• কবিতা

    কবিতা- শূন্য পাত

    শূন্য পাত
    -প্রবীর রায়

     


    হেরে গেছি আমি জীবনের কাছে
    হেরে গেছি আমি নিজেরই কাছে
    তাই মৃত্যুকে আগলে নিয়েছি দুহাতে
    প্রশ্ন করিনি কখনো,নিজেকেই-নিজে
    আমার মৃত্যুতে নেই,তোমাদের কোনো দোষ
    তাই নেই কোনো রোষ,ক’রোনা কেহ আপসোস
    এতদিন,আমার সাথেই ছিল প্রশ্ন
    আর আমাকে ঘিরেই ছিল উত্তর
    আজ যখন আমি নেই বা চলে যাবো
    তখন কেন এত সমারোহ,এত ভীর-কল্লোল
    প্রাণ ছিল যখন,ছুটেছিলাম আমি প্রাণপণ
    কেউ দেয়নি হাত,কেউ আসেনি পাশে
    যাকিছু হয়েছিল নিজ চক্ষুঃ সামনে
    আর,আজ যখন আমি নেই মিথ্যের প্রলাপন
    বাড়িয়ে দিয়েছো হাত,কত হাত-শত শত হাত
    আমি নেই-আমি নেই,শূন্য ছিল তখন এ পাত

  • কবিতা

    কবিতা- কৃষকের কান্না

    কৃষকের কান্না
    – প্রবীর রায়

     

    কৃষক হল দেশের জান আমার-তোমার প্রাণ
    টিকিয়ে রেখেছে সৃষ্টি ধরা সে-দেশের অভিমান !
    রুক্ষ মাটিতে সোনা ফলাই সে যে অগ্নি-জল-ঝড়ে
    লাঙল টানে পেটে অঙ্গার সবই যে-ওরা কাড়ে!
    সুজলা-সুফলা পূর্ণ দেশ আজ যে -সবই হারা
    সুখ কেড়েছে -প্রাণে মেরেছে ওরা যে-আবার কারা!
    জলহীন চাষী কেঁদে মরে শোনার কেউ যে নাই
    সাড়-বীজহীন বৃথা সব লোন- কোথাও নাহি পাই!
    ব্যবসিক সে ধনী মানুষ কৃষক মাটির কীট!
    লোন নিয়ে সে বিদেশ ভাগে গরীবের বেলা গিঁট
    নেতার ভাষণ সভা জুড়ে চাষী ভাই রবে সুখে
    একবারো কি দিয়েছে উঁকি ধরেছে জড়ায়ে বুকে!
    শেষে ক্লান্ত-ব্যর্থ চাষী কিনিয়া আনিলো বিষ!
    সপরিবার-বলদ মরে জমিতে ফাঁসী, গলাতে বিষ!

  • কবিতা

    কবিতা- অন্য গ্রামের শিশুরা

    অন্য গ্রামের শিশুরা
    -প্রবীর রায়

    এ গ্রাম অন্যসব গ্রামের থেকে একদম ভিন্ন
    এখানে শিশুরা শিক্ষিত নয়,সুস্থ ও সবলও নয়
    এখানে শিশুরা বাঁচতে চায় না আর বাঁচাতেও চায় না
    এখানে কারোর মুখে হাসি নাই আর প্রেমও নাই
    যা আছে সব রাহু, কেতু, গ্রহ, নক্ষত্রের বিভ্রম কুণ্ডলী
    খেলাধুলা ও একতা এখানে দূর – বহুদূরে
    এখানে মাতৃভাষা আমাদের বাংলা নয়
    হতে পারে বাঙালি, তবুও পরাধীন ভাষা সকল মুখে
    এখানে ভালোকথা বলারও কেউ নেই আর শোনারও কেউ নেই
    যারা আছে সব মানুষের বেশে দৈত্যদানব
    তাই সকল হাতেই আজ নেশা ও মারণাস্ত্র
    তাদের জীবনের অঙ্ক সম্পূর্ণ ভুলে ভরা
    গালাগাল তাদের শিশুশিক্ষা আর যৌনতা তাদের আনন্দ
    চোখের সামনে ঘটে চলা দৃশ্য দেখে শুধু কাঁদি
    আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম তাদের ফিরিয়ে আনতে
    কিন্তু আমি সেখান থেকে বেঁচে ফিরিনি
    আজ আমি যে এত বলছি,আমাকে দেখছো সে কিন্তু আমি নই
    সে আমার মৃত লাশের প্রতিটি ধমনী ও শিরা থেকে বয়ে আসা রক্ত প্রবাহ।

  • কবিতা

    কবিতা- নূতন মা

    নূতন মা
    – প্রবীর রায়

     

    আজ আমি দেখলাম এক নূতন মাকে চৌরাস্তার ছোট্টপ্রান্তে
    কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়াই ত্যাগ করেছে সব পরিবার
    স্বামী পর করেছে ডাইনি বলে,মানেনি মা তবুও হার
    কুলক্ষ্মী নাম দিয়েছে,অধিকারটাও সব কেড়েছে
    সমাজ দেয়নি সাথ,মুখের কথায় তির মেরেছে
    মা ত্যাগ করেছে ভীত ও লাজ, শিশুর মুখটি চেয়ে
    বাঁচাতে হবে ওকে,একদিন উত্তর নেবে চেয়ে
    পথকে করেছে নিজের বাসা সাহিত্য করেছে কর্ম
    বাঁচায়নি তো সমাজপতি বাঁচায়নি তো কোনোই ধর্ম
    মা ঝড়-বৃষ্টি-শীত-গ্রীষ্মে পায়নি কাঁথা-ছাতা
    পথে বসে করতো গল্প-অনর্গল বইতো কবিতা
    একদিন সে বড় হল করলো বাজিমাত
    প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ওদের করলো কুপোকাত।

  • কবিতা

    কবিতা- ‘লুট’

    লুট
    – প্রবীর রায়

    লুট!লুট চলছে আজ গণতান্ত্রিক দেশে
    এ লুট গদি, ধন-সম্পদ, মণি-মুক্তার নই
    এ লুট জীবনের, প্রাণের, জলের
    চারিদিকে অবিরত হৈচৈ, চেঁচামেচি, আর খুনোখুনি
    ধনী-গরিব, মুচী-মেথর সকলেই এই লাইনে
    এখানে কেউ অচ্ছুৎ নই, কেউ অস্পৃশ্য নই
    এ লাইন শিশু-বৃদ্ধ-যুবক, বেশ্যা-ধর্ষক সকলের
    এখানে কোনো ধর্ম, জাতি, শক্তির জন্য যুদ্ধ নই
    প্রাণ বাঁচাতে আত্মবলিদান, রক্তাক্ত প্রহরের বিবৃতি
    ট্যাঙ্কার, নলকূপ, নদী, খাল, বিল কোথাও জল নেই
    নেই সবুজাভ পৃথিবী, চারিদিকে ফসলহীন শূন্য মাঠ
    ধ্বংস! তবে কি ধ্বংস হতে চলেছে-এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড!

  • কবিতা

    কবিতা- মানবোনা কারোর কথা

    মানবোনা কারোর কথা
    – প্রবীর রায়

     

    নাঃ মানবোনা-মানবোনা আমি কারোর কথা
    ভাঙুক পাঁজরা-ঝরুক রক্ত সইবো আমি সবি ব্যথা
    রাজ শাসনে খেলছো তোমরা-মরছি মোরা ছাইপাঁশে
    একেক সময় একেক চিত্র-বদলাক এ রীতির আভাষ
    কি বলতে চাইছো তোমরা-আমরা কি হুতুম পেঁচা
    আয় ছুটে আয় বেকার যুবক-একসুরেতে আজকে চেঁচা
    গড়িব মোরা সব বিকেছি-লোন নিয়েছি কাজের জন্য
    রক্ত বেচা বাবার আশা কাঁদছে পথ-এ আমরা বন্য
    ধূলিমাখা সড়ক কীট-নতুন রীতির আমরা পণ্য
    মানবোনা এই দুঃশাসন-করবো নাকো আইন গণ্য
    পথ-এ আজ নামবো মোরা-মিছিল হবে হকের জন্য
    চুক্তিপত্র আমরাই দেবো-হ’লে হবে নেতা ধন্য
    হোক এদেশে উন্নত শির-ভয় পাবোনা লড়তে কভু
    মুছুক বিভেদ থামুক আগুন-জয় ছিনিয়ে আনবো তবু
    বিশ্ববাসী মোরা ভাইভাই-নতুন প্রভাত হইবে উদয়
    মারবে ওদের মরবো মোরাও-সকল কণ্ঠে রক্তিম জয়।।

  • কবিতা

    কবিতা- অন্নে জীবন

    অন্নে জীবন
    -প্রবীর রায় ‌

     

    অন্ন যা সকলের জীবন পাখি
    ধনী-গড়িব-মুচি-মেথর
    সকলের একটিই তৃষা
    ধর্ম পারেনা অন্ন বুনতে
    জাত পারেনা প্রাণ বাঁচাতে
    এমনকি রাজা-নেতারাও পারেনা
    মৃত শরীরে প্রাণ ফেরাতে
    অর্থ-সম্পদও পারেনা বৃষ্টি করাতে
    যে অন্ন কোটিকোটি হত দরিদ্র-অনাথ-বৃদ্ধাশ্রম ও ভিক্ষুকের জীবন বাঁচাবে
    যে অন্নে তোমরাও বাঁচবে
    তোমরা তা নষ্ট করছো,পঁচিয়ে ফেলছো
    তবে কি তোমরা মানুষ!
    না-তোমরা জড় বস্তুরও অধম
    সে নির্জীব বস্তুও আমাদের অসময়ে সাথ দেয়
    আর তোমরা-ছিঃ চিত্তহীন গরল
    তোমাদের মৃত্যুতে আমি কাঁদবো না
    শ্মশানে যাবোনা-সংকীর্তন গাইবো না
    পাড়লে আমায় মেরে ফেলো
    তবুও চেঁচিয়ে বলবো
    মৃত্যু দাও – ওদের প্রাণ ছিনিয়ে নাও
    তবেই আমি-তোমরা-সকলেই বাঁচবো।

  • কবিতা

    কবিতা- দামামা

    দামামা
    -প্রবীর রায়

    লড়ছে জয়ের মিছিল রক্ত বিজয় মিছিল
    তোমরা জানোনা পাষাণ! ওরা কারা?
    তোমরা যাদের দিয়েছো ভাসান
    বাজছে ডঙ্কানিনাদ বাঁচাও-বাঁচাও শব্দে!
    মেরেছো তোমরাই দূত – খ্রিষ্ট পূর্বাব্দেঃ!

    ভাজছো তপ্ত তেলে-কাটছো মুণ্ডু বলে
    সাজছো নারীর দেহে-কাঁদছে যে ভ্রূণ জলে!

    নেংটো শিবের দামামা, নয় তবে সে শিব!
    ত্রিশূল ওদের হুল, নয় সে রুদ্র ত্রিশূল!

    দাও হে ভিক্ষে ঈশ্বর-তোমাদের ঐ স্বর!
    তোমরা লড়বেনা জানি-দাও হে অস্ত্রখানি!

    আমরা হব চণ্ডী-আমরা হব অর্জুন
    খুলবো তৃতীয় আঁখি-ধ্বংসিব সব ঘুণ।

  • কবিতা

    কবিতা- ওরা ফিরবেই

    ওরা ফিরবেই
    -প্রবীর রায়

     

    বিদ্রোহী সুর ওদের কণ্ঠে যাহারা গড়েছেন ধরা
    রণাঙ্গনে প্রাণ দিয়েছেন তাই গৌরবে মুখ ভরা!
    রক্ত ঝরেছে প্রতি পলেতে বাসযোগ্য করতে
    কুসংস্কার বর্জিতে তাই নাহি ডরেছেন মরতে
    নব সূর্য স্বাধীনতার ধ্বজা ওড়াতে তোমরা–
    সাম্যবাদের শত শ্লোগান গেয়েছিল সাথে ডোমরা
    প্রতিবাদ ছিল মানুষে-মানুষে দানব শাসন রুখতে
    আজ কেন তবে স্বাধীন দেশে সততা পথে ভুক্তে
    যাহারা শেখালেন মুখেতে বুলি গিলিলেন ভূতল বিষ
    ভাঙছো ওদের বিশ্বাসটাকে – মূর্তি মাটিতে মিশ
    ওদের দেখানো পথে’ চললে হইলে অনেক বড়
    চিনছোনা আজ ওদের তোমরা ছিঃ-দৈত্যাদেশ গড়
    তোমার শিশুর মুখেও আজো ওদেরই ভাষা ঝরে
    করবে ওরাই প্রশ্ন একদিন প্রতিটি ঘরে-ঘরে
    শক্ত হবে মেরুদণ্ড লেনিন,য়বিবেক ফিরবেই
    ঈশ্বর, রবি,সুভাষ, সুকান্ত,আজাদ এসে ভিড়বেই।

  • কবিতা

    পুরুষ হত্যা

    পুরুষ হত্যা
    – প্রবীর রায়

     

    পুরুষ তুমি নিজেকে নিজেই হত্যা করছো
    কেন এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছো
    তুমি কি বাঁচতে চাওনা
    জীবনটা তোমার নিজের নয় জেনে রাখো
    তুমি অন্য একজনের দেহে রাজ করছো
    তাকে কষ্ট দিচ্ছো, আঘাত দিচ্ছো
    না-সে এমনটা চায়না তোমার কাছে
    তুমি-নারীকে ধর্ষণ করছো,নেংটো করছো
    একাজ তোমার দ্বারা সাজেনা- মনে রেখো
    এটি তোমার-পুরুষত্বের পরিচয় নয়
    বরং নিজেকে হত্যা করছো সজ্ঞানে
    তখন সকল নারীর একটাই কাম্য- প্রতিশোধ
    তাকে দেখামাত্র বধ করার-দেবী দুর্গার মতো
    যেই নারীরা এই আন্দোলনে নামবে তখন কোনো নারীর জীবন শেষ হবেনা
    পথে পথে পড়ে রবে বিপরীত রক্ত
    নারীর বদলে পুরুষের লাশ-নেংটো দেহ।।

You cannot copy content of this page