• কবিতা

    কবিতা- শেষ ঠিকানা

    শেষ ঠিকানা
    – পায়েল সাহু

     

     

    তুই আমার অথৈ সাগর
    চাঁদের হাসি মাখা,
    তোর গোপন সিন্দুকে আমার
    জিয়ন কাঠি রাখা।

    তোর আদরে খুশির তুফান
    সুনামি বুকের তলে,
    তোকে নিয়েই বাঁচার আশায়
    প্রাণভ্রমরা শ্বাস ফেলে।

    তুই আমার শেষ ঠিকানা
    অলিখিত চুক্তির ভাঁজে
    তোর পরশে শিহরিত মন
    বুকের গভীর খোঁজে।

    তোর জন্যই সবটুকু প্রেম
    অভ্যাস বা অবকাশে
    তোর চোখের ঐ চাউনিতে
    আমার ভুবন হাসে।

  • কবিতা

    কবিতা- খোলা চিঠি

    খোলা চিঠি
    – পায়েল সাহু

     

     

    তোমার শরীরের গন্ধ লেগে আছে আমার গায়
    আদরে আবদারে ভালবাসার সেই সে দিনের অবেলায়
    চরম সুখের আনন্দ ম্লান তোমার আবেগী পরশে
    আকুল নয়নে নয়ন মিলেছিলো অভিনব সুখের আশ্বাসে
    পূর্ণ আমি, সিক্ত আমি ভালবাসার ছোঁয়াচে জ্বরে
    হার মেনেছি তোমার হৃদয়ের আকুল প্রেমের জোয়ারে
    হৃদয় পদ্মের মালাখানি তোমার, আমার পরম পাওয়া
    শুকনো মালাখানি সুগন্ধীত আজও পবিত্র ভালোবাসা ছোঁয়া
    ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি তুমি, পেয়েছি প্রাণের প’রে
    জন্মান্তরেও পাই যেন তোমায় একান্ত আমারই করে।

  • কবিতা

    কবিতা- আমার “মা” দূর্গা ঘরে ঘরে

    আমার “মা” দূর্গা ঘরে ঘরে
    – পায়েল সাহু

     

    দূর্গা কি সত্যি মানুষ নয়?
    শুধুই বুঝি দেবীর রূপ!
    জন্ম দিলো যে জঠর ছিঁড়ে
    দশটি মাসের গর্ভ খুঁড়ে,
    নাড়ি ছেঁড়ার যন্ত্রনা ভুলে
    আনন্দে ভাসে সন্তান কোলে।

    দূর্গা কি সত্যি মানুষ নয়?
    শুধুই বুঝি দেবীর রূপ!
    সংসারের দায় দু’হাতে সামলে
    বাকি আট হাতে সন্ততি আগলে
    সু-শিক্ষায় মানুষ গড়ে,
    বুক ভরা আনন্দে ফেরে।

    দূর্গা কি সত্যি মানুষ নয়?
    শুধুই বুঝি দেবীর রূপ!
    দশভুজা হয়ে অস্ত্র নিয়ে
    বিপদতারিনী অবতার হয়ে
    অবতীর্ণ হয়ে সম্মুখ সমরে
    দুর্গম পথ মসৃণতায় ঘেরে।

    দূর্গা কি সত্যি মানুষ নয়?
    শুধুই বুঝি দেবীর রূপ!
    আমার দূর্গা ঘরে ঘরে
    অপূজিতা তিনি নিজ দ্বারে,
    নিঃস্বার্থে বাঁচে জীবন ভরে
    সন্ততির কল্যাণ প্রার্থনা জুড়ে।

  • গল্প

    গল্প- শক্তি রূপেণ 

    শক্তি রূপেণ
    – পায়েল সাহু 

     

     

    জ্ঞান ফিরতে নিজেকে একটা জলা জঙ্গলা জায়গায় আবিষ্কার করলো ঐশানী। ওঠার চেষ্টা করতেই সারা শরীরের অসহ্য যন্ত্রণায় কেঁপে উঠলো একবার। সময়টা ভোররাত নাকি সন্ধ্যে কিছুই ঠাহর করতে পারছে না। মাথাটাও যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। হাল ছেড়ে দিয়ে আবারও ওখানেই শুয়ে পড়লো ঐশানী। আস্তে আস্তে মনে পড়তে থাকে সব কিছু।

     “মা আজ অফিসফেরত সবার জন্য দূর্গা পুজোর কেনাকাটি করে ফিরবো, কয়েকজন অফিসকলিগও যাবে” জুতো পড়তে পড়তে মাকে কথাটা বলে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ঐশানী। মনটা বেশ খুশি আজ তার। অভিকের সঙ্গে সম্পর্কটা খুব বেশিদিনের না হলেও খুব গাঢ় হয়ে উঠেছে অল্পকদিনেই, নিউটাউনের একই অফিসে চাকরি সূত্রে ওদের আলাপ। যদিও কেউ কারো বাড়িতে কাউকে কিছু জানায়নি এখনো। ঐশানী শপিং করতে যাবে শুনে অভিক বলে সেও তার বন্ধুদের নিয়ে পুজোর কেনাকাটির প্ল্যান করছে কদিন ধরে, তাহলে একসাথেই যাওয়া যাবে সবাই মিলে।

    আজ শনিবার হাফ ডে।

    গাঢ় নীল রঙের কুর্তি আর হালকা গোলাপী লেগিংসে মাখনের মতো গায়ের রঙের অপরূপা ঐশানীকে দেখে অভিক আর তার বন্ধুরা যেন কথা হারিয়ে ফেলে। অভিকের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় ছিলো না ঐশানীর, অভিকের মুগ্ধ দৃষ্টি উপভোগ করতে করতে  নিজে থেকেই আলাপ করতে এগিয়ে যায় অভিকের বন্ধুদের সঙ্গে।

    একটা অনলাইন app ক্যাব বুক করে ওরা সবাই উঠে পড়ে গাড়িতে। প্রচুর কেনাকাটার পর অভিকের এক বন্ধু প্রস্তাব দেয় প্রথমে কোনো রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারটা খেয়ে বাড়ী ফেরা হবে। সেই মতো সবাই ঢুকে পড়ে বাগুইআটির সুসজ্জিত একটি বার কাম রেস্টুরেন্টে।

    রাত ন’টা বেজে গেলেও অভিক বা তার বন্ধুদের কোনো তাড়া নেই দেখে ঐশানী একাই বাড়ী ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ালে মদের নেশায় চূড়ান্ত নেশাগ্রস্ত অভিক ও তার বন্ধুরাআরো কিছুক্ষণ বসার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। কথা হয় ফেরার পথে ঐশানীকে আগে তার বাড়িতে নামিয়ে যে যার বাড়ী ফিরবে।

    ফেরার সময় ট্যাক্সি এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে একটু নিরিবিলি জায়গায় আসতেই হঠাৎ অভিক গাড়ি থামাতে বলে ড্রাইভারকে।

    ড্রাইভার যথারীতি অসম্মত হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগে গাড়ি থামাতে, সঙ্গে সঙ্গে অভিক সদ্য কেনা মদের বোতলটা দিয়ে আঘাত করে তার মাথায় আর গাড়ি কন্ট্রোল নিয়ে নেয় ড্রাইভারের পাশে বসা এক বন্ধু। খানিকটা অন্ধকার দেখে গাড়ি থামিয়ে ঐশানীর ওপর এক এক করে ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিক ও তার বন্ধুরা। ঐশানী কখন জ্ঞান হারিয়েছে সে জানে না।

    এতক্ষণে সব মনে পড়তে কোনোমতে উঠে বসতেই দেখতে পায় কিছুটা দূরে দাঁড় করানো ট্যাক্সি। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে পৌঁছায় গাড়ির কাছে। মাথা ফেটে রক্তে ভেসে যাওয়া ড্রাইভারকে দেখে ঐশানী যেন নিজের সমস্ত ব্যাথা ভুলে যায়। তাড়াতাড়ি নাকের কাছে হাতটা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখে মানুষটা বেঁচে আছে কিনা। 

    খুব সামান্য শ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করে। গাড়িতে উঠে কোনোমতে ব্যাগটা পেয়ে ফোন বের করে ডায়াল করে পুলিশ স্টেশনে। 

    দীর্ঘ পাঁচ বছর কেটে গেছে, সমাজ সংসারের তীব্র কটাক্ষ,  কুৎসা সহ্য করে একা লড়াই চালিয়ে গেছে ঐশানী। এতো বছরের নিজের মা বাবা ছাড়া একমাত্র পাশে পেয়েছে সেদিনের সেই ট্যাক্সি ড্রাইভারকে যিনি সেদিন ঐশানীর চেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন। আজ কোর্টের রায়ে অভিক ও তার দুই বন্ধুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলো।

    আজ আবার ঐশানীর মনে পুজোর আনন্দ, অসুর দলনী দেবী দূর্গার আরো একবার অকাল বোধন আজ।

  • কবিতা

    কবিতা- স্মৃতির ক্যানভাস

    স্মৃতির ক্যানভাস
    – পায়েল সাহু

     

     

    আজও তোর কথা মনে পড়ে,
    হাজার ভিড়ের একান্ত অবকাশে
    মুহূর্ত গোনা নিঃশ্বাসের অভ্যাসে।

    স্মৃতির চিলেকোঠায় জিরোনো ক্ষণে
    অতীতের আলাপচারিতায়,
    শুধু তোরই নাম বিস্তৃত নীলাকাশে।

    তোর হাতের সেই নরম ছোঁয়াচ,
    জাপটে ধরা বুক, উষ্ণ লাল ঠোঁটের আবদার
    বন্ধ চোখের ভালোলাগায় ভাসে।

    দূরত্ব ছিলো শুধুই ব্যস্ততার,
    তবু আগলে রাখা প্রতি মুহূর্তে
    আজ মনের যোজন দূরত্বে বিষাদের সুর মেশে।

    খুনসুঁটি আর ঝগড়া ঝাঁটির ভালো বাসাবাসি শেষে,
    প্রথম প্রেমের চিহ্ন আমার,
    অমলিন আজ স্মৃতির ক্যানভাসে।

  • কবিতা

    কবিতা- দহন জ্বালা

    দহন জ্বালা
    – পায়েল সাহু

     

     

    তীব্র জ্বরে পুড়ছে শরীর, ছিড়ছে মাথা যন্ত্রনায়
    পচা শামুকে পা কেটে জ্বলছে মন তীব্র জ্বালায়,
    মৃত্যু কামনা করছে জীবন স্বার্থপরতার বাস্তবে
    মনুষ্যত্ব আজ বিলুপ্তপ্রায় মিথ্যাচারিতার দ্বন্ধে।

    মিথ্যে রাজা সাজার লোভ ঘাতক প্ৰিয় সম্পর্কের
    সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের মোহে প্রকাশ নির্লজ্জ স্বরূপের
    সমাজ যাকে ব্রাত্য করে হয়ে চরম অপমানিত,
    জন্মদাতা পিতামাতার সন্মানও তার জন্য লজ্জিত।

    “হে ধরণী দ্বিধা হও” প্রার্থনা নিপীড়িত আর্তজনের
    সর্পরূপী অসহায়ের উপকারের গুনছে মাসুল ভুলের,
    নীল বিষে জ্বলছে শরীর তীব্রতা যেন দাবানলের,
    দেবাদিদেবের কৃপায় এখন অপেক্ষা প্রলয় নাচনের।

  • কবিতা

    কবিতা- পিতৃত্ব বনাম সমাজ

    পিতৃত্ব বনাম সমাজ

    -পায়েল সাহু

     

     

    শিশুরাও কি বোঝে রক্তের টান?
    যে শিশুর মুখে কথা ফোটেনি এখনো,
    সেও কি বোঝে পিতার স্পর্শ?
    যে পিতা রয়েছে সমাজের ,সন্তানের অগোচরে,
    যে পিতা বাধ্য তার পিতৃ পরিচয় অস্বীকার করতে
    সেই পিতাও যখন ভিন্ন পরিচয়ে সন্তানকে আদরে ব্যস্ত
    অবলা শিশুটিও পিতার প্রশ্রয়ের আনন্দে মাতোয়ারা |

    অচেনার প্রতি চরম বিমুখ, প্রতিক্রিয়াশীল শিশু
    কোন আনন্দে মাতে অচেনা পিতার আদুরে আবদারে !
    ঈশ্বরের এ কোন অপূর্ব সৃষ্টি, এ কোন গোপন টান
    যা বইছে পিতা পুত্রের হৃদয়ে অন্ত সলিলা ফল্গু হয়ে |

    হে সমাজ, নারীরাই শুধু বঞ্চিত হয়না
    আচমকা অভিঘাত আসে পুরুষের জীবনেও,
    ক্ষনিকের ভুলের শাস্তি পুরুষও পায়
    নিজের সন্তানকে যখন অন্যের নামে পরিচিত হয় |

    তবু সে যে পুরুষ, কাঁদতে নেই যাকে,
    কষ্টে বুক ফেটে গেলেও মুখ লুকোতে নেই কারো বুকে
    যে কখনো মৃত্যু চায়নি তার আত্মজের
    বরং ভেসেছে ভালোলাগার উষ্ণ বারিধারায়
    কখনো আপন করে নিতে পারবে না জেনেও
    ভেসেছে পিতৃত্বর চরম সুখে |

    পৌরুষত্ব কত রকমের হয় সমাজ?
    যে পিতা চাইলেই দাবি করতে পারে তার পিতৃত্ব,
    তবু অবহেলায় তুচ্ছ করে তার ইচ্ছে
    শুধু রক্ষা করতে তার সন্তানের মায়ের সন্মান |

    যে পিতা পুত্রের সম্মুখে এলে আনন্দে হয় দিগভ্রান্ত
    পলকে যে হয়ে যায় দায়িত্ববান পিতা,
    ভবিষতের স্বপ্নে যে হয় আনন্দে উদ্বেল
    সে কি সত্যই কাপুরুষ তকমার যোগ্য?

    যে ক্ষনিকের ভুলের দায় তার একার নয়
    তবু যে প্রানপন বাঁচে সমস্ত কষ্ট আগলে তার নিজের করে
    কুর্নিশ নাহয় নাই জানালে তাকে, হে সমাজ ;
    তবু সে থাকবে তার প্রেয়সীর মাথার মুকুট হয়ে
    যার জন্য সে পেয়েছে শ্রেষ্ঠ নারীর সন্মান |

  • কবিতা

    কবিতা- পুরোনো স্মৃতির রেশ

    পুরোনো স্মৃতির রেশ

    -পায়েল সাহু

     

     

    এমন কোনো সকাল নেই যে সকালে তুমি নেই,
    এমন কোনো রাত নেই যে রাতে তোমায় ভাবা নেই,
    প্রতি সকালে ঘুম ভাঙা চোখে জড়িয়ে থাকে তোমার রেশ,
    প্রতি ক্ষণে তোমায় নিয়ে ভাবনা গুলো গোলকধাঁধায় শেষ|
    ভোর রাতের সত্যি স্বপ্নে দেখি তোমায় দু চোখ ভরে,
    শুধু আমার নও তুমি, অন্য কারো, বুঝি বারে বারে |
    তবু কেনো পুরোনো স্মৃতি আসে বারবার ঘুরে ফিরে?
    যা আমার নয়, বিদায় দিয়েছি যারে, ঠিকানাহীন নিশ্চিন্দিপুরে |
    অন্তর বুঝি দেয়নি বিদায় মনের কথা শুনে,
    আজও তাই দেখি তোমায় মনের অন্তঃপুরে,
    আজও পড়ে প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমারই নামে,
    এ অনুভূতি অচেনা লাগে তবু বাঁচি তোমার প্রেমে |

  • গল্প

    গল্প- প্রাক্তন

    প্রাক্তন
    – পায়েল সাহু

     

     

    প্রাক্তন…….
    হ্যাঁ শুধু প্রাক্তনই বলি, প্ৰিয় বলে ডাকার ইচ্ছা বহুদিন আগেই মৃত। আজ বহুদিন বাদে তোমার সঙ্গে দেখা হলো, ভালোই লাগলো ভালো আছো দেখে, অথচ কিছুদিন আগেও এই দেখা হওয়াটা একটা উত্তেজনা দিয়ে যেত মনে। তুমিই ধ্যান জ্ঞান ছিলে সেসময়, আর না হয়ে বা উপায় কি? কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বললেই তো সেটার চরম অপরাধ পরিগণিত হতো তোমার কাছে। কি ভয়ঙ্কর ভাবে অপমান করতে রাস্তায় ডেকে নিয়ে গিয়ে, পরে ক্ষমা চাইতে ভালোবাসার নামে, আমাকে আগলে রাখতে চেয়েই নাকি তোমার এই আধিপত্য, এ নাকি আমারই মঙ্গলের জন্য। তোমাকে ভালোবেসে আমি নিজের সম্পূর্ণ সত্ত্বাকে বন্ধক রেখেছিলাম তোমার কাছে, দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। তবু আমি তোমারই হয়ে ছিলাম।
    হঠাৎ এক শীতল স্নিগ্ধ বাতাস কোথা থেকে যেন বয়ে এলো তোমার আমারো মাঝের ফাটলটা দিয়ে।
    তবু তোমায় ছাড়ার কথা ভাবিনি, ভালোলাগা, ভালোবাসা থাক আর নাই থাক……..

    তুমি এমন একটা সময় আমার হাতটা ছেড়েছিলে, কথার ওপর কথা জুড়ে সিলিং ছোঁয়া অভিযোগ জমা করছিলে………যখন আমি তোমার অভিযোগের তিরে ক্লান্ত, অবসন্ন, মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছিলাম জীবন পথে; ঠিক যে সময়টা……আমার চরম মানসিক অবসন্নতার দিনে তোমার সান্ত্বনার প্রয়োজন ছিলো সব চেয়ে বেশি, কিন্তু তুমি তোমার স্বভাব সিদ্ধ আধিপত্য নষ্ট হওয়ার ভয়ে মানসিক অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিলে! ঠিক সেই সময়ই সে এলো, “দেবদূত” হয়ে, যে বন্ধু হয়ে, ভালোবেসে আগলে রাখলো আমাকে, আমার সমস্ত দোষ, ত্রুটি, ভুল ভ্রান্তি জেনেও পরম মমতায় ঠিক “বাবার মতো” আগলে রাখলো আমাকে। দরকারে শাসন যেমন করেছে তেমনি আদরও করেছে অঢেল। জানো সেদিন যদি সে আমার হাতটা এসে না ধরতো আমি বোধহয় হারিয়ে যেতাম কোনো মানসিক চিকিৎসালয়ের কোনো কোণে। ওই মানুষটা আমার চিকিৎসক, আমার পথ নির্দেশক, আমার পরম শ্রদ্ধেয়, আমার প্রাণের একান্ত গোপন আশ্রয়দাতা, যে আশ্রয়ে আমি সব সময় নিরাপদ থাকি, স্বস্তিতে থাকি।
    ভগবান নিশ্চয়ই আছেন, নদীর একূল ভেঙে ওকূল গড়ার মতোই সযত্নে জীবনে নদীর পাড় গড়ে দিয়ে জীবন সুরক্ষিত করেন।
    তোমার অবদান আমার জীবনের ভালোমন্দে কম নয়, তবু তুমি আমার শরীর দিয়ে সেই উপকারের ঋণ মিটিয়ে নিতে। এই স্থূল লেন দেন, ভালোবাসার উর্দ্ধে একটা পবিত্র নির্মল ভালোবাসার জগৎ আছে তা আমি জানতেই পারতাম না আমার পরম সুহৃদকে না পেলে। যা হয় সর্বদা ভালোর জন্যই হয়, ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গাছের একটি পাতাও হেলে না, আর আমরা তো তাঁর সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ প্রাণী, আমাদের ক্ষতি তিনি হতে দেবেন কি করে!
    তাই হয়তো তুমি তোমার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়েছিলে আমার হাত থেকে, যে হাতে জড়িয়ে নিয়েছিলাম আমি আমার ভগবানের আশীর্বাদকে, যে না থাকলে আজ আমি আমার শ্বাসটুকুও নিতে পারবো কিনা সন্দেহ।
    তোমার আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্কে খুব কম দিনের বিচ্ছেদ আমাকে অন্য মানুষ গড়ে তুলেছে, অনেক বিচক্ষণ, অনেক গুণের অধিকারী করে তুলেছে আমাকে নব জীবন দান করা মানুষটি।

    তুমি বলেছিলে “ভালোবাসা শরীর থেকে শুরু হয়, পরে মনে যায়” সেটাই বিশ্বাস করে চলা আমি জেনেছি ভালোবাসার অর্থ, যেখানে শরীর, রূপ, রং, অর্থ প্রভাব ফেলে না, নিষ্কাম পবিত্র ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যেখানে মানুষ আত্মতৃপ্তির চরম সীমায় পৌঁছে যায় শুধুমাত্র তার প্ৰিয় মানুষটির হাসিমুখ দেখে আর মিলনে পায় স্বর্গসুখ যেখানে ভক্ত আর ভগবান এক আত্মা, এক প্রাণ হয়ে যান।

    আজ হঠাৎ দেখা হয়ে তুমি আবার ভালোবাসার অভিনয়ে মত্ত হতে চাইলে, আবার অধিকার বোধের পরীক্ষা নিতে চাইলে কিন্তু যাকে তুমি ছেড়ে গেছিলে সে যে সম্পূর্ণ অন্য মানবীতে পরিণত হয়েছে সে খবর তোমার জানা নেই, জানার ইচ্ছেটুকুও নেই অবশ্য তোমার। তুমি আবারো দেখতে চাইলে তোমার প্রতি টান কতটা… ঠিক আগে যেমন চাইতে, আর আমি সমস্ত সন্মান বিসর্জন দিয়ে তোমাকে প্রাধান্য দিয়ে বাঁচতাম জীবন। হ্যাঁ ভালো বেসেছিলাম, চরম ভালোবাসা না থাকলে এতো টান আসতো না, কিন্তু তা ছিলো শুধুই শরীরী। সে ভালোবাসায় আর আমি ফিরতে চাইনা প্রাক্তন।
    তুমি তোমার মতো করে খুশি থাকো নিত্য নতুন সাথী বেছে নিয়ে , আর আমি আমার মতো করে।
    আমাদের দু’জনের পথ এখন সমান্তরাল, যা কখনো মেলার নয়।
    তাই তোমায় বিদায় জানালাম। আর কখনো কোনো পথের বাঁকে যেন দেখা না হয় আমাদের,
    ইতি….
    তোমার প্রাক্তন

    চিঠিটা লেখা শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রিয়া। বহুদিন বাদে তার দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমিকের সঙ্গে দেখা যে কিনা দু’ বছর আগে সব সম্পর্ক মিটিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু এতো দিন বাদে দেখা হতেই আবারো তাকে শয্যা সঙ্গিনী হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসে ঠিক যেমন আগে দিতো, আবারো সেই এক প্রশ্ন করতে থাকে এই কদিনের অদেখায় সে কতো জন পুরুষের শয্যা সঙ্গিনী হয়েছে। কোনো মতে তাকে এড়িয়ে পালিয়ে এসেছে প্রিয়া, দু’ দিন পর 14 th ফেব্রুয়ারী কলেজের গেটে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

    সেসব দিনের কথা ভাবলে গা গুলিয়ে ওঠে প্রিয়ার, কি করে সে দিন এর পর দিন ঋতমের অত্যাচার সহ্য করে এসেছে তাই ভাবে। তার মনে পড়ে যায় কফি খেতে নিয়ে গিয়ে তার ফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুকে আলাপ হওয়া একটি ছেলের সঙ্গের সাধারণ আলাপচারিতাকে কি ভয়ঙ্কর নোংরা রূপ দিয়েছিলো ঋতম। প্রিয়া সেদিনই ফেরার সময় ঋতমের চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো।
    গত দু’বছর তাদের মধ্যে আর সম্পর্কটা নেই…ভাগ্যিস নেই ভাবে প্রিয়া, ঋতম জানেই না গত দু’ বছরে প্রিয়া নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে নিজের শিল্পী সত্ত্বার জোরে, যা তার নিজেরই অজানা ছিলো|
    বাবা আচমকা মারা যেতে সংসারের খুঁটিনাটি সব কিছুর দায়িত্ব এসে পড়ে একমাত্র সন্তান প্রিয়ার ওপর, সংসার বিষয়ে একেবারেই অনভিজ্ঞ প্রিয়া যখন জানতে পারে মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে বাবা লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা করে গেছেন তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। আত্মীয় স্বজনরা যথারীতি পাশ কাটিয়ে চলতো বরাবরই প্রিয়ার বাবার অর্থনৈতিক দুর্বলতার জন্য |ঠিক এই সময়েই ঋতম পাশে এসে দাঁড়ায়, তার বাবার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রিয়ার মাথার দুশ্চিন্তাগুলি কমানোর আশ্বাস দিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছে প্রিয়ার।
    কার্য ক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে ঋতম মোটা টাকার সাহায্য করেছে প্রিয়াকে, ভালোবাসার অভিনয়ে কাছে টেনে দিন এর পর দিন প্রিয়ার শরীরকে ভোগ করে গেছে |
    ঋতমের প্রেমে অন্ধ প্রিয়া সারা দুনিয়া ভুলতে বসেছিল, কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও ঋতম কখনোই বিয়ে করতে চায়নি প্রিয়াকে, উল্টে বুঝিয়েছে তাদের সঙ্গে প্রিয়াদের অর্থনৈতিক ফারাকের কথা।
    প্রিয়া সব মেনেও নিত মুখ বুঁজে কিন্তু দিনের পর দিন ঋতমের দাবি যেন বেড়ে উঠছিলো, হঠাৎ করেই সন্দেহ করা শুরু করেছিল প্রিয়া কয়েকটা বাড়িতে গিয়ে টুইশানি শুরু করার পর থেকেই। ওই সব বাচ্ছাদের বাবাদের সঙ্গে প্রিয়াকে জড়িয়ে নোংরা কথা বলতে এতটুকুও বাধঁতো না ঋতমের। এই নিয়ে প্রিয়া অনেক ঝগড়া, অশান্তি, কান্নাকাটি করলে সাময়িকভাবে কিছুদিন চুপ থাকলেও আবারো শুরু করতো।

    ঠিক এই সময়েই আলাপ হয় তার এক ছাত্রীর দাদা পারিজাতের সঙ্গে, পেশায় তিনি একজন অঙ্কন শিল্পী, দেশে বিদেশে তার নাম। তিনি প্রিয়াকে উৎসাহ দেন আঁকা শিখে নিজের বুটিক খুলে কাপড়ের ওপর ফেব্রিক, পেন্টিং করে উপার্জনের জন্য। প্রিয়ার বেশ ভালো লাগতো ভদ্র লোকের ব্যবহার, মনে নতুন আশা জেগে উঠতো একটু ভালো ভাবে বাঁচার।
    মূলত ওনার উদ্যোগেই প্রিয়া ওনার কাছে আঁকা শুরু করে, আর এই সময় ওদের মধ্যে বন্ধুত্বটা এতোই বেড়ে ওঠে যে একে অপরের কাছে সমস্ত রকম কথা বলার বিশ্বস্ত জায়গা হয়ে ওঠে, কখন যেন পরম ভরসার, আবদারের জায়গা হয়ে ওঠে।
    কিন্তু ঋতমকে এড়াতে চেয়েও পেরে উঠছিলো না প্রিয়া, দিনের পর দিন প্রিয়ার মানসিক চাপ বাড়তে বাড়তে অবস্থা চরমে পৌঁছলো যেদিন ভোরে উঠে ঘুমের মধ্যেই মাকে মৃত অবস্থায় দেখলো।
    মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঋতম পাশে এসে দাঁড়ালো বটে কিন্তু পরবর্তী দিনগুলোতে প্রিয়াকে আরো বেশি করে তার শয্যাসঙ্গিনী হতে বলে, কারণ হিসেবে জানায় এতে প্রিয়ার মানসিক কষ্টটা কমে যাবে। আর সহ্য করতে পারেনা প্রিয়া, রীতিমতো অপমান করে ঋতমকে বলে বিয়ে করতে না পারলে যেন তার সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ না রাখে। যথারীতি আগের মতোই ঋতম স্টেটাস-এর তুলনা দিয়ে বলে সে বিয়ে করতে পারবে না আর প্রিয়ার মতো চরিত্রহীন মেয়ের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ রাখতে চায় না‌।
    এরপর কেটে গেছে দু’টো বছর…..
    প্রিয়া বাড়িতে নিজের বুটিক খুলেছে, তার ডিজাইন করা জামা কাপড়ের চাহিদা এখন বেশ ভালো, পারিজাতের সূত্রে বিদেশেও একটি দোকানে সে তার বুটিকের জিনিস পাঠায়। তার পায়ের তলার জমিটা এখন বেশ শক্ত।
    ইতিমধ্যে পারিজাতের সঙ্গে প্রিয়ার সম্পর্কটা অতি প্ৰিয়জনের, দু’জনেই দু’জনকে চোখে হারায়। কোনো সিদ্ধান্তই পারিজাতকে জিজ্ঞেস না করে নেয় না প্রিয়া।

    পারিজাতকে সে ভালোবাসলেও সে কথা বলার সাহস পায়না, প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি দুঃস্বপ্ন হয়ে ওকে তাড়া করে বেড়ায়।পারিজাত প্রিয়ার সমস্ত কথা জেনেও ওকে আপন করতে চায় বহুবার আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে কিন্তু প্রিয়া চায় না তাদের এই সুন্দর বন্ধুত্বের ভালোবাসার সম্পর্কটা নষ্ট হতে দিতে।

    চিঠিটা যত্ন করে ব্যাগে গুছিয়ে রাখে প্রিয়া সঙ্গে ঋতমের আগের দেওয়া টাকাগুলোও।ওই কালো ছায়ার কোনোরকম অস্তিত্ব সে আর রাখতে চায় না জীবনে।
    ব্যাগে লুকিয়ে রাখা পারিজাতের ছবিটা বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে “এ জন্মে নয়, এই ব্যবহার করা শরীর মন নিয়ে নয় আবার আমি ফিরবো শুধু তোমার জন্য, শুধু তোমারই হয়ে।”
    14 th ফেব্রুয়ারীর দিন প্রিয়া তৈরি হচ্ছে ঋতমের সঙ্গে দেখা করে চিঠি আর টাকাগুলো দেওয়ার জন্য।
    হঠাৎই দরজায় কলিং বেলের শব্দ….
    দরজা খুলতেই এক মুখ হাসি নিয়ে ঢুকে আসে পারিজাত, অবাক হয়েছে যায় প্রিয়া, এভাবে কোনোদিন প্রিয়ার বাড়ি আসেনি পারিজাত, প্রিয়াকে বলে তোমার একটি গুপ্তধন তুমি ফেলে এসেছিলে আমাদের বাড়িতে। অবাক প্রিয়ার চোখের সামনে পকেট থেকে বের করে আনে ঋতমকে লেখা সেই চিঠি।
    লজ্জায়, ভয়ে প্রিয়া মুখ নিচু করে ফেলে, কি করবে কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই পারিজাত এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে। বলে ওঠে “তোমার আমার পথ এক হওয়ারই ছিলো, কিন্তু ভুল পথে না গেলে কি ঠিক পথ চেনা যায় বলো? আমাকে গ্রহণ করো প্রিয়া, তোমার অপেক্ষায় আমি বসে আছি জন্মান্তর ধরে..”
    প্রিয়ার চোখে তখন আনন্দাশ্রু…… মুখে স্বীকৃতির হাসি।
    বাঁধভাঙা উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপতে থাকা প্রিয়ার লাল ঠোঁট দু’টো কখন যেন হারিয়ে যায় পারিজাতের ঠোঁটে|

    **সমাপ্ত **

  • কবিতা

    কবিতা- আশ্বাস

    আশ্বাস
    – পায়েল সাহু

     

     

    আকাশগঙ্গার পথটি ধরে হাঁটবো তোর হাত জড়িয়ে
    লক্ষ কোটি তারারা এসে চুম দিয়ে যাবে আগ বাড়িয়ে।
    ধূমকেতুরা থাকবে ঝাঁকে তোর মধুর হাসির প্রহরায়
    আল্হাদি যত তারারা আছে পড়বে ঝরে আমার মাথায়,
    মুগ্ধ হবি নিষ্পলকে আমার আগুন রূপের ছটায়,
    সূর্য চন্দ্র মুখ লুকোবে আমার উজল রূপের আভায়।
    শুকতারাটি হয়ে আমি জ্বলবো ভোর রাতের শোভায়
    সাঁঝের বেলা সন্ধ্যাতারায় খুঁজে পাবি ঠিক আমায়।
    ধ্রুবতারা আমিই রে তোর ঠিক চিনেছিস তুই আমারে
    নিকষ কালো ভয়ের রাতে থাকবো আমি তোর শিয়রে,
    লক্ষ কোটি মানিক জ্বেলে রাখবো ঠিক তোর দুয়ারে,
    পূর্ণিমা রাত মুখ লুকোবে উজ্জ্বলতার এই বহরে
    অমাবস্যাও পড়বে ঢাকা আমার রূপের নরম আদরে
    সারাজীবন আগলে তোকে থাকবো তোর আকাশ হয়ে।

You cannot copy content of this page