-
কবিতা- গোলোযোগ
গোলোযোগ
– মঙ্গল মন্ডলসৃষ্টিতে গোলোযোগ ঘটেছে,
মাথাকে পা আর পা-কে মাথা বলে ফেলছে,
বোধহয় ভুবনে জটিলতা এসে গেছে,
জীবনগুলো চলছে না সহজ ভাবে,
সহজকে বিশ্বাস করে না
আর জটিলকে তারা পারে না সইতে,
পথেঘাটে বিচার বিবাদ চলছে।
আমি যেন সাদা মাটা,
রাখি না মনে হিংসা আর কুমাথা।তবু আসে গোলোযোগের গন্ধ,
চারিদিক যেন সবাই অন্ধ,
আমি মাঝে জাঁতাকলে ফেঁসে পেলাম কত ব্যথা।
জলে স্থলে ঈশ্বরের প্রার্থনা চলে
অদৃশ্যে বিশ্বাস আনে
দৃশ্যে ঘৃণা হিংসারা যাচ্ছে স্নানে,
আধ্যাত্মিকতায় মনে উদারতা আসবে
বলেছিল সেই পুরোনো অতীত গানে,
গোলোযোগের ছোঁয়া এখানেও ভরছে
চলছে মিথ্যা হাসি ভীড়ের মাঝে
দেখানো ছলনায় দান প্রতিদানে।ঈশ্বর-ভগবান-আল্লা কতশত নামে
ভক্তি আসে কাল্পনিক ভাবনাতে,
এঁরা সবাই ছিল হয়তো একদিন,
তবে তুমি কেন ভাবলে না পূজা প্রার্থনা করতে গিয়ে
যে ওদের মতো আমিও হবো স্বজ্ঞানে ঈশ্বর,
গড়ব ভালোবাসার ইমারত,
বাঁচাব শতকোটি আরো কত প্রাণ ,
কেন এলোনা এমন ধারণা, কেন মিথ্যা অভিধান?হতে পারো না তুমি সবার? নিশ্চয়ই পারো!
তুমি আনবে গোলোযোগ সরিয়ে নতুন ধরণী,
আনবে ঈশ্বর-আল্লাহ-ভগবান
জীবকূলের ঐক্যের আত্মায়,
আনবে কত স্নেহ ভালোবাসা বিশ্বাস
আর ঐক্যতার গান।
তুমি আনবে তো?
এবার পারতেই হবে, জীবকূল যে সংকটে,
তুমি নিশ্চয়ই পারবে!
তুমি এই ভুবনের নয়নমণি। -
কবিতা- ভাবনাতে ঝড়
ভাবনাতে ঝড়
– মঙ্গল মন্ডলঅজস্র বাদ্যে কানে
শব্দ ধ্বনির হুংকার ভরতে চাই,
যদি কষ্টগুলো তীব্র বেগে আসে
তাকে বলে দিও একবার
এখানে কষ্টের তীরধনুকে
বুক পেতে ঘুমানো রীতি হয়েছে আজকাল,
ওই আবার শব্দতীরের হুংকার বাজে
কানে বাজা সহস্র বাদ্যগুলোর
চিৎকারে তা কন্ঠে আনছে
আর গলা উঁচিয়ে বিষ পান করছে মুঠো মুঠো,
দরিয়া কিনারে নৌকা নিয়ে
দাঁড়িয়ে আগুনের তাপদাহ ,
ক্ষণে ক্ষণে সমুদ্র মরু হচ্ছে
আবার জলে ভরছে,
এ পৃথিবী দিয়েছে সব তবে
আজ নেব যত অশ্রুভরা নোনা জল
আর এক বাক্স অন্ধকার রঙ,
আগে হৃদয়কে আঁধারে লুকাবো
তারপর বজ্রপাতের আলোতে খুঁজব নিজেকে
দেখি যদি নোনা জলের পাত্র হয় অমৃত সুধা.. -
কবিতা- জাগরণের আলো
জাগরণের আলো
-মঙ্গল মণ্ডলরাত অনেক হয়েছে
এখন রাস্তায় কেবল নিস্তব্ধতা
ওখানে কাদের কিচিরমিচির চলছে
মেয়েটা বোধহয় রয়ে গেছে একা,
দৌড়ে পালানোর চেষ্টা চলছে যেন
প্রতি নিয়ত , অক্ষম হচ্ছে পায়ের বল।
ওরা যে চারজন মেয়ে একা,
শরীরের অঙ্গ গুলো যেন
শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাঁচার চেষ্টার যুদ্ধ চালিয়ে গেল ,
তবু হারতে হল পিশাচের দলের কাছে ,
আর পারল না দৌড়াতে পায়ের পেশিগুলো,
পারল না সে নিজেকে বাঁচাতে ,শরীর যেন দেহের মায়া ছেড়ে চলে গেল ,
কিন্তু যন্ত্রণা?
যন্ত্রণা তো ছাড়লো না তাকে ,
প্রতিমুহূর্তের এমনি কত চিৎকার বাতাসে মিশে আছে,
বাতাস তা লুকিয়ে রেখেছে,
শেষ দেহ না জানি কোন কিনারায় পড়ে আছে ,
কত অসহায় দেহ নিরবেই হারিয়ে গেছে,
নিষ্পাপ প্রাণের চেয়েও তাদের কামনা বড় হল? ,
বড় হল তাদের পৈশাচিকতা?পৃথিবীতে জঘন্য কাজের অবলুপ্তি যেদিন হবে
হয়তো সেদিন চারিদিক রামধনু আর
চারিদিক নতুন প্রকৃতি নতুন করে গড়বে।একা যেতে দাও হে পৃথিবী
মেয়ে কি ছেলে সমস্যা কি?
যেদিন অন্ধকার হবে
তুমি আলো দেখিও দিওনা আর ফাঁকি।
ওরা স্বাধীন ভাবে চলুক নির্ভয়ে আলো আঁধারে
এক দুটো ভুল যেন না হয় ,
যেন আর কলঙ্ক না করে।ফিরে আসুক এক নতুন দিগন্ত ,
নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাই হোক একত্রে জাগ্রত। -
কবিতা- অন্তরালে বিচ্ছেদ
অন্তরালে বিচ্ছেদ
-মঙ্গল মন্ডলগ্রীষ্মের শেষে আকাশে বিশাল বড় কুৎসিত মেঘ
মাঝে মাঝে চিৎকার করে,
আলো ঝরিয়ে কেমন যেন শোনা যায়
প্রবল হুংকার আর আর্তনাদ ,
মেঘেরা দলে দলে একটা লড়াই করছে মনে হয়,
আমি তাদের মাঝে যেতে চাই,
আর বলবো তাদের কানে কানে,
-“এত চিৎকার কেন করিস?
জগতে সবাই ঘুমায় যে!”শুনল না হয়তো আমার মানা,
সমুদ্র গর্জে তাদের ঝগড়ায় সঙ্গ দিচ্ছে
এবার তোলপাড় হবেই হবে তা সব জানা;
ভাঙবে ঘর-বাড়ি, ভাঙবে কত সাজানো সংসার,
বোঝেনা তো ওই কালো বাদল, বুঝবেও না আর,
তারা আসবেই দলে দলে ভাঙবেই নদীর বাঁধ পাড়;
ওই তো ওখানে একটি পাখি কত কুঠি জমিয়েছে
সুন্দর বাসা গড়েছে নতুন অতিথির জন্য,
কষ্টে জমানো সংসার হচ্ছে রোষে চুরমার,
হারিয়ে স্বপ্ন ওই পাখি খুঁজবে অন্য অরণ্য;
কত পাখি কত প্রাণ এমনি হারায় চোখের আড়ালে
তবু আসবে বাদল আসবে ঝটিকার দল
ওরাও হারাবে বারে বার প্রকৃতির অনন্ত বলে.. -
কবিতা- চেতনায় দ্বন্দ্ব.
চেতনায় দ্বন্দ্ব…
-মঙ্গল মণ্ডলও কি জানে আর কি জানে না
তা নিয়ে চলে দ্বন্দ্ব ,
একদিন কত ভালোবাসা ছিল
কত ভক্তি ছিল মনে
তাই বোধহয় আনন্দটা ছিল প্রাণে ,
বড় হয়েছে সে
চিন্তা ধারায় বদল এসেছে অনেক
জড়িয়ে পরে নিজের কাছে হাজার তর্কে ,
রেগে কতবার মাথা ফাটায়
কেন-কি-কোথায়-কবে ইত্যাদির প্রশ্ন
তাকে মারছে রোজ
তাই ফিরতে চায় সে শিশুকালে,
উচিত অনুচিত এর দ্বন্দ্বে আনন্দ ভুলেছে;
যতদিন ভক্তি সাগরে ছিল রাবণও ছিল মুক্ত ,
ঈশ্বর আনন্দ ছিল তাঁর কাছে..
যেদিন তর্কে ভক্তি হারাল
সেদিন থেকেই হয়েছিল অসুর রাবণ..
শান্তিতে থাকতে পারেনি সেও
রোজ রাগ অহংকার অভক্তি আনত,
আনন্দ হারিয়ে তাঁকেও হারাতে হল জীবন.. -
কবিতা- খাদ্য বন্দী
খাদ্য বন্দী
-মঙ্গল মন্ডলওই যে হাঁসছে শিশুর কন্ঠ
হাঁসে দেখো মা,
পথের ধারে সে এক দৃশ্য
হাঁসি ছাড়া তাদের থলিতে কিছুই ছিল না;
পরনে নেই বিলাসিতার বালাই
নেই সমাজের ধিক্কার ঘৃণার ভয়,
লোভ নেই তার, একদিন এক বেলা খেলে
জানে আবার হবে অন্ন পাওয়ার সংশয়;মাতৃদুগ্ধ পাওয়া শিশুটাও
কেঁদে ফেলে হাসতে হাসতে,
ওখানে যে আর অমৃত আসে না
মাও জড়িয়ে হেসে কাঁদে সাথে;
অর্থ দিয়ে সীমানা হয়েছে খাদ্যের
প্রকৃতিও বন্দী এ সংসারে,
স্বাধীনতা তো পশুপাখিদের জন্য
মানুষ কেবল জীবন কাড়ে…–
-
কবিতা- সমান
সমান
– মঙ্গল মন্ডলছেলেটির চরিত্র খারাপ
তবে সোনার আংটি আবার বাঁকা নাকি,
ও সব… ঠিক আছে,
বিয়ে হলে সব… ঠিক হয়ে যাবে;
মেয়েটি তবে কাঁচ হলো কেমন করে?
ভাঙলে জোড়ে না যে ওই সমাজে,
তখন সবাই বলে ও মেয়ের কলঙ্ক আছে।ছেলে যে ধোয়া তুলসী পাতা
যতই নর্দমাতে চলুক রোজ;
যতই অধিনায়কের বলে
দুর্বলকে কোণঠাসা করুক
তবুও পুরুষ তো !
করিস না চরিত্রের খোঁজ।কখনও কি কেউ ভেবেছো?
শরীরে নারী-পুরুষ কেবল ওরা,
বাকি সব …সমান,
পরিবেশ যেমন তারা হয় তেমন,
কেউ অন্ন জোগাতে, কেউ মনের দাসত্বে
সমাজের নিয়ম ভাঙে প্রতিক্ষণ। -
কবিতা- ভবঘুরে…
ভবঘুরে…
-মঙ্গল মন্ডলমনেতে প্রশ্নের ঝড়,
কোথায় গেলে পাবো উত্তর?
নদী পাহাড় নাকি জঙ্গল
নাকি মনের ভেতর!
ডানা মেলে উড়ে যাওয়া মানা ,
নাহলে উড়ে যেতাম সকল প্রান্তে
এক বাক্স ডাইরি ভরে,
খুঁজে খুঁজে ভরতাম সাদা পাতা
কলমের রেখার জোরে;
এখানে উত্তর আসে না সামনে
প্রশ্নেরাই কিচিরমিচির করে,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ডানা মেলে উড়ব নীলে আর উত্তরের পাতাগুলো
ওড়াবো বাতাসের নীড়ে;
আমার হবেই জয় ,মৃত্যু হবেই অভয়,
প্রশ্নে প্রেম হয়েছে, উত্তর করব জয়;
সব সীমা ছাড়িয়ে নীল দিগন্ত থেকে
পৃথিবীর গভীর লাভাতে দৌড়ে যাবো,
কেড়ে নেবো সব প্রশ্নের উত্তর
কেবল একটু স্বাধীনতা একটু ডানা
আসার অপেক্ষায়,
আমি ভবঘুরে হবো.. -
কবিতা- স্বপ্নের আশ্রয়
স্বপ্নের আশ্রয়
– মঙ্গল মন্ডলস্বপ্নটাও তার এক সুখের প্রজাপতির ডানা,
উড়ে যেত ফুল থেকে ফুলে
মধুর গান গেয়ে ছন্দে তালে,
ঘুম ভাঙলে মন ভেঙে যেত,
আর একটু ঘুমানোর আপ্রাণ চেষ্টা,
না! এল না আর ওই স্বপ্ন,
সারাদিন ওই স্বপ্ন মন জুড়ে কল্পনা করত,
নিজেই হাসত লজ্জা পেত
আবার মনে মনে দু’চারটে কথাও বলে ফেলত,
মেয়েদের ওটাই তো অকৃত্রিম ভালোবাসা,তাকে দু’দিন পর যে খুঁজতে হবে নিজের ঘর;
পাবে কি স্বপ্ন, পাবে কি স্বপ্নের ঘর!
পাবে কি আপন বাসায় স্বাধীন পাখি হতে!
তাকে তো স্বপ্ন নিয়েই থাকতে হবে,
কখনও বাপের বাড়ি, কখনও স্বামীর ঘর, কিন্তু আপন ঘর? সে কি আদৌ পায়?
তবু মেয়েটা খুঁজে বেরায় নিজের ঘর;
কেউ তাকে বলবে কি ডেকে, এসো
এটাই তোমার নিজের ঘর এটাই স্বাধীন বাতাস;
তবু প্রশ্ন,
স্বাধীন প্রজাপতি সাজতে কি পারবে সে?
বাতাসের ছন্দে মধুর স্বর গাইবে কি সে?
মেয়েটা ফুঁফিয়ে কাঁদে মৃদু স্বরে ঠোঁট কাঁপিয়ে বলে যায়,“আপন যে হবে তাকেও আমার ঘর দিতে হবে, আমার ঘর..”
-
কবিতা- শেষ প্রান্ত
শেষ প্রান্ত
– মঙ্গল মন্ডলআমি ক্লান্ত জীবনের মাঝে, আমি ক্লান্ত
জীবনের খোঁজে, আমি ক্লান্ত নয়নের সাজে,
আমি ক্লান্ত আমার মনের ভাঁজে;
আমি সারাদিন তোমার পথ চেয়েও ক্লান্ত
আমি আমার পথে দাঁড়িয়ে থেকেও ক্লান্ত,
অলস হয়েও হয়েছি ক্লান্ত, কর্মী হয়েও হয়েছি পরকণ্ঠের ক্লান্ত;
আমি বিশ্রাম চাই, এক মুঠো বিশ্রাম, কিংবা
এক চামচ বিশ্রাম? আমি ক্লান্ত, তোমাদের কাহিনী শুনে শুনে;
রাজনীতি ধর্ম মানবিকতা এগুলো পুঁথিগত
আর চা দোকানে পাড়ার ঠেকেই
অবিরাম বড় বড় বুদ্ধিজীবী আনত,
আমি শুনে আর দেখে যেন ক্লান্ত;ও দিনদয়াল একটু বিশ্রাম দাও,
একটু আগুনের বিশ্রাম,
জ্বলে শুদ্ধ হবো আমি ক্লান্ত;
পৃথিবী হারালো কারোর নেই ভ্রুক্ষেপ,
আমি খুঁজি, ওখানেই আমার বিশ্রাম ওখানেই আমার শেষ প্রান্ত।