরে
আরও একটা কাটা দাগ অপেক্ষার অন্দরে,
নেশাতুর আবেশে ভুলতে চাওয়া জীবন্মৃতের সংজ্ঞা;
বাঁচতে চাওয়ার দুর্লভ আশায় ধীর স্থিতধী প্রজ্ঞা
জানান দেয় নিভে যাওয়ার আগে জ্বলে ওঠার অসীম আবেগ,
নিঃসীম শূন্য জড়িয়ে ধরা প্রাণবায়ু তবু দেয়
সহস্র ক্ষত নিরাময়ের আশ্বাস,
আরও একবার দৃশ্যত হয় খাদের কিনারায় দাঁড়ানো মনের উষ্ণ প্রস্রবনের তুমুল উচ্ছ্বাস। -
কবিতা- তোমায় ছোঁয়া ভাবনা
তোমায় ছোঁয়া ভাবনা
-পায়েল সাহুহারিয়ে যাওয়া জলগোলাপের স্মৃতির পাতা আঁকড়ে থাকি,
নিঝুম রাত বা মেঘ সাজানো বিকেল বেলায় একলা হয়ে একটু ডাকি,
ভালোলাগার বিবসতায় মলিন মুখেও রক্তিম সাজ হাসি মাখি,
ঝুল পড়া সেই স্মৃতির দালান অল্প হলেও আগলে রাখি।অবাক হওয়া সেসব দিনে ভালোবাসার বন্য চুমে,
দিন বা রাতের স্বপ্ন কিনে সাজতো প্রহর তোমার নামে।
গর্বিত সেসব মুহূর্তগুলো আঁকতো স্বপন রোজ নিলামে,
ফিরিয়ে নিলো সবটুকু তার মৃত্যু নামক চড়া দামে।চাইনা আর সেসব দিনের পাগলামি আর প্রেমের ফাঁকি,
স্মৃতির পাতা উল্টে নিয়ে আজকাল বেশ ভালোই থাকি,
নিশ্চুপ আজ মনের দেওয়াল ভুলেছে যত আঁকি বুকি,
পড়লে মনে তোমায় আবার এক চিলতে হাসি ঠোঁটে আঁকি।জলগোলাপের শুদ্ধ রঙে জীবন আজও চলছে প্রেমে,
শুভ্রতার ছোঁয়া লাগা সুদীর্ঘ এক মৌন মিছিল তোমার নামে,
নাইবা হলো পূর্ণ কলস ‘তোমার ছোঁয়া ভাবনা’ নামে,
অজুহাতের মুক্তি আসুক ভরা বরষার গোলাপী খামে। -
অণু কবিতা- ক্লান্ত মনন
ক্লান্ত মনন
-পায়েল সাহুবিনিদ্র শীতল রাতের নেশাতুর প্রশ্রয়ে,
জেগে থাকি বিচ্ছেদের গান শোনার লোভে ,
সে সুর সাধনার তীব্র দমকে,
সঙ্গী হয় উপচে পড়া চোখের জলের রেওয়াজ ।
প্রেমের অস্তিত্বের অবান্তর প্রশ্ন
আর ধিকৃত অন্তরাত্মা রেখে যায় ,
ধূমকেতু পতনের সুগভীর গর্ত
সমস্ত মনে ,প্রাণে ,অস্তিত্বে । -
কবিতা- আঁধারের আড়ালে
আঁধারের আড়ালে
–পায়েল সাহুরাত গভীরে শীতল বাতাস শান্তির অঙ্গীকারে
ভরসা জোগায় নিশীথ রাতের অকৃপণ বাহুডোরে।
আঁধার রাতের দুটি রূপে অবাক পৃথিবী হায়!
গহীন রাতের চন্দ্রমা কেবল অসহায় চেয়ে রয়।
রাতের আঁধার ভরসা করে নিষিদ্ধ-নগরী জাগে
চলে কতো নারীপাচার, নির্লজ্জ্বতার হিসেব কে রাখে।
চাঁদের আলো সাক্ষী থাকে শীতল রাতের নিজস্বতায়,
সেই আলোই লজ্জিত হয় নিশীথনগরীর উদ্দামতায়
মাদক সেবন তুচ্ছ তখন, ছোটে রঙিন পানীয়র তুফান,
শরীর বিলাসে মত্ত হয়ে চলে বিকৃত রুচির নিলাম।
বদলা নেওয়ার প্রতিহিংসায় প্রাণের দাম কষে মধ্যযাম
রক্তাক্ত শরীরের উপহারে বাড়ে নিত্যকারের খবরের দাম।
যে ছেলেটার বাবার স্বপ্ন ছেলের বড়ো মানুষ হওয়ার
আধপেটা খেয়ে মন ভরে যায় সুখের দিনের আনন্দ আশায়
ধর্মের জাল জড়িয়ে দেখো সেই ঘুঁটি হয় রাজনীতির,
গরীব বাবার চোখের আঁধার জন্ম দেয় সহস্র কূটনীতির।
যে মেয়েটা ভরসা হয়ে সংসারে তার অন্ন যোগায়
সেই মেয়েটাই ধর্ষিতা হয়ে মৃত্যু কামনায় দিন কাটায়।
রাতের আঁধার জন্ম দেয় সুস্থ মনের বিচার সভার
সেই নিশীথেরই গোপন ঘরে কুলুপ আঁটে স্বেচ্ছাচার। -
কবিতা- একলা দেশ
একলা দেশ
-পায়েল সাহুরাত গভীর বৃষ্টি নামলে চাতকেরা কি সে গান শোনে?
মনের খামে জমে থাকা সব ভালোবাসারা বুঝি দিন গোনে?
নিশুতি রাতের গোপন আড়ালে মনেরা কি খোলস ছাড়ে?
রক্তস্নাত সাদা গোলাপের পাপড়িরা কি অকারণেই কোলাহল করে?চৈতি হাওয়ায় ওড়া শুকনো পাতার সাধ যায় কি আঁকড়ে ধরার?
কালবৈশাখী কি ক্ষমতা রাখে সুখের ঘরের মন ওড়াবার?
সাঁঝের বেলা ফিরতি পথে দলছুট পাখি বাঁচে কি স্বাধীন জীবন?
বেনামী যত ভালবাসারা বয়ে বেড়ায় দুর্নামের গুপ্তধন?অসীম আকাশ নীলচে কালোয় জন্ম দেয় তারার রাজার,
বিস্ময়ে মন আকুল হয়ে হাতড়ে বেড়ায় নীরব প্রাণের অন্ধকার।
পালতোলা কিছু দুঃখরাশি বয়ে চলে চোখের জলের নদীর ধারায়
এলোকেশী এক রাত্রি এসে আশ্রয় হয় লুকিয়ে থাকার।পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব ছেড়ে ভাবনারা সব গভীর ঘুমে,
পুড়ছে শুধু তপ্ত মন আর কন্ঠনালীর গিলতে চাওয়া দুঃখগুলো বিনাশ্রমে
দিনের আলোর শেষের আঁধার জন্ম দেয় একলা দেশের
আঁধার ঘরে অপেক্ষা আবার উদাসী হাওয়ার গল্প শেষের। -
কবিতা- জীবনের দলিল
জীবনের দলিল
-পায়েল সাহুমনের এখন নিঃস্ব যাপন,শুন্যতায় বাস;
অঢেল কাজের মধ্যে ফাঁকির দীর্ঘশ্বাস।
চেনা মুখের ভিড়ের মাঝেও নিখোঁজ বিশ্বাস
নিঃস্পৃহ চোখের তারায় কেবল জমে অবিশ্বাস।নিত্যদিনের অবসরে উঁকিঝুঁকি প্রিয় মুখের
শিউরে ওঠা বুকের মাঝে অপমানের পাথর
ঠিক ভুলের বিচার সভায় চোখের জলের আখর
দীর্ঘ জীবন শুন্য হয়েও ভালোলাগার বাসর। -
কবিতা- অপেক্ষা
অপেক্ষা
-পায়েল সাহুবৃষ্টি ভেজা বাতাসে ভাসে কারো নিঃশব্দ নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ,
বহু বছরের অভ্যাসের ভালোলাগা উষ্ণতার টান,
আজও ছুঁয়ে আছে শরীরে-মনের সবখানে, সব ভাঁজে…
আজও বৃষ্টি স্নাত বাতাস এলোমেলো হয় সবটুকু অনুভবের খোঁজে।সেদিনের সে আলিঙ্গনের পরশ, ফিকে হচ্ছে ক্রমশ
বন্ধ চোখের সে শিহরণ আজ আর করে না শরীর বিবশ,
তবু ভালোলাগার সে স্মৃতি আজও উজ্জ্বল মনের স্মৃতিচারণে,
মনের শূন্য কোণে তারই অপেক্ষা হাজার মুখের ভিড়েও সজল নয়নে।সময়ের প্রলেপে সব হারানোর ক্ষত আজ নিরাময়,
তবু সে আজও খোঁজে আদুরে সে প্রশ্রয়। -
কবিতা- চাইবো আবার
চাইবো আবার
-পায়েল সাহুচাইবো আবার তোমায় আমার মনের আঙিনায়
চাইবো আবার তোমায় আমি পদ্মফুলের বিছানায়,
চাইবো আবার দেখা হোক কোনো নির্জন মোহনায়,
ভাসবো আবার নতুন করে আদরে সোহাগে দুজনায়।চাইবো আবার মুগ্ধ হতে মধ্যরাতের সেই আসরে
চাইবো আবার আনকোরা সেই অভিজ্ঞতা প্রাণভরে,
চাইবো আবার নতুন হতে আলাপ হওয়ার নতুন ভোরে,
ভাসবো আবার আদুরে ছোঁয়ার গোপন সুখের নদীতীরে।চাইবো আবার আমার করে নবজন্মের এক সকালে
চাইবো আবার পুরনো সেতার বাজবে একই সুরে-তালে,
চাইবো আবার তোমায় আমার বুকের খাঁজের গোপন তিলে,
ভাসবো আবার তোমায় নিয়েই ঝগড়া ঝাঁটি সব ভুলে।