• কবিতা

    কবিতা- নব কী জানা নাই

    নব কী জানা না

    -রাজীব লোচন বালা

     

    আমাদের নব কী জানা নাই, তবে শহুরে বাবুরা নতুন বলে
    আমাদের গায়ে শীতকালের জামা নাই বাবুরা নতুন জামার উৎসব বলে।
    জানেনতো কার্তিকমাসে যখন ধান পাকে
    আমাদের দামহীন হাসি সবুজ মাঠে ঢেউ তোলে, এটা অম্লান।

    আমাদের নব কী জানা নাই, আজও কৃষক রাস্তায় নামে
    ফসলের মূল্য পাচ্ছি না বললে বাবুরা পুলিশপিটা করে।
    জানেন তো ভারত কৃষিপ্রধান দেশ, তাইতো কৃষক-প্রজা আজ না খেয়ে মরে!_
    নবান্ন ভদ্রলোকেদের জন্য মানানসই, তারাই না হয় নতুন খাবে।

    আমাদের নব কী জানা নাই, বাড়িতে ভাতের হাঁড়ি বসলে
    সুবাসিত সেই ঢেউয়ে আজও সাঁতার কাটে ময়না-সায়নেরা,
    বাবা বলে শুনছোগো আজ একটু সবাই মিলে জমিয়ে খাব_
    __এনেছি বুঝলে আজ নতুন খাওয়া, নাহয় অল্প করেই নিব।

    আমাদের নব কী জানা নাই, তবে পরের মুখের হাসি খুব ভালো লাগে
    নবান্ন! নবান্ন!! প্রতিটি ভাতের হাঁড়ি কী নবান্নের স্বাদ দেয় না ?
    এই হৃদয়ের নীলাচলে প্রতিদিন কি ভাত খাওয়ার আনন্দ জাগে না?
    তাই তারা করে দিয়েছে উৎসব নবান্নের রাস্তায় রাস্তায়…
    আজও নবান্নের উৎসব হাসি-মজায় বাবুর ঘরে টাকার জৌলুসে হলেও,
    অন্ধকারটা আজও কাটেনি! তবুও আশা আছে…নূতন ভোরের__
    নবান্নের নবর আলিঙ্গন আজও তাই বহু ঘরে হয়নি।

  • কবিতা

    এসো হে এ প্রাণে

    এসো হে এ প্রাণে
    -রাজীব লোচন বালা

     

    এসো তুমি বসো হৃদয় মাঝে শান্ত করো এ ভুবনেরে
    তুমি আছো মন-মাঝে তবুও মানুষ বুঝতে নারে ।
    জাত-পাত ভেদাভেদে মানব জীবন আজ সন্ত্রাসে
    ভালোবাসার সাগরে ডুবে শীতল করো মানুষে।

    আজ প্রেম-ভালোবাসা আছে নাই শুধু আত্মোৎসর্গ
    হৃদয় ব্যাকুলতা হীন মন আশাবাদী, দেখি না যে কোন স্পর্শ।
    হৃদয় আছে, স্পৃহা আছে, আছে দু’চোখ নাই শুধু আত্ম নিবেদন
    মনের ঘরে শমা বসে ঢেউ তোলে না সংগঠিত জন-আস্ফালন।

    ভালোবাসা আজ এ খেলাঘরে কাম-কামনার প্রচারে
    তোমার মাঝে আমার প্রকাশ এখন শুধুই ভাষণ মাঝারে ।
    চলছে নদী গড়ছে বাড়ি মানুষ এখন অন্যগ্রহের যন্ত্র গাড়ি
    আত্মবিস্মৃতি আর পরানুকরণে সবই এখন ভ্রষ্ট-মিথ্যাচারী।

    ধর্ম-জাতে ভরে গেলে ভালোবাসাকে কালোজ্বরে ধরে
    পোশাকি নয় যে ভালোবাসা আত্মশুদ্ধিতে এইতো মানুষ গড়ে।
    পরমাণু ভাই ফাঁটার আগে রেষারেষি-কোন্দলতায় আর না ডুবে
    ভালোবাসায় জগৎ ভরিয়ে যাই এবার মাটির কোলে , আবার কিন্তু আসতে হবে।

  • কবিতা

    এ মৃত্যু আমার বিবেকের

    “এ মৃত্যু আমার বিবেকের”
    -রাজীব লোচন বালা

     

     

    এ পৃথিবী – এ মানুষ সবই রয়ে যাবে , আসবেনা শুধু__
    সে আমার বিবেক, আমার চৈতন্য আর আমার মনন।
    মুক্তির রঙ – মুক্তির যুদ্ধ আর মুক্তির ত্যাগ- তিতিক্ষা 
    রয়ে যাবে সে বয়ে যাবে নদী রক্তস্রোতে মিশে বারুদের ফুঁটো দিয়ে।

    মানুষ রইবে মানুষ হারিয়ে, জীবন শান্ত হবে মনটা কাঁদবে,
    অশ্রু জমাট হবে একদিন হৃদয়ে খিল গাঁথবে।
    কবিতার ভাষা , ছন্দ- তান সবই নীথর মলিন হবে
    চারপাশ হতে বিধ্বংসী নরহত্যা লীলায় মায়ের রোদন বুক থাপরে থাপরে পরবে।

    এ নদী – এ বায়ু – এ মাটি শব শুঁকোবো, মানুষ অন্য গ্রহের পিশাচ_
    মুক্তি এদের সয় না , আগুন এদের নেভে না.. আছরে পরে আমার বিবেক, আমার হাত শুধুই মুখের পড়ে।
    কত বেদনা সইবে আবার জাগতে হবে , জানি না কিভাবে? কোন খানে ? কার দ্বারা নিশ্চল হব আমি।

    বুদ্ধিজীবিদেরও কী বলবে ওরা কি হ্যাঁ বা না করবে ?
    বলি সদা সর্বদা হয়ে আসছে প্রান্তিকের , কেননা তার দায় পড়েছে!
    বিস্ময়ের কিছু নেই ইহাই সত্য, এ যে উন্নতির মহাযজ্ঞ, দান দিবে না !!!
    বিদীর্ণ কন্ঠ, ভাষাহীন কথা আর শব্দহীন মৌনতা আমাদের বেশ সাজে
    কিন্তু কী জানেন তো এ বুলেট ! এ রক্তের ছিদ্রতা আমার বুকে হয়তো পড়েনি, নয়তো বুকের ভিতরের হৃদয় আবছা দেখতো , না হয় অন্ধ হতো।

    ভাবছি হৃদয় আবার অন্ধ হয় নাকি, এ কী কল্পনা তোমার_
    আবার ভাবি, মাটিতে পা রাখি এ যুদ্ধ বিবেকের আর বিবেক শূন্যের।
    এ লড়াই বুকের – এ লড়াই সত্যের, হায় এ হৃদয় অন্ধে , অন্ধকারে ভরা
    আলোর পাখিদের বুকে গুলি ‘তোমরা’ কোরো না।

    “মা” যে বড়ই দীনদুঃখীনি, “ওরে কোথায় গেলিরে তুই” ? এ প্রশ্নের প্রতুত্ত্যরে কী হবে এ হৃদয়ে মোর জানা নেই।
    কতশত বোন,হাহাকার ধ্বনি, শকুনের মতো ঝাপিয়ে পড়া শয়তানি বুদ্ধি,
    দূর হতে দাঁড়ায়ে , ভাবি আছি শান্তিতে,,
    নিজের গোলায় আগুন না ধরলে হাত কি থাবরায় বুকেরে।

    কত স্বপ্ন- কত আশা কতই ভালোবাসা আর ইচ্ছা_
    আজ এখানে আমার প্রাণের আশার সমাধি লিখন হয়ে যাবে।
    না না না আর গুলি কোরো না সেই পাখির বুকে
    এ কন্ঠ যে তার গাইবে সত্যের জয়গান।
    সেই তার প্রেরণা, আশা মোর রক্তে বয়ে যায়-
    এ মানুষ তাঁকায় ।
    এ বিবেক – এ মৃত্যু আমার বুকে কি ঢেউ তুলে যায় ?

  • কবিতা

    “শুধু এক মুঠো ভাত চাই”_

    “শুধু এক মুঠো ভাত চাই”
    -রাজীব লোচন বালা

     

     

         জানো কি প্রিয় ? আমরা জানি না গো !!!
         হীন দরিদ্রের আবার- প্রিয় থাকে নাকি ?
          এতো শুধু মাত্র কষ্ট কল্পনা ছাড়া আর বৈকি,
    মাথার ওপর যার আকাশ হল ছাদ, অন্ধকার যাদের চার দেওয়াল
      আমাদের তো ‘প্রিয়’ থাকতে নেই, ইচ্ছা বিবর্জিত হওয়া চাই।

    জানো বিধাতা ! এখন মনে হয় ‘আমরা’ তোমার অমৃত সন্তান নই,
    আমরা বস্তু জগতের দু-পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, মূল- চালিকা শক্তি।
    রাস্তার ধারে ধারে কত  রঙ্গে-ভঙ্গে  “মানুষে”র আনাগোনা,
    আসেনি কেহই অনুকম্পার সহিত হাত বাড়িয়ে, শুধু শুনি ভাষণ।

    বাবা বলেছিল, খোকারে আমরা যাযাবর আমাদের কোনো ইচ্ছা রাখতে নেই,
    ছোটো মেয়ে,  যখন দেখে  মা-বাবা পরিবার কত আদর কত রঙ্গ বাহার_
    তখন জানো বড্ড ইচ্ছে জাগে, হৃদয় আছে তো মোদের,
    আমরাও ভাবতে বসি শেষ বিকালে ভোরের আলোর আশায় চেয়ে।

    যখন যাই পথে, রকমারি ভাতের মিষ্টি গন্ধ নিংড়িয়ে নেয় ক্ষুধা
    ড্রেনের আনাচে-কানাচে বেসামাল কত-শত প্রিয়! পড়ে থাকে।
    ঝাঁপিয়ে পড়ি তার ওপর, উদাত্ত কন্ঠে আজ একবিংশ- শতকেও,
    চিৎকার করি, খাদ্য চাই! খাদ্য চাই!! খাদ্য চাই!!! শুধু এক মুঠো ভাত চাই।

    গলা- বুক- হৃদয় জ্বালা করে, উন্নয়ণ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে,
    না না না সইতে হবে তো তোরে, তুই তো প্রান্তিক ভিখারী__
    যা দিবে নেব! যা খাওয়াবে খাব! মরবো কিন্তু কেন জানবো না,
    প্রশ্ন করলে রাত-বিকালে আমায় পাবে ওই সুদূরে রেল- রাস্তার ওপরে।

    তাই প্রিয়তে কবে চলে গেছে রে, মন্ডা-মিঠাই, চপ-কাকলেট
    সুস্বাদু ভোজন সইবে না আর পেটে, তাই একটু ফ্যানওয়াল ভাত দিও,
     জীবন কবিতায় ছন্দ আসে না, মাথা- মুন্ডু স্থির থাকে না__
    মধ্য গহ্বর উত্তপ্ত হলে, চিৎকার ধ্বনি শাণিত তরবারি হয়ে,
    ফিরে আসে আকাশ-পাতাল থেকে, লাগে আবার শূন্য বুকে।

  • কবিতা

    এ পথ এ জীবন

    এ পথ এ জীবন
    -রাজীব লোচন বালা

     

     

    চলতে চলতে তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজ মাগো
    তুমি নিঃসহায়, নিঃসঙ্গ ,নিরুপায় আর আবেগতাড়িত জননী
    ভেনাসে প্রবাহিত রক্তও আজ নিঃশব্দে বয়ে যায়,
    পাখিদের কুহুতান আজ মলিন হয়ে রয়ে যায়।

     

    চাতকের চলার পথে জলও আজ বিষাক্ত, সবই খণ্ড ভণ্ড,
    মানুষ আজ বহুদূর এগিয়ে, সে পায় না শুনতে পবিত্র শঙ্খধ্বনি
    সারাজীবন নিয়ে নিয়ে সে আজ লোলুপতার ঘোরে নিকৃষ্ট সাজ সাজে,
    প্রতিবাদ জানাই, গর্জে ওঠো সেই শয়তানের প্রতি।

     

    আজ ভারত স্বাধীন ৭২ বছরের উপরান্তে এই কী দেশ ছিন্নভিন্ন,
    জাত- পাত আজও আছে, মুক্ত পাখির বুকে গুলি আজও বিঁধে।
    শিশুরাও নেই আজ স্বাধীন, অলিন্দে নাম তার রক্তের দরজায়
    এজলাস খানায় ঘুরতে ঘুরতে টাইম নিয়ে আসে প্রার্থী, সত্যের চোখ বাঁধা।

     

    দাঁড়িপাল্লাকে হাতে নিয়ে সমান ভাবে আছে সবই,
    লোক দেখানো এ ভঙ্গিমা গরীব মরে, পুড়ে ছাই।
    সত্য আজ কালোমেঘে ঢাকা, তবুও সূর্য আছে বৈরাগ্যে
    প্রতিবাদী ভাষা আজ দেশলাই , আগুন ধরাই এর খাপে।

     

    রাস্তায় রাস্তায় অন্যায় হয়, কেউ যায় না মুখরিত হয়ে,
    নিজের গোলায় আগুন না ধরলে, সকলকেই মিডিয়ার পর্ণ্য মনে হয়।
    বিক্রিত সব, আমদানি কৃত সব পেশীশক্তি
    টাকার জোড়ে মানুষ আজ মানুষেরে “মানুষ” ভাবে নারে!

     

    কত রঙ্গ দেখবো দুনিয়ায় ও বন্ধুরে আমার,
    বৈঠা ধরি এপার হতে ওপারে নাওরে আলোক তরী আমার।
    জীবন ও মরণ , তোমারই সাথে, মানুষ আজ কীট
    প্রতিবাদ জানাই মানুষের প্রতি , চলার পথে রেখে যাই এ গিঁট ।

     

    প্রশ্ন জাগে মনে লুকিয়ে রাখো মনে, কে শুনবে বলো
    লোভাতুর এ জগতে মানুষ পাইনা আর খুঁজে।
    সুরশ্রীর সুর আর কানে বাজে না, কানতো শোনে না,
    চোখ বন্ধ, মস্তিষ্ক নিজেরে লয়ে ভাবে,জিভ দিয়ে স্বাদ খুঁজি, নাকে আজ রক্তের ঘ্রাণ।

     

    মানুষ আজ যন্ত্র, মানলাম এর মধ্যেও মানুষ আছে,
    তবে তারা কারা? তাদের কি দূরবীক্ষণ দিয়ে দেখা যায়?

    মনে নেই, চলার পথ অত্যন্ত বন্ধুর, রক্তস্রোতে ভিজতে ভিজতে

    এ পথ, এ জীবন কী শিখিয়ে যায় আমারে?

  • কবিতা

    বাঁচবে শিশু?

    বাঁচবে শিশু?
    -রাজীবলোচন বালা

    চেয়ে দেখি পৃথিবীতে “আমরা” মানুষ! জ্যান্ত লাশ !!
    আহার-বিহারে ঘটাই সর্বনাশ।

    ঈশ্বরের অমোঘ সৃজনশীল মানুষ আজ,
    তাকেই নিয়ে করছে বিধ্বংসী সাজ!

    কি হাহাকার আর যুদ্ধাভিমুখী রণের তলে_ কত শিশু হল অকালেই স্খলিত, বোঝা হল না মানুষ্যের চাল।

    প্রাসাদ গড়ালে, ইমারত গড়ে দিলে মাটি ঢেকে,
    মনের কীঙ্কর- জেগে ওঠে লুঠতে মানুষের লাজ!
    রাত-রজনী ভাবনার মাঝে, মানুষ হল কলহ প্রিয়,
    নৈতিকতার অন্দরে আজ ঘুন ধরেছে কতশত,

    স্বার্থান্ধ আর লোলুপতায় দিকভ্রান্ত মনুষ্যের দলে
    জাতাজাতির পরিখা কেটে, ভাই মারল ভাইয়েরে,
    অশনী সংকেতের দুন্দুভি! বাজল বোধয় সংসারে।

    চাই না হতে, এমন মানুষ ধর্মের কল নড়িয়ে দিয়ে,
    গরল এনে ঢেলে মানুষ প্রাণে।
    মানুষ এত এগিয়ে গেছে, একে অপরকে মারিয়ে,
    ইতিহাস তার সাক্ষ্য-প্রমাণ, দেখি ঘরে-বাইরে।

    “আমরা” কারা, হ্যাঁ! ছোট্ট শিশুর দল_
    প্রাণজলে ভরা হৃদয় গেলেই হব যে খল…! নায়ক
    বাঁচবে শিশু? বাঁচতে দেবে মানুষ, তাই আজ হায়
    পথ হারিয়ে ফেলেছি, এ মানুষ কি পৃথিবীতে বসবাসের উপযুক্ত?

    চাই না এই সংসারে, হতে নাড়ু- গোপাল
    বাড়ির ভিতর শান্ত চিত্তে দেখতে, মনুষ্যত্বের ক্রম অধঃগমন।
    হতে চাই রাখাল ছেলে, ধরতে লাঙ্গলের হাল,
    এই পথেই আসবে শান্তি ধরলে কৃষকের পাল;

    হতে চাই মানুষ আজব, শিশুর স্বভাবেতে,
    মা মা মা বলে হাটবো মোরা,পড়ে প্রেম-প্রীতির চাদর গায়।
    মানুষ হল অবিসংবাদী, চরম সত্য মত,
    হয়ে মানুষ, চলার পথে গলে মিলব মোরা সব।

    তপোবনের দেশে থাকি, মানুষ কেন নয়,
    যে মাটিতে মন্দির গড়ি, একইতে হয় মসজিদ,
    ভালো করে দেখ চেয়ে, ধর্মে নাই কোন ভেদা-ভেদ,
    লোকানুকম্পায়ে, চির হৃদয়বত্তায় গাইবো মোরা মানবের জয়গান।

    জন্মদাত্রী মা’যে মোদের কত অভাগিনী,
    সন্তানের এই অধঃনমন কইতে না পারে আর।!!!
    মানুষ হয়ে শ্রেষ্ঠ ধর্ম মনুষত্বের গাইব জয়গান।
    ভুললে ইহা মিলবে তবে কলঙ্কের হার।

    মমার্থ বুঝে গহন কুঞ্জে মানুষ দেখিবারে,
    হৃদয় মোদের একই মালায় গাঁথতে হবে তবে।
    কত আশা মা-জননী এই বসুন্ধরার,
    সন্তানেরা একই সাথে হতে চায় মোর জীবনচরিত্রাধার।

    গুলি ফোটে বুকে ধরাশয়ী হয় মুক্ত পাখি আজ স্বার্থ দ্বন্দ্বে,
    ফিরে কি পাবে সন্তানহারা রাজেশ, তাপস আর বারীণ সহ হাজারো মা ?
    প্রশ্নটা জ্বালায়, থেকে যায় অন্তরে বেদনা তা মাত্রাতীত।

  • কবিতা

    সাহিত্যাকাশের পিলসুজ

    সাহিত্যাকাশের পিলসুজ

    -রাজীব লোচন বালা

    সাহিত্যাকাশে উজ্জ্বলতম, মানুষ তৈরির কান্ডারী ঠাকুর তুমি,
    তোমারই পরশে জাত-পাত হল অবশেষে নিষ্পত্তি ।
    হিন্দু -বৌদ্ধ কিংবা মুসলমান, সবার প্রাণে একশক্তিরই অধিষ্ঠান,
    গানে গানে, কবিতা- ছন্দে তুমি ঠাকুর ভবের মানুষ , মনোজগতে মহীয়ান ।

    কি গাহিব তোমারে লয়ে , অতি অধম মুই এ ভবের হাটে,
    মানব জনম বুঝি বৃথা গেল চলে , তোমার পরশ পেলাম এ জন্মে।
    ১ লক্ষ ২৫ হাজার গান , এই জগতে কে লিখেছে আর,
    আমি জানি না তুমি কোথায় আছো, সাহিত্য জগতেও চিহ্ন রেখেছো।

    আর কিবা বলি তোমার লয়ে, ছন্দের তালেতে আর গানের সুরে,
    দু’হাত খোঁজে তোমার পাইবো ছোঁয়া, মনের ভিতরে গাইছে জপমালা।
    মানুষরে মানুষ করো, বলে ছিলে এক কথা বড়ো,
    পাগলরে, “#জাত_থাকে_কতক্ষণ_মানুষ_হয়_না_যতক্ষণ “।

    মানুষের প্রাণে কভু ব্যাথা দিও না, কইতে শিখো সত্য কথা,
    বিংশ শতাব্দীর মহা মানব , সাহিত্যেও যাঁর অগাধ দখল
    কবিগানও অসমাপ্ত রয়ে যাবে, যদি না ঠাকুরের গান না গাওয়া হবে।

    মানুষ হয়ে মনুষ্যত্ব রাখিও, সদাই ভবা দেখিয়েছেন ইহাই সত্য,
    দূর হতে যত দূরে যাও না চলে, মাটির নিকটে সবাই থাকিও,
    মাটি মা যে বসুমতী দানে পূর্ণধর্মা, চরণ ধরে সবাই রয়ো
    ঠাকুর ভবা সাহিত্য জগতের মহসকাশেও এক মহান পিলসুজ সম।

    মহাবিশ্বে যত যত সাহিত্যিক জন্মেছে এই ধরাধামে
    সর্বজাগতীক ঐক্য সাধনে দেহ-মন- প্রাণ সঁপেছেন নিজেরে,
    মানুষ তৈরির ভূবনজয়ী এ নরালোকে,
    ভবা পাগলা উজ্জ্বল নাম হয়ে রবে।
    প্রণাম জানাই শ্রীচরণে, তোমার আশীষ যেন পাই মোরা সকলে,
    দূর হতে যত দূরে যাই না চলে, ভক্তিভরে ডাকি তোমায় পাগল হয়ে।

  • কবিতা

    ”স্বর্গাদপি গরিয়সী”

    ”স্বর্গাদপি গরিয়সী”

    -রাজীব লোচন বালা

    কেন জানি না আঁধারের ‘কালসাজায়’
    পৃথিবীটা লাগে অচেনা !
    এসে মাতৃ জঠরে,
    পৃথিবীকে অবলোকন করিতে
    বেরিয়ে এলাম গর্ভ হতে কত কষ্ট দিয়ে।

    ভ্রুণাকারে,! শুনেছি —
    পৃথিবী কত সুন্দর, অপরুপা- শান্তময়ী।
    পশু- পাখি, জন্তু-জানোয়ার ,
    কত তার সন্তান-সন্ততি!
    মানবকোষ দিয়ে বড়ো হতে হতেই দেখি,
    তার বিভীষিকা-তান্ডব।

    মহাকোলাহল আর বিষের বীভৎসতায়
    মানব আজ পিশাচরুপী মূর্তি ধরেছে!
    সিঁড়ি ভাঙ্গা খেলায় পার হতে হতে,
    একদিন অবশেষে,
    মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে জয়েন্ট চাপরাশি হয়ে,
    কন্ঠ ঢেকে, মৃষ্ট স্বরের চাটুকারিতায়
    চলবে এই জীবন
    এই জীবন??? হা! হা! হা!
    মানো না মানো আজ তুমি বন্দী !
    এই কারাগারে,
    প্রশ্ন জাগে? লুকিয়ে রাখো কোণে,
    কে শুনবে?? কাকে শোনাবে?
    জানোনা, ভুলে গেছো!
    আপন আর আপন নয়
    মুক্তি আর মুক্ত নয়।

    তবুও আশা, ‘মা’ তো শুনবে
    যাকে “মানব কীটপতঙ্গ” ছিঁড়ে ছিঁড়ে
    তনুগুলি ভিন্ন করছে সে?

    হায়রে! একি তোমার শোভা!

    তোমারে মাগো যারা করল খন্ডিত!
    তোমার বাতাসে, তোমার মাটিতে
    তোমার সলীলে যারা মিশাইল বিষ,
    এখনো ভালেবাসো তাদের কোন প্রকারে ।

    পাড় হতে বেলা শেষে
    রক্তিমা নীড়ের প্রান্ত হতে,
    বাতাসে বাতাসে ধ্বনিত হল,,
    আমি মা! আমি মা! আমি মা!!
    আমি মারে বাছা!!!
    আমার কোলেই লালিত-পালিত
    লাথি মারবে মারো,
    আটকাবো না
    শুধু বলব, ‘চিনলি নারে বাছা’,
    যেদিন আর রবো না,
    সেদিন তোরা নিথর নিস্তব্ধ হবি রে

    দুঃখ জাগে তাই,

    বায়ু এসে আলতো ছোঁয়ায় ঠোটে,
    হে, মা
    হে পৃথিবী তোমারে লাগে অচেনা।।
    মা তাই অচেনা থেকেই গেল রে, পাগলা
    তারে ধরে চিনে নে সময়ের আগে।।
    এর চেয়ে নহে কিছু মহীয়ান এ ত্রিভুবনে
    হারিয়ে ফেলিস না তারে , এ উপহার একবারই আসে।

  • কবিতা

    জীবনের ধীশক্তি

    জীবনের ধীশক্তি

    -রাজীব লোচন বালা

     

     

     

    এই জীবনটা একবারই আসে ভাবিয়া রেখো,
    জীবনের গতিপথে ভাঙ্গা-গড়া দিয়েই শুরু___
    সন্দেহ নাই এ নিয়মে কভু।
    ভালো- মন্দ দুটি সময় এই জগতে,

    যদি ভালো না থাকে, মন্দ কি? বোঝা যায় না!
    আবার মন্দ বিনা ভালোর স্বাদ কি?জানা যায় না!
    দুই সময়ই জড়িয়ে রয়েছে জীবনকে ঘিরে___
    কিন্তু, হায়!
    আমি শিখবো মন্দ দিয়ে ঘেরা দুঃসময়ের কাছ থেকে বারেবারে।

    সুসময়ে বন্ধু পেয়েছি হাজারো,আরও কত কি!
    যখন দিতাম টাকা, মানতো মোরে সদা___
    সময় গড়িয়ে সময় এল! পকেট হল যেই ফাঁকা!
    বন্ধু-বান্ধব সব উড়ে গেল, বদন হল মোর কালা।
    হায়রে সময়!!!
    এই তো শেখার সময়,বোঝার সময়,
    জানার সময় আর চেনার সময়
    আসল মানুষ আর নকল মানুষকে।

    আমি শিখবো পিঁপড়ার কাছ থেকে,
    কিভাবে দুর্দিনে কাজ করতে হয় অহঃরহঃ।
    আমি শিখবো পাখিদের কাছ থেকে, এই জীবনে
    কত ঝড়, কত বৃষ্টি আর কত প্রতিকূলতা
    জীবনে নিয়ে।

    নতুন কুটির নূতন ভালোবাসার বাসা বানাতে বারেবারে।
    কোত্থেকে শেখা যাবে এহেন শিক্ষা!
    সুসময় থেকে? না!
    শেষে ‘ মা প্রকৃতি’ বলে গেল মোরে___
    “সুসময় নয়, দুঃসময় থেকে শেখো,
    একদিন কালে প্রকৃতই মানুষ হবে বাছা”।

    সুসময়ে মানুষ চেনার উপায় আজও অনাবিষ্কৃত এ জগতে_
    তবে উপায় কি? জানা ছিল না কারো_
    দুঃসময় এসে সব বুঝিয়ে দিল করায় গন্ডায়!
    এক এক করে, এক্বেবারে ভালো মতো।
    নদীর কাছে জলের উপর তরী রয় বাঁধা,
    ঠেলার চোটে দূরদূরিয়ে এগিয়ে চলে এথা আর হোথা;

    জীবন সায়রেও দুঃসময়ের আছে আবশ্যিকতা;
    নইলে কভু জীবন ভ্রমণে আসে না বাস্তবের মিষ্টি-নিঠুর ছটা।
    সময় বড়ই শক্তিশালী এই মহাবিশ্বে,
    চাকার মতোন ঘুরতে থাকে, নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষা,
    স্বজনবিয়োগ,জ্বালা-যন্ত্রনা আরও কত কি যে পরীক্ষা?
    তারই মাঝে নিতে হবে চিত্তে, মধুর আনন্দের ধারা।

    ভাবে সবাই এই দুঃসময়ে কে হবে মোর সাহারা
    জানবে কখন! দেখবে কখন! শিখবে কখন?
    যখন আসে দুঃসময় তারই তো কষাঘাতে।
    পরিপক্ক হতে,আসল নকল বোঝা বড় দায়!
    সুখ গিয়ে দুখ এলে পরিষ্কার তখন দেখতে পাই।

    পাখি দেখো ছুটে চলে দশদিশার সকাশে,
    জীবন ঠিক তেমনই ছুটতে হবে এই খেলার- সংসারে,
    জয়-পরাজয়, ভাঙ্গন-গড়ন_
    মিলিত প্রবাহে আমি শিখবো দুঃসময়ে হয়ে স্নাত এই জীবনেই,চরম বাস্তবের কষ্টিপাথরে।

    ভাঙ্গনকূলে বেঁধে বাসা, কত আশা জাগে!
    দুঃসময়ে যাওয়ার কালে,কারও দেখা না পাই পাশে!
    সুসময় মোর যেমন-তেমন, শুধুই মধুরময়___
    আসল কথা সত্য কথা, মিছে তো কভু নয়,

    দুঃসময়েই মোর শিক্ষাগুরু, পরিচয় দাতাও হয়।
    চ্যালেঞ্জ আসবে বারেবারে হয়ে চ্যালেঞ্জার,
    সব কিছু ভলো-মন্দ শিখি আমি এই সময়েরই  আধার।
    একদিন তবে হবই মোরা, বিজয়ী এই বসুধায়।

  • কবিতা

    মোরা ভাই ভাই

    মোরা ভাই ভাই

    -রাজীব লোচন বালা

     

     

    মোরা সবে ভাই ভাই, সাম্যের গান গাই
    একই মায়ের শ্রীচরণে মোদের হবে ঠাঁই।
    সাম্প্রদায়িকতার অনল ঢেলে
    করছে যারা প্রহার,
    একই সাথে “দুই কুসুম” উঠবে একদিন ভাই
    সেই দিবসে পালাবে তারা করে হাউ- মাউ।

    হিন্দু বলো মুসলিম বলো সবাই মোরা ভাই
    মহম্মদ তার সাম্যের প্রাণ শ্রী কৃষ্ণ তার জান।
    একই গাছে ফলগুলি যেমন ধরে মৃত্তিকায়,
    একই মাতার সন্তান মোরা, বুঝলে কি-না তাই।
    পাংক্তেয়তা বচসা করে মোদের কিবা লাভ ?
    সাম্যের বাণী বিশ্বমাঝে ছড়াই এবার ভাই।

    চিনির মাঝে মিষ্টি যেমন লুকায়িত রয়,
    হিন্দুর মাঝে মুসলিম তেমন হৃদ মাঝারে রয়।
    ঢালছে বিষ মোদের মাঝে
    বুঝেও বুঝছি না মোরা ভাই!!!
    ভাই ভাই যদি চলে হাতটি ধরে, একই পথে
    যত কাঁটা সব উপড়ে যাবে,
    জীবন মোদের সুন্দর হবে,
    শান্ত- সাম্য একই সাথে মিলবে গলে ভাই।

    ভাই ভাই চলে যদি এই কায়ানাতে,
    কার সাধ্য আছে এমন,যে করবে মোদের ছাই।
    একই প্রাণে জীবন মোদের একই প্রাণে জান
    একই বৃন্তে দুটো কুসুম, মোরা ভাই ভাই।
    এক পলকে মিলব মোরা, এক পলকে মরবো
    একই ডালে বাঁধব বাসা একই স্কুলে পড়বো।

    একে অপরকে জানবো মোরা একে অপরকে বুঝবো,
    একই সাথে গড়বো মোরা একই সাথে চলবো।
    ভাই ভাই প্রাণের ডাক, পাব আনন্দ বুকে
    হাতে হাত, বুকে জড়িয়ে ধরে,
    মোরা ভাই ভাই, বলে মোরা হব একাকার মন-প্রাণ দিয়ে।

You cannot copy content of this page