• কবিতা

    কবিতা- ঝরা পাতা

    ঝরা পাতা
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

     

    ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে সোনালী বিকেল
    হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের সুখস্বপ্ন
    জীবন সায়াহ্নে এসে, দু-চোখে অশ্রু ভেসে
    অশীতিপর বৃদ্ধের করুণ বিলাপ।

    কালের আমোঘ নিয়মে জীর্ণ পাতা ঝরে
    গভীর দীর্ঘশ্বাস ও হতাশা নিয়ে,
    নির্জন চৈত্রমাসে, বেলাশেষের গান
    বড়ই হৃদয় বিদারক,পীড়াদায়ক।

    পুষ্পবৃষ্টিতে আগুন রঙের খেলা
    হৃদয়তন্বীতে জ্বালা ও যন্ত্রণা
    বিষাদ ও অলসতার বীজমন্ত্র,
    হৃদয়টাকে অবশ করে দেয়।

    জীবনের স্বপ্নগুলো ঘষা কাঁচ মনে হয়
    ভাবনাগুলো অহেতুক এলোমেলো,
    সজাগ প্রহরীর মতো রাত জেগে
    কালের প্রহর গুনে যায়।

    আমার স্বপ্নীল আকাশগঙ্গায়
    মরা গাঙে সকরুণ ঢেউ
    উদাসী বিহঙ্গীরা ভিড় করে
    মেঘলা আকাশ নীলে।

  • কবিতা

    কবিতা- দুঃসময়

    দুঃসময়
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

     

    পৃথিবীতে আজ জ্বলছে আগুন
    নেভাবার তার শক্তি কোথায়?
    ক্রূর দানবের জটিল চক্রান্তে
    জীবনটা ভরে দুঃখ ব্যথায়।

    ভালবাসা আজ পথের ভিখারী
    দেহ লালসার অন্তরালে
    খুন, ধর্ষণ আর রাহাজানির
    পাশবিক শক্তির মহান চালে।

    বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে
    জীবন আজ ওষ্ঠাগত প্রাণ
    বিবেক মনুষ্যত্ব নিমেষে হারায়
    জনম হয়ে যায় খান্ খান্।

    নোংরা আজ রাজনীতির চালে
    পৃথিবী আজ হয়েছে নীল
    মানব জন্ম হয় ছিন্ন ভিন্ন
    চিতা ভষ্মে শুধুই বিলীন।

    তবুও একবুক আশা প্রত্যাশা
    ভোরের সূর্য্য একদিন হাসবেই
    একতার গান গেয়ে মানুষ
    শান্তি সুখের সাগরে ভাসবেই।

  • কবিতা

    কবিতা- দু’চোখের অতলান্তে

    দু’চোখের অতলান্তে
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    তোমার ঐ দু’চোখের অতলান্তে
    লুকিয়ে আছে কত প্রেম, কত ভালবাসা
    কত দুর্নিবার আকর্ষণ
    কত কল্পনা – জল্পনা;
    কত সুখ-দুঃখের ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো ছবি
    কত কালবৈশাখী ঝড়
    কত বিধ্বংসী আতঙ্কিত বন্যা।

    তুমি কস্তুরী মৃগ–
    তুমি গন্ধরাজ, রাতের রজনীগন্ধা
    তুমি মর্ত্যের সুরধ্বনি
    আর স্বর্গের অলকানন্দা।

    তোমার চক্ষু ক্যানভাসে ফোটে
    মোহময়ী স্বর্গের ঊর্বশী নৃত্য
    অপরূপ কালজয়ী দৃশ্য;
    তোমার ভুবনমোহিনী হাসিতে ঝরে
    হীরে- চুনী পান্না
    আর ঝর্ণার মুক্তধারা,
    তাই তো তুমি সবার মনের আকাশে
    ভোরের এক শুকতারা।

  • কবিতা

    কবিতা- বার্ধক্য জীবন

    বার্ধক্য জীবন
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    বার্ধক্য জীবন, বড় কঠিন জীবন
    ভগ্ন শরীরে মন্থর গতিতে পথ চলা
    নিকষ কালো অন্ধরাতে
    অতীত জীবনের কথা বলা।

    অতৃপ্ত বাসনা হৃদয়টা জ্বালা দেয়
    এতো সাধ, এতো ভালবাসা
    অর্থ, যশ, প্রভাব, প্রতিপত্তি
    সব ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে
    নীল নীলিমার সুদূর পারে।

    ঘুমিয়েছে পলাতকা মেঘ
    হারিয়েছে তার গতিপথ
    যুদ্ধবাজের হাতে নেমেছে শিথিলতা
    ক্লান্ত হৃদয়ে, ভগ্ন শরীরে
    অলস আর অবশতার বীজমন্ত্র উপস্থিত।

    উজ্জ্বল আলোকরশ্মি অস্পষ্ট মনে হয়
    দেহের নানা স্থান ক্ষত ও যন্ত্রণাময়
    আশায় আর বুক বাঁধে না
    রঙিন সুরে গলা সাধে না
    শেষ তরী বাইবার প্রতীক্ষায়
    প্রহর গোনে দগ্ধহৃদয়

  • কবিতা

    কবিতা- অধরা মাধুরী

    অধরা মাধুরী
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    খুঁজেছি তোমায় হাজার জনস্রোতে
    একরাশ মধুর সুরছন্দ নিয়ে
    বুকের স্পন্দন আর গভীর ভালবাসা দিয়ে
    মনের গভীর অতলান্তে।

    বৃন্তচ্যূত ফুলের মতো নীরবে
    ঝরে পড়েছি অবিরাম অবিরত
    দগদগে জ্বলন্ত দাবানলের মতো
    বুকের গোপন ক্ষতগুলো আজও জ্বালা দেয়।

    পোড়াতে শিখিনি, নিজেই পুড়েছি
    জীবন যন্ত্রণার আগুনে, বেদনার বালুচরে
    কেঁদেছি শুধু কেঁদেছি, ভেবেছি শুধু ভেবেছি
    তোমার অভিসারী স্রোতে ভাসবে বলে।

    গোছাতে শিখিনি, আজও কোনোদিন
    নীরবে হারিয়ে ফেলেছি সব
    মনের আখরে গুছিয়ে রেখেছি
    তোমার অনাস্বাদিত অপূর্ণ প্রেম।

    অধরা মাধুরী হয়ে তুমি দাও না ধরা
    আমি যে একাকীনি গতিহারা দিশেহারা
    সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলার সাথে সাথে
    অতৃপ্ত বাসনার দীপ আজও জ্বেলে যাই।

  • কবিতা

    কবিতা- পরগাছা

    পরগাছা
    -প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    শূন্য ঔদাসীন্যে স্মৃতির মালা পরে মনে হয়
    এই বেশ ভালো আছি…বেশ আছি
    কেউ নেই, অজস্র চিন্তার ঢেউ নেই,
    বার্ধক্যে, বিমর্ষ বিচ্ছিন্ন সন্ধ্যায়
    এ এক অদ্ভুত সুখানুভূতি।

    কল্পলোকের দূরের পৃথিবীর আকর্ষণ কমে গেছে
    ভগ্ন হৃদয়ে, বুকের নিভৃত কোণের স্বপ্ন বিলীন
    ওপারের ডাকের অসীম প্রত্যাশায়
    শেষ খেয়া আজও বয়ে যাই।

    শরীরী রাগিনী সব স্তব্ধ
    আশা- নিরাশা প্রায় ভগ্ন
    পূঞ্জীভূত নিকষ কালো মেঘ
    অক্টোপাশের মতো জীবনটাকে
    আলোছায়ায় বন্দী করে রাখে।

    অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা আর যন্ত্রণা
    অনুভবে বুঝি, আমি এখন সমাজের জঞ্জাল
    ব্যথাতুর জীবন নিয়ে, রিক্ত নিঃস্ব হয়ে
    শেষ কটা দিন পরগাছা হয়ে মুক্তকণ্ঠে বলি–
    “হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল
    পার পার কর আমারে”।

  • কবিতা

    কবিতা- ব্যাতিক্রমী দিনরাত্রি

    ব্যাতিক্রমী দিনরাত্রি
    -প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    ক্লান্ত কুহেলি, শান্ত নিশীথ রাত্রি
    রজনীগন্ধার সুরভিত গন্ধে ভরে কক্ষ
    রাতচোরা পাখির মধুর কূজনে
    শুকশারীরা কথা বলে নির্জনে, নিভৃতে।

    রাতে সবাই ঘুমায়, গভীর প্রশান্তিতে
    কেউ জেগে থেকে পুরনো স্মৃতি করে
    রাত্রির প্রহর কাটে;
    আসলে রাত জাগাটা সবার কপালে জোটে না
    স্বপ্নপৃরণে কিছু স্মৃতি -বিস্মৃতির জাল বোনা।

    সব রাত্রি যেমন মধুময় হয় না
    সব সকাল তেমনি ঝলমলে হয় না
    কিছু কিছু সকাল আসে
    কুয়াশার চাদর ঢেকে
    রোদ নেই –আলো নেই
    দিক্চক্রবাল ঢাকা থাকে আঁধারে ।

    ভোরের ভৈরবীতে যেন ইমনের আলাপ
    পাখির কূজনে কান্নার সুর
    ফুলগুলির হাসি যেন ম্লান;
    তবুও দিন থেকে রাত্রি নামে
    নির্জনতার রঙিন খামে।

  • কবিতা

    কবিতা- ভালবাসা চেও না

    ভালবাসা চেও না
    -প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    অমাবস্যার নিশীথ রাতে
    যদি তুমি আমাকে একটু আলো চাও
    আমি দেব–চোখের আলোয় দিশেহারা
    পথিককে আপন নীড়ে পৌঁছে দেব ।

    গ্রীষ্মের দাবদগ্ধ দ্বিপ্রহরে
    তৃষ্ণার্ত পাখির মতো
    যদি কখনো তৃষ্ণা পায়
    চলে এসো–
    দু’হাত ভরে আর্সেনিক মুক্ত জল অঞ্জলি দেব।

    যদি কখনো আর্থিক অনটনে কষ্ট পাও
    জীবনটা দুঃখ-ব্যথায় ভরে যায়
    তুমি চলে এসো-
    বৈঠা নিয়ে সুখসাগরে জীবনতরী বাইতে দেব।

    মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যদি কভু মনে পড়ে
    স্মৃতির মণিকোঠা জ্বালা দেয়,
    স্বপ্নতরী ভাসিয়ে দিও
    দু’জনায় স্বপ্নদোলায় দুলবো
    কিন্তু ভালবাসা চেও না, পাবে না,
    সেটা হার্দিক প্রেমের অনুভূতির ব্যাপার।

  • কবিতা

    কবিতা- শব্দসঙ্গী

    শব্দসঙ্গী
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    শব্দের পর শব্দ দিয়ে
    ছন্দের পর ছন্দ নিয়ে
    আমি যে কাব্যমালা হৃদয়ে গেঁথেছি
    সাহিত্য ভান্ডার পূর্ন হোক আজীবন ।

    জীবন পাতায় এঁকেছি ভালবাসার ছবি
    গভীর গোপনে কখন মন হয়ে যায় কবি
    ছন্দরা গহিন আঁধারে অন্তরালে
    আমার ছায়াসঙ্গী হয়ে যায় ।

    মায়াবী আকাশ , তারাদের মেহফিল
    তাই দেখে মনে হয় টাইগার হিল
    রূপে রসে গন্ধ্যে সুরছন্দে
    আমার হৃদয় কবি হয়ে যায় ।

    চোখের পর্দা সরালে , দেখি ফুলের হাসি
    দোদুল দোলায় মন বাগিচায় স্বপ্ন রাশি
    ফুল পাখি গান, ঝর্ণা নদী হয়ে
    ভরে আমার নিত্যসঙ্গী সাহিত্যের খাতা ।

    শুন্য প্রান্তরকে দেখি নন্দনকানন
    লাল নীল পদ্ম ভিড় করে চোখের পাতায়
    পারিজাত ফুল হয়ে ফোটে কবির চোখে
    আমি এক ভাবুক লাজুক নিঃসঙ্গ কবি।

  • কবিতা

    কবিতা- আসল প্রেমিক

    আসল প্রেমিক
    – প্রদীপ কুমার সামন্ত

     

    নীলাকাশে আবির রাঙা অস্তমিত
    সূর্য্যের রশ্মিকে লক্ষ্য করে সবাই,
    কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপোলী রূপের ছটায়
    তাজমহলের শুভ্র পাষাণে
    পুলকিত হয় সবার অন্তর।
    কেউ কোনোদিন
    অস্তমিত নারীর যৌবন
    একাকীত্বের জীবন যন্ত্রণা
    লক্ষ্য করেছো কি?

    দুরন্ত খেয়ালীপনার অফুরন্ত যৌবনের
    হিসাব রাখে সব্বাই
    ক-জন আর জরাজীর্ণ বার্ধক্যের
    জীবন যন্ত্রণার ছবি বুকে আঁকে?

    আলো- আঁধারির মাঝে
    সকাল -দুপুর সাঁঝে
    যৌবন বার্ধক্যের অবেলায়
    সতৃষ্ণ দৃষ্টি মেলে যে অনুক্ষণ
    সেই তো আসল প্রেমিক।

You cannot copy content of this page